বাংলাদেশ সরকার এবং বিরোধী দলগুলো সব সময়ই উঁচু গলায় বলে আসছে, বাংলাদেশে কোন জঙ্গি নেই। এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করে। ধর্মের নামে এখানে কোন সন্ত্রাস হয় না। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা ধারণ করে এদেশের নিরানব্বই ভাগ মানুষ। এক ভাগ রেখে দিয়েছি, কারণ যখনই কোন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয় তখনই ঐ এক ভাগের উপরে দোষ চাপিয়ে তারা দায় এড়ায়।
৭১ এর ১৬ ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে মোট জনসংখ্যার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। ২০১৫ তে এসে হিসেবটি দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশ তে ! প্রশ্ন হল কেন?
উত্তরটি কমবেশি সকলেই জানে। এই দেশে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপরে দিনের পর দিন নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যেতে বাধ্য করেছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সম্পদ দখল করা, নারীদের উপর যৌন হামলা করা, সামাজিক ভাবে হেয় করা, বাংলাদেশে বর্তমানে একটা স্বাভাবিক ঘটনার পর্যায়ে চলে এসেছে।
এই সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সেকুলার ব্লগাররা সর্ব প্রথম সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখালিখি শুরু করে। সামাজিক সচেতনতা এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে এই বর্বর ঘটনাগুলো প্রকাশ করে প্রতিবাদ শুরু করে। প্রথম দিকে সরকার এবং মুসলিম মৌলবাদীরা নানা ভাবে হুমকি দিয়েও সেকুলার ব্লগারদের লেখালেখি বন্ধ করতে পারে নি। বরং দেশের সচেতন প্রজন্ম প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। কিন্তু ২০১৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সেকুলার ব্লগার রাজীব হায়দার কে হত্যা করে ইসলামিক মৌলবাদীরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়, তাদের অপকর্ম নিয়ে যেই প্রতিবাদ করবে তাকেই হত্যা করা হবে। তাদের ঘোষণা যে শুধুই হুমকি ছিল না তার প্রমাণ গত দুবছরে চার জন ব্লগার হত্যা ,দুইজন শিক্ষক হত্যা, মৌলবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাত্র জনতা হত্যা। এবং বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিক হত্যা।
প্রশ্ন হল এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকাররে অবস্থান কি?
সরকার জোরগলায় বলে আসছে দেশে কোন জঙ্গি নেই। বাংলাদেশে জঙ্গি নেই, সরকারের এই বিবৃতির বিরুদ্ধে খোদ পুলিশই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে দেশে জঙ্গি আছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে,
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো.শাহাজাহান বলেছেন, সর্বশেষ আমরা বারিধারা ডিওএইচএস-এর নিজ বাসা থেকে আবদুল্লাহ আল গালিব নামে আইএস-এর এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি৷ গালিব অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনা কর্মকর্তার ছেলে৷ তার কম্পিউটার থেকে একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, ১০ জন আইএস সদস্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ জিজ্ঞাসাবাদে গালিব ঐ ভিডিওটি কোথায় ধারণ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু বলেনি৷ তবে আমরা ধারণা করছি এটা দেশের মধ্যেই ধারণ করা হয়েছে৷
তিনি আরও বলেন- আইএস-এ যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল৷ এদের মধ্যে পাকিস্তানে বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহত হয়৷ এরা হলো – সাখাওয়াতুল কবিরের ভায়রা শামীম আহম্মেদ ও বাতেনের ভগ্নিপতি মুহম্মদ সায়েম৷ গত ২৯শে জানুয়ারি ডিবি খিলক্ষেত ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সাখাওয়াতুল কবির (৩৫), আনোয়ার হোসেন ওরফে বাতেন (৩৩), রবিউল ইসলাম (৩৫) ও নজরুল ইসলামকে (৩৩) গ্রেপ্তার করে৷ (তথ্য সূত্র -ডয়েচ ভেল, ২২শে জুন ২০১৫)
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে ইসলামিক স্টেট আইএস এর সমর্থক হিসেবে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে এক স্কুলছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। (বিবিসি বাংলা, ৩ অক্টোবর , ২০১৫)
গতবছরের ২৮ সেপ্টেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনে সামিউন রহমান ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন হামদান। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করাও তার উদ্দেশ্য ছিল। এ ছাড়া ইসলামিক স্টেটের জন্য অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকা থেকে হিফজুর রহমান নামের ২২ বছর বয়সী আরেক জঙ্গি সদস্যকে আটক করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সিলেটের শাহজালাল উপ-শহর এলাকার সরকারি তিব্বিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিফজুর, ওই সময়ই রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে আসিফ আদনান ও ফজলে এলাহী তানজিল আটক হন (সূত্রঃ বাংলামেইল২৪)
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী ১২৫ টি ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠন আছে এবং যারা নানা ধরণের সাম্প্রদায়িক জঙ্গি তৎপরতার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত। ১৯৮০-এর দশকে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে আমেরিকা ও পাকিস্তান আফগানিস্তানকে সহায়তা করে। এই যুদ্ধে আফগানিস্তানের পক্ষে জামায়াত-শিবিরের সদস্যসহ বেশ কিছু বাংলাদেশি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এরা পাকিস্তানে আইএসআই-এর অধীনে এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরে এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি প্যালেস্টাইন ও চেচনিয়া যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল। এরা প্রায় সবাই বাংলাদেশে ফিরে আসে। এসব যুদ্ধ ফেরত সদস্যরাই পরে বাংলাদেশে আইএসআই/তালেবান ও আলকায়েদার স্থানীয় সদস্য হিসেবে এ দেশে আইএসআই/এলইটির (লস্কর-ই-তৈয়বা) এজেন্ট হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। (তথ্য সূত্র- আবুল বারাকাত , দৈনিক ভরের ডাক, ২৯ শে মে ২০১৫)
এছাড়াও ব্লগার হত্যা সন্দেহে জড়িতদের সকলেই কোন না কোন ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেকুলার ব্লগাররা একটা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তাই তাদের হত্যা করে সেটা দমিয়ে দেয়া হয়েছে ।
আশ্চর্যের বিষয় হল সরকার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সেকুলার ব্লগারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালো। ব্লাস্ফেমি আইন করে সেকুলার ব্লগারদের লেখালিখে বন্ধ করে দিল। তাদের গ্রেফতার করল কিংবা নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করল।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে মৌলবাদের বন্ধুত্ব গ্রহণ করে সরকারের কি লাভ হল?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে মৌলবাদের শেকড়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সব চেয়ে ক্ষমতাধর বাহিনীটির নাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দেশের যে কোন পরস্তিতি তারা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে।প্রশাসনিক ভাবে তাদের কোন কর্মতৎপরতা দেখা না গেলেও দেশের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা তারাই ভোগ করে। প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই এদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশে শুধু প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বছরে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয় (দৈনিক প্রথম আলো-৯ই জুন২০১৪)। অথচ এই অর্থ কোথায়, কিভাবে, কেন খরচ হয় সে বিষয়ে কোন তথ্য নেই।
আগেই বলেছি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর নিজস্ব কর্মতৎপরতা সীমিত। কিন্তু দেশে কোন ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হলে এই বাহিনী সেই আন্দোলন কে রোধ করতে মাঠে নামে। এবং তারা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে যখনই কেউ কথা বলেছে, তারা কোন না কোন ভাবে সেই কণ্ঠ রোধ করেছে।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আদিবাসী নেত্রী কল্পনা চাকমা কে তারা প্রকাশ্যে অপহরণ করে এবং আজ পর্যন্ত তার কোন খবর মেলেনি। পুলিশের অঙ্গ সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদও তাদেরই দখলে। প্রকৃত অর্থে এই বাহিনীটির তেমন কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং তাদের পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয় তা দিয়ে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব। এখানে উল্লেখ করা জরুরী যে ব্লগাররা এই বিষয়টি নিয়েও সোচ্চার ছিল।
কিছু দিন আগে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম তার এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করে, ব্লগার হত্যায় একজন প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা জড়িত।
একজন সেনা কর্মকর্তা জড়িত অথচ গত দুবছরে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ এই বিষয়ে কিছুই জানে না, সেটা কিভাবে সম্ভব?
যেহেতু বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিজিএফআই , বাংলাদেশ সেনা বাহিনী দাড়া পরিচালিত সেক্ষেত্রে গত দুইবছরের ব্লগার হত্যার কোন তথ্য তাদের কাছে থাকবে না, বিষয়টি অবিশ্বাস্য।
আগেই বলেছি বাংলাদেশের বাজেটের একটা বিরাট অংশই খরচ হয় সেই সেনাবাহিনীর পেছনে। একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার যে পরিমাণ বৈধ আয়, তাতে তার চাকরী জীবনে সরকারি বাড়ি গাড়ি থাকলেও অবসরে যাবার পরে তার যে পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকে সেগুলো বেতন ভাতা দিয়ে হওয়া সম্ভব না। বাংলাদেশে উচ্চপদস্থ এমন সেনা কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া খুবই দুরুহ, যার বাড়ি গাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স এর পরিমাণ দশ কোটি টাকার নিচে।(না এই তথ্যটির কোন তথ্য সূত্র দিতে পারব না।কারণ এই বিষয়ে লেখার সাহস আমাদের সংবাদ মিডিয়া এখনো করতে পারেনি। তবে ডিওএইচএস গুলশান বনানীতে প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদের বাড়ি সম্পর্কে খোঁজ নিলে আমার কথার সত্যতা মিলবে)।
এই সম্পদ কোথা থেকে আসে? তাদের বিলাসবহুল জীবন যাপনের উৎস কি ? বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোর ক্ষমতা নেই তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের সংবাদ প্রচার করে। বাংলদেশের একটা বেসরকারি নিউজ চ্যানেল সিএসবি, ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রদের উপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের সংবাদ প্রচারের তিন দিনের মাথায়, সেই চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এত ক্ষমতাধর একটা সংস্থার নাকের ডগায় মৌলবাদীরা একের পর এক সেকুলার ব্লগার হত্যা করে যাচ্ছে, বিদেশী নাগরিক হত্যার দায় স্বীকার করছে অথচ তাদের কোন ধরণের তৎপরতা নেই বরং এই হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে তাদেরই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে বিষয়টা কি একই সূত্রে গাঁথা না?
হত্যা , নিপীড়ন নির্যাতন করে সেকুলার ব্লগারদের সংখ্যাটা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে ফেলা হয়েছে। হত্যা করার মত তেমন ব্লগার নেই দেশে। যে কয়জন আছে তারাও সবাই আত্মগোপন করে আছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ কে আতঙ্কগ্রস্থ করতে না পারলে এই মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলন হবে, মৌলবাদ এবং এর মদদ দাতাদের মুখোশ উন্মোচিত হব।অনেক লুকানো সত্য পর্দার আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসবে। সুতরাং বিদেশী নাগরিক হত্যার নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
এতে সরকার, ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠনগুলো,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিরোধী দল চার পক্ষই লাভবান। মৌলবাদীরা হত্যা করুক কিংবা না করুক দায় স্বীকার করে জনগণ কে আতঙ্কিত করছে সেই সাথে প্রতিবাদের কলম বন্ধ করে দিচ্ছে, সরকার জঙ্গি নেই বলে জঙ্গিদের রক্ষা করছে, সেই সাথে হত্যাকারীদের খুঁজে শাস্তি দেবার কথা বলে জনগণের চোখে ধুলা দিচ্ছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের উপড়ে দায় চাপিয়ে তাদের আন্দোলন এর ফুয়েল যোগাচ্ছে। আর বাংলাদেশের সব চেয়ে ক্ষমতাধর সংস্থাটি কি করছে সেটা হয়ত ভবিষ্যতে জানা যাবে, কিংবা আদৌ জানা যাবে না।
ভারতেও মুক্তমনাদের ধরে ধরে খুন করে, সংখ্যালঘু দের উপর অত্যাচার হয়। এরপরেও ভারত উন্নয়ন করছে, আমরা কেন পারব না?
বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তাহলে কি পার্থক্য রইলো ? দুটো দেশেই সেনাবাহিনী বিরাট ক্ষমতা ভোগ করে | দুটো দেশেই মুক্তমনাদের ধরে ধরে জবাই করে | দুটো দেশেই সংখ্যালঘু দের উপর অত্যাচার হয় | আশ্চর্য | এই কি মুজিব চেয়েছিলেন ? না মুক্তিবাহিনীর কেউ চেয়েছিল ?
হ্যা তবে একটা পার্থক্য আছে | বাংলাদেশে একটা গণতন্ত্র আছে যেটা পাকিস্তানে নেই | দেশীয় গোয়েন্দা বিভাগ যদি সেনাবাহিনী বা কোনো বাহিনীর অধীন হয় তাহলে সে কিভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ? আজ অব্দি যত তদন্ত হয়েছে সবই তাহলে তদন্তের নাম প্রহসন মাত্র |
এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সেইদিন খুব বেশি দূরে না যখন ক্লাস ফাইভ-সিক্স পাস করা ছাত্ররা বলে বসবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অপ্রয়োজনীয় ছিল। আল্লামা শফি সাহেবের কথা মত দেশ চালাতে হবে। ভয় লাগে নিজের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে গেলে।
সহমত। পারিবারিক দিক থেকে খুব ঘনিষ্ঠ মানুষের কাছ থেকেই শুনেছি, ব্লগার হত্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে খুব ভাল ভাবেই জানে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগ যে শুধু ডিজিএফআই, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী দাড়া পরিচালিত – এই ব্যাপারে একটু দ্বিমত পোষণ করছি। আরো বেশ কিছু সংস্থা এই ব্যাপারে কাজ করে।
পুরো লেখাটার সাথে সরলী করন লাইনটা একে বারেই বেমানান। মাত্র কিছু দিন আগেই বাংলাদেশের সাথে ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির তুলনা নিয়ে প্রথম আলোতে একটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছে । রিপোর্টটা যদি দেখে থাকেন তবে অবশ্যই জানার কথা ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মান কমেছে এবং বাংলাদেশে গত দুই বছর ধরে স্থিতিশিল রয়েছে। সেখানে একটা চমৎকার তথ্য ছিল , বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে। এটা তো গেল অর্থনৈতিক দিক , এবার আসি সামাজিক প্রেক্ষাপটে ,
৭১ এ যে সব হিন্দুধর্মাবলম্বীরা দেশ ত্যাগ করেছিল তাদের থার্ড জেনারেশন বর্তমানে মোটামুটি স্বচ্ছল অবস্থায় পৌঁছেছে , সে জন্য তাদের নিম্নবিত্তের জীবন থেকে মধ্যবিত্তে পৌছতে পুরা দুটা জেনারেশন পার করতে হয়েছে। একান্ত বাধ্য না হলে কেউ সেধে এই জীবন বেঁছে নেবে না। ভারত নিজেই যেখানে নিজের দেশের সকল জনগণের মৌলিক চিহিদা মেটাতে ব্যর্থ সেখানে অন্য দেশের আশ্রয় প্রার্থীদের স্বচ্ছল জীবন দেবে এটা ভাবাটাও বোকামি।
কঠিন কথা সহজ করে লেখাটা সরলীকরণ নয় বরং সহজ বোধ্য হতে পারে । ধন্যবাদ ।
শুধুমাত্র ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মুল্যমান দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতি বিচার করা হাস্যকর। মুদ্রার অধঃপতন বা স্থীতিশীলতা অনেক গুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ভুমিকাও আছে। ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। গত অর্থ বছরে তাদের জিডিপি ছিল ৭ শতাংশ , বিপরীতে বাংলাদেশের ৬.২ শতাংশ । তাদের মাথাপিছু আয়ও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বেকারত্বের হার থেকে শুরু করে দারিদ্রের হার কমানো সব ক্ষেত্রেই গত দুই দশকে তারা অনেক সফলতা অর্জন করেছে।
এটাও একটা জেনারালাইজড কথা । একজন মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা শুধু সরকার কর্তক প্রদান কৃত কাজের সুযোগের উপর নির্ভর করে না ,এঁর বাইরেও বেশ কিছু ফ্যাক্টর আছে। যেমন তার দক্ষতা কতটুকু, সে কত ঘন্টা কাজ করছে, কাজ থেকে প্রাপ্ত অর্থ কোন খাতে বিনিয়োগ করছে ইত্যাদী। কেউ দেশ ত্যাগ করে তুলনামূলক সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে অভিবাসন নিলেই যে সে সচ্ছল হবে এমন কোন কথা নেই। তবে ভারতে সেখানকার জনগনের কাজের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বাংলাদেশের জনগণের চেয়ে যে বেশি তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই । এটি অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের হিন্দুদের দেশ ত্যাগে উৎসাহিত করে। অনেকের আত্নীয় স্বজনও ওপারে আছে। এর বাইরে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের অত্যাচার নির্যাতনও অনেক বড় একটি কারণ। তবে অর্থনৈতিক কারনকে আপনি অবজ্ঞা করতে পারেন না।
এটা অতি সরলীকরন। অবশ্যই হিন্দুদের উপর চালানো নির্যাতন , সম্পত্তি দখল, রাষ্ট্র কর্তক তাদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়ে দেওয়াও এদেশের হিন্দুদের দেশ ত্যাগের কারণ। কিন্ত এটি পুরো চিত্র তুলে ধরে না। এর বাইরে অর্থনৈতিক কারনেও প্রচুর হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছে। গত ত্রিশ বছরে ভারতের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। জীবন যাত্রার মান এবং কাজের সুযোগও সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর সব জায়গায় অপেক্ষাকৃত দারিদ্র পীড়িতঅঞ্ছলের মানুষ তুলনামূলক সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্ছলে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করে। আর ভারতে অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে রিলিজিওন আমাদের দেশের হিন্দুদের একটা বড় সুবিধা দেয়। সম্প্রতি ভারতের বিজেপি সরকার সেখানে অভিবাসী হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই জাতীয় সাম্প্রদায়ীক সিদ্ধান্ত এদেশের হিন্দুদের দেশ ত্যাগে বরং উৎসাহিত করবে।
@ রুশো আলম,
সেদিন ভোট প্রচারে এসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোদি ঘোষণা করেছিলেন-
‘যারা দুর্গাপুজো করেন’, কী ভংকর কথা ! তবে এই ধর্মের টোপ বাংলাদেশে মুসলমান রাজনীতিবিদরাও কম ব্যবহার করেন না। এর আগে বিদেশী ডাকাত মুসলমানরা বিভিন্ন দেশ বা রাজ্য দখলকালে একই ভাষা ব্যবহার করতো একই প্রলোভন দেখাতো। বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের দেশ ত্যাগ অর্থনৈতিক কারণের চেয়ে ধর্মীয় কারণটাই তুলনামূলকভাবে বেশী বলে আমি মনে করি। আপনি নিজেই বলেছেন- হিন্দুদের উপর চালানো নির্যাতন , সম্পত্তি দখল, রাষ্ট্র কর্তক তাদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক বানিয়ে দেওয়াও এদেশের হিন্দুদের দেশ ত্যাগের কারণ। কিন্তু এগুলো কেন করা হয়? এর পেছনেও ধর্মের ইন্ধন আছে, আর আছে সংখ্যাগরিষ্টতার শক্তি। হিন্দুগরিষ্ট দেশে মুসলমানরাও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। সুষ্ঠ গনতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে ধর্ম সাম্প্রদায়ীকতার বিষ ছড়াবেই।
যে দেশটাকে স্বাধীন করতে সকল ধর্মের মানুষ জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করলো, সেই দেশের অন্যান্য ধর্মের মানুষের ধর্মকে বুড়ি আঙ্গুল দেখিয়ে যখন সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, শহরে শহরে মসজিদ তৈরীর ঘোষণা আর মদিনার সনদ শোনানো হয় তখন এ দেশের সংখ্যালগুরা কেমন আছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
প্রিয় মডারেটর , এই পোষ্ট এবং আদিল মাহমুদের লেখা পোষ্টে করা আমার মন্তব্যদুটি কেন প্রকাশ করা হয় নি তার কারণটি জানালে খুশি হব। মনে হয় না মুক্তমনার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছি।
প্রিয় রুশো আলম, আপনার মন্তব্য দুটিই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ধন্যবাদ।
আওয়ামী সরকার যদি বলে জঙ্গী নাই তো মানতে হবে জঙ্গী নাই। যদি বলে জঙ্গী ধরেছি তো মানতে হবে তারা জঙ্গী ধরেছে। আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে তাদের বিকল্প আর কেউ নেই। জঙ্গীরা ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিবে আর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়া কায়েম করবে। এটাই তাদের গোপন ব্রত এটাই তাদের আল্টিমেট উদ্দেশ্য। তারা জেনে গেছে রাজনীতিতে ইসলামের গাঁজা সেবন, একই সাথে ক্ষমতা আর সম্পদ উপভোগ করার সহজ পন্থা।
দেশে থেকে আর্মির বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে যেচে বিপদ ডেকে আনা। এই ক্ষেত্রে ভাসুরের নাম মুখে না নেয়ার নীতিই প্রযোজ্য।
“যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে একটি প্রকান্ড শ্বেতহস্তী তাতে কোন সন্দেহ নাই। গত চল্লিশ বছরে এই সংস্থাটি ধর্মাচ্ছন্ন একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হবার মূলে যে ধর্মনিরপেক্ষতা চালিকা শক্তি ছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোন কালেই তা গ্রহণ করেনি।
ক্রমাগত মিথ্যা বলাটা এক সময় ক্রনিক রোগে পরিনত হয়। দেশে প্রশ্ন ফাঁস হয় না, সকলে মিথ্যা বলে……কোন জংগী নাই কিন্তু সরকারেরই নানান বাহিনী জংগী নামে নিয়মিত ভাবে গ্রেফতার করে সাইনবোর্ড টানিয়ে প্রেসে ছবি পাঠায়……
জংগী যদি নাইই থাকে তাহলে জংগী নামে কাদের গ্রেফতার করা হয়? এদের কি তাহলে ছেড়ে দেওয়াই যুক্তিসংগত না? যারা তাদের গ্রেফতার করেছে তারা কি তাহলে নিরীহ মানুষ গ্রেফতার করে ছবি ছাপিয়ে অন্যায় করেছে, তাদেরই বিচার হবে?
পশ্চীমেরও কোন দেশ মনে হয় না তাদের দেশে জংগী নেই বলে দাবী করবে। আমাদের সরকার বিরোধী দল সকলরেউ জংগী অনুভূতি এত তীব্র কেন কে জানে।
অনেক সুন্দর লিখেছ আপু, সহমত :good:
আর্মি ধরেল ৫৭ ঘা…
এবারে নিশ্চিত ধরবে…