লিখেছেন: নিকসন কান্তি
বাংলাদেশের সংবাদ জগতে ফলোআপ ব্যাপারটা কম চোখে পড়ে। একেকটা ঘটনায় ক’দিন খুব হৈ চৈ হয়। সংবাদপত্রের
প্রথম পাতায় লাল-রঙা বিশাল হেডিং। পরপর কয়েকদিন। এর মধ্যেই আরেকটা বড় কিছু ঘটে। তখন আগেরটা চাপা পড়ে
যায়। প্রথম পাতা থেকে ভেতরের পাতায়। তার থেকে শেষ পাতায়। তারপর বিস্মৃতির অতলে। কোথাও আর কোন আলোচনা
নেই।
২০১৬ সালের এরকম কিছু চাপাপড়া ইস্যু এখানে তুলে রাখছি। এটা কিন্তু বছরের সালতামামি নয়। সব ঘটনা এখানে আসবে
না। আসবে শুধু সেগুলো যেগুলো ঠিকঠাক আসার আগেই হারিয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন তছনছঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে আহত মাসুদুর রহমান নামে একজন মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর পর তার সহপাঠীরা শহরের
রেল স্টেশন, আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল
দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। পুলিশের দুজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবং ঘটনা এখানেই শেষ। সামান্য ইজিবাইকের
ভাড়ার দরদাম নিয়ে যে দেশে শহরজুড়ে এতবড় সংঘর্ষ বাঁধে সে দেশে সুরসাধকের পুণ্যস্মৃতি এভাবেই নষ্ট হওয়ার কথা।
খবরটি যথারীতি দু’দিন পত্রিকায় ছিল। তারপর বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের সাথে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে গেল। ক’দিন আগের
শেকড় ওপড়ানো কোন পরাজয় তখন আর আমাদের মাথায় রইলো না।
ফলোআপ- বর্ষবরণ উৎসবে নারী লাঞ্ছনাঃ
জানুয়ারির শেষ দিকে একটা ভাল খবর পাওয়া গেল। বিগত বাংলা নববর্ষের বর্ষবরণ উৎসবের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এলাকায় নারী লাঞ্ছনার মামলায় পুলিশ কামাল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। ডিবি পুলিশ দীর্ঘদিন তাকে
নজরদারিতে রেখে এক পর্যায়ে নিশ্চিত হয়ে গ্রেফতার করে। খবরটি মিডিয়ায় বেশ ভাল ভাবেই এসেছিল। তবে কামাল তো
একজন মাত্র। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল আরও অন্ততঃ সাতজন যাদের ছবিও পুলিশ প্রকাশ করেছিল। তাদের আর খোঁজ
পাওয়া যায় নি। পরবর্তী পহেলা বৈশাখের আগে এ সংক্রান্ত কোন ফলোআপ রিপোর্টও মিডিয়ায় আসেনি।
সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের বিরূদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগঃ
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এ খবরটি আসে। তার এক-এগার এর সময়কার ভূমিকার জন্য এ অভিযোগ করা হয়। এসব ক্ষেত্রে
সরকারের অনুমোদন নিয়ে তদন্ত করার আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। আদালত সে অনুযায়ী মার্চ মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন
জমা দেয়ার জন্য কোতয়ালি থানাকে নির্দেশ দেন। পরের কয়েকদিনে তার বিরূদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হতে থাকে।
কোন দিন ১৩টা, কোন দিন ১৭টা। মামলার সংখ্যাই বলে দেয় এগুলো স্রেফ হয়রানীমূলক। অবশ্য এসবে তিনি কতটা হয়রান
হয়েছিলেন মিডিয়া সেটা আমাদেরকে আর জানায়নি। তবে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে আমাদের
কৃতার্থ করেছেন।
শিশু হত্যাঃ
হবিগঞ্জের বাহুবলে একসাথে চার শিশুর বালুচাপা দেয়া মৃতদেহ পাওয়ার খবরের সাথে প্রথম আলো পত্রিকা গ্রাফ আকারে
একটি পরিসংখ্যান দেয়। সেখানে দেখা যায় ২০১২ সালে সারাদেশে ২০৯ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে, ২০১৩ সালে ২১৮
জন, ২০১৪ সালে ৩৬৬ জন, ২০১৫ সালে ২৯২ জন এবং ২০১৬ এর ১৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৭ জন। তথ্যটি যে কোন হিসাবে বিস্ময়কর। আরো বিস্ময়কর যে লাগাতার এসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে অথচ সারাদেশে সর্বব্যাপী কোন সামাজিক প্রতিরোধ নেই, রাষ্ট্রের কোন বিশেষ উদ্যোগ নেই এবং মিডিয়ায় কোন তোলপাড় নেই, সংশ্লিষ্টদের সর্বক্ষণ জাগিয়ে রাখার কোন চেষ্টা নেই। শিশু হত্যার মত ঘটনা গা-সওয়া হয়ে যেতে পারে একমাত্র যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোন দেশে। বাংলাদেশ তো তা নয়। তবু বাংলাদেশেই এমনটা ঘটল। কে জানে হয়তো বাংলাদেশেই এমনটা ঘটার কথা। এমন দেশটি আর কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে সবকিছু এভাবে ভেঙে পড়ে!
মঠপ্রধানকে গলা কেটে হত্যাঃ
অনেকদিন পর ঘটনাটা দেখছি বলে আমরা জানি যে এটি একটি ধারাবাহিক ঘটনার অংশ। ভবিষ্যতে এমন আরো ঘটবে। যাই
হোক, এই বিশেষ হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে পঞ্চগড়ে। হত্যাকান্ডের শিকার যজ্ঞেরশ্বর রায়। দায়স্বীকার
আইএস এর। রীতিমত লিখিত দায়স্বীকার। তারপরও পুলিশ নিশ্চিত নয় এটা সত্যিই আইএসের কাজ কি না। কারণ পুলিশ
সুনিশ্চিত যে দেশে কোন আইএস নেই। পুলিশ তথা সরকারের এই আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে একটা ‘গুলশান ট্রাজেডি’র
প্রয়োজন হয়েছিল এই ঘটনার বেশ কয়েক মাস পর। এর মধ্যে ঢাকায় একজন মুয়াজ্জিন (বিল্লাল হোসেন) কে খুন করা হয়।
খুন হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিম উদ্দিন, টুঙ্গীপাড়ার সাধু পরমানন্দ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল
করিম সিদ্দিকী, কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়, টাঙ্গাইলে দরজি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, বান্দরবানের বৌদ্ধ
ভিক্ষু মং সৈ উ চাক ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বী আওয়ামীলীগ কর্মী মং শৈলুং মারমা, কুষ্টিয়ার হোমিও চিকিৎসক সানাউর রহমান,
নাটোরের ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজ, ঝিনাইদহের হিন্দু পুরোহিত আনন্দ কুমার গাঙ্গুলী, মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাস এবং
পাবনার এক আশ্রমের সেবায়েত নিরঞ্জন পান্ডে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনঃ
অনিয়ম নিয়ে অল্প কিছু রিপোর্ট থাকলেও সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার গোল্লায় যাওয়া নিয়ে মিডিয়ার হৈ চৈ প্রায় থিতিয়ে
এসেছিল। ভাবটা এমন- আর বলে কী হবে!
তনু হত্যাঃ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায় ২০ মার্চ ২০১৬। তনু কুমিল্লা
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেনের মেয়ে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভেতরেই তাকে পাওয়া যায়। পরবর্তী
কয়েকদিনে নানান জনের কথাবার্তায় কয়েকজন সেনা সদস্যের দিকে আঙুল ওঠে। পরে এ বিষয়ে আর কোন আপডেট পাওয়া
যায়নি। অনেক খবরের ভিড়ে এক সময় হারিয়ে যায় তনু। তারপরও সবচেয়ে বেশি সময় মিডিয়ার ফোকাসে ছিল বোধহয় এ
সংবাদটিই।
দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননাঃ
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন।
তারা ক্ষমাও চান। আদালত তাদের ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহন না করে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেন অনাদায়ে এক সপ্তাহের
কারাদন্ড। এর পরই বিতর্ক শুরু হয় যে এই ঘটনার পর উক্ত মন্ত্রীদ্বয়ের দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে কি না। তো যে
যাই বলুক তাঁরা বিতর্ককে কেয়ার করেন নি। পূর্ববৎ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন। মিডিয়াও আর ঘাঁটায় নি-
আচ্ছা থাক, না গেলে কি আর করা।
শিক্ষককে কানে ধরানোঃ
১৩ মে ২০১৬ তারিখে নারায়নগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ধর্ম অবমাননার
অভিযোগে স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরেই প্রকাশ্যে কানে ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেন স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান। বিষয়টি
নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। মিডিয়াতেও তার প্রতিফলন ঘটে। সেলিম ওসমানের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা
নেয়ার দাবী ওঠে চারদিকে। বলা বাহুল্য, ঐ পর্যন্তই। সাংসদ দূরের কথা, সেই হতভাগ্য শিক্ষকের কী হল সেই খোঁজ নেয়ার
আর প্রয়োজন মনে করে নি মিডিয়া।
ট্রানজিটঃ
নানামুখি বিতর্কের মধ্যেও আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া শুরু হয়। টন প্রতি মাশুল নির্ধারিত হয় ১৯২ টাকা।
যদিও এ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ ছিল ১০৫৮ টাকা। খবরটি প্রতিটি পত্রিকায় আসে এবং নতুন করে আবার বিতর্ক শুরু হয়।
এবং যথারীতি এক পর্যায়ে ‘কী আর করা’ বলে সবাই অন্যত্র মনযোগ দেয়।
এসপি বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যাকান্ডঃ
জঙ্গী দমন অভিযানে সাহসিকতার জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে ৫ জুন
২০১৬ তারিখ সকালে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসার সময় হত্যা করা হয়। সোশাল মিডিয়া এবং মেইন স্ট্রীম মিডিয়া দীর্ঘদিন এ
বিষয়ে সরব থাকে। সময়ের সাথে সাথে ঘটনা বিচিত্র দিকে বাঁক নেয়। বাবুল আক্তার নিজেই সন্দেহের তালিকায় উঠে আসেন।
এক পর্যায়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তী ঘটনা আর জানা যায় নি। অনেক প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি।
কলেজ শিক্ষককে হত্যা-চেষ্টাঃ
মাদারিপুর সরকারী নাজিমউদ্দিন কলেজের লেকচারার রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে জখম করা হয় ১৫ জুন ২০১৬ তে। সে
ঘটনায় ফাহিম নামে একজনকে হাতে নাতে ধরে ফেলে জনতা। প্রথমবারের মত হিযবুত তাহরীরের নাম উঠে আসে। কথিত
অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ফাহিম মারা যায় এবং ঘটনাটা এভাবেই শেষ হয়।
গুলশান ট্র্যাজেডিঃ
১লা জুলাই সন্ধ্যায় গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি রেস্টুরেন্টে জঙ্গীবাদ তার নারকীয়তম রূপ প্রকাশ করে। ১৭ জন
বিদেশী নাগরিক সহ মোট ২০ জনকে হত্যা করে তারা। রাতের মধ্যেই তারা এ কাজ সম্পন্ন করে। পালিয়ে যাবার পর্যাপ্ত সময়
ও সুযোগ থাকলেও তারা তা করেনি। পরদিন তথাকথিত সফল অপারেশনে ৬ জঙ্গী নিহত হয়, সন্দেহভাজন হিসাবে ১ জনকে
ধরা হয় এবং ১৩ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। সরকারী দল এবং অন্যান্য ‘জঙ্গী নাই’য়ের দঙ্গল প্রথম বারের মত মিন মিন
করে জঙ্গীবাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে শুরু করে। এই ঘটনার বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে মিডিয়া দীর্ঘদিন ব্যস্ত থাকে; যেমন
নিহত জঙ্গীদের সচ্ছল ও ভদ্র ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, আটককৃত সন্দেহভাজন আসলে ঐ রেস্টুরেন্টেরই কর্মী কি না, নিহত
জিম্মি ফারাজ আইয়াজ হোসেন বন্ধুদের জন্য জীবন দিয়েছিলেন কি না, উদ্ধারকৃত জিম্মিদের মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির
শিক্ষক নিজেই জঙ্গীবাদের সাথে জড়িত কি না, জঙ্গীরা আসলে জাস্ট মাদকের প্রভাবে এসব টুকটাক খুন করেছে কি না
ইত্যাদি। এক পর্যায়ে সেই শিক্ষক এবং তার এক সুযোগ্য শিষ্যকে (যাকে অস্ত্র হাতে রেস্টুরেন্টের ছাদের ওপর অত্যন্ত বিনীত
বডি ল্যাঙ্গুয়েজে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে) রিমান্ডে নেয়া হয়। তারা নাকি নানান রকম তথ্যও দিচ্ছিলেন
যাতে বোঝা যাচ্ছিল যে তারা জঙ্গিদেরই অংশ। কিন্তু একসময় শিষ্য জামিন পেয়ে যায়। গুরু রয়ে যান। তার পরিনতির বিষয়ে
মিডিয়া আর পরিস্কার করে কিছু বলেনি। আশা করা যায় তারা দুজনেই- যেখানেই থাকুন- সহি সালামতে আছেন।
শোলাকিয়া হামলাঃ
গুলশান হত্যাযজ্ঞের কিছুদিন পরই ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যায়। বেশ লম্বা ছুটি। এর মধ্যেই শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে হামলা
চেষ্টার খবর চলে আসে। এ ঘটনায় দুইজন পুলিশ সদস্য এবং হামলাকারীদের একজন সহ মোট চার জন মারা যায়। গুলশানে
রেস্টুরেন্টে কালেমা বলতে পারাদের সাথে জঙ্গীদের ভাল ব্যবহারে যারা স্বস্তিতে ছিলেন তারা শোলাকিয়ার ঘটনায় কিঞ্চিৎ
বিব্রত হন। বিষয়টি আরো বিব্রতকর হয়ে ওঠে যখন পরবর্তী ঈদ জামাতে ‘শোয়া-লাখিয়া’ শোয়া-হাজারিয়াতে নেমে আসে।
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কতিপয় নাস্তিক-মুরতাদ বহু বছর আগে রমনার বটমূলে বোমা হামলার পরের বছর যে আরো বেশি
লোকজন এসেছিল সেটা মনে করিয়ে দিয়ে অনেকের কুসুম কোমল হৃদয়ে শেলাঘাত হানে এবং মহলবিশেষে নিন্দিত হয়।
জঙ্গীদমনঃ
হয়তো শোলাকিয়া নয়, খুব সম্ভবত গুলশান হত্যাকান্ডই সরকারকে আয়েসি আধশোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসতে বাধ্য করে।
পর পর কিছু কাউন্টার এ্যাটাক আমরা দেখতে পাই- কল্যানপুরের জাহাজ বিল্ডিং অভিযান, নারায়নগঞ্জের পাইকপাড়া, ঢাকার
রূপনগর, আজিমপুর অভিযান এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ক্রসফায়ার।
ধরে ধরে মেরে ফেলাই সবচে ভাল সমাধান কি না, এতে সমস্যা মিটছে নাকি আপাতত ধামাচাপা পড়ছে, এগুলো নিয়ে নতুন
করে বিতর্ক শুরু হয় যার কোনটাই খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। মাঝখান থেকে লাভ যেটা হল, মেইনস্ট্রীম মিডিয়ায় নতুন কিছু কথা
আলোচিত হতে লাগল- এত এত তরুন এতদিন ধরে নিখোঁজ কেন, বিত্তশালী পরিবারের ছেলেরাও কেন জঙ্গী দলে নাম
লেখাচ্ছে, ধর্মের নামে তরুনরা আসলে কী শিখছে, চুপচাপ নামাজ কালাম নিয়ে থাকা তথাকথিত ভাল ছেলেটা আসলে কতটা
ভাল ইত্যাদি। বলা বাহুল্য এসব নিয়ে ‘বোলোগার’রা বহুকাল ধরেই বলে আসছে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
এ-ত কিছুর ফাঁকে ফাঁকেই এগিয়ে চলছিল সুন্দরবন ঘেঁষে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এবং এ বিষয়ক সম্পুর্ন বিপরীতমুখী
পাল্টাপাল্টি তথ্য সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করে তোলে। এক পর্যায়ে শাপে বর হয়ে আসে দুটি ঘটনা- এক, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য
(বনের ক্ষতি হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে) এবং দুই, প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে দলদাস সাংবাদিকদের নজিরবিহীন নির্লজ্জ
তেলবাজি। এতে সাধারন মানুষের সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হয়ে যায়। রামপাল বিরোধী আন্দোলন অনেকখানি বেগবান হয়। তবে
সরকারী শক্তির কাছে এই আন্দোলন (যা কোন রাজনৈতিক দলে ব্যাকিং পাচ্ছে না) কতটা সফল হবে তা ভাববার বিষয়।
এটিকে এখনো চাপাপড়া ইস্যু বলা যায় না সে অর্থে। কারন সোশাল মিডিয়া এখনো বেশ সরব। তবে মেইনস্ট্রীম মিডিয়া
মোটামুটি হাত ধুয়ে ফেলেছে।
টাম্পাকো ফয়েলসে বিস্ফোরনঃ
টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর ভেতর অবস্থিত এলুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান টাম্পাকো ফয়েলস লিঃ এর পাঁচ তলা উঁচু
কারখানা ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে বয়লার বিস্ফোরনে পুরোপুরি ধ্বসে পড়ে। ২৭ তারিখ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৮ জনে
পৌঁছেছিল। তখনো নিখোঁজ ছিলেন ১১ জন। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক সাবেক সাংসদ সৈয়দ মোঃ মকবুল হোসেন। তার নামে এ
ব্যাপারে দুটি হত্যা মামলাও দায়ের হয়েছিল। আমরা এ পর্যন্তই জানি। মিডিয়া আমাদের এ পর্যন্তই জানিয়েছিল।
খাদিজার ওপর ছাত্রলীগ নেতার হামলাঃ
সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা গত ৩ অক্টোবর পরীক্ষা শেষে বের হয়ে হামলার শিকার
হয়। হামলাকারী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে
খাদিজাকে এলোপাতাড়ি কোপায় এবং তাকে মারাত্মকভাবে আহত করে। পুরো দৃশ্যটি কেউ একজন বেশ দূর থেকে মোবাইল
ফোনের ভিডিও ক্যামেরায় ধারন করে রাখে। এই ভিডিওটি পরবর্তীতে ভাইরাল হয়ে যায়। তাতে দেখা যায় যে তখন
আশেপাশে যথেষ্ঠ সংখ্যায় লোকজন ছিল। কেউ বদরুলকে বাধা দেয়নি। এ ব্যাপারটা নিয়ে এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও
সংসদে আবেগঘন কন্ঠে তার হতাশা ব্যক্ত করেন। কিন্তু বদরুলের কী হবে এই বিষয়ে তার নিরাবেগ ফর্মাল বক্তব্যই আমরা
পাই- ‘অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতে হবে’ ধরনের বক্তব্য। কম দুঃখে কি পাবলিক বাধা দেয়নি! যাই হোক, এই
খবরটি পর পর কয়েক দিন ভালো ফলোআপ হয়েছিল। তারপর খাদিজা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করে। এবং এই
অপার স্বস্তির কাছে ‘অপরাধীর শাস্তি’র মত অকাব্যিক ইস্যু চাপা পড়ে যায়।
বাগেরহাটের মোল্লাহাটের সোবাহান মোল্লার কীর্তিঃ
জনাব সোবাহান মোল্লা প্রতিবেশী হিন্দু পরিবারের লোকদের হত্যার হুমকি দিয়ে ঐ বাড়ির গৃহবধুকে নিয়মিত ধর্ষন করে
আসছিলেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্বামী হঠাৎ করেই কেন যেন বাধা দিতে গেলে সোবাহান সাহেব তার হাতে থাকা তলোয়ার
নিয়ে তাকে তাড়া করেন। পতিপ্রাণা গৃহবধু স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তলোয়ারের আঘাতে তার পা গোড়ালী থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন
হয়ে যায়। তারপরেও ভয় দেখিয়ে তাদেরকে পরবর্তী ১৫ দিন গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা টের পেয়ে
তাদের উদ্ধার করে এবং মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন মিডিয়াতে বিষয়টি আসে। এবং প্রথমে এভাবেই আসে।
কিছুদিন পরে অন্য গল্প আসতে শুরু করে। মেয়েটির সাথে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাকি পরকীয় ছিল। ধর্ষনের কোন ঘটনা নাকি
আসলে ঘটেনি। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে কিছু কলরব হলেও মূল ধারার মিডিয়া ‘যা হবার হয়ে গেছে’ মনে
করে তেমন উচ্চবাচ্য করেনি।
শিশু ধর্ষনঃ
২৬ অক্টোবর দিনাজপুরে ৫ বছরের এক শিশু ধর্ষিত হওয়ার খবর পত্রিকাগুলোতে আসে। ঘটনার বিভৎসতা কর্তব্যরত
ডাক্তারদেরও হকচকিয়ে দেয়। অভিযুক্তদের একজনকে খুঁজেও পাওয়া যায়। তারপর দু’দিন যেতে না যেতে খবরটাই নিখোঁজ
হয়ে যায়।
বিপুল চাকমাঃ
এই ইস্যুর জন্য ‘চাপাপড়া ইস্যু’ নামের কোন লেখা বোধহয় উপযুক্ত নয়। সম্ভবতঃ এ জাতীয় ঘটনা লিপিবদ্ধ করার জন্য
প্রয়োজন ‘উঠে না আসা ইস্যু’ ধরণের কিছু। বিপুল চাকমাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ঠিক ঐ মুহূর্তে তিনি
তার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। চোখের সামনে ছেলের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা মায়ের শারীরিক অবস্থা আরও
সংকটাপন্ন করে তোলে এবং তার মৃত্যু ডেকে আনে। মায়ের শেষকৃত্য করার জন্য বিপুল চাকমাকে হাতকড়া এবং ডান্ডাবেড়ি
পরা অবস্থায় নেয়ার ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন এমনকি দুর্বল স্মৃতিশক্তির বাঙালী জাতিও স্মরণ করতে পারে যে
যুদ্ধাপরাধী সাইদীকেও তার ছেলের জানাজায় অংশ নেবার জন্য হাতকড়াটড়া পরানো হয়নি এবং মিডিয়াকে পর্যাপ্ত সুযোগ
দেয়া হয়েছিল বিরাট শোডাউন করার। অথচ আলোচ্য ক্ষেত্রে আমরা বিস্মিত হয়ে দেখলাম বিপুল চাকমার অশ্রুরূদ্ধ বাক্য এবং
তার সমব্যাথীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শুধু ব্লগ আর ফেসবুকেই ঘুরে ঘুরে মরছে।
আইএস-এ নাম লেখানো সিরিয়ান মুসলিম তরুনের জন্য বাঙালীর মমতামাখা সমর্থন আমরা অহরহ দেখি। যতই তার
ধর্মগ্রন্থে সন্ত্রাসের উসকানি থাকুক, যতই তার অনুসরণীয় মহামানবের জীবনে রক্তের হোলি খেলার উদাহরণ থাকুক, বাঙালীর
কাছে সেই তরুন শুধুই আক্রান্ত মুসলিম। কিন্তু বিপুল চাকমারা রাষ্ট্রের প্রতিনিয়ত নির্যাতনে যদি সত্যি সত্যিই একদিন
টেরোরিস্ট হয়ে ওঠে সেদিন এই বোধশুণ্য প্রশ্নশুণ্য হিপোক্রেট নপুংশক বাঙালী কি তাদের প্রতি এতটুকু মমতা দেখাবে?
মন্দির এবং হিন্দুপাড়ায় হামলাঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একজন হিন্দুধর্মাবলম্বীর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা একটি ফটোশপ করা ছবি (কাবাঘরের
ওপর বসা শিব) নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তাল হয়ে ওঠে। তার শাস্তির দাবীতে হেফাজতে ইসলাম ও আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাতের ব্যানারে ৩০ অক্টোবর বিক্ষোভ ও সমাবেশের পর পরই নাসির নগর ও পার্শ্ববর্তী মাধবপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর
হামলা শুরু হয়। অন্ততঃ ১৫টি মন্দির ও ১৫০ বাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। এ জাতীয় ঘটনা দেশে এটিই প্রথম নয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তো নয়ই। তবু এর তদন্তে তিন তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
বলা বাহুল্য, এ জাতীয় ঘটনায় উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি তৈরীর ঘটনা এটিই প্রথম ছিল না। এর পরিনতিও অজানা কিছু ছিল না।
তবু নতুন যেটা দেখা গেল তা হচ্ছে এ বিষয়ক মামলায় ঐ হিন্দু লোকটির পক্ষে একজন আইনজীবী দাঁড়াতে চাইলে তাকে
বাধা দেয়া হয়। চমৎকৃত হওয়ার মতো ঘটনা। কাছাকাছি সময়ে আরেকটি চমৎকার ঘটনা ঘটে। হিন্দু দেবদেবী নিয়ে ফেসবুকে
কটুক্তি করায় পুলিশ গ্রেফতার করে মির্জাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ জহুরুল ইসলাম বুলবুলকে। তিনি
পুলিশকে জানান যে তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়েছে এবং পুরো ব্যাপারটায় তিনি দুঃখিত। সহৃদয় পুলিশ সদস্যরা তার
দুঃখ বুঝতে পারেন এবং তাকে মুক্তি দেন। সে যাই হোক, এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিরনগর গিয়ে খোদ হেফাজত আহলে
সুন্নাত এর সাথে সভায় দাঁড়িয়ে ‘হামলাকারীদের’ বিচারের আশ্বাস দেয়ার পর আরেকবার হামলার ঘটনা ঘটে। সেটাও যাই
হোক, পুলিশ সত্যি সত্যি একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এমনকি সেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে দন্দ্বের বিষয়টিও উঠে আসে। এবং… এত কিছুর পরেও ১৭ নভেম্বর
তারিখে আ-বা-র-ও দু’টি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এর কিছুদিন পরেই ধরা পড়ে সেই লোকটি যে সত্যিই ঐ বিশেষ ছবিটি
আপলোড করেছিল। জানা গেল তার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তবে এ বিষয়ে ইসলামের হেফাজতকারীদের কোন
বক্তব্য/প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। সেসব আনতে মিডিয়ারও কেউ তাদের মুখের সামনে মাইক্রোফোন ধরেনি।
গাইবান্ধার আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে হামলাঃ
৬ নভেম্বর দুপুরে স্থানীয় এমপির ছত্রছায়ায় থাকা সরকার দলীয় ক্যাডাররা গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জের আদিবাসী পাড়ায় হামলা
চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে শুরু করে। পুরো ঘটনাটা ঘটে পুলিশের উপস্থিতিতে। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ কিছু গুলিও
চালায় যাতে কয়েকজন প্রতিবাদকারী আহত হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও তাদের হাতে হাতকড়া দেখা যায়। বেশ
কয়েকজন নিখোঁজ ছিলেন। শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মাড্ডি এবং রমেশ টুডুর মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। বেশিরভাগ
মিডিয়া, অন্ততঃ প্রথম দিকে, এ ঘটনাকে ব্যাখ্যা করে ‘সাঁওতাল-পুলিশ সংঘর্ষ’ হিসাবে।
চমকপ্রদ ব্যাপার ঘটে যখন খোলা আকাশের নীচে থাকা ঘরপোড়া মানুষগুলোর জন্য ত্রান নিয়ে যায় জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
কোন সাঁওতাল সেই ‘গরু মেরে জুতো দানের’ ত্রান নিতে আসেন নি।
এর বেশ কিছুদিন পর আল-জাজিরা টিভির একটি রিপোর্ট এর ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে দেখা যায় যে
একজন পুলিশ সদস্য নিজেই একটি বাড়িতে আগুন দিয়ে ঘটনার শুভ উদ্বোধন করছেন।
শিক্ষক হত্যাঃ
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকরা কলেজটি সরকারীকরণের দাবীতে ২৭ নভেম্বর বিক্ষোভ করছিলেন।
পুলিশ সেখানে হামলা চালায় এবং তাতে একজন শিক্ষক এবং একজন পথচারী মারা যান। যথারীতি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি
তৈরী হয়। দিকে দিকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। পত্রপত্রিকার আঁটসাট রিপোর্টিংয়ে একটা বিষয় জায়গা না
পেলেও সোশাল মিডিয়ায় বেশ ভাল মত উঠে আসে- একজন শিক্ষককে কানে ধরানোর প্রতিবাদে অনেকে প্রকাশ্যে দলে দলে
এবং অন্য অনেকে ফেসবুকে কানে ধরেছিলেন (অনেক সেলিব্রেটিও); এবার শিক্ষকের হত্যাকান্ডে তারা কী করবেন?
কড়াইল বস্তিতে আগুনঃ
‘এমন তো প্রায়ই হয়। তাও সরবে না দেখবেন। আবারও ওখানেই ঘর তুলবে। ওদের এসব অভ্যাস হয়ে গেছে।’
মিডিয়ার আর দোষ কি। আমাদের মত সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াই যদি এমন হয়। আসলে আমাদেরও এসব অভ্যাস হয়ে
গেছে।
বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬:
সর্বরকম বিরোধীতার মধ্যেও এই আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হল। সেখানে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮
রাখা হয়েছে ঠিকই তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যেকোন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশে এবং মা-বাবার
সম্মতিতে বিয়ে হতে পারবে- এমন বিধানও রাখা হয়েছে। অনুমোদনের পরও বেশ ক’দিন হৈ চৈ চলেছে। মিডিয়া বেশ সরবই
ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গেল নিউজিল্যান্ড সফরে। তার ওপর বিজয় দিবসও চলে এল। আর কত!
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
Leave A Comment