এইতো গেলোবার যখন উল্কার আঘাতে পৃথিবীময় আগুন লেগে গেলো আর ডাইনোসররা সব পুড়ে মারা গেলো তখনকার ঘটনা । মানুষের পূর্বপুরুষ ইঁদুরজাতীয় একটা প্রাণী তখন মাটির গভীর গর্তে লুকিয়ে থাকতো দিনের বেলা । ব্যাডেস ডাইনোসররা জেগে থাকা অবস্থায় তারা বের হতো না । রাতের গভীরে ডাইনোসররা যখন বউপোলাপানসমেত ঘুমাতে যেতো তখনি কেবল বের হতো । সেবারের উল্কার আঘাত আর আগুন থেকে বেঁচে গেলো তারা গর্তে লুকিয়ে থাকার কারণে । সেই ইঁদুরজাতীয় প্রাণী এখন নানান ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয়ে তার একটি ধারা মানুষ পর্যন্ত এসেছে । আরেকটি ধারা এসেছে আধুনিক ইঁঁদুর পর্যন্ত । কিন্তু গভীর মনস্তত্তে , শারীরবৃত্তে এখনো এই দুই চাচাতো ভাইয়ে অনেক মিল রয়ে গেছে ।
ল্যাবের ইঁদুরের মস্তিষ্কে অপারেশন করে তার যেখানে পিনিক বা ভালো অনুভুতির সেন্টার সেখানে একটা ইলেক্ট্রোড সেট করে দিয়ে খাঁচার ভিতর একটা লিভার বা বাটন দেয়া হয় যেটাতে চাপ দিলে হালকা একটা বৈদ্যুতিক শক লাগে পিনিক সেন্টারে । এই বৈদ্যুতিক শকে ইঁদুরের পিনিক লাগে , তার মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরণ হয় । খাঁচার ইঁদুর দেখা গেলো নাওয়া খাওয়া ভুলে সারাদিন খালি কিছুক্ষণ পরপর সেই লিভারে চাপ দেয় আর পিনিক নেয় । এতদূর যে শেষমেশ ক্ষুধায় মারা যায় কিন্তু যতক্ষণ শরীরে সামান্য বল থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত খালি পিনিক নিতেই থাকে ।
রাস্তার ধারে যে হিরোঞ্চি কাঠির মত শরীরে আর কাঠির মত হাতেও প্যাথেড্রিন মরফিন ইনজেকশন পুশ করে পিনিক নিতে নিতে মরে পড়ে থাকে, সে কি খুব বেশি বুদ্ধিমান ইন্দুর থেকে ? ইঁদুর কে ইন্দুর বলে অবজ্ঞা করার মত, আশরাফুল ফাকিং মাখলুকাত বলে নিজেকে নিজে বিশাল হ্যাডমওয়ালা ভাবার মত আসলে কি কোন তেমন ভালো কারণ আছে মানুষের ?
ওয়েল ওয়েল, হেরোইন প্যাথেড্রিন মরফিনের পিনিকে রাস্তার পাশে মরে পড়ে থাকে আশরাফুল ফাকিং মাখলুকাতের সামান্য একটা অংশ । বাদবাকী প্রায় সমস্ত মানুষ কিন্তু খুবই সোফিস্টিকেটেড ব্যাডেস একেকজন , তাই না ? ওয়েল, দুঃসংবাদ আছে ।
আম্রিকার ২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাদের একটা ভার্সিটির কিছু ধুরন্ধর বিজ্ঞানী মিলে মানুষের অহংকার ভেঙ্গে দেয়ার মত একটা পরীক্ষার আয়োজন করলেন । আয়োজনের জন্য পাত্র বাছাই করা হলো রিপাবলিকান আর ডেমোক্রেটদের দলকানা কিছু লোকজন । ১৫ জন পাঁড় রিপাবলিকা আর ১৫ জন পাঁড় ডেমোক্র্যাট লিবারেল । তাদের মাথাকে FMRI মেশিনের ভিতরে ঢুকিয়ে বেশ কিছু ছবি ও স্লাইড দেখানো হয় । FMRI এর কাজ হচ্ছে প্রত্যেকটা স্লাইড দেখার সময় মস্তিষ্কের কোন কোন অংশের কাজ বেড়ে যায় সেগুলো মনিটর করা । যেমন রিপাবলিকানদের প্রথমে দেখানো হলো বুশ যখন এনরন নামের বিশাল বড় কেলেংকারি তৈরী করা কোম্পানির সিইওর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলো তখনকার তার একটা উদৃতি । FMRI মেশিন বলছে এটা দেখার সময় পাঁড় রিপাবলিকানের মস্তিষ্কের আবেগের অংশ ব্যাপক আকারে কার্যকলাপ শুরু করে দিলো । অর্থ হচ্ছে বুশের এই ভুলকে তারা যৌক্তিকভাবে বিচার না করে অনুভুতিতে তীব্র আঘাত হিসাবে নিয়ে নিচ্ছে ।
টুইস্ট হচ্ছে এর পরের স্লাইডেই বিজ্ঞানীরা একটা বানানো স্লাইড দেখালেন তাদের । অনেকটা এরকম যে বুশ আসলেই এনরনের সিইওকে বিশ্বাস করেছিলেন এবং তাদের কেলেংকারী ফাঁস হওয়ার পরে তার পরিচিতজনদের কাছে তিনি খোলামনে তার ভুল স্বীকার করেছেন ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও ভবিষ্যতে আরো সাবধান হবেন বলেছেন । উল্লেখ্য যে এই তথ্য আসলে সম্পূর্ণ বানানো । কিন্তু FMRI থেকে দেখা যাচ্ছে এই স্লাইড দেখানোর সাথে সাথে পাঁড় রিপাবলিকানদের আবেগের অংশ রিলাক্স হয়ে তার বরং মস্তিষ্কের পিনিক অংশ সক্রিয় হয়ে উঠে । এবং ডোপামিনের একটা সুখময় ডোজ তাদের মস্তিষ্কের ভিতর খেলা করে যায় । পাঁড় ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকেও হুবহু একই রকম ফলাফল পাওয়া যায় তাদের পছন্দের প্রার্থীর ভুল ও হিপোক্র্যাসী এবং মিথ্যা দায়মুক্তির স্লাইড ব্যাবহার করে ।
এই পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে যে ছবি উঠে আসে সেটা মানুষের নিজেকে আশরাফুল ফাকিং মাখলুকাত দাবী করার যৌক্তিকতাকে বেশ বড়সড় ঝাঁকুনি দেয় । কারণ এই ফলাফল সাজেস্ট করে যে, মানুষ যখন তার বিশ্বাসের বিপরীতে সত্য কোন সমালোচনা বা ফ্যাক্ট শুনে তখন সেটাকে যৌক্তিকভাবে যাচাই করার বদলে বরং অনুভুতিতে আঘাত নিয়ে গোস্যা করে বসে । দ্বিতীয়ত তার বিশ্বাসের পক্ষে যখন কিছু শুনে তখনও সেটার সত্যতা নিয়ে অত্যন্ত কমন সেন্সের কিছু প্রশ্ন না করেই বরং তার বিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেছে ধরে নিয়ে বিমলানন্দ লাভ করে । এতই বিমলানন্দ যে, হেরোইন প্যাথেড্রিন খোরের পিনিকের মতই অনেকটা সেই পিনিক ।
কিছুদিন পরপর যারা ফেইসবুকে অমুক পেইজের লাইকার যারা আছেন তারা চলে যান নাইলে আপনারে লাত্থি মেরে খেদাবো অথবা অমুকের অমুক মতামতের সাথে যারা একমত মনে করেন, বা যারা এই জিনিসকে অপছন্দ করেন বা ঐ জিনিস নিয়ে ত্যানা প্যাঁচাইতে চান তারা ভাগেন নাইলে লাত্থি মারুম , এইসব হুমকি যারা দেন তাদের সাথে ডোপামিনের পিনিকের জন্য খাওয়া ভুলে মরে পড়ে থাকা ইন্দুরের খুব বেশি পার্থক্য দেখি না । নিজের বিশ্বাস , নিজের জীবনবীক্ষা নিজের মতামত এইগুলো নিয়ে কেউ উল্টা কিছু বললেই আবেগে ঢাঁই । একটু ডোপামিনের পিনিকের জন্য কেবল সেইসব মানুষের মতামত, সেইসব মানুষের কথা শুনবেন যাদের কথা শুনলে নিজের বিশ্বাস, নিজের জীবনবীক্ষার পক্ষে একটু প্রমাণ পাওয়া গেলো বলে মনে করা যায় ।
আমি অনেকদিন রাতের পর রাত বিভিন্ন আস্তিক নাস্তিকের ফর্মাল বিতর্কের ভিডিও দেখতাম । শুনতাম । কিছুদিন পর দেখা গেলো বিতর্কে আস্তিক অবস্থানের পক্ষে যে ডুশব্যাগ কথা বলছে তার অংশটুকু ফরোয়ার্ড করে দিয়ে কেবল নাস্তিক অবস্থানের পক্ষে যে বলছে , সেসব কথা আগে অনেকবার শোনা হলেও তা-ই শুনতাম । আহ একটু ডোপামিন পিনিকের জন্য ।
এই পিনিকের কথা বুঝতে পারার পর করলাম উল্টা কাজ । বিভিন্ন আস্তিকতার পক্ষের ডুশব্যাগ লাইক ফ্র্যাংক টুরেক, উইলিয়াম লেইন ক্রেইগ, ডিনেশ ডিসুজা, কেন্ট হোভিন্ড, কেন হ্যাম, রেই কমফোর্ট এদের বিভিন্ন লেকচার শুনতাম । এভাবে দেখা গেলো উল্টা অভ্যাস হয়ে গেলো । দেখা গেলো সারা রাত খালি কেন্ট হোভিন্ডের বালছাল শুনছি ।
হঠাৎ মনে হইলো আমি কি এবার রিভার্স ডোপামিন পিনিকে আটকে গেলাম ? মানে এমন সব লোকের লেকচার শুনছি যাদের যুক্তি, তর্ক, তথ্য এতই ভুয়া ও এতই বালছাল যে বেশিরভাগ আস্তিকও তাদেরকে নিজেদের দলে বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পায়, অস্বীকার করে । মনে হলো আমার আসলে হইছে যে আস্তিক, ইয়ং আর্থ ক্রিয়েশনিস্টদের দাবী যে কত হাস্যকর , কত তুচ্ছ এটা বারবার শুনে নিজের বিশ্বাস, নিজের জীবনবীক্ষা যে আসলে সলিড ও যৌক্তিক সেটা নিয়েই আস্থা বাড়ছে , আর একটু একটু ডোপামিন পিনিক জাগছে । এই রিভার্স পরীক্ষাটাও ট্রাই করে দেখা যেতে পারে FMRI দিয়ে ।
কিছু কিছু একেবারে উদ্ভট নাস্তিক ও মুক্তমণা দাবীকারীদের খুবই হাস্যকর কাজকারবার নিয়ে যারা কিছুদিন পরপর স্ট্যেইটাস ও নৌট দিয়ে বিমলানন্দ লাভ করে , অথবা উল্টা দিক থেকে দিনের পর দিন একেবারে লোয়েস্ট অব দ্য লোয়েস্ট মোল্লার গেলমান ভোগ বা আরো কিছু নীচুতর কাজের ট্যালি যারা বানান তারাও কি এই রিভার্স ডোপামিন পিনিকের চক্রে আঁটকে যাচ্ছেন কিনা ভেবে দেখতে পারেন ।
যৌক্তিক চিন্তার পথ সহজ ও মসৃণ না । ডোপামিন পিনিকের ট্র্যাপ আপনার চলার পথে আপনার চিন্তার পথে কোথায় কোথায় ওঁৎ পেতে আছে ভেবে দেখুন । কারণ আপনি ইন্দুরের চাইতে খুব বেশি সোফিস্টিকেটেড কোন প্রানী না । ইউ , মাই ফ্রেন্ড, হ্যাভ নো রিজন টু ফুল ইওরসেলফ বাই কলিং ইউরসেলফ দ্য আশরাফুল ফাকিং মাখলুকাত ।
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত ত নয়ই বরং অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে খারাপ। পৃথিবীর সকল যুদ্ধ বিগ্রহ পরিবেশ দূষণ অন্যায় অবিচারের জন্য মানুষ দায়ী; অন্য কোনো প্রাণী নয়।
এখানে দুইটা পয়েন্টে একটু দ্বিমত আছে ।
প্রাণীদের মধ্যেও প্রধানত শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে অর্গানাইজ যুদ্ধের কথা জানা গেছে ফিল্ড ওয়ার্ক থেকে ।
অন্যায় অবিচারের ক্ষেত্রেও অন্য প্রাণীদের একেবারে পুরোপুরি ছাড় দেয়া যায় না । মাংশাসী প্রাণীর শিকার ধরাকে অন্যায় বলা হলে সেটা প্রাণীজগতের মধ্যেও আছে । আর যদি নিজ প্রজাতির অন্যদের ঠকিয়ে নিজের স্বার্থোদ্ধারের কথা ধরেন , সেটা এমনকি মুরগীও করে । প্রায় সকল প্রানীতেই একটা হায়ারার্কিক্যাল ব্যাবস্থা আছে ।
এটা ঠিক, এসব কিছুকেই মানুষ নিয়ে গেছে এমন অনন্য উচ্চতায় যে , মানুষ সবচে বেশি অন্যায়কারী দূষণকারী প্রানী সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।
আমার খুব প্রিয় একটা ডিসকাশন। মানুষ যে মোটেও আশ্রাফাকিংমাখলুকাত না সেটা বোঝাতে আমিও ডোপামিনের উদাহরণের আশ্রয় নিয়েছিলাম, তবে অন্যভাবে ‘মানুষিকতা’ বইটায়। বইটার নামও প্রথমে ঠিক করেছিলাম ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ পরে ‘মানুষিকতা’টা বেশি মনে ধরেছিলো।
ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।
বইগুলার কিন্ডল ভার্শন বাইর করা যায় না ?
এই বইটার এবং অবিশ্বাসের দর্শনও অনেকদিন ধরে ইবুক পাওয়া যায়। দেখেন তো এই লিংক কাজ করে কিনা। না হলে আমি আপলোড করে দিয়ে দিবো।
এস্কিলেন । বাসায় গিয়াই কিনতাছি । দামে দেখি ব্যাপক হস্তা ।
হায় হায়, আমার একাউন্টে আমি এমনিতেই পাচ্ছিলাম। আপনাকে দিয়েছিলাম ফ্রি মনে করে। ভাবছি কেউ বইদ্বীপ থেকে নিয়ে আপলোড করে দিসে। এখন তো ন্যাক্কারজনক একটা বিজ্ঞাপন করে ফেললাম মনের ভুলে।
আরে ধুর । ন্যাক্কারজনকের কি আছে । আমি কিন্ডল ভার্শনের কথা জানতে চাইছি কিনার উদ্দেশ্য নিয়েই ।
আপনার লেখাটিতে চিন্তাশীলদের জন্য চিন্তার বহু উপাদান খু্ঁজে আছে।
.. মানুষ যখন তার বিশ্বাসের বিপরীতে সত্য কোন সমালোচনা বা ফ্যাক্ট শুনে তখন সেটাকে যৌক্তিকভাবে যাচাই করার বদলে বরং অনুভুতিতে আঘাত নিয়ে গোস্যা করে বসে । দ্বিতীয়ত তার বিশ্বাসের পক্ষে যখন কিছু শুনে তখনও সেটার সত্যতা নিয়ে অত্যন্ত কমন সেন্সের কিছু প্রশ্ন না করেই বরং তার বিশ্বাসের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেছে ধরে নিয়ে বিমলানন্দ লাভ করে । এতই বিমলানন্দ যে, হেরোইন প্যাথেড্রিন খোরের পিনিকের মতই অনেকটা সেই পিনিক ।
আসলে ইঁদুর থেকে বেশীদূর না আগাতে পারার কারনেই ধর্ম বিশ্বাসীদের তাদের ধর্মের সমালোচনা করলে তারা এতটা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ধর্মের নেশায় মাতালদের মুক্তচিন্তা লোপ পেয়ে থাকে তাহলে জেনেটিক কারনেই।
খুব ভাল লেগেছে।
আসলে ডোপামিন নেশা দুইপক্ষেই সম্ভব । যদিও সম্ভবত ধর্ম অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে মাত্রার পার্থক্য আছে , তবু মুক্তচিন্তা লোপ পাওয়ার মালিকানা ধর্মবিশ্বাসী মাতালদের একক অধিকার না ।
খুবই বাস্তব এবং নির্দয় সত্যি বলেছেন । এই পিনিক প্রবলেম সবারই আছে আস্তিক নাস্তিক নির্বিশেষে
ইউ , মাই ফ্রেন্ড, হ্যাভ নো রিজন টু ফুল ইওরসেলফ বাই কলিং ইউরসেলফ দ্য আশরাফুল ফাকিং মাখলুকাত