১. শুধুমাত্র ঘরকন্যা করবার বদলে, শুধু’ই ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হবার বদলে; দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার চেষ্টা করেছিলো মাধ্যমিক স্কুলের কয়েক’শ কিশোরী। ২০১৪ সালের এপ্রিলে সেখানকার একটি হাইস্কুল থেকে ২৭৬ জন কিশোরীকে জোর করে ধরে নিয়ে কাছেই একটা জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে বোকো হারাম নামের একটি ইসলামিক উগ্রপন্হী মৌলবাদী দল। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোকে তারা নিয়মিত ধর্ষণ ও অত্যাচার করতে থাকে; যৌনদাসী বানিয়ে ফেলে এবং টাকা পয়সার দরকার হলেই অন্য দলের কাছে বিক্রিও করে ফেলে। ছোট্ট মেয়েগুলোর অপরাধ ছিলো তারা স্কুলে যায়। নাইজেরীয় ওই এলাকার নাম, ‘চিবক’।
আল্লাহ’র আইন প্রতিষ্ঠাকল্পে, খেলাফতের আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মেয়েদের আধুনিক শিক্ষা চর্চা বা ঘর থেকে বেরুনো সবকিছুই বোকো হারামেরে চোখে গুনাহের কাজ। সুতরাং স্বপ্ন দেখা বাচ্চা মেয়েগুলোকে শাস্তি স্বরূপ ধর্ষণ, অত্যাচার বা যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়টা সঠিক কাজ বলে ঘোষণা করে ইসলামের ওই সেনাদল। এই জঘন্য কাজগুলোর পক্ষে কোরান থেকে, হাদিস থেকে বিভিন্ন আয়াত ও ঘটনা উল্লেখ করে তারা তা সঠিক বলে ঘোষণা করে। বেশ অনেকটা যেন হেফাজতের শফি মোল্লার ফতোয়ার মত। মেয়েগুলো তাদের ইসলামী শাস্তি আজও পাচ্ছে। বাচ্চাগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকজন, বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনার পর; ধর্ষকদের বাচ্চা কোলে করে বা অন্তঃস্বত্তা হয়ে; মৃতপ্রায় হয়ে ফিরে আসে বছর পার করে। আজ’ও ফেরেনি শ’য়ে শ’য়ে মেয়ে।
২. গাইবান্ধা’য় একটি মাধ্যমিক স্কুলকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কে জমে যাওয়া ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টেন’এর কিশোরী বাচ্চাগুলো সেই ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। রঙিন ছবিযুক্ত হেডলাইন হয়েছে খবরটা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়।
ঘরকন্যা না শিখে, ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার চেষ্টা করেছিলো মেয়েগুলো; তা’ই দেওয়া হয়েছে প্রতীক স্বরূপ এই শাস্তি। হেফাজতে ইসলাম আদর্শের মৌলবাদীদের চোখে সেটা গুনাহের কাজ; সুতরাং তাদের শাস্তি পেতেই হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি বলেন, ‘নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে যে সন্ত্রাসী চক্র দেশের উন্নয়ন ও নারী শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ভস্মীভূত করেছে। সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে নাশকতাকারী এবং মৌলবাদী এই অশুভ চক্রকে অবশ্যই দমন করবে।’ খবরের সূত্র দায়ী করেছে ইসলামী মৌলবাদীদের; বলেছে ‘চরাঞ্চলের মৌলবাদী একটি সন্ত্রাসী চক্র দীর্ঘদিন থেকেই ওই এলাকায় নারী, শিক্ষা এবং উন্নয়নের বিপক্ষে নানা অপতৎরতা চালিয়ে আসছিল। স্থানীয় লোকজন মনে করছেন তারাই এই বিদ্যালয়টিকে সুপরিকল্পিত ধ্বংস করতে চেয়েছে’। বোকো হারাম আর হেফাজতীদের মৌলিক কোন মিল কি দেখতে পাচ্ছেন?
৩. কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া গণ-উন্নয়ন একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ-উন্নয়ন কেন্দ্রের অর্থায়নে ২০০৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ৫৭৩ জন শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। আগুন লাগিয়েছে যারা তাদেরকে চরমপন্হী, দুস্কৃতকারী, ক্রিমিনাল, স্থানীয় পান্ডা, ভূমিদস্যু বা যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এরা যে আসলে খেলাফৎ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা দল তা’নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই। বাংলাদেশের স্কুলপাঠ্য বইতে যারা ‘ও’ তে ওড়না লেখায় এগুলো তাদের’ই অনুসারীদের স্বাক্ষর। বাংলাদেশে নারী’রা যখন উন্নয়নের একটি প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে পারছে তখন তা চুরমার করে দিতে মৌলবাদের খেলাফৎ প্রতিষ্ঠার মত অস্ত্র অতীব অব্যর্থ। ধর্মের নামে সেটা’ই প্রয়োগ করা হচ্ছে সুপরিকল্পিত ভাবে; ধীরে ধীরে; দৃঢ়ভাবে এবং বিভিন্ন ভাবে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে স্কুলের মেয়েরা ওড়না, হিজাব পরে, ভদ্র্র নম্র ভাবে বিদ্যাশিক্ষা করতে গিয়েছিলো; তবু মোল্লাদের ঠেকাতে পারেনি। স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে; সুযোগ পেলে, বিশাল বন বা লুকানোর জায়গা থাকলে বদমাশগুলো বোকো হারামের মতই নৃশংসতা দেখাতো।
৪. বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু। ধর্ম মানে অথচ ধর্মে অন্যায় দেখলেও এড়িয়ে যায়, ভয়ে প্রশ্ন করে না; কারণ তারা শিখেছে ওটাকে নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না। এই কারণেই চোখের সামনেই দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। সংঘবদ্ধ ভাবে ধর্মগুন্ডারা খোলা মনের আধুনিক মানুষদের মনে ও গায়ে চাপাচ্ছে ধর্মের শর্ত। শিশুকাল থেকে বাপ্ মা’র চাপানো ধর্মভয় এখন বড়দের মন’কেও প্রবল ভয় দেখাচ্ছে। জিতে যাচ্ছে ধর্মের কর্পোরেট গুন্ডারা। জিতছে রাজনীতিবিদ’রা, ভন্ড জনপ্রতিনিধিরা; হেফাজতিরা। মেয়েদেরকে বস্তায় ভরে ফেলার প্রচেষ্টার জিৎ হচ্ছে; জিতে গেছে হিজাব, নেকাব, বোরখা। হেফাজতি’রা এখন মেয়েদের জন্য তৈরী করছে চাবুক। হয়তো হিজাবের মত চাবুক’ও একদিন জিতে যাবে এই ধর্মভীরু বাংলাদেশে।
কারো মনের গভীরে কিছু গেঁথে দিতে শিশুকাল’টাই সবচেয়ে সহজ সময়। এই সময়টাতে যা শেখানো হয় তা খুব সহজে আর বদলানো যায় না। কাজেই শিশুকে মা, বাবা আর সমাজ যা শেখায় সে তা’ই শেখে আর বড় হয়েও সেটাকেই সত্যি ভাবে। খুব কঠিন হয়ে যায় সেই বাল্য শিক্ষা থেকে বেরিয়ে এসে প্রয়োজনীয় সত্য অনুসন্ধান করা। খুবই ভয়ঙ্কর যা সেটা হলো, কিছু কিছু বাল্যশিক্ষা শিশুটিকে যদি ভয় দেখিয়ে শেখানো হয়। শেখানো হয় এমন ভাবে যে সেই শিক্ষাকে প্রশ্ন করলে মহাবিপদ হবে তার। ফলে বড় হয়ে ওঠা সেই শিশু ভুয়া এই বিপদ এড়াতে প্রয়োজনীয় সত্য অনুসন্ধান করবার কথা চিন্তাও করে না। এই রকমের একটা শিক্ষার একটি উদাহরণ হচ্ছে; ধর্ম শিক্ষা।
এত হতাশার পর খুব আশা জাগানিয়া ছবি এটা। অস্থায়ী হলেও সেই পোড়া স্কুলে ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে বিদ্যুৎ গতিতে। এই তো চাই।
যে কোন জাতির সংস্কৃতির শেকড় থাকে অনেক গভীরে। বাঙালি যেখানটায় বাস করে সেখানে আর তার আশপাশে শত শত বছর ধরেই দখলদার বিদেশী শাসকরা তাদের নানান আচার আচরণ ধর্ম চাপিয়ে দিয়েছেলো সাধারণের উপর। খুব বেশি সফল হয়নি। তবে ধর্ম আর ভয় এই দুটো মিশিয়ে শাসকরা ফায়দা লুটেছে; আজ’ও লুটছে। স্বজাতির সেবক-বন্ধু’র ছদ্মবেশে শাসকরা আজ আরো ভয়ঙ্কর। ছলে, বলে, কৌশলে গদি ধরে রাখতে যে কোন পদ্ধতির ব্যবহার করেছে নাগরিককে ধাপ্পা দিতে। ধাপ্পাবাজি আজ’ও চলছে। কাজেই রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজদের থেকে সাবধান। ওদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন বন্ধুগণ; বাঙালি থাকুন।
এ দেশে শুধু হেফাজত না, মৌলবাদী বিভিন্ন সংগঠন আমাদের নাকের ডগায় উঠে থাকে যেমন তাবলীগ, এই সংগঠনটি পুরুষদেরকে দাঁড়ি, পায়জামা,পাঞ্জাবী আর নারীদেরকে বোরকা পরার জন্য ম্যানেজ করে।
সমাজে চলতে আজকাল শাড়ী পরে চলতে খুবই ভয় লাগে, কোন সময় হেফাজতী জঙ্গীরা হামলা চালায় কে জানে, নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বোরকা পরি।
আওয়ামী লীগ নাকি ধর্মনিরপেক্ষ……….ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
এই বাচ্ছা বাচ্ছা মেয়েগুলির কান্না এক অভিশাপের মত এসে পড়বে মৌলবাদী দের উপর। যারা এই কান্ড করেছে (স্কুল পোড়ানো) তাদের গন প্যাদানিও কম শাস্তি। হাত নিশ পিশ করছে এদের পিটিয়ে মারতে, কিন্তু কি আর করব। মৌলবাদী দের সাবধান করে দিচ্ছি, ইন্দ্রনীল এর থেকে দূরে থাক , হাতের কাছে পেলে মুমিন ,ধর্ষক দের সেটাই শেষ দিন , চিনিস না এই ইন্দ্রনীল কি জিনিষ।
জাকগে এটা আরো বেশি করে সবার সামনে আসুক।
কুকুর কামড়ালে কুকুরকে কামড়াতে হয় না ভায়া, ওটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হয়। আসুন, পদ্ধতি বা পদ্ধতিগুলো আরো খোঁজা যাক আর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়াও অব্যাহত থাক। ভালো থাকুন।
যৌক্তিক চেতনা বিস্তারের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের কে । ইতিহাসে দেখা যায় যুক্তিরই জয় হয় এক পর্যায়ে ।শুধু আক্ষেপ হয় : বিজ্ঞান চেতনা বিস্তারের আইনগত সুরক্ষাও নেই বা থাকলেও দেবে কে? তবুও একান্ত দায়িত্ব বোধ থেকেই আমরা এই আলোর মিছিলে যোগ দেবোই ।প্রজন্মের কাছে যেভাবে হোক পৌছে দিতে হবে যুক্তির আলোয় সত্য কে খোজার দর্শন ।
ধন্যবাদ। খুব ভালো বলেছেন।