মুক্তমনা সম্পাদক এবং লেখক অভিজিৎ রায়ের পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অজয় রায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ফারজানা রূপা। একাত্তর টিভির সংবাদ সংযোগে যা প্রচারিত হয়েছিলো ২১ জুন। এর দু দিন আগে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের মতোই অজয় রায় শুরুতেই উল্লেখ করেছেন বুয়েট শিক্ষক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী এবং তার গ্রুপ ‘জিরো টু ইনফিনিটি’ পত্রিকার উপদেষ্টা ত্রিভুজ আলমের কথা। শুরুতে এটিও পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি মনে করেন না ফারসীম, অভিজিৎ হত্যার সঙ্গে জড়িত। তবে তিনি ক্ষেত্র প্রস্তুতে সহায়তা করে থাকতে পারেন। এটিও উল্লেখ করেছেন যে, অভিজিতকে হত্যার রাতে র্যাডিসন হোটেলে বিজ্ঞান পত্রিকার উপদেষ্টা ত্রিভুজ আলম ‘কোনো একটা সফলতা’ উদযাপন করেছিলেন।
ফারসীম মান্নানের জড়িত নন তবুও ‘‘ক্ষেত্র প্রস্তুতের’’ সহায়ক হতে পারেন অজয় রায় স্যারের এমন কথার ব্যাখ্যা পেতে অভিজিৎ রায় এবং বন্যা আহমেদের ঢাকায় আগমন এবং পরবর্তী সময়টার দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। অভিজিৎদা ও বন্যাপা তাদের দেশে আসার বিষয়টি যথাসম্ভব গোপন রাখলেও কয়েকজনকে জানিয়েছিলেন যাদের মধ্যে ফারসীম একজন। ‘জিরো টু ইনফিনিটি’ গ্রুপের উপদেষ্টা ত্রিভুজ আলমের জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অবগত রয়েছেন অজয় রায়। অভিজিতদের আগমনের খবর ফারসীম মান্নানের কাছ থেকে ‘জিরো টু ইনফিনিটি’ গ্রুপ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ত্রিভুজ আলমের কাছে গিয়েছিল কিনা সে প্রশ্নটিই করেছেন অজয় রায়।
অজয় রায় ভাবতেই পারেন যে, অভিজিৎ দার বাংলাদেশে থাকার সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছিল বইমেলায়। ত্রিভুজ কি ফারসীম মান্নানকে এই বিজ্ঞান আড্ডা করার জন্য বলেছিল? কারণ সেদিন অজয় রায়ের বাসায় দাওয়াত খাবার কথা ছিল অভিজিতের, বইমেলায় যাবার কোনো পরিকল্পনা ছিল না তাঁর।
এর আগে বেশ কদিন বইমেলা ঘুরে বন্যাপাও ক্লান্ত ছিলেন। আমি জানতাম যে, ২৬ ফেব্রুয়ারি বই মেলায় তাদের যাবার কোনো পরিকল্পনা নেই। পরের দিন, ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালবেলা তাদের বরং মুক্তমনার কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা ছিল।
২৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবার সকাল এগারোটায় ফারসীম মান্নান ফেসবুকে একটা থ্রেড খুলে সেটাতে অভিজিতসহ আরও ১২ জনকে যুক্ত করে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় মেলার ভেতরে বিজ্ঞান লেখকদের একটা আড্ডা করলে কেমন হয় জানতে চান। অভিজিৎ দা উত্তরে জানান, আইডিয়াটা ভালো। ফারসীম অভিজিৎ দাকে এ-ও জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ফেব্রুয়ারিতেই মিডিয়ায় আড্ডার কথা প্রকাশে কোনো সমস্যা আছে কি না, নাকি অভিদা যাবার পরে প্রকাশ করবেন? উত্তরে অভিজিৎ বলেছিলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি ইজ ফাইন।’’
২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল এগারোটায় আমন্ত্রণ পাবার পর অভিজিৎ শুরুতে তাঁর উপস্থিতি নিশ্চিত না করে ‘আইডিয়া ইজ ফাইন’ বলেছিলেন। বিকাল পাঁচটায় সেই একই থ্রেডে তিনি বিজ্ঞান বক্তা আসিফকে আড্ডাটির খবর দিতে বলেন এবং জানান যে, তাঁর কাছে আসিফের নম্বর না থাকায় তিনি আমন্ত্রণ দিতে পারছেন না।
২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর বারোটায় আহমেদুর রশীদ টুটুল ও তার স্ত্রী অভিজিৎ ও বন্যার সঙ্গে দেখা করেন বন্যার মামার বাসায়। তখন অভিজিৎ জানতে পারেন যে, সেদিন সন্ধ্যায় শুধু বিজ্ঞান আড্ডা নয়, শুদ্ধস্বরের মেলার স্টলের সামনেও শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত লেখকদের একটা আড্ডার আয়োজন হয়েছে। এদিন সকালে অজয় রায়ও ছেলেকে ফোন করেন। তখন অভিজিৎ দা বাবাকে জানান যে, তারা বিকেলে যাবেন।
ওদিকে টুটুল ভাইরা বিকাল তিনটার দিকে বিদায় নেবার পর অভিজিতের মন টানছিল বই মেলার দিকেই। বন্যাপাকে জোর করে রাজি করিয়ে অজয় স্যারের বাসায় না গিয়ে বিকালে রওনা দিলেন বই মেলার দিকেই। অবশ্য সন্ধ্যা ছয়টায় বিজ্ঞান আড্ডার ডাক দিয়ে ফারসীম মান্নান নিজেই সেখানে উপস্থিতি ছিলেন না। অভিজিৎ ও বন্যা কাউকে না পেয়ে চলে যান শুদ্ধস্বরের সামনে যেখানে বেশ কয়েকজন পরিচিত মানুষ একত্র হয়েছেন টুটুলের প্রিয় খাদ্য নারিকেলের মোয়া খাবার উদ্দেশ্যে। অভিজিতরা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত শুদ্ধস্বরের সামনে ছিলেন।
মাগরিবের নামাজ পড়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে শুদ্ধস্বরের স্টলের সামনে লেখকদের আড্ডায় উপস্থিতি হন ফারসীম মান্নান। নামাজের জন্য বিজ্ঞান আড্ডায় আসার দেরি হলো কারণ দেখিয়ে অভিজিৎকে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি তাদের ছায়াবীথি প্রকাশনীর সামনে বসতে আহ্বান জানালেন। অভিজিত বন্যা ও তারেক অণুসহ আরও কজন পরিচিতজনকে নিয়ে ছায়াবীথি প্রকাশনীর সামনে হাজির হলেন। তখন প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। তারপর সেখানে পাটি বিছিয়ে সবাই গোল হয়ে বসলেন। শুরু হল বিজ্ঞান আড্ডা।
আটটা দশ নাগাদ আড্ডা শেষ। অভিজিৎ রাত আটটা তেইশ মিনিটে আমাকে এসএমএস দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘রায়হান, তুমি কই? আমরা মেলায় আসছি।’’
তাঁর সেই এসএমএস পড়েই জানতে পারি যে, তাঁরা মেলায় ঢুকেছেন। আমি আর সামিয়া তখন পরদিনের আয়োজনের জন্য বাজার করছিলাম। পরে বন্যাপার কাছে জেনেছি যে, তাঁরা তখন বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খাবার কথা ভাবছিলেন। মনে পড়ল, ২০১২ সালে অভিজিৎ দা যত বারই মেলায় আসতেন, বের হয়ে প্রায়ই রাতের খাবার খেতে যেতাম মটর সাইকেলে চেপে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে সেদিন ওরা দুজন কিছুক্ষণের জন্য গিয়েছিলেন বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ির উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। তাদের গাড়িটি রাখা ছিল চারুকলার বিপরীত দিকে। বুঝতে অসুবিধা নেই যে, হত্যাকারীরা পেছন থেকে অনুসরণ করে এসএমএস করে ওঁত পেতে থাকা চাপাতি হাতের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের খবরটি জানিয়েছিল।
রাত সাড়ে নয়টায় ওদের উপর আক্রমণের খবরটি জানতে পারি। সামিয়াকে নিয়ে তখুনি ছুটে যাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে ঢুকতেই দেখি রক্তাক্ত বন্যা স্ট্রেচারে শুয়ে আছেন। তাঁর মাথার কোপের সিটি স্ক্যান করানোর জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জরুরী বিভাগের যে ডাক্তার অভিজিতের মাথার রক্ত বন্ধ করতে চেষ্টা করছিলেন, তিনি আমার পরিচিত ও একই কলেজ পড়ুয়া বড় ভাই। তিনিই জানালেন, অভিজিৎ দা আর নেই। ডিএমসিতে আনার পরও মিনিট পনের জীবিত ছিলেন তিনি। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
পরিচিত আরেক জনকে পেলাম। উনি তখন জানালেন যে, ফারসীম মান্নানের বিজ্ঞান আড্ডায় দেখেছিলেন অভিজিৎ আর বন্যাকে। তখন খুঁজছিলাম ফারসীম মান্নানকে। দেখলাম, উনি ডিএমসিতে নেই। উনি কোথাও নেই!
সবাই হতভম্ব করে দিয়ে এর পরের ষোলটি দিন তার কোনো খোঁজ নেই। সদাসরব তার ফেসবুকও নীরব।
ইতোমধ্যে অজয় রায় অভিজিৎ হত্যার বিষয়ে ফারসীমদের ওই আমন্ত্রণের প্রসঙ্গ তোলেন। এর প্রেক্ষিতে ১৪ মার্চ ফারসীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ত্রিভুজ আলমের সঙ্গে তার গ্রুপের সংশ্লিষ্টটার প্রশ্নে পুরো দায়ভার ‘জিরো টু ইনফিনিটি’ পত্রিকার সম্পাদক আবদুল্লাহ মাহমুদের উপর চাপিয়ে জানান:
“তার পত্রিকা, সে কীভাবে চালাবে, এটা তাকেই ঠিক করতে হবে। এ কথাও ঠিক, বেশ কিছু বেঠিক মানুষের সাথে সখ্য দেখা গেছে, তবে আমি জানামাত্রই সম্পাদককে সতর্ক করেছি। তারপরও ঠিক পদক্ষেপ নেওয়া বা না নেওয়া তার দায়িত্ব। আমি তার কোনোই দায় গ্রহণ করব না।’’
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, শুরুতে বছর দেড়েক তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাহমুদ পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার উপদেশ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।
কিন্তু আবদুল্লাহ মাহমুদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে জানান যে, ফারসীমের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল তখনও। তারা তাদের পত্রিকার পরের সংখ্যায় অভিজিত হত্যার বিষয়ে শোক প্রকাশমূলক বার্তা লিখতে চাইলে সেটা নাকচ করে দেন ফারসীম মান্নান নিজে।
অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে এত সুসম্পর্ক থাকার পরও– বই মেলায় কয়েক দিন, বেশ কিছু সময় এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সারাদিন তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোর পরও এমন কাপুরুষতা ও অমানবিকতা কেন দেখালেন ফারসীম মান্নান? অভিজিতকে আমন্ত্রণ করে মেলায় আনলেন তিনি, সেই আমন্ত্রণে এসে মানুষটা নির্মমভাবে খুন হলেন। এবার অভিজিৎ, বন্যাপার সাথে বেশ অনেকটা সময় কাটানোর পরেও ফারসীম মান্নান যে একবারের জন্যও নিহত অভিজিৎ, অসুস্থ বন্যাকে দেখতে আসলেন না, বন্যার সাথে যোগাযোগ করলেন না তা আমাদের বেদনার্ত করেছে। যদিও নাস্তিকদের প্রতি এমন অমানবিকতা দেখানো মানে এই নয় যে তিনি অভিজিৎ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। অভিজিৎ হত্যায় জন সম্মুখে শোকের প্রকাশ দেখাতে পারেন নি আমাদের স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও।
সেরাতের বিজ্ঞান আড্ডায় অভিদা, বন্যাপা
লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল, মার্চের সংখ্যায় পত্রিকাটির উপদেষ্টা হিসেবে ত্রিভুজ আলমের নামও মুছে দেওয়া হয়। অজয় রায় জানিয়েছেন যে, এই ত্রিভুজ অভিজিৎ রায় হত্যার রাতে র্যাডিসনে পার্টির আয়োজন করেছিল। তিনি হোটেলের রেজিস্টার দেখে তার কথার সত্যতাও যাচাই করতে বলেছেন। আমার পক্ষে সেটি করা সম্ভব হয়নি, তবে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই সেটি করবেন।
২.
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে আসলে কে জড়িত সেটার একটা সূত্র হতে পারত ‘শরীফ ওরফে হাদি-১’– জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী যার নাম ‘মুকুল রানা’। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন: “লেখক-ব্লগার হত্যার যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটির বিষয়ে শরীফ জানত।”
শরীফের কথা সংবাদপত্রে প্রথম আসে ২০ মে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে ছয় জন আনসারুল্লাহ বাংলা সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় থাকা দুজন শরীফ এবং সেলিমকে ধরিয়ে দেবার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়। ডিএমপির প্রেস রিলিজে শরীফ সম্পর্কে বলা হয়:
“আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ সংগঠক শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ নামে পরিচিত। তার বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। অভিজিৎ রায় হত্যা, নীলাদ্রি নীলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহমেদ রশীদ টুটুল হত্যা-চেষ্টা এবং সাভারে শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যায় তার সরাসরি উপস্থিতি এবং নেতৃত্ব প্রদানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা, সূত্রাপুরে ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে তার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তার সম্পর্কে তথ্যদাতাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।”
পুলিশ সে সময় অভিজিৎ ও বন্যাকে অনুরসরণকারীর সিসিটিভি ফুটেজ থেকে একজনকে লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে জানায় যে, এটিই সেই শরীফ।
কিন্তু অভিজিৎ হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে এটাই পুলিশের একমাত্র কথা নয়।
২০১৫ সালের ১৭ অগাস্ট র্যাব-৩ রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য সাদেক আলী মিঠুকে (২৮) গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধানমণ্ডির একটি বাসা থেকে রাত ১২টা ২০ মিনিটে ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুর রহমান (৫৮) ও মোহাম্মদ আমিনুল মল্লিককে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব তখন জানিয়েছিল যে, আনসার বাংলা প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানীর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তৌহিদুর রহমান যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন সময় আনসারুল্লাহকে অর্থায়ন করেছেন। কাকে কাকে হত্যা করতে হবে, তা তৌহিদ নির্ধারণ করতেন। আইটি বিশেষজ্ঞ হওয়ায় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে বিভিন্ন জনের লেখা পর্যবেক্ষণ করতেন।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব তখন জানিয়েছিল যে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তিন ঘণ্টা আগে সন্ধ্যার দিকে ওই পাঁচজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মোহাম্মদ মহসীন হলের মাঠে একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা করে। এরপর তারা বই মেলায় এসে দুভাগ হয়ে অভিজিৎ রায়কে অনুসরণ করে। অভিজিৎ মেলা থেকে বের হয়ে চারুকলার দিকে এলে ফুটপাতের পেছন থেকে নাঈম ও রমজান তাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। অভিজিৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরও তারা ঘাড়ে একাধিক কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
মিঠু, জুলহাস ও জাফরান কাছাকাছি ছিল। হত্যাকাণ্ড শেষে তারা তৌহিদুরকে বিষয়টি নিশ্চিত করে। এরপর তৌহিদুরের নির্দেশে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায় স্বীকার করে পোস্ট দেয়। র্যাব তখন আরও জানিয়েছিল যে, কেবল অভিজিতকে নয়, তৌহিদুরের নেতৃত্বাধীন এই জঙ্গি সেলটি মে মাসে অনন্ত বিজয় দাশকেও হত্যা করে।
২০১৬ সালের মে মাসে অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হয়ে যায় শরীফ এবং শরীফের কথা আবার মিডিয়াতে আসে উনিশে জুন সকালে। ‘রাত দুটায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়’ বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অভিজিৎ রায়ের মামলার আসামি থাকার বিষয়টিসহ আনসার বাংলা সদস্য শরীফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ। খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন একই তথ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি জানান:
“শনিবার রাত ২টার দিকে খিলগাঁও মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসীদের’ গোলাগুলি হলে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হন। পরে রাত ৩টার দিকে পুলিশ ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
ডিএমপি থেকে পুরষ্কার ঘোষণার সময় যে সিসিটিভি ভিডিওর স্ক্রিন শট দেওয়া হয়েছিল, শরীফের মৃত্যুর পর তার ভিডিও ফাইলটি প্রকাশ করা হয় যেখানে দেখা যায়, শরীফ অভিজিৎ-বন্যাকে অনুসরণ করছে। পরের দিন খবর আসে, শরীফের আসল নাম মুকুল রানা। যদিও মানুষ একই।
সিসিটিভির ভিডিওটি দেখে বুঝতে পারি, বইমেলায় একদিন নয় হতে পারে প্রত্যেক দিনই অভিজিৎ ও বন্যাকে অনুসরণ করা হয়েছে। মনে আছে ফেব্রুয়ারির উনিশ তারিখ রাতের কথা। সে রাতে মেলার ভেতরে বন্যা আহমেদের পেছনে কজন কিশোরকে ঘুরতে দেখেছিলাম। এদের একজন বন্যাপার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল, চেয়েছিল তাঁর ফোন নম্বরটি। তখন বিষয়টাতে পাত্তা দিইনি। ভেবেছিলাম, এরা ইভটিজার ধরনের কিশোর।
বন্যাপা বলেছিলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি দিনের বেলায়ও হাইকোর্টের সামনে দিয়ে কার্জন হল হয়ে বইমেলায় ঢোকার পথে তাদের অনুসরণ করা হয়েছিল। অনুসরণকারীকে তিনি সরাসরি এর কারণ জিজ্ঞেস করলে লোকটি বলেছিলেন, তিনি অভিজিৎ ও বন্যাকে চেনেন। কাজ করেন সামরিক বাহিনীতে। তিনি তাদের অনুসরণ করছেন না, একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তার দায়িত্বে এখানে আছেন। কেবল বন্যা ও অভিদাকে চিনতে পেরে তাদের অনুসরণ করেছিলেন।
পাঠক লক্ষ্য করুন, পুলিশের সরবরাহ করা সিসিটিভির ফুটেজে শরীফ ওরফে মুকুল রানা যে তাদের অনুসরণ করছিল সেটা কিন্তু হত্যাকাণ্ডের দিনের ঘটনা নয়। কারণ মৃত্যুর দিন, মানে ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ লাল পাঞ্জাবি পরে এসেছিলেন। কিন্তু মুকুল যেভাবে ওদের অনুসরণ করতে করতে এসএমএস করে যাচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছে, সে দিনও হয়তো এরা আক্রমণের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে সফল হতে পারেনি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান পুলিশ নিজেই আইন-শৃঙ্খলার প্রতি ও বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখছে না। একই কথা সরকারের জন্যও প্রযোজ্য আর এই কারণেই বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা ‘ক্রসফায়ার’ বাংলাদেশের এক নির্মম বাস্তবতা। পুলিশ বা র্যাব তাদের দ্বারা সংঘটিত বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলোর কথা সব সময় অস্বীকার করে। তবে প্রতিবার একই গল্প বলে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তি কত বড় সন্ত্রাসী ছিল সেটা বলার মাধ্যমে তারা মশকরার সুরে ঠিকই জানিয়ে দেয় যে, অপরাধ করলে এমন ঘটনা পুলিশ ঘটাতেই পারে।
ঠিক যেমনভাবে ‘নাস্তিক’ হত্যার পর জঙ্গিরা সবার উদ্দেশে নিহত ব্যক্তিটির লেখালেখির স্ক্রিনশট ছাড়ে। অর্থাৎ এমন কাজ করলে উচিত শাস্তিই প্রাপ্য। জঙ্গিদের পাতা এই বুদ্ধিহীন ফাঁদে পা দেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি থেকে শুর করে জনগণের একটা বিরাট অংশ!
পরিষ্কার করে আমাদের কারও আজ বলার সাহস নেই যে, অপরাধ যা-ই হোক, কখনও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থিত হতে পারে না। যে কোনো ধরণনের লেখালেখির জন্য, সেটা পর্নোগ্রাফি হলেও তার জন্য কাউকে হত্যা করা জায়েজ হতে পারে না। বাংলাদেশের কজন মানুষ মন থেকে এই দুটো বাক্য বলতে পারবেন? যারা বলতে পারেন, তারা তো একে একে চাপাতির নিচে চলে যাচ্ছেন।
তবে শরীফের ক্ষেত্রে ডিবি পুলিশের গল্প একটু ভিন্ন। ডিবি বলেছে, খিলগাঁও এলাকায় রাত দুটোয় শরীফকে মোটর সাইকেলে আরও দুজনের সঙ্গে চলতে দেখে পুলিশ চ্যালেঞ্জ করলে মোটর সাইকেল আরোহীরা গুলি বর্ষণ করে এবং পুলিশও পালটা গুলি ছুঁড়ে। এরপর দশটি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারা শরীফের লাশের সন্ধান পান। বাংলাদেশের ক্রসফায়ার সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে একথা আমরা সবাই বুঝতে পারি যে, শরীফ বা মুকুলকে বিচার-বহির্ভূত ক্রসফায়ার করা হয়েছে। পুলিশ যদি এখন দাবি করে যে, শরীফ মূল পরিকল্পনাকারী, তাহলে তারা শরীফের সঙ্গে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তৌহিদের সম্পর্ক কীভাবে, কখন হয়েছে তা স্পষ্ট করে জানালো না কেনো?
তৌহিদকে গ্রেফতার করার আগে বন্যার সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ আইসিইউতে এসে একবার যোগাযোগ করেছিল। এরপর তাঁর সঙ্গে আর কখনও যোগাযোগ করা হয়নি। তবে বই মেলায় থাকা বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ ও এফবিআই উভয়ই বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
অভিজিতকে হত্যার পর শরীফ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা পুঁজি করে ওয়াশিকুর বাবু, নীলয় নীল ও জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হামলা চালাবার পরিকল্পনা করে। পাঠক, আপনাদের কি মনে আছে যে, অভিজিৎ রায়কে হত্যার পরে, বাবু হত্যার আগে যাত্রাবাড়ীতে বাবুর উপর আক্রমণ করার জন্য যে স্লিপার সেল বাসা ভাড়া নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, তাদের এক সদস্যকে রাস্তায় চাপাতিসহ হাতেনাতে ধরে পুলিশ। কিন্তু সঠিক কারণ উদঘাটন না করে তাকে হাজতে চালান করে দেয়। কেন সেটা করেছিল পুলিশ?
এই গ্রুপ পরে তাদের হারানো সদস্যকে ছাড়াই বাবুকে হত্যা করে। তখন দুজন মাদ্রাসা ছাত্র পালাবার সময় আটক হয়। বাবুর পর নীল ও দীপনকে হত্যা করে শরীফ/মুকুল হয়তো সাতক্ষীরা চলে যায়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার পরিচিত আরেক আনসার বাংলা সদস্য মজিবুরের বোন রিমিকে যশোরে বিয়ে করে।
নারায়ণঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর গুম-খুনে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ংকর কৃতিত্ব দেখেছি। তাদের এই সংস্কৃতি পুঁজি করে মাদারীপুরে শিক্ষক রিপনের উপর হামলাকারী ক্রসফায়ারে নিহত ফাহিমের মাধ্যমে জানা গেছে যে, জঙ্গিরা কোনো খুনের অপারেশনে যাবার আগে নিজেকে নিজে গুম করে ফেলে। তারপর তাদের স্বজনরা গিয়ে থানায় জিডি করে। কাজটা করার মাধ্যমে তারা অপরাধ সংগঠনের সময় নিজেদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা করে।
রিমির ভাই আমির হোসেন জানান, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গি মুকুলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার বোন মহুয়া আক্তার পিয়ারির। এরপর মুকুল ২৩ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়ি সাতক্ষীরা যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে জানতে পারেন ওইদিন সন্ধ্যায় বসুন্দিয়া থেকে ডিবি পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন যে, এ ঘটনার ‘কয়েকদিন’ পর যশোর কোতয়ালি থানায় জিডি করেন।
অবশ্য কোতওয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন নয়, জিডিটি হয়েছে পরের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি। করেছিলেন আমির হোসেন নিজেই। শরীফের শ্বশুর মোহাম্মদ বিশ্বাস আরও জানান, মুকুল নিখোঁজ হবার পর তার বড় ছেলে ঢাকায় যান মুকুলের খোঁজে এবং ঢাকায় গিয়ে আটক হন তিনিও। পরবর্তীতে মুকুলের স্ত্রী মহুয়া আক্তার পিয়ারি জানান, মুকুলকে খুঁজতে নয়, তার বড় ভাই মুজিবুর ঢাকায় গিয়েছিলেন তার অসুস্থতার চিকিৎসার বিষয়ে।
এপ্রিলে সামাদের উপর আক্রমণের সময় ঘটিয়ে আসার কারণেই কি মুজিবুর চলে যায় ঢাকায়? এগারোই মার্চ থেকে নিখোঁজ মুজিবুরকে গ্রেফতার করা হয় পুলিশের ভাষ্যমতে, ১২ এপ্রিল, অর্থাৎ নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করার পর। এরপর এই মুজিবরের মাধ্যমেই কি সন্ধ্যান পাওয়া যায় মুকুলের? যদিও ততদিনে মুকুল হত্যা করে ফেলেছে জুলহাজ মান্নান ও তনয়কে?
মুকুলকে ২৩ ফেব্রুয়ারি ডিবি ধরে নিয়ে গেলে তার পক্ষে পুলিশের দাবি করা নাজিমুদ্দিন সামাদ, জুলহাজ ও তনয়ের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার উপায় নেই। মুকুল কি তাহলে নিজেকে নিজে গুম করে তারপর মার্চ মাস জুড়ে আবার স্লিপিং সেলগুলোকে রেডি করে নাজুমুদ্দিন সামাদ এবং জুলহাজ, তনয়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত হয়েছিল? আজিজ সুপার মার্কেটে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় কি তাকে দেখা গিয়েছে?
জুলহাজ হত্যাকাণ্ডে শরীফের সম্পৃক্ততার প্রমাণ কি আছে পুলিশের কাছে? নাজিমুদ্দিন সামাদ এবং জুলহাজ মান্নান ও তনয়ের উপর হামলাও কি পরিচালনা করেছিল মুকুল, আনসার বাংলা সামরিক প্রধান পলাতক মেজর জিয়ার সঙ্গে মিলে?
শরীফ/মুকুলকে ক্রসফায়ারে খুন করার মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে বাধা তৈরি হল। সমস্যা হল তার এবং মেজর জিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আদালতে প্রমাণের ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে বাধাগ্রস্ত হলো যে ভাইরাস তাদের এই পথে পরিচালিত করেছে সেই বিশ্বাসের ভাইরাসের বিচার। মাদারীপুরের শিক্ষক হত্যার সময় হাতেনাতে আটক ফাহিম আইএস এর নামে দেশে ঘটে থাকা ক্রমাগত হত্যা কাণ্ডগুলোর তথ্য দিতে পারত। বিচারের কাঠগড়ায় তাদের সংগঠন সম্পর্কে, আদর্শ সম্পর্কে, কারা তাকে এই পথে নিয়ে এসেছে তা জানাতে পারত।
ক্রমাগত হামলার পরও, বিডিয়ারে নিহত সেনা কর্মকর্তার ছেলে বাংলাদেশ থেকে আইএস এর সঙ্গে যোগাযোগ করে সিরিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করে মারা গেছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার তোতা পাখির মতো বলেই যাচ্ছে যাচ্ছে যে, দেশে আইএস ও আল-কায়েদার অস্তিত্ব নেই। না থাকলেও কারা হত্যা করছে নাস্তিক লেখক, বিদেশী অতিথি, প্রগতিশীল মানুষ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের?
এখন কেউ যদি সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করে বলেন যে, বাংলাদেশের পুলিশ নাটক করছে, কারণ তারা একবার বলে তারা অভিজিৎ হত্যা ‘ক্লু-লেস’, একবার বলে, খুনিরা বিদেশে পালিয়েছে, তারপর মে মাসে জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে পুরষ্কার ঘোষণা করে। পরিবারের দাবি অনুযায়ী যে কি না ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ। তারপর হঠাৎ এত বড় একজন অপরাধীকে খিলগাঁওএ ভোর রাতে মোটর সাইকেলে দেখা যায়, তার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়, সে মরে পড়ে থাকে।
এসব দেখে কেউ যদি সিদ্ধান্তে আসেন যে, পুলিশ যাকে খুন করেছে, যাকে অভিজিৎ হত্যাকারী বলেছে, তার সঠিক নামটাও ঠিকমতো জানে না তাই পুলিশ মূল অপরাধীকে আড়াল করতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যেহেতু সরকার পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করেন এবং উপরের মহলের নির্দেশ ছাড়া ক্রসফায়ার ঘটে না, তাই সরকারও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক ব্লগার লেখক, প্রকাশক, সমকামী, ভিন্ন ধর্মালম্বীদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
ঘটনার এমন বর্ননা নৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে পারবে বাংলাদেশ সরকার?
মৌলবাদীরা যখন একে একে রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলয় নীল, ফয়সাল আরেফীন দীপন, নাজিমুদ্দিন সামাদ, জুলহাজ মান্নান, মাহবুব তনয়কে হত্যা করছিল, তখন আমাদের সরকার নিহতদের লেখালেখি খুঁজে বেড়িয়েছেন। নিহতের যৌনজীবন অসামাজিক বলে জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড পরোক্ষভাবে যথার্থ বলে নৈতিকভাবে পরাজিত করেছেন ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনাকে।
গুলি করে একজন সাকিবকে, একজন শরীফকে মারা সম্ভব, কিন্তু যে ভাইরাস লক্ষ শরীফকে এই পথে আনলও, যে ভাইরাসের আমাদের মাথায় চড়ে বসে নিহত লেখকের লেখালেখির অধিকারের পাশে না দাঁড়িয়ে ধর্মানুভূতির ফাঁদে পড়ে লেখাকে পর্নোগ্রাফি বলায়, যে ভাইরাসের কারণে খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে, মাইকে সমাবেশ করে নাস্তিকদের কল্লা ফেলে দেওয়ার জন্য উম্মাতাল দাবী তোলা হয়, বাংলার মানুষের মাথায় ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসকে বন্দুক যুদ্ধে প্রতিহত করা যাবে না।
সাকিব কিংবা শরীফরা তো বিশ্বাসের ভাইরাসের বাহক মাত্র। আমাদের অনেকের মনে এই ক্রসফায়ার দেখে আত্মতৃপ্তি আসতেই পারে। মনে হতে পারে যে, যারা এমন কর্মকাণ্ড করছে তাদের একটা উপযুক্ত বার্তা দেওয়া হল এভাবে। কিন্তু এই বার্তা দিলে তারা কি দমবে?
দমবে না। কারণ নিরপরাধ মানুষদের ইসলামের নামে হত্যা করা তাদের কাছে জিহাদ। সেটা করতে গিয়ে তারা যদি পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় তাহলে তাদের ‘দুনিয়াবি’ পরীক্ষার সমাপ্তি ঘটে এবং চিরস্থায়ী সুখের দরজা দিয়ে তারা প্রবেশ করে। মেজর জিয়া এবং শিবির কিংবা হিজবুত তাহরির মাঠ পর্যায়ের জঙ্গিদের এভাবেই উদ্ভুদ্ধ করে নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে।
পাকিস্তানী বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে একাত্তরে ত্রিশ লক্ষ লাশের বিনিময়ে আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম, সেই ভাইরাসের আক্রমণের সম্মুখীন আজ আবার বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে পাওয়া ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্রকে ছিনতাই করে দেশটিকে ওয়াহাবি সুন্নী রাষ্ট্র বানাবার যে আক্রমণ শুরু হয়েছে ইসলাম কায়েমের নামে, ধর্মানুভূতিতে মাতাল আমরা বন্দুকযুদ্ধে তা প্রতিহত করার স্বপ্ন দেখি।
অভিজিৎ, অনন্ত, জুলহাজ, রেজাউল করিমের মতো সূর্যসন্তানদের হারিয়েছি আমরা ইসলামের চাপাতির নিচে। চাপাতি থেকে গলা বাঁচাতে শত লেখক, ব্লগার আজ ভয়ংকর নিরাপত্তাহীনতায় জীবন কাটাচ্ছেন, গোপনে দেশ ছাড়ছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়রা অতর্কিত হামলার আতংকে দিন কাটাচ্ছেন, আইএস তাদের পত্রিকায় বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফতের ঘোষণা দিচ্ছে, আল-কায়েদা, আইএস, জামায়াত, হিজবুত তাহরির প্রতিযোগিতা করে চাপাতি দিয়ে মানুষ হত্যা করছে, চাপাতি হাতে তুলে নিচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা থেকে মধু বিক্রেতা। তবুও আমরা যদি না জাগি থামবে না এই রক্তাক্ত ইসলাম কায়েম।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক থেকে শুরু করে, ছাত্র, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মী, ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র, মাদ্রাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম থেকে বাংলাদেশের অনেক ধরণের মানুষ আজ হিজবুত তাহরীর, জেএমবি, আইএস, আল-কায়েদা, আইএস এর সাথে সম্পর্ক করে আক্রমণ করছে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চরিত্রকে। একে একে উন্মোচিত হচ্ছে অনেক ঘটনাই। অভিজিৎ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে সেটা এখনও উন্মোচিত হয় নি, সুরাহা হয় নি ফারসীম মান্নান বুয়েটে বিজ্ঞান সংগঠনের আড়ালে হিজবুত তাহরীরের কর্মকান্ড পরিচালনা করেন কিনা, সুরাহা হয় নি তার সাথে শিবির কর্মী ত্রিভুজ আলমের সম্পর্ক। সুরাহা হয়নি, কেমন করে জঙ্গিরা জেনেছিলো অভিজিৎ রায়ের ঢাকায় আগমনের কথা, কার মাধ্যমে জেনেছিলো তার গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য। অভিজিৎ দাকে রক্তাক্ত চাপাতির নিচে হারিয়েছি আমরা, বাংলাদেশ হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠতম এক সন্তানকে, অথচ এই মানুষটা যখন রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়েছিলো ঢাকা মেডিক্যালে ঠিক তখন তাকে আমন্ত্রণ করে আনা মানুষদের গলা দিয়ে তেহারি নেমেছে, সেই একই বিজ্ঞান আন্দোলন গ্রুপের সদস্যরা এমন একজন বিজ্ঞান লেখককে হারাবার রাতে র্যাডিশনে পার্টি করেছেন। যারা একবারের জন্য সমাবেদনা জানায় নি, যারা গর্ব করে শিবিরের সাথে বিজ্ঞান চর্চা করেন তারা টিকে আছে ঠিকই, টিকে আছে তাদের ছদ্মবিজ্ঞানচর্চাও।
আশা হারাই না, বাংলার এই শত্রুদের মুখোশ একদিন উন্মোচিত হবেই। কতো রক্তের বিনিময়ে, কতো অভিজিৎ কে হারিয়ে তা অবশ্য জানি না।
সুপ্রীতি
পৃথিবীদিবসস্মরণে ————
ধরনীর এক কোনে বসিয়াছি নিবিড়ণে।
আসিবেকি দিনশেষে চরণ শরণে।
ঈশান কোনের দিকে চাহিয়া দেখিযে
আনাগোনা ভ্রমর তুল্যমুতা রাক্ষসের।।
চকিত চমকিত গর্জিত দীর্ঘ নিনাদযুক্ত।
কিন্ত সেতোহায় মরুভূমির মরীচিকা ভুষিত।।
অধর্মটা খুব কাছ থেকে দেখার অনুভুতি যদি কারো হয় তবেই সে ধর্মের ভাবানুভুতির উপলব্ধিকরতে পারবে। আসলে জগতেধর্ম –অধর্মবলে কথাটির মানুষই সৃষ্টি করেছেন । যখন মনুষ্যজাতি এইধর্ম কথাটির সৃষ্টি করেছিলেন মনুষ্য জাতির গঠিত সমাজ অনেকদুর এগিয়ে গেছে । সেই সমাজে পরিবার,সমাজে স্বার্থান্বেষীতা সব প্রতিষ্ঠিত হয়েগেছে। তখনই ধর্মর উদ্ভব বা প্রতিষ্ঠাপায় । প্রকৃতপক্ষে ধর্ম–অধর্ম সমাজে স্বার্থান্বেষীতা থেকেই উদ্ভব হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে যেটা হওয়া উচিত ছিল সেটা ধর্ম কথার অর্থ আত্মিক সততা ,আর অধর্ম হল ঠিক তার বিপরীত
ধর্ম এমন একটি বিষয় যার কোন আদি-অন্ত নেই । আর এই ধর্মই যত অধর্ম সৃষ্টির মূল ধারক । আমার মূল প্রশ্ন আগে ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে না আগে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে ?ডারউইন তত্ত্ব অনুযায়ী বাঁদরের বিবর্তন থেকে মনুষ্য জীবের প্রাদুর্ভাব । আচ্ছা সেইসব বাঁদর শিম্পাঞ্জি ইত্যাদিরা কি হিন্দু মুসুলমান খ্রীষ্টান এই ভাবে বিভক্তহয়ে পরস্পর লড়ালড়ি করত ? সেই তত্ত্বটা জানতে পারলে খুব ভাল হত ।
অনন্তদার সাথে ‘১৩ একটি আড্ডারর কথা মনে পড়ছে। অনন্তদা বলেছিলেন, এই লোকের কোন সমস্যা আছে। নয়তো বইমেলায় উনাকে দেখেই, “আরে কি অবস্থা নাস্তিক সাহেব” বলে চিল্লাইয়া উঠবে কেন? উনার এই মন্তব্যের পর যে অনন্তদা একটু অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে তা তার কথায়ই ফুটে উঠেছে।
দিনশেষে তেলাপোকারাই টিকে যায়; ডাইনোসরের মাথার উপরেও কেউ থাকেনা বলে মরতে হয় তাদেরই।
আসলে ভুল সময়ে, ভুল জায়গায় উপস্থিত থাকাটাই ছিলো মহাভুল।
“আরো কত কী দেয়ার ছিলো” -এটা মনে হলেই হতাশা আর বিষাদ ভর করে…
(ফারসীম মান্নান) “মুহাম্মদী সাহেব অভিজিতকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে যেতে বলে নিজে মাগরিবের নামাজে কেন? সেটা আগে বলে দিতেই পারতেন। সারা দুনিয়া কতো কিছু বললো, তার কিছুই কি বলার ছিলনা? আমি মনে করি, ডক্টর ফারসীম মান্নান মুহাম্মদী সাহেবকে ইংল্যান্ডের ক্রাইম ইনভেষ্টিগেশনের পুলিশ দ্বারা দুই দিন একঘন্টা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরো অনেক কিছু জানা যাবে।”
মি. আকাশ মালিকের উপরের ধারণাটিই ১০০% সত্যি। আচ্ছা ফারসীম মান্নান মুহাম্মদীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করছেনা কেন? যেখানে তার আয়োজিত আড্ডার মধ্যমণি বাসায় ফেরার পথে নির্মমভাবে খুন হন, আর সে পলাতক থাকে। ফারসীম মান্নান মুহাম্মদীইতো এই খুনের প্রধান সন্দেহভাজন হওয়া উচিৎ।
সরকারের স্টিয়ারিং কমিটিতে তার কোনো মামা-চাচা নেইতো?
প্রতিশ্রুত নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে মাগরিবের নামাজের অজুহাতে যে হাজির হতে পারেনা, তেমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব করার মূল্য ড. অভিজিৎ রায় খুন হইয়া পরিশোধ করিল।
অসংখ্য ধন্যবাদ রায়হান আবীর।
:scratch: রহস্য!!!
লিঙ্ক তো দিতে পারলামই না কী সব উলাটা পাল্টা হয়ে গেল। লেখাটি লুক্সের লেখা সিলেট টুডে২৪ এ পাকাশিত-। লিঙ্কটা আবার দিলাম।
http://www.sylhettoday24.com/news/details/Column/2405
https://blog.mukto-mona.com/2016/07/26/49195/#comment-157850
নিচের লেখাটি পড়ার আগেও এমন কিছু প্রশ্ন মনে উঠেছিল। আমি অবাক হতাম কেন মুক্তমনায় তার কোন লেখায় তিনি সাধারণত কারো উত্তর দেন না ভেবে। মনে আছে বন্যা উনাকে দাদা সম্মোধন করে তার লেখা বিষয় নিয়ে কিছু জানতে চেয়েছিলেন, ভদ্রলোক উত্তরে শুধু বললেন, আমি দাদা নই, আমি ভাই। নামটাও তার বেশ, ফারসীম মান্নান মুহাম্মদী। তবে এসব কোনো ব্যাপার না, ব্যাপার হলো মুহাম্মদী সাহেব অভিজিতকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ সময়ে যেতে বলে নিজে মাগরিবের নামাজে কেন? সেটা আগে বলে দিতেই পারতেন। সারা দুনিয়া কতো কিছু বললো, তার কিছুই কি বলার ছিলনা? আমি মনে করি, ডক্টর ফারসীম মান্নান মুহাম্মদী সাহেবকে ইংল্যান্ডের ক্রাইম ইনভেষ্টিগেশনের পুলিশ দ্বারা দুই দিন একঘন্টা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরো অনেক কিছু জানা যাবে।
Brothers and sisters of Muktomona and all the commentators:
Is there any way to reengage the FBI to investigate Abhijit´s murder afresh?
Can we raise money to do this, please??
Mannan and Alam MUST be caught and interrogated, even if Interpol needs to be invoked !!!!!
I do not believe in “Chokher Jaal”..I want action against Jamaat and anti liberation forces and all Islamic terrorist organizations in Bangladesh.
Let us not stop until the last butcher of Islamic ideology of Bangaldesh is caught, punished and killed.
এখানে লক্ষণীয় ব্যাপার হল অভিজিৎ রায় হত্যাকান্ডে তৌহিদুর রহমান , সাদেক আলী গংদের সংশ্লিষ্টতা আবিস্কার করেছে র্যাব আর মুকুল রানা গং এর সংশ্লিষ্টতা আবিস্কার করেছে পুলিশ। দুটো আলাদা তদন্ত সংস্থা। এই দুই থিওরির নায়কদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর পুলিশ কিংবা র্যাব কেউই দেয়নি। যদি তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক না থেকে থাকে তাহলে এদের মধ্যে যে কোন একটি থিওরি ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বাংলাদেশে যেহেতু ব্যর্থতার দায় স্বীকারের সংস্কৃতি প্রশাসনের কোথাও নেই কাজেই এই দুই থিওরির কোনটা ভুল সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা কখনোই পাব না।
পুলিশের ভাষ্যমতে শরীফ আনসারুল্লাহ শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের একজন। কাকে হত্যা করা হবে , কেন হত্যা করা হবে এই ব্যাপারে পরিকল্পনায় সে জড়িত। এরা পরিকল্পনা করে দীর্ঘদিন রেকি করে অপারেশন চালায়। শরীফ যদি সত্যিই ২৩শে ফেব্রুয়ারী গ্রেপ্তার হয়ে থাকে তবুও নাজিমুদ্দিন সামাদ এবং জুলহাজ মান্নান-তনয়ের হত্যাকান্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনাকারী হিসেবে তার থাকার সম্ভাবনা থেকেই যায় । তবে এ বিষয়গুলো পুলিশের ষ্পষ্ট করা উচিত।
আমার মনে হয় এটা অতি সরলীকরন। এটা সত্য যে সরকার গুলশান হত্যা কান্ডের পর জঙ্গী ইস্যুতে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ব্লগার হত্যার পর সেই অবস্থান নেয়নি। উল্টো আবার সরকারের শীর্ষ মহল থেকে ব্লগার দের লেখালেখির ছবক শ দেওয়া হয়েছে। তবে স্রেফ ক্রস ফায়ারের উপর ভিত্তি করে সরকারকে দোষারোপ করার আগে আরো কিছু ফ্যাক্টর বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ধর্ম একটা দর্শন। যে বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরা জঙ্গীবাদে কার্যকলাপে জড়িয়েছে সেই দর্শনকে অবশ্যই রাজনৈতিক , সামাজিক , সাংস্কৃতিক ভাবে মোকাবেলা করতে হবে , পাশাপাশি ভাইরাস আক্রান্ত কোষগুলোর নির্মূলও জরুরী। এই নির্মূল অভিযান অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযথ বিচারের মাধ্যমে হওয়া উচিত কিন্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন । জঙ্গীদের বিরুদ্ধে নির্মূল কার্যকম চালাতে যে পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজন সেই দক্ষতার ঘাটতি আমাদের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে প্রকট। ক্ষমতার মোহে অন্ধ আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ বাহিনীকে পুরোপুরি দলীয় বাহিনী বানিয়ে ফেলেছে। পুলিশের একটা অংশ নানা উপায়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত। আর জঙ্গীরা এত নিখুত ভাবে অপারেশন চালায় যে আদালতে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরঙ্কুশ ভাবে প্রমান করাও কঠিন। তাই পুলিশের একটা অংশ যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে জঙ্গীদের ধরছে, তারা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কোন ঝুকি নিতে চাইছে না। ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্সে পুলিশ থাকার কারণে পুলিশও কিন্ত জঙ্গীদের প্রাথমিক আক্রমনের স্বীকার হচ্ছে যেটা আমরা গুলশান ও শোলাকিয়ায় দেখেছি। ভবিষ্যতেও তাদের আরো আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে। তাই এসব কারণে পুলিশ অনেকটা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে পার্সোনাল যুদ্ধে নেমেছে। সরকারও ইন্সট্যান্ট রিএকশন হিসেবে আপাতত ক্রসফায়ারকে সমর্থন করছে ।
রুশো আলম অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
যেহেতু সরকার পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করেন এবং উপরের মহলের নির্দেশ ছাড়া ক্রসফায়ার ঘটে না, তাই সরকারও দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক ব্লগার লেখক, প্রকাশক, সমকামী, ভিন্ন ধর্মালম্বীদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
“আমার মনে হয় এটা অতি সরলীকরন। ”
আমিও তাই মানি। কিন্তু এই ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করেছে “অর্থাৎ” সরকার জড়িত, (বিশেষ করে লেখক-ব্লগার-প্রকাশক) হত্যার জন্য দায়ী আল-কায়েদার অনুসারীরা। এবং এই ফাদে শুধু জামায়াত, জঙ্গি মনষ্করা নয় অনেক মুক্তবুদ্ধির মানুষকেও পড়তে দেখেছি। তারা সবাই ভাবেনঃ সরকার হুকুম দিয়ে দিয়ে এই হত্যাগুলো করাচ্ছে। যা সঠিক বলে মনে করি না। কিন্তু সরকারের কর্মকান্ড এদের এই ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। তাই এই সরলীকরণ ন্যারেটিভ বর্ননা করে আমি লিখেছি-
এই ন্যারেটিভ সরকার নৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে পারবে?
এই ব্যক্তিগত অনুসন্ধানগুলো জরুরি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অভিজিৎ হত্যার তদন্ত অনেকদিন ধরেই বন্ধ আছে। এটি শিগগিরই আবার শুরু হবে এমনটিও আর মনে হয় না।
এই প্রতিবেদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক অজয় রায় জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে টেলিফোনে বলেছিলেন, অভিজিৎ হত্যার বিচার তার টপ প্রায়োরিটি।…ইত্যাদি।
[youtube https://www.youtube.com/watch?v=https://youtu.be/icPajJ2lcmc&w=500&h=375%5D
কিন্তু দৃশ্যত প্রধানমন্ত্রী তার কথা রাখেননি।
দুঃখিত, ইউটিউব লিংকটি আসেনি। আরেকবার:
https://youtu.be/icPajJ2lcmc
কলমের ধার চাপাতির চেয়ে তীক্ষ্ন তা ওরা জানে না ।
আপনার তথ্যবহুল লেখাটি পড়ে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম।বিশেষ করে ফারসীম মান্নানের প্রসঙ্গটি আসলেই অনেক জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়।বিজ্ঞান আড্ডার আহবায়ক হয়েও যথা সময়ে উপস্থিত না থাকা এবং বিলম্বে হাজির হয়ে নামাজকে অজুহাত দেখিয়ে দুঃখ প্রকাশের মাঝে যেন একটি সিগন্যালের সূত্র লক্ষ্য করা যায়।এর মাধ্যমে কি ফারসীম মান্নান অভিজিৎ রায়কে কোনও বার্তা দিয়েছিলেন?তারপর সেই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের পর তার নিরবতা শুধু বিষ্ময়করই নয় সন্দেহজনকও।একজন সেক্যুলার বিজ্ঞান লেখকের সাথে পূর্ব নির্ধারিত আড্ডায় ‘নামাজ’ এর জন্য বিলম্বে উপস্থিত এবং হত্যাকান্ডের পর তার অস্বাভাবিক নিরবতা বা বিচ্ছিন্নতা বা পালিয়ে বেড়ানো এই দুইটি ঘটনার একটি মনঃস্তাত্তিক বিশ্লেষণ হত্যাকান্ডের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হতে পারতো কিন্তু আমাদের দেশে তদন্তকাজে এরকম মনোবিশ্লেষণকে কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয় জানিনা।আসলে অভিজিৎ হত্যাকান্ড সহ প্রতিটি হত্যাকান্ডে পুলিশী তদন্তের নামে আমরা শুধু গুঁজামিল আর প্রহসনই লক্ষ্য করেছি।এজন্য অবশ্য পুলিশকেও একক ভাবে দায়ী করা যায়না।পুলিশতো রাষ্ট্রের বা সরকারের আজ্ঞাবাহী দাস মাত্র।বিগত চারদলীয় জোট আমলে সরকারের শীর্ষ মহলের কাংখিত পথ ওভারটেক করে কিছু সাহসী পুলিশ অফিসার কয়েকটি দুঃসাহসিক ইনভেষ্টিগেশনের জন্য কীরকম পুরষ্কৃত(?) হয়েছিলেন তাতো আমাদের জানা।আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে জঙ্গীবাদের উত্থানের সাথে বি এন পি জড়িত। এটা প্রধানমন্ত্রীর রুটিন ব্লেমগেমের অংশ হলেও এর সত্যতা অনস্বীকার্য কিন্তু সেসাথে এটাওতো সত্য যে এই জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁর উপদেষ্টা পুত্র তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের আই জি।প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর তাদের বক্তব্য বিবৃতিগুলি বিশ্লেষণ করলে সাদা চোখেই দেখা যায় এই জঙ্গীদের প্রতি তারা কতটুকু নমনীয় হয়ে পড়েছিলেন।এখন আপন আঙ্গিনায় প্রশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা আততায়ী যখন আপনাকেই দংশনে উদ্যত হয়েছে তখন টনক নড়েছে।এখন পুলিশের কাজেও গতি এসেছে।তবু ভালো,এসেছেতো।এবার কি তাহলে অভিজিৎ রায় সহ সকল সেক্যুলার লেখকের হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত হবে ?বেরিয়ে আসবে নাটের গুরুদের মুখ ?আমরা আশায় বসতি করি।আশাতেই বুক বেঁধে থাকলাম।পরিশেষে লেখাটির জন্য আবারও ধন্যবাদ।
অভিজিতদা ভুল সময়ে ভুল দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশ তাকে ধারণ করার মত পরিপক্কতা এখনো অর্জন করেনি। যার মূল্য আমরা দিলাম তাকে হারিয়ে। বিচার নিয়ে কি ভাবব? অভিজিৎদাকে ত আর ফিরে পাব না। এ ক্ষতি বোঝার সামর্থ্য কি এ দেশের আছে?
কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হবে; তবু বলি। এখন পর্যন্ত এই লেখাটা পড়া হয়েছে ১০৪৮৩ বার। এই জায়গাটায় এমন একটা সংখ্যা দেখলে কোন ব্যাপারেই আশা ছাড়তে ইচ্ছা করে না।
চলুক। বিচার হোক না হোক, সন্দেহভাজনের দিকে আঙুল তুলতেই হবে। কে বলে সময়ে সব ক্ষত শুকিয়ে যায়। কোন কোন ক্ষত কখনো শুকায় না। চলুক।
পেছনের নির্দেশদাতাকে বা মুল পরিকল্পনাকারীকে বিচারের আওতায় আনার সক্ষমতা বাংলাদেশের পুলিশ বা বিচার বিভাগ এখনো অর্জন করেনি।অর্জন করার কোন লক্ষনও নেই।কিছু উদাহরন-
১। বহুল আলোচিত বংগবন্ধু হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহনকারীদের বিচার হয়েছে কিন্তু আড়ালের কারো কিছুই হয়নি। লক্ষ্য করুন, খুনীরা টিভিতে সাক্ষাতকার দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেছে, দম্ভ করেছে- তবুও আইনজীবীদের প্রমান করতে জান বেরিয়ে গেছে এবং বিচারকদেরও দ্বিধা দ্বন্দের শেষ নেই।
২। জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডে মুল পরিকল্পনাকারী কারো কিছুই হয়নি। নিরপরাধ বহু মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে মেরে ফেলা হয়।(বর্তমান সময়ের ক্রসফায়ার!)
৩। মঞ্জুর হত্যার মুলপরিকল্পনাকারী বিচারের আওতায় আসতেই বিচারক বদলীসহ নানান কেচ্ছা কাহিনী।
এই হল বাংলাদেশে বহুল আলোচিত বহু গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিদের হত্যাকান্ডে জড়িত মুলপরিকল্পনাকারীকে বিচারের আওতায় আনার নমুনা।কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? শিশু রাজন হত্যার সুত্রে বিষয়টা নিয়ে একটা লেখা মুক্তমনায় শীঘ্রই লেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি।
আরো বাস্তবতা দেখুন, আমরা প্রকাশ-বিকাশ, যোসেফ, পিচ্চি হান্নান,সুইডেন আসলাম প্রমুখ সিরিয়াল কিলারদের নাম জানি কারন তারা সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশগ্রহন করে।(অনেকটা ক্রসফায়ারে মারা যাওয়া হত্যাকারিদের মত!) কিন্তু পেছনে কার পরিকল্পনায় তারা হত্যামিশনে অংশ নেয় তার রহস্য উদঘাটনে আমরা সক্ষম নই।
আপনার পরিশ্রসাধ্য এই লেখাটি বড়জোর কোন রহস্য উপন্যাস বা কোন বিজ্ঞান লেখকের সায়েন্স ফিকশন লেখার খোরাক হতে পারে। মুল পরিকল্পনাকারীকে বিচারের আওতায় আনা যাবে না কিছুতেই।সেই সক্ষমতা এই দেশে কারো নেই।
তার বড় উদাহরন, ডঃ অজয় রায় উল্লেখিত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করার পর ডিবি পুলিশ কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।ফল অশ্বডিম্ব।
আপনার লিস্টের সাথে যুক্ত করে রাখুন বিডিয়ার এ সংগঠিত হত্যাকান্ডের ঘটনাও।
সবই মনে আছে #আবির ভাই — খুনের পর শুধু ফারসীমের নামটাই বেশী করে আলোচিত হত, ত্রিভুজ আলমের চেয়ে … তবে বর্তমানে অজয় স্যারও মনে হচ্ছে এই ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিয়েছেন, কারণ সাম্প্রতিক কোন বিবৃতিতেই মান্নানকে নিয়ে উনি কোনো কথা বলেননি ( তবে খুন সফল হবার পর ওরা র্যাডিসনে ওরা পার্টি করেছিল শুধু এইটুকুই বলেছেন, তাও ফারসীম কিংবা ত্রিভুজ এদের কারো নামও উল্লেখ ছিল না ) … আর “আনসারুল্লার মেজর জিয়া” নিয়ে আরও একটু ডিটেলস জানালে ভালো হত … ওই ব্যাপারে কিছু লিঙ্ক দিবেন ??
গুগল করলেই অনেক পাবেন। এই লিংকটা দেখতে পারেন http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2016/04/30/353142
ধন্যবাদ ? … গুগল করে পাইনি, কারণ এখানে জিয়া মানে অন্য জিয়ার ভুরিভুরি লিঙ্ক।
অভিজিৎ রায়ের হত্যা নিয়ে তথ্যবহুল লেখা।
ধন্যবাদ গীতা দাস মন্তব্যের জন্য।
I think Farseem Mohammadi is a calprite like Hasanat Karim( Holey Artisan case). They are the directors under mask. Be aware of these traitors.
সত্য উন্মোচিত হবেই। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
IMO targeted ops like these, conducted by GIMF/ABT/AQIS, present a far greater threat to the stability of the country than general purpose terrorism, conducted by JMB/IS. The moral clarity against the latter type of attacks as in Gulshan needs to be equally present in the case of the former as in Xulhaz Mannan.
Rayhan bhai, please tighten this passion piece to clearly mark those pseudo-rationalists who cheered the revisiting of December 14. Please avoid eclectic insinuations of the “either-you-are-against-us-or-with-us” variety. Note that the rise of the previous crest of jihadism ala Bangla Bhai has a powerful populist, anti-authoritarian appeal. The tide of public opinion has hopefully turned against radical Islamism. Whether or not the subject of the book you fellas co-authored is contagious or memetic, clearly Islamist-inspired violence around the world is.
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
কেবল অভিজিৎ হত্যাই নয়, রাষ্ট্র নিজেই যেখানে কোন মুক্তচিন্তার লেখক-ব্যক্তির হত্যাণ্ডের বিচার চায় না; যে রাষ্ট্র নিজেই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রয়েছে, সে রাষ্ট্র’র কাছে কোন হত্যাকাণ্ডেরই কুশীলবদের মুখোস উন্মোচন করবে না এটা নিশ্চিত। ফেসবুক-ব্লগে সামান্য একটি লাইক কমেন্ট করার জন্য, মুক্তমত প্রকাশের জন্যও যে রাষ্ট্রে খুনকে প্রকারান্তরে বৈধতা দেয়া হয়, সে রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার আশা করা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কে জানে এই ব্লগপোস্টে চার লাইনের একটি কমেন্ট করার জন্যও আমার ঘাড়ে চাপাতির কোপ পড়বে কীনা! তারপরও আমরা মানুষ বলেই আশাবাদী, হাল ছাড়ি না। মুক্তচিন্তার আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া অবধি বিচার চাইবোই।
সহমত।
“সে রাষ্ট্র’র কাছে কোন হত্যাকাণ্ডেরই কুশীলবদের মুখোস উন্মোচন করবে না এটা নিশ্চিত ”
এতোটা নিশ্চিত হতে চাই না। রাষ্ট্র আমাদের, আমরা যদি থাকি তাহলে সকল কুশীলবদের মুখোশ একদিন উন্মোচন হবেই।
অনেক কিছু পরিষ্কার হলো। আরো বেশ কিছু জিনিষ এখনো ঘোলাটে। ফারসীম সাহেবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিৎ।
যতো দেরিই হোক, একদিন সবই পরিষ্কার হবে।
প্রয়োজনিয় লেখা। ধন্যবাদ রায়হান ভাই।
ধন্যবাদ অনার্য সঙ্গীত মন্তব্যের জন্য। আরও আসছে!
ষড়যন্ত্র কতটা ব্যাপক, কতটুকু গভীর তা কি সত্যিই কখনো উম্মোচিত হবে ?
@কাজি রহমান, অবশ্যই হবে। বাংলাদেশ সরকার যদি শুরু থেকেই জঙ্গি নাই, নাস্তিকরা কেনো এসব লিখে এই ধরনের কথাবার্তা না বলে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতো জঙ্গিবাদের বিপক্ষে তাহলে অনেক রক্তপাতের হাত থেকে বাঁচতো এই দেশটা।
উন্মোচিত হলেই বা কি? বিচার কি হবে?
স্পষ্টতই ফারসীন মান্নানের ভূমিকা সন্দেহজনক। জানি না আসলে কি ঘটছে। তবে অভিজিৎ রায় যে আরেক জন জন্মাবেন না তা নিশ্চিত।
অভিজিৎ দা যে আলো জ্বেলেছেন লাখো মগজে, যেই আলো জন্ম দিচ্ছে লক্ষ অভিজিৎ। তবে ব্যক্তি অভিজিৎ থাকবে না, তার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।