লিখেছেনঃ আহমেদ শাহাব
না ফোটা ফুলের কলি মাইকেলেঞ্জেলো, একশত পঞ্চাশ
মিলিয়ন মানুষের পক্ষ থেকে
আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। একশত পঞ্চাশ
মিলিয়ন মানুষ আমরা শোকাহত অনুতপ্ত এবং লজ্জিত।
এই বিমুগ্ধ জ্যোৎস্নার নগরে
আমরা তোমাকে স্বাগত জানাতে পারিনি।
আমদেরই অসচেতনায় এই আলো
আঁধারের দৃশ্যময় রঙ্গমঞ্চের খুবকাছে থেকেই তোমাকে
ফিরে যেতে হলো।
পৃথিবীটা কি অদ্ভুত সুন্দর মাইকেলেঞ্জেলো কি চমৎকার
চাঁদ উঠে আকাশে।জমিন ছিঁড়ে নদী বয়ে যায়
সমুদ্রের দিকে।সকাল দুপুর বিকেল আর রাত্রিতে পৃথিবীটা
অদ্ভুত রঙ পাল্টায়
কখনো অন্ধকারের গাঢ় চাদর কবিতার মতো চরাচরে
ছড়িয়ে দেয় অপার রহস্য।
আর চাঁদটা যখন ষোলকলায় পূর্ণ হয় তখন দুধের মতো
জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় চারদিক।
কমবেশী একশত বিশ দিনের ওপাড়ে দাঁড়িয়ে তুমিও
প্রতিক্ষায় ছিলে জ্যোৎস্নায় সাঁতার কাটবে বলে।তোমার পা
দুটি তৈরি হচ্ছিল জমিনে হামাগুড়ি
দিতে। পৃথিবীতে তোমার প্রথম কান্নার জন্য গলাটাকেও
হয়তো ধীরে ধীরে তৈরি করে
নিচ্ছিলে। কিন্তু সেই একশত
বিশটি দিনই কি নিষ্টুর অনন্ত হয়ে গেল মাইকেলেঞ্জেলো।
না, হলি আর্টিজানের কালো রাত্রির সেই
বিভীষিকার কথা মনে করবনা আর।তুমি একদিক দিয়ে
ভাগ্যবান মাইকেলেঞ্জেলো
কারণ তোমাকে দেখতে হয়নি তোমারই মতো অবিকল
কিছু প্রাণী
একটি আনন্দ সমাবেশকে মুহুর্তে কি করে এক করুণ
বধ্যভূমিতে পরিনত করে ফেলে।কিভাবে জিঘাংসার
তলোয়ার নিরস্ত্র নিরপরাধ
একদল মানুষের ধড়ের উপর বসিয়ে দেয় হিংস্র চোবল।
সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে শ্বেত মর্মরে
তোমার জন্য একটি এফিটাফ খোদাই করতে গিয়ে বার
বারই আমি হোঁচট খাচ্ছি কারণ তোমারতো
কোনো জন্ম তারিখ নেই।তোমার জন্মই হয়নি অথচ মৃত্যু
হয়ে গেল।জন্মহীন মৃত্যুর অদ্ভুত এক
স্বত্তাধিকার নিয়ে পৃথিবীর
তোরন থেকেই তোমার সকরুণ প্রত্যাবর্তন।তোমার কোনো
সমাধি নেই মাতৃ জঠরেই
তোমার শুরু আর সেখানেই শেষ।এক অন্ধকার কবরের
ভেতর
আরেক কবর। তাহলে কোথায় বসাব আমাদের শোকগাঁথা
লেখা শ্বেত মর্মর? তোমার জন্ম নেই বয়স
নেই শুধু আছে হীম শীতল
মৃত্যু আর সাথে বিখ্যাত একটি নাম ‘মাইকেলেঞ্জেলো’।নির্মল
শারিরীক কবিতা দিয়ে তোমাকে
একদিন যারা নির্মাণ করেছিলেন তারা
কি চেয়েছিলেন তুমিও মাইকেলেঞ্জেলোর মতো বড় শিল্পী হবে।
ঈশ্বরের প্রতিবিম্ব আঁকবে ক্যানভাসে? তুমিও কি
মাইকেলেঞ্জেলোর
ছবির মতোই ঈশ্বরের মুখ আকঁতে? যে মুখের দিকে
তাকালেই মনে হয় এক জ্যোতির্ময়
ব্যক্তিত্বের আভা যেন বিচ্ছুরিত মানুষ তিনি
অথচ মানুষের চেয়ে অধিক কিছু। মনে হয় ঈশ্বরের বুঝি
এরকমই হওয়া উচিৎ।অথচ আমি জানি
শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো আজ বেঁচে
থাকলে তার এই অমর চিত্রকর্মের একটি সংশোধিত সংস্করণ
আমরা পেতাম। মাইকেলেঞ্জেলো ঈশ্বরের দীপ্তিমান
মুখটিকে কেটে নিয়ে
সেখানে বসিয়ে দিতেন বহুমুখ বিশিষ্ট এক পৌরাণিক
রাক্ষসের মাথা যার প্রতিটি
চোখ দিয়ে টিকরে বেরুচ্ছে দোজখের গন গনে আগুন
আর দাঁত থেকে ফুটায় ফুটায়
ঝড়ছে টকটকে তাজা রক্ত।যে রক্ত
তোমার কচি কোমল হৃদপিন্ডটাকে সচল রেখেছিল এতদিন।
কবিতা টি পড়ে মন টা খারাপ হয়ে গেল। না দেখা শিশুটির জন্য কষ্টের অনুভুতি হল… মাইকেল এঞ্জেলো যেখানেই আছে ভাল থাকুক। শুভকামনা লেখককে।
মন খারাপ হয়ে যায়
পৃথিবীর নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে – মোসলমানদের হাতে মানুষের খুন।
ভাল হয়েছে ?
২২ নয় ২৩ জনকে আল্লাহু আকবর হুঙ্কারে জবাই করা হয়েছিলো। ২৩ তম মানুষটি ছিলো মায়ের পেটে। জল্লাদগুলো মা সিমোনা মন্টি’কে যখন জবাই করে মেরে ফেললো তখন মার সাথে সাথে শিশুটিও মারা গেলো। মন্টি’র ভাই জানিয়েছে এই অনাগত শিশুর মা তার নাম রেখেছিলো মাইকেল এঞ্জেলো। ফিরে যাচ্ছিলো ইতালির ম্যাগলিয়ানো সাবিনাতে; পরিবারের সবার কাছে। আনন্দঘন ডিনারের মাধ্যমে বিদায় নিতে এসেছিলো গুলশানের রেস্তোরাঁয় মন্টি তার বন্ধুদের কাছ থেকে শিশুপুত্রকে নিয়ে আবার ফিরে আসবার আকাঙ্খায়। জিহাদি দু’পেয়ে জন্তুগুলো মা ও শিশুকে চির বিদায় করে দিলো নৃশংস জবাইয়ে। রাত পোহাতেই বাংলাদেশের প্রধান উদ্বোধন করে দিলো চার লেনের মহা সড়ককে। আনন্দ গর্জন আর হাততালিতে ঢাকা পড়ে গেলো বেদনার তীব্রতা। আহ।
আবেগকে নাড়া দিয়েছে।