০১. গত কয়েক দশকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাগুলোর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী-ন্যাট্যকর্মী সোহাগী জাহান (তনু) ইস্যু।
তনু হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা-কুমিল্লা ছাড়াও দেশজুড়ে হচ্ছে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন। তনুর জন্য তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া কলেজ তো বটেই, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলা সদরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছেন, সাধারণ মানুষ যোগ দিচ্ছেন তাদের প্রতিবাদে, শিক্ষক-অভিভাবকরাও সমর্থন জানাচ্ছেন তাদের বিক্ষোভে। হয়েছে ঢাকা-কুমিল্লা সড়ক অবরোধ; কান্দিরপাড়ের সমাবেশের ছাত্র-জনতা জানিয়ে দিয়েছেন, তনু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার না হলে তারা ঘরে ফিরবেন না।
অন্যদিকে, তনুর জন্য গণজাগরণ মঞ্চ ঢাকা-কুমিল্লা রোডমার্চ করেছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক ঘন্টা ক্লাস বর্জন করে যুক্ত হয়েছে মানববন্ধনে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে হয়েছে শিক্ষা ধর্মঘট, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক গড়ে তুলেছেন রাজপথের আন্দোলন।
০২. এছাড়া অনেকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তো বটেই, মূল ধারার মিডিয়ায় এখন অনেকটা কাভারেজ তনু হত্যা। তাকে নিয়ে লেখাজোকা-টক শো-আলোচনাও হচ্ছে বিস্তর।
বলা ভালো, মিডিয়ায় তনু হত্যার বিষয়টি ফলাও করে প্রকাশ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে কুমিল্লাবাসী। তনুর সহপাঠী, তার নাট্যসহকর্মীরা, তার সতীর্থরা রাজপথের আন্দোলন গড়ে তুলে প্রথম বিষয়টি মিডিয়ার নজরে আনে। তারপর এটি দেশজুড়ে তো বটেই, এথন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও নিয়মিত খবর।
সবশেষ ‘জস্টিস ফর তনু’ হ্যাশট্যাগের পর সোশ্যাল মিডিয়া এখন ছেয়ে গেছে ‘নো ওয়ান কিলড তনু’ হ্যাশট্যাগে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তনুর হিজাবে ঢাকা কচি মুখায়বসহ বেদনাবিধুর ছোট ছোট স্টিকার।
এর কারণ আর কিছুই নয়, তনুর জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআিই) ও র্যা ব যেসব ছায়া তদন্ত করেছে, তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তনুকে ধর্ষণের আলমত পাওয়া যায়নি। এতেই নতুন করে ঘি ঢালা হয়েছে চলমান ক্ষোভে।
০৩. লক্ষ্যণীয়, খবরে প্রকাশ, কুমিল্লা ময়নমতি সেনা নিবাসের ভেতর ২০ মার্চ রাতে একটি ঝোপের ভেতর তনুর অর্ধ নগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মাথা ছিল থেতলানো। তনুদের আবাস সেনানিবাসের ভেতর। তাকে উতক্তকারী হিসেবে সেনা বাহিনীর একজন নিম্নপদের কর্মকর্তার ছেলের নামও গণমাধ্যমে এসেছে। ছেলেটি ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। অবশ্য তার মানে আবার এই নয় যে, এই ছেলেটিই তনুর ধর্ষক ও খুনি।
বরং তনু ইস্যুতে জনমনে ক্ষোভের কারণ এই যে, সেনা নিবাসের ভেতর একটি সংরক্ষিত অঞ্চলে অমন বিভৎস্য খুন হয় কী করে? সেখানে রয়েছে বিস্তর মিলিটিরি পুলিশের (এমপি)সার্বক্ষণিক প্রহরা, অসংখ্য সিসি ক্যামেরা, চেকপোস্ট ইত্যাদি। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে হত্যা-ধর্ষনের আলামত নষ্ট করার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান তো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আগেই আগাম আশঙ্কা করেছিলেন, এ হত্যার আলামত নষ্ট করা হতে পারে। এটিও নতুন করে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে সাধারণের মনে।
০৪. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আইজিপিসহ উদ্ধর্তন পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) শেষমেষ মুখ খুলেছে, তারা বিবৃতিতে বলেছেন, সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে তনু হত্যার বিষয়ে পুলিশি তদন্তে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
অথচ আইএসপিআর’এর বিবৃতিতে তো সেনা নিবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য নিরাপত্তা রক্ষীদের চাকরিচ্যুত বা জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা নেই। তাদের বিচারের মুখোমুখি বা বন্দি করা তো দূরের কথা! বিবৃতিতে নেই সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত পরিচালনা করার কথা! সেনা নিবাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেরও প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিও তো তদন্তকারী পুলিশবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার কথা নেই। পাশাপাশি পুলিশি তদন্তে নিরাপত্তা রক্ষী মিলিটারি পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তাদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ (অক্ষুন্ন আছে তো?) জব্দ করার কথাও জানা যায়নি।
সেনা নিবাসের ভেতর ছাত্রী হত্যা ও ধর্ষণের বিষয়ে আইএসপিআর যখন ‘তদন্তে সহযোগিতা’র কথা বলে দায় সারে, তথন ধরেই নিতে হবে এই তনুর জন্য দেশে-বিদেশে যতো আন্দোলন-বিক্ষোভই হোক না কেনো, যতোই তদন্ত কীর্তি ইত্যাদি হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সবই হবে নিস্ফল, কালক্ষেপন মাত্র।
অর্থাৎ, শেষ বিচারে এ হত্যার বিচার আরো কোনোদিনই হবে না, এ ধর্ষন ও হত্যা রহস্যের উন্মোচনও হবে না। কারণ সেনা বাহিনী স্পষ্টতই নিজের দায় এড়িয়ে সব দায় পুলিশি তদন্তের ওপর চাপাতে চাইছে। আর কে না জানে, সেনা বাহিনী হচ্ছে রাষ্ট্রের সেই হোলি কাউ, যাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার কোনো প্রক্রিয়া সাধারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নেই।
০৫. ঠিক একই কারণে ২০ বছর আগে (১২ জুন, ১৯৯৬ সাল) সেনা বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে পাহাড়ে অপহৃত হিল ইউমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের সুবিচার আজো হয়নি। তিনি রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ির বাঘাইহাটের নিউ লাইল্যাঘোনা গ্রামে নিজ বাসা থেকে অপহৃত হয়েছিলেন।
আর গত ২০ বছরে এ অপহরণের রহস্য উন্মোচন তো দূরের কথা, অপহরণের জন্য অভিযুক্ত বাঘাইহাট সেনা নিবাসের লেফটেনেন্ট ফেরদৌস ও তার সহযোগি ভিডিপি সদস্যদের কোনো পুলিশি তদন্তেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি। বরং এ মামলাটির তদন্ত পুলিশ কর্মকর্তা বছর বছর পাল্টেছে, কল্পনা চাকমার গ্রামের নদী কাচালং-এ গড়িয়েছে অনেক জল।
ওই অপহরণের তথ্য-সংবাদ করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, সে সময়ও আইএসপিআর’র বদলে দৃশ্যমান হয়েছে সেনা বাহিনীর ২৪ ডিভিশন, পদাতিক। পাহাড় ও সমতলে পাহাড়ি-বাঙালিদের অব্যহত আন্দোলনের মুখে তারা হেলিকপ্টার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে লিফলেট বিলি করে কল্পনা চাকমার সন্ধানদাতার জন্য ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, যদিও অপহরণের এসব ফৌজদারী ঘটনায় পুরস্কার দেয়া সেনা বাহিনীর এখতিয়ারভূক্ত নয়। আর ওই অপহরণের সময় সে সময় তাদের বিবৃতিতে উল্টো সাবেক গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনী সদস্যদের ওপর প্রচ্ছন্ন দায় চাপানোর চেষ্টা চলেছিল।
অন্যদিকে, কল্পনা চাকমা, তথা আদিবাসী ইস্যুতে কর্মরত কয়েক ডজন মানবাধিকার সংস্থার কেউই স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে, আলোচিত এই অপহরণের মামলাটিকে রাঙামাটি জেলা আদালত থেকে ঢাকার হাইকোর্টে স্থানান্তর পর্যন্ত করেনি। কল্পনার জুম চাষী (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ চাষাবাদ) হত-দরিদ্র পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা তো দূরের কথা। তারা দায় সেরেছে, শুধুমাত্র মামলার শুনানীর দিনে ঢাকা থেকে উড়ে গিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি ফটো-সেশন করে বা দু-একটি বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে।
অর্থাৎ অনেক বছর ধরেই দাতাগোষ্ঠির সুবাদে আদিবাসী/মানবাধিকার/নারী অধিকার ইত্যাদিও বেশ ভাল একটি ব্যবসায়িক উপকরণ, সেখানে আত্মোন্নয়ন যথেচ্ছ হলেও মানবাধিকারের উন্নয়নের ধারা চুঁইয়ে নীচের দিকে গড়িয়েছে সামান্যই।
০৬. বটম লাইনে: সেনা নিবাস বা হিজাব— নিরাপত্তার কথিত এই দুই প্রতীক আসলে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্খ, এটি তনু ইস্যুতে দিন দিন মূর্ত হচ্ছে। কল্পনা বা তনুর সুবিচারও রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ, কারণ এর নেপধ্য শক্তি সামরিক জান্তার কেশাগ্র স্পর্শের সাহসও কারো নেই; আসলে তারাই আরেকটি রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের নেপথ্য রাষ্ট্র, বলা ভাল— দৃশ্যমান রাষ্ট্র, সরকার, ক্ষমতা ও দেশের তারাই অদৃশ্যমান ভাগ্য বিধাতা এবং নিয়ন্ত্রক।
__
*এই নোটটি এরআগে অন্য সাইটে প্রকাশিত। *
লিখাটা অসাধারণ। কল্পনা চাকমা কে নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখলে ভালো হত। আমার জানামতে ঢাকায় কল্পনা চাকমার একজন সহযোগী বাস করেন। যিনি বিভিন্ন সময়ে কল্পনার সাথে আন্দোলন করেছেন। প্রথম আলোতে একবার কল্পনাকে নিয়ে লিখেছিলেন।
দুঃখিত, বেশ খানিকটা দেরিতে বলছি।
কল্পনা চাকমাকে নিয়ে কিন্তু মুক্তমনাতেই একাধিকবার লিখেছি, এই লেখকের নামের ওপর ক্লিক করে সেসব নোট সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
এছাড়া এই সুতোয় আরো কিছু নোটপত্র রয়েছে, দেখার অনুরোধ রইলো: http://biplobcht.blogspot.com
আপনাকে ধন্যবাদ।
একদম ঠিক তাই……এর জন্য নেন :rose: ফুলটি।
নীলাঞ্জনা আপুর সাথে সহমত পোষন করছি। তবে আমি আবার তার মত রাখডাক না রেখে বলতে পারিনা। চারদিকে এত শান্তির মাঝে যদি অশান্তি শুরু হয়ে যায়।
আচ্ছা,নীলাঞ্জনা আপনি এমন ঠোটকাটা কথা বলতে পারেন ? একটু রাখঢাক রেখে কথা বললে কি হয় না ? তা না হলে আমাদের বাংলাদেশীদের আবার দুষ্টু নিকৃষ্ট ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে।আর এমন আঘাতের জন্য আপনাকে ৫৭ ধারায় জেল-জরিমানাসহ অনাদায়ে সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হবে ।
যেখানে আমাদের মাথা কাটা পড়ছে রাষ্ট্র ও সরকারের প্রদত্ত উৎসাহে সেখানে একটু ঠোঁটকাটা না হয় গেলই। জেল-জরিমানার ঝামেলা তো নেই বাংলাস্তানে। চলছে জবাই। সরকার আনন্দিত তাতে। এত আনন্দ ক্রিকেটে জিতলেও হয় না সরকারের।
শুধু হিজাবের কারণে তনুর ঘটনায় প্রতিবাদ হচ্ছে, এমনটি না-ও হতে পারে। আমার মনে হয়, পোশাক এখানে খুব একটি ভূমিকা রাখেনি। বরং সেনা নিবাসের ভেতর সুরক্ষিত অঞ্চলে নির্মম ছাত্রী খুনের ঘটনা তার সহপাঠীদের ক্ষুব্ধ করেছে। সেই সূত্রে ক্ষোভ ছড়িয়েছে পুরো দেশের শিক্ষার্থীদের ভেতর। জনতার যোগ দিয়েছে এসব ছাত্র বিক্ষোভে।
আর কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনাতেও অব্যহত সেনা-সেটেলার নির্যাতনের প্রতিবাদই প্রকাশ পেয়েছে। কল্পনা ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তাকে উদ্ধারের দাবিতে সে সময় হিল উইমেন্স ফেডারেশন তো বটেই, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও পাহাড়ি গণপরিষদ সম্মিলিত রাজপথের আন্দোলন গড়ে তোলে। তিন সংগঠনের হরতালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চারজন ছাত্র মারাও যান। এরই সূত্রে সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পাহাড় থেকে সমতলে।
অর্থাৎ, ভিন্ন প্রেক্ষাপটের দুটি নারী নির্যাতনের যোগসূত্র হচ্ছে সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত ক্ষোভ।
পুর্ণিমার ইস্যুতে সাধারণ শিক্ষার্থী বা ছাত্র সংগঠন বা কোনো রাজনৈতিক দল মাঠে না নামায় এ নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়নি। যদিও তেমনটিই কাম্য ছিল। আসলে একেকটি আন্দোলনের একেক রকমভাবে জনরোষ প্রকাশ পায়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই ভালো বলতে পারবেন।
নীলাঞ্জানা ও সায়ন, আপনাদের ধন্যবাদ।
কতো তনু, কতো কল্পনা অপহৃত হয়, ধর্ষিত হয় বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত। এটাই তো বাংলাদেশে স্বাভাবিক। বিচার হওয়া অবান্তর। তনুর জন্য বাংলার মানুষ আজ যেভাবে বিচার চাইছে, আন্দোলন করছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। কিন্তু পূর্ণিমার জন্য কেন এভাবে প্রতিবাদ হয়নি? হয় না? তনু হিজাবি না হয়ে যদি শর্ট ও স্লীভলেস পরা হতো তাহলে কি এভাবেই বিচার চাইতো বাংলাদেশীরা?
শতভাগ সহমত। বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখিও না কোনো আশাও নেই। তবু মানুষ যে প্রতিবাদ করছে যদিও ভীষণভাবে সিলেক্টিভ এটুকুই সান্ত্বনা।
এটাকে একদিক থেকে সান্ত্বনা বলা যায় বৈকি। কিন্তু অন্যদিকে এটা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতা।
অসাধারন একটি লেখা হয়েছে। নিরাপত্তা দিতে এই রাষ্ট্রের আদৌ সংগঠন আছে কি ?!!
তারা কার নিরাপত্তা দিচ্ছে নাকি তারা?
লেখককে ধন্যবাদ, এখনো কল্পনা চাকমাকে ভুলে না যাবার জন্য। আর একটি ব্যাপার বাংলাদেশে তনু হত্যার বিচার একদিন হলেও হতে পারে; কিন্ত কল্পনা হত্যাসহ অসংখ্য আদিবাসী নারী ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার বিচার কোনোদিনই সম্ভব নয়। এ আশা করাটাই অরণ্যে রোদন মাত্র। আজ পর্যন্ত হয়নি ভবিষ্যতেও হবার কোন কারণ নেই।
পাহাড়িদের সামনে এখন দুটো পথই খোলা হয় হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদ, নির্যাতনের শিকার হয়ে ধীরে ধীরে নিঃশেষিত হওয়া অথবা স্বাধীনতার জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর সংগ্রাম শুরু করা। অবশ্য সমতলের আদিবাসীদের জন্য শুধু প্রথম পথটাই একমাত্র পথ। সংখ্যাগুরু বাংগালিদের ( মুসলমান) কাছ থেকে কিছু আশা করা বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়।
চরম নির্যাতীতের পক্ষেই এমন চরম উক্তি সম্ভব। তাই আপনার বক্তব্যটি আপাতদৃষ্টে উগ্র মনে হলেও এটিই হয়তো বাস্তবতা, সময়েই তা নির্ধারিত হবে।
তবে সব মানবাধিকার লংঘনের বিচার শেষ পর্যন্ত চাইতে হবে, বিচারের আশায় শুধু নয়, শাসকগোষ্ঠীর ব্যর্থতা তুলে ধরতেই এটি জরুরি।
পাহাড়ের একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে বলছি, সেখানের সংঘাতটি কিন্তু জাতিগত, ধর্মীয় নয়, মুসলিম-বৌদ্ধ তো নয়ই, তবে মৌলবাদী আগ্রাসনও আছেই।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
আপনার সাথে একমত আমি। বাংলাদেশে আদিবাসীদের যে অবস্থা আবহমানকাল থেকে চলে এসেছে বর্তমানে নাস্তিকদেরও সেই একই অবস্থা। সরকারের মদদপুষ্ট মুসলিমদের হাতে প্রকাশ্য জনতার ভীড়ে, নিজ বাসস্থানে জবাই হয়ে পড়ে থাকো। বিচারের প্রশ্ন অবান্তর।
ধর্ম একটি উপাদান ত অবশ্যই। তবে বাংগালি জাত্যাভিমান ও পাহাড়িদের আন্দোলনের ব্যর্থতা, কৌশলগত ভুলও অন্যতম একটি কারণ। শান্তিচুক্তি যার সবচেয়ে বড় নিদর্শন। যা কোন সুফল বয়ে আনেনি।
কম্প্রোমাইজড মানবাধিকার কর্মীদের কথা বললেন, কম্প্রোমাইজড জার্নালিস্টদের কথাও বলা উচিত ছিল। এই ইস্যুতে আপনার মত দুয়েক লেখাই দেখতে পাই।
বিদেশে যে সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করে, দেশের ভিতরে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে তাদের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। অলস দেশপ্রেমের বেড়াজাল ভেদ করে জনকল্যাণ মুখী ও জবাবদিহি সেনাবাহিনী এখন সময়ের দাবী। বিশ্বের কোন দেশ আর রাস্ট্র পরিচালনায় সামরিক হস্তক্ষেপ দেখতে চায় না।সর্বশেষ মিয়ানমার থেকেও তাদের গুটিয়ে নিতে হয়ে।রাষ্ট্রের ভেতর রাষ্ট্র অগ্রহনযোগ্য।
কম্প্রোমাইজড জার্নালিজম কিন্তু চাকরির অন্তর্ভূক্ত। আর কে না জানে, চাকর যোগ ই প্রত্যয়, মিলে তবেই হয় “চাকরি”।
তবে সাংবাদিকের নিজস্ব রাজনীতি, দূর্নীতি তো থাকেই। মুক্তমনাতেই লিখেছিলাম — “একেই বলে সাংবাদিকতা?” অনুগ্রহ করে দেখবেন?
বাকি কথার সঙ্গে এ ক ম ত।
লেখাটি সময়োপযোগী, যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় তো বটেই ।কারণ এসব নিয়ে অনেক অনেক বেশি লেখা দরকার। তনু ইস্যুতে কল্পনার কথা প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপন করার মতো বোধ ও ইচ্ছাশক্তি বাংলাদেশে মাত্র কয়েকজনের আছে, এর মধ্যে বিপ্লব রহমান একজন।এখানে কল্পনা ও তনু নারী। আর সারা বিশ্বই নারীর যুদ্ধ ক্ষেত্র।( নারীপক্ষ’র স্লোগান) , সে যে অবস্থার নারীই হোক, তার অবস্থান এক।
কিন্তু *এই নোটটি এরআগে অন্য সাইটে প্রকাশিত। * নোটের অংশ কোনটুকু? অন্য সাইটে প্রকাশিত লেখা কি মুক্ত-মনায় প্রকাশ এর নীতিমালাকে সমর্থণ করে ?
দিদি, তোমার পর্যবেক্ষণের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
লক্ষণীয়, কল্পনা চাকমাদের অবস্থান অন্য নারীদের চেয়ে নাজুক। নারী, সংখ্যালঘু ও দরিদ্র –এই তিন ধরনের শোষণ তাদের ওপর বিদ্যমান।
আর নোটের গুরুত্ব বুঝেই সেটি আবারো এখানে প্রকাশিত। নীতিমালায় আটকালে এডমিন দেখবেন, খেদ থাকবে না।