আমি চাই, আমার মা একটি কবিতা লিখুক ।
কুসুমকুমারী দাস কিংবা সুফিয়া কামালের মত করে নয় ।
একদম নিজের মত করে ।
যেভাবে তিনি বুঝেন- একটি তরকারিতে কতটুকু নুনের প্রয়োজন ।
তেল এবং পেঁয়াজের মিশ্রণে কিভাবে একটি অমৃত পরিবেশন করতে হয় ।
তোষকের নিচে জমানো টাকায় বৃদ্ধ শ্বশুরের ঔষধের জোগাড় তিনিই করেন
তিনি জানেন সংসারে বৃদ্ধ কবিতাগুলো কত অসহায় !
বেহিসেবি ছোট ছেলের বৈরাগীত্বে বড্ড বেশী আপত্তি তার ।
দুর্মূল্যের বাজারে দুর্বোধ্য কবিতার ব্যঞ্জনা তিনি বুঝেন ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।
অষ্টাদশী বালিকার সংসারে অভিষেক,
তারপর দুই যুগের মধ্যবিত্ত সংসারে-
অসঙ্খ্য কবিতার বেড়ে উঠা ও ঝরে পড়ার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী তিনি ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।
ষ্টীলের আলমারী খুললেই ধেয়ে আসে ন্যাপথলীন বায়ূ
খুব যতনে আগলে রাখা কচুয়া রঙের শাড়ি, বাবার পাঞ্জাবী,
পৈতৃকভাবে পাওয়া কয়েককাঠা জমির ধুলাবৃত দলীল ।
আমি ঠিক এমনি কিছু কবিতার কথা বলছি ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।
মাস শেষে বাড়িভাড়া, কারেন্টবিল, মাস্টারের বেতন,
সমস্ত কিছুর টানটান হিসেব তিনি যেভাবে করেন
ঠিক সেভাবেই তিনি একটি কবিতার হিসেব কষবেন ।
আমি চাই এমনি একটি কবিতা আমার মা লিখুক ।
-হিমেল হাসান বৈরাগী
আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। আমার লেখাপড়া কম জানা মা। যে মা বুঝে না বেশি পড়লে কি হয়। যে মা অবুঝের মতো বলে; “সোনা, তুই এত বড় বড় বই পড়িস কেমনে রে! তোর চোখ ব্যাথা করে না! তুই এত পড়িস না ; আমার ভয় হয় যদি পড়তে পড়তে পাগল হয়ে যাস! শুনেছি, মানুষ বেশি পড়লে পাগল হয়ে যায়।”
আমি মাকে বুঝাতে পারি না, আমার অবুঝ মায়ের অস্থির আশঙ্কা আমায় ব্যাথিত করে না। আমার বুকে কেমন চিনচিন করে।
বিষয়টা দুর্দান্ত। আমাদের নিত্যকার জীবনের এ নির্জলা সত্যকে এমন করে উপস্থাপিত করা
সম্ভব জানা ছিল না। ভাল লেগেছে।
ভাল লেগেছে!
বাহ্, অপূর্ব, মৌলিক এবং শক্তিশালী। খুব ভালো লেগেছে।
মুক্তমনা’য় স্বাগতম হিমেল। আরো লিখুন।