আর্য কারা,তাদের আদি বাসস্থান কোথায়,ভারতীয় উপমহাদেশে কবে তাদের আগমন,প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় তাদের কি অবদান-এই বিষয়গুলি নিয়ে একের পর এক বিতর্ক হয়েছে কিন্তু কোন নিশ্চিত সমাধানসূত্র আজও অধরা।প্রাথমিক পর্বে মনে করা হত যে শ্বেতগাত্রবর্ণ,টিকালো নাসিকা,প্রশস্ত ললাট ও দীর্ঘদেহী ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্বলিত মানবপ্রজাতির একটি গোষ্ঠী হল আর্য। এই তত্ত্ব বেশ প্রভাবও বিস্তার করেছিল এবং এর ভিত্তিতে অনেকেই বলতে শুরু করেন যে আর্যরা হলেন নরডিক জাতির মানুষ।কিন্তু এই কাল্পনিক তত্ত্বের ফানুস ফুটো হয়ে যায় ইরান থেকে বেহিস্তান শিলালিপি আবিষ্কৃত হওয়ার পর।যীশুর জন্মের প্রায় ৪৮৬ বছর আগে উৎকীর্ণ এই লেখতে পারস্য সম্রাট দারায়ুস নিজকে দাবী করেন-‘’ A Persian, a son of a Persian and an Aryan of Aryan Descent’’ হিসেবে। ব্যাস এরপরই ঐতিহাসিক মহলে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হল এবং আর্য জাতির সাথে সম্পৃক্ত দেহসৌষ্ঠব সংক্রান্ত তত্ত্ব এক লহমায় বাতিলের খাতায় চলে গেল।
নিঃসন্দেহে আর্য জাতির শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কীর্তি হল বেদ।সংস্কৃত ভাষায় বিরচিত বেদ এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। ধর্ম ও দৈনন্দিন জীবনের নানা দিকের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই গ্রন্থে লক্ষ্য করা যায়।ষোড়শ শতাব্দীর সময়ে ভারতে আগত ইউরোপীয় পর্যটক ও ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে ভারতীয় ধর্ম, বিশেষত বেদ নিয়ে তুমুল উৎসাহ দেখা দেয়।এরাই প্রথম সংস্কৃত,ইরানীয় ও ইউরোপীয় বেশ কিছু ভাষার মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ্য করেন।যেমন গোয়াতে আগত ব্রিটিশ জেসুইট পাদ্রী থমাস স্টিফেন্স ১৫৮৩ সাল নাগাদ তাঁর ভাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রেরিত এক চিঠিতে সংস্কৃতের সাথে গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন।অন্যদিকে ইটালির ফ্লোরেন্সীয় বনিক ফিলিপো সসেটি বানিজ্য সংক্রান্ত কাজে গোয়ায় এসেছিলেন।তিনি এসময় এক স্থানীয় গোয়ান পণ্ডিতের কাছে সংস্কৃত ভাষার অধ্যয়ন করেছিলেন।এরপর ১৫৮৫ তে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি বেশ কিছু সংস্কৃত ও ইটালীয় শব্দের সাদৃশ্য উপস্থাপন করেন,যেমন – Deva(Sans.) / Dio(Ita.), Sapta(Sans.)/ Sette(Ita.), Ostta(Sans.)/ Otto(Ita.) ইত্যাদি।যদিও স্টিফেন্স ও সসেটি কেউই এই সামঞ্জস্যের কারন অনুসন্ধানের প্রয়াস করেননি।কিন্তু তাঁরা নিজেদের অজান্তেই আর্য সংক্রান্ত গবেষণায় এক নয়া সম্ভাবনাময় দিকের উন্মোচন করেছিলেন।এভাবে ভাষাতাত্ত্বিক প্রেক্ষিতে,সম্পূর্ণ এক নতুন আঙ্গিকে আর্যদের ইতিহাস বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া শুরু হয় যা প্রায় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বজায় ছিল কিন্তু এই পদ্ধতিও শেষ পর্যন্ত সমাধানসূত্র নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়।
ফরাসী জেসুইট পাদ্রী গ্যাস্টন লরেন্ট দক্ষিন ভারতে ধর্মপ্রচারকালে তেল্গু ভাষা শিখেছিলেন।তিনি ‘তেলেগু-ফরাসী-সংস্কৃত’ একটি অভিধান রচনা করেন এবং এখানে এই তিন ভাষার মধ্যে ভূরি ভূরি সাদৃশ্য তুলে ধরেন।তাঁর এই অভিধানটি আজও ভাষাতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে আর্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ‘বাইবেল’ হিসেবে বিবেচিত হয়।তাই ম্যাক্সমুলারের মত যশস্বীও তাঁকে ‘তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের জনক’ হিসেবে অভিহিত করেন।গ্যাস্টনের পরবর্তীকালে জেমস পারসনস উল্লেখ করেন যে,ইউরোপ ও এশিয়ার অনেকগুলি ভাষার উৎপত্তি নিহিত আছে এক আদিম ভাষার মধ্যে।একই ভাবে ডাচ ভাষাবিদ মার্কুস জুয়েরিয়াস বক্সহর্ন এই ভাষাগত সাযুজ্যের ভিত্তিতে ‘স্কিথিয়ান’ নামে এক আদিম ভাষার অবতারনা করেন এবং এই থেকেই বিভিন্ন ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বলে দাবী করেন।এভাবে আর্য সংক্রান্ত যে এক নতুন সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় তা হল – আর্য একটি ভাষাগোষ্ঠীর নাম।ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সংস্কৃত,গ্রীক,ল্যাটিন,জার্মান,পারসিক ও কেলটিক এই সকল ভাষার মধ্যে যে কোন একটি যদি কোন ব্যক্তির মাতৃভাষা হয়,তবে তিনি আর্য।এই ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দদ্বয় ব্রিটিশ গবেষক থমাস ইয়ং সর্বপ্রথম তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন ,বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সমজাতীয়তার ভিত্তিতে। বিস্ময়কর ভাবে ‘হিব্রু’ ভাষাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।যদিও বর্তমানে হিব্রু ও তামিল ভাষার মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখা যায়।যেমন তামিলে ময়ূরকে ‘টোকেই’ রূপে উল্লেখ করা হয়,তেমনই হিব্রু ভাষায় ময়ূরের নাম হল ‘টুকি’।
জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক আন্দ্রেস জাগার ককেশাস অঞ্চলে একদা বিরাজমান এক প্রাচীন ভাষার ধারনা প্রদান করেন,যা থেকে গ্রীক,স্ল্যাভিক,পারসিক ও কেল্টো-জার্মান বা স্কিথিও-কেলটিক ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বলে দাবী করেন।ডাচ পণ্ডিত জোসেফ স্ক্যালিগার আবার চারটি প্রাচীন ভাষাগোষ্ঠীর অবতারনা করেছিলেন এবং সেগুলি হল-সেমাইট (আরবীয় ভাষাসমূহ ও হিব্রু),হ্যামাইট (ইজিপ্সিয় ও কুশাইট ভাষাসমূহ),জ্যাফেটিক এবং গ্রীক-ল্যাটিন-জার্মান-ভারতীয় ভাষাসমূহ সম্বলিত একটি গোষ্ঠী।ডেনমার্কের গবেষক রাসমুস ক্রিস্টিয়ান রাস্ক নরওয়েজী,গথিক,লিথুয়ানিয়ান,গ্রীক,ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে সাযুজ্য উপস্থাপন করেন।প্রত্যেক ভাষাবিদই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভাষাগুলির জন্মদাত্রী রূপে এক প্রাচীন ভাষার উল্লেখ করেছেন এবং এই প্রাচীন ভাষাটিকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে।তবে ভাষাতাত্ত্বিক প্রেক্ষিতে প্রথম যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেন কলকাতা উচ্চন্যায়ালয়ের পূর্বতন প্রধান বিচারপতি তথা বেঙ্গল এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম জোন্স।তিনি সংস্কৃত,গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার ক্রিয়াপদ ও ব্যকরণগত সাযুজ্যের উল্লেখ করে,এই তিন ভাষার উৎসক্ষেত্র রূপে এক আদি ভাষার অবতারনা করেন।ফরাসী পণ্ডিত বার্নফ এবং তাঁর দুই অনুগামী রথ ও ম্যাক্স মুলার বৈদিক সাহিত্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন।তাঁরাই প্রথম ‘ইন্দো-এরিয়ান’ বা ‘ইন্দো-আর্য’ শব্দদ্বয়ের উল্লেখ করেন এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষাগুলি এই ‘ইন্দো-আর্য’ ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আলেকজান্ডার স্লাইকার ‘Genealogical Tree Theory’ বা G.T.T তত্ত্ব উপস্থাপনের মাধ্যমের এক নয়া মাত্রা সংযোজিত করেন।এই তত্ত্ব অনুসারে একটি প্রাচীন ভাষা ভেঙে কতগুলি নতুন ভাষার উৎপত্তি হয় এবং পরবর্তীতে প্রতিটি নতুন ভাষা ভেঙে আরও অনেকগুলি ভাষার সৃষ্টি হয়।যদিও প্যাট্রিক ম্যালোরী ও ডগলাস অ্যাডামস, ভাষা বিভাজনের এই অতি সরলীকরণ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেন।এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে সৃষ্ট ভাষাগুলির প্রকৃতি সব জায়গায় এক নয় এবং এগুলি থেকে উৎপত্তিলাভ করা উপভাষাগুলিও সবক্ষেত্রে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার সাথে সংযুক্ত নয়।জার্মান ভাষাবিদ জোহানেস স্মিথ আবার ‘Wave Theory’ উপস্থাপন করেছিলেন,যার মূল বক্তব্য ছিল- জলে পাথর ফেললে একটি কেন্দ্র বরাবর ঢেউ যেমন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে,তেমনই একটি আদিম ভাষা থেকে নতুন নতুন ভাষার উৎপত্তি হয়।আর্যদের উৎস বিশ্লেষণে ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতি খুব একটা কার্যকরী হয়নি।এই তত্ত্বের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হল আর্যদের বাসস্থান কোথায় ছিল,তা নির্ণয় করা যায় নি।সংস্কৃতের সাথে অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষার ব্যাপক সাদৃশ্যের প্রেক্ষিত্তে অনেকেই ভারতকে আর্যদের আদি বাসভূমি রূপে অভিহিত করেন।যদিও ট্রটম্যানের মত অনেকেই মনে করেন যে ল্যাটিন,কেলটিক,ইরানীয় ও জার্মানের সাথে সংস্কৃতের সাযুজ্য প্রমান করে যে, আর্যরা অভারতীয়।একদা এই বিশাল ভাষাগোষ্ঠী একটি অঞ্চলে বসবাস করলেও পরবর্তীতে তারা বিভক্ত হয়ে যায় এবং একদল ভারতে প্রবেশ করে বৈদিক সভ্যতার জন্ম দেয়।
ছবি: খ্রিস্টপূর্ব পাঁচশ বছর আগে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার বিস্তৃতি
দীর্ঘ দুই শতাব্দী ব্যাপী আর্যদের উৎপত্তি সংক্রান্ত প্রেক্ষিতে ভাষাতত্ত্বের কচকচানি চললেও কোন সমাধানসূত্র তো দূরে থাক বরং সমগ্র বিষয়টিই আরও জটিল হয়ে যায়।একের পর এক কল্পনা ও তত্ত্বের সমাহারে বিতর্ক ঘোরালো হয়ে ওঠে।এমন এক দিশাহীন পরিস্থিতিতে আনাতোলিয়া বা তুরস্কে ও ভারতে কয়েকটি নতুন সভ্যতার আবিস্কার পুনরায় আর্য বিতর্কে নয়া মাত্রা সঞ্চার করে।এশিয়া মাইনরে অবস্থিত ভোগসকাই যা একদা হিত্তিয়দের রাজধানী ছিল,সেখান থেকে প্রাপ্ত একটি লেখতে ইন্দ্র,ব্রুন,মিত্র ও নাসাত্য- এই চারটি নাম পাওয়া যায়,যারা আবার বৈদিক সাহিত্যে দেবতা হিসেবে স্থান পেয়েছেন।এছাড়া এই লেখটি থেকে ঘোড়া বা অশ্বের প্রশিক্ষন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় এবং এই সম্পর্কিত একই গ্রন্থের উল্লেখও পাওয়া যায়।এই অশ্বের তথ্য এক নতুন সমস্যার জন্ম দেয়।হিন্দু মৌলবাদী ঐতিহাসিকরা আর্যদের ভারতীয় রূপে অভিহিত করলেও,অশ্বের সুপ্রাচীন নিদর্শন ভারতে পাওয়া যায়নি।আর্যরা এমন এক জাতি অশ্ব ও অশ্ব-চালিত রথে অভ্যস্ত ছিল অথচ ভারতীয় সভ্যতার সুপ্রাচীন নিদর্শন হরপ্পা সভ্যতাতে অশ্বের নিদর্শন নেই।ফলে ভারত আর্যদের আদি বাসস্থান নয় এই তত্ত্বে বিশ্বাসীরা ‘আর্য-অশ্ব’ একদম সমার্থক করে ফেলেছেন।ফলে লাভ কিচ্ছু হয়নি বরং এই দৃষ্টিভঙ্গিগত সীমাবদ্ধতা প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলেছে। ভোগসকাই লেখর ভিত্তিতে ঋগ্বেদ রচনার যে সময়কাল নির্ণীত হয়েছে তা হল যীশুর জন্মের প্রায় পনেরোশো বছর পূর্বে ও ঋগ্বেদের একদম প্রাথমিক পর্যায় তুরস্কে রচিত হয়েছিল এবং বারশো খৃস্ট পূর্বাব্দে তুরস্ক থেকে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে। মারিয়া গিমবুটাস ‘কুরগান সংস্কৃতি’ র ওপর ভিত্তি করে ককেশাস অঞ্চলে আর্যদের আদি বসতি ছিল বলে মনে করেন।আসলে কুরগান হল সমাধি সংক্রান্ত এক রীতি;এই রীতি অনুসারে সমাহিত ব্যক্তির সাথে অশ্ব সহ অন্যান্য গবাদি পশুকেও সমাধিস্থ করা হত।তবে ককেশাস আর্যদের আদি বসতি কিনা তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না,কারন এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সমাধিগুলিতে যে মনুষ্য দেহাবশেষ পাওয়া গেছে তা আবার নরডিক জাতির মানুষের সাথে সমজাতীয়।
দক্ষিন রাশিয়ার কাজাখস্তান থেকে আবিষ্কৃত ‘আন্দ্রনোভো সংস্কৃতি’র ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,এই সভ্যতার অন্তর্গত পশুপালক গোষ্ঠী অশ্বের সাথে সুপরিচিত ছিল এবং এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত গবাদিপশুর দেহাবশেষের মধ্যে আশি শতাংশই অশ্বের।এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এলিনা কুজমিনা উল্লেখ করেছেন যে, পন্টিক-কাস্পিক অঞ্চল হল আর্য বা ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর আদি বাসভূমি এবং এখান থেকেই একটি শাখা ইউরোপে চলে যায় ও আরকটি শাখা ইরানে চলে যায়।ইরানের শাখাটি থেকে ভেঙে আরেকটি শাখা আবার ভারতে প্রবেশ করে।ইউরোপে যে আর্যদের একটি শাখার অভিপ্রয়ান হয়েছিল তা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই এবং পরবর্তীকালে হিটলারের সময়ে ‘জার্মানরা আর্য’ এই জাতীয় ধারনা গড়ে উঠেছিল।সমস্যা হল আর্যদের যে শাখাটি ইরান বা তদানীন্তন পারস্যে প্রবেশ করেছিল তাদেরকে নিয়ে।প্রাচীন পার্সিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল ‘জেন্দ আবেস্তা’ যার সাথে বৈদিক সাহিত্য সম্ভারের প্রচুর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।তবে যেখানে ‘দেব’ শব্দটি বেদে অত্যন্ত পবিত্র সেখানে আবেস্তাতে ‘দেব’ শব্দতি নেতিবাচক অর্থ বহন করে এবং ‘অসুর’ সত্ত্বার প্রতি স্তুতি বর্ষিত হয়েছে।সর্বোপরি বৈদিক দেবতা বরুণের সম্বন্ধে আবেস্তা ঋণাত্বক মনোভাব প্রকাশ করেছে।সম্ভবত ইরানে প্রবেশের পর আর্যদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল,তাই একটি গোষ্ঠী ভারতে চলে এসে ইরানীয় আর্যদের বিপরীত এক ধর্মীয় ব্যবস্থা পত্তন করে।যদিও এই বিষয়টি এতটা সরল নয়।কারণ বেদে অনার্য মুণ্ডারী ও দ্রাবিড় ভাষার প্রায় তিনশোটি শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।তাই অনেকেই মনে করেন আর্যরা ভারতীয় এবং ভারত থেকেই তারা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।জেন্দ আবেস্তা ও ঋগ্বেদের সময়কাল প্রায় একই হওয়ায় এই প্রশ্নের সমাধান বেশ কঠিন।
আর্যরা ভারতীয় না অভারতীয় সেই বিতর্কে ঐতিহাসিক মহলে নানা মুনির নানা মত।তবে সংখ্যাগরিষ্ঠই আর্যরা অভারতীয় এই মতে বিশ্বাসী।জ্যোতির্বিদ রাজেশ কোচাহার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ‘বেদাঙ্গ জ্যোতিষ’ গ্রন্থের বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে,এই গ্রন্থে সর্বদীর্ঘ দিন ও ক্ষুদ্রকালীন রাতের যে তথ্য রয়েছে,তার অনুপাত করলে হয় ৩ঃ২।এই প্রকার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অঞ্চলের সম্ভাব্য অবস্থান হতে পারে ৩৫ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা।একমাত্র হরপ্পা সভ্যতার শোরটুগাই ছাড়া আর অন্য কোন অঞ্চল এত উচ্চ অক্ষরেখায় অবস্থিত নয়,সুতরাং সামগ্রিক ভাবে আর্যরা ভারতীয় হতে পারে না। আবার কলিন রেনফ্রিউ এর মতে,ঋগ্বেদে কোথাও বলা হয়নি যে আর্যরা বহিরাগত সুতরাং এটার সম্ভবনাই প্রবল যে আর্যরা বেদ রচনার বহু পূর্বেই ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেছিল।কিন্তু আর্যরা অভারতীয় এই তত্ত্বটা সর্বজনগ্রাহ্য নয়, কারন এর পশ্চাতে বেশ কিছু যুক্তি আছে,যা অস্বীকার করার মত নয়।বেদে বার্চ গাছের উল্লেখ পাওয়া যায় আর এই গাছ আবার ককেশাস ও স্তেপ অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ। অন্যদিকে নব্য প্রস্তর যুগীয় কাশ্মীরের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের নাম হল বুর্জাহাম,যেখান থেকে যীশুর জন্মের পূর্ববর্তী প্রায় দু-হাজার পাঁচশো বছরের প্রাচীন বার্চ গাছের অবশেষ পাওয়া গেছে।সর্বোপরি আমুদরিয়া নদীর উচ্চ উপত্যকায় প্রাপ্ত ‘অক্সাস সভ্যতার’ সাথে হরপ্পার বস্তুগত সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়।ঐতিহাসিক অ্যাসকো পারপোলা, ভিক্টর সরিয়ানিধি এরা মনে করেন যে দু-হাজার খৃস্ট পূর্বাব্দে অক্সাসের বাসিন্দারা হল আর্য ও তারা মেহেরগড়ে বসতি স্থাপন করেছিল এবং এই মেহেরগড়-ই হরপ্পা সভ্যতার পটভূমি রচনা করেছিল।বিস্ময়কর ভাবে অক্সাস অঞ্চলে অশ্বের কোন অবশেষ পাওয়া যায় নি,কেবল মাত্র একটি মৃৎপাত্রে অশ্বের চিত্র পাওয়া গেছে।সুতরাং আর্য আর অশ্ব পরস্পরের সাথে কতখানি সম্পৃক্ত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ঋগ্বেদের ভাষ্যে দেখা যায় যে নদীগুলির নামোল্লেখ রয়েছে সেগুলি পূর্ব থেকে পশ্চিমে অর্থাৎ গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী।তাই এই থেকে অনুমান করা যায় যে,আর্যরা পূর্ব থেকে পশ্চিমে গমন করে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।তবে ভারত যদি আর্যদের আদি আদি বাসভূমি হয়,তাহলে ভারতের কোথায় তাদের বাসস্থান ছিল তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।কেউ মনে করেন হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল ও তিব্বত,আবার কারো মতে গঙ্গা-যমুনা উপত্যকা,আবার অনেকে মুলতান ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে আর্যদের বাসভূমি রূপে অভিহিত করেছেন।একই ভাবে আর্যরা যদি বহিরাগত হয়,তাহলে কোথায় তাদের বসতি ছিল তা নিয়েও ভিন্নতার অভাব নেই।কেউ দক্ষিন রাশিয়া ও ইউক্রেন,কেউ পামীর উপত্যকা আবার কেউ পোল্যান্ড ও ইউরেশিয়া অঞ্চলকে আর্যদের আদি বাসভূমি রপে বিবেচনা করেছেন।
আর্য বিতর্ক ইতিহাসের এমন এক অধ্যায় যা’র সঠিক সমাধানসূত্র নির্ণয় অত্যন্ত দুরহ,তবে অসম্ভব নয়।সর্বপ্রথম সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি অতিক্রম করে এই সমস্যাকে আরও বৃহত্তর প্রেক্ষিতে যুক্তি-সংগতভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।আর্যরা যে অভারতীয় এই বিষয়টি বেশ স্পষ্ট।সেক্ষেত্রে মধ্য এশিয়ায় এদের উৎস অনুসন্ধান করলে তা সফল হবে।আর্য সমস্যার সমাধানের সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল নিরবিছিন্ন অনুভূমিক উৎখনন,বিশেষত তুরস্ক,ইরান,ইরাক এই সকল অঞ্চলে আর্য সভ্যতার প্রচুর উপাদান এখনও লুক্কায়িত রয়েছে।এটা কোন কাল্পনিক অবতারনা নয়,সাম্প্রতিক কালে তুরস্কের গোবেকেলি টেপে অঞ্চলে আবিষ্কৃত প্রায় সাত হাজার বৎসরের প্রাচীন মন্দির ও ইউক্রেনে প্রাপ্ত স্বস্তিকা প্রতীক আর্য ইতিহাসকে এক নতুন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।সর্বোপরি হরপ্পা সভ্যতায় আর্য প্রভাব খোঁজার প্রয়াস বৃথা।কারন বেদে ইন্দ্রকে ‘পুরন্দর’ রূপে অভিহিত করা হয়েছে,কারন তিনি ‘হরি-গুপয়’ এর যুদ্ধে পুর বা নগর ধ্বংস করেছিলেন;আর এই হরি-গুপয় হল হরপ্পা।হরপ্পার বেশ কিছু সাইটে প্রাপ্ত কঙ্কালগুলির আঘাত পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে অতর্কিত আক্রমণে এদের মৃত্যু হয়েছে।তাছাড়া অনেক জায়গায় কঙ্কালের স্তুপ পাওয়া গেছে,যা থেকে বোঝা যায় যে এগুলির রীতি মেনে সৎকার হয়নি।হরপ্পার পতনের পশ্চাতে যে বৈদেশিক আক্রমণকে দায়ী করা হয়,সেই আক্রমণকারীরা আর অন্য কেউ নয়,তারাই হল আর্য।সুতরাং আর্যরা বিদেশী এবং শুনতে খারাপ লাগলেও মেনে নিতেই হয় যে বৈদিক সভ্যতার জন্মদাতারা ভারতের সুপ্রাচীন নগরসভ্যতার নির্মম ধ্বংসকারী ছিল এবং তারা কোনদিনই নগর সভ্যতার নিরিখে প্রাচীন ভারতীয়দের সাথে পাল্লা দিতে পারেনি।
সায়ন দেবনাথ, এম ফিল, প্রথম বর্ষ
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার এর মতে, আর্যরা ভারতের প্রথম অনুপ্রবেশকারী, । মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার হওয়ার পর আর্যদের সব ধরনের ভণ্ডামি প্রমাণ হয়েছে। বেদ আসলে আর্যদের মহিমা কাঁথা এটা স্বরচিত এবং স্বমহিমায় বিবরণ ছাড়া আর কিছু না এটা পক্ষপাতদুষ্ট।
মেহেরগড় ,হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর বিস্তীর্ণ নগর সভ্যতা তে অনেক গণকবর পাওয়া গেছে , নর কঙ্কাল কঙ্কাল গুলির বয়স এবং আর্যদের আগমনের সময় কাল একই সেই গণকবরে পাওয়া হার কঙ্কালগুলো অনেকেরই মুন্ডুচ্ছেদ করা ছিল। এই বর্বর লুটেরা আর্যরা সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস করেছিল। এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে নিজেদের স্বমহিমা বর্ণনা হেতু রচনা করেছিল। ( সমীর কুমার বাড়ৈ এর গবেষণা থেকে জানা যায়)
[…] সায়ন দেবনাথ লিখেছেন, “আর্যরা ভারতীয় না অভারতীয় সেই বিতর্কে ঐতিহাসিক মহলে নানা মুনির নানা মত। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠই আর্যরা অভারতীয় এই মতে বিশ্বাসী। জ্যোতির্বিদ রাজেশ কোচাহার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ‘বেদাঙ্গ জ্যোতিষ’ গ্রন্থের বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে,এই গ্রন্থে সর্বদীর্ঘ দিন ও ক্ষুদ্রকালীন রাতের যে তথ্য রয়েছে, তার অনুপাত করলে হয় ৩ঃ২। এই প্রকার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অঞ্চলের সম্ভাব্য অবস্থান হতে পারে ৩৫ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা। একমাত্র হরপ্পা সভ্যতার শোরটুগাই ছাড়া আর অন্য কোন অঞ্চল এত উচ্চ অক্ষরেখায় অবস্থিত নয়, সুতরাং সামগ্রিক ভাবে আর্যরা ভারতীয় হতে পারে না। আবার কলিন রেনফ্রিউ এর মতে, ঋগ্বেদে কোথাও বলা হয়নি যে আর্যরা বহিরাগত সুতরাং এটার সম্ভবনাই প্রবল যে আর্যরা বেদ রচনার বহু পূর্বেই ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেছিল।” [এম ফিল, প্রথম বর্ষ প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, তথ্যসূত্রঃ মুক্তমনা] […]
আর্য/ অনাআর্য তথা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকে উদার অসম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে দেখলে সত্যের কাছাকাছি আশা যেতে পারে। ইংল্যান্ড একসময় রোমানরা, পূর্ব জার্মান ব্রিটনরা দখল করেছিল। সূর্য না ডুবা ব্রিটিশ সম্রাজ্য শুধু পতাকা নিয়ে থাকতে বাধ্য হতো না। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে আফ্রিকা হয়ে আমেরিকায় উপনিবেশের ইতিহাস সবার জানা। সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি, প্রকৃতির নিয়ম সব বিবেচনায় নিতে হবে। বিজয়ীরা যদি সত্য,সুন্দর ও ন্যায় নীতি অনুসরণ করে চলত, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ইত্যাদি দিক থেকে দুর্বলদেরকে সহানুভুতির সাথে আগলে রাখতো তাহলে ইতিহাসের রক্তাক্ত অধ্যায় ও সাম্প্রদায়িকতা তৈরি হতো না আর এক সময়ের মহান জাতীরা পুরাকীর্তির অনুসন্ধানের পাত্র হতো না।
নৃবিজ্ঞানী রা কোন একটা দেশ বা জাতীকে উপরে তুলার জন্য কাজ করেনা । তারা ” মানব জাতী” কে নিয়ে কাজ করে । তাদের মধ্যে যদি এই মনোভাব থাকত তা হোলে হিউম্যান রেস যে আফ্রিকা থেকে স্টার্ট হয়েছে এই থিওরি change করে বলতো ইউরোপ থেকে স্টার্ট হয়েছে । অনেক রকম বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা , DNA, ভাষা , culture, মাথার খুলির পরিমাপ ,কার্বন টেস্ট করার পরে analysis করে। আনাতলিয়া বা মধ্য এশিয়া থেকে একটা দল ইউরোপ যায় একটা দল ভারতে আসে আর একটা দল আরব countriies দিকে যায় , তারা তো বলতে পারতো Europ থেকে সব জাইগাতে গেছে । তা তো তারা বলেনায় । এই থিওরি র সঙ্গে পলিটিক্স না করাই বুধিমানের কাজ ।
বাংলাদেশের মুসলমান গোন আরব বয়া সুলতান দের বংশধর নয়। এরা এই দেশের বদ্ধ আর হিন্দু থেকে ধরমান্তিত ,
সায়ন দেবনাথ এবং বিজয় দাদা আপনারা কৃপা করে আমার ইমেল বক্সে নক করুন।
সায়ন দেবনাথ এবং বিজয় দাদা আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাই।
সায়ন বাবু চমৎকার লিখেছেন। পড়ে ভালো লাগল। ধন্যবাদ।
সিন্ধু সভ্যতা সিন্ধু নদীর পশ্চিমে নয়, পূর্বে বিস্তৃত ছিল, সেটা পরবর্তী খননকার্যে প্রমানিত। পাঞ্জাব ও রাজস্থানের এইসব অঞ্চল প্রাচীন সরস্বতী যা বর্তমানে অবলুপ্ত নদীর ধারে ছিল। ঋকবেদে সরস্বতী নদী সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয়েছে ও ‘নদীমাতা’ বলে অভিহিত হয়েছে। কাজেই সিন্ধু সভ্যতার সাথে বৈদিক সভ্যতা যুক্ত ছিল। বর্তমান গবেষণায় দেখা যাচ্ছে সরস্বতী যা একসময় বিশাল এক নদী ছিল তা ধ্বংস হয়ে যায় ১৫০০ খ্রীঃ পূঃ এর আগেই। সেক্ষেত্রে ঋকবেদে সরস্বতীর উল্লেখ আশ্চর্যজনক কারণ এই তত্ত্ব অনুযায়ী আর্যদের ভারতে আগমনের সময় খ্রীঃ পুঃ 1500 শতাব্দী।
.আর্যরা আক্রমন করেছে, এর কোনো প্রত্নতাত্মিক প্রমাণ নেই।।
আর ঋগ্বেদে আর্য বলতে উন্নত মনস্ক মানুষ ও সংস্কারি মানুষদের বোঝায়,,মহান ও গৌরব অর্থে।।
আন আনাস অর্থ উন্নত নাক নয়।।
আর এ ব্যাপারে একটি কথা বলে রাখি, সিন্ধু সভ্যতায় দেবদেবীর সাথে ঋগ্বেদের মিল আছে৷ তাই এটাই প্রমাণিত ঙে, সিন্ধু স্যতা আর্যরাই গড়েছিলে। আর সিন্দুধ ও হরপ্পা খনন করে কোনো অস্ত্র ও যুদ্ধের প্রমাণ ও চিহ্ন পাওয়্ যায় নি।।তাই আর্যরা আক্রমন করেছে এই তথ্য ভুল। প্রথম মানবসভ্যতার শুরু হয় আফ্রিকা থেকে,, আর তারাই ভারত সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েযায়৷ বরফযুগে তাদের বর্ণ শ্বেতবর্ণে রুপান্তর গঠে। এটা প্রায় ৬০০০০ বছর পূর্বে ঘটেছ। আর তারাই বিবর্তন ও মভ্যতার পরিবঅতনেন সাথে মাথে আনুমানিক ৮-১০০০০ বছর আগে সিন্ধু সভ্যদা গড়ে তুলোছিলো। এই তত্বের ভিত্তিতে যদি আর্যরা বহিরাগত হয়,,তাহলে আফ্রিকা ছাড়া সকল দেশের নাগরিকদের পূর্বদপুরুষ বহিরাগ,, কারণ, শুরুতে মানবসভ্যতা আফ্রিকা থেকেই ছড়িয়েছে।।
আর যদি তারা অন্য দেশ থেকেই এখানে এসে থাকে তাহলে অন্য কোথাও তাদের সভ্যতা নগড় থাকার কথা,, কিন্তু তা ভারদেবর্ষ জুড়ে আছে। আর ঋগ্বেদে অসুর শব্দের অর্থ অনেক,,অসুর শব্দে মনের খারাপ গুণকেও বোঝায়, আবার দেবতা ও মনের বিশৃদ্ধতা ও পবিত্রতা বোঝায়। আর সিন্দ্ধু মভ্যতায় যদি এত যুদ্ধ ও কলহ থাকত যেমনটা ঋগ্বেদে আছে,,তাহলে যুদ্ধাস্ত্র ও দেহাবশেষ থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি কেন?
এটা ধ্বংসেরকারণ হিসেবে ভূমিকম্, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রমাণ দিয়েছে প্রত্নতাত্মিকরা। আর বেদের মন্ত্র রুপক, অসুর মানে কখনও মনের অশুভ রুপকে,,আবার কখনও আসন্ন বিপদকে বুঝিয়েছে।তাই এসব অমুর ও দেবতাকে দেহধারী বানানো মূর্খতা৷ কারণ বাস্তবে এরকম সম্ভব নয়। আর রাক্ষস বলতে মানুষের মাংস খেকো জঙ্গলবাসীদের বোঝাতো। এর প্রমাণ মহাভারতেও আছে। যদি আর্য বলতে তারা জাতি বুঝিয়ে অনার্যদের সাথে যুদ্ধ করতো,,তাহলে সে সময়কার প্রত্নতাত্মিক নিদর্শনে সেরকম অস্ত্র সশ্ত্র ও হতাহতেে দেহাবশেষ থাকার কথা। কিন্তু তা নেই।আর কোনো আক্রমনাত্মক জাতি এত নিখুত একটি উন্নত চিন্তাদ্বকরার গ্রন্থ তথা বেদ রচনা কিভাবে করতে পারে? প্রমাণ তো এটাই বলে যে তারাই এই সভ্যতাকে উন্নত করেছিলো োএবং সংস্কার করে একটি রুপ দিয়েছিলো। তারা কৃষিভিত্তিকব্যবস্থার সূচনানকরেছিলো,তার প্রমান বেদেই আছো। আর বেদে কোথাও বলা নেই তারা বহিরাগত। তারা একটি শান্তিপ্রিয় জাতি ছিলো। এটাই প্রমাণিত। আর যদি অন্যদেশ থেকে তারা এখানে আগত হতো তাহলে তাদের মূল ভুকন্ডের কথা বেদে উল্লেখ করত,,কিন্দু ঋগ্বেদে সপ্তসিন্ধুর কথা স্পষ্ট আছে। অর্থাৎ তাদের কেন্দ্র এই ভারতবর্ষই।
বাংলাদেশের মুসলমান রা কিন্তু বাইরে থেকে আসা নয় ,তারা সুলতান দের বংশ ধর ও নয় । তারা এই দেশের ই ধর্ম change করা মানুষ , কেউ bodhdho থেকে ধর্মান্তরিত কেউ হিন্দু থেকে । মুসলমান মানেই আমরা আরব থেকে আসা নই ।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে- সাঁওতাল, কোল, মুণ্ডা, দ্রাবিড়ের মতো কালো লোকগুলোই ছিলো এই ভারতভূমির আদি বাসিন্দা, আর এরা ছিলো আফ্রিকান নিগ্রো জনগোষ্ঠীর অংশ বা বংশধর এবং এদের গায়ের রং ছিলো কালো। আধুনিক মানুষ হিসেবে দৈহিক গঠন লাভের পর এরা আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে প’ড়ে, কোনো কোনো দল যেকোনোভাবেই হোক ভারতে পৌঁছে যায় এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকে। হোমো স্যাপিয়েন্স নামের যে আধুনিক মানুষ, এদের সবারই উৎপত্তি আফ্রিকার কালো মানুষ হিসেবে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই কালো মানুষগুলোর কিছু কিছু ফর্সা হয়ে শ্বেতাঙ্গ বা মঙ্গোলিয়ান হয়ে গেলো কিভাবে ?
আসলে এরা আফ্রিকা থেকে বের হওয়ার কিছু পরেই পতিত হয় বরফ যুগের কবলে, যে বরফযুগ, মূলত প্রভাব ফেলেছিলো বর্তমানের- ইউরোপ, রাশিয়া এবং চীন এলাকায়। এই বরফযুগের কবলে পড়ে কালো মানুষ গুলো মরতে মরতে যে কয় জন বেঁচে থাকে তারা ফর্সা হয়ে যায়; কারণ, গায়ের কালো রং এর পেছনে মূল কাজ করে মেলানিন নামের একটি উপাদান, যার শরীরে যত মেলানিন, সে তত বেশি কালো; এই মেলানিন আবার সূর্যের রোদের তাপের সাথে সাথে দেহে বৃদ্ধি পায়; আর যেহেতু বরফ যুগ মানেই সূর্যের রোদের অনুপস্থিতি, সেহেতু সেই কালো মানুষগুলোর শরীরে মেলানিন কমে গিয়ে কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই তারা অনায়াসেই ফর্সা তথা শ্বেতাঙ্গ হয়ে উঠে।
বর্তমানে, অস্ট্রেলিয়া এবং তার আশেপাশে এবং আমেরিকায় যেসব শ্বেতাঙ্গ বাস করে- তাদের আদিভূমি ইউরোপ; কিন্তু রাশিয়া এবং চীনে উদ্ভূত শ্বেতাঙ্গরা রাশিয়া এবং চীনের আশে পাশেই আছে। কলম্বাস ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কার করার পর সেখানে কিছু লোকজনের দেখা পায়, এরা আসলে রাশিয়ার শ্বেতাঙ্গদের অংশ বা বংশধর; কারণ, রাশিয়ার সাথে উত্তর আমেরিকার ভূখণ্ড একসময় যুক্ত ছিলো, যেমন যুক্ত ছিলো অস্ট্রেলিয়ার সাথে বর্তমান ভারতের ভূখণ্ড; কোনো এক ভূ প্রাকৃতিক কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতের অংশটি ঠেলে চলে এসে মূল ভূখণ্ডের সাথে ধাক্কা লাগাতেই গড়ে উঠে হিমালয় পর্বতমালা এবং সেই একই সময় আলাদা হয়ে যায় উত্তর আমেরিকা ও রাশিয়া।
যা হোক, রাশিয়ার যে শ্বেতাঙ্গদের উদ্ভব হলো, এরা ছিলো সাইবেরিয়ার দিকে এবং প্রায় ১০ হাজার বছর আগে সেখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ায়, এই লোকগুলো সেখানে আর টিকতে না পেরে গরম এলাকার খোঁজে, বর্তমান আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত এলাকাকে অতিক্রম করে চলে আসে ভারতের দিকে এবং সিন্ধু নদের তীরে গড়ে তুলে সিন্ধু সভ্যতা; যে সভ্যতায় উচ্চারিত হয় প্রথম বেদ মন্ত্র এবং এরাই আর্য নামে পরিচিত। এই ভাবে আর্যরা ভারতে আসে। খ্রীঃ পূঃ 1500 সালে ইউরোপ থেকে কোনো জনজাতি ভারতে প্রবেশ করেনি। ওই সময় বড় কোনো অভিপ্রয়াণের কোনো প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়নি। প্রায় এক লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগরে স্থানান্তরিত হবার প্রমাণ আছে। সেখান থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে তারা। কিন্তু এই প্রক্রিয়া আনুমানিক 60000 বছর আগে হয় এবং তার পরে আর কোনো জনজাতির অনুপ্রবেশ ভারতে ঘটেনি। আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে এক পৃথক ভারতীয় জনজাতির উন্মেষ ঘটে। নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যাতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে 60000 বছর ধরে ভারতে অন্য কোনো বড় মাপের বহিরাগত জনজাতি আসেনি। নৃতত্ত্ববিদ ডঃ বি এস গুহ প্রাগৈতিহাসিক মানব কঙ্কাল ও আজকের কঙ্কাল গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে ভারতীয় জাতিতে মোট ছয় রকম জাতির মিশ্রন ঘটেছে।
1. Negrito 2. Proto – Australoid 3. Mongoloid 4. Mediterranean 5. Western Brachycephate 6. Nordic
পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে খুব বড় সংখ্যায় মানুষ স্থানান্তরিত হয়ে ইউরোপে চলে যায়। আর তাই ভাষাগত সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ইউরোপের সভ্যতা ভারতীয় সভ্যতার অবদান বলা যেতে পারে।
আর্যদের ভারতে আসার যে কাহিনী বললাম, সেটাকে আপনি যদি বহিরাগত বলে বিবেচনা করেন, তাহলে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া পৃথিবীর সকল দেশকে এই বিবেচনা করতে হবে যে, তাদের পূর্বপুরুষরা বহিরাগত। কারণ, আফ্রিকা ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশে তো মানুষের উদ্ভব হয় নি। শুধু তাই নয়, এইভাবে বহিরাগত এর ব্যাপারটি বিবেচনা করলে, আপনি নিজেও পৃথিবীতে বহিরাগত; কারণ, এক সময় আপনি এই পৃথিবীতে ছিলেন না, আপনাকে আনা হয়েছে বা আপনি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এসেছেন। এই সূত্রে আর্যরা ভারতে বহিরাগত নয়, কারণ, তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সিন্ধু এলাকায় প্রবেশ করেছিলো এবং সেই ভূমিকেই তারা নিজের মাতৃভূমি বিবেচনা করে তার উন্নতি বিধানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি সভ্যতা নির্মান করেছিলো এবং তারা কখনো বাইরের কোনো দেশে সম্পদ পাচার করে নি বা নিজেরাও যায় নি। কিন্তু মুসলমান এবং ইংরেজরা স্পষ্টভাবে ভারতে বহিরাগত, কারণ তারা এসেছিলো এই ভূখণ্ড দখল করে লুঠপাট করে খেতে।
এর পরের প্রশ্ন হচ্ছে, আর্যরা কি ভারতের আদি বাসিন্দাদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলো ?
পরাজিত করার প্রশ্ন আসে তখনই, যখন সেখানে আগে থেকেই কিছু থাকে। ভারতের আদি বাসিন্দাদের কী এমন ছিলো যে, আর্যরা তা দখল করার জন্য তাদেরকে যুদ্ধে পরাজিত করতে যাবে ? তাদের কি কোনো সভ্যতা ছিলো, না সম্পদ ছিলো ? আর্যরা এসেই তো তাদের জ্ঞান বুদ্ধি পরিশ্রম দিয়ে প্রথম সভ্যতা তৈরি করেছিলো।
কেউ কেউ বলতে পারেন আর্যরা এসেছিলো ভূখণ্ড দখল করতে।
কিন্তু ৮/১০ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে কি লোক সংখ্যা এত বেশি ছিলো যে, তাদেরকে লড়াই করে কোনো ভূখন্ড দখল করতে হবে ?
ভূখন্ড দখল করতে, যুদ্ধ ও অস্ত্রসামগ্রীর দরকার হয়। অথচ সিন্ধু সভ্যতায়, এরকম কোনো প্রমাণ মেলে নি।
এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ভারতের আদি বাসিন্দাদের পাশে আর্যরা এসে জাস্ট অবস্থান নিয়ে তাদের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো, তাদের এই শান শওকত দেখে ভা্রতের অন্য আদি বাসিন্দারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে এবং তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করেছে এবং আস্তে আস্তে তাদের সাথে মিশে গেছে; এখনও যেমন গ্রামের লোক অনুসরণ বা অনুকরণ করার চেষ্টা করে শহরের লোকদের এবং গরীব দেশ অনুসরণ বা অনুকরণ করে নিজেদের উন্নত করার চেষ্টা ক’রে থাকে ধনীদেশগুলোকে দেখে।
এখানে আর একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে, আর্যদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে ভারতের আদি বাসিন্দাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির কিন্তু কোনো সংঘাত ছিলো না; কারণ আদিম মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এবং বর্তমান থেকে ৩ হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবীতে একটাই ধর্ম ছিলো, আর সেটা সনাতন মানব ধর্ম। একারণেই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাচীন সভ্যতা ছিলো মূর্তি পূজারী এবং একারণেই ইউরোপে এক সময় চালু ছিলো স্বস্তিকা চিহ্ন। সুতরাং আর্যরাভারতে এসে যে, ভারতের আদি বাসিন্দাদেরকে মেরে কেটে তাদের জায়গা জমি দখল করে তাদের উপর তাদের বিশ্বাস চাপিয়ে দিয়েছে, যেমন করেছিলো মুসলমানরা, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
http://sonatonvabona.blogspot.com/2017/08/blog-post_24.html
এই তথ্যের ভিত্তিতে- ‘মুসলমানরা ভারতে বহিরাগত’, এই কথার কাউন্টার হিসেবে কোনো কোনো সেকুলার বলে তাহলে আর্যরাও ভারতে বহিরাগত। কিন্তু আর্যরা ভারতবর্ষে আসার প্রক্রিয়া প্রায় ৬০০০০ হাজার বছর আগে শুরু হয়,এবং আনুমানিক ৮০০০-১০০০০বছর আগে একটি উন্নত সভ্যতা তথা সিন্দ্ধু সভ্যতা গড়ে তুলে।, আর মুসলিমরা আছে মাত্র ১ হাজার বছর। তাহলে ভারতের উপর কাদের দাবী বেশি ? তাছাড়া আর্যরা ভারত থেকে কখনো বাইরে কোনো সম্পদ পাচার করে নি, বরং নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নির্মান করেছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ এক সভ্যতা; এর বিপরীতে মুসলমানরা ভারত থেকে শুধু লুঠপাট করেই নিয়ে যায় নি, মুসলিম শাসকদের খিলাফতের নিয়মানুযায়ী ভারতের মুসলিম শাসকরা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ পাঠিয়েছে- মক্কা, সিরিয়া, ইরাকের খলিফার দরবারে, নাজরানা হিসেবে- যা ইংরেজদের ভারত থেকে ব্রিটেনে সম্পদ পাচারের কয়েক শত গুন বেশি।
যা হোক, আর্যরা ভারতে বহিরাগত, এই তত্ত্বের উদ্ভাবক জার্মান দার্শনিক ম্যাক্সমুলার ( ১৮২৩-১৯০০)। ম্যাক্সমুলার ভারত সম্পর্কে ব্যাপক ভাবে গবেষণা করেছিলো এবং ঋগ্বেদের ইংরেজি অনুবাদসহ ভারত ও এর অধিবাসীদের সম্পর্কে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছিলো। তার এই মেধার প্রতি নজর পড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। তারা, মুলারের ঋগ্বেদের অনুবাদ সহ অন্যান্য গ্রন্থ তাদের ছাপাখানা থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করে। কিন্তু এর আগে থেকেই উচ্চারিত হচ্ছিলো, ইংরেজরা ভারতে বহিরাগত, তাদের ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। এই মনো-সাংস্কৃতিক যুদ্ধে হিন্দুদেরকে পরাজিত করার জন্য ইংরেজরা কাজে লাগায় ম্যাক্সমুলারের মেধাকে। ম্যাক্সমুলারকে দিয়ে তারা লিখায়, ভারতে আর্যরা বহিরাগত, এর মাধ্যমে, ভারতে ইংরেজরা বহিরাগত, এই তথ্যকে ইংরেজরা চাপা দিতে পারে এবং মনো-সাংস্কৃতিক যুদ্ধে হিন্দুদেরকে পরাজিত করতে পারে;
আরও অনুসন্ধান দরকার। কোন সঠিক সিদ্ধান্ত ই আমরা পৌছাতে পারি নাই।
আমরা সেদিনের বাবরি মসজিদের উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস জানতে পারিনি। আর্যদের উৎপত্তিস্থল নিয়ে ঐতিহাসিকদের বিবাদ থাকতেই পারে।
অধ্যাপক ব্রান্ডেনস্টাইন কোনাে বর্তমার পাদদেশের স্টেইপ তৃণবৃত অঞ্চলকে আর্যদের আদি বাসস্থান বলেছেন। সম্ভবত, এই অঞ্চলটিতে রাশিয়ার ইউরাল পর্বতের কিরঘিজ তৃণভূমি অঞ্চল ছিল আর্যদের বাস। এই অঞ্চল থেকে আর্যদের একটি শাখা পশ্চিমে আসে। পরে এই শাখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে একটি ভাগ ইরানে অপরটি ভারতে প্রবেশ করে। এই অভিমত অধিকাংশ পণ্ডিত গ্রহণ করেছেন।
আর্য সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশুনা করতে চাই ! কি বই পড়া যেতে পারে ?
ভোলগা থেকে গঙ্গা, প্রদেশে প্রাকৃতজন
বামপন্থীদের লেখা ইতিহাস কোনভাবেই নিরপেক্ষ নয় ৷ বামপন্থী ইতিহাস লিখকরা তাদের দলিয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ইতিহাসকে ব্যবহার করে ভুল পথে পরিচালিত করে ৷
এর একটা নজির এই লেখায় দেখতে পাচ্ছি পরিষ্কারভাবে ৷
//জ্যোতির্বিদ রাজেশ কোচাহার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ‘বেদাঙ্গ জ্যোতিষ’ গ্রন্থের বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে,এই গ্রন্থে সর্বদীর্ঘ দিন ও ক্ষুদ্রকালীন রাতের যে তথ্য রয়েছে,তার অনুপাত করলে হয় ৩ঃ২।এই প্রকার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অঞ্চলের সম্ভাব্য অবস্থান হতে পারে ৩৫ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা।একমাত্র হরপ্পা সভ্যতার শোরটুগাই ছাড়া আর অন্য কোন অঞ্চল এত উচ্চ অক্ষরেখায় অবস্থিত নয়//
তাহলে সামগ্রিকভাবে ভারতীয়রা আর্য হতে পারে না কেন ?
সঞ্জীব সান্যালের বক্তব্য ঐতিহাসিক মহলে স্বীকৃতি পায়নি।এ বিষয়ে এখনও যথেষ্ট চর্চার প্রয়োজন আছে।আর সবশেষে বলি যে,আমি আদৌ বামপন্থী নই বরং ঘোরতর দক্ষিনপন্থী।
সঞ্জীব সান্যালের “ল্যান্ড অব সেভেন রিভার্স” পড়ে অলরেডি মাথা ঘুরছে। তাই আপনার শেষের কথাগুলো মানতে পারছিনা, যাস্ট শিশুতোষ মনেহলো। কারণ বইটাতে অধিকাংশই অকাট্য প্রমান।
আপনাকে একটু ইন্ডিয়ান বাম ঘেষা বলে মনেহচ্ছে। আশাকরি মাইন্ড করবেননা।
অতুল সুর ও মনে করেন আর্যরা বর্বরোচিত ভাবে মহেঞ্জোদারো সভ্যতা ধ্বংস করেছে। এ বিষয়ে, শুধু তাই ই নয়, কিভাবে অনেক অনার্য দেবতা যেমন শিব আর্য দেবতায় পরিণত হয়েছে, ওনার অনেক বইয়েই লেখা আছে। এছাড়া নিরোদ সি চৌধুরীও এ নিয়ে লিখেছেন। ওনার মতে মধ্য এশিয়া থেকে বিভিন্ন গ্রূপ বিভিন্ন দিকে চলে যায় – এর কারণেই প্রাচীন গ্রিক, জার্মান, এশিয়া মাইনর, পারস্য আর ভারতীয় আর্যদের অনেক দেব দেবতাই একই রকম, কোনো ক্ষেত্রে ভিন্ন নাম, কখনো দেব-দানবের স্থান পরিবর্তনে। এছাড়া অনেক রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ মনে করেন আলতাই নামক জায়গাটি আর্যদের প্রথম ঘাঁটি।
এখনও বিষয়টি আমার কাছে সম্পূর্ণ পরিস্কার হয়নি। বুঝেছি— অনেক পড়তে হবে। তবে বুঝার সূত্র কিছুটা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, মন্তব্য পড়ে বৈদিক ও হিন্দু ( সনাতন) ধর্মের সম্পর্কটিও গোলমাল লাগছে নতুন করে।
এগুলো ভুল তত্ব, সিন্ধুসভ্যতায় কোনঁ প্রমাণ যাওয়া যায়নি আর্যদের আক্রমনের।।এমরকি সেরকমঅস্ত্র শস্ত্রেরও কোনো চিন্হ পাওয়া যায়নি।।
অপরদিকে বেদে দেবতা ও অসুর বলতে মানুষের মনের দুইরকম মানসিকতার রুপক অর্থ হিসেবে বলারহয়েছে মাত্র। এখানে অসুর ও দেবতা কখনোই দেহদারী বোঝায়নি। দাই দেবতা অসুর দ্বন্দব এটা মিথ্যা পৌোণিক গল্প যা রুপক অর্থে প্রচলিত মাত্র। বেদে এরকম অনেক ধাঁদাও রুপক আছে। আর ধর্ম বলতে তারা ন্যায় ও সত্যকে বোঝায়,,ঋগ্বেদে বলেছে সবার আগে মানুষ হও ও অন্যকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলঁ। এমনকি কৃষভিত্তির সমাজ উন্নয়ের ব্যবস্থার কথাও আছে,,সেই দিক থেকে বিচার করলে কোনো উগ্র ও াাক্রমনাত্বা জাতি কি নতুন সমাজ উন্নয়নে এত নিখুত ও স্থির বুদ্ধির পরিচয় দিতে পারে? চন্দ্র, সূর্য, জীবের উৎপত্তি, পৃথিবীর আকার আকৃতির সংজ্ঞাদেওয়া এসব বৈজ্ঞানিক চিন্তাদ্বারা ও হবেষনার অনেক প্রমাণ আছে ঋগ্বেদে,, এত নিখুত তথ্য সুদীর্ঘ চিন্তা ও গবেষনার দ্বারাই সম্ভব যা কোনো স্থির বুদ্ধির মানুষের দববারাই করা যায়। তাহলে তারা আক্রমনাত্মক হয় কিকরে? আর বেদে তো বলেনি কেউ উচু কেউ নিচু। বরং সকল মানুষকে সমান দৃষ্টিতেদেখার আহ্বানআছে বেদে।
আরেকটি তথ্য তুলে ধরুন । অনার্য দের উপর আর্জ দের অত্যাচার। সিন্ধু সভ্যতা ধবংস থেকে এক্লব্যের আঙ্গুল কাটা, এবং সুত পুত্র পরিচয় এর জন্য কর্ণের সারা জীবনের অপমান। এবং অনার্য জাতী গুলীর প্রতিভা , এগুলিও সামনে আসুক।
আরেকটা ব্যাপার অনেকে জানতে চাই , “চার্বাক দর্শন” ব্যাপার টি এবং বৌদ্ধ দর্শন এই ব্যাপারটি সামনে আনুন।
———————- সকলকে ধন্যবাদ
মুলত বেদে যিনি বরুন তিনি আবেস্তার আহুর মজদা’র সাথে সমজাতীয়।কিন্তু বরুন আর ইন্দ্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা থাকায় পার্সিরা বরুন নামটিকে বাদ দিয়ে দেয়।তাজিকিস্তানের যে ব্যাপারটা উল্লেখ করলেন,সেটা আমার আগে জানা ছিল না।খুব উপকৃত হলাম, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
০১
অসাধারণ আলোচনা। খুব সংক্ষিপ্ত কিন্তু গোছালো…
০২
একটা খটকা আছে; আবেস্তায় বরুণকে নেতিবাচক নাকি ইন্দ্রকে নেতিবাচক হিসাবে দেখানো হয়েছে? আমার যদ্দুর মনে পড়ে আবেস্তা/পার্শিয়ানরা ইন্দ্রবিরোধী
০৩
বৈদিক দেবতা এবং নীতির সাথে আবেস্তার বিরোধীতার আরেকটা ইতিহাস পেয়েছি আমি। তাজাকিস্তানএর পশুরজন আর নিম্ন মাদ্রজন অঞ্চলে আর্যদেরই অন্য গোষ্ঠীর উপর সেনাপতি ইন্দ্র হত্যাযজ্ঞ চালান (ইন্দ্রের পদ তখনো সেনাপতি)। এতে বাস্তুচ্যুত পশুরজনের লোকজনই পরে পার্শব/পরশু/পার্শিয়ান হিসাবে পরিচিত হন। এই পার্শিয়ানদের একটা গোত্র ছিল ‘স্পিতামা’। এই স্পিাতামা গোত্রের লোক ছিলেন বৈদিক মুনি ভৃগু এবং আবেস্তার জরথ্রুস্ট। এই পার্শিয়ানরা/পার্শব/পরশুরা বরাবরই ইন্দ্র বিরোধী ছিল। ইন্দ্রপক্ষের পুরোহিত ঋষি অঙ্গিরা (ভৃগুর সমসাময়িক) থাকায় পার্শবরা সর্বদা তার স্কুলের বিরোধী ছিলেন। কোথাও একটা জায়গায় পড়েছিলাম যে আবেস্তায় খারাপ পথ/নীতি হিসেবে যে ‘অঙরা মইনু’ কথাটা আছে সেইটা দিয়ে মূলত ঋষি অঙ্গিরা নির্দেশিত পথকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবার আবেস্তার ভালো পথের নাম ‘স্পেন্ত মৈনু’ যা মূলত স্পিতামা গোত্রের নীতিকে ইঙ্গিত করে। ভৃগুর বংশধর পরশুরাম কুড়ালের কারণে পরশু নন বরং পার্শিয়ান/পার্শব হিসাবেই নাকি পরশুরাম (পারস্যরাম) নামে পরিচিত ছিলেন
বৈদিক ধর্ম কোন মূর্তিতে বিশ্বাসী নয়।তেমনই কোন মন্দির বা দেবালয়ের তথ্যও বৈদিক সাহিত্যে নেই। সর্বোপরি বৈদিক ধর্ম শ্রৌত যজ্ঞের কথা বলে অর্থাৎ এমন এক বৃহদাকার যজ্ঞ যেখানে সমাজের বিপুল অংশ সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করবে।সবচেয়ে বড় কথা বেদে শ্রেণী বিভক্ত সমাজের কথা বলা নেই। এক্ষেত্রে ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের পুরুষ সুক্ত মূল বেদের অংশ নয়।এটি বহু পরবর্তীকালে সংযোজিত হয়। তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ঐতিহাসিকরা মূলত ঋগ্বেদকেই প্রাধান্য দেন, কারন এটির প্রকৃতি প্রায় মৌলিক।
হিন্দু ধর্ম কি?? নাকি সনাতন ধর্মীকে হিন্দু ধর্ম বলা হয়। হিন্দু শব্দটি উৎপত্তি কি করে
বৈদিক ধর্মের যে রূপ তা আজ আর হিন্দু ধর্মে তেমন ভাবে অনুসৃত হয় না।
বৈদিক ধর্মের আসল রূপ কি ,আর এর সাথে বর্তমান হিন্দু ধর্মের কি পার্থক্য এ বিষয়ে কি কোনো লেখা পেতে পারি ?
“তাহলে হিন্দু ধর্ম কি আর্যদের ধর্ম? অভারতীয় ধর্ম?”
Yes Tahmina, I know it from British Encyclopedia.
তাহলে হিন্দু ধর্ম কি আর্যদের ধর্ম? অভারতীয় ধর্ম?
এটা খুব বিতর্কিত বিষয়। বর্তমানে হিন্দু ধর্মের যে রূপ প্রচলিত রয়েছে তা হল পুরাণভিত্তিক। অন্যদিকে বৈদিক ধর্মের যে রূপ তা আজ আর হিন্দু ধর্মে তেমন ভাবে অনুসৃত হয় না।আসলে আধুনিক হিন্দু ধর্মের পটভূমি রচনা করেছিল আর্যদের বৈদিক ধর্ম।পরবর্তীতে পৌরাণিক আদর্শের সমন্বয়ে হিন্দু ধর্ম আরও বিকাশ লাভ করে।
লেখাটি সংক্রান্ত কিছু বইয়ের নাম যদি উল্লেখ করতেন তবে উপকৃত হতাম। ধন্যবাদ।
The Aryans: Myth and Archaeology by M.K.Dhavalikar
The Quest for the Origins of Vedic Culture: The Indo-Aryan Migration Debate by Edwin Bryant.
In Search of the Indo-Europeans: Language, Archaeology and Myth by J.P Mallory
The Aryan Debate: Language, Archaeology and Myth by Thomas R Trautmann
আর্যরা অভারতীয় বা ভারতীয়, হিন্দুত্যবাদীরা যে কর্মপরিচালনা করছে তাতে কি বিবেদ সৃষ্টি হয়না, কারন ধরুন যদি তারা মনে করে আর্যরা ভারতীয় তাহলে তারা আবার পুরো পৃথিবী তারা নেতৃত্ব দেবে, আচ্ছা যারা এই ধারনার বাইরে আছে মানে যারা মনে করে আর্যরা অভারতীয় বিশেষ করে এর মূল দাবীদার ইউরোপীয় বা পারস্যের এরা মেনে নিবে?
ইতিহাস খোঁজে রক্তের সন্ধান করা, কেন?
আমার পূর্বপুরুষ মহান ছিল তাই আমিও মহান?
মূর্খতা এখানেই, মহানতা রক্তের মধ্যে নয় কর্মের মধ্যে, মাটির মধ্যে নয় মানুষের মধ্যে…
তাই একই রক্তে নায়কও আছে খলনায়কও আছে, একই মাটিতেও
উবায়দুর রহমান রেজা
বেদে কোথায় বার্চ গাছের উল্লেখ আছে তা জানতে ইচ্ছুক।