রিজন র্যালি আমেরিকাতে সব ধরনের ধর্ম নিরেপেক্ষ এবং নাস্তিক সংগঠনদের যৌথ র্যালি। প্রায় চারদিন ধরে ( ২ থেকে ৫ই জুন) ক্যাপিটল হিল সংলগ্ন এলাকায়, নানান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তচিন্তার প্রসারের জন্য যারা লড়ে যাচ্ছেন, তারা সবাই একে অপরকে জানার সুযোগ পেলেন। সাথে সাথে প্রফেসর লরেন্স ক্রাউস, বিল নায়িই, ক্যারোলিন পোরকো, জুলিয়া সুইনি, পেন জিলেট, এন্থনি পিন, জেমস র্যন্ডি, আয়ান হ্যারিসদের সাথে সাক্ষাত দেখাও বিরল অভিজ্ঞতা অনেকের কাছে। মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই এই যে আমেরিকার রাজনীতিতে নাস্তিকদের প্রভাব বাড়ানো। আমেরিকাতে এখন ২১% লোক কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না এবং গত দুই দশকে এই সংখ্যাটা দ্বিগুন হয়েছে। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে আমেরিকাতে নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু হবে, এই নিয়ে সন্দেহ নেই। কারন সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানির মতন উন্নত সভ্যদেশগুলিতে বহুদিন আগেই নাস্তিকরা সংখ্যাগুরু। যে দেশগুলিতে এখনো কোন ধর্মালম্বি লোকেরা সংখ্যাগুরু-সেটা ইসলাম বা হিন্দু বা খ্রীষ্ঠান যা কিছুই হোক না কেন-সেই দেশটি যথেষ্ট সভ্য এবং মানবিক হবে না। কারন ধর্মের রাজনীতি তাদের পেছনে টানবে। এটা আমেরিকার জন্যও সত্য। এখানকার ইভ্যাঞ্জেলিক্যাল খ্রীষ্ঠানরা সর্বদাই দেশটাকে পেছনে টানতে বদ্ধপরিকর। ইনফ্যাক্ট এটা নিয়ে সব থেকে বেশী কাজ করছে ফ্রিডম ফ্রম রিলিজিওন ফাউন্ডেশন। যারা আমেরিকার সংবিধানের ফার্স্ট এমেন্ডমেন্ট যা একই সাথে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও ধর্ম নিরেপেক্ষতার রক্ষাকবচ ( Religion and Expression. Congress shall make no law respecting an establishment of religion, or prohibiting the free exercise thereof; or abridging the freedom of speech, or of the press; or the right of the people peaceably to assemble, and to petition the Government for a redress of grievances )।
আমি যতগুলো বক্তব্য শুনলাম এর মধ্যে এফ এফ আর এফের কার্যকলাপই সব থেকে বেশী উৎসাহব্যঞ্জক-যারা সংবিধানিক রক্ষাকবচ হাতে নিয়ে একাধিক রাজ্যসরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছে-যেখানেই আমেরিকার রাইট ঊইং রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্রীয় বা শিক্ষাক্ষেত্রে খ্রীষ্ঠান ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করছে। এবং দরকার হলে আইনি লড়াই এ নামছে। ভারত এবং বাংলাদেশে অবশ্য সংবিধান, আইন সবই জোলো। ফলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতি-সবটাই ধর্মের বিষ্ঠা সেবনেই সিদ্ধ। কিন্ত আইডিয়া পাওয়া গেল। গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে, রাষ্ট্রকে ধর্ম মুক্ত করতে গেলে আইনি লড়াই এ নামতেই হবে। ভারতে এটা যদিও বা সম্ভব-বাংলাদেশে তাও না। আইনজীবিকেই মেরে দেবে।
ডেভ সিলভ্যারম্যানের ফায়ার ব্রান্ড এথিজম বা মিলিটান্ট এথিজিম নিয়ে মারকাটারি লেকচার শোনার অভিজ্ঞতা হল। ডেভ আমেরিকান এথেইস্ট এসোশিয়ানের প্রেসিডেন্ট। উনার বক্তব্য ধর্মীয় ব্যাক্তিরা যেভাবে নিজেদের ধর্মের প্রচার করে এথিস্টদের ও উচিত, সর্বত্র নিজেদের মতাদর্শকে জাহির করা-অবশ্যি যুক্তির মাধ্যমে। ডেভকে আর কে বোঝাবে-ওসব আমেরিকাতে সম্ভব। বাংলাদেশে করলে সরাসরি চাপাতির তলায়। ইনফ্যাক্ট আমেরিকাতেও সম্ভব কি না-তাই নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।
এই র্যালির একটা মূল থিম-আমরা যারা ধর্ম এবং ইশ্বরে বিশ্বাস করিনা-তাদের সগর্বে এটা সর্বত্র বলতে হবে-লিখতে হবে। ভয়েস মাস্ট বি হার্ড!! কারন অধিকাংশ নাস্তিকই শামুকের মতন নিজেদের লুকিয়ে রাখে -নিজের নিধার্মিক বিশ্বাসের কথা পরিবার, বন্ধু,সমাজকে জানাতে ভয় পায়। পাছে ধর্ম বিশ্বাসের জন্য বিচ্ছিন্নতায় না ভুগতে হয়।
এসব কিছুই ছাপিয়ে গেল বন্যার কিনোট এড্রেসে। বন্যা শুরু করলো, পাঁচই জুনে ঘটা বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদি ঘটনায় -পুলিশ সুপার বাবুল আখতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ইসলামিক জঙ্গীদের হাতে নিহত। তার অপরাধ, তার স্বামী শক্ত হাতে জঙ্গী দমন করছিলেন। বন্যা তথ্যের মাধ্যমে আমেরিকার প্রভাবশালী প্রগতিশীল শ্রোতাদের কাছে আস্তে আস্তে তুলে ধরলেন জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা। সাথে সাথে এটাও জানালেন কিভাবে বর্তমান সরকার জঙ্গীদমনের বদলে প্রগতিশীল ব্লগারদেরই জেলে ভরার ব্যবস্থা করেছে। কেন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার আসলে ইসলামিক জঙ্গীদের মদতদাতা।
সাথে বন্যার ভাষনে আস্তে আস্তে উঠে এল কিভাবে ধর্ম, সাম্রাজ্যবাদ এবং ধনতান্ত্রিক কাঠামো একসাথে হাত ধরে কাজ করছে-মানুষের বিরুদ্ধে। ধর্মটাই শুধু সমস্যা না। সাথে সাথে পরিবেশ বিপর্যয়, সাম্রাজ্যবাদি উচ্চাশা, তেলের জন্য যুদ্ধ-এসব কিছুই উগ্র ধর্মান্ধদের সাথে যুক্ত হয়ে পৃথিবী এবং সভ্যতাকে ধ্বংশ করতে উদ্যোত।
বন্যার ভাষন শেষে, পাঁচ মিনিট ধরে চললো স্টান্ডিং অভেশন। হল ভর্তি সবাই দাঁড়িয়ে ক্রমাগত হাততালি দিয়ে চলেছে-শ্রোতারা এতটাই বিমুগ্ধ। এটা আমার জন্যেও বিরল অভিজ্ঞতা। বক্তব্যর শেষে বন্যার সাথে কথা বলার জন্য বিরাট লাইন লেগে গেল। সবাই ওর সাথে কথা বলতে চাইছে, নইলে সেলফি তুলতে চাইছে! যা বুঝলাম আমদের বন্যা এখন, আমেরিকাতে সাউথ এশিয়ান ভয়েস অব রিজন!! আমরা মুক্তমনার পক্ষ থেকে সবাই ওর জন্যে গর্বিত।
র্যালিতে এবং পরে ডিনারের গিয়ে পরিচয় হল ইরানিয়ান ফেমিনিস্ট মারিয়াম নামাজির সাথে। এই হচ্ছে সেই মারিয়াম যিনি শরিয়ার প্রতিবাদে নগ্ন হয়ে নিজেদের দেহের ওপরে লিখেছিলেন “নো শরিয়া”। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন মারিয়াম। এখন শরিয়া বিরোধি ইন্টারনেট রেডিও চালান-যা ইরানের যুবতীদের মধ্যে খুব প্রিয়।
যা বুঝলাম বাংলাদেশ এবং ভারতের নাস্তিকদের পলিটীক্যাল প্ল্যাটফর্ম দরকার। অর্গানাইজেশন দরকার।
Can I get a copy of Banna”s (excuse me ,if the spelling is wrong) speech please ? I shall have dozens of supporters in Canada. Let me know please. Thanks.
Bye the way, a platform for atheists in Bangladesh is still unthinkable. The offspring and first growing generation of jamat is unbelievably grown with the blessing of BNP and Awami League, as they both used them to suppress the leftists.
Hi Azizul Malik, For the full transcript of the key note address please click this http://enblog.mukto-mona.com/2016/06/07/keynote-address-at-reason-rally-2016-in-washington-d-c/
ল্পাটফর্ম তৈরি করার পরিবেশ কি বাংলাদেশে আছে?
আপনার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে অমত পোষণ করলেই আজকে আপনার পোস্টের প্রত্যেকটি লাইনের সাথে একশভাগেরও উপরে সহমত।
আমাদের নাস্তিকদের প্লাটফর্ম দরকার ভীষণ ভাবেই দরকার। তবে তা শুধু উপমহাদেশে ত অবশ্যই পাশাপাশি সারা বিশ্বেই প্রয়োজন।
বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে পলিটিকাল কারেক্টনেসের নাম করে ধর্মবাদীরা স্পেশালি মুসলমানেরা যেভাবে অন্যায্য সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে তা সত্যিই চিন্তার কারণ। কানাডায় ত লিবারেল জমানায় এটা আশংকাজনক প্রায়।
তাই পলিটিকাল প্লাটফর্ম আশু দরকার। কিন্তু একসাথে হলেও একসাথে থাকা যাবে ত? ইগো প্রবলেম আর অনৈক্য ত প্রগতিশীল দের চিরকালীন সঙ্গী।
“যা বুঝলাম বাংলাদেশ এবং ভারতের নাস্তিকদের পলিটীক্যাল প্ল্যাটফর্ম দরকার। অর্গানাইজেশন দরকার।”
সহমত