(এই প্রবন্ধটি একটি বৃন্দ প্রয়াস, লেখাটি যৌথ ভাবে রচনা করেছেন সুব্রত শুভ এবং আরিফ রহমান)
আজ বিজয় দিবস, বিজয়ের ৪৪ তম দিবস। অল্প কিছুদিন আগেই পাকিস্তান সরকার দাবী করেছে ১৯৭১ সালে নাকি কোন গনহত্যা হয় নাই। আজ আমরা বড় পরিসরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে হত্যাকান্ডের কিছু গল্প শুনবো। আসুন পাক বাহিনীর নির্মমতার গনহত্যার অজানা কিছু গল্প শোনা যাক।
এক.
মালতিয়া গ্রামের সীমানা থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গাড়ির গতি মন্থর হয়ে যায়। রাস্তায় এত মৃতদেহ, ওগুলো না সরালে গাড়ি নিয়ে এগুনোই যাচ্ছে না। পাকিস্তানী সৈন্যরা কয়েকজন লোক ডেকে আনে এবং অস্ত্রের মুখে তাদের বাধ্য করে ওখান থেকে চৌরাস্তা ও চৌরাস্তা থেকে ডুমুরিয়ার দিকে কিছুদূর পর্যন্ত রাস্তার উপরের লাশগুলো টেনে একপাশে সরিয়ে ফেলতে- যেন জিপ নিয়ে পাকিস্তানিরা ঐ পর্যন্ত যেতে পারে।
সেই গাড়ি আস্তে চলতে চলতে চৌরাস্তায় এসে থামে। কেশবপুর হয়ে যশোরের রাস্তায় এত লাশ যে, ওগুলো সরিয়ে যেতে অনেক সময় লাগবে। ডুমুরিয়া-খুলনা কাঁচা রাস্তার অবস্থাও একই। কিছু লাশ টেনে সরিয়ে জিপ ডুমুরিয়ার পথে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে কয়েক মিনিট। তারপর থেমে যায়। আবার ফিরে এসে চৌরাস্তায় থামে। ওদিকেও লাশের স্তূপ। যাওয়া যাবে না।
খেয়া পারাপারের জন্য কোন লোক নেই। ভদ্রার বুকে ডুবে আছে অনেক নৌকা, বহু মৃতদেহ। ভদ্রার তীরে পড়ে আছে অসংখ্য মৃতদেহ। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ছুটছে চৌরাস্তার দিকে। পাকি ক্যাপ্টেন এসেছে জিপ নিয়ে, সাথে কয়েকজন। হুকুম দিয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও অন্যান্য স্থানীয় নেতারা যেন অবিলম্বে তার সাথে দেখা করে।
রুমাল নাকে চেপে জিপে বসে আছে ক্যাপ্টেন। কড়া হুকুম, আজ সন্ধ্যার মধ্যে সব লাশ নদীতে ফেলতে হবে। সবাই একে অন্যের দিকে চেয়ে থাকে। কিন্তু ক্যাপ্টেনকে কিছু বলার সাহস পায় না কেউ…..
‘স্যার, এই অল্পসময়ে এত লাশ নদীতে ফেলা সম্ভব নয়।’
‘কিঁউ?’- বিশ্রীভাবে চিৎকার করে উঠে পাকি ক্যাপ্টেন।
কতজন লোক পাওয়া যাবে, ক্যাপ্টেন জানতে চায়।
‘পুরো এলাকা খুঁজে একশ’জন।’
‘একশ’ লোকই যথেষ্ট। কাজ শুরু কর।’
‘চার পাঁচদিন লাগবে স্যার।’
দুইজনের এক একটা দল দিনে বড়জোর ৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে।
ঘণ্টায় গড়ে ৬টা লাশ সরাতে পারে। ৮ ঘণ্টায় ৪৮ বা ৫০। খুব চেষ্টা করলে না হয় ৬০। এর বেশি কোনমতেই সম্ভব না।
‘ক্যায়া বক বক করতা হ্যয়’- ক্যাপ্টেন রেগে ওঠে।
‘লাশগুলো টেনে নদী পর্যন্ত নিয়ে যেতে সময় লাগবে। ২ জনের একটা দল বয়স্কদের ১টার বেশি লাশ নিতে পারবে না, ছোট ছেলে মেয়ে না হয় ৪/৫টা নিতে পারবে। নদীর লাশগুলো না হয় বাঁশ দিয়ে ঠেলে ঠেলে ভাটার টানে ছেড়ে দিলে সমুদ্রে চলে যাবে। কিন্তু ডাঙার লাশ সরাতে খাটুনি অনেক….
‘তব তো কাল তক হো না চাহিয়ে?
‘না, সাহেব, লাশ অনেক।’
‘কিতনা?’
মালতিয়া গ্রামের আশপাশ, রাস্তাঘাট, চুকনগর বাজার, পাতাখোলার মাঠ, বিল- এখানেই প্রায় ১০/১২ হাজার। নদীতে ৩/৪ হাজার। গাড়িতে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আসা দোভাষী বিষয়টা বুঝিয়ে বললে ক্যাপ্টেন বিশ্বাস করতে চায় না। জিপের সিটের উপর দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন দেখতে থাকে চারপাশ- আসলে লাশের সংখ্যা কত? কিছুক্ষণ দেখার পর ক্যাপ্টেন শান্ত-কণ্ঠে বলে, সে সোমবার বিকেলে অথবা মঙ্গলবার সকালে আসবে—
সূত্র: ‘মুক্তির সোপানতলে’
দুই.
একজন মানুষ সর্বোচ্চ কতজন মানুষকে হত্যা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
১০,
১০০,
২০০,
৫০০,
১০০০…?
আসলে সত্যিই অনেক ভালো মানুষ আপনি। পৃথিবী কতটা নির্মম সেটা এখনো জানা হয়ে ওঠেনি আপনার। অফিসিয়ালি একজন মানুষের হাতে সর্বোচ্চ হত্যা সংখ্যা ২,৭৪৬ এবং এই বিশ্ব রেকর্ডটির মালিক আমেরিকা সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট ডিলার্ড জনসন। মহান এই যোদ্ধা তার সৈনিক জীবনের বেশীরভাগ সময় কাটিয়েছে ইরাকে।
সত্যি বলতে অফিসিয়ালি সংখ্যাটা ২,৭৪৬ হলেও- আমার কাছে আরেকটা রেকর্ডের খবর আছে…
দিনটা ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের আট তারিখ
রাওয়ালপিণ্ডির সিএমএইচে এক তরুণ পাকিস্তানী অফিসারকে আনা হয়েছে
মানসিক চিকিৎসা করার জন্য…
“সে একাই প্রায় ১৪,০০০ মানুষকে হত্যা করেছে। এত এত লাশ দেখতে দেখতে সে পাগল হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের কথা মনে পড়লেই তার ক্রমাগত খিঁচুনি হচ্ছে এবং ঘুমিয়ে পড়লে দুঃস্বপ্ন দেখছে… তাকে ফিরে যেতে হবে হিন্দুদের শেষ করতে হবে…”
গল্পটা ক্যামন যেন বাড়াবাড়ি মনে হয় না…?
আসলেই আমাদের প্রজন্ম বড় বেশী নিরপেক্ষ…
মুক্তিযুদ্ধে পাকি বর্বরতা নিয়ে বাড়াবাড়ি তারা একেবারেই বরদাশত করে না…
হে প্রজন্ম…
কান খুলে শুনে রাখুন…
এই কথা কোন বাঙালী লেখক নিজের বইয়ের কাটতি বাড়ানোর জন্য লেখেননি। এটা লিখেছেন ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গওহর আইয়ুব, তার “Glimpses into the corridors of power”- বইতে। বইটার “স্পিলিটিং পাকিস্তান” অধ্যায়টা খুললেই খুঁজে পাবেন।
তিন.
১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন বিক্রম সিং ক্ষিপ্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে সাতক্ষীরার দিকে যাচ্ছিলেন। তার সাথে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মূসা সাদিক সহ অন্য কয়েকজন। হঠাৎ মাহমুদপুর ঘোনার মাঝামাঝি স্থানে তাঁর গাড়ির সামনে এসে দাড়ায় তিন কৃষক ও দুই বালক। যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আচমকা এই ঘটনায় সতর্কতার সাথে গাড়ি থামিয়ে ক্যাপ্টেন বিক্রম সিং জানতে পারলেন ঘটনা – কাছের একটি মসজিদে পাকিস্তানী খান সেনারা ঘাঁটি করে কয়েক মাস থেকে তাদের এলাকার ১১টি মেয়েকে আটকে রেখেছে। এরা মৃত না জীবিত তার কোন খবর তারা পাচ্ছে না।
সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেন বিক্রম সিং তার ফোর্স নিয়ে মসজিদের দিকে যান এবং কিছু দূর থেকে গুলি ছুড়েন, পাল্টা জবাব না পেয়ে তিনি মসজিদের কাছে গিয়ে মেয়েদের কান্নার শব্দ শুনতে পান। সাথে সাথেই তিনি বাঙালিদের ডেকে বললেন, সেখানে পাকিস্তানী সৈন্য নেই। এ কথা শুনে লোকজন হুড়মুড় করে মসজিদে ঢুকে দেখেন তাদের ১১ জন কন্যা মসজিদের মধ্যে বিবস্ত্র অবস্থায় একে অপরকে ধরে লজ্জা নিবারনের চেষ্টা করছে, আর অঝোরে কাঁদছে।
পাক সেনারা কোন সময় যে এখান থেকে চলে গেছে তা তারা জানেই না।
ক্যাপ্টেন বিক্রম সিং শিশুর মত কেঁদে ওঠেন।
কাঁদতে কাঁদতে নিজের মাথার পাগড়ি খুলে- পাশের লোকদের হাতে তুলে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে চলে যান গাড়িতে।
চার.
কুষ্টিয়ার কুমার খালির কাছাকাছি একটি ক্যাম্পে পাক বাহিনীর ধর্ষন সম্পর্কিত অন্যরকম একটি ঘটনা ঘটে।
একদিন পাকিস্তানী সৈন্যরা স্থানীয় রাজাকার কমান্ডারকে সঙ্গে নিয়ে মেজরের জন্য সুন্দরী মেয়েদের খোঁজে বের হয়। সমস্থ গ্রাম খোঁজে তারা কোন মেয়ের সন্ধান না পেয়ে পরে রাজাকার কমান্ডারের বাড়িতে খেতে আসে। এখানে এসে সৈন্যরা সেই রাজাকারের ঘরে তার ষোড়শী কন্যাকে দেখতে পায়। রাজাকারের বাড়িতে সৈন্যরা খাওয়া-দাওয়া শেষে রাজাকারকে ঘরের খুটির সঙ্গে বেঁধে রেখে তার স্ত্রী, বোন সহ বাড়ির অন্যান্য মহিলাদের ধর্ষন করে, যাওয়ার সময় সৈন্যরা রাজাকারের কন্যাটিকে সঙ্গে নিয়ে যায়।
কয়েক দিন পর এই কন্যার লাশ কচুরিপানা ভর্তি ঐ পুকুরে ভেসে থাকতে দেখা যায়।
পাঁচ.
পাকি বর্বরেরা প্রত্যেক মহিলাকে অবর্ণনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা দিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর তাদের হত্যা করে। ধোপা যেভাবে কাপড় কাচে সেভাবে রেললাইনের ওপর মাথা আছড়ে, কখনও দু’পা ধরে টান দিয়ে ছিঁড়ে দু’টুকরা করে হত্যা করেছে শিশুদের। স্বাধীনতার অনেকদিন পরেও সেখানে মহিলাদের কাপড়, ক্লিপ, চুল, চুলের খোঁপা ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে আমি আমার ছোট বোনের ফ্রকের এক টুকরো কাপড় খুঁজে পাই
-বিনোদ কুমার, নীলফামারী
ছয়.
আমাদের পাশের বাড়ির একটি মেয়ে। সদ্য মা হয়েছে, আট দিনের বাচ্চা কোলে। ঐ সময় সে বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়াচ্ছিলো। এমন সময় বাড়িতে আক্রমণ। ঘরে তখন কেউ ছিলো না। এরপর যা হবার তাই হলো, মেয়েটির উপর চলল অমানসিক নির্যাতন। এরমধ্যেই দুপুর গড়িয়ে এল, পাকিরা খাবার খেতে চাইল। ঘরে কিছু না থাকায় ক্ষেত থেকে বেগুণ এনে দিতে বলল। ভীত মেয়েটি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মেয়েটির আসতে দেরি হচ্ছিলো দেখে পাকিরা তার বাচ্চাকে গরম ভাতের হাঁড়িতে ছুঁড়ে দিয়ে ঘর থেকে নেমে গেল…
-ভানু বেগম, ছাব্বিশা, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল
সাত.
মার্চে মিরপুরের একটি বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে আনা হয় এবং কাপড় খুলতে বলা হয়। তারা এতে রাজি না হলে বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলে কে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।”
-মোঃ নুরুল ইসলাম, বাটিয়ামারা কুমারখালি।
২.
সাতটা ঘটনা বললাম কিন্তু আজ বিজয় দিবসে তো কেবল দুঃখের কথা বললেই হবে না। বলতে হবে আশার কথা বলতে হবে বীরত্বের কথা, বলতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। নির্যাতিত মানুষের তো আলাদা কোন ধর্ম থাকে না। তাই ৭১-এ আমাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিলো না। তখন আমাদের একটাই পরিচয় ছিল; আমরা নির্যাতিত! চুকনগরের গণহত্যা সম্পর্কে আমরা হয়তো অনেকেই জানি। চুকনগরের বধ্যভূমি নিশ্চুপ সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে। চুকনগরে গণহত্যা নিয়ে অনেক লেখা আছে তবে আজ আমরা জানবো চুকনগরের এরশাদ আলী মোড়লকে নিয়ে। Salil Tripathi’র লেখা “The Colonel who would not Repent: The Bangladesh war and its unquiet legacy” বইয়ের ‘The Night the killings began’ অধ্যায়ে লেখক লিখছেন চুকনগরের এরশাদ আলী’র ঘটনা। যিনি চুকনগর গণহত্যা নিজের চোখে দেখেন, পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন।
খুলনার উত্তরে ডুমুরিয়ার ছোট্ট শহর চুকনগর। ভারতের সীমান্তের কাছে হওয়ায় চুকনগর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এছাড়াও এই শহরটি বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই চুকনগরে অনেক রাজাকার গোয়েন্দাগিরি করতো এবং চুকনগরে বাদামতলা ঘটনা সৃষ্টির চেষ্টা করছিলো। এখানে পাঠকদের জানানোর জন্য বলে রাখা দরকার মুসলিম লীগ বাদামতলা নামক স্থানে একশ’র উপর মানুষকে হত্যা করেছিল। নিহতদের মধ্যে মাত্র ২৩ জনের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিলো, বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি কারণ অন্যরা ছিল ভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষ।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনগোষ্ঠী জীবন বাঁচানোর তাগিদে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যাবার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। মে মাসের মাঝামাঝি সময় বৃহত্তর খুলনার বাগেরহাট, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, কচুয়া, শরণখোলা, মংলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, চালনা, ফরিদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ভারতে যাবার উদ্দেশে রওনা দেয়। ভারতে যাবার জন্যে তারা ট্রানজিট হিসেবে বেছে নেন খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার চুকনগর শহরটিকে।
মোট কতজন চুকনগরে সমবেত হয়েছিল তা জানা যায়নি তবে অনেকে মনে করেন লক্ষাধিক মানুষ ভারত যাবার উদ্দেশ্যে সেদিন চুকনগরে জড়ো হয়। সারা রাত নির্ঘুম রাত কাটে শরণার্থী হতে যাওয়া এসব মানুষের। সকালে বিশ্রাম সেরে ভাত রান্না শুরু করেন তারা। কেউ চিড়ে-মুড়ি ও অন্যান্য শুকনো খাবার দিয়ে শরীরে চলার শক্তি সঞ্চার করে নিচ্ছিলেন। কেউ বা নিজের কাছে থাকা জিনিসপত্র বিক্রি করে ভারত যাবার অর্থ সংগ্রহ করছিল।
বেলা দশটার দিকে দুই ট্রাক সৈন্য চুকনগরে এসে হাজির হয়। এরশাদ আলী মোড়লের বয়স তখন ২৩ বছর। সে তার পিতা ও ভাইদের সাথে পাট খেতে কাজ করছিলেন। প্রথমে সে মেঘের গর্জনের মতন ট্রাকের শব্দ পায় কিন্তু পরক্ষণে শব্দের মাত্রা বাড়তে থাকে। যে মাঠে মানুষের সমাগম ছিল একটি ট্রাক সেই মাঠে এসে হাজির হয়। আরেকটি ট্রাক এরশাদ আলীদের দিকে আসল। এরশাদের ৬৫ বয়সী বৃদ্ধ পিতা তাদের ঘরে যেতে বলল যা মাঠ থেকে একশ মিটার দূরে অবস্থিত। এরশাদ থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু সে তার পিতার কথামতো বাড়ি ফিরে যায়। এরশাদ জানালার একটা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে যখন পাকিস্তানীদের কী করছে দেখার চেষ্টা করছিল। তার পিতা সৈন্যদের চলে যেতে বলছিলেন। এরশাদ আলীর পিতা চিকন মোড়ল চিকন মোড়ল হাতের কাঁচি নিয়ে সেনাদের দিকে তেড়ে যান। কিছুক্ষণ পরই বন্দুকের আওয়াজ শুনতে পায় এরশাদ আলী। গুলি শুরু হওয়া মাত্র এরশাদ একটি কাছের তলায় গিয়ে আশ্রয় নেন।
পরবর্তীতে সে ফিরে গিয়ে দেখতে পায় তার মা কাঁদছে কারণ তার পিতা ইতোমধ্যে মারা গেছেন। এদিকে খোলা মাঠে কোন উস্কানি বা সতর্কতা ছাড়া পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে হাজার হাজার মানুষ খুন হয়। দুপুর ৩টা-৪টা পর্যন্ত তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে থাকে। হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচার আশায় অনেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। তাদের অনেকেই ডুবে মারা যান। লাশের গন্ধে ভারি হয়ে যায় চুকনগর ও এর আশপাশের বাতাস। মাঠে, ক্ষেতে, খালে-বিলে পড়ে থাকে লাশ আর লাশ।
এরশাদ আলী শহরে গিয়ে দেখতে পান বেশির ভাগ বাড়ি খালি পড়ে আছে। অনেকেই ভারতের উদ্দেশ্যে চলে গেছে। তখন তিনি সেখানে একটি মেয়েকে দেখতে পেল যার বয়স ১১ বছর। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মেয়েটি মাটিতে পড়েছিল। মেয়েটি পানি পানি বলে পানি চাচ্ছিল। এরশাদ দৌড়ে গিয়ে একটি ঘর থেকে পানি নিয়ে আসল। দুঃখের বিষয় পানি খাওয়ার পরপরই এরশাদের হাতের উপর মেয়েটি মারা যায়। একই সময় এরশাদ আরেকটি মেয়েকে দেখে। শিশুটি তার মায়ের বুকের সাথে লেপটে ছিল। শিশুটির বয়স ছিল সম্ভবত ছয় মাস। শিশুটির মা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে ছিল। কপালে সিঁদুর দেখে এরশাদ আলী বুঝতে পারল শিশুটি এক হিন্দু মায়ের সন্তান।
পাকিস্তানিরা যখন তার মাকে গুলি করছিল তখন শিশুটির মা শিশুটিকে বুকের দুখ খাওয়াচ্ছিলেন।
এরশাদ আলী শিশুটিকে কাছে টেনে নেন। কিন্তু এরশাদ আলী বুঝতে পারছিল না সে কী করবে। কারণ শিশুটি ছিলো জীবিত কিন্তু শিশুটির পুরো শরীরে তার মায়ের রক্ত লেগে আছে। “হে আল্লাহ আমি এখন কী করব” বলে এরশাদ নিজেই বকে যাচ্ছিল।
এরশাদ আলী নিজেকে লুকিয়ে শিশুটিকে নিয়ে মার্কেটের দিকে যায়। যেখানেই যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে দেখছে অসংখ্য মৃত দেহ পড়ে আছে। যেখানে তার পরিচিত অসংখ্য হিন্দু বন্ধু ও পরিচিত মানুষগুলো শুয়ে আছে। হিন্দুরা প্রধান টার্গেট হলেও পাকিস্তানীরা ঐ দিন অসংখ্য মুসলিমকেও হত্যা করেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই হিন্দু ও আওয়ামী লীগদের পাকিস্তানীরা প্রধান শক্র হিসেবে বিবেচনা করে। এছাড়া যারাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল তাদেরকে সাচ্চা মুসলিম না ভেবে কাফের হিসেবে চিহ্নিত করতো। চুকনগরের শুধু মন্দিরে নয় মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় মানুষদেরও রেহাই দেয়নি এই পাকিস্তানি সেনারা। এরশাদ আলী কোন রকম ময়দান পার হয়ে মন্দার দাশের বাড়িতে হাজির হয়। এই হিন্দু বাড়িটি সে চিনত। সে মন্দার দাশকে নিজের পিতার ঘটনা বলে এবং এই মেয়েটিকে সে কীভাবে পায় তাও বর্ণনা করে। মন্দার দাশকে এটাও বলে যে আমি মেয়েটির মাকে চিনি না তবে এতোটুকু বুঝেছি মেয়েটি মা হিন্দু ছিল। মন্দার দাশের কাছে শিশুটিকে রাখার প্রস্তাব করে। এরশাদ আলী মন্দার দাশকে এটাও বলে আশ্বস্ত করেন যে; তাঁর মৃত পিতাকে দাফন করে এসে আগামী কাল আবার শিশুটিকে সে নিয়ে যাবে। মন্দার দাশ শিশুটিকে আশ্রয় দেয় এবং এরশাদ আলী একটা সাদা কাপড় সংগ্রহ করে মৃত পিতাকে দাফন করতে বাড়ি ফিরে যায়। পরের দিন কথা মতন শিশুটিকে নেওয়ার জন্য এরশাদ আলী মন্দার দাশের বাড়িতে হাজির হয়। কিন্তু মন্দার দাশের স্ত্রী এরশাদ আলীকে বলে যে, তারা শিশুটিকে রাখতে চাচ্ছে। তাদের বিশ বছরের সংসার জীবনে কোন সন্তান নেই। তারা মেয়েটিকে নিজের সন্তানের মতন পালন করবে। এই যুদ্ধের সময় এটা তারা ঈশ্বর থেকে উপকার হিসেবে দেখছে। শিশুটি নতুন করে পিতা মাতা পাচ্ছে দেখে এরশাদ আলী আর অমত করলেন না। এরশাদ আলী বলছে; আমি জানতাম মেয়েটি হিন্দু তাই একটি হিন্দু পরিবারের কাছেই আমি নিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটি দেখতে তার মায়ের মতন সুন্দর ছিল তাই তার নাম রাখা হল সুন্দরী।
এই লেখাটা লিখতে লিখতে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে বারবার। সবশেষে ব্রাম্মনবাড়িয়ার একটা গল্প বলে শেষ করে দেই আজকের মত।
একাত্তরের জুন মাসের শেষ সপ্তাহ। ব্রাম্মনবাড়িয়ার তরুণ সার্কেল অফিসার (এখনকার টিএনওদের সমান পদাধিকারী) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সিলেটে নিজের বাড়িতে ফিরবেন কয়েকদিনের জন্য, কারণ তাঁর ছেলের জন্ম হয়েছে বলে টেলিগ্রাম এসেছে, ছেলের মুখ দেখতে যাবেন। গভীর আনন্দ তাঁর মনে। যথারীতি ট্রেনে করে রওনা হয়েছেন পরদিন দুপুরে। হঠাৎ এক গ্রামের পাশে আটকে গেল ট্রেন। খবর নিয়ে জানা গেল পাকিস্তানী মিলিটারীরা এই ট্রেন আটকে দিয়েছে। ট্রেন চেকিং হবে।
ট্রেনের কামরায় স্বাভাবিক ভাবেই সবাই চিন্তাযুক্ত। তবে হঠাৎ দেখা গেল একপাশের দুই কিশোর থরথর করে কাঁপছে। সার্কেল অফিসার বললেন, ‘তোমাদের জন্য ট্রেন আটকেছে, তাই না?’
ছেলে দুটো ঢোক গিলল। একজন বিশ্বাস নিয়ে বলল, ‘আমাদের কাছে এই এলাকার ম্যাপ আছে, সবগুলো সরকারি অফিস আর আর্মিদের গতিবিধির লিস্ট আছে। এটা ইন্ডিয়া যাওয়া দরকার। কিন্তু মনে হয় খবর ফাঁস হয়ে গেছে।’
সার্কেল অফিসার বললেন, ‘আমার কাছে কাগজগুলো দিয়ে দাও। আমি সরকারি অফিসার, আমাকে হয়তো চেক করবে না।’
একটি ছেলে বলল, ‘যদি ধরা পড়েন, তাহলে মেরে ফেলবে।’
সার্কেল অফিসার আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘হয়তো। তবে তোমাদের বয়েস অনেক কম, আমার চাইতে তোমাদের বেঁচে থাকা বেশি দরকার। এই এলাকার অপারেশন করতে হলে থানা অফিসের অমুক অমুক অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারো। আমরা সবাই তোমাদের হেল্প করছি। আমার বাড়ি সিলেটের বারোখলা গ্রামে, সিলেট রেলস্টেশন থেকে নেমে পায়ে হাঁটা দূরত্ব। যদি মরে যাই, তাহলে দেশ স্বাধীন হলে এই খেলনাগুলো তোমরা আমার বাড়িতে দিয়ে আসবা, এই কথা দাও।’
এক কিশোর বলে, ‘দেশ কি স্বাধীন হবে?’
সার্কেল অফিসার গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই দেশ স্বাধীন হবে। বড়জোর দুইবছর লাগবে, কিন্তু অবশ্যই দেশ স্বাধীন হবে।’ কিশোর দুইজন খেলনাগুলো নেয়, আর কাগজগুলো সার্কেল অফিসারের কাছে দেয়।
প্রিয় পাঠক, এই সার্কেল অফিসার সেদিন প্রথম ধাক্কায় বেঁচে গিয়েছিলেন। পাকি আর্মিরা তার সরকারি পরিচয়পত্র দেখার পরে তাঁকে চেক করেনি। কিন্তু সঙ্গে থাকা রাজাকাররা পরের দফায় তাঁকে চেক করে। তাঁকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
তারপর…..?
৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রেনে থাকা সেই কিশোর মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট শহরের দক্ষিন সুরমার বারোখলা গ্রামে আবদুল্লাহর না দেখা সন্তানের কাছে খেলনাগুলো পৌঁছে দিয়েছিলো। সেই সার্মোকেল অফিসার হাম্মদ আবদুল্লাহর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি কোনোদিন।
এরকম অনেক অনেক ছোট ছোট গল্পের নামই বাংলাদেশ…
বিজয়ের ৪৪ বছর আমাদের হারিয়েছি অনেক, আজও হারাচ্ছি আমাদের ভাইদের। অভিজিৎ রায়কে হারিয়েছি এই বছরেই। এত দুঃখের মধ্যেও ক্যামেলিয়া আপুর ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে-
“একটা দেশ এমনি তে পাই নাই, কেউ দয়া করে নাই, কেউ ভিক্ষা দেয় নাই, দাম দিয়ে কেনা। রুমির জন্য পাকিদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষার প্রস্তাব নাকচ করে ছেলের জন্য শহীদের মৃত্যু পছন্দ করেছিলেন তার পিতা। মায়ের সামনে মেয়ে খায়রুন্নেসা ধর্ষিত হয়েছে, ভাই এর লাশ নিয়ে বোন বিলকিস দারে দারে ঘুরেছে একটু কবর হবে এই আশায়। মেজর নুরুল ইসলামের প্রেগন্যান্ট স্ত্রী কে পাকিস্তানীরা….., ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে মা অন্ধ হয়ে গেছে, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের লাশ দেখে নাতি রাহুল আজও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে আছে।
না আশা হারাই না,
হতাশ হই না,
৭১ এ এই দুর্বল বাঙালি-ই জিতেছিলো।
জয় বাংলা।
সবাই কে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।”
এত খারাপ লাগে এসব জেনে যে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে যায় । স্বার্থপর এর মত বলতে ইচ্ছে করে যে ধুর দরকার নেই এসবের , এর চেয়ে ২০০ বছরের
ইংরেজ রাজত্ব অনেক ভাল ছিল।
আরিফ রহমান ভাইয়ের ‘ত্রিশ লক্ষ শহীদ বাহুল্য নাকি বাস্তবতা’ বইটি কিনতে চাই কাইন্ডলি কেউ হেল্প করবেন?
– যেন ভুলে না যাই –
এক দিকে যখন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব চলছে তখন এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী লেখা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পরবর্তী প্রজন্মকে জানিয়ে দেয়ার কাজটি এই লেখা অনেকটা এগিয়ে দেবে । ধন্যবাদ লেখকদের ।
ওহ্ ! অসম্ভব সুন্দর একটি সম্পাদনা….! সংগ্রহে থাকলো….
এই পাকিস্থানী জারজদের মধ্যে মানবতার ছিটেফোটা ছিল না এখন ও নেই ও ভবিষ্যৎ এ থাকবে কি না এই নিয়ে আমার সন্দেহ!
সেদিনের বিজয়ী হওয়া জাতিই কিন্তু মাত্র কিছুদিন পর ভূট্টোর ঢাকায় আগমন উপলক্ষে কাতারে কাতারে রাস্তায় নেমে এসেছিল। আপনি অবশ্যই জানেন কেন নেমেছিল। তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
এই জাতি যদি শাহবাগ রচনা করে থাকে তবে আবার এই জাতিই কিন্ত গো আজমের জানাজায় লাখে লাখে জড়ো হয়। এরাই আবার দেইল্লা রাজাকারের ফাঁসীর রায়ে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে। যেই ভয়ে আপিল বিভাগ ওর শাস্তি কমিয়ে দেশকে এক মহাবিপদের হাত থেকে রক্ষা করল। যদিও কয়েকবার ফাঁসী দিলেও ওর প্রকৃত শাস্তি হবেনা। হিন্দু নির্যাতনের কথা বাদই দিলাম। কারণ এই মহান ‘দেশে’ জন্মগ্রহণ করে তারা যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে এটা তাদের পাওনা। এই নিয়ে কথা বলা মানে সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এর ফিরিস্তি দিতে গেলে কয়েকটা মহাকাব্যের সমান হবে। ছিটমহলের বেশীরভাগ হিন্দু কিন্তু এই ভুলটা করেনি। তারা ভারত চলে গেছে। কমপক্ষে তাদের বাচ্চাকাচ্চা এই দোষটা তাদেরকে দিতে পারবেনা যে কেন এই দেশ ছাড়লা না।
তাই এই জাতি আরো হাজারটা জয় পেতে পারে। কিন্তু সেগুলো ক্রিকেট মাঠ, অমুক অলিম্পিয়াড, তমুক উৎসব এজাতীয় জয়ই হবে এর বাইরে কিছুই নয়।
ঐতিহাসিক তথ্য জানানোর সময় কেবল নিজের অভিমত না জানিয়ে যথাসম্ভব পুরো ঘটনাটি তুলে ধরা উচিত। নীচের ভিডিওতে দেখবেন যে নেতারা ভূট্টোর ‘ আপাত-অপ্রয়োজনীয়’ সফরে আহ্লাদিত হলেও কিছু বাংলাদেশী ঠিকই প্রতিবাদ করেছিল।
https://www.facebook.com/bd.old.photo.archive/videos/905384476208304/
বাংলাদেশীদের মধ্যে স্বাধীনতা, যুদ্ধাপরাধ, সংখ্যালঘু ইত্যাদি বিষয়ে যে বিভজন আছে তা নিয়ে দ্বিমত নেই। হয়তো সময়ের সাথে সাথে একদিন অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে; সুদিনের আশা করতে দোষ কি?
আমার মন্তব্যের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষিত হওয়ায় অনেক ধন্যবাদ। আমি ভূট্টোর আগমন উপলক্ষে বিরাট সম্বর্ধনা মিছিলের( সরকারী নয়) খবরটা আজ থেকে কয়েক বছর আগে খুব সম্ভবত জনকণ্ঠ অথবা প্রথম আলোতে পড়েছিলাম। উল্লেখ্য জনকণ্ঠ তখনো আওয়ামীলীগের অঘোষিত মুখপত্র হয়নি। তবে অবশ্যি পুরো দিনতারিখ না দিতে পারায় রেফারেন্স হিসেবে এর গুরুত্ব কমে গেছে। তবে খবরটি আমি অবশ্যই পড়েছিলাম।
আর সুদিনের আশা করাই বেশীরভাগ মানুষের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তা করতেই করতেই কিন্তু সংখ্যালঘুর সংখ্যা এখন ৮ শতাংশে এসে ঠেকেছে। সুদিন আশা করে করা শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে এখন পাহাড়ীরাই সংখ্যালঘু। কয়েক দশক হয়ে গেলো দাউদ ইব্রাহীম বা তসলিমা এখনো দেশে ফিরতে পারেননি। এ জীবনে যে পারবেন না এটা মনে হয় এখন চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। আরো যারা এখন দেশ ছাড়ছেন, তাদের মধ্যে কতজন আদর্শে ছাড় না দিয়ে ফিরতে পারবেন তাতে আমার অন্তত ঘোর সন্দেহ আছে।
তাই অনেকে সুদিনের আশা করলেও আমি হয়ত নৈরাশ্যবাদীদের দলেই থাকব।
প্রসূনজিৎ, আমি নিশ্চিত যে আপনি খবরটি পড়েছেন বলেই মন্তব্য করেছেন। আর এ নিয়ে আমি খুব একটা আশ্চর্য হচ্ছি না, কেননা এধরনের দ্বিচারিতা আমাদের মধ্যে যথেষ্ট আছে। আমার প্রথম মন্তব্যটি কেবল রেকর্ড ঠিক রাখার জন্য যে অন্তত কেউ ভূট্টোর সফরের প্রতিবাদ করেছিল। না হলে, বিছিয়ে দেয়া কার্পেটের রঙ দেখে মনে হচ্ছিল তা বুঝি এইমাত্র শহীদদের রক্তে ভিজিয়ে আনা হয়েছে। এটা যে কত অপমানের নেতারা যদি বুঝতেন।
আশা আর হতাশা নিয়েই জীবন, তবে কে কোনদিক দিয়ে দেখছেন সেটাই অনেক সময় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
ভাল থাকবেন!
পুনশ্চঃ আপনি প্রবাসী কবি দাউদ হায়দারের কথা বলতে চেয়েছিলেন। দাউদ ইব্রাহীম যে ভাগাড়ে আছে সেখানেই থাক!
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ শুভ এবং আরিফকে। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
সময়োপযোগী পোস্ট। এরকম একটি সাহসী লেখা প্রকাশের জন্য আরিফ এবং শুভ দু’জনকেই অভিনন্দন।
কাঁদিয়ে দিলেন দাদা। যদিয় জানি, প্রতিশোধ এই বর্বরতার উপযুক্ত প্রত্যুত্তর না। তবু কিছুক্ষণের জন্য যুক্তি ভুলে যেতে ইচ্ছে করে। সে যাই হোক।
ভাল হোক বাংলাদেশের। সাহস থাকুক বাংলাদেশের। ফুল ফুটুক বাংলাদেশে।