এর আগের লেখাঃ
কথায় আছে গোল্ড ফিশ ৩ সেকেন্ড আগের স্মৃতি মনে রাখতে পারে না। এই থেকেই গোল্ড ফিশ মেমোরি নামক উপমাটির প্রচলন। আমাদের জাতির একই সমস্যা। আমরা গোল্ড ফিশ মেমোরিধারী জাতি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই আমাদের মস্তিষ্ক থেকে বিস্মৃত। আজ তেমনই এক ঘটনার কথা বলব। এই তো খুব বেশিদিন আগের না। ২৫ বছর আগের ঘটনা। কিন্তু আমি নিশ্চিত অনেকেই ভুলে গিয়েছে সেই ঘটনা। সেই বিস্মৃত ঘটনা ইতিহাসের ধুলোঢাকা খাতা থেকে আবার তুলে আনছি আপনাদের সামনে।
১৯৯০ সাল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। গদি বাঁচাতে মরিয়া স্বৈরশাসক।
সেইসময় ভারতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তারা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ওখানে রাম মন্দির বানাতে চায়। এই নিয়ে ভারতের নানা জায়গাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও শুরু হয়েছে।
১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর হাজার হাজার বিজেপি সমর্থক অযোধ্যা অভিমুখে চলল বাবরি মসজিদ ধ্বংস করতে। কিন্তু পুলিশ বাধা দিল। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৬০০ লোক নিহত হল। পুলিশের দৃঢ়তায় বাবরি মসজিদ আপাতত রক্ষা পেল।
এদিকে এই সুযোগটাই নিল বাংলাদেশের একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। এদের নেতৃত্বে ছিল দৈনিক ইনকিলাব। এবং তাতে মদদ দিল স্বয়ং এরশাদ। তার লক্ষ্য ছিল জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে নিজের গদি বাঁচানো।
১৯৯০ সালের ৩১ অক্টোবর। দৈনিক ইনকিলাব বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার এক মিথ্যা উসকানিমূলক খবর ছাপে। শুরু হল সাম্প্রদায়িক দানবদের ধ্বংসলীলা। পুরাতন ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকাসহ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নেমে আসে অভিশাপ। যা ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। বাংলাদেশী হিন্দুরা আসলেই অভিশপ্ত। হাজার বছরের প্রতিবেশী ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উপর এক অপরাধের দায়ে যার সাথে তাদের কোন সম্পর্কই নেই।
ঐদিনই পুরাতন ঢাকাতে কারফিউ জারি করা হয়।
১ নভেম্বর মিথ্যা খবর ছাপার অভিযোগে দৈনিক ইনকিলাবের ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়। এরপর কারফিউ সারা ঢাকাতে জারি করা হয়। এরপর এরশাদ কারফিউ তুলে নেয়। ১৭ দিন পর ইনকিলাবের বাতিলকৃত ডিক্লারেশন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেই লাউ সেই কদু।
ঢাকাঃ
পুরান ঢাকায় মুসলিম বিক্ষোভকারীরা হিন্দু মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করতে গেলে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়। তবে মন্দিরের বাইরে মিডিয়া কর্মীদের ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে কর্তৃপক্ষ কারফিউ ঘোষণা করে। ৩০শে অক্টোবর রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যখন বঙ্গ ভবনে এক যুব সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন ঠিক সে সময় মুসলিম দাঙ্গাবাজেরা গৌরী মঠে হামলা করে এবং বঙ্গ ভবনের দক্ষিণ পাশের হিন্দু মালিকানাধীন দোকানগুলোয় আগুন লাগিয়ে দেয়। ৩১শে অক্টোবর প্রায় ১০০০ মুসলিমের এক দাঙ্গা মিছিল ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসের দিকে এগিয়ে যায়। দূতাবাসের ঠিক সামনে এক মধ্যবয়সী হিন্দু ব্যক্তি মারধরের শিকার হন। সারা শহরেই কারফিউ ঘোষিত হয়।
লালবাগে ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং মন্দির কমপ্লেক্সের অন্যান্য ভবনে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। মন্দিরের পুরোহিত এবং আরো দশটি বাসভবনেও হামলা চলে। পুরোহিত নিজের জীবন বাঁচাতে মন্দির কমপ্লেক্সের দেয়াল টপকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই অরাজকতা প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে। লালবাগ রোডের দুর্গা মন্দির, পুষ্প্রাজ সাহা লেনের গিরিগোবর্ধন জিউ মন্দির, হরনাথ ঘোষ লেনের রঘুনাথ জিউ আখড়া এবং লালবাগের কামরাঙ্গীরচর শ্মশানে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। লালবাগ রোড ও হরনাথ ঘোষ লেনের প্রায় ৫০টি হিন্দু বাড়ি ও দোকানে লুটপাট-ভাঙচুর চলে।
হাজারীবাগের ভাগলপুর লেনের তিনটি হিন্দু মন্দিরে হামলা চালিয়ে লুটপাট-ভাঙ্গচুর করা হয়, প্রতিমা ভেঙে ফেলা হয়। নগর বেলতলী লেনে ১৭ জন হিন্দু ছুরিকাহত হন। নগর বেলতলী এবং হাজারীবাগে প্রায় একশত হিন্দু বাড়ি-দোকান ও ডজনখানেক মন্দিরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সুত্রাপুরে ১৪টি মন্দির, আখড়া ও মঠে হামলা চালিয়ে ভাংচুর-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করা হয়। শতাধিক হিন্দু বাড়ি ও দোকানে হামলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লুটপাটের পর তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
চট্টগ্রামঃ
৩১ অক্টোবরের সন্ধ্যায় বাবরি মসজিদের ধ্বংসের মিথ্যা খবরে প্রকাশের গুজবের জেরে হাজার হাজার মুসলিম রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ ফাঁকা গুলি এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। কারফিউ জারি করা হয় বন্দরনগরীতে। মাঝ রাতে ২০০০ উগ্রবাদী মুসলিম হাতে রড এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে কৈবল্যধাম মন্দির এবং এর আশেপাশের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা আক্রমণ করে। এ কথা জেনে রাখা ভালো কৈবল্যধাম মন্দিরটি পাহাড়তলি অঞ্চলে অবস্থিত। তারা সেখানে ৩০০ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং ফায়ার ব্রিগেড আগুন নেভাতে এলে সেখানে তারা অগ্নিনির্বাপণে বাঁধা দেয়।
সেই রাতের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে চকবাজারের ১৫০০ জেলে পালিয়ে যায় তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে। সেখানে ৫০ টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। রেজাউদ্দিন বাজার এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় মন্দির এবং হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালায় উগ্রবাদীরা। ভোরবেলা আবারও হামলা চালানো হয়।
১৯৯০ সালের ২ নভেম্বর ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজের জন্য কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ সিথিল করা হয়। ইসলামী উগ্রবাদীরা চট্টগ্রামের নিকটে একটি হিন্দু গ্রাম আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়াও পাহাড়গঞ্জ, বোয়ালখালি, আনোয়ারা এবং হাটহাজারিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণে ১০০ এর উপর লোক আহত হয়।
অন্যান্যঃ এছাড়াও যশোর, নড়াইল, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ আর সিলেটে হিন্দুদের উপর হামলা হয়।
ভারতে এখনও ৬ ডিসেম্বর পালিত হয় প্রগতিশীল দলগুলো দ্বারা। বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতে বাবরি মসজিদের ধ্বংসের দিন স্মরণ করা হয়। কিন্তু এই ঘটনার আগে পরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত কিছু অঞ্চল যেমন কাশ্মীর, আসামের কিছু অঞ্চলে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর কি নির্যাতন হয়েছিল তা নিয়ে চুপ থাকে এই মিডিয়া। এমনকি ব্রিটেনেও তখন ৬ টি হিন্দু মন্দির আক্রান্ত হয়। ইতিহাসের সত্যের উপর ধুলো ছড়িয়ে এই মিডিয়া বলে, “ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হল, কই বাংলাদেশে হিন্দুদের সাথে তো কিছু হয় নাই।”
আমি যেকোনো রকম সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে। তাই যখন মিডিয়া নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা বানানোর অপচেষ্টা করে তখন শামসুর রাহমানের সুধাংশু কবিতাটি মনে পড়ে।
তথ্যসূত্রঃ
১। উইকিপিডিয়া
২। Fears grow over temple attacks, Wednesday 09 December 1992, The Independent, UK.
৩। http://www.hrcbm.org/NEWLOOK/1992.html
৪। ‘মাফকিলাব’-এর সাম্প্রদায়িক সাংবাদিকতা অব্যাহত আছে অব্যাহত আছে ‘মাফ’ প্রার্থনাও, মহিউদ্দিন আহমেদ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪
৫। http://empireslastcasualty.blogspot.com/
তাহলে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? বাবরী মসজিদ এখনও ভাঙা হয় নি তাহলে?
বলচেন কি মশাই! বাংলাদেশে আবার হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা হয় নাকি? সবইতো পশ্চিমা আর ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের দালালদের অপপ্রচার। বাংলাদেশে তো ইসলাম প্রচারের আগে থেকেই হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান। হিন্দু মুসলিম বিভেদ তো সব ব্রিটিশদের সৃষ্টি। ওরা আসার আগে ত হিন্দু মুসলমান ভাইভাই ছিল। গলায় গলায় জড়াজড়ি করে থাকত।
আর মালোয়ান বা মালু ডাক নিয়ে যে এত মাতামাতি তাতো ব্রিটিশরাই প্রথম বলেছে। মুসলমানরা ত এই শব্দের নামই কখনো শোনেনি। যদিও মহান অসাম্প্রদায়িক দেশের সংখ্যাগুরু দেশপ্রেমিক জনগণ কখনো এই গালি কাউকে দিয়েও থাকে তা শুধু খেলার সময় ভারতীয় খেলোয়াড়দের বা ভারতীয় নাগরিক দের দেয়।বাংলাদেশের হিন্দু খেলোয়াড় বা হিন্দুদেরকে দেয় না।
সত্যি বলছি তারা কিন্তু খুব অসাম্প্রদায়িক। বিশ্বাস করুন খেলার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ক্রিকেট খেলার সময় কিন্তু আমরা খুব অসাম্প্রদায়িক। ধর্মের সাথে এর কোনও সংস্পর্শ নেই!!!