আমাদের স্বাধীনতার চল্লিশ বছরের সময়কালের মধ্যে মার্কিন মিডিয়ায় বাংলাদেশ শব্দটি এত বেশী আর কখনও উচ্চারিত হয়নি।এবং আগামী নভেম্বরে অনুষ্টিতব্য জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এই শব্দটি মিডিয়ায় অনবরতঃ উচ্চারিত হতেই থাকবে।এর কারণ একটি টিভি অনুষ্টান।যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া জগতের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক ডেভিড লেটারম্যান সম্প্রতি তার লেইট নাইট শো’তে হাজির করেছিলেন আমেরিকার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।ট্রাম্পের তিনটি প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যা রক্ষণশীলদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে তার অন্যতম একটি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে যাওয়া জব ফিরিয়ে আনা।লেবারম্যান পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ট্রাম্প ফ্যাশনের কয়েকটি নমূনা আগেই সংগ্রহ করে এনেছিলেন এর মাঝে ছিল বাংলাদেশে প্রস্তুত একটি শার্ট।টকশোর এক পর্যায়ে সার্টটি হাতে নিয়ে লেটারম্যান যখন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন এটা কোথায় তৈরি?ট্রাম্প জবাবে বলেন-বাংলাদেশে।ভাল শার্ট।আমি বাংলাদেশীদেরকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।লেটারম্যান তখন চীনে তৈরি ট্রাম্প ব্রান্ডের একটি টাই দেখালে ট্রাম্প বিব্রত ভঙ্গিতে গাঁইগুই করতে থাকেন যা হলভর্তি দর্শকের হাসির হুল্লোড়ে অনবদ্য হয়ে ওঠে।আর এই ভিডিও ক্লিপটিকেই ডেমোক্রেটিকরা বেছে নিয়েছে তাদের নির্বাচনী বিজ্ঞাপন হিসেবে কেননা ট্রাম্প যে আমেরিকার জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছেন এমন চাক্ষুষ প্রমাণ তারা হাতছাড়া করবে কেন?প্রতিদিন প্রতিটি টিভি চ্যানেলে এই ভিডিও ক্লিপটি অসংখ্যবার প্রচারিত হচ্ছে সে সাথে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নামটিও।খরা বণ্যা দুর্ভিক্ষ দুর্নীতি বা ভিক্ষার হাত নয় এবার একটি পজিটিভ বাংলাদেশ মার্কিনীদের সামনে উঠে আসছে এটা ভাবলে গর্বে বুকটা স্ফীত হয়ে ওঠে।কিন্তু যখন খবর পাই ভারতীয় সিরিয়েল দেখা নিয়ে হবিগঞ্জে দুই গ্রামের সংঘর্ষে দুই আড়াই’শ লোক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি তখন আত্নতৃপ্তির ঢেঁকুরটা যেন বানরের তেলপিচ্ছিল লাটি বেয়ে ওঠার মতোই নির্মম এক সমীকরণে পড়ে যায়।কী হচ্ছে ওসব দেশে?হবিগঞ্জের ঘটনার একদিন পরেই আরেক সংবাদ, ঘরে দুই কন্যাশিশুকে তালাবদ্ধ করে মা গেছে কিরণমালা দেখতে ঘরে আগুণ লেগে একটি শিশু পুড়ে মরে, একটি জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসে কোনও রকম প্রাণে বেঁচে যায়।২০ তারিখের খবর,শ্যামনগরে মা স্টার জলছা দেখায় মগ্ন,পানিতে পড়ে মারা যায় ভাই বোন।পাখিশাড়ির জন্য স্কুলছাত্রীর আত্নহত্যা, হিন্দী সিরিয়েল না দেখতে দেয়ায় স্বামীর উপর অভিমান করে স্ত্রীর গলায় দড়ি দেয়া ইত্যাদি মহা অদ্ভুত খবর পড়ে পড়ে উপলব্ধি করতে পারি কোন দুঃখে মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম “সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি” বলে আক্ষেপ করেছিলেন।ফেসবুকে হবিগঞ্জের খবরটির নিচে যখন পশ্চিমবাংলার একজন মন্তব্য করে “ আমরা যখন অলিম্পিকে পদক জিতি তখন আমাদের সিরিয়েল দেখা নিয়ে কাংলোরা যুদ্ধ করে, কাংলোরা কবে মানুষ হবে?” মন্তব্যটি যত কঠিনই হোক তা আমাদিগকে হজম করতে হবে কেননা এটাই বাস্তব।আমরা কাংলো আমরা এখনও মানুষ হতে পারিনি।মানুষ যে হতে পারিনি তার বড় প্রমান আমরা এখনও আত্নসমালোচনা নামক জিনিষটি যে কী তাই শিখতে পারিনি।এই লজ্জাষ্কর খবরের নীচে শত শত মন্তব্য পড়েছে তার পচানব্বই ভাগই ভারতকে গালাগাল করে লেখা।এখানে ভারতের দোষটা কোথায়? বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত কোম্পানী নীলছবি বানাচ্ছে নৈতিকতার দায়ে কি তাদের অভিযুক্ত করা হয়?কারণ এটাকেতো তারা মানুষের জন্য বাধ্যতামুলক সিলেবাসভুক্ত করে দেয়নি।আপনি দেখবেন কি না সেটা আপনার ইচ্ছা।ভারতের টিভি চ্যানেলগুলি বাণিজ্যিক স্বার্থে নাটক বানাচ্ছে তা যদি ক্ষতিকারক বলে মনে করেন তা দেখবেননা।আপনাকে দেখতে বাধ্য করছে কে?আগে আমাদের নিজেকে সংযত করা শিখতে হবে।কোনটি আমাদের সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য কোনটি নয় এটাতো আমাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে।গালাগাল দেয়া এসব মন্তব্যের মাঝে অনেকগুলিতে আবার পীসটিভি বন্ধ করার হাহাকার এবং ক্ষোভও ফুটে উঠেছে।এগুলি কোন ভাইরাস তা অবশ্য বলে দিতে হয়না।
অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে জানলাম ‘কিরনমালা’ ভারতীয় এক চ্যানেল থেকে প্রচারিত একটি বাংলা সিরিয়েল।আমি শত শত নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে বরং এর নির্মাতা কলা কুশলীদের অভিনন্দনই জানাব।আজ থেকে পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে কলকাতার দর্শকরা উঁচু বাশেঁ হাড়ি পাতিল বেঁধে আমাদের দেশের নাটক দেখতেন আজ তাদেরই তৈরি নাটক নিয়ে বাংলাদেশে এমন তুলকালাম কান্ড ঘটে যায় কৃতিত্বতো অবশ্যই তাদের প্রাপ্য।তারা প্রমান করছেন তারা সামনে হাটছেন আমরা হাটছি পিছনে।এর মাঝে একটি ইতিবাচক দিকই আমি দেখতে পাই আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে হিন্দী ছবি আর সিরিয়েলে আসক্ত হচ্ছে কলকাতা যদি আমাদের এই কিবলার মাঝখানে একটা বাংলা দেয়াল খাড়া করে দিতে পারে তবে তাও কম কৃতিত্বের কাজ হবেনা।আমাদের ছায়াছবি টেলিভিশনের যে ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল তা যদি কলকাতা নেয় তাও ভাল।মোদ্দা কথা হিন্দীকে রুখতে হবে।তৃণমূল পর্যায়ে হিন্দী ছবি বা সিরিয়েলে ভয়াবহ আসক্তি আমাদের ভাষা সংস্কৃতির প্রতি এক দৃশ্যমান অশণী সংকেত।প্রত্যন্ত এলাকায় এই রঙ্গিন বর্জগুলির এমন জনপ্রিয়তার অর্থ এসব এলাকার মানুষ ইতোমধ্যে হিন্দী ভালোভাবে আত্নস্থ করে নিয়েছে আর হিন্দীতে নিরেট গর্দভ যারা তারাও হিন্দী শেখার জন্য প্রানান্ত চেষ্টা করবে তারপর সুদর্শণ নায়ক নায়িকাদের অনুকরণ করে কথা বলার চেষ্টা করবে তাদের আচার আচরন নকল করবে কারণ নকলে আমাদের জুড়ি নেই আর এভাবেই আমাদের সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশ করবে নানা বিজাতীয় উপকরণ।আমাদের ভাষা ধীরে ধীরে স্বদেশে প্রবাসী হয়ে যাবে।আর যাবেই বলছি কেন আলামত দর্শনেতো মনে হচ্ছে আমরা তেমন পর্যায়ে ইতোমধ্যে পৌঁছেও গেছি।শুধু হিন্দী সিরিয়েল বা ছবি কেন ধর্মীয়ভাবেও এদেশে হিন্দী উর্দু ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ করছে।আমরাতো সেই শিশু অবস্থাতেই মক্তবে হুজুরের কাছে শিখেছি মৃত্যুর পর মুনকার নাকির ফেরেশতা কবরে এসে জিজ্ঞেস করবে ‘বান্দা তেরা রব কৌন’ ভাবতাম সেসময়, এই প্রশ্নের উত্তর নাহয় দিয়ে দিলাম এরপরে যখন ফেরেশতা উর্দুতে অন্যান্য প্রশ্ন করবে তখন কিকরে জবাব দেব?শৈশবেই যখন একটি শিশু জেনে যায় তার নিজের ভাষা আসলে পরকালে কোনও কাজেই আসবেনা তখন সেই ভাষার প্রতি তার আসক্তি মমতা কতটুকু গভীর হবে?বরং শিশু অবস্থাতেই শতভাগ আস্থিক হয়ে বেড়ে ওঠা শিশুটির মনে সব সময়ই ঈশ্বর অনুমোদিত ভাষাগুলির প্রতিই এক অদৃশ্য দুর্বলতা থেকে যাবে।ঈশ্বর অনুমোদিত ভাষা হলো আরবী এবং তারপরই উর্দু।বাঙ্গালীর কাছে আবার উর্দু হিন্দীতে ব্যবধান নেই যাহা উর্দু তাহাই হিন্দী।সুতরাং বাঙ্গালী মুসলমান ভারতীয় নায়ক নায়িকাদের মুখে যখন হিন্দী শুনে তখন স্মৃতি সঞ্জাত ভাবেই বেহেশতের খোশবু পেয়ে যায়।আর বাঙ্গালী হিন্দুর কাছে সেই যুক্তিতে হিন্দী প্রাণের ভাষা যে যুক্তিতে আরবী আমাদের পবিত্র ভাষা।আমাদের মক্তবে এখন ফেরেশতা হয়তো উর্দুতে ইন্টারভিউ নেয়্না তবে নানা আলামত দর্শনে মনে হয় সার্বিক পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি।বাংলাদেশে অনুষ্টিত হয় বিশ্ব ইজতেমা কিন্তু এর বেশীরভাগ বয়ান দেয়া হয় উর্দু হিন্দীতে।আখেরী মোনাজাতেও হিন্দী উর্দুর একচ্ছত্র আধিপত্য।কেন, বাংলায় মোনাজাত করলে কি পূণ্য কম হয়?বাংলাভাষায় মোনাজাত করার মতো আলেম কি এদেশে নেই?তাহলে দেশের আনাচে কানাচে গজিয়ে ওঠা হাজারে হাজার মাদ্রাসায় কী উৎপাদন হচ্ছে?আমাদের দেশের হুজুরগণ কি ভারত কিংবা পাকিস্তানে গিয়ে বাংলাতে ওয়াজ করার চেষ্টা করেছেন কখনও? আবার আমাদের এক ডাকসাইটে মন্ত্রীই যখন দেশের মান মর্যাদা নিজের অবস্থান ভুলে এক ভারতীয় চ্যানেলের জন্য হিন্দীতে সাক্ষাৎকার দিয়ে দেন তখন মনে হওয়াই স্বাভাবিক আমরা হিন্দীর কাছে আত্নসমর্পনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।এই মন্ত্রীটিকে(ষ্টেডিয়ামে মাটিতে বসে শাহরুখ খানের নাচ দেখা )প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর চেয়ে কিছুটা উন্নত ভাবা হয়েছিল কেননা উনি ভার্সিটি পর্যায়ে তুখোর রাজনীতি করেছেন।মাঝখানে গণযুদ্ধ জনযুদ্ধ ইত্যাদিও করে এসেছেন।একটা লোক ভার্সিটি পর্যায়ে গেলে তার মাঝে যে আত্নস্মমাণবোধ জন্মাবার কথা এই ভদ্রলোকেরতো তা ই নেই।এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ তার অমার্জনীয় কর্মকান্ডের জন্য শাস্থিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতো। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ প্রমিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন পাকিস্তান সফরে গিয়ে উর্দুতে সাক্ষাৎকার দিয়ে শিরোনাম হয়েছিলেন অবশ্য ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড সাথে সাথেই সালমাকে সেজন্য তীব্র তিরস্কার করেছিল।বিসিবির এই কঠোর অবস্থান অবশ্যই ধন্যবাদের দাবীদার।এ ব্যাপারে বিসিবি যদি সামান্য নমনীয়তা দেখায় তাহলে আমাদের ক্রিকেট দলের ভাষা আর বাংলা থাকবেনা হিন্দী বা উর্দু হয়ে যাবে।এমনিতেই মুশফিকরা পাকিস্তানীদের অনুকরণে মাঠে যেভাবে ‘লালা লালা’ বলে চেঁচামেচি করেন তা মুলতঃ আমাদের পরানুশীলণ মনোবৃত্তিরই প্রতিফলন।বায়ান্নের সেই রক্তঝরা আন্দোলনকে স্মরণ করে আমরা আমাদের বর্ণমালাকে দুখিনী বর্ণমালা বলি।আসলেইতো দুখিনী এই ভাষা।সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবেচনায় যদিও সে অষ্টম স্থানে কিন্তু ঘরে বাইরে কত শত্রু কত অনুপ্রবেশকারীকে মোকাবেলা করে যে ভাষাকে তার অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে কিন্তু শেষ রক্ষা হবেতো?
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে আজও আমরা আমাদের আত্নপরিচয়ে সংকট কাটিয়ে উঠতে পারিনি।আমরা নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার চেয়ে ভারতের বা পাকিস্তানের পরিচয়ে পরিচিত হতেই মনে হয় বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের সাথে হিন্দী উর্দুতে কথা বলে নিজেকে ধন্য মনে করি।গাড়ীর কাঁচ নামিয়ে হাই ভলুমে হিন্দী গান বাজিয়ে গর্বের সাথে গাড়ি হাকিয়ে যাই।এই হীন মন্যতা আর পরিচয় সংকটের কারণে আমাদের মাঝে সত্যিকার দেশপ্রেমও জাগ্রত হচ্ছেনা।বাংলাদেশের কোনও টিভি সিরিয়েল যদি ভারতের সমাজ জীবনে এরকম প্রভাব বিস্তার করতো তবে সরকারী পদক্ষেপের আগে ক্যাবল অপারেটররাই বাংলাদেশের চ্যানেলটির প্রচার বন্ধ করে দিত।একজন সাধারণ ভারতীয়ের মাঝেও দেশপ্রেমের যে লক্ষণগুলি দেখা যায় তা আমাদের অনেক দায়িত্বশীলদের মাঝেও নেই। আমাদের দেশের ক্যাবল অপারেটররা কি নিজেদের মুনাফার চিন্তা বিসর্জন দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে? আমরা সব সময় তাকিয়ে থাকি সরকারের দিকে যেন সরকারই নির্ধারণ করে দেবে আমাদের দেশপ্রেম কী পরিমান থাকবে নিজ সংস্কৃতি্কে কতটুকু ধারণ করতে হবে।যেন আমাদের কোনও দায়ই নেই।সরকার বলে দেবে দেশে হাজার হাজার বাংলা গান হচ্ছে সুতরাং হিন্দীকে বাদ দিয়ে বাংলা গান শুনতে হবে।সরকারকে বলে দিতে হবে হিন্দীর চেয়ে বাংলা ভাষা অনেক সমৃদ্ধ এ ভাষায় পদ্য রচনা করে রবীন্দ্রনাথ নোবেল অর্জন করেছেন হিন্দীর কাছে যা আজও স্বপ্নই থেকে গেছে।হিন্দী গানের যে কথামালা তা বাংলার বটতলা সাহিত্যের সমতূল্য, এজন্য মনোমুগ্ধকর কথার গাঁথুনীতে গাঁথা বাংলা গান আমাদের আত্নস্থ করতে হবে।কেন আমরা নিজ থেকে বুঝতে অক্ষম হিন্দী সংস্কৃতি তাদের জন্য আদর্শ হতে পারে আমাদের জন্য তা চরিত্র হরণকারী সমাজের মূল্যবোধ ভাঙ্গা অপশিল্প? কেন আমরা নিজ প্রত্যয়ের উপর দাঁড়িয়ে বলতে পারিনা এই ক্ষতিকারক চ্যানেলগুলি আমরা বন্ধ করে দিলাম।কেন আমাদের যুব সমাজ ছাত্র অছাত্র শিক্ষক বুদ্ধিজীবী এক কাতারে দাঁড়িয়ে এই অপসংস্কৃতি গুলিকে না বলতে পারিনা?আমাদের বাঁধাটা কোথায় ? কেন আমরা বুঝতে পারিনা, যে সরকার দুর্বল গণতান্ত্রিক ভিত্তির জন্য অনেকাংশেই ভারতের উপর নির্ভরশীল সে সরকার ভারতীয় কোনও টিভি চ্যানেল বন্ধের মতো শক্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।সুতরাং যা করার তা দেশের জনগণকেই করতে হবে।আমাদের চোখের সামনেই ভারত বাংলাদেশের দুর্বল গণতান্ত্রিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে তার ইন্টারেষ্টগুলি একে একে আদায় করে নিচ্ছে এবং এভাবেই মাথায় হাত বোলাতে বোলাতেই একদিন আন্তঃ নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্রম্মপুত্রের সমূদয় জল সরিয়ে নেবে আমাদের সরকারগুলি হাঁচিও দেবেনা।কারণ তাতে ক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যে পর্যন্ত না উপলব্ধি করবে জনগণই ক্ষমতার উৎস ভারত বা অন্যান্য বৃহৎ শক্তি নয় ততদিন এই তোষণ চলতেই থাকবে।সরকার পরিবর্তন হলেও পরিস্থিতি একই থাকবে।আমাদের বন্ধু দেশটি তার বিপুল পরিমান কয়লা পোড়াবার জায়গা বিশাল ভূভারতে খুঁজে পায়নি পেয়েছে বাংলাদেশের মতো সত্যিকার এক জনারণ্যে যেখানে মানুষের গা লাগিয়ে নজীরবিহীন ঘনত্বে মানুষ বাস করছে।এজন্য আমরা ভারতকে দোষ দিতে পারিনা।সরকার দেশের স্বার্থে কাজ করবে এই দায়িত্ব দিয়ে ভারতের জনগণ তাদেরকে নির্বাচিত করে আর সরকারগুলিও তাদের সমস্ত সততা দিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যায়।ভারতের কাছ থেকে তাদের ভাষা আর পর্দা সংস্কৃতির বদলে যদি তাদের গণতান্ত্রিক চর্চা ও দেশের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার সংস্কৃতিটুকু আমরা শিখতে পারতাম তাহলে আমাদের অবস্থান আরও কয়েক ধাপ উঁচুতে থাকতো।ভারতের উপর দোষ চাপিয়ে যারা সাম্প্রদায়িকতার দানবকে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগাতে চান তারা জন্মরোগাক্রান্ত যা তারা বংশানুক্রমে পেয়ে এসেছেন।ভারতের কাছ থেকে তাদের ভালোটা না মন্দটা আমরা গ্রহণ করব এ পছন্দের ভারতো আমাদের।আমাদের সরকার গুলি দলীয় বা ক্ষমতার স্বার্থে ভারতের সাথে মিতালী করে কিন্তু ভারত আমাদের সাথে মিতালী করে তাদের দেশের স্বার্থে।দেশের স্বার্থের প্রশ্নে তারা এক তিলও ছাড় দেয়না বা দিতে সাহসও করেনা কারণ জনগণের কাছে এজন্য জবাবদিহী করতে হবে।কিন্তু আমাদের সরকারগুলি কি তেমনটা পারে? পারলে রামপালের মতো পরিবেশবৈরি প্রকল্প কি সরকার অনুমোদন করতে পারতো?বিদ্যুৎ অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু এজন্য বিকল্প স্থান কি বের করা যায়না? ভারত বিদ্বেষ যেমন ক্ষতিকারক তেমনি সকাতর তোষণ নীতিও সমান ক্ষতিকারক।বাণিজ্যে ব্যাপক বৈষম্য বা ট্রানজিটে কম ট্যারিফের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব কিন্তু সুন্দরবন ধ্বংস হলে যে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে তার ক্ষতি কোনও ভাবেই কি পুষিয়ে নেয়া যাবে? তেমনি ভারতীয় ছবি আর সিরিয়েলের প্রভাবে সামাজিক মূল্যবোধের যে বিপর্যয় ঘটবে সংস্কৃতিযে পঙ্গুত্ব বরণ করবে ভাষাযে রোগাক্রান্ত হবে সেই ক্ষতি কি অর্থ দিয়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে?
শাহাব সাহেবের লেখনী ভালো।বিতর্কিত বিষয়ে না লিখে গঠন মূলক লিখা লিখে,স্রষ্টার দেওয়া নেয়ামত, জ্ঞানের যথাযথ ব্যবহার করতেও তো পারেন!
হাসান মাহমুদ সাহেবঃ
১. আপনি লেখাটির বিষয়ে নিয়ে মন্তব্য না করে ‘জ্ঞান স্রষ্টার নেয়ামত’ টাইপ বয়ান দিতে যে বেশ চলে এলেন এখানে ?
২. বিতর্কিত কিছু নিয়ে লেখা কি বারণ আছে নাকি মুক্তমনায় ?
৩. তা, আপনি না’হয় লিখুন এখানে, বিতর্কিত বা বিতর্কিত নয়, যা আপনার সাধ্যে কুলোয়, কি লিখবেন তো ?
৪. লেখকের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকলে সেটা ওই ব্যক্তি পর্যায়ে অন্য কোথাও মেটানোই তো ভালো; নয় কি ?
বিতর্কিত বিষয়ে লেখা যাবে না কেন? এই ব্যাপারে আপনার মতামত কী, জানতে চাই। বিতর্কিত বিষয়ে লেখা হলেই বরং ভালো। সবাই এতে করে মোটামুটি স্পস্ট ধারণা পেতে পারে, আলোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে ব্যাপারটা আরো পরিস্কার হতে পারে। এই বিষয় সম্পর্কে আপনার কিছু বলার থাকলে তা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, এই লেখার সমালোচনা করতে চাইলে করতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই বিষয়ে লেখা যাবে না, তা বলছেন কেন? আর জ্ঞান বিজ্ঞান কিছুই কোনো স্রস্টা নামক কোনো রূপকথার চরিত্রের নেয়ামত নামক কিছু নয়। এসব মানুষেরই অনুসন্ধিৎসার অর্জন।
অনন্যা :good:
অনন্যা :good: :good:
ভারতের অনেক হিন্দি ছবি ,গান ইংরেজি ছবি , সিনেমা গানের নকল
অথচ ভারত তো ইংরেজদের যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করেছে
কিন্তু বাংলাদেশে উর্দু সিনেমা ছবির নকল কখনো কি হয়েছে?
বাংলাদেশি হোক আর অন্য জাতি সবাই শুধু কিসের অনুবাদ যেন পাঠ করে!!!
আপনার আনেক কথার সাথে একমত। আনেকগুলো ধারনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করি।
প্রথমে এই অপসংস্কৃতি শব্দটাকে ভেঙে দেখা যাক। সম্যক যে কৃতি, তাই সংস্কৃতি। কৃতির আগে সম বসে সম্যক বা পরিশীলিত অর্থ প্রকাশ করেছে। তার আগে অপ বসিয়ে কি মানে দাঁড়ায় সেটা পরিস্কার নয়। পসিটিভ নেগেটিভ মিলে জগাখিছুরি হয়ে যায়। এই সমস্যাটা শুধু ব্যাকরণগত না। বাস্তবেও এই অর্থহীনতা আছে। কোনটা পরিশীলিত আর কোনটা না, তার হিসাব বেশ গোলমেলে। এক সময় পালাগান কবিগানও পরিশীলিত বলে মনে করা হত ভদ্র সমাজে।
একটু অন্যভাবে দেখা যাক সমস্যাটাকে। হিন্দি/উরদু বলতে যদি মুম্বাই এর ফিল্ম জগতের কথা বলেন, তবে তার সাথে কলকাতার কিরন্মালার কোন পার্থক্য নেই। দুটোই বাজারি সংস্কৃতির ফসল। বাজারি অর্থে মানুষ যা দেখবে, এরা তাই বানাবে। এদের কাজ টাকা তোলা নিয়ে। এক যুগে কলকাতার সিনেমা শুধু মাত্র শিক্ষিত মধ্যবিত্তের জন্য তৈরি হত। আপনার সংজ্ঞায় তা হয়ত পরিশীলিত রুচির। কিন্তু এই যুগে সেগুলো ঘাঁটলে তার ধর্মান্ধ, সঙ্কীর্ণ, জাতিবাদি, নারী বিদ্বেষী চেহারা স্পষ্ট হয়ে পরে। তার পর ধিরে ধিরে যত তাদের টার্গেট পপুলেশন সরে এসেছে, কলকাতার সিনেমায় তত বেশি চটকদারি নাচ গান ঢুকেছে, উত্তম সুচিত্রার অস্বাভাবিক আড়ষ্ট প্রেমালাপের আপাত গভীরতা কেটে গেছে। এখন কলকাতায় দু ধরনের ছবি তৈরি হয় দুরকম টার্গেট পপুলেশনের জন্য। তাদের এক দল কলকাতার পার্ক স্ট্রিট-নন্দনে ঘোরাফেরা করে। তাঁরা অতি-কাব্যিক আঁতেল মার্কা অস্পষ্ট ডায়ালগ ছাড়া ছবি খায় না। আর এক দল দিনের শেষে একটু চটুল আনন্দের থেকে বেশি কিছু চায় না। বাংলাদেশেও এই দুই শ্রেণির মানুষই প্রধান।তাই কলকাতার ছবি ভাল চলে। হিন্দি ছবিও ভাল চলে। আর দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ যেহেতু সংখ্যাগুরু, তাদের কাছে “চটুল আনন্দ” পরিশীলিত কি না, তাতে কিছু আসে যায় না। সমস্যাটা পরিশীলিত কৃতির না, সমস্যাটা পূর্ব- পশ্চিম নির্বিশেষে বাঙালীর আত্মপরিচয় হীনতার। হাজার কেবল অপারেটার ভারতীয় চ্যানেল বয়কট করলেও হিন্দি আটকাবে না।
এবার সমাধানের পথ দেখা যাক। কি করা যেতে পারে, ভাবা যাক। প্রথমত, আপনি যদি সংস্কৃতি জগতের মানুষ হন, মানুষে বোঝে এমন কিছু তৈরি করুন। “এ কি জীবন যন্ত্রণা” বলে বুক চেপে জেলুসিল খাবেন না। দয়া করে দুর্বোধ্য কবিতাও লিখবেন না। যদি লেখেন, আর যাই করুন, আশা করবেন না মানুষ শুধু জাতিয়তাবাদের জন্য আপনার লেখা পরবে। দ্বিতীয়ত, ঘরের জানালা বন্ধ করে ঘর আলোকিত করার আশায় বাইরের ছবি দেশে না আসলে লোকে বাংলা ছবি দেখবে- এই ব্যর্থ চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের দেশ ভারত- ভাষা, সংস্কৃতি, সব দিক থেকেই। হিন্দির পিপলি লাইভ বা প্রেম চন্দ অন্য যেকোনো দেশের ক্লাসিক থেকে বাংলার চাষির জীবনের কাছা কাছি। আবার হিন্দি গানের চটুলতাও সহজেই তারা বোঝে। তাদের আশা- প্রত্যাশা, জীবনের অভিঘাত, চাওয়া পাওয়া- সব এক রকম। কিন্তু বাংলায় অনুবাদের চল এত কম, প্রেম চন্দ বা ঘালিবকে, কিম্বা মন্ট বা বচ্চনকে বেশি মানুষ মনে রাখে না। তারা হিন্দি বা উর্দু বলতে শুধু চটুলতাই বোঝে। লেখককে প্রশ্ন করি, আপনিও কি একই দলে পরেন না?
আর দয়া করে ভারত জাতীয়তাবাদে এককাট্টা ধরনের চিন্তা প্রচার করবেন না। বাংলাদেশের মত এদেশেও সরকার ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর কথায় ওঠে বসে। যদি জানতে চান, জদুগরা বা নর্মদা বাধের কথা জানুন- বিহারের কয়লা খনির বা উত্তর বাংলার চা বাগানের কথা জানুন। বুঝবেন, এক হাজার রামপাল ভারতে আগে হয়ে গেছে। মানুষ অনশন করে, গায়ে আগুন দিয়ে, মিটিং মিছিল করে- কোন ভাবেই সেগুলো আটকাতে পারে নি। তাও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। আপনারাও করুন। আশা রাখি সফল হবেন।
আপনার সুলিখিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।পুরো লেখাটি ভালোভাবে পড়লেই বুঝবেন এটা একটি আত্নসমালোচনামুলক রচনা। আমাদের দেশে সস্থা একটা ট্রেণ্ড আছে খারাপ কিছু ঘটলেই প্রথমতঃ সরকারকে তারপর ভারতকে দায়ী করা।আমি এ লেখায় তাকে অনুৎসাহিত করে বরং নিজেদের কাধে দায় নিতে বলেছি।এমন কি ভারত তার সুযোগ সুবিধাগুলি আদায় করে নেয়ার পরও এটাকে ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের বিজয় বলারই চেষ্টা করেছি বলেছি আমাদের দুর্বলতার কারণেই আমরা ঠকেছি বা ঠকছি।সবক্ষেত্রেই আমরা বলে দায়টি কাধে নিতে চেয়েছি সেই আমরা’র ভেতর আমিও আছি।সম্ভবতঃ অপসংস্কৃতি শব্দটি আপনার খুব মনোকষ্টের কারণ হয়েছে।সম্যক শুধু পরিশীলিত অর্থেই কেন সঠিক যথাযথ বা উপযুক্ত অর্থেওতো ব্যবহার করা যায়।নগ্ন বা অর্ধনগ্ন অশ্লীল অংগভঙ্গির নাচ গান সমৃদ্ধ হিন্দী ছবিতো বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে যায়না।হিন্দী ছবির এই কৃতি বাঙ্গালীর সমাজে সম্যকতো নয়ই তা আপনি পরিশীলিত অর্থেই বলুন আর সঙ্গত অর্থেই বলুন বরং সাংঘর্ষিক সুতরাং সেই বহিরাগত সংস্কৃতির আগে অপ যোগ করলে তার সম্ভ্রমহানীরতো কোনও কারণ দেখিনা।উর্দু হিন্দী সাহিত্য আর এসব ভাষায় নির্মিত ছায়াছবি কি এক জিনিষ হলো?আমি ব্যক্তিগত ভাবে কৃষণ চন্দর,সাদাত হাসান মান্টো মুন্সী প্রেমচান্দ কুদ্রত উল্লাহ শাহাব ইসমত চুগতাই প্রমূখ কথা শিল্পীদের একজন মুগ্ধ পাঠক ছিলাম এখনও তাদের অনূবাদ পেলে সমান আগ্রহ নিয়ে পড়ব এমন কি অন্যকে পড়তেও বলব।আমিতো এই দুই ভাষার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বলেছি।নিজ ভাষাকে জলাঞ্জলী দিয়ে অন্যের ভাষা গ্রহণ আর সে ভাষার সাহিত্য চর্চা কি সমার্থক ? কোনও ভাষার প্রতিতো আমার কোনও বৈরি মনোভাব নেই তাকে অবাধে গ্রহণ করাতেই আমার তীব্র আপত্তি।আপনার হিন্দী ঠেকাবার পরামর্শগুলি সযত্নে আর্কাইভে তোলে রাখলাম আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে কেউ কাজে লাগাবে।তবে আপনার অবগতির জন্য এটাও জানিয়ে রাখি, এদেশেই একদিন এমন নাটক হয়েছে যা প্রচারের সময় সমস্ত দেশ অচল হয়ে গেছে।নাটকের এক চরিত্রের ফাঁসি ঠেকানোর জন্য মিছিল হয়েছে প্রতিবাদ সভা হয়েছে।সেই নাটকগুলির মুগ্ধতা গ্রাম আর শহরকে এক রেখায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে।সেসব নাটকের স্রষ্টা কলা কুশলীদের অনেকেই হয়তো নেই আবার অনেক আছেনও।যারা আছেন তারা সেরকম চিত্তাকর্ষক নাটক এখনও বানাচ্ছেননা তেমন নয় কিন্তু আমাদের সেই সরল আমুদে দর্শকের রুচিতে যে অভাবনীয় পঁচন ধরেছে সে কারণেই এগুলি আর তাদের ধরে রাখতে পারছেনা।সেই পচঁন রোগের কারণ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারলে হয়তো একদিন বাঙ্গালরা শুধু মুখে নয় বাংলা হাতেও দাঁড়িয়ে যেতে পারে।ইতিহাসে এর নজীর আছে যে।
আপনাদের দেশে হাজার রামপাল আছে কি না আমার জানা নেই তবে আপনাদের দেশের বিশেষজ্ঞদের মুখেই শুনেছি ভারতে বনাঞ্চলের পঁচিশ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি নেই।সুন্দরবন থেকে রামপালের দুরত্ব কত জানেন?চৌদ্দ কিলোমিটার।আমাদের ভয়ের কারণটাতো এখানেই।আর আন্দোলন?হবে, কিন্তু ফল দেবে তেমন সম্ভাবনা নেই।আমাদের দেশে যে দলই ক্ষমতায় আসে মনে করে তাদের ইচ্ছা স্বয়ং বিধাতারই ইচ্ছা যা বদলানো বা রদ করার কোনও সুযোগ নেই।পরিশেষে আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।
প্রথমেই বলি আমি দুঃখিত উত্তর দিতে দেরি হোল বলে এবং আগের মন্তব্যটার সুর এত উগ্র হবার জন্য। আপনি ঠিকই বলেছেন। বাংলাদেশের ভারত বিরোধী আর ভারতের বাংলাদেশ বিদ্বেষীদের ফাঁদে পরা খুব সহজ- আর তাতে মাথার ঠিক রাখাও কঠিন।
বাঙালীর জাতি পরিচয়ের মূল বীজ বা কার্নেল বাংলা ভাষা। আর সেই ভাষা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমি প্রশ্ন করছি না। আর আশা করি আমি আগেই স্পষ্ট করে দিতে পেরেছি যে এপার বাংলা আর মুম্বাই-এর বাজারি সংস্কৃতির আমি বিরোধিতা করি। কিন্তু আপনি আপনার আত্মসমালোচনায় যে উপাদানগুলোকে বাঙালী সংস্কৃতি বলে তুলে ধরেছেন, আমি প্রশ্ন করছি সেগুলো আদউ বাঙালী সংস্কৃতি কি না কিম্বা এগুল রক্ষা করলেই আমাদের “বাঙালীর আত্মপরিচয়” রক্ষা করা যাবে কি না। আমি দেখানর চেষ্টা করছি “হিন্দি আগ্রাসন” এর আসল চেহারার।
প্রথমে ভাষা নিয়েই বলি। হিন্দি অপসংস্কৃতির পীঠস্থান মুম্বাইয়ের ভাষা মারাঠি। যদিও একশো বছরের কাছাকাছি মুম্বাই বাণিজ্যিক শহর হওয়ায় মুম্বাই-এর সংস্কৃতি বহুজাতিক। তা সত্যেও সংখ্যাগুরু মারাঠি মুম্বাইবাসি এক সময় কোণঠাসা হতে হতে তৈরি হয় কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক শিব সেনা দলের, যাদের স্লোগান “মারাঠি মানুষ”। শিব সেনার বাকি ইতিহাস নিয়ে আর কিছু বলছিনা। ইন্টারনেট ঘাঁটলে বাকিটা পেয়ে জাবেন। তারা বহুদিন মারাঠি বলতে মানুষকে বাধ্য করতে চেয়েছে। সফল হয়নি। কারন যে বাজার সংস্কৃতি মুম্বাই শহরকে মুম্বাই বানিয়েছে, সেই বাজারি সংস্কৃতিই বলিউড বানিয়েছে। একটা ছাড়া আরেকটার অস্তিত্ব থাকতে পারে না। হিন্দি-উরদুর বিরোধে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্থানেও আনেক সময় ধরে ভারতীয় চ্যানেল প্রচার বন্ধ ছিল। ফল হয়নি। কারন হাটে বাজারে হিন্দি সিনেমার সিডি পাওয়া যেত। উগ্র জাতীয়তাবাদ পাকিস্থানে কম না। কিন্তু সেটা বাজার সংস্কৃতি রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। উলটে এক সময়কার রমরমা করাচীর সিনেমা শিল্প পথে বসেছে। উপমহাদেশে হিন্দি বাজারি সংস্কৃতি রুখতে সবচেয়ে সফল সম্ভবত দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুল। তামিল সিনেমা এখন কিন্তু হিন্দি বলয়ে রমরমা চলে। কর্ণাটকি সংগীত এখন হিন্দি গানের সুরের মূল উৎস গুলির একটা। এক যুগেএখানেও ভাষা আন্দোলন হয়েছিল হিন্দির বিরুদ্ধে। যদিও আমার মনে হয় দ্রাবিড় আত্মপরিচয়ের শুরু তার আনেক আগে আন্নাদুরাই-এর সেলফ রেস্পেক্ট আন্দোলনের মাধ্যমে। সেটা আরও দৃঢ় হয় দক্ষিণ ভারতের অর্থনৈতিক সচ্ছলতায় আর স্বাক্ষরতায় এগিয়ে থাকার জন্য। সেজন্যই ওরা এত সফল।
আর আপনার মন্তব্যের একটা অংশ অবাক করল।
বাংলা নাচ নগ্ন হবে না হবেনা, সেটা নির্ভর করবে শিল্পের প্রয়োজনের ওপর। “নগ্ন বা অর্ধনগ্ন অশ্লীল অংগভঙ্গির নাচ গান” হিন্দি সংস্কৃতির মৌরসি পাট্টা নেই। হিন্দি চ্যানেল না হয় আটকালেন, ইন্টারনেট, ইউটিউব আটকাবেন কিভাবে? আর সংস্কৃতি বহতা নদীর মত। প্রতি যুগে যদি পুরনো নর্মের বিরুদ্ধে প্রতি- সংস্কৃতি (counter culture) না উঠে আসে তবে সেই সংস্কৃতি টিকে থাকতে পারে না। প্রতি যুগে এই প্রতি- সংস্কৃতি গুলোকে রক্ষণশীলরা অপসংস্কৃতি বলে আসছে। অপসংস্কৃতি শব্দটা নিয়ে আমার গাত্রদাহের কারন এটাই।
জাতির আত্মপরিচয় একটা এমারজেন্ট প্রপার্টি। আত্মপরিচয় থাকার জন্য স্বনির্ভরতা প্রয়োজন- সচ্ছলতা প্রয়োজন- বিচ্ছিন্নতা না, প্রয়োজন ভাল মন্দ নির্বিশেষে সব চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আর ধর্মীয় আবস্থার কারনে সেটা হতে পারছে না। পচন জনতার স্বাদ কোরকে না- রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, ধর্মে। আপনি যে নর্ম গুলোকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন, জনগণের সেগুলোকে মেনে নেবার দায় নেই। জনগণের জীবন যাপন, ভাল মন্দ, প্রকাশভঙ্গী থেকে সেরাটা তুলে ধরার দায় বুদ্ধিজীবী হিসাবে আপনার। সেটাই বাঙ্গালির আত্ম পরিচয়।
আর ভারতের রামপাল? যদি কোথাও ভাল কিছু এদেশে দেখেন- জানবেন এই দেশ চলছে কয়েকটা মাত্র ইন্সটিটুসন এর কাধে বসে। তার একটি বিচার ব্যবস্থা যা মোটামুটি নিরপেক্ষ। দুই ইংরেজ আমলের ব্যুরক্রেসি যা মাঝে মধ্যে কাজ করে। আর তিন আঞ্চলিক দল গুলো, যারা ভোটের দায়ে পরে মানুষের কথা বলতে বাধ্য হয়। নইলে এ দেশের নেতারা আর শিল্পপতিরা এক রাতে সব বেচে দিত।
যাই হোক- রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আপনাদের লড়াইকে আমি সমর্থন করি। বিধাতার বিধানে আমার ভরসা নেই- বাঙালীর লড়াইয়ের ওপর এখনও আছে। আশা করি আপনারা সফল হবেন।
আপনার সুলিখিত, সুচিন্তিত ও সুপাঠ্য লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। তবে আমি একটা দ্বিমত জানানোর জন্যই মন্তব্যটি করছি। আপনি এক জায়গায় বাঙ্গালী হিন্দুদের হিন্দী ভাষার প্রতি প্রীতির কথা উল্লেখ করেছেন। যা আমার কাছে একপেশে ও বড় বেশী সরলীকরণ বলেই মনেই হয়েছে।যার ভাবটুকু অনেকটা সাম্প্রতিককালে বি উমর সাহেব কিম্বা মুন্তাসির মামুন বা পিনাকী গংদের বাংলাদেশী হিন্দুদের সম্পর্কে দেয়া ভাষ্যের কাছাকাছি।
ধর্মকে বিদায় জানিয়েছি কলেজে থাকতেই কিন্তু জন্মসূত্রে প্রচুর হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হয়েছে। তা সে পূজা, নাম সংকীর্তন, পালাগান বা কীর্তন, হরিসভা যাই হোক। কোথাও হিন্দীতে একটা লাইনও বলতে শুনিনি। শুধু সংস্কৃত ভাষায় মন্ত্রপাঠটুকু ছাড়া।
বাঙ্গালী হিন্দুদের ধর্মসম্পর্কিত ছেলেমানুষি বা বালখিল্য আদিখ্যেতার অভাব নেই। কিন্তু তাই বলে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে তাদের কোনো আলগা দরদ কখনোই দেখিনি। হিন্দীপ্রীতির ত প্রশ্নই আসে না। পক্ষান্তরে আপনি সেখানে তাদের হিন্দীপ্রীতির সাথে মুসলমানদের এক বিরাট অংশের আরবীপ্রীতির তুলনা করেছেন। যা আসলে চুড়ান্ত একরৈখিকতারই নামান্তর।
হা ভাই আমি বোধহয় বেশীই সরলীকরণ করে ফেলেছি।বাঙ্গালীর এই হিন্দী বা উর্দুপ্রীতির কারণ খুঁজতে গিয়ে রিতিমত মাথা নষ্ট।তবুও মুসলমান পরিবারে জন্ম নেয়ার সুবাদে মুসলমানদের হিন্দী অথবা উর্দু আসক্তির একটি ব্যাখ্যা আমি খাড়া করেছি কিন্তু তাও যে শতভাগ সঠিক সে দাবীও আমি করবনা।তবে কিছুটা সত্যতা হয়তো আছে যে কারণে এখনও কোনও ভিন্নমত আসেনি।বাঙ্গালী হিন্দুর হিন্দী আসক্তির মনঃস্তাত্তিক দিকটি নির্ণয় করতে গিয়ে এই সরল ব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই দাঁড় করাতে পারিনি।এব্যাপারে আমার চেয়ে আপনারই ভাল জানার কথা জানিয়ে দিলে আমার ধারণা সমৃদ্ধ হবে।কাউকে আঘাত করার জন্য লেখাটি নয়।বরং নিজেকে নিজেই আঘাত করেছি।আমার একটিই কামনা বাঙ্গালী পর চর্চা পরানুশীলণ বাদ দিয়ে আত্নপরিচয়ে সমৃদ্ধ হোক।আমাদের একটা দেশ আছে সমৃদ্ধ একটা ভাষা আছে এই বোধটুকু প্রতিটি বাঙ্গালীর মনে জাগ্রত হোক এটাই আমার লেখার মূল থিম।আর হাঁ বাঙ্গালী হিন্দু সম্পর্কে মাত্র এক লাইন লেখা থেকেই বদরুদ্দিন উমর বা পিনাকী গংদের চিন্তা চেতনার সাথে এই অধমের চিন্তাকে এক রেখায় মিলিয়ে ফেলে আপনিও কি অতিসরলীকরণের আশ্রয় নিয়ে ফেললেননা?বদরুদ্দিন উমর মুনতাসির মামুন জ্ঞাণীগুণী পন্ডিত মানুষ তারা কোথায় কী বলেছেন তার সাথে যদি আমার একটি পংক্তির সাযুজ্য ঘটেই যায় তা থেকেই কি প্রমাণিত হয়ে গেল আমি তাদের চিন্তা চেতনার ধারক বাহক?এত সহজেই কি একজনের সাথে আরেক জনকে এক আদর্শের সাথে আরেক আদর্শকে মিলিয়ে ফেলা যায়?না কি তা সঙ্গত?আপনি হিন্দুকূলে জন্ম নিয়ে ধর্ম ত্যাগী হয়েছেন তার মানে আপনি নাস্তিক,অনেক গবেষক হিটলারকেও নাস্তিক বলেন এখন আমি কি আপনাকে হিটলারের সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারি?পরিশেষে ভিন্নমতের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
খুবই যৌক্তিক লেখা! লেখার শেষে রামপালে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা লিখেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে মুক্তমনায় আরও লেখা আসা উচিত, বিশেষত যারা এ নিয়ে ধারনা রাখেন, তাঁদের কাছ থেকে। রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির গতি চালু রাখতে সাহায্য করবে, কিন্ত পরিবেশগতভাবে আমরা অনেক বড় কিছু হারাব বলেই মনে হচ্ছে। তাছাড়া চুক্তির বিবরণ পত্রিকায় পড়ে মনে হচ্ছে যে তাতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষাতেই বেশী খেয়াল রাখা হয়েছে। এই চুক্তির বাস্তবায়ন বা বিরোধিতা রাজনৈতিক বা দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে না বরং দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে করা উচিত।
আপনার সাথে একমত।আমরা যারা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত ব্যাপারে অজ্ঞ তারা সঠিক ভাবে বলতে পারবনা আসলেই এর পার্শ প্রতক্রিয়ায় সুন্দরবনের ক্ষতি হবে কি না বা হলে কী মাত্রায় হবে।এজন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ব্যাপক পর্যালোচনা কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন রকম।বিশেষজ্ঞরা এব্যাপারে বিষ্ময়কর নিরবতা পালন করে যাচ্ছেন।সরকারই এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করছে।মন্ত্রীরা শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছেন কোনও ক্ষতি হবেনা।অবশ্য অর্থমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন- ক্ষতি হবে আর ক্ষতি হবে জেনেও আমাদের এটা করতে হবে।সুতরাং তিনিতো খোলাসাই করে দিয়েছেন অতএব বিশেষজ্ঞরা আর মতামত দিয়ে কেন পাপ করতে যাবেন।অদ্ভুত এই দেশে জাতীয় স্বার্থও পলিটিসাইজ হয়ে যায়। রামপালও সম্ভবতঃ পলিটিসাইজড হয়ে গেছে।এর বিরুধীতাকারীদের ইতোমধ্যে জামাতের সাথে তূলনা করা শুরু হয়েছে।হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই এদের মাঝে পাকিস্তানের ছায়া ও আবিষ্কার হয়ে যাবে।আর একবার পাকিস্তানের যোগসূত্র ধরিয়ে দিতে পারলে রামপালের পালে যে হাওয়া লাগবে তখন তার গতি আর রোধ করে কে? সুন্দরবনতো সুন্দরবন পুরো দেশ রসাতলে গেলেও না।
সুন্দরবনের ক্ষতি করে রামপাল আমরাও চাই না,