“জ্ঞানার্জন প্রার্থনার চাইতে উত্তম”
– ঈমাম গাজ্জালী

১.
এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে কওমি মাদ্রাসা একটি ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা এবং মূলত মুসলিম পরিবারের সন্তানদের জন্যেই এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন। এর সাথে এটাও সত্যি যে মাদ্রাসা শিক্ষার মূলধারা, ইতিহাস অনুযায়ী যার শুরুটা অষ্টম বা নবম শতাব্দীর সময় থেকে, কওমি মাদ্রাসা ঠিক তারই সরাসরি উত্তরাধিকার এটা বলাটা সহজ নয়। অন্তত ইতিহাস আমাদের তা বলেনা। বরং মূলধারার মাদ্রাসা শিক্ষা ইতিহাসের এক পর্যায়ে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের ফল হিসাবে বিভাজিত হয়ে দুটি ভিন্ন (হয়তো পরস্পর বিরোধী নয়) চরিত্র লাভ করে। যার একটি আলিয়া মাদ্রাসা আর আরেকটি কওমি মাদ্রাসা। সুতরাং যারা কওমি মাদ্রাসাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়কালের শিক্ষার ব্যবস্থার সরাসরি উত্তরাধিকার বলে দাবী করেন, ইতিহাস তাঁদের এই দাবীর স্বপক্ষে খুব জোরালো সাক্ষী দেয়না।

আমাদের দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা দুইটি প্রধান ধারায় বিভক্ত। একটি সরকার ও রাস্ট্র নিয়ন্ত্রিত আলিয়া মাদ্রাসার ধারা এবং অপরটি সরকার ও রাস্ট্রের নিয়ন্ত্রনের বাইরে স্বাধীন ধারা যাকে বলা হয় “দেওবন্দী” বা কওমি মাদ্রাসা। দেওবন্দী বা কওমি মাদ্রাসা ধারার সৃষ্টি ভারতের দেওবন্দ থেকে। “দেওবন্দ” মাদ্রাসা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৮৬৬ সালে, ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে ইসলামী “মূলধারার” প্রথা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এই ধারার জন্ম হয়েছিলো।উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের পতন এবং ইংরেজ কলোনিয়াল শাসকদের সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রেক্ষিতে, মুসলমানদের একটি ধারা এই আন্দোলনের সুচনা করে, ইসলামী সংস্কৃতি ও আদব কায়দা – রীতিনীতি সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে।১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পরাজয়ের পর ভারতীয় মুসলমানদের মাঝে এক ধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতাবোধ প্রকট হয়ে ওঠে। মুসলিম ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এর সকল সম্ভাবনা যখন সুদূর পরাহত তখন দেওবন্দ মাদ্রাসা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতাগণ সিদ্ধান্ত নেন এক ধরনের বিশুদ্ধতাবাদী বিছিন্নতার, তারা সিদ্ধান্ত নেন, দেওবন্দ মাদ্রাসা আন্দোলনকে ভারতের মূল ধারার সমাজ থেকে এমন কি ভারতের মূল ধারার মুসলিম সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন রাখার। এই লেখাটি মুলত মাদ্রাসা শিক্ষার দেওবন্দী ধারার উপরে, সুতরাং আলিয়া মাদ্রাসা বা অন্যান্য স্বাধীন মাদ্রাসা বিষয়ক আলোচনা এই লেখায় অনুপস্থিত থাকবে।

দেওবন্দী চেতনার হদিস পেতে হলে আমাদের অন্তত খানিকটা পরিমানে মাদ্রাসা শিক্ষার মূল ইতিহাস জানা দরকার। ভারতবর্ষের মাদ্রাসাশিক্ষা তথা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিহাস জানা দরকার এবং বিশেষত মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ দিক থেকে ইসলামের কোণঠাসা হয়ে পড়ার সময়টুকুকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। জানা দরকার দেওবন্দী ধারার প্রাণপুরুষ শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং তাঁর অনুসারীদের তত্ত্ব, মতামত, পথ ও অনুশীলনের কথা। ইংরাজীতে দেওবন্দ মাদ্রাসা আন্দোলনের উপরে বেশ কিছু তথ্যবহুল পুস্তক, মৌলিক গবেষণার নজির আছে। বাংলায় মূলধারার গবেষকদের মাঝে এই বিষয়ের উপরে খুব বেশী সংখ্যক কাজ চোখে পড়েনা। বাংলাদেশের লেখক গবেষকদের মাঝে অধ্যাপক আলী রিয়াজ একমাত্র যার গবেষণাকর্ম বিভিন্ন জার্নাল এ প্রকাশিত হয়েছে এবং একাধিক পুস্তকে তিনি এই বিষয়ে আলোকপাতের চেস্টা করেছেন। অধ্যাপক আলী রিয়াজের পুস্তক গুলোও ইংরাজী ভাষায় লিখিত। এই লেখাটি প্রস্তুত করা হয়েছে, কয়েকটি পুস্তক ও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য জার্নাল প্রবন্ধ এবং কিছু অনলাইন প্রকাশনার উপরে ভিত্তি করে। লেখাটীর শেষে ব্যবহৃত রেফারেন্স গুলো সংযুক্ত করা হবে।

২.
ইসলামে জ্ঞান ও শিক্ষার ধারণাটি খুব সহজ সরল নয়। বিশেষত পশ্চিমা বা সেকুলার ধারায় জ্ঞান ও শিক্ষা বলতে আমাদের যে সাধারণ বোঝাপড়া, ইসলামের ইতিহাসে জ্ঞান ও শিক্ষার ধারণার সাথে তার ফারাকটি বিস্তর। এই পার্থক্যটি ঐতিহাসিক, এই পার্থক্যটি দার্শনিক, আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক। এই পার্থক্যকে ভালো-মন্দ বা উচিত-অনুচিত এই রকমের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করাটা সঠিক হবেনা। বরং ইসলামের সাথে সেকুলার ধারার জ্ঞান ও শিক্ষার ধারণার এই পার্থক্যর বিষয়গুলো জানা দরকার। নইলে মাদ্রাসা শিক্ষা সহ ইসলামী ঘরানার অন্যান্য শিক্ষার ধারাকে বোঝার ক্ষেত্রে সমূহ ভুল হবার সুযোগ থাকবে।

বাঙলা ভাষায়, বিশেষত বাংলাদেশের বাঙলা লেখালেখিতে, ইসলাম ধর্মে জ্ঞানার্জন এবং শিক্ষার ধারণা বিষয়ে মৌলিক লেখালেখি খুব বিস্তর দেখা যায়না। যে সামান্য কিছু লেখালেখি দেখা যায় সেখানে পদ্ধতিগত আলোচনার বদলে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই বিষয়টিকে ব্যাখ্যার করার প্রবনতা বেশী লক্ষ্য করা যায়। ইসলামে জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষার ধারণা বিষয়ে যা কিছু ইতিহাস ও লেখালেখি পাওয়া যায় তাঁর সবই ইসলামের দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ খোলাফায়ে রাশেদিনের পতনের পরবর্তী পর্যায়ের ইতিহাস। বাঙলায় তার কিছু অনুবাদ রয়েছে। ইসলামের নবী মুহাম্মদের সময় থেকে প্রথম এক বা দেড় শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন বিষয়ক কোনও সুস্পষ্ট লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়না। তবে নবী মুহাম্মদের কিছু বানী বা হাদিস থেকে একথা বোঝা যায় তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন। আমাদের দেশে বাংলাভাষার আলোচনাগুলোতে, ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার জন্যে দুটি বিষয়কে হাজির করা হয়ে থাকে। এক. হেরা পর্বতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ যখন আরাধনারত ছিলেন এবং সেই সময়কালে ফেরেশতা জিবরাঈল যখন তাঁর কাছে আল্লাহর অহী নিয়ে আসেন, সেই অহীর প্রথম কথাই ছিলো “পড় তোমার প্রভুর নামে”। যদিও এই একটি বাক্যের নানান ধরনের ব্যাখ্যা হতে পারে, তবুও ইসলামী আলেমগন মুহাম্মদের উপরে নাজেল হওয়া অহীর এই বাক্যটিকেই ইসলামে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের গুরুত্বকে ব্যাখ্যা করার জন্যে প্রাথমিক ভাবে উল্লেখ করে থাকেন। আরেকটি উল্লেখযোগ্য হাদিসকে এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়ে থাকে তা হলো – “দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানের সাধনা কর”। অর্থাৎ ইসলামের নবী বলেছেন, মানব শিশুর শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত জ্ঞান চর্চা করার কথা। কিন্তু এই উপদেশগুলো কেনো ঠিক ইসলামের জ্ঞান চর্চার গুরুত্ব কে ব্যাখ্যা করে সে বিষয়ে কোনও বিষদ আলোচনা বা ব্যাখ্যা পাইনা বাঙলা ভাষায়। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী মুহাম্মদ প্রচলিত অর্থে অশিক্ষিত ও নিরক্ষর ছিলেন। সেই নিরক্ষর ও অশিক্ষিত মানুষটিই হয়ে ওঠেন ইসলামের প্রথম যুগের প্রধান এবং একমাত্র শিক্ষক। কিন্তু যখন ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো সেই সময় এই নতুন ধর্মের প্রাথমিক দীক্ষা দেবার জন্যে আরো বেশী সংখ্যক শিক্ষিত মানুষ দরকার হয়ে পড়লো যারা লিখতে ও পড়তে পারবেন। কথিত আছে, বদরের যুদ্ধের পরে (৬২৩ খ্রিস্টাব্দ) নবী মুহাম্মদ কয়েকজন যুদ্ধবন্দীকে এই শর্তে মুক্তি দেন যে তাঁরা মদীনার শিশুদেরকে পড়তে ও লিখতে শেখাবেন । লিখতে এ থেকেও বোঝা যায় যে শিক্ষা ও লিখতে পড়তে পারার যে সামাজিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে যে কৌশলগত সুবিধা (স্ট্র্যাটেজিক এডভান্টেজ) তা মুহাম্মদ হয়তো বুঝতে পারতেন।

ইসলামের নবী মুহাম্মদ নিরক্ষর ছিলেন, তিনি পড়তে ও লিখতে পারতেন না (এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে, যা আমরা এই লেখার জন্যে প্রাসঙ্গিক নয় বলে সরিয়ে রাখছি)। তাই কুরআন নাজেল হবার পরপরই সেই সকল বানী মুহাম্মদের সঙ্গী ও সাথীরা মুখস্থ করে ফেলতো এবং পরবর্তীতে যারা লিখতে পারতেন তাঁরা সেই সকল সুরা বা আয়াত কে লিপিবদ্ধ করতেন। সেকারনেই ইসলামের গোড়ার যুগে মুখস্থ বিদ্যার প্রয়োজনীয়তাটি তীব্র ছিলো। মুহাম্মদের নেতৃত্বে যখন ইসলাম একটি নতুন ধর্ম হিসাবে গড়ে উঠছে, প্রাথমিক পর্যায়ে খুব সামান্য কিছু মানুষ নিজেদের ইসলামের অনুসারী হিসাবে ঘোষণা করছেন, তখন এই নতুন ধর্মের প্রথা, নিয়ম কানুন, উচিত-অনুচিত ইত্যাদি নানান বিষয়ে প্রতিদিন নানান রকমের আলোচনা, পরামর্শ দেয়াটা ছিলো নবী মুহাম্মদের একটি প্রধান কাজ। এই কর্মকান্ডকে অনেক ইসলামী পণ্ডিত ইসলামের প্রথম যুগের শিক্ষা হিসাবে বর্ণনা করতে চেয়েছেন। এই ধরনের শিক্ষা প্রদানের কাজে প্রধানত একজন শিক্ষক থাকতেন এবং বাকীরা শ্রোতা বা ছাত্রর ভুমিকায় থাকতে্ন। শিক্ষাক্রম পুরোটাই ছিলো একমূখী, অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ থেকে তাঁর সঙ্গী বা সাহাবীদের প্রতি, কিম্বা কোনও একজন প্রবীন সাহাবী থেকে অন্যান্য নবীন মুসলিমদের প্রতি। মুখস্থবিদ্যা ও একমুখী শিক্ষা প্রদানের এই ধরনটিই পরবর্তীতে ইসলামের শিক্ষার মৌলিক কাঠামো হিসাবে দেখা গেছে।

ইসলামের শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের ধারণা নিয়ে নানান মুনির নানান মত রয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘরানার মতামত রয়েছে। কোনও একজন বিশেষ চিন্তকের চিন্তাকে মূল বা ভিত্তি ধরে ইসলামের এই বিষয়ের চিন্তাকে উপস্থাপন করাটা আংশিক ও ভুল হতে পারে। তাই এ বিষয়ে অন্তত পক্ষে ইসলামের ইতিহাসের প্রধান চিন্তকদের চিন্তা ও মতামতগুলো তুলে ধরাটা কার্যকর হবে। ঐতিহাসিক ভাবে ইসলামের প্রথম যুগে শিক্ষা বলতে কেবল নতুন ধর্মে দীক্ষিতদের বিভিন্ন রীতি নিতি আচরণবিধি ইত্যাদি শেখানোর বিষয়টিকে বোঝানো হতো। কিন্তু পরবর্তীতে সুনির্দিষ্ট ভাবে শিক্ষার ধারণার উন্মেষ ঘটতে থাকে। মূলত ইসলামী পণ্ডিতদের ব্যক্তিগত চিন্তা তাঁদের অনুসারীদের মাধ্যমে প্রসার লাভ করে। কখনও কখনও কোনও কোনও পন্ডিত সেই সময়ের রাষ্ট্রক্ষমতার কাছাকাছি থাকায় তাঁদের প্রভাব বড়ো জনগোষ্ঠীর মাঝেও বিস্তৃতি লাভ করে। ইসলামের ইতিহাসে এই পন্ডিতদের শিক্ষাচিন্তার মাঝেও রয়েছে অনেক ভিন্নতা। একটা বিষয় খুব স্পষ্ট, যে সকল ইসলামী পন্ডিতদের চিন্তার মধ্যে দিয়ে ইসলামী শিক্ষা ধারণা বিকশিত হয়েছে তাঁদের একটা বড় অংশ ইসলামের মূল ভুমি বর্তমান সৌদী আরবের বাইরের। সেকারনে এটাও একটা আগ্রহউদ্দীপক প্রশ্ন যে এই চিন্তকদের শিক্ষা সংক্রান্ত দার্শনিক মতামত গুলো কতটা ইসলামী আর কতটা ব্যক্তি বা অঞ্চল প্রভাবিত।

ইসলামে শিক্ষার ধারনাকে বুঝতে হলে, ইসলামের ইতিহাসের প্রধান পন্ডিতদের শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাকে জানা দরকার। এই লেখার প্রথম কয়েক পর্বে উল্লেখ করবো সেই সকল উল্লেখযোগ্য ইসলামী পন্ডিতদের শিক্ষা ধারণা কে।

৩.
ঈমাম আবু হানিফা

ইসলামের ইতিহাসে শিক্ষা ও শিক্ষাপদ্ধতি বিষয়ক সর্বপ্রথম যে নজিরটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে ঈমাম আবু হানিফা আল নোমান ইবনে থাবিত (১৪৮ হিজরী/৭৬৭ সাল) বা সংক্ষেপে যাকে আমরা ঈমাম আবু হানিফা বলে জানি, তাঁর রচিত পুস্তক “কিতাব আল-আলিম ওয়া-আল-মুতাওয়াল্লিম” কিম্বা “জ্ঞানী মানুষের বই ও যিনি আরো জানতে ইচ্ছুক” (মূল ইংরাজী অনুবাদে এইভাবেই অনুবাদ করা হয়েছে – “The Book of the One Who Knows and the One Who Wants to Know”)। এই পুস্তকটি মূলত ইসলামের কায়দা-কানুনের শিক্ষাদান পদ্ধতি (pedagogical approach) নিয়ে লেখা। ঈমাম আবু হানিফা ছিলেন সুন্নী ইসলামের সবচাইতে বড় মজহাব “হানাফী” এর নেতৃত্বদানকারী পণ্ডিত, আইনজ্ঞ ও ধর্মতাত্ত্বিক। যদিও পুস্তকটির বয়ান ঈমাম আবু হানিফার কিন্তু তাঁর হয়ে পুস্তকটি লেখেন তারই একজন প্রথম সারির ছাত্র আবু মুকাতিল আল-সমরখান্দি (২০৮ হিজরি/৮২৩ খ্রিস্টাব্দ)। আবু মুকাতিল আল-সমরখান্দি সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানা যায়না, তবে তাঁর সমকালীন পন্ডিতদের মাঝে একজন উৎকৃষ্ট আলেম হিসাবে তাঁর পরিচিতি ছিলো। এই পুস্তকখানি ইসলামের ইতিহাসে শিক্ষা বিষয়ক প্রথম প্রকাশনা হলেও, এর রচনার ধরণটি ছিলো একেবারেই সক্রেটেসীয় বা সক্রেটিক ঘরানার। পুস্তকটি সাজানো হয়েছিলো, সেই সময়ের বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও তাঁর উত্তর নিয়ে একজন ছাত্র ও শিক্ষকের কথোপকথন বা ডায়ালগ আকারে । সুতরাং একথা খুব স্পষ্ট যে ইসলামের শিক্ষার ধারণা যখন থেকে দানা বাঁধতে শুরু করে, তখন থেকেই এর উপরে গ্রীক প্রভাব ছিলো। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং মনে রাখা দরকার।

তাহলে আজকের পর্ব থেকে চারটি বিষয় মনে রাখা দরকার।

প্রথমত – ইসলামের ইতিহাসে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রতি নবী মুহাম্মদের আগ্রহের কথা জানা যায়।
দ্বিতীয়ত – কুরআন লিখিত হওয়া এবং এর সংরক্ষন এর জন্যেই মুখস্থ বিদ্যার প্রয়োজন হতো এবং সেখান থেকেই আল্লাহর কালাম মুখস্থ করবার প্রথার শুরু।
তৃতীয়ত – ইসলামের প্রথম পর্যায়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিলো একমুখী শিক্ষাদান পদ্ধতি, সাধারণত নবী মুহাম্মদের দিক থেকে তাঁর সঙ্গী সাথীদের দিকে। এবং
চতুর্থত – নবী মুহাম্মদ ও খোলাফায়ে রাশেদিনের পরের পর্যায়ে যখন ইসলামে জ্ঞান ও শিক্ষার ধারণা দানা বাঁধতে শুরু করে ঈমাম আবু হানিফার নেতৃত্বে, তখন থেকেই শিক্ষাদান পদ্ধতিতে গ্রীক প্রভাব ছিলো সুস্পষ্ট।

(চলবে )