হুমায়ূন আহমেদের ‘হিজিবিজি’ নামক প্রবন্ধ সংকলনে একটা ছোট্ট প্রবন্ধ আছে অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে লেখা; অধ্যাপক ইউনূস নামে। লেখাটির সময়কাল জানি না। হুমায়ূন আহমেদ লেখাটি শুরু করেছেন এইভাবে –
একটি দৈনিক পত্রিকা অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে প্রথম পাতায় কার্টুন ছেপেছে। সেখানে তিনি হাসিমুখে রোগাভোগা একজন মানুষের পা চেপে শূন্যে ঝুলিয়েছেন। মানুষটার মুখ থেকে ডলার পড়ছে। অধ্যাপক ইউনূস বড় একটা পাত্রে ডলার সংগ্রহ করছেন। কার্টুন দেখে কেউ কেউ হয়তো আনন্দ পেয়েছেন। আমি হয়েছি ব্যথিত ও বিস্মিত। পৃথিবী-মান্য একজন মানুষকে এভাবে অপমান করা যায় না। ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনি, ‘মানীকে মান্য করিবে।’
হুমায়ূন আহমেদ বর্ণিত পত্রিকাটি আমি পড়িনি। তাই ইউনূসের কার্টুনটিও দেখিনি। কিন্তু হুমায়ূনের বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছে, কার্টুনটি একেবারে যথার্থ হয়েছে। কার্টুনিস্টকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন অসাধাণ শিল্পকর্মের মাধ্যমে যথাযথ ইউনূসকে মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য। ক্ষুদ্র ঋণের নামে তিনি কত অগণিত হতদরিদ্র মানুষকে তাদের একমাত্র সামান্য সম্বল ভিটে-মাটিটুকু ছাড়া করেছেন আর কোনো হিসেব কি হুমায়ূন আহমেদের কাছে ছিলো? ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অসংখ্য দরিদ্র লোক কিছুদিন চড়া সুদ দিয়ে যেতে যেতে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলে ইউনূস সাহেব তার ব্যাংকের লাঠিয়াল বাহিনি পাঠিয়ে তাদের থালাবাসন, ছেঁড়া কাঁথা-বালিশ, ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল, ছেঁড়া জুতা-স্যান্ডেল লুট করিয়ে নিয়েছেন। যাদের ভিটে আছে তাদের ভিটে দখল করে নিয়েছেন। হতদরিদ্রকে করেছেন উদবাস্তু। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনকে জানি, যারা চড়া সুদের ঋণের দায়ে ভিটেমাটি হারিয়ে উন্মাদ হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের রাস্তায় ফেলে দেউলিয়া হয়ে গেছে।
কার্টুনটা যেভাবে আঁকা হয়েছে – একজন রোগাভোগা মানুষের পা চেপে ধরে শূন্যে ঝুলিয়ে রেখেছেন ইউনূস। লোকটির মুখ থেকে ডলার পড়ছে, আর একটা বড় পাত্রে তা সংগ্রহ করছেন ইউনূস সাহেব। একেবারেই বাস্তব ছবি নয় কি এটা?
হুমায়ূন আহমেদ এই কার্টুন দেখে ব্যথিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে। ব্যথিত হয়েছি আমিও। আমি ব্যথিত হয়েছি ইউনূসের হাতে শূন্যে ঝুলে থাকা রোগাভোগা লোকটার জন্য। একজন কাঙাল মানুষ, যাদের হারাবার কিছুই নেই, যাদের পেটে জনম জনমের খিদা তাদের পেট টিপেও ইউনূস সাহেব ডলার বের করেছেন। যে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি করে তিনি ধন-কুবের হয়েছেন সে সমস্ত কাঙালের জন্য আমি ব্যথিত বোধ করছি। এই দস্যুপনার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন। তাও আবার শান্তিতে। ঠিক হেনরি কিসিঞ্জার যেমন শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন তেমন আরকি! এজন্যও ব্যথিত বোধ করছি। হায়, নোবেল!
হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবী-মান্য একজন মানুষকে এভাবে অপমান করা যায় না।’ হেনরি কিসিঞ্জারও পৃথিবীতে অনেকের কাছে মান্য। তাই বলে কোনো বিবেকবান মানবিক মানুষের কাছে সে মান্য হতে পারে? গোলাম আজম, সাইদী, কাদের মোল্লা প্রমুখ যুদ্ধাপরাধীরাও রাজাকারদের কাছে মান্য। তাই বলে আমরাও এদের মান্য করবো? আমার নিজের কাছে মান্য একজন ব্যক্তি যদি কোনো অপরাধ করে তবে তার সমালোচনা করতে আমি নিশ্চয়ই পিছপা হবো না, যেমন কার্পণ্য করবো না তার ভালো কাজের প্রসংসা করতে। ছোটবেলা থেকে যে আমাদের শেখানো হয়, মানীকে মান্য করিবে – তা অত্যন্ত ভুল। প্রসংশা ও ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা ও নিন্দা যে যার যার কর্মকাণ্ড অনুযায়ী পাবে। এসবও আবার আপেক্ষিক। যেমন যুদ্ধাপরাধীরা আমাদের কাছে ঘৃণ্য, আর পুরানো ও নতুন প্রজন্মের রাজাকারদের কাছে পূজনীয়। হুমায়ূন ব্যথিত বোধ করেছেন ডাকাত ইউনূসের জন্য। আর আমি ব্যথিত বোধ করছি যারা তার ডাকাতির স্বীকার হয়েছেন তাঁদের জন্য।
আর কেউ একজন এসে আমাকে বললো, এই যে, অমুক তমুক ও সমুককে মান্য করিবেক কিন্তু। আর এজন্যই আমি কাউকে মান্য করিবো? আমি যেকোনো মানুষকে সম্মান বা অসম্মান করবো তার কাজের জন্য। এবং সেটা আমারই বিবেক ও বিবেচনায়। অন্য কারো চাপিয়ে দেওয়া মানীকে আমি মান্য করবো কেন? অথবা কারো চাপিয়ে দেওয়া অমানীকে অমান্য করবো কেন? নিজের বিবেক বুদ্ধির জলাঞ্জলি দিয়ে দিতে আমাদেরকে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দেওয়া হয়।
কার্টুন আঁকা একটা শিল্প। একজন কার্টুনিস্ট তার কার্টুনের মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলেন এক একটা ঘটনা, ঘটনার নায়ক এক একজন ব্যক্তিকে। কার্টুনে থাকে বিদ্রূপ হাস্য পরিহাস। এটাও এই শিল্পেরই অপরিহার্য অঙ্গ। তাই বলে পৃথিবীতে যত কার্টুন আঁকা হয় সবই যে সত্যি তাও নয়। কিন্তু ইউনূসকে নিয়ে আঁকা এই কার্টুনটি একেবারে বাস্তবতার ছবি। কিন্তু কথাশিল্পী হুমায়ূন এর শিল্প ও সত্য-গুণের প্রসংসা না করে ব্যথা প্রকাশ করলেন এক দস্যুর জন্য; কাঙালের ধন লুট করে যে হয়েছে পৃথিবী-মান্য।
হুমায়ূন আরো লিখেছেন, ‘একটি পত্রিকায় পড়লাম, গান্ধীজীকে নিয়ে বই লেখা হয়েছে। সেই বইয়ে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে, গান্ধীজী ছিলেন সমকামী। হায় রে কপাল! অধ্যাপক ইউনূসকে গান্ধীজীর মতো গভীর গর্তে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হলেও আমি বিস্মিত হবো না।’
গান্ধীজী সমকামী ছিলেন কিনা আমি জানি না। যদি তিনি সমকামী না হন তবুও কেউ তাঁকে সমকামী ভাবলেই কি তিনি গভীর গর্তে পড়ে গেলেন হুমায়ূনের কাছে? হুমায়ূনের কাছে কি সমকামী হওয়া এতোই ঘৃণ্য? আর বিষমকামী হওয়া বড় মহান ব্যাপার? একজন বিজ্ঞানীর এমন দৃষ্টিভঙ্গী দেখে গভীর গর্তে পড়তেই হয় আসলে। কেউ সমকামী হলে হুমায়ূনের কপালের হায় হায় হয়ে যায়? সমকামিতা বিষমকামিতা বা উভকামিতা এসব মানুষের যৌনাভ্যাস। একেকজনের একেক রকম। এখানে নিন্দা বা প্রসংশার কিছু নাই। গর্তে পড়ার কিছু নাই। হায় রে কপালের কিছু নাই। যার যার যৌন জীবন সে সে উপভোগ করবে তাদের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী। জোর জবরদস্তি না থাকলেই হলো সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যে। শুনেছিলাম, গান্ধীজী তরুণী মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন, তিনি নিজেও উলঙ্গ হয়ে থাকতেন সারারাত। এবং তাদের মধ্যে কোনো যৌন সম্পর্ক হতো না। আর এভাবেই নাকি তিনি নিজের সতত্ব পরীক্ষা করতেন। আসলে এভাবে তিনি নিজের সতত্ব নয়, পুরুষত্বই পরীক্ষা করতেন। এইসব ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে নিশ্চয়ই তিনি উত্থান-রহিত হয়ে যাবার পর নেংটু তরুণীদের দ্বারা রাতভর পরিবেষ্টিত থেকে আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেছিলেন উত্থান ঘটাতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। অথবা যদি তিনি সমকামী হয়ে থাকেন তাহলে নেংটু যুবতী সুন্দরী রমণীদের সাথে নেংটু হয়ে শুয়ে থাকলে উনার শারীরিক অনুভূতি না জাগারই কথা।
মন্তব্য…লেখাটা ভালো হয়েছে, তবে সূত্র বা উৎসের উল্লেখ থাকলে বেশি উপকৃত হতাম বলে মনে করি। ধন্যবাদ।
হুমায়ূন আহমেদের লেখাটির কথা উল্লেখ আছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
হূমায়ুন আহমেদের কথাটি পড়ার পর উনার যে সমকামিতা সম্বন্ধে একধরণ এর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটাই মনে হয়। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে।
গান্ধীজীর নামের সাথে সমকামী ‘অপবাদ’ যুক্ত কতে তাকে গভীর গর্তে ফেলার কথা বলেছেন উনি। এই গভীর গর্তের মানে ছোট করা বা অপমানিত করা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
আর সমকামীতা যদি খারাপ নাই হবে( হূমায়ুন যদি সেরকম ভেবে থাকেন) তাহলে গান্ধীজী বা তার ভক্ত শিষ্যদের এটাতে অত চিন্তার কি আছে বা আপনার ভাষায় বিড়ম্বনারই কি আছে?
আমি জানি না মূল লেখায় সমকামিতা প্রসঙ্গে ‘অপবাদ’, ‘অপরাধী’ ইত্যাদি ব্যবহার হয়েছে কিনা। হয়ে থাকলে বুঝতে হবে লেখক সমকামিতা কে নেতিবাচকভাবে দেখতেন। গভীর গর্তে পড়ার অর্থ এমন অবস্থায় পড়া যা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন, অপমানিত হওয়া নয়, আমার তাই মনে হয়েছে। আপনার বা আমার দৃষ্টিতে সমকামিতা খারাপ না কিন্তু গান্ধীজী বা তাঁর ভক্তরা এমন নাও ভাবতে পারেন। বিড়ম্বনা শব্দটি আমাদের স্কুলের পাঠ্য বইএর ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ থেকে ধার করা। একজন মানুষ যা না সেই ভিন্ন পরিচয়ে (তা যত মহৎই হোক) পরিচিত হলে কি সমস্যা হয়, এই নাটিকাটিতে তাই দেখান হয়েছে।
বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে পেডোফিলিয়া বা শিশুকাম ও সমকামীতাকে এক করে দেখার প্রবণতা আছে। মুমিন, ধর্ম মানা লোকজনের মধ্যে এই প্রবণতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন মুক্তচিন্তার অনুসারীরাও এই বিভ্রান্তির শিকার হন তখন ব্যাপারটা দূর্ভাগ্যজনক হয়ে দাঁড়ায়।
পেডোফিলিয়া একটি জঘন্য মানসিক বিকৃতি ও সিরিয়াস অপরাধ। অপরদিকে সমকামিতা বিশ্বের সবগুলো স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক সংস্থা দ্বারা একটি ব্যতিক্রমী যৌনাভ্যাস হিসেবে পরিগণিত। এবং কোনো সভ্য ও উন্নত দেশেই অপরাধ হিসেবে গণ্য নয়। মুমিন ও ধর্মাশ্রয়ী দেশগুলোকে হিসেবে ধরছি না।
এখ্যনে যে একজন পীরের কথা এসেছে সে একজন বিকৃত পেডোফিলিয়াক। একই ভাবে ‘ঘেঁটুপুত্র’ তে যে জমিদারের কথা বলা হয়েছে সেও তাই। বেশিরভাগ পেডোফিলিয়াকদেরই স্ত্রী সন্তানসহ স্বাভাবিক সংসার থাকে।
হূমায়ুন আহমেদ যেমন লেখকই হয়ে থাকুন না কেন দিনশেষে উনি একজন ধর্মভীরু লোকই ছিলেন। তাই খুব কৌশলের সাথে সমকামীতকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আমরা সেই ফাঁদে পা দিয়েছি মাত্র। সমকামীতা নিয়ে যেকোন আলোচনায় আমাদের মাথায় রাখা উচিত যে পেডোফিলিয়া ও সমকামিতা এক নয়। যদি না আমরা ছদ্ম মুমিন বা মুক্তমনা না হয়ে থাকি। এই ধরণের চিন্তা সমকামীদের উপর সমাজের প্রচলিত লাঞ্ছনাকে বৈধতা দেয়। অভিদার দুর্ধর্ষ ‘সমকামিতা’ বইটি এ ব্যাপারে যে কোন ভুল ধারণা ভাংগতে সহায়ক হতে পারে।
পেডোফিলিয়া ও সমকামিতা এক নয়, আর হুমায়ুন আহমেদ স্রষ্টায় বিশ্বাস করতেন একথাও ঠিক। তবে সমকামিতাকে তিনি অপরাধ হিসাবে ভাবতেন এটি কেবল গান্ধী সম্পর্কে তাঁর উপরের প্যারাগ্রাফ থেকে বোঝা মুশকিল। একজন মানুষ যা নন তাকে সেই পরিচয়ে পরিচিত হতে হলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়, হুমায়ুন আহমেদ এমনটাও ভাবতে পারেন।
হূমায়ুন আহমেদের কথাটি পড়ার পর উনার যে সমকামিতা সম্বন্ধে একধরণ এর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটাই মনে হয়। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে।
গান্ধীজীর নামের সাথে সমকামী ‘অপবাদ’ যুক্ত কতে তাকে গভীর গর্তে ফেলার কথা বলেছেন উনি। এই গভীর গর্তের মানে ছোট করা বা অপমানিত করা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
আর সমকামীতা যদি খারাপ নাই হবে( হূমায়ুন যদি সেরকম ভেবে থাকেন) তাহলে গান্ধীজী বা তার ভক্ত শিষ্যদের এটাতে অত চিন্তার কি আছে বা আপনার ভাষায় বিড়ম্বনারই কি আছে?
আপনা্র মন্তব্য থেকে সমকামীতা সম্পর্কে ভাল ধারণা পেলাম।পূর্বে এ বিষয়ে ধারণা থাকলেও এভাবে ক্লাশিফিকেশনটা আমার জানা ছিলনা।আপনার লেখা থেকে তা জেনে আমার ধারণা ঋদ্ধ হলো।ঠিক একই বিষয়বস্তু নয় তবে খুব রিলেটেড বিষয় নিয়ে একটা লেখা আগামীতে লেখার খুব ইচ্ছে আছে আপনার তথ্য খুব কাজে দেবে।ধন্যবাদ।
আমি এই ব্যাপারে খুব সামান্যই জানি। শুধু বিভ্রান্তিটুকু কাটাতে চেষ্টা করেছি। আপনি যদি কষ্ট করে অভিজিৎদার ‘সমকামিতা’ বইটি পড়তে পারেন তাহলে দরকারি সবতথ্যই পেয়ে যাবেন আশা করি।
লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে আপনি ডঃ ইউনুসের প্রতি একরাশ ঘৃণা নিয়ে লিখেছেন! কার্টূনের বক্তব্য সত্য হলে অবশ্যই তাঁর সমালোচনা করতে হবে। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণ কি আসলেই এত খারাপ? পত্রপত্রিকায় ঋণ নিয়ে সফল হয়েছেন এমন লোকদের কথাও তো শুনি। সফল আর বিফলদের সংখ্যা নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা কেউ কি করেছেন? এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে কিছু ঋণ-গ্রহীতা ঋণের টাকা যথাযথভাবে খরচ না করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এবং ব্যাংক দরিদ্র গ্রহীতার প্রকৃত অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে জোর-জবরদস্তি করে টাকা আদায় করেছে। বিষয়টি অমানবিক মনে হলেও বেআইনী নয়। আর ডঃ ইউনুস কাউকে ঋণ নিতেও বাধ্য করছেন না। ভেবে দেখুন রাস্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর কথা। বছরের পর বছর ধরে কিছু লোক হাজার-কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে, অথচ এর কোন প্রতিকার নেই। সমালোচনা যদি করতে হয় তাহলে আগে এই দরবেশদের এবং যে পদ্ধতি তাদের এই চুরি করার সুযোগ দিচ্ছে তার সমালোচনা করা উচিত।
ডঃ ইউনুসের বা তাঁর ব্যাংকের সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত নেই। উনি আমাদের দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান বয়ে এনেছেন কেবল এজন্যই ওনাকে কৃতিত্ব দেই। দুটো ঘটনাঃ একবার একজন বিখ্যাত গবেষকের সাথে রাতের খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমি বাংলাদেশের শোনার পর সাথে সাথেই বললেন যে উনি আরে ওনার স্ত্রী দুজনেই ডঃ ইউনুসের ভক্ত। আরেকজনের কথা বলি, যিনি আমাদের অফিসের মেঝে পরিস্কার করেন; শিক্ষিত লোক, গৃহযুদ্ধের কারনে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পালিয়ে এসেছেন। কিছুদিন আগে কথা প্রসঙ্গে বললেন, উনি ডঃ ইউনুসের বই পড়েছেন। আমার ধারনা আমার মত অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীরই এধরনের অভিজ্ঞতা আছে। এসব বাদ দিলেও আমার মনে হয় যে নিজের কর্মক্ষেত্রে ডঃ ইউনুসের যদি তাঁর কোন অবদানই না থাকে তাহলে তো তিনি সর্বকালের সর্বসেরা কন আর্টিস্ট! তিনি এতদিন ধরে নোবেল কমিটি, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের সরকার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিকদের বোকা বানিয়ে চলেছেন, অথচ ধরা পড়ছেন না। অবশ্য বিগত সরকার আর বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রীরা তাঁর অবদান নিয়ে একমত! তবে আমাদের দেশে সরকার আর বিরোধীদলের নেতারা একসুরে কথা বললে তা নিয়ে কিছুটা চিন্তা-ভাবনার দরকার আছে।
যাই হোক কেউই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। ডঃ ইউনুসের বা তাঁর প্রতিষ্ঠানের ভুল-ত্রুটি আলোচনায় আশা উচিত। সেক্ষেত্রে তাঁরা সেগুলো শুধরে নেয়ার বা আরও মানবিকভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরী করতে পারবেন।
ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটা খারাপ না। কারণ হতদরিদ্র মানুষদের অন্য ব্যাংকগুলি ঋণ দেয় না। দেবেই বা কীসের ভিত্তিতে? টাকাটা তাদের কাছ থেকে ফেরত পাবার কোনো সম্ভাবনাই যে নেই। তার উপর রয়েছে সুদ। কিন্তু অত্যন্ত চড়া সুদের ব্যাপারটা ভেবে দেখুন। স্বল্প সুদের হলে সত্যি একটা দারুণ ব্যাপার হতো তা দরিদ্র মানুষএর জন্য।
সফল হয়েছেন এমন লোকও আছে। তবে বিফল ও সর্বস্ব হারিয়ে ফেলা লোকের সংখ্যাই অনেক বেশি। গবেষণা অনেক হয়েছে এই ব্যাপারে। খবর নিলেই জানতে পাবেন। ঋণের চড়া সুদ সময়মত দিতে না পারায় অনেক অনাহারীর বাসনকোসন, কাঁথাবালিশ এমনি ভিটেবাড়ি লুট করিয়ে নিয়েছে ইউনূস তার বাহিনির হাতে। এটা বেআইনী মোটেই নয়। কারণ অন্যান্য ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করলেও এমন করার আইন আছে। যেমন কোথাও কোথাও আইন আছে তুচ্ছ চুরির জন্য হাত কেটে ফেলার।
অন্যান্য ব্যাংকগুলির সাথে ঋণ-খেলাফির ঘটনাও অনেক ঘটে কোটি কোটি টাকা লোকে মেরে দিয়ে সুখে শান্তিতে বিরাজ করে। সেটার পক্ষেও আমি কথা বলছি না।
অনেক বিদেশীই ইউনূসের ভক্ত। ক্লিন্টন দম্পতিও তার ভক্ত। আর তাই তিনি নোবেল পেয়েছেন। বাইরে থেকে শুনতে ভালো লাগে নিশ্চয় ব্যাপারটি। হতদরিদ্র, যাদের কোনো ব্যাংকই ঋণ দেবে না তাদের ঋণ দিচ্ছেন ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ নামক ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে। কিন্তু তার পরের পরিণতির কথা এরা জানেন না। এদেরকে জানানো হয় আইডিয়াটা ও উপর থেকে কিছুটা খোলস। কিন্তু ভেতরের জিনিসটা না।
ঋণ নিতে ইউনূস বাধ্য করেন না। কিন্তু এমন এক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তিনি চালু করেছেন যাতে অতি দরিদ্ররা টাকা নিতে পারে ঋণ হিসেবে। যারা অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটায়, জীবনে টাকার চেহারা তেমন দেখে না তারা তো এমন সুযোগ নেবেই। পরে কী হবে তা না ভেবেই। আসলে যাদের কিছু হারাবার নেই তাদের হারাবার ভয়ও থাকে না যে!
ক্ষুদ্রঋণের আইডিটা ভাল। কিন্তু সুদের মাত্রা ও অনাহারীদের থালাবাসন লুট করে নেবার ব্যাপারটি ভাবুন একবার।
সুন্দর গুছিয়ে মন্তব্য করেছেন; ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সফল বা বিফল হয়েছেন এমন দুধরনের লোকই আছেন। তবে কার সংখ্যা বেশী সে নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আমি জানতে আগ্রহী তাই এ নিয়ে খুঁজে দেখছি। আশা করছি জলদিই এসম্পর্কে ধারনা পাব।
আমি হুমায়ুন আহমেদের ভক্ত পাঠক নই। আমি উনার পক্ষে সাফাই ও গাচ্ছি না। তবে যুক্তি হলো — মানুষের যৌন জীবন নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায় তার “ঘেটু পুত্র কমলা” চলচ্চিত্রে। আর উনি বিশেষ করে গান্ধিজীকে নিয়ে নির্মোহভাবেই লিখেছেন।
যাহোক, বিষয়টি নিয়ে ভাবনা যোগানোর জন্য ধন্যবাদ।
গান্ধিজীকে নিয়ে হুমায়ূন নির্মোহভাবে লিখেছেন বলে মনে হয় না, দিদি। তাহলে গান্ধিজীকে কেউ সমকামী ভাবলে তিনি ‘হায় রে কপাল’ বলে আফসোশ প্রকাশ করতেন না।
শুনেছিলাম, গান্ধীজী তরুণী মেয়েদেরকে উলঙ্গ করে তাঁর বিছানায় শুইয়ে রাখতেন, তিনি নিজেও উলঙ্গ হয়ে থাকতেন সারারাত।
এটা কোখায় শুনলেন ?পড়লেন ? একটু জানাবেন দয়া করে…
কোথায় পড়েছিলাম, মনে নেই এখন। দুঃখিত।
কাহিনীটি খুব নির্মোহভাবে হুমায়ুন আহমেদ ফুটিয়ে তুলেছেন এতে আমি একমত।কিন্তু একজন মহৎ শিল্পীর কাজতো সবকিছু নির্মোহভাবে ফুটিয়ে তোলা নয়।সময়ের নির্মোহ ধারাভাষ্য রচনা করবেনতো ঐতিহাসিক।যেকোনও মহৎ শিল্পের পেছনেই শিল্পীর একটা অঙ্গীকার থাকে ।শিল্পীর চোখে যা অন্যায় অপরাধ সাধ্যের ভেতরে থেকেই তিনি একটি রেখায় বা একটি আঙ্গুলের চিহ্নে হলেও তার প্রতিবাদটি রেখে যান।ঘেটুপুত্র কমলা’য় হুমায়ুন প্রতিবাদ দেখিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সেটা অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে নয় এক নির্যাতিতের বিরুদ্ধে আরেক নির্যাতিতের।স্বামী সোহাগ বঞ্চিতা এক নারী তার সকল বঞ্চনার ক্রোধ আর হিংসা ঢেলে দিয়ে নিজ কন্যার বয়সী এবং খেলার সাথীকে খুন করিয়ে কীসের প্রতিবাদ করল? সেটা প্রতিবাদ নয় প্রতিহিংসা।আর সে নারী তার প্রতিহিংসা দেখিয়ে দুশ্চরিত্র জমিদারকে ছাপিয়ে নিজেই হয়ে উঠল ছবির খলনায়ক।দর্শকের ঘৃণা উপচে পড়ল সেই ঘাতক নারীর উপরই।পক্ষান্তরে সেই বিকৃতমনা জমিদারকে ছোট ছোট দান খয়রাতের মাধ্যমে মহান করারই একটা প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কমলাকে হত্যার পর সেই প্রতিহিংসাপরায়না নারী যদি নিজ কন্যাকে নিয়ে বাপের বাড়িও চলে যেত তবুও জমিদারের অপরাধের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদের প্রকাশ পেতো।বলবেন সময়ের প্রেক্ষাপটে সেটা অসম্ভব ছিল।কে বলেছে অসম্ভব ছিল ? ঘেটু বা ঘাটুপ্রথা সিলেট এবং ময়মনসিংহের ভাটী এলাকায় এক সময় ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছিল।জমিদারদের দেখাদেখি অনেক বিত্তবান বিকৃতমনাও ঘাটুছেলে নিয়ে থাকতো। সমকালীন সময়ে সিলেটে জনিদারদের মাধ্যমে নানকার নামে আরেক ঘৃণ্য সামাজিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছিল যার নির্মম নিষ্টুর ব্যাধি নিয়ে জীবন যাপন করতো হাজার হাজার ক্রীতদাস পরিবার।এই ক্রীতদাসদের নিজের বলতে কিছুই ছিলনা এমনকি ঘরের সুন্দরী বৌ কন্যাদের উপরেও তাদের অধিকার ছিলনা।যুগে যুগে সামন্ত প্রভুরা এই পরিবারগুলির উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে গেছে কিন্তু তা যে একেবারে প্রতিবাদহীন ছিল তা কিন্তু নয়।মাঝে মাঝে এখানে সেখানে প্রতিবাদ স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছে কিন্তু আগুণ হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।সেই স্ফুলিঙ্গের কিছু কিছু সংগ্রহ করে বিপ্লবী অজয় ভট্টাচার্য তার কয়েক খন্ডে বিন্যস্থ ‘নানকার বিদ্রোহ’ গ্রন্থে সংকলিত করেন।আমাদের অতীত ইতিহাসে উপেক্ষিত সাধারণ মানুষের সেই সব অতি ক্ষুদ্র দ্রোহ বিদ্রোহগুলি আমাদের সাহিত্য চলচিত্রেও সমান উপেক্ষিত থেকেছে।হুমায়ুন আহমেদ পারতেন ঘেটুপুত্র কমলা’য় সেই দ্রোহ ফুটিয়ে তুলতে।আমার মনে হয় অতিমাত্রায় নির্মোহ হতে গিয়েই হুমায়ুন আহমেদ সময়ের এক ধারাভাষ্যই বর্ণনা করে গেছেন।আর হাঁ ঘেটুপুত্র নামকরণটিতেও আমার কিঞ্চিত অসন্তুষ্টি আছে।যারা ছবিটি দেখেননি বা যারা ঘাটুপ্রথা সম্বন্ধে জানেননা তারা ঘেটুপুত্র শব্দ থেকে ঘেটুর পুত্র বলেই মনে করবেন।ঘেটুছেলে হলেই এই বিভ্রম হতোনা।ঐসব এলাকায় ঘেটু বা ঘাটুরা ঘাটুপোয়া বা ঘাটুপোলা বলেই পরিচিত ছিল সুতরাং শব্দ প্রমিথকরণের স্বার্থে ঘেটুছেলে হলেই অধিক গ্রহণযোগ্য হতো। পরিশেষ সবিনয়ে বলি আপনার লেখার শেষ দুই পংতিতে গান্ধীজী সম্পর্কে যা লিখেছেন নির্ভরযোগ্য রেফারেন্স ছাড়া একজন ঐতিহাসিক ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে এরকম লেখা কি সঠিক হল ?
কাহিনীটি ঐতিহাসিক পটভূমিতে নির্মিত। ইতিহাস পালটে দেওয়ার অধিকার লেখকের নেই। যদিও উপন্যাসে তা হতেও পারে।
জমিদারনীদের হাতেও কি কাজের লোকেরা কম অত্যাচারিত হতো? এখনো কি গৃহকর্ত্রীর হাতেই কাজের ছেলেমেয়েরা বেশি অত্যাচারিত হয় না? কত কাজের মেয়েকে ত পিটিয়ে মেরেই ফেলে বাড়ির মহিলারাই। এমন কি কোনো কাজের মেয়ে গৃহকর্তা বা গৃহকর্তার ছেলে দ্বারা ধর্ষিত হলে বাড়ির মালকান ধর্ষিত মেয়েটির দিকে সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিয়ে নিজের ছেলে বা স্বামীর পক্ষ নেয়।সব দোষ ধর্ষিতা মেয়েটির উপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে নষ্টা বলে প্রচার করে। এক্ষেত্রে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে গেলে বা লোক জানাজানি হয়ে গেলে তাকে মেরেও ফেলে। এগুলি বাস্তবতা। আমার মনে হয়, হুমায়ূন এখানে তখনকার বাস্তবতা তুলে ধরেছেন এবং ছেলেটির প্রতি তাঁর সহানুভূতি উঠেছে।
আবার জমিদাররা অনেক বাজে কাজ করার পরেও দু’একটি ভাল কাজ করতো। তা লোক দেখানোর জন্য হোক অথবা অন্য কোনো কারণে হোক।
গান্ধীজী সম্পর্কে এই কথাগুলি খুবই প্রচলিত। আবার প্রচলিত হলেই যে সত্যি তাও ঠিক নয়। আমি কোথাও পড়েছিলাম। এখন মনে করতে পারছি না। রেফারেন্স দিতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো।
পৃথ্বীরাজ সেন তাঁর ‘তিন নায়কের কলঙ্ক’ বইটিতে এমন লিখেছেন। যতদূর মনে পড়ছে তিনি রেফারেন্স দিয়েই এটি লিখেছিলেন।
ভালো লিখেছেন।শেষ দু’লাইন পড়ে বেশ হাসি পেল।ভায়াগ্রা নামক জিনিষটি বড্ড দেরীতে বাজারে আসলো।সমকামীতা সম্পর্কে হুমায়ূন আহমেদের দৃষ্টিভঙ্গি তার ‘ঘেটুপুত্র কমলাতে’ই পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।কিন্তু সেই ঘৃণা ফুটিয়ে তুলতে গিয়েও তিনি শ্রেণী চিন্তার উর্ধে উঠতে পারেননি।জীবিকার তাড়নায় দরীদ্র একটি শিশু বাধ্য হয়ে ঘৃণ্য ঘেটু পেশায় নিয়োজিত হলেও ঘৃণার উত্তপ্ত আগুণ শধু তাকেই পুড়ালো কিন্তু অর্থ বিত্তের মহিমায় যারা এই পেশাজীবীদের সৃষ্টি করলো তাদের গায়ে সামাণ্য আঁচটিও লাগলনা।দরীদ্র শিশুটি যে দুর্ঘটনায় মরেনি তাকে হত্যা করা হয়েছে এমনটি পরিষ্কার বুঝতে পেরেও জমিদার কর্তৃক অপরাধীকে শাস্থি না দিয়ে হুমায়ুন আহমেদ প্রকারান্তরে এই হত্যাকে মনে হয় বৈধতাই দিলেন। জুলহাস মান্নানের হত্যাকান্ডের পর ফেসবুকে এই হত্যাকান্ডকে সমর্থন করে অসংখ্য মন্তব্য দেখে হুমায়ুন আহমেদের ঘেটুপুত্রটির কথাই বারবার মনে পড়ছিল।বহু পূর্বে আমার কৈশোরকালে উপমহাদেশের এক প্রখ্যাত চিরকুমার আউলিয়ার জীবনীতে পড়েছিলাম তিনি বালক নিয়ে ঘুমাতেন।তখন বালক নিয়ে শোয়ার মাহাত্য বুঝিনি আজ যখন বুঝি আর সেই মহান দরবেশকে নিয়ে লিখতে গিয়ে সেই সূত্রকে খুঁজে মরছি কিন্তু কিছুতেই তাকে আর বিস্মৃতি থেকে উদ্ধার করতে পারছিনা।পীর সাহেব বদমাশ ছিলেন বা বিকৃত যৌনাচারে আসক্ত ছিলেন তা প্রমান করতে নয় বরং সমকামীতাকে ভয়ংকর পাপ বলে যারা সমকামীকে হত্যার স্বপক্ষে তাদের কাছে একটি পবিত্র(!) দৃষ্টান্ত তুলে ধরতেই রেফারেন্সটি খুঁজছি।কেউ কি জানেন সূত্রটি?
আলোচ্য প্রবন্ধে সমকামিতা সম্পর্কে হুমায়ূনের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ঘুটুপুত্র কমলাতে তিনি নির্মোহভাবেই অতি নির্মম বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন বলেই আমার মনে হয়েছে। সমকামী ও উভকামী অনেক মানুষ আমাদের সমাজে রয়েছে। সমাজের চাপিয়ে দেওয়া নিয়ম ভঙ্গ করে এরা লোকলজ্জা ও বিভিন্ন কারণে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে লোক দেখানো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয়। এদের সন্তানাদিও জন্মে। কিন্তু লোকচক্ষুর অন্তরালে, কেউ কেউ প্রকাশ্যেও নিজের প্রকৃত যৌনাভ্যাস চর্চা করে থাকে। ঘেটুপুত্র কমলা যে সময়ের পটভূমিতে রচিত সে সময়ে অনেক প্রভাবশালী সমকামী বা উভকামী লোকেরা অসহায় দরিদ্র বালকদের সাথে যৌনকর্ম করতো প্রকাশ্যে। যদিও সমকামিতা সমাজে খুবই ঘৃণ্য তবুও প্রভাবশালী লোকদের বিরুদ্ধে লোকে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পেতো না। আমার পরিচিত দু’একজন প্রভাবশালী উভকামী লোকের কথা জানি; তাদের নিজেদের কাজের ছেলেদের সাথে যৌন সম্পর্কের কথা সবাই জানতো। আড়ালে একটু আধটু নিন্দা করতো লোকে। কিন্তু সামনে কারু কিছু বলার সাহস হয়নি কখনো।
আর ছেলেটি খুন হয়েছে জেনেও জমিদারের মাধ্যমে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়ালেন না হুমায়ূন? কারণ এই ছেলেদের প্রতি কোনো সম্মান ভালোবাসা বা মানবিক বোধ তো জমিদারদের ছিল না। ওরা শুধু নিজেদের শরীরের দরকারে তাদের ব্যবহার করতো। মানুষের উপর নানা ভাবে জুলুম করাই ছিল জমিদারদের কাজ। যে যত অত্যাচারী সে তত ভালো ও প্রভাবশালী জমিদার। সামান্য একটা ঘেটুপুত্র খুন হলে তার বিচারের ঝামেলা তখনকার কোনো জমিদারই করতো বলে মনে হয় না। এখনো নিজের বাসার কাজের ছেলে বা মেয়ে খুন হলে কে তার বিচার চায়? অনেক সময় তো নিজেরাই মেরে ফেলে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করে। এক চেনা প্রবাসী লোকের বাসার কাজের মেয়েকে তার আত্মীয় স্বজনেরা মিলে রেইপ করার পর মেয়েটিকে খুন করে ফেলে। পরে সেই লোক পুলিশ ও ময়না তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডাক্তারকে কয়েক হাজার ডলার খাইয়ে কেসটিকে আত্মহত্যায় রূপান্তরিত করে।