সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তনয় এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন ‘বঙ্গবন্ধুর নাম এখন মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিয়েছি সুতরাং তার নাম আর মুছা যাবেনা।কোন অর্থে তিনি কথাটি বলেছেন তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। বঙ্গবন্ধুর উচ্চতা এখন আকাশের উচ্চতায় এই অর্থে বললে দ্বিমতের কিছু নেই কিন্তু মহাশূন্যে স্থাপিত বাংলাদেশের স্যাটেলাইটের নাম বঙ্গবন্ধু হওয়াতে তার নাম মহাশূন্যে উঠে গেছে সুতরাং তা আর কারো পক্ষে মুছা সম্ভব নয় এই অর্থে বললে প্রয়াত শিল্পী মান্না দে’র ‘যদি কাগজে লিখ নাম’ গানটি তাকে স্মরণ করিয়ে দেব। কাগজের লেখা আর পাথরে খোদাই করা নামের অস্থিত্ব বড়ই ক্ষণস্থায়ী। সজীব ওয়াজেদ জয়তো ভাল করেই জানেন মহাশূন্যে স্থাপিত স্যাটেলাইটটি কিন্তু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে নিচের ভূমি থেকেই আর এই ভূমির মালিকানা যার হাতে থাকবে তাকে নিয়ন্ত্রণের চাবিটিও থাকবে তার হাতেই সুতরাং কেউ মুছতে চাইলে তাকে আকাশে উঠতে হবেনা এই মাটি থেকেই তা সম্ভব।বঙ্গবন্ধুর নাম দেশের আপামর মানুষের হৃদয়ে লেখা এই সত্যটি অত্যন্ত আপনজন হওয়া সত্বেও সজীব ওয়াজেদরা উপলব্ধি করতে পারছেননা তাই একটি বস্তুর বা অনেক স্থাপনার নামকরণের মাধ্যমেই তারা তাকে অমরত্ব দানের প্রয়াস নিয়েছেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্ভবতঃ পাথরে খোদাই করা নামেই বেশি আস্থা রাখেন তাই অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এবং ১৪ আগষ্ট ট্রাজেডিতে নিহত স্বজনদের নাম ব্যবহার করছেন। তা এমনটি তিনি করতেই পারেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিহত পরিবার পরিজনের ব্যাপারে গোটা জাতির একটা সফট কর্ণার রয়েছে তাই সাধারণ্যে এব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই থাকার কথাও নয়।কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত এই ফলক গুলোকে যখন নিষ্ঠুর উল্লাসে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে তখন আমরা ব্যথিত হব, যারা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে তাদের উপর আমরা যে রকম ক্ষুব্ধ হব আপনারাও সেই ক্ষোভের একটি অংশ ডিজার্ভ করবেন কেননা স্বাধীনতার এই স্থপতিকে আপনারা কখনো দলীয় গন্ডির বাইরে যেতে দেননি, ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে আপনারা তাঁর নামের যথেচ্ছ অপব্যবহার করেছেন এবং করেই যাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানের নামকরণে ব্যক্তিমানুষের নাম ব্যবহার করার প্রথাটি অনেক পুরনো। আমাদের দেশের যত প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার প্রত্যেকটিই কোনো না কোনো বিদ্যানুরাগী দানশীল মানুষ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের নামই প্রতিষ্ঠানগুলো যুগ যুগ ধরে বহন করে চলেছে। যারা এইসব প্রতিষ্ঠানের স্থপতি তারা নামের মোহে এসব করেননি করেছেন সত্যিকারের জনসেবার উদ্দেশ্যে। আবার প্রতিষ্ঠাতাদের সবাই যে নবাব মহারাজা জমিদার তালুকদার ইত্যাদি ছিলেন তাও নয়। এমন অনেক দানবীর আছেন যারা নিজে খেয়ে না খেয়ে সারা জীবনের জমানো অর্থ একটি প্রতিষ্ঠানে দান করে গিয়েছেন।এই দানশীল মহামানবদের অবদানে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তাদের দানশীলতার মহত্বটুকু আমরা আমাদের চরিত্রে ধারণ করতে না পারলেও তাদের নামগুলো আমাদিগকে বিপুলভাবে আকর্ষণ করে। আমরাও চাই তাদের মতো আমাদের নামকেও কালের পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে রাখতে কিন্তু নিজের টাকায় নয় রাষ্ট্রীয় গৌরীসেনের অর্থে। অবশ্য এই প্রবঞ্চক দানশীল হওয়ার পূর্বশর্ত একটাই তাহলো আমাকে শাসক দলের কেউকেটা একজন হতে হবে। বাংলাদেশে স্বাধীনতাত্তোর কালের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর নামকরণে আলীশান আকারের হরফে ব্যক্তি বিশেষের নাম শোভা পাচ্ছে অথচ এর এ টু জেড খরচ যুগিয়েছে রাষ্ট্র। এটা রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। সত্যিকারের জনবান্ধব কোনো সরকার যদি ক্ষমতায় আসত তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শুধু নামই মুছত না প্রতিষ্ঠাতাদেরও শাস্তির আওতায় আনত। এ প্রসঙ্গে আমাদের সিলেটরত্ন সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেবের নামোল্লেখ করতে চাই। অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তার অনতিক্রম্য প্রভাবের কারণে বৃহত্তর সিলেট বিশেষ করে তার নিজ জেলা মৌলভীবাজারে ব্যাপক উন্নয়ন করেন।উন্নয়ন করা অপরাধ নয় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েই তো জনপ্রতিনিধিগণ জনগণের ভোট আদায় করেন। কিন্তু এই উন্নয়ন করতে গিয়ে একটা রাস্তা পাকা করে যদি সে রাস্তা নিজের নামে নামকরণ করে ফেলেন অথবা একটি স্কুল নির্মাণ করে দিয়ে তা নিজের বা স্বজন কারো নাম বসিয়ে দেন তবে তা অন্যায়। সাইফুর রহমানের এ রকম অন্যায়ের দৃষ্টান্ত অনেক। তা
র নামের ক্ষুধা এতটাই বেড়ে উঠেছিল যে একটি ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করে ঐ স্কুলের নামকরণে উল্লেখিত দুই দানবীরের নামের সাথে নিজ নামকেও যুক্ত করে নিয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে প্রথম আলো ‘নামের কাঙ্গাল সাইফুর রহমান’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে অনেক চমকপ্রদ কাহিনী সবিস্তারে ছেপেছিল। সাইফুর রহমানের নাম উল্লেখ করলাম কারণ তিনি চোখে লাগার মত বেশি করেছেন কিন্তু এ রকম দানশীলের(!) সংখ্যা দেশে বিস্তর, অগনন তাদের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।
নামকরণের আরেক মঞ্চ সরকারী স্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।এ ক্ষেত্রে অবশ্য অগ্রাধিকার পায় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ মহলের রুচি এবং ইচ্ছা। সরকারী এসব প্রতিষ্ঠানের নামকরণ ক্ষণস্থায়ী। সরকার বদলের সাথে সাথেই শ্বেতপাথরে খোদাই করা ভিত্তিপ্রস্তরগুলো আচানক লোপাট হয়ে যায় গড়ে উঠে নতুন ভিত্তিপ্রস্তর। নবাগত ক্ষমতাসীনগণ তাদের বিগত সময়ের সমস্ত ক্ষোভ আর জ্বালা প্রথমে এই নিষ্প্রাণ পাথরগুলোর উপরই মিটান। এ প্রসঙ্গে আবারও প্রয়াত সাইফুর রহমানের কথা উল্লেখ করতে হয়। জনগণের টাকায় এবং নিজের বা স্বজনের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান করলেও পূর্ববর্তী সরকারের আমলে বসানো মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে করা ভৈরব ব্রীজের স্মৃতিফলক উৎপাটনকালে সাইফুর রহমান চরম অবজ্ঞাভরে বলেছিলেন ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার, তার নামে আবার ব্রীজ’। ভিত্তিপ্রস্তর অপসারণকালে একজন দাপুটে মন্ত্রীর মুখ দিয়ে যখন এ রকম কুরুচিপূর্ণ কথা বের হয় তখন হাতুড়ি শাবলধারী নেতা কর্মীদের পেশীর উন্মত্ততা আঁচ করতে সিরিয়াস গবেষক হওয়ার প্রয়োজন হয়না।
এই পাথর ভাঙ্গা আর পাথর স্থাপনে দরিদ্র জনগণের রক্ত ঘামে অর্জিত কত হাজার লক্ষ কোটি টাকার যে অপচয় হচ্ছে তার পরিসংখ্যান কেউ কখনো করেনি। রাষ্ট্রীয় এইসব প্রতিষ্ঠানের নাম বা ফলক শুধু শ্বেতপাথরের খরচেই সীমাবদ্ধ থাকেনা থাকে অনেক অফিসিয়াল, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা যা পাল্টাতে গিয়ে রাষ্ট্রকে বিপুল পরিমান অর্থ গচ্ছা দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কথা উল্লেখ করা যায়। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে জিয়া আন্তর্জাতিক এবং সর্বশেষে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এই কয়েক দফা নাম বদলে রাষ্ট্রকে কত হাজার কোটি টাকা শ্রেফ পানিতে ফেলতে হয়েছে আমরা কি তার হিসেব নিয়েছি? অবশ্য সর্বশেষ নামকরণটি’তে বেশ বিচক্ষণতা আছে কেননা এ নাম আর পাল্টানো হবেনা। কারণ এর সাথে ধর্মীয় অনুভূতি নামক বিষ্ফোরক শব্দটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অবশ্য এটা আওয়ামীলীগের মৌলিক উদ্ভাবন নয় তারা এই আইডিয়া ধার করেছে বিএনপি থেকে। এর আগে বিএনপি চট্টগ্রামের এম এ হান্নান বিমান বন্দরের নাম পাল্টে শাহ আমানতের নাম বসিয়ে দিয়েছিল।আওয়ামীলীগ পরের দফায় ক্ষমতায় গিয়ে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছে সাইনবোর্ডে হাত দেয়নি, ভোটের ভয়ে। বিএনপিও ক্ষমতায় এসে শাহজালাল নামের দিকে অসহায় ক্ষোভ নিয়ে তাকাবে কিন্তু সাইনবোর্ডে হাত দেবার আস্পর্ধা দেখাবে না। শাহজালালের কেরামতি তজল্লি’র ভয়ে নয় ভোট হারানোর ভয়ে। আপাতদৃষ্টিতে এগুলোকে স্রেফ তামাশা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করলে আরেকটি মারাত্নক নেতিবাচক দিককে এড়িয়ে যাওয়া হবে আর তাহলো এই আত্নঘাতি ধারা যদি অব্যাহত থাকে তবে এক সময় দেখা যাবে রাষ্ট্রীয় পরিচয়বাহী অনেক প্রতিষ্ঠানের নামকরণে গেছোপির ন্যাংটাপির জাতীয় কিছু অপ্রকৃতস্থ মানুষের নাম স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছে তখন এটা একটা পাগলের দেশ বলেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়ে যাবে যা আমাদের কোনো ভাবেই কাম্য হতে পারেনা।(ইতোমধ্যে দেশের দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালাল এবং শাহ আমানত এবং একটি আভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর শাহ মখদুম নামে নামকরণ হয়ে গেছে) আমাদের অন্যতম প্রধান বিমানবন্দরের নাম একজন পিরের নামে এটা আমাদের জন্য খুব গৌরবের বিষয় নয়। শাহজালাল বাঙ্গালী নন, নন কোনো জাতীয় বীর, বাঙ্গালীর ভাষা সংস্কৃতি তথা জাতিসত্ত্বা বিনির্মাণে, স্বাধীনতা- মুক্তিযুদ্ধে তার ন্যূন্যতম কোনো অবদান নেই থাকার কথাও নয় অথচ আমাদের আন্তর্জাতিক ফটকটিতে’ই ঝলঝল করছে তাঁর নাম। তাঁর পরিচয় তিনি বহিরাগত একজন পির যিনি স্বদেশে অখ্যাত এবং অজ্ঞাতকুলশীল কিন্তু আমাদের দেশে বিখ্যাত এবং মহিমান্বিত। তাঁর চারিত্রিক বা আধ্যাত্মিক প্রভাবে একটি অঞ্চল বিশেষের বিপুল সংখ্যক মানুষ ধর্মান্তর পূর্বক মুসলমান হয়েছিল। এই গুণাবলীকে ক্রাইটেরিয়া ধরে যদি তাকে আমাদের জাতীয় আইকনের মর্যাদা দেয়া হয় তবে অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য এটা খুব সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত হয়ে যায়না? অনুরূপভাবে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট নামটিও চট্টগ্রামের জন্য খুব অহংকার বহন করেনা। চট্টলার বীর সন্তানদের কীর্তি কাহিনী শুধু এই অঞ্চল নয় পুরো ভারতবর্ষের ইতিহাসে উজ্জ্বলতর হয়ে আছে। তাদেরকে অবজ্ঞা করে একজন গল্প-গাঁথা নির্ভর পিরকে চট্টগ্রামের মুখ বিবেচনা করে চট্টলার মেধা শৌর্যবীর্য আর গৌরবের ইতিহাসকে চরমভাবে হেয় করা হয়েছে।
এই পাথুরে ভিত্তিপ্রস্তরের নড়বড়ে আয়ুস্কাল জেনেও অবিরাম স্বজনদের নামে নামকরণের মহোৎসব চলছে। বাংলার ভসভসা মাটি বড়ই উর্বর কিন্তু এখানে ফসলের চেয়ে আগাছার জন্ম হয় অধিক। তবুও ফসল একেবারেই যে ফলেনা তা কিন্তু নয়। কম হলেও ফলে। বাংলাদেশের বিখ্যাত দুই পরিবারের কীর্তিমানদের বাইরেও জ্ঞান বিজ্ঞান সাহিত্য শিল্পকলার বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় কিছু প্রতিভাবান মানুষ জন্ম নিয়েছেন যারা বাঙ্গালীর মুখ বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল করেছেন তাদের নামেও এক দুইটা লেন বা কালভার্টের নামকরণ করুন তাতে আপনাদের হিস্যার কমতি হবেনা। তবে মুক্তিযোদ্ধার নামে ড্রেনের নামকরণের মত চরম অপমানজনক এবং নিন্দনীয় কাজ না করাই উত্তম।
সম্প্রতি রাজধানীতে এক অভূতপূর্ব শিশু কিশোর জাগরণ যখন পুরো দেশের মানুষের চোখকে চুম্বকের মত টেনে ধরেছিল তখন এই ডামাডোলের মাঝেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নামকরণের এক নয়া অধ্যায় রচনা করে ফেললেন। দুই সন্তানহারা মা যখন ঘাতক বাসের চাকায় পিষ্ট তাদের পরমপ্রিয় সন্তানের ক্ষতবিক্ষত লাশ নিয়ে আহাজারী করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন নিজ সন্তানের নামে দু দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করে বসলেন। প্রথমে টিভি স্ক্রলে দেখানো নিউজটি দেখে আমার অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল কয়েকবার দেখার পর আমি খবরটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হই। আমি এর ব্যাখ্যা এবং যুক্তি খুঁজে পাইনি এবং বিশ্বাস করি আওয়ামীলীগের বিদ্বৎকুলও এতে চাপা বিব্রত বোধে পুড়ছেন। সজীব ওয়াজেদের দুই পরিচয়, এক তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, দুই তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য এবং প্রযুক্তি উপদেষ্টা। প্রথম পরিচয়ের জন্য এই বিরল সম্মান অর্জন করলে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে খালেদা জিয়াও তদিয় পুত্র তারেক জিয়ার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণের অধিকার অর্জন করলেন। আর যদি দ্বিতীয় পরিচয়ের জন্য হয়ে থাকে তবে এর একটি বেচারা এইচ টি ইমামকে দেয়া হলনা কেন?
কেন্দ্র দুটি যেহেতু বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট এখানে কি দুজন বাঙ্গালী বিজ্ঞানীর নাম যুক্ত করা যেত না? আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু বা ডঃ মেঘনাদ সাহাকে এ সম্মানে ভূষিত করবেন এতটুকু উদারতা আপনাদের কাছ থেকে আশা করা যায়না তা আপনারা যতবড় সেক্যুলারই হন না কেন তো সদ্যপ্রয়াত বিজ্ঞানী ডঃ মকসুদুল আলমের নামটিওতো বিবেচনা করা যেত। প্রয়াত এই বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কারের পর আপনারা সংসদকে এমন গরম করে তুলেছিলেন মনে হচ্ছিল এই বিজ্ঞানী বুঝি পুরাই আওয়ামী প্রোডাক্ট। প্রয়াত পরমাণুবিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার নামে করলেও একটা যুক্তি বের করা যেত। শুনেছি মন্ত্রীসভার লেটেস্ট ভার্সন এক মন্ত্রী এই অদ্ভুত প্রস্তাব করলে তা সানন্দে গৃহিত হয়ে যায়।একজন চামচা প্রজাতির মানুষ সহসা একটি অপ্রত্যাশিত পদ পেয়ে গেলে তার শোকর-গুজার করার জন্য পুরো দেশই দিয়ে দিতে পারেন কারণ এতে তারতো কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা বরং আখেরের জন্য ভাল একটি স্কোর করে রাখলেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেই উপঢৌকন গ্রহণ করবেন কেন? আর সজীব ওয়াজেদ জয়? আমেরিকার মত দেশে বড় হয়েছেন লেখাপড়া করেছেন তিনিই বা কী করে এমন প্রস্তাব ‘কেয়া বাত,কেয়া বাত’ বলে একেবারে সানন্দে গ্রহণ করে বসলেন? মার্কিন মূল্যবোধ কি এমন উদ্ভট কান্ড এলাও করে? পারবেন মহা ক্ষমতাধর ডোনাল্ড ট্রাম্প কন্যা ইভাংকার নামে এরকম একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করতে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পাথর বাদ দিয়ে মানুষের হৃদয়ে নাম লেখার চেষ্টা করুন সে নাম কোনো মহাশক্তিশালী ইরেজার দিয়েও মুছা যাবেনা। এতে প্রাণহীন পাথরগুলো মানুষের প্রতিহিংসার থাবা থেকে রক্ষা পাবে, দরিদ্র জনগণের রক্ত ঘামে অর্জিত অর্থ পানিতে ফেলার অন্যতম একটি খাত বন্ধ হবে এবং আমরাও এক অদ্ভুত লজ্জা থেকে মুক্তি পাব।পাথরে খোদাই করা নাম চিরস্থায়ী নয় কারণ পাথর চূর্ণ করে মানুষ প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট তৈরি করছে। বঙ্গবন্ধুর নামে যদি বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানও না থাকে তাতে তাঁর নাম মুছে যাবেনা কেননা তাঁর নাম জাতির হৃদয়ে পার্মানেন্ট মার্কারে লেখা হয়ে আছে।
একটা শব্দই মুখ দিয়ে বের হয়ে আসছে- ‘সাবাস’ । অনেক ভালো এবং বিশ্লেষনী লেখা। শুধু নিচের লাইনে ‘জারগন’ বানান টা চোখের চোট্ট বালি হয়ে গেছে।
‘সম্প্রতি রাজধানীতে এক অভূতপূর্ব শিশু কিশোর জারগন যখন পুরো দেশের মানুষের চোখকে চুম্বকের মত টেনে ধরেছে ’
প্রিন্ট মিডিয়ায় হলে ছাপাখানার ভূতের উপর দোষ চাপিয়ে দিতে পারতাম কিন্তু তা যখন নয় তখন বানান প্রমাদের দায়টি অবশ্যই নিজের কাধেই নিতে হবে। প্রকাশের পর জাগরণ শব্দের বর্ণ বিপর্যয়ের ব্যাপারটি চোখে পড়ে ।এটি আমার চোখেও সমান পীড়াদায়ক। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
থাক, ওই নাম সাধারণের নাগালের বাইরে মহাকাশেই থাক, এটি একদিকে ভালই। 😋
মহাকাশে থাকলেইতো ভাল হতো কিন্তু থাকবেনাতো। তাছাড়া সাধারণরাতো এসবে হাত দেয়না। তাদের সে ক্ষমতাও নেই। যা করার তাতো সব অসাধারণরাই করছে।ধন্যবাদ।
ভালো লিখেছেন….
ধন্যবাদ।