লেখক: জীবন

প্রেম বাজারে সম্রাট শাহজাহান

প্রেম শাশ্বত-অমর-স্বর্গীয়।
‘প্রেমের মরা জলে ঢুবেনা’ কিংবা ‘স্বর্গ থেকে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে’।
লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, শাহজাহান-মমতাজ, চন্ডিদাস-রজকিনি (প্রকৃতপক্ষে, ভদ্রমহিলার নাম ‘রামী’ রজকিনি উপাধি) কতশত নাম-শব্দ-বাক্য এই উপমহাদেশের প্রেমাশ্রয়ী কাব্যের-মহাকাব্যের-গল্পের-উপন্যাসের শোভাবর্ধন করে আসছে সেই আদিকাল থেকে।
প্রেমের জন্য কেও মরে, কেও ঘর ছাড়ে অজানার পথে, কেও গাছের নীচে ঘর বাঁধে। আবার এই প্রেমের কারণেই কারো সাজানো ঘর ভাঙ্গে । সে সব ভিন্ন কথা, ভিন্ন বিষয়। কিন্তু, এই যে প্রেমের বাজার, রসের বাজার, সে বাজারেও রাজা থাকেন, রানী থাকেন। থাকেন যোগ্যতা নিয়েই। কেননা- তাঁরা প্রেমের জন্য এমন কীর্তি তৈরী করেন, সময়ের ইতিহাস একপ্রকার বাধ্য হয়েই সে মানুষ কে মহামানুষ করে তুলে। আজকেই এই সময়ে দাঁড়িয়ে সেই কীর্তিমান মহামানুষদের কোন তালিকা করা হলে নিশ্চিত ভাবেই শীর্ষে থাকবেন-মোঘল সম্রাট আকবরের দৌহিত্র এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর পুত্র-পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহজাহান (জন্ম: ১৫৯২, মৃত্যু: ১৬৬৬)। যার পুরো নাম “শাহেনশাহ আল সুলতান আল আজাম ওয়াল খোয়ান মুখারাম মালিক উল সালতানাত আবুল মুজাফর শাহাব উদ্দিন মুহাম্মদ শাহজাহান“। শাহ জাহান নামের ফার্সি অর্থ “পৃথিবীর রাজা”। যিনি তাঁর তৃতীয় স্ত্রী “মুমতাজ মহল”-এর মৃত্যুতে ব্যথিত-মর্মাহত-উদ্ভ্রান্ত হয়ে নির্মান করেছেন মানুষ সৃষ্ট্য সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম “তাজমহল”।

প্রেমাশ্রয়ী সহজিয়া মতবাদ ও সুফি দর্শন

চতু্র্দশ শতকে ‘বড়ু চন্ডিদাস’ প্রবর্তিত ‘বৈষ্ণব সহজিয়া’ মতবাদে বিশ্বাসীগণ নিজেদের সহজ রসিক বা সহজ পথের পথিক মনে করতেন। এখানে ‘সহজপথ’ অর্থ প্রেম এবং প্রেমসাধণার মাধ্যমে সিদ্ধিলাভ করা। সহজিয়া মতবাদের সাধকগণ বিশ্বাস করেন যে, পরকীয়া প্রেমের মাধ্যমেই কেবল প্রকৃত সিদ্ধিলাভ সম্ভব। যে কারণে এঁরা বাস্তব জীবনেও পরকীয়া প্রেম প্রয়োগে-প্রসারে বিশ্বাসি। যে কারণে বড়ু চন্ডিদাস নিজেও ব্রাহ্মণ্যকূল ত্যাগ করেছিলেন প্রেমিকা ”রামী রজকিনির” জন্য। অপরদিকে, শ্রী চৈতন্যদেব কর্তৃক প্রবর্তিত ‘গৌড়ীয় সহজিয়া’ মতবাদিগণ ‘পরকীয় প্রেম’-কে সাধণার অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করলেও তাঁরা পরকীয়া প্রেমকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগে বিশ্বাসি নন। তবে একটা জায়গায় দুই মতবাদের বেশ বিল, তা হচ্ছে তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, নররুপে, নর, স্বরুপে কৃষ্ণ এবং নারীরুপে, নারী স্বরুপে রাধা। দু’টি সহজিয়া মতবাদের পদ্ধতি-প্রক্রিয়া নিয়ে পাথর্ক্য-ভেদ থাকলেও যে যুগে-সময়ে বেদাশ্রিত ব্রাহ্মণগণ সমাজের সকল স্তরে নিজেদেরকে বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ-পণ্ডিত হিসেবে গণ্য করে সমগ্র ভারতবর্ষ দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে সহজিয়া মতবাদ অন্ত্যজ শ্রেণির হিন্দুদের কেবলমাত্র যে, সহজপথে ঈশ্বর প্রাপ্তি-সাধণার সুযোগ করে দিয়েছিলো তাই নয়। সমাজ-সংসারে আস্টেপিষ্ঠে বিড়াজিত জাত-ভেদ-প্রভেদকে দুঃসাহসের সাথে দূরে সরিয়ে দিয়ে একটি সম্মিলন তৈরি করে দেয়, যাতে অন্ত্যজ শ্রেণিভূক্ত হয়েও সে নিজে কেবলমাত্র একজন মানুষ হিসেবে ঈশ্বরের কৃপা পেতে পারেন ।
তবে, সহজিয়া মতবাদে বিশ্বাসিগণ ঈশ্বর সাধণার পথে বেদ-উপনিষদ নির্ভরতা এড়াতে পারলেও ভগবানে বিশ্বাস এবং রাধা-কৃষ্ণের স্বর্গীয় প্রেমে ঠিকই আস্থা রেখেছেন । যে কারণে আজও এই উপমহাদেশে সংসারে-সমাজে-গল্পে-কাব্যে-মহাকাব্যে অবতার কৃষ্ণ এবং রাধার প্রেমকাহিনী স্বর্গীয় প্রেম হিসেবে গণ্য-মান্য হয়ে থাকে।
অপরদিকে, বৌদ্ধ সহজিয়াগণ (উল্লেখ্য যে, এঁরাই প্রথম সহজ পথে মোক্ষ প্রাপ্তির পথ সৃজন করেন) মোক্ষলাভের কঠিন ও জটিল পথকে এড়িয়ে গিয়ে সহজ পথে সাধণার মাধ্যমে ঈশ্বর সান্নিধ্য প্রাপ্তির সাধনা করেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, যেহেতু গৌতম বুদ্ধ প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে বাস করেন, সেহেতু কেবলমাত্র প্রেমাসিক্ত সহজ সাধণার মাধ্যমেই তাঁর কৃপা লাভ করা সম্ভব।
মরমী সুফি সাধক, বৈপ্লবিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, সুন্নী বংশোভূত মনসুর আল হাল্লাজ বলেন যে, সমগ্র মানবজাতির এক নিগূঢ় অন্তদর্শন আছে, যার মাধ্যমে-সাহায্যে তিনি স্রষ্টাকে অন্তরের অন্তস্থলে খুঁজে পেতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ঐশ্বরিক বাস্তবতায় জন্য গৎবাঁধা আনুষ্ঠানিক ধর্মকর্মের ঊর্ধ্বে ওঠতে হবে। এই মতবাদ-বিশ্বাস প্রচারের কারণে তাঁকে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের গুপ্তচর আখ্যা দিয়ে ৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে কারাগারে বন্ধি করা হয় এবং পরবর্তীতে ৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ জনসমক্ষে বিচারকদের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়। অন্যান্য বিখ্যাত সুফি দার্শনিকগণও শরিয়ত প্রথাকে “জাহিরি প্রথা” হিসেবে আখ্যায়িত করে হৃদয়স্থিত শুদ্ধ সাধণার (প্রেমাশ্রিত) মাধ্যমে নিরাকার সৃষ্টিকর্তার সাথে লয় হওয়ার কথা বলেছেন। বর্ণিত দু’টো মতবাদও (বৌদ্ধ সহজিয়া এবং সুফিবাদ) ঈশ্বর-আল্লাহকে অস্বীকার করে নাই। তবে যে যুগে শাস্ত্রানুধ্যায়ীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলা ছিলো প্রবল দুঃসাহসের এবং অপরাধের কাজ, ঠিক সেই সময়ে তাঁরা শুধু তাঁদের মতবাদ প্রচার-প্রসার করেই ক্ষান্ত হননি, আজকে পর্যন্ত তাঁদের মতবাদকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
আলোচনার এই পর্যায়ে, আস্থার বিশ্বাসে যদি বলেও ফেলি যে, বৌদ্ধ সহজিয়া, বৈঞ্চব সহজিয়া, গৌড়ীয় সহজিয়া এবং সুফি মতবাদ বা দর্শনে বিশ্বাসীগণের তথাকথিত শাস্ত্রকে এড়িয়ে গিয়ে সহজপথে তথা হৃদয়াস্থিত প্রেমের মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাওয়ার যে সাধণা কর্ম, যা পরর্বর্তীতে মনুষ্যগণকে সৃস্টিকর্তায় অবিশ্বাসী তথা দ্বিতীয় মতে আস্থা রাখতে সাহস-রসদ যুগিয়েছে। তা বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না। পরবর্তীতে এই পথে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা বা উৎকর্ষতা জীয়নকাঠি হিসেবে কাজ করেছে। তবে এটাও ঠিক যে বিবৃত সময়েও পৃথিবীতে ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষ ছিলেন কিন্তু তা যে ততটা স্ফীত ছিলোনা তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

সম্রাট শাহজাহান ও প্রেম সৌধ্য তাজমহল

এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। মূলতঃ সম্রাট শাহজাহানের প্রেম নিয়ে আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় বিভিন্ন ধর্মের প্রেম ভিক্তিক সহজিয়া মতবাদ গুলোও আলোচনায় এসে গেছে। যদিও তা অনেকাংশের অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হতে পারে। তবে কখনো সহজিয়া মতবাদ নিয়ে কোন পাঠকের আগ্রহ দেখা দিলে এই লেখাটি একটু হলেও কাজে দিবে।
আলোচনা মূলতঃ মুঘল সামাজ্যের পঞ্চম মুঘল সম্রাট- “শাহেনশাহ আল সুলতান আল আজাম ওয়াল খোয়ান মুখারাম মালিক উল সালতানাত আবুল মুজাফর শাহাব উদ্দিন মুহাম্মদ শাহজাহান” ওরফে সম্রাট শাহজাহান এবং তাঁর অমর কীর্তি “তাজমহল” নিয়ে। কোন এক আড্ডায় আমার কোন এক বন্ধু এই বিষয়টাকে আলোচনায় এনেছিলো। তারপর থেকে সম্রাট শাহজাহান এবং তাজমহল নিয়ে কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করছিলাম। যদিও নিজ চোখে তাজমহল দেখার সৌভাগ্য আমার জীবনে ঘটেনি, তবে খুব কাছের কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে যা জানতে পেরেছি তা হচ্ছে—- “বিস্ময়” “অসম্ভব” “কল্পনাতীত” “ভাষায় প্রকাশহীন” ইত্যাদি ইত্যাদি। ইতিহাস ঘেটেঘুটে জানা যায় সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রীর সংখ্যা মাত্র ১০ (দশ) জন। তাঁরা হচ্ছেন-(ক) আকবারাবাদি মহল (খ) কান্দাহারি মহল (গ) মুমতাজ মহল (ঘ) হাসিনা বেগম সাহেবা (ঙ) মুতি বেগম সাহেবা (চ) ফাতেহপুরি মহল সাহেবা (ছ) সরহিন্দি বেগম সাহিবা (জ) শ্রীমতি মানভবাতি বাইজি (ঞ) লাল সাহেব এবং (ট) লীলাবতি বাইজি লাল ।

উপরের তথ্যে আস্থা রেখে যদি বলি- তবে “মুমতাজ মহল” ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের “তৃতীয় বেগম”। ইতিহাস বলে ১৬৩১ সালে মুমতাজ মহল তাঁদের চতুর্দশ কন্যা সন্তান “গৌহর বেগম”-এর জন্ম দিতে দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মুমতাজ মহল-এর মৃত্যুতে সম্রাট শাহজাহান প্রচণ্ডভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন। যদিও মুমতাজ মহল মারা যাওয়ার পরও তিনি আরো ৭(সাত) টি সাদী করেছিলেন। তারপরও “মুমতাজ মহল” মৃত্যুতে সম্রাট সাহিব ব্যথিত, মর্মাহত, স্থবির হয়ে পড়ায় রাজকোষে জমাকৃত রূপির নির্ভরতায় ১৬৩২ সালে তাজমহল তৈরীর কাজ শুরু হয় এবং তা শেষ হয় ১৬৫৩ সনে। তাজমহল নির্মানে প্রকৃতপক্ষে কত ব্যয় হয়েছিলো তার সঠিক অঙ্ক নির্ণয় বেশ কঠিন। তবে অনেক ইতিহাসবিদই বলেন যে, তাজমহল নির্মাণে ব্যয় হয়েছিলো প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ রূপি। শ্রমিকের খরচ, নির্মাণে যে সময় লেগেছে এবং ভিন্ন অর্থনৈতিক যুগের কারণে এর মূল্য অনেক, একে অমূল্যও বলা হয়।
যতদূর জানা যায়, মুমতাজ বেগমও বিবাহিত ছিলেন এবং সম্রাট শাহজাহান তার স্বামীকে খুন করে মুমতাজ বেগমকে বিয়ে করেছিলেন এবং মুমতাজ বেগম মারা যাওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যে সম্রাট শাহজাহান মুমতাজের ছোট বোনকেও বিয়ে করেন। এই পর্যায়ে প্রশ্ন ওঠতেই পারে যে- সম্রাট শাহজাহান যদি মুমতাজ মহল-এর মৃত্যুতে এতোই মর্মাহত হয়ে থাকেন তবে তো তাঁর সংসার-রাজত্ব-রাজ্য ত্যাগ করে নির্মোহ জীবনস্থিত হওয়ার কথা। কিন্তু, প্রেমের কোন সূত্রে-মন্ত্রে-বিশ্বাসে সম্রাট সাহিব মুমতাজ মহলের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁর ছোটবোন সহ আরো ৭টি বিয়ে করলেন? কেনই বা রাজকোষ হতে এতোগুলো টাকা খরচ করে তাজমহল নির্মাণ করা হলো ? তবে কি তাই সত্যি, যা এ যুগেও ভোগবিলাসী আরবদের জীবনাচারে লক্ষ্য করা যায়। তাজমহল কি মোঘল সামাজ্যের অহংকার ? নাকি শাজাহানের প্রেমের নির্দশন ? ইতিহাস একদিন উত্তর দিবে নিশ্চয়ই।
এই উপমহাদেশে মোঘল সামাজ্য ছিলো প্রায় ৭ শত বছর। মানব সভ্যতার উৎকর্ষতার জন্য কি দিয়েছে তারা এই দীর্ঘ সময়ে ? যা দিয়ে আমরা মনস্তাত্বিকভাবে উন্নত হয়েছি, আমরা নিজেদের কেবল মানুষ হিসেবে ভাবনার সুযোগ পেয়েছি । বরংঞ্চ ভোগ বিলাসে বিশ্বাসী মোঘলগণ ৭ বছর তরবারির ভয় দেখিয়ে দলে দলে মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছে, বৌদ্ধবিহার-মন্দির-ভেঙ্গে সেই ইট-পাথর-সুরকি-টেরাকোটা দিয়ে মসজিদ নির্মান করেছেন (মোঘল আমলে স্থাপিত অনেক মসজিদ, যা এখনো টিকে আছে, তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে)। আর সেই প্রার্থনাস্থলে প্রতিদিন বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়ানো হয়েছে, যা আজও চলমান। এই বাংলা একসময় বৌদ্ধ অধ্যুষিত ছিলো, কোথায় সেই বৌদ্ধ জনগোষ্ঠি? কিছু সীমানা বদল করে নেপাল-তিব্বতে আশ্রয় নিলেও অধিকাংশকে বাধ্য করা হয়েছে ধর্মান্তরিত করতে। অথচ আমরা দিনের পর দিন ২০০ বছরের বৃটিশ বেনিয়াদের শাষনকালকে ঘৃনার চোখে দেখেছি-দেখছি এবং নিশ্চিতভাবে দেখবো। কিন্তু এই বৃট্রিশ বেনিয়ারা যতই লুটপাল করুক, রক্ত ঝরাক তাতে শতভাগ বিশ্বাস রেখেও বলছি যে- আজকে আমরা যতটুকু শিক্ষিত-সভ্য-ভব্য তা বৃটিশ-ইউরোপের দান। যে ভাষা-ব্যকরণ নিয়ে আমরা গর্ব করি তা বৃটিশদের কৃপায় ঋদ্ধ হয়েছে, আমাদের মুদ্রনশিল্প-আমাদের নাকট-সিনেমা-মুক্তচিন্তা-সহমর্মিতা সবই বৃটিশ শাষনকালে অর্জন করেছি। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়সহ যতগুলো প্রাচিন ও প্রথিতযশা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তার শতকরা ৯৫ ভাগ বৃটিশ-ইউরোপীয়দের অনুগ্রহে স্থাপিত হয়েছে। যা আজো অকৃপনভাবে জ্ঞান বিতরণ করে চলছে। অথচ মোঘলদের ৭০০ বছরের রাজত্ব কাল পর্যালোচনা করে দেখুন-সেখানে কেবল তরবারির মাধ্যমে সামাজ্য বিস্তার, ভোগবিলাস এবং নারী লিপ্সতায় টুইটুম্বুর। তাই তাজমহল আপাতঃ আপনার দৃষ্টিকে ধোঁকা দিয়ে “ওয়াও” বলাতে পারবে। এরচেয়ে বেশী কিছু দেয়ার ক্ষমতা ঐ নিষ্প্রান তাজমহলে নেই। কেননা তা যে নিষ্প্রান ভন্ড-প্রতারক মোঘলদেরই কীর্তি। ইতিহাসও তাই তাদের ক্ষমা করেনি। তাই তো-আজকে তাঁরা বিলুপ্ত-বিলীন।

ইউকিপিডিয়া হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- University of Cambridge স্থাপিত হয়েছে ১২০৯ সনে এবং The University of Oxford স্থাপিত হয়েছে ১০৯৬ সনে। এই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর হতে সমগ্র মানবজাতিকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-সাহিত্যে-দর্শনে যে পরিমানে ঋদ্ধ করেছে- পৃথিবীর বাকী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মিলিতভাবেও তা করতে পারেনি। আজকের আমরা যতটুকু সভ্য-ভব্য-বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ তার কিয়দাংশের দাবীদার এই দু’টি প্রাচিন বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এই সুযোগ অভিবক্ত ভারত বর্ষেরও ছিলো। University of Cambridge এবং The University of Oxford জন্ম নেয়ার ৫০০ বছর আগেও এই উপমহাদেশে “নালন্দা” ও “বিক্রমশীলা” নামক দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় দু’টি বৌদ্ধ ধর্ম ভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র ছিলো, তবে মোঘলরা তা টিকে থাকতে দেয়নি। অথচ মোঘলগণ ইচ্ছা করলেই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় দু’টিকে সার্বজনীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুর্নগঠন করতে পারতো। কিন্তু যে জাতি আজন্ম ভোগ-বিলাসী জীবনে অভ্যস্থ তারা শোকের সমাধি নির্মানে প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করতে পারবে। তাঁদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা আর তামার পাথর বাটিতে বিশ্বাস করা এক ও অভিন্ন। যে সময়ে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল তৈরী করেছে- সেই টাকা দিয়ে তিনি মুমতাজ মহলের নামে অখন্ড ভারত উপমহাদেশে ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারতেন। চিন্তা করে দেখুন, আজকে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স হতো ৭০০ থেকে ১০০০ বছর। যা দিয়ে এই উপমহাদেশ জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-সাহিত্যে-শিল্পে-চিন্তায়-মুক্তচিন্তায় ঋদ্ধ হয়ে সমগ্র পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করতে পারতো। কিন্তু তা তো হবার নয়। যে রক্ত চিরদিন ভোগবিলাসী জীবনে অভ্যস্থ তাদের দ্বারা আর যাই হোক পৃথিবীর তথা মনুষ্য জাতির কোন মঙ্গল হতে পারেনা, পারেও নাই। আর সম্ভবও হবেনা। আরব্য দেশ গুলোর দিকে তাকান আমার অভিযোগের উত্তর পেয়ে যাবেন।