২০০১ সালের ৩ জুন, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। গির্জায় সাপ্তাহিক প্রার্থনারত ঐ হামলায় নিহত হোন ১০ জন, আহত অর্ধশত। তৎকালীন গির্জার ফাদার পিতাঞ্জা মিম্মো ও গির্জার সম্পাদক পিটার বৈরাগী বাদী হয়ে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু, অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে দীর্ঘ এতো বছরেও বিচার কাজ তো দূরে থাক, অভিযোগই (চার্জশীট) গঠন করতে পারেনি গোপালগঞ্জের সিআইডি। বরং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে ১৭ বার। ঠিক কবে নাগাদ চার্জশীট হতে পারে সে কথাও জানে না গোপালগঞ্জের সিআইডি পরিদর্শক!

বাংলাদেশের প্রকাশ্যে জঙ্গিদলগুলোর উত্থান ঘটে ১৯৯২ সালে বিএনপির আমলে। ৩০ এপ্রিল, ১৯৯২, জঙ্গি সংগঠন হুজি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দল তৈরির ঘোষণা দেয়। তবে প্রথম জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে আওয়ামী লীগের আমলে ১৯৯৯ সালে। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষের দিকে। হুজি ও জেএমবি ধারাবাহিকভাবে বোমা হামলার ঘটনা ঘটায়। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতায় শেষের দিকে (২০০১) রাজনৈতিক স্বার্থেই জঙ্গিবাদের লাগাম ছেড়ে দেয়। যাতে  পরবর্তী সরকার জঙ্গিবাদ নিয়ে সমস্যার মুখে পড়ে।

২০০১ সালের পূর্বে, বিএনপির আমলে হুজি (৩০ এপ্রিল ১৯৯২), ইসলামিক সমাজ (১৯৯৩), হিজবুত তাওহীদ (১৯৯৪) মতন সংগঠনের  সৃষ্টি হওয়া হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আমলে হয় জেএমবি (১৯৯৮), জেএমজিবি (১৯৯৮), হিজবুত তাহরী (২০০১)

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আওয়ামী লীগের আমলে প্রথম জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। গোপালগঞ্জে শুধু গির্জায় বোমা হামলার মতন ঘটনা ঘটেনি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি সংগঠন হুজি বোমা হামলার চেষ্টা চালায়। এছাড়া সিপিবির সমাবেশ, রমনা বটমূলসহ আহমদিয়াদের উপর বোমা হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি ও জেএমবি। এতো বছরেও বোমা হামলাগুলোর কোন সুষ্ঠু বিচার করতে রাজনৈতিক দলগুলো আগ্রহী হয়নি। স্পষ্টত এর মূল কারণ দলগুলোর রাজনৈতিক ফায়দা ও জঙ্গি তোষণ।

বানিয়ারচর বোমা হামলায় নিহতের সমাধি

বানিয়াচর বোমা হামলার চার্জশীট ১৫ বছরেও যখন জমা পড়েনি সুতরাং বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট কোন দলই এসব হামলার বিচার করতে আগ্রহী নয়। রাজনৈতিক স্বার্থ ও দলগুলোর জঙ্গিবাদ তোষণের কারণে অসংখ্য হামলার কোন বিচার হয়নি। নিন্মে ১৯৯৬-২০০১ সাল-এর আওয়ামী শাসনামলে জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হল।

-৩ জুন, ২০০১: গোপালগঞ্জের বানিয়াচং গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত, আহত অর্ধশত।

-২০ জানুয়ারি, ২০০১: সিপিবি’র মিটিংয়ে বোমা হামলায় ৫ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।

-১৪ এপ্রিল, ২০০১: রমনা বটমূলে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।

-২০ জুলাই, ২০০০:গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভায় ৭৬ কেজি ওজনের পুঁতে রাখা বোমা উদ্ধার করা হয়। জনসভা শুরুর আগেই এই শক্তিশালী বোমাটি উদ্ধার হওয়ায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা থেকে বেঁচে যায় দেশ। জঙ্গি সংগঠন হুজি এতে জড়িত ছিল

-২০০০: “নারী তুমি মানুষ ছিলে কবে?” বইটি লেখার অপরাধে লেখক মনির হোসেইন সাগরকে খুন করে জেএমবি। ২০০৬ সালে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে তারা শুধু হুমায়ুন আজাদকে নয় ২০০০ সালে সাগরকেও খুন করে।

-১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৯: কবি শামসুর রাহমানের উপর হামলা করে জঙ্গি সংগঠন হুজি

-৬ মার্চ, ১৯৯৯: যশোরে উদীচী অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।

-৮ অক্টোবর, ১৯৯৯: খুলনা শহরে আহমদিয়া মসজিদে বোম হামলায় ৮ জন নিহত। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হুজি।

ইমেজ:u71news.com