লেখকঃ সুমন চৌকিদার
ধর্ম- মহাখাঁটি(!), মহাসত্য(!), মহাসুন্দর(!), মহাপবিত্র(!), সর্বশ্রেষ্ঠ… ইত্যাদি সব মহৎ বিশেষণের হলেও এর নাকি বহু শত্রু। যা মহাখাঁটি, মহাপবিত্র… তার এতো শত্রু কেনো? (পৃথিবীতে নাকি ৪২০০টি ধর্ম আছে এবং প্রতিটি ধর্ম অন্যদের শত্রু হলে, প্রতিটিরই ৪১৯৯টি শত্রু করে আছে!) বিজ্ঞানের কী এতো শত্রু আছে? তাছাড়া বিজ্ঞানের ভুল-ভ্রান্তি যে কেউ সংশোধন করতে পারে, এতে কারো কোনো আপত্তি কিংবা হুমকি-ধামকি থাকে না। অথচ ধর্মের ভুল-ভ্রান্তি (মহাবিপদজ্জনক হলেও), সংশোধন করা যাবে না! এমন বিভ্রান্তিকর বদ্ধমূল ধারণা ও কুশিক্ষা কী অন্য কোনো বিষয়ে পাওয়া যায়? তারপরও বুদ্ধির সেরা এ জীবের কাছে ধর্ম এবং ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ হলো কীভাবে? বিদ্বানগণের বোধমগ্য হলেও এ মূর্খের বোধগম্য নয়। তবে যার ভালো আছে, তার মন্দও আছে। অতএব, কোনো বিষয়ের ভালোটুকু রেখে মন্দটুকু বাদ দেওয়ায় সমস্যা কোথায়?
যেহেতু ধর্মের বহু শত্রু আছে, সেহেতু নিজ ধর্মরক্ষায় সদা সতর্ক এবং প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতে হয়…। এরূপ শিক্ষা-দীক্ষা, প্রচার-প্রচারণা, সর্বত্রই শুনি এবং প্রায় সব ধর্মই তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ও পালন করে…। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভিন্ন ধর্মালম্বী/মতালম্বী প্রত্যেকেই অন্য ধর্মের শত্রু। এমন ধর্মশিক্ষা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে সমপ্রীতি রক্ষা হলেও ধর্ম প্রশ্নে সমপ্রীতি থাকতে পারে না (লোক দেখানো ছাড়া)। কারণ শত্রুর ব্যাপারে কোনো না কোনো সংশয় থাকবেই।
এছাড়া, ধর্ম রক্ষায় ও প্রচারে-প্রসারে আগেকার দিনে ব্যবহৃত হতো- লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি, বেত্রাঘাত ও তরবারি, এখন ব্যবহার হচ্ছে, বোমা-বন্দুকসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র…। অর্থাৎ ধর্ম রক্ষায় ও প্রচারে-প্রসারে অস্ত্রের ব্যবহার আদিমতম। প্রশ্ন হলো, যা খাঁটি(!), মহান(!), সর্বশ্রেষ্ঠ(!)… তা রক্ষায় মারণাস্ত্রের প্রয়োজন কেনো? আবার দেখা যাচ্ছে, ধর্মরক্ষায় একদল পাহারা দেয়, আরেকদল হামলা চালায়, কেউ হত্যার ট্রেনিং নেয়, কেউ আত্মঘাতি হয়… এরা প্রত্যেকেই কিন্তু ধার্মিক। যদিও এরা একে অপরকে অধার্মিক, ভ্রান্তধার্মিক… এসব বলছে। সত্য যে, যারা মারে ও মরে এবং যারা দর্শক বা নিরব সমর্থক, তারা প্রত্যেকেই কিন্তু ধর্মের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলে। প্রশ্ন হলো- (এক ধর্মালম্বী) প্রত্যেকেরই ধর্ম, শাস্ত্র, ঈশ্বর, ঐশ্বরিক আদেশ-নির্দেশ… এক হওয়া সত্ত্বেও কেনো এরা পরস্পরের শত্রু? তাহলে ধর্ম মেনেও যারা একে অপরের শত্রু, তাদের চেয়ে নাস্তিকরাই কী ভালো নয়? কারণ এরা কাউকে মারে না, নিজ মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মঘাতিও হয় না, কাউকে আঘাত করে না, এমনকি হুমকি-ধামকিও দেয় না।
মূলত, যা কুযুক্তি বা কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তা-ই অসত্য এবং অমঙ্গলজনক। যা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যায়, তা-ই সত্য এবং মঙ্গলজনক। অতএব সত্যকে রক্ষা করতে প্রচার-প্রচারণা কিংবা ভয়ভীতি বা হুমকির প্রয়োজন হয় না। বরং অসত্য বা মিথ্যাকে রক্ষা করতেই হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি বহাল রাখতে হয়, প্রয়োজনে হত্যা এমনকি গণহত্যাও চালাতে হয়। সুতরাং কুসংস্কার রক্ষকেরা যুক্তিবাদিদের যুক্তির উত্তর বিচার-বিবেচনা কিংবা সততার সাথে দিতে অভ্যস্ত নয়।
যাহোক, বলুন তো! এক রাজ্যে একাধিক রাজা থাকতে পারে কী? থাকলে, যুদ্ধ-বিবাদ লেগে থাকা অনিবার্য। অথচ এক পৃথিবীতে এতো ঈশ্বর (৪২০০) কী করে শান্তিতে, সহবাস্থান করবে? অতএব ধর্ম কখনোই সম্পুর্ণরূপে শান্তি-সুখের, সমপ্রীতির, ভ্রাতৃত্বের, মহত্ত্বের, কল্যাণের… হতেই পারে না। কারণ এক রাজ্যে একাধিক রাজা যেমন অন্য রাজাকে সহ্য করতে পারে না, তেমনি এক পৃথিবীতে বহু ঈশ্বরও কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। ফলে ধর্মযুদ্ধ, ধর্মসন্ত্রাস না কমে বরং বেড়েই যাচ্ছে। কারণ নিঃস্বার্থ শ্রদ্ধা ও প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া, ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা কখনো শান্তির কিংবা মঙ্গলজনক হয় না। যেহেতু ধর্ম হলো- ভয় এবং শ্রদ্ধার সংমিশ্রণ, সেহেতু ধর্ম মানুষের যতোখানি মঙ্গল করে, তার চেয়ে বেশি করে অমঙ্গল।
এছাড়াও বলা হচ্ছে- জঙ্গিদের ধর্ম নেই, ওরা ধার্মিক নয়, ধর্মের শত্রু, ধর্মের কলঙ্ক, ধর্মকে অপব্যবহার করছে, মানুষ বিভ্রান্ত করছে… এরূপ বহু শ্লোগান বিশ্বনেতাসহ টকবাজ বুদ্ধিজীবি এবং রাষ্ট্রনায়কগণের মুখে অবিরাম শুনতে শুনতে ঘেন্না ধরে গেছে। কারণ, ওনারা প্রকৃত সমস্যার ধারকাছ দিয়েও যাচ্ছেন না। দুঃখ এটাই, যারা অত্যন্ত জ্ঞানীগুণি, পণ্ডিত, অনেকের চেয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ভালো জানেন, যাদের বক্তব্য সমাজ ও রাষ্ট্র গ্রহণ করে, তারাই যখন গ্রন্থগুলোর বিকৃত, বিভ্রান্তিকর বাণীসমূহ পবিত্র(!) মনে করেন এবং এর পক্ষে সাফাই গায়, তখন আমাদের মতো নামধামহীন বা ক্ষমতাহীনদের অসহায়ভাবে দেখা ছাড়া কী-ই-বা করার আছে?
তবে বিদ্বানগণ স্বীকার করুন বা না-ই করুন, যে পর্যন্ত অন্য ধর্মগুলোকে শত্রু হিসেবে শিক্ষা দেয়া হবে, সে পর্যন্ত জঙ্গিবাদ (ধর্মজঙ্গি) নির্মূল আকাশ-কুসুম কল্পনা মাত্র। তাদের অবশ্যই স্বীকার হবে যে, ধর্মের মধ্যেই মারাত্মক সমস্যা রয়েছে, অন্য কোথাও নয়। কারণ সারা পৃথিবীতে ধর্মের নামেই ধারাবাহিকভাবে একই প্রকার নৃশংস্যতম হত্যাযজ্ঞ চলছে। অন্য কোনো নামে বা শ্লোগানে নয়। এটাও ভাবতে হবে যে, কেনো গরিব-ধনী-শিক্ষিত-অশিক্ষিত-উচ্চশিক্ষিত-আদরের দুলালরা… (সংখ্যায় কম হলেও) জঙ্গিবাদ গ্রহণ করছে? বুঝতে হবে, কোনোকিছু ধ্বংস করার জন্য বেশি দানবের প্রয়োজন হয় না, অল্পসংখ্যক দানবই যথেষ্ট। অতএব, ধর্মে যে পর্যন্ত একটি দানব সৃষ্টির মন্ত্র থাকবে, সে পর্যন্ত ধর্মকে বাঁচিয়ে/ছাড় দিয়ে বক্তব্য দেয়া কোনক্রমেই উচিত নয়। কারণ, এর মূল বা শেকড় যদি ‘ধর্ম’ ছাড়া অন্যত্র হতো, তাহলে কেউ দানব বা ধর্মজঙ্গি হতো না। অথচ বিদ্বানগণ মূল বা শেকড় সম্বন্ধে প্রশ্ন না তুলে আগডুম-বাগডুম বলছেন এবং দানব সৃষ্টির উৎসকেই জিইয়ে রাখছেন। অর্থাৎ ধার্মিকসহ জ্ঞানীগুণিরা ধর্ম সংশ্লিষ্ট খুন, ধর্ষণ, যুদ্ধ-দাঙ্গার বিষয়ে যেসব উপদেশ ও পরামর্শ দেন এর মধ্যে বহু মিথ্যাচার এবং প্রচুর মহাভন্ডামি রয়েছে।
ধর্ম প্রসঙ্গে প্রিয় কবি নজরুল বলেছেন, “মূর্খরা সব শোনো, মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো!” কবি বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতাম, উনি কেনো মূর্খদের বোঝাতে/শোনাতে চেয়েছেন? যে দেশের বিদ্বানেরাই ধর্মের অসারতা বুঝছেন না, সেদেশের মূর্খরা বুঝবে কী করে? হয়তো এখন থাকলে বলতেন, “বিদ্বানরা সব শোনো…!” কারণ মূর্খদের মূর্খতা বজায় রাখতে ও বশে রাখতে ধর্মের ন্যায় এতো চমৎকার ও ব্যথামুক্ত মারণাস্ত্র যে আর নেই। জনগণ যদি মূর্খই না থাকে, তাহলে ওনারা বিদ্বান থাকবেন কী করে? ফলে তারা বারবার ধর্মকে বাঁচিয়েই বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। অতএব ধর্মের ব্যাপারে যে পর্যন্ত বিদ্বানগণ প্রকৃত সত্য স্বীকার না করবেন, সে পর্যন্ত জাতির মুক্তি নেই।
সমপ্রতি গুলশান হামলাকারীরা ভিডিও-তে ধর্মপুস্তকের পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের কৃতকর্ম সঠিক বলে দাবি করেছে (যা পৃথিবীর সব ধর্মজঙ্গিরাই করে এবং যা মিথ্যা প্রমাণের অর্থ, ধর্মপুস্তক অস্বীকার করা)। এর বিপক্ষে বুদ্ধিজীবীসহ কথিত মডারেটগণের ব্যাখ্যা এবং যুক্তি কোথায়? যদি জঙ্গিদের দাবি মিথ্যা প্রমাণ করতে না-ই পারেন, তাহলে প্রতিদিনকার একই ঘ্যানর-ঘ্যানর কেনো? ওরা আপনাদের বলছে বিভ্রান্তকারী, অধার্মিক, আপনারা বলছেন ওদের (যদিও ধর্মপুস্তকের ব্যাখ্যা অনুসারে উভয়পক্ষই ঠিক)। অর্থাৎ উভয়েই নিজ নিজ বক্তব্য সমর্থনে ধর্মপুস্তকের যুক্তি দিয়ে পরস্পর দোষারোপ করতে পারেন। তবে সমস্যার গভীরে না গিয়ে বকবকানি ও উপদেশ দিয়ে জঙ্গি উৎপাদন বন্ধ সম্ভব নয়, একথাটি যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততো তাড়াতাড়ি সমাধানের পথ পাবেন। কারণ ধর্মপুস্তকে এরূপ বহু বিভ্রান্তিকর, পরষ্পরবিরোধি বা বিপরীতধর্মী, বাণী রয়েছে, যা পড়ে অথবা কেবলমাত্র শুনেই- কেউ জঙ্গি হয়, কেউ কথিত মডারেট হয়! অতএব, জঙ্গিদেরকে ভ্রান্ত ধার্মিক বলার পূর্বে ওদের রেফারেন্সগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলুন তো- ওরা ঠিক, না আপনারা?
পূর্বেও বলেছি, ধর্মে ভালো হবার উপায় যেমন আছে, তেমনি জঙ্গি হবার প্রাথমিক উপাদানসহ (অহংকার-উগ্রতা, অসহিষ্ণুতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, কামনা-বাসনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, লোভ-লালসা, ভয়-ভীতি…) সবকিছুই আছে। অতএব, এসব স্বীকার এবং সংশোধন না করা পর্যন্ত জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নির্মূল কোনোভাবেই সম্ভব নয়, যদিও অস্ত্রের মুখে সাময়িকভাবে দমন করা যেতে পারে। কারণ, জন্মগতভাবেই ধর্মিকরা নিজ নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য মরিয়া। এক ধর্ম অন্য ধর্মকে কখন, কিভাবে… আক্রমণ বা ছোট করতে পারে, কিংবা কার ধর্মে ভুল কতো বেশি, কারটা সর্বশ্রেষ্ঠ… নিরন্তর এসব প্রচার (প্রকাশ্যে বা গোপনে) অবশ্যই লক্ষ্যণীয়। তাছাড়া সমগ্র পৃথিবীতে স্বধর্মানুসারীরাই শ্রেষ্ঠ এবং সব মানুষকে স্বধর্মে দীক্ষিত করার ন্যায় মহান কাজ আর নেই, ইত্যাদি মন্ত্র দ্বারাই একটি শিশুর ধর্মশিক্ষা শুরু হয়। অতএব, আমার ধর্ম সকলেই শ্রদ্ধা করুক, ভালোবাসুক, শ্রেষ্ঠ ভাবুক, সম্মান করুক… এ সুপ্ত বাসনাটি প্রতিটি ধার্মিকেরই। ফলে অন্য ধর্ম বিষয়ে নানা সংশয়, নানা প্রশ্ন, সন্দেহ… থাকবেই (প্রকাশ্যে বা গোপনে)। এছাড়া একই ধর্মের সকলেই ভাই-ভাই, স্বধর্ম রক্ষা ও বিস্তারের জন্য জোরালো প্রার্থনা, শত্রুর (অন্য ধর্ম) ধ্বংস কামনাসহ কঠোর সমালোচনা ও অভিশাপ দেয়া… এসব শিক্ষা শিশু বয়সেই অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা থেকে মুক্তিলাভ খুব কম লোকের পক্ষেই সম্ভব। ফলে এরূপ কিছু শিক্ষা শিশুকাল হতে প্রায় প্রতিদিনই যেখান-সেখানে শুনতে শুনতে মানুষ যারপর নাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া, কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা, রাগে-দুঃখে, হতাশায়, ক্ষুধা-দারিদ্রতায়… যেমন আত্মহত্যা করতে পারে, আবার কাউকে খুন করে ফেলতেও পারে (নিজের সন্তানকেও)। কিন্তু ধর্মের কারণে বিশ্বব্যাপী যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, তা কী মানসিক অসুস্থ ব্যক্তিরা করছে? নাকি ঠাণ্ডামাথায়, ধীরে-সুস্থে, সুপরিকল্পনা নিয়ে করছে? বিষয়টি কী বুদ্ধিজীবিসহ সোকলড মডারেট ধার্মিকগণ একটিবারও ভেবে দেখেছেন?
যারা ধর্মকে বাঁচিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন, ধর্ম মানবতাকে আক্রমণ করতে পারলে, মানবতাবাদিরা কেনো ধর্মকে আক্রমণ করতে পারবে না? অর্থাৎ যখন কোনো রাষ্ট্রের প্রায় সবাই একই ধর্মালম্বী হয় এবং মুষ্টিমেয় নাস্তিকসহ বিধর্মীরা যদি ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হতেই থাকে, তাহলে নাস্তিকরা কেনো ধর্মকে আক্রমণ করতে পারবে না? যদি ধার্মিকদের অধিকার থাকে নাস্তিক এবং বিধর্মীদের আক্রমণ করার, তাহলে নাস্তিকদেরও অধিকার আছে ধার্মিক বা ধর্মকে আক্রমণ করার। তবে নিশ্চিত থাকুন, নাস্তিকরা কখনোই অস্ত্র হাতে আক্রমণ করবে না। একই সাথে তথাকথিত মডারেট ধার্মিক, রাষ্ট্রনায়কগণসহ জঙ্গিধার্মিকদের কুযুক্তি এবং অস্ত্র ফেলে কলম হাতে নাস্তিকদের সাথে যুদ্ধে নামার উদ্বাত্ত আহ্বান/চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। হয়তো এরপরও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে একই প্যাঁচাল পাড়বেন, খুনিরা ধার্মিক নয়, ওরা বিভ্রান্ত… ইত্যাদি। আপনাদের কথা (খুনিরা ধার্মিক নয়) সত্য হলে, তাদের সাথে সমঝোতায় বসেন না কেনো? তাদের মতবাদ কোথা থেকে এলো, তারা কী চায়, কেনো বিধর্মী এবং নাস্তিক খুন হচ্ছে, এর উৎসই বা কোথায়…? এ শিক্ষা তারা কোথা থেকে পাচ্ছে, কেনো মহাআত্মবিশ্বাসের সাথে আত্মাহুতি দিচ্ছে এবং ভিন্নমতালস্বী খুনে লিপ্ত হচ্ছে? এসবের উৎস কী মানুষ রচিত আদর্শ, নাকি ঐশ্বরিক আদেশ-নির্দেশ? কেনো তারা এভাবে জীবন বাজী রেখে ঝাপিয়ে পড়ছে? এদের লোভ-লালসাই বা কীসের? এ মূর্খের মতে, বেশিরভাগ মানুষ আত্মহুতি দেয় দুঃখ-দারিদ্র, হতাশা, অপমান ইত্যাদির কারণে (যা ব্যক্তিগত)। জঙ্গিরা দেয়, ঈশ্বরকে খুশি করতে (স্বল্পসংখ্যক হলেও যারা ভয়ংকর দানব) এবং পরিশ্রমহীন বিলাসবহুল স্বর্গীয় জীবনের লোভে (যা সংঘবদ্ধ)! এরূপ সংঘবদ্ধ আত্মাহুতির কারণ কী? এসব প্রশ্নের উত্তর কী আপনার খুঁজছেন? দয়া করে এখনই খোঁজা শুরু করুন, তবে বাইরে নয় ধর্মপুস্তকেই খুঁজুন, নাহলে জীবনেও এর উত্তর পাবেন না। মনে রাখবেন, জোর খাটিয়ে সবকিছু ঠেকানো বা দমানো যেতে পারে, কিন্তু ধর্মের অনুশাসন ঠেকানা বা দমানো যাবে না। সেজন্য চাই সংস্কার। যা করতে হলে সর্বপ্রথম ধর্মকেই আঘাত করতে হবে।
প্রশ্ন হলো- ভয় দিয়ে বশ্যতা আদায় করা যায়, শ্রদ্ধা পাওয়া যায় কী? অথচ ঈশ্বরেরা ভয় দেখিয়ে শ্রদ্ধা-ভক্তি পেতে চায়। যেমন, বহু শাসক আছেন নাগরিকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে, জোর করে ভক্তি আদায় করে। শাসকগণ ও ঈশ্বরদের মধ্যে তাহলে পার্থক্য কী? যা সত্য, যার মধ্যে খাঁদ নেই, তা কখনোই ভয় দিয়ে সমীহ/শ্রদ্ধা আদায় করার কথা চিন্তাও করবে না। অথচ ঈশ্বর এবং ধর্ম সেটাই করে। সুতরাং ধর্মভাইরাসে যার হার্ডডিস্ক আক্রান্ত, সে একাই শতশত মানুষ পিষ্ট করতে পারে, এতে দলবদ্ধ হওয়া বা কারো অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয় না, কারণ আসল উৎস, অর্থাৎ ধর্ম থেকেই সে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। আইসএস, আলকায়েদা কিংবা দেশীয় নানান জঙ্গি গ্রুপগুলো উছিলামাত্র। মূল মন্ত্র ওরা পায় ধর্ম থেকেই। ওদের মগজে যে বিষাক্ত ধর্মভাইরাস শিশুকালে ঢোকানো হয়, সারা জীবনই তা ওদের পরিচালনা করে। ভাইরসটির হাতেই থাকে ওদের নিয়ন্ত্রণ। যা ওদের চালিত করে- কীভাবে, কোথায়, কোন সময়ে… একসাথে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ হত্যা করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের ঘটনা, যেখানে একমাত্র জঙ্গিই বাটাবাটা করে ফেললো শ’খানেক জীবন। ভেবে দেখুন, ওই নরপশুটার মস্তিষ্কের ভাইরাসটি কতো শক্তিশালী! কী ভয়ংকর বুদ্ধি! একেবারে খাঁটি ঈশ্বরীয় বুদ্ধি! কারণ ঈশ্বরেরা যে রক্ত ভালোবাসে, তা ওই ভাইরাসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।
আবার যখন দেখি, ধর্মকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে পাহারদার বসিয়ে পালন করতে হচ্ছে, তখন কী সত্যিই এর মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে? ধার্মিকদের কাছে এর চেয়ে বড় লজ্জা, অপমান, দুঃখ-কষ্টের আর কী আছে? কারণ বলা হয়, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান অথচ তারই প্রশংসা ও গুণগান করতে হয় পাহারা বসিয়ে! আরো বলা হয়, ধর্ম অর্থ- ভ্রাতৃত্ব, প্রেম, ভালোবাসা, শান্তি… ইত্যাদি। তাই যদি সত্য হবে, তাহলে ধর্মীয় গেড়ামি, মৌলবাদি, জঙ্গিবাদি… এসব থাকার কথা নয়। অর্থাৎ একটি মানুষও অশান্তির পথ বেছে নেয়ার কথা নয়। কিন্তু হচ্ছেটা কী? ভেবে দেখুন, মানুষের উপর ঈশ্বর কিংবা ধর্মের কার্যকারিতা বা প্রভাব কতোটুকু? কারণ কমবেশি ৯০% ধার্মিকের দেশেও প্রায় শতভাগ ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যাচার, ছলচাতুরি, জালিয়াতি, রাহাজানি, বিধর্মী হত্যা, পরস্পর দোষারোপের… সাথে জড়িত। এসব বিবেচনায় নিলে, ধর্মের বিশেষণগুলো নিতান্তই হাস্যস্কর এবং মিথ্যাচারে ভরপুর। এছাড়া এমন একটি দিন যায় না, যেদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ধর্মের নামে ও শ্লোগানে হত্যাকাণ্ড ঘটে না। মনে হচ্ছে, কিছু দানবের সাথে সাথে অধিকাংশ লোকই কোনো না কোনোভাবে অশান্তির পথই পছন্দ করছেন অথবা এর সমর্থক। কারণ পরিবার ও সমাজের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া দানব সৃষ্টি সম্ভব না। অথচ প্রচলিত ধারনা ও রাষ্ট্রের নিষেধ রয়েছে, ধর্মের নামে ও শ্লোগানে ধারাবাহিকভাবে যতো নৃশংস্যতাময় হত্যাযজ্ঞই ঘটুক, ধর্মকে কটাক্ষ করা বা প্রশ্ন তোলা যাবে না! কী আশ্চর্য! বর্তমানে (পূর্বের তুলনা চাই না) যা মানবতার সবচেয়ে ভয়ংকরতম, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না কেনো? এব্যাপারে প্রশ্ন তুললে, পশ্চিমে রেসিস্ট বলে গালি দেয়; আমাদের মতো ধর্মরাষ্ট্রগুলোতে হত্যা করা হয় নতুবা জেলে পচতে হয়।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের সব জঙ্গিবাদি ঘটনায় কথিত মডারেটসহ সব রাষ্ট্রনেতাগণকে বলতে শোনায় যায়, “সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নাই।” প্রশ্ন হলো- সন্ত্রাসীদের যদি ধর্ম নাই থাকবে, তাহলে অবিশ্বাসী/নাস্তিকরা যখন ধর্মের সমালোচনা করে, তখন জঙ্গিসহ সাধারণ ধার্মিকরা কেনো এতো উত্তেজিত হচ্ছে? প্রতিদিন মহাবীভৎস্য হত্যাযজ্ঞের পরেও আপনার বলছেন, ওদের কোনো ধর্ম নাই। আশ্চর্য! আপনাদের বুদ্ধি-বিবেক এতো দুর্বল হলো কীভাবে? যাদের ধর্ম নাই তারা কেনো ধর্মের নামে ও কারণে, ধর্মের শ্লোগানে মানুষ হত্যা করতে যাবে? প্রকৃতপক্ষে যাদের ধর্ম নাই (নাস্তিক) তারা কখনোই মানুষ হত্যা করে না, বরং যাদের আছে তারাই করে। শুনেছেন কখনো, নাস্তিকরা ধর্ম পালনের অপরাধে কাউকে খুন দূরে থাক, সামান্যতম হুমকি দিয়েছে? তারা শুধু ধর্মের ভুলগুলো নিয়ে সমালোচনা করে, ধর্মের ভালো দিক নিয়ে তাদের কোনো প্রশ্ন নেই। খুন্তখারাবি যা করে, সব আস্তিকরাই (সংখ্যায় কম হলেও) এবং তারা কাদের দ্বারা বা কীসের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে সেটাও পরিষ্কার, অথচ আপনার তা স্বীকার করতে চাইছেন না। কারণ আপনারাও তাদের চেয়ে কম ধর্মান্ধ নন। শতসহস্র অডিও, ভিডিও, জোকার নায়েকের ‘পিস’ যেসব ধার্মিকরা দেখছেন, শুনছেন, তারা কীভাবে জঙ্গি কিংবা জঙ্গি সমর্থক না হয়ে থাকতে পারে? কারণ এসব শুনে কথিত মডারেটগণও হয়েতো এর সমর্থক হতে দুবার চিন্তা করবেন না। অথচ সব দোষ নাস্তিকদের, তাদের যুক্তিপূর্ণ লেখালেখি বন্ধে আপনার যতোটুকু তৎপর, জঙ্গিবাদিদের উত্তেজক বক্তব্যের প্রতি ততোটা নয় কেনো? যা শুনলে যে কোনো যুবকের রক্ত টকবগ করে ওঠে এবং জঙ্গি হতে দুবার চিন্তা করে না (যা প্রকাশ্যেই শোনা যায়)। এসব প্রচার বন্ধ না করে জঙ্গি দমন কীভাবে সম্ভব দেশের জ্ঞানীগুণিররা ভাববেন কী? ইংরেজি মিডিয়ামসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকরা যখন জঙ্গি মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে অবিশ্বাসী বা বিধর্মী খুঁজে বের করে, তাদেরকে হত্যা করে অথবা অন্যকে উৎসাহিত করে, তখন বুঝতে হবে, এর শিকড় কোথায়? অর্থাৎ ধর্মের বা ধর্মশিক্ষার মধ্যে এর শিকড় যে পর্যন্ত না খুঁজবেন, সে পর্যন্ত জঙ্গিবাদ দমনের প্রশ্নই আসে না।
কারণ, ধর্মের প্রাথমিক শিক্ষা এতোটা উগ্র এবং কঠোর যে, কেউ ধর্মের নিন্দে-মন্দ করেছে শোনামাত্রই ধার্মিকরা এমন উত্তেজিত হয় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুস্থ চিন্তা হারিয়ে উম্মাদ হয়ে দাঙ্গা শুরু করে এবং যারা ধর্ম নিন্দা করেছে তাদের প্রতি প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠে। কিন্তু ধর্ম প্রশ্নে বিদ্বানগণও কী সুস্থ চিন্তা রহিত? তারা কী করে বারবার একই প্রশ্ন করছেন, কোনো শিক্ষিতরা জঙ্গি হচ্ছে, উগ্র হচ্ছে…? আরে বাপু, একটিবার ধর্মপুস্তক পড়ে দেখুন না, কেনো হচ্ছে উত্তর ওখানেই।
জানি না, ধর্মপুস্তক ‘সঠিকভাবে’ পড়ে, এর মর্মার্থ বুঝে কতোজন ধার্মিক হয়েছেন? এমনকি যারা ধর্মান্তরিত হচ্ছেন, তারাও ধর্মপুস্তক না পড়ে এবং না বুঝেই হচ্ছেন। তেমনি ধর্মকে সঠিকভাবে জেন্তেবুঝে ও পড়ে, কতোজন ধর্মসন্ত্রাসী হয়েছে? এ মূর্খের মনে হয়, পরিসংখ্যা করলে দেখা যাবে, দুটোই শূন্য। অর্থাৎ ধর্মপুস্তকে কী লেখা আছে, তা ভালোভাবে না বুঝে, না জেনে, শুধু শুনে শুনেই কেউ ধার্মিক, নয়তো সন্ত্রাসী হচ্ছে। যাহোক, মুষ্টিমেয় যারা ধর্মগ্রন্থ পড়েছেন বলে দাবি করছেন, তারাও ধার্মিক হাবার পরে পড়েছেন, আগে নয়। কারণ সকলেই জন্মগতভাবেই ধার্মিক। অতএব পড়ে নয়, বেশিরভাগই শুনে শুনে ধার্মিক অথবা জঙ্গি হচ্ছে। আবার যারা পড়েছেন, তাদের মধ্যে সকলেই যে সঠিকভাবে পড়েছেন, এমনটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। (লোকদেখানো মুখস্ত বলার জন্য পড়লে হবে না, প্রকৃতভাবে বোঝার জন্য পড়তে হবে)।
পূর্বেও বলেছি, সবাই আমরা শুনে ধার্মিক, পড়ে নয়। অর্থাৎ যে ৭ আইএস এক সুন্দরী মেয়েকে একইসাথে ভোগ করছে তারাও নিজেদের ধার্মিক মনে করে, আবার যে নারীকে একের পর এক ভোগ শেষে ৫ বার বিক্রি করেছে তারাও নিজেদের ধার্মিক বলছে। যে আইএসরা একসঙ্গে ৫ ভাইকে হত্যা করে ২ বোনকে যৌন দাসী বানিয়েছে তারাও কিন্তু ধার্মিক…। আবার মডারেট বলে খ্যাতরাও ধার্মিক, কেউ কারো চেয়ে কম ধার্মিক তা কেউই মনে করে না, প্রকাশ করে না, মানেও না….। এরা কেউ কাউকে অধার্মিক বললে, নিজেরাই খুনাখুনিতে লিপ্ত হবে ও হচ্ছে। অর্থাৎ সকলেই ধর্ম মেনে সবকিছু করছে। ধর্মের বাইরে গিয়ে এসব কেউ করছে না।
দেখুন-
প্রবাদে আছে, “অপরের বুদ্ধিতে ছাগল না হয়ে, নিজের বুদ্ধিতে পাগল হওয়াও ভালো।” তবে নিজের বুদ্ধিতে ধর্ম ত্যাগ করে এতোদিন পাগল না হলেও আর বোধহয় পারছি না। কারণ সারা পৃথিবীব্যাপী ধার্মিক-দানবদের (সংখ্যায় অল্প হলেও) তান্ডব দেখে ধর্মের প্রতি ঘৃণা ক্রমশই বাড়ছিলো। তবে মাতৃভূমির উপর বীভৎস তান্ডব (গুলশান ম্যাসাকার, যা পাকি দোসরদেও হার মানিয়েছে) দেখে ধর্মের উপর ঘৃণা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এতো ঘৃণা হজম করতে না পেরে উগরে দেওয়াই উচিত বলে মনে করছি। ফলে ধর্মকে আক্রমণ না করে আর পারছি না। জানি না, এটা উচিত কিনা? কারণ রাজীব হায়দার থেকে শুরু করে, একটার পর একটা ভয়াবহতম হত্যাযজ্ঞ দেখেও যখন দেশের প্রায় সব বিজ্ঞজনেরা (রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষিক…) ধর্মের অসারতা এবং কুসস্কারের বিরুদ্ধে না গিয়ে বরং ধর্মকে বাঁচিয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তখন (লিখতে না জানালেও) কলম না ধরে উপায় কী? যদিও নিন্দা প্রকাশে ঈশ্বরদের ন্যায় ভাষা ব্যবহার করতে পারলে বোধকরি জ্বালা কিছুটা বেশি প্রশমিত হতো। তবে ধর্মপুস্তকগুলোতে যেরূপ ভাষা/বাণী ব্যবহৃত হয়েছে, যেসব নগ্ন-জঘন্য হুমকি রয়েছে, সে ভাষা ব্যবহার মানুষের পক্ষে সম্ভব কিনা, বোধগম্য নয়। যেমন, তাদের আদেশ-নির্দেশ না মানলে পায়খানা-প্রস্রাব-রক্ত-পুঁজ খাওয়াবে, আগুনে পোড়াবে, বিষাক্ত সাপ দিয়ে দংশন করাবে… এবং প্রতিশোধ নিতে- দাঁতের পরিবর্তে দাঁত, রক্তের পরিবর্তে রক্ত, খুনের পরিবর্তে খুন… এসব হুমকি কী মানুষের পক্ষে দেয়া সম্ভব? নাকি দেয়া উচিত? মনে হয়, এমন হুমকি/ভাষা/বাক্য ব্যবহার কেবল ঈশ্বরদের পক্ষেই সম্ভব! যাহোক, ঈশ্বরদের আদেশ অনুসারে মানুষ যদি খুনের পরিবর্তে খুন করতেই থাকে তাহলে তা কী কখনো থামবে? মনে হয় না। কারণ যদি কারো ভাই কারো হাতে খুন হয় এবং প্রতিশোধ নিতে তার আত্মীয়স্বজন যদি খুনিকে খুন করে…, তাহলে খুন থামার কথা নয়। ঈশ্বরগণ এতো বুঝেন, এটা বুঝেন না কেনো?
শ্রদ্ধেয় স্যার হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, “সকাল থেকে মধ্যরাত… অবিরল শেখায় যে মিথ্যাচারই সত্যাচার, দুর্নীতিই সুনীতি, অত্যাচারই জনগণকে সুখী করার পদ্ধতি, প্রতারণাই সুসমাচার, অবিচারই সুবিচার, অনধিকারই অধিকার, বর্বরতাই সংস্কৃতি, অন্ধকারই আলোর অধিক, দাম্ভিকতাই বিনয়, সন্ত্রাসই শান্তি, মৌলবাদই মুক্তি, মূর্খ অসৎ অমার্জিত ভণ্ড ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র তাণ্ডব আর নিস্পেষণই গণতন্ত্র।” মূলত মানুষের প্রকৃত ধর্ম (মানবতা) নেই, আছে শুধু ভণ্ডামি আর ভণ্ডামি!!!
অতএব স্যারের ভাষাতেই বলছি- যে পর্যন্ত ধর্মকে কাঠগড়ায় তোলা না হচ্ছে, সে পর্যন্ত মিথ্যাচারই সত্যাচার, দুর্নীতিই সুনীতি, বর্বরতাই সংস্কৃতি, অন্ধকারই আলো, দাম্ভিকতাই বিনয়, সন্ত্রাসই শান্তি, মৌলবাদই মুক্তি… চলতেই থাকবে। অতএব, শুধু দানবদের কাঠগড়ায় তুললে হবে না, ধর্মকেও কাঠগড়ায় তোলা হোক। কারণ উৎস মূল ধ্বংস না হলে, দানব সৃষ্টি চলতেই থাকবে।
মনে রাখাবেন, ধর্মদানব সৃষ্টি হয় ধর্ম অর্থাৎ ঈশ্বর কর্তৃক। অতএব এর শক্তি ও বুদ্ধির সাথে অন্য দানবদের তুলনা হতে পারে না।
যারা জঙ্গি তারা যেমন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছে, আমার মনে হয় আপনার অবস্থাও তাদের মতই। অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী , আপনার ইচ্ছে পূরণ হোক, কিন্তু সে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে আরো জানতে হবে।
Syed Waliul Alam
১৫০০ বছর আগের যুক্তি আমি দেইনি, আপনি বোধহয় বুঝতে ভুল করছেন। আমি তা খণ্ডণ করা চেষ্টা করেছি, জানিনা কতোটুকু পেরেছি বা ভুল করেছি। তবে ১৫০০ বছর আগের জ্ঞান নিয়ে বসে থাকলে এ লেখা লিখতাম না (যদিও ভালো লিখতে জানি না)। আপনি বলেছেন, আমার যুক্তি ও জ্ঞানের ধার সম্ভবত কম। লেখায় নিজেই তা স্বীকার করেছি। আপনার জিজ্ঞাসা, মন্তব্য ও বক্তব্যের সব উত্তরই ধর্মপুস্তকে আছে। আপনার যুক্তি খন্ডন করতে হলে বহু ব্যখ্যার প্রয়োজন যা মন্তব্য আকারে সম্ভব না বলে মনে করছি।
এটুকু বলছি, আপনি বলেছেন, আমি বহু ঈশ্বরের যুক্তি দিয়েছি। জানিনা লেখার কোথায় তা পেয়েছেন? বলুন তো, কে আমাদের হিন্দু, ইহুদি, খৃস্টান, মুসলমান, শিখ… হিসেবে তৈরি করেছে বা জন্ম দিয়েছে? ঈশ্বর নাকি ঈশ্বরেরা? ঈশ্বর একজন হলে সে একেকজনকে একেক ধর্মের মানুষ বানাবে কেনো? যেহেতু ঈশ্বর বহু সেহেতু একেক ঈশ্বর একেকজনকে ইহুদি, হিন্দু… হিসেবে জন্ম দিয়েছে। ঈশ্বর এক হলে তা হতো কী?
যেহেতু আমার প্রায় ১০০% মানুষই শুনে ধার্মিক, পড়ে নয়, সেহেতু সবচাইতে বড় সমস্যাটা এখানেই। জন্মের পর, ভাষা শিক্ষার সর্বপ্রথম ধাপেই আমাদের ধর্ম শিক্ষা শুরু এবং তা শুরু হয় সর্বপ্রথম পরিবারে এবং মুখে পুরোপুরি বুলি ফোটার সাথে সাথেই ধর্মগুরুর কাছে। এ বিশ্বাস কেউ পড়ে বুঝে গ্রহণ করে না। অতএব এ বিশ্বাসকে পুরোপুরিই অন্ধবিশ্বাস বলা চলে। ধর্মগুরু মৌলবাদি হলে তার অনুসারীরা ওই পন্থিই হয়। নরমপন্থি হলে অনুসারীরা স্বভাবতই নরম মনের হয়। আপনার প্রশ্ন ও মন্তব্যের সব উত্তর ধর্মপুস্তকেই আছে; শুধু পড়ে জানতে হবে, শুনে জানার মধ্যে প্রচুর গলদ থাকে। যা আমি এ লেখার ৩টি পর্বেই বারবার উল্লেখ করেছি।
যাহোক, নিচে শ্রদ্ধেয় আরজ আলী সাহেবের সংক্ষিপ্ত কিছু বক্তব্য তুলে দিলাম (তার লেখা পুরোটা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন আমি কী বুঝাতে চেয়েছি)। এছাড়া নিচের লিংক ২টিতে দেখুন ধর্ম যুদ্ধে কতো মানুষের প্রাণ কেড়েছে এবং এখনো ধারাবাহিকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। যার ১০%ও রাজনৈতিক যুদ্ধে মরেছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আপনাকে ধন্যবাদ।
দেখুন: https://www.politicalislam.com/tears-of-jihad/
This gives a rough estimate of 270 million killed by jihad.
১৪০০ বছরের ২৭০ মিলিয়ন বা ২৭ কোটি লোক ধর্মের কারণে খুন হয়েছে।
গত ১৬ বছরে ধর্মের কারণে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ খুন হয়েছে। দেখুন: http://www.thereligionofpeace.com/
লেখকের আবেগের প্রাবল্য আছে- তবে যুক্তি ও জ্ঞানের ধার সম্ভবত কম। ’ফিজিক্যাল সায়েন্স’ আর ’সোস্যাল সায়েন্স’ দুটো আলাদা জগৎ। স্যোসাল সায়েন্সে মতবাদ, ডকট্রিন, তত্ত্ব -যার যার টা তার তার। প্লাটোর মতবাদে ত্রুটি থাকলে সেটি আপনি সংশোধন করে নতুন মতবাদ দিলে সেটি আর প্লাটোর মতবাদ থাকবে না -সেটি আপনার মতবাদ।
1. লেখকের যুক্তি- : ‘তাছাড়া বিজ্ঞানের ভুল-ভ্রান্তি যে কেউ সংশোধন করতে পারে, এতে কারো কোনো আপত্তি কিংবা হুমকি-ধামকি থাকে না। অথচ ধর্মের ভুল-ভ্রান্তি (মহাবিপদজ্জনক হলেও), সংশোধন করা যাবে না! এমন বিভ্রান্তিকর বদ্ধমূল ধারণা ও কুশিক্ষা কী অন্য কোনো বিষয়ে পাওয়া যায়? তারপরও বুদ্ধির সেরা এ জীবের কাছে ধর্ম এবং ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ হলো কীভাবে? বিদ্বানগণের বোধমগ্য হলেও এ মূর্খের বোধগম্য নয়। তবে যার ভালো আছে, তার মন্দও আছে। অতএব, কোনো বিষয়ের ভালোটুকু রেখে মন্দটুকু বাদ দেওয়ায় সমস্যা কোথায়?”
পূববর্তী ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মগুলো সংশোধন করে ইসলাম এসেছে- সেটি আর ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্ম নয়- ইসলাম ধর্ম। সবাই কিন্তু সে সংশোধন ভালো বলে মানে নি। ফলে ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মও রয়ে গেছে। কিন্তু বহুজনেই সে সংশোধন গ্রহন করেছে।
ভালো হলেই সবাই গ্রহণ করবে- এটি সভ্যতার ইহিতাস নয়! কোন ধর্মে আপনার দৃষ্টিতে ভুল-ত্রুটি পেলে সেটি সংশোধন করুন। মানুষের মধ্যে প্রচার করুন। কেউ হয়তো ভালো মনে করে গ্রহণ করতে পারেন, আবার কারো কাছে চরম মন্দ হতে পারেন। এটি মানুষের অধিকার। তবে সে ধর্মের নিশ্চয়ই আরেকটি নতুন নাম হবে।
যার ভালো- আছে, তার মন্দ আছে- বিজ্ঞানের কোন সুত্র এটি?
1. লেখকের যুক্তি- ‘মূলত, যা কুযুক্তি বা কুসংস্কারের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তা-ই অসত্য এবং অমঙ্গলজনক। যা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যায়, তা-ই সত্য এবং মঙ্গলজনক। অতএব সত্যকে রক্ষা করতে প্রচার-প্রচারণা কিংবা ভয়ভীতি বা হুমকির প্রয়োজন হয় না।‘
বিজ্ঞানের আবিস্কারের বহু কিছুর অপব্যবহার হচ্ছে- সেটি আইনষ্টাইনের আবিস্কার হোক আর নিউটনের আবিস্কার হোক- বহু হাত্যাকান্ড ঘটছে- তাই বলে কি বিজ্ঞান ”র্চ্চা নিষিদ্ধ করা হয়েছে?
কিছু ভালো-মন্দ আছে সেটি বিশ্বজনীন। চুরি করা খারাপ কাজ, বিনা দোষে কাউকে হত্য করলে সেটি অপরাধ। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেওয়া ভালো কাজ। এমন শতশত মূল্যবোধ আছে যা ইতিমধ্যেই সার্বজনীন। এটি আগামী দিনেও সার্বজনীন মূল্যবোধ থাকবে। প্রশ্ন হচ্ছে -এই ভালো- সে আইডিয়াটি আপনি পেয়েছেন কোথায়? আপনি হয়তো উত্তরাধিকার সুত্রে পেয়েছেন কিন্তু এসব বিশ্বজনীন আইডিয়ার জনক কে ?
আবার কিছু কিছু ঘটনা কোন বিশেষ পরিস্থিতেতে, বিশেষ সমাজিক অবস্থায় ভালো -বিচার-বিশ্লেষনে কারো জন্য ভালো- কারো জন্য মন্দ। এটি যার যার বিচার বিশ্লেষনের অধিকার। যার যার মুল্যবোধের বিষয়।
সভ্যতার ইতিহাসে কোন ভালোই বিনা রক্তপাতে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। কোন মতবাদ, ইজম, তত্ত্ব শুধু ভালো বলে মানুষ সেটি গ্রহন করেছে- এমন ঘটনা খুবই কম। এমন কি, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র -দাসপ্রথা বিলুপ্তি কোনটিই না। দাসপ্রথা- ভালো নয়- কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করতেও রক্তপাত ঘটেছে। সুতরাং এ সম্পর্কে লেখকের ধারণা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এ আর্টিকেলের আরো বহু অসংগতি তুলে ধরা যায়। যুক্তি ও জ্ঞান ভিত্তিক নয়-খুব সহজেই দেখিয়ে দেওয়া যায়।
2. লেখকের যুক্তি- : “যাহোক, বলুন তো! এক রাজ্যে একাধিক রাজা থাকতে পারে কী? থাকলে, যুদ্ধ-বিবাদ লেগে থাকা অনিবার্য। অথচ এক পৃথিবীতে এতো ঈশ্বর (৪২০০) কী করে শান্তিতে, সহবাস্থান করবে? অতএব ধর্ম কখনোই সম্পুর্ণরূপে শান্তি-সুখের, সমপ্রীতির, ভ্রাতৃত্বের, মহত্ত্বের, কল্যাণের… হতেই পারে না। কারণ এক রাজ্যে একাধিক রাজা যেমন অন্য রাজাকে সহ্য করতে পারে না, তেমনি এক পৃথিবীতে বহু ঈশ্বরও কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না”
সর্বশেষ, বহু ইশ্বরের সম্পর্কে লেখকের যুক্তি- দিয়েই আপাতত শেষ করতে পাই।
বহু ইশ্বরের সম্পর্কে লেখকের দেওয়া প্রায় একই যুক্তি- কোরআনে ১৫ বছরের আগেই দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর একত্ব প্রমানের সপক্ষে এই যুক্তি:
(১৭:৪২) ঃ- বল, ’যদি তাহার সঙ্গে আরো ইলাহা থাকিত যেমন উহারা বলে, তবে তাহারা আরশ-অধিপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবার উপায় অন্বেষন করিত।’
কি অবাক কান্ড! লেখককে সেই ১৫০০ বছর আগ্রে ’এক ঈশ্বর যুক্তি’ এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে। কতটুকু এগুলো পৃথিবী!
@ Syed Waliul Alam,
বুঝলাম না। ১৫০০ বছর আগের জ্ঞান নিয়ে বসে থাকা কি বুদ্ধিমানের কাজ !
@ সুমন চৌকিদার
তার মানে ঈশ্বর মহা হিংসুটে, মহা অসহিষ্ণু,মহা দাঙ্গাবাজ,মহা ধাপ্পাবাজ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক মহার সমাহার থেকে উদ্ভব এক মহান চরিত্র। হা হা হা
গীতা ম্যাডাম, মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমিও আপনার মতো বুঝিনি যে, কোথায় আমি ১৫০০ বছর আগের Õএক ঈশ্বর যুক্তি’ দিয়েছি! যাহোক, আমি বেশ কিছুদিন পূর্বেই Syed Waliul Alam সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েছিলাম তবে কেন যে মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ তা পোষ্ট করেনি জানি না। এখন আবারো দিলাম।
আপনি মন্তব্যের উত্তর দেবার ক্ষেত্রে একটু ভুল করেছেন, সম্ভবত এখনো করছেন। কারো মন্তব্যের উত্তর দিতে হলে উপরে দেখবেন নামের একেবারে ডানপাশে নীল রঙে Edit-Reply-Link লেখা রয়েছে। Reply ‘এর ওপর ক্লিক করলেই ওই নির্দিষ্ট মন্তব্যের উত্তর দেবার জন্য কার্সারটি তৈরী হয়ে যাবে। সেখানে আপনার উত্তর লিখুন। উত্তরটি অনুমোদন পাওয়া মাত্রই স্বয়ংক্রিয় ভাবে সেটি পোষ্টে দেখা যাবে এবং মন্তব্যকারীর কাছেও ই-মেইল পাঠাবে। এমনটি না করলে আপনি যার মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য করছেন তিনি তা দেখতে বা জানতে পাবেন না।
কারো মন্তব্যের বা লেখার কিছু অংশ উদ্ধৃত করতে উদ্ধৃতি বোতাম চেপে সেখানে পেষ্ট করুন, উদ্ধৃতি শেষ করুন এবং আপনার উত্তর লিখুন। ধন্যবাদ।
Syed Waliul Alam
দয়া করে পড়ে দেখুন: http://www.arojalimatubbar.com/2015/12/sotter-sondhane.html
শ্রদ্ধেয় আরজ আলী মাতুব্বরের কিছু বক্তব্য সংক্ষেপে তুলে দিলাম।
…কোন বিষয় বা কোন ঘটনা একাধিকরূপে সত্য হইতে পারে না। একটি ঘটনা যখন দুই রকম বর্ণিত হয়, তখন হয়ত উহার কোন একটি সত্য অপরটি মিথ্যা অথবা উভয়ই সমরূপ মিথ্যা; উভয়ই যুগপৎ সত্য হইতে পারে না হয়ত সত্য অজ্ঞাতই থাকিয়া যায়। একব্যক্তি যাহাকে “সোনা” বলিল অপর ব্যক্তি তাহাকে বলিল “পিতল”। এ ক্ষেত্রে বস্তুটি কি দুই রূপেই সত্য হইবে? …এস্থলে উভয় বক্তাই কি সত্যবাদী? এমতাবস্থায় উহাদের কোন ব্যক্তির কথায়ই শ্রোতার বিশ্বাস জন্মিতে পারে না। হয়ত কোন একজন ব্যক্তি উহাদের একজনের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করিল, অনুরূপ অন্য একব্যক্তি অপরজনের কথা সত্য বলিয়া স্বীকার করিল, অপরজন তাহা মিথ্যা বলিয়া ভাবিল। এইরূপে উহার সত্যাসত্য নিরূপণে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ঘটিল মতানৈক্য।
…ধর্মজগতেও মতানৈক্যের অন্ত নাই যেখানে একইকালে দুইটি মত সত্য হইতে পারে না, সেখানে শতাধিক ধর্মে প্রচলিত শতাধিক মত সত্য হইবে কিরূপে? যদি বলা হয় যে, সত্য হইবে একটি; তখন প্রশ্ন হইবে কোনটি এবং কেন? অর্থাৎ সত্যতা বিচারের মাপকাঠি (Criterion for truth) কি? সত্যতা প্রমাণের উপায় (Test for truth) কি এবং সত্যের রূপ (Nature of truth) কি?
…যত রকম হিংসা, ঘৃণা, কলহ ও বিদ্বেষ। সম্প্রদায় বিশেষে ভুক্ত থাকিয়া মানুষ মানুষকে এত অধিক ঘৃণা করে যে, তদ্রূপ কোন ইতর প্রাণীতেও করে না। হিন্দুদের নিকট গোময় (গোবর) পবিত্র অথচ অহিন্দু মানুষ মাত্রেই অপবিত্র। …এই কি মানুষের ধর্ম? না ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা?
স্বভাবত মানুষ সত্যকেই কামনা করে, মিথ্যাকে নয়। তাই আবহমানকাল হইতেই মানুষ “সত্যের সন্ধান” করিয়া আসিতেছে। দর্শন বিজ্ঞান, ভূগোল ইতিহাস, গণিত প্রভৃতি জ্ঞাননুশীলনের বিভিন্ন বিভাগ সর্বদাই চায় মিথ্যাকে পরিহার করিতে। তাই কোন দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক, কোন ঐতিহাসিক কিংবা নৈয়ায়িক সজ্ঞানে তাহাদের গ্রন্থে মিথ্যার সন্নিবেশ করেন না। বিশেষত তাঁহারা তাহাদের গ্রন্থের ভূমিকায় এমন প্রতিজ্ঞাও করেন না যে, তাহাদের গ্রন্থের কোথায়ও কোন ভুলভ্রান্তি নাই। অথবা থাকিলেও তাহা তাঁহারা সংশোধন করিবেন না। পক্ষান্তরে যদি কাহারো ভুলত্রুটি প্রমাণিত হয়, তবে তিনি তাহা অম্লানবদনে স্বীকার করেন এবং উহা সংশোধনের প্রয়াস পাইয়া থাকেন। …এক যুগের বৈজ্ঞানিক সত্য আরেক যুগে মিথ্যা প্রমাণিত হইয়া যায় …তখনই বৈজ্ঞানিক সমাজ উহাকে জীর্ণবস্ত্রের ন্যায় পরিত্যাগ করেন ও প্রমাণিত নূতন সত্যকে সাদরে গ্রহণ করেন।
ধর্মজগতে কিন্তু ঐরূপ নিয়ম পরিলক্ষিত হয় না। তৌরীত, জরুর, ইঞ্জিল, ফোরকান, বেদ-পুরান, জেন্দ-আভেস্তা ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থসমূহের প্রত্যেকটি অপৌরুষেয় বা ঐশ্বরিক পুথি কি না, তাহা জানি না, কিন্তু ইহাদের প্রত্যেকটি গ্রন্থ এই কথাই বলিয়া থাকে যে, এই গ্রন্থই সত্য। যে বলিবে যে, ইহা মিথ্যা, সে নিজে মিথ্যাবাদী, অবিশ্বাসী, পাপী অর্থাৎ নরকী।…প্রত্যেক ধর্মেই তাহার নির্দিষ্ট বিধি-বিধান সমূহের সত্যাসত্যের সমালোচনা একেবারেই বন্ধ।
পূর্বেই বলিয়াছি যে, প্রত্যক্ষ ও অনুমান, এই দুইটির উপর খাঁটি বিশ্বাস বা জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত। যে বিশ্বাসের মূলে প্রত্যক্ষ বা অনুমান নাই অর্থাৎ যে বিশ্বাসের মূলে জ্ঞানের অভাব, তাহা খাঁটি বিশ্বাস নহে, অন্ধ-বিশ্বাস। বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আমাদের সন্দেহ নাই। বিজ্ঞান যাহা বলে, তাহা আমরা অকুণ্ঠিত চিত্তে বিশ্বাস করি। কিন্তু অধিকাংশ ধর্ম এবং ধর্মের অধিকাংশ তথ্য অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। …এজন্য ধর্মের অনেক কথায় বা ব্যাখ্যায় সন্দেহ থাকিয়া যায়। দ্বিধাহীন চিত্তে ধর্মীয় সকল অনুশাসনকে আমরা সত্য বলিয়া স্বীকার করিতে পারি না। তাই বিজ্ঞানের ন্যায় ধর্মের উপর সকল লোকের অটল বিশ্বাস হয় না। ধর্মকে সন্দেহাতীতরূপে পাইতে হইলে উহাকে অন্ধবিশ্বাসের উপর রাখিলে চলিবে না, উহাকে খাঁটি বিশ্বাস অর্থাৎ জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে।
এর জন্য প্রয়োজন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ১২৩…, আর এর প্রথম আসামি ইসলাম; তার পর অন্য গুলো।
আরাফাত ভাই, অধমের লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যা প্রয়োজন তা করবেটা কে? জানি কেউ করবে না এবং এসব ওরা পড়বেও না। তথাপিও এখানে লিখে মনের জ্বালা অতি সামান্য প্রশমিত করছি মাত্র।
বিরতিহীন ভাবে পড়ে ফেল্লাম, অাপনার যুক্তি অার বিশ্লেষন করার ক্ষমতাটা অসাধারন ছিলো, এই বাস্ততার যুদ্ধক্ষেত্রে এসব চিন্তাধারার মানুষগুলা মামুলি সৈনিক মাত্র 🙁 🙁
রিপন ভাই, অধমের লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। যুক্তি আর বিশ্লেষণের ক্ষমতা অসাধারণ কিনা জানি না, তবে সারা পৃথিবী জুড়ে যা চলছে তাতে আর চুপ থাকতে পারছি না। অথচ মনের কষ্টগুলো ব্যক্ত করা বা এর প্রতিকার চাওয়ার জায়গা খুঁজেও পাচ্ছি না। যা লিখলাম তাতে ওদের (ধার্মিকদের) টনক নড়বে না জানি, তথাপিও লিখছি।