এক.
কিছুদিন আগে বিজ্ঞানযাত্রা পত্রিকার সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মাসুম মুক্তমনায় একটি পোস্ট লিখেছিলেন। এই বছরই কয়েকজন বিজ্ঞানের ছাত্র মিলে এই পত্রিকাটির সূচনা করেছে, উদ্দেশ্য বাংলাদেশের ক্রমসংকুচিত বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে একটি বিপরীত প্রচেষ্টা জারি রাখা। পত্রিকার পাশাপাশি আমরা অনলাইনে বিজ্ঞানযাত্রা নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছি যেখানে যে কোন বিজ্ঞান সম্পর্কিত লেখালেখি করা যাবে। যে কোন বিজ্ঞান-উৎসাহী ব্যক্তিই সেখানে একটি আইডি খুলে লিখতে পারবেন। আমাদের বিশ্বাস এর মাধ্যমে তরুণ ও প্রবীন উভয় প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মস্তিষ্কগুলোকে আমরা এক জায়গায় করতে পারব, যারা সকলেই বিজ্ঞানের ছাত্র।
সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার সাথে আমরা প্রাসঙ্গিকভাবেই জড়িয়ে গেছি। বাংলাদেশিজম নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে OMG! The Science Show নামে একটি ইউটিউব শো করা হয়। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক শো এমনিতেই হাতেগোনা, তাই স্বভাবতই আমরা আগ্রহী হই। এ পর্যন্ত তারা ১২টি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যার শিরোনামগুলো নিম্নরূপ:
- রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের ১০টি সত্য ঘটনা!!!!
- মানুষের চন্দ্রাভিযান মিথ্যা ছিল?
- মানব শরীর রহস্য
- পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ১০টি দেশ
- এখনও বেঁচে আছে ডাইনোসর!
- চোখ ধাঁধানো মানব শরীর ফ্যাক্টস
- স্বপ্ন রহস্য – স্বপ্ন কি আসলেই সত্য হয়?
- Black Knight Satellite
- পাওয়া গেল নতুন পৃথিবী!!
- যে প্রশ্নের উত্তর জানে না কোন মানুষ
- পৃথিবীর অভ্যন্তরের কিছু অবাক করা অজানা রহস্য!
- বিগ ব্যাং – মহাবিশ্বের সৃষ্টি | কিন্তু তার আগে কি হয়েছিল?
তাদের এই ভিডিওগুলোর কথা আমরা জানতে পারি মাসরুফ হোসেনের স্ট্যাটাস থেকে, যেখানে তাদের সর্বশেষ ভিডিওটির সমালোচনা করে মাসরুফ লিখেছেন:
সায়েন্টিফিক থিওরি নিয়ে এত এত কথা বলার পর সবশেষে নাহিদ সাহেব বললেন, “আমার ধারণা, সব কিছু সৃষ্টি করেছেন উপরওয়ালা। উপরে একজন বসে আছেন, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন”
আমি আস্তিক নাস্তিক বিতর্কে যাচ্ছিনা- কিন্তু একটা সায়েন্স শো তে এসে বিগ ব্যাং থিওরি ব্যাখ্যা করার সময় কেউ যখন এটার সাথে ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস মিলিয়ে বানী দেয়- তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমি প্রচন্ড সন্দীহান হয়ে পড়ি।
এই ভদ্রলোক খুব ভালভাবেই জানেন, বাংলাদেশের ধর্মভীরু মানুষ সায়েন্সের সাথে তাঁর এই ধর্মবিশ্বাস মেলানো কথাবার্তা খুব আগ্রহ নিয়ে গিলবে, তাই এই কাজটি তিনি করেছেন।
প্রিয় পাঠক, দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আমি ধর্মবিশ্বাসকে খাটো করছিনা।
কিন্তু বিগ ব্যাং থিওরি ব্যাখ্যা করার এক পর্যায়ে এর মধ্যে যখন ধর্মের মাখন লাগানো হয়- জিনিসটা পচে গলে পুরো গন্ধ বেরিয়ে পড়ে।
“বিগ ব্যাং-এর আগে কি হয়েছিল, জানার প্রয়োজনও নেই এ মুহূর্তে”- এ টাইপ কথা বলে নাহিদ সাহেব যখন অনুষ্ঠানটি শেষ করলেন, আমার মনে হল শ্যাওলা ধরা মলমূত্রযুক্ত কোনও ড্রেনের দুর্গন্ধে আমার পুরো ল্যাব ভরে গেল।
বিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে অনুসন্ধিৎসা, অজানাকে জানার প্রচন্ড আগ্রহ এবং আমৃত্যু সাধনা- যে সাধনার ফলে মানব জ্ঞান বিজ্ঞান এতদূর এসেছে।
আর সায়েন্স শো নামের এই নোংরা বস্তুটি শেষে মেসেজ দিচ্ছে, “জানার প্রয়োজন নেই”।
দুর্দান্ত মানের ভিডিও এডিটিং আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, সেইসাথে চটকদার কথাবার্তা মিলিয়ে এই মলমূত্র আবার খাওয়ানো হচ্ছে বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকে- যারা এগুলো বেদবাক্য হিসেবে মেনে নিচ্ছেও!
মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে বিগ ব্যাং তত্ত্বের ওপর অনেকেরই আগ্রহ আছে। কিন্তু এই তত্ত্বটি নিয়ে অধিকাংশ মানুষের জ্ঞানই ভাসাভাসা। মোটা দাগে আমরা জানি যে “অনেকদিন আগে একটা মহাবিস্ফোরণ হয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে। এই সৌরজগতের পৃথিবী গ্রহে আমাদের বসবাস।” ব্যস!
OMG! The Science Show-এর পর্বটি দেখতে গিয়ে দেখলাম অসংখ্য ভুল তথ্য এবং সরলীকরণ করা হয়েছে। এক বিষয়ের সাথে আরেক বিষয় মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। ভিডিও বানানোর আগে যে ন্যূনতম পড়াশোনা করে নেয়া প্রয়োজন, তা নির্মাতারা করেন নি। শুধু তাই নয়, প্রায় পাঁচ মিনিটের ভিডিওতে তিন মিনিট পরই উপস্থাপক ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসকে দর্শকের ওপর চাপিয়ে দিলেন! বললেন:
তবে আমার জন্য ব্যাপারটা সহজ। আমার ধারণা, সবকিছু সৃষ্টি করেছে ওপরওয়ালা। ওপরে কেউ একজন বসে আছেন যিনি সবকিছুই ক্রিয়েট করেছেন। বিগ ব্যাংও তিনি ক্রিয়েট করেছেন। মহাবিশ্বও তিনি ক্রিয়েট করেছেন। প্রতিটা গ্রহ তিনি ক্রিয়েট করেছেন। আমার জন্য ব্যাপারটা ইজি। কিন্তু…
অনেকে বিশ্বাস করতে চান না, যে পৃ… এই মহাবিশ্ব হয়তো কেউ বানিয়েছে। তাদের ধারণা হয়তো অন্য কোনভাবে এসেছে। বাট হোয়াটেভার ইট ইজ, উই হ্যাভ নো আইডিয়া। হোয়াট হ্যাপেনড বিফোর বিগ ব্যাং।…
… হয়তো আমরা কখনো জানবো না বিগ ব্যাংয়ের আগে কী হয়েছিল। কিন্তু আমার মতে, জানার প্রয়োজনও নেই আমার এই মুহূর্তে। পৃথিবী নিয়েই আমি অনেক হ্যাপি। এবং আশা করি আপনারাও হ্যাপি।
বিগ ব্যাংয়ের আগে কী ঘটেছিল, সেটির কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ না করে তিনি সরাসরি অতিপ্রাকৃতিক শক্তির দোহাই তুলে বললেন আমাদের এই রহস্য উদ্ঘাটনের কোন প্রয়োজনই নেই। তিনি এই পৃথিবী নিয়ে হ্যাপি আছেন। আমাদেরও হ্যাপি(!) থাকা উচিত।
মাসরুফ হোসেন পোস্ট দেয়ার পরে সাধারণ ফেসবুক ইউজাররাই বাংলাদেশিজমের এই ভিডিওর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মন্তব্য করতে শুরু করেন। ভিডিও নির্মাতা মোঃ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ ওরফে নাহিদরেইনস(!)-এর ফেসবুক পেইজ ও বাংলাদেশিজম পেইজে অসংখ্য মানুষ প্রতিবাদ মন্তব্য করেছেন। মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ সেসব মন্তব্য মুছে তাদের অনেককেই ব্লক করে দিয়েছেন, মন্তব্য মুছে দিয়েছেন ইউটিউব ভিডিওর কমেন্ট সেকশন থেকেও। হেলাল উদ্দিন নাহিদের এহেন ভিডিও এবং তার প্রতিক্রিয়াকে মুখ চেপে ধরার প্রক্রিয়া দেখে আমরা বিজ্ঞানযাত্রার সদস্যরা একটি বিজ্ঞানকেন্দ্রিক সমালোচনা ভিডিও বানানোর পরিকল্পনা করি। মানুষ যতই প্রতিবাদ করুক না কেন, তা মূলত ক্ষণস্থায়ী। এই ভিডিওটি আগে পরে যারা দেখবেন, তারা ভুল ধারণা পাবেন। বিগ ব্যাং থিওরির ব্যাপারে কোন আইডিয়া না থাকাও এসব ভুল ধারণার চেয়ে শ্রেয়। সে উদ্দেশ্য থেকে আমরা তার ভুল বক্তব্যগুলোকে খণ্ডন করে সঠিক তথ্য তুলে ধরি আমাদের ভিডিওতে। আমাদের ফোকাস ছিল বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক সত্যে, বিশেষ প্রচেষ্টা ছিল যেন আমাদের ভিডিওটিকে ভুলভাবে না নেয়া হয়। সে ভুল বুঝাবুঝি এড়াতে শুরুতেই আমরা বলে নিয়েছিলাম, যে এটি মূলত তথ্যের বিভ্রাট সংশোধনের নিমিত্তেই বানানো হচ্ছে, ব্যক্তি নাহিদ বা বাংলাদেশিজম প্রজেক্টের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। ভিডিওটি মাত্র দুই দিনেই ফেসবুক ও ইউটিউব মিলিয়ে দেখেছেন প্রায় পৌনে দুই লক্ষ মানুষ। ফেসবুকের ভিডিওটি শেয়ার হয়েছিল দেড় হাজার বারেরও বেশি।
কিন্তু আমাদের সেই উদারতার সুযোগ নিলেন মোঃ হেলাল উদ্দিন নাহিদ। তার ভিডিও ভুলভাল তথ্যগুলো তুলে ধরার পরও তিনি কোন জবাব দেন নি। বরঞ্চ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নালিশ জানিয়েছেন কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের। আমাদের ১৩ মিনিটের ভিডিওটি নাকি তার পাঁচ মিনিটের ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘন করেছে। তার ভিডিওর থেকে শুধুমাত্র ভুল অংশগুলো নেয়া হয়েছিল, এবং তারপর আমাদের মৌলিক স্ক্রিপ্টকে যোগ করা হয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে কোনরূপ যোগাযোগ করে নি। আমাদের ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ দেয়া হয় নি। কেবল হেলাল উদ্দিন নাহিদের অভিযোগের ভিত্তিতেই ভিডিওটি মুছে দিয়েছে, মুছে আমাদেরকে ইমেইল করে জানিয়েছে। ফেসবুকের বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের ভিডিওটি ফিরিয়ে আনতে হবে জনাব নাহিদের সাথেই যোগাযোগ করতে হবে। তিনি অভিযোগ তুলে নিলেই শুধুমাত্র তারা ভিডিওটি ফিরিয়ে দিবে। আমাদের কোনপ্রকার অ্যাপিলের কোন অপশনও তারা রাখে নি। এরকম বিদ্ঘুটে শর্ত ও হাস্যকর পরিস্থিতি হতে পারে তা আমাদের ধারণা ছিল না।
যা হোক। যস্মিন দেশে যদাচার। ফেসবুকের তথাকথিত কপিরাইট যেন লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যবস্থা করে আমরা আবারও ভিডিওটি আপলোড করবো। ইউটিউবে ভিডিওটি এখনও আছে। এইদিক দিয়ে ইউটিউবের নিয়মকানুন বেশ ভাল দেখেছি। মাথামোটার মত বিনা নোটিসে ভিডিও ডিলিট করে দেয় না, বরং মগজের কিছুটা ধূসর বস্তু কাজে লাগায়।
দুই.
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কেটে গেছে, এখন কিছু বিশেষ নির্যাস পাই এই পুরো ঘটনা থেকে (যে কারণে মুক্তমনায় এই পোস্টের অবতারণা)।
১। বাংলাদেশের সমাজে বিজ্ঞান নিয়ে জনপ্রিয় মতামতগুলো প্রচণ্ড ভুল ধারণার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
২। এই সকল ভুল ধারণাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করে কিছু ধুরন্ধর চতুর সুবিধাবাদীরা।
৩। এ সকল সুবিধাবাদীরা সাধারণ মানুষের আবেগকে ম্যানিপুলেট করে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।
৪। প্রবল জনপ্রিয়তার কারণে এদের মূল প্ল্যানকে এক্সপোজ করা বেশ কঠিন, কারণ সাঙ্গপাঙ্গের দল হামলে পড়ে।
৫। বাংলাদেশে সঠিক তথ্যের চেয়ে তথ্যটিকে কতটা চটকদার করে পরিবেশন করা হচ্ছে সেটা বেশি জরুরি।
৬। বিজ্ঞান বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে জানার আগ্রহও প্রবল। এবং এই বিষয়ে মানসম্পন্ন কনটেন্ট নেই বললেই চলে।
৭। ওয়ান-টু-ওয়ান খোঁচাখুঁচিতে আসলে মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। শুকরের সাথে কাদায় নেমে লড়াই করার তাকত থাকলেই যে লড়াইয়ে নেমে পড়তে হবে এমন কোন কথা নেই।
এই কথাগুলো গতকাল থেকেই বারবার করে ভাবছি। ভাবনা এতটাই জ্বালাচ্ছে যে না লিখে পারছিলাম না। বিজ্ঞানযাত্রার সাথে আমার জড়িয়ে পড়া হুট করেই। কিন্তু গত এক সপ্তাহের ঘটনাচক্রে কেমন একটি জেদ চেপে যাচ্ছে। প্রভাবশালী বলয়কে কাজে লাগিয়ে এমন কত প্রচেষ্টাকে রুখে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাতে কেউই থেমে থাকে নি। দিন শেষে সত্যের জয় হয়, যদি সত্যের সপক্ষের মানুষগুলো লেগে থাকে।
বিজ্ঞানযাত্রার পেছনে ও সাথে যারাই আছেন, সকলেই মোটামুটি একমত যে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো নিয়ে তথ্যনিষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশনার ভিডিও সিরিজ বানাতেই হবে। তাই এই বিষয়ে এর মধ্যেই আমরা রান্নাঘরে মশলাপাতির কাজ শুরু করে দিয়েছি। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অনেকগুলো পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এগুলো দেখে উৎসাহ পাই এবং আশাবাদী হই ভবিষ্যৎ নিয়ে। মুক্তমনায় অনেক সহব্লগারই বিজ্ঞানযাত্রার কথা জেনে যোগাযোগ করেছেন, মাসুমের পোস্টে মন্তব্য রেখে উৎসাহ দিয়েছেন। তাই মনে হলো আমাদের চলমান লড়াইয়ে পর্দার পেছনের ঘটনাগুলো আপনাদের সকলকে জানাই। কাদের সাথে আমাদের লড়াই চলছে, এটা জানা থাকলে কর্মপন্থা গুছিয়ে নিতে সুবিধা হয়।
এই লড়াইয়ে অংশ নিতে আগ্রহীরা আমাদের ফেসবুক পেইজে বা ব্লগে যোগ দিতে পারেন। পাঁচ আঙুল একত্রে জড়ো হলেই মুঠো তৈরি হয়!
[…] লড়াইয়ের কথা মুক্তমনায় লিখেছিলাম। […]
ভিডিওটি দেখার সময় ই কেমন যেন গরমিল লাগছিল, তারপর ও continue করছিলাম। পড়ে শেষ কয়েকটি লাইন শুনেই বুঝে গেছি এ কি জিনিশ!, যাই হোক এর মত মাথাফুলা লোক এর কোন বিষয়ে নাক না গলানোই বুদ্ধিমানের কাজ,। ভালো কিছু, পরিপুর্ন কিছু জ্ঞানী দের কাছ থেকে আশা করছি।
বাংলাদেশিজম পেইজটা কী “রেডিও মুন্না”র সাথে যুক্ত নাকি ? কারন পেইজটার মাঝে আমি শিবির শিবির গন্ধ পাই ।
আমার মনে হয় নাহিদের মত একটা ভাঁড় আর ফেসবুকের বাণিজ্যিক কৌশল নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ভিডিও সিরিজ এবং সেগুলো নিয়ে প্রচারণার মাধ্যমেই অপবিজ্ঞান প্রচারকারী রেইনসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আমারও তাই মনে হয়। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা এখন কাজ করছি। ওরকম একটা ভাঁড় অতি সহজেই বিলুপ্ত হবে।
অনেক অনেক শুভকামনা, আপনাদের উদ্দেশ্য সফল হোক
সবাই লেগে থাকলে উদ্দেশ্য সফল হবেই! 🙂
কিছু মানুষের লক্ষ্যই থাকে খ্যাতি কামানো, তা যে উপায়েই হোক। বিজ্ঞানের ইজারা নিতে চাওয়া মানুষ এই নাহিদ রেইন, আর আপনারা তার সেই ইচ্ছায় বাধা দিচ্ছেন। সে তো এইটুকু করবেই। বিজ্ঞানের ইজারা নিতে চাওয়া মানুষ আগেও দেখেছি, তাই আমি একটুও অবাক হইনি। নাহিদ রেইন এর ভন্ডামি ধরা খেল, কারণ তার জ্ঞান এতোটাই সীমিত, বিজ্ঞানের সাথে কতটুকু অপবিজ্ঞান মিশাতে হবে, শিখে উঠতে পারেনি। এইযে একজন অপবিজ্ঞানবাদীর মুখোশ খুলে দিচ্ছেন, সেটাই অনেক। আগাছারা বেশী উঁচুতে উঠতে পারে না বটে, তবে সুযোগ পেলে পুরো মাঠ ছেঁয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে। আপনাদের প্রচেষ্টা বজায় থাকুক। :good:
অনেক ভাল লাগলো আপনার মন্তব্যটা। আসলে ঠিকই বলেছেন। আগাছার উদাহরণটা দারুণ! :good:
এই সমস্ত ভন্ড ধার্মিকদের (নাহিদ)কারনেই অনেক ধর্মমনা শিশু-কিশোররা নাস্তিকতার পথ বেছে নিবে একদিন,তা এই আহাম্মকরা বুঝতেই পারেনা।
কারন ধর্মের ভন্ডামি আর প্রতারনা যখন মানুষ ধরতে পারে তখই তারা নাস্তিকতার দিকে পা বাড়ায়….
একমত হতে পারলাম না আপনার বক্তব্যের সাথে। ভণ্ড ধার্মিকদের কথায় বেশিরভাগ মানুষ প্রভাবিত হয়ে তাদের শেখানো বুলিই অনুসরণ করে। যারা ভণ্ডামির মুখোশ চিনতে পারে, তারা ভণ্ডকেই ঘৃণা করে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই পর্যন্তই। নাস্তিকতার দিকে পা বাড়ানোর জন্য এটি খুব ছোট কারণ, খুব বেশি হলে একটি প্রচ্ছন্ন প্রভাবক।
মায়ের ওপর রাগ করে বাবার কোলে গিয়ে যে সন্তান বসে, পরের দিন বাবার কথায় মন খারাপ করে আবার মায়ের কোলেই ফিরে যায়।
ভেরিফাইড পেইজ থেকে কমপ্লেইন করলে ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন নমনীয় হয়ে যায়। তাছাড়া, নাহিদ ফেসবুককে মাসে হাজার ডলার দেয় তার দুটি পেইজের ক্যাম্পেইনের জন্য। সাইট যা ফলোয়ার তার ৯৫ ভাগই পেইড ক্যাম্পেইন বাকী ৫ ভাগ অর্গানিক। তাছাড়া ও নিজের ফেক আইডি আছে শ খানেক। প্রসংগত উল্লেখ্য, বাংলাদেশিজম পেইজটা তার ধান্ধাবাজির একটা অংশ, যেটা সে শাহবাগ আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে করেছিলো। শুধু পার্থক্য হলো, আমরা শাহবাগ আন্দোলন করেছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে। কিন্তু সে বাংলাদেশীজম প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলো বিদেশ থেকে মোটা অংকের অনুদান বাগাতে ও খ্যাতি কামাতে।
বিজ্ঞানযাত্রার সাথে আছি।
আপনি ঠিক বলেছেন। ফেসবুক মূলত ইউজারবেইজ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়, কার কথা শুনবে। নাহিদের পাশাপাশি বাংলাদেশিজম প্রজেক্টের পেছনে আরিফ আর হোসেনের মতো কর্পোরেট ভাঁড় ও তথাকথিত ফেসবুক সেলিব্রিটিরও লগ্নি আছে। তিনি চালাক ব্যক্তি, পর্দার আড়ালে থাকেন। বিশেষ প্রয়োজনে বের হয়ে আসেন।
শুধু নাহিদ রেইন ই না। এরকম অনেক ভন্ড পীর , দরবেশ আছে যারা এই কাজ গুলো করে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। কিন্তু আমাদের ফোকাস টা সেদিকে না রেখে সত্যের দিতে রাখতে হবে। কারন, সত্য একদিন না একদিন ঠিকই উন্মোচিত হবেই। আর মিথ্যা সে যত বড়ই হোক, ধ্বংস হয়েই যাবে। @ নাহিদ ও একদিন তার বিজ্ঞান শো আর আইনস্টাইন মের বিগ ব্যাং থিউরি নিয়ে পিছু হাটবে।
আমরা আপনাদের সাথে আছি। আপনাদের কাছে শুধু একটাই অনুরোধ যে, ভিডিও কন্টেন্ট গুলো এতটা প্রাঞ্জল করে বানাবেন যেন, আমরা যারা পদার্থবিজ্ঞান জানিনা, গনিত বুঝিনা, জীববিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নেই, তারা অন্তত সহজে বুঝতে পারি। ধন্যবাদ
প্রাঞ্জল বানানোই মূল লক্ষ্য। জটিল সমীকরণ বা সংজ্ঞা তো বইতেই পাওয়া যায়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাজে জনপ্রিয়করণ, যেন বেশি বেশি মানুষ বিজ্ঞানের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানমনস্কতাকে একটি হিতকর ও সর্বজনস্বীকৃত বিষয়ে পরিণত করতে হবে।
ফেসবুক একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ | মুক্ত চিন্তার প্লাটফর্ম নয় যেমনটা তারা দাবি করে | সুতরাং কারো ধর্মানুভুতিতে বিশেষ করে মুসলিমদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেবার সাহস তারা করবে না | ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এটা ভালো করেই জানে যে মুসলিম ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেবার ফল কি হতে পারে | যে মুসলিমরা সামান্য কার্টুনের জন্য মানুষের গর্দান নিতে পারে , তারা যে ফেসবুক কমেন্টের জন্য ফেসবুক ব্যান করবে না তা কে বলতে পারে | আর তাই যদি হয় তাহলে ফেসবুকের কোটি কোটি টাকা ব্যবসার ক্ষতি হবে যা “মার্ক জোকারবার্গ” কখনই মেনে নেবে না |
সুতরাং আমাদের মুক্তমনাদের বুঝতে হবে যে ফেসবুকেও আমরা সংখ্যালঘু , অতএব বাংলাদেশ সরকারের মত ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো মদত করবে না | আসলে ব্যবসাটাও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে কিনা | সংখ্যালঘুদের জন্য কেউ কিছু করে না | পশ্চিমের সবকিছুই লোকদেখানো |
আমার পরামর্শ হলো ফেসবুকে কোনো ভিডিও বা পোস্ট সবার সাথে শেয়ার করবেন না | শুধু হাতে গোনা বন্ধুবলয়ে শেয়ার করুন | সবার সাথে বন্ধুত্ব করবেন না | শুধু সম মানসিকতার লোকেদের সাথে বন্ধুত্ব করুন | এর জন্য প্রয়োজন পরীক্ষা করা | ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চট করে একসেপ্ট করবেন না | বহুদিন ধরে তার মতাদর্শ তথা মানসিকতা যাচাই করুন | যদি লোকটা মুক্তমনা হয় তবেই তাকে গ্রহণ করুন |
যুক্তিবাদী,
“…আসলে ব্যবসাটাও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে কিনা”
এটা ঠিক বললেন না। ফেসবুকের নীতি আসলে মুনাফা। সেদিক থেকে ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপারে তারা খুব একটা সংবেদনশীল না। ফেসবুকে অজস্র পেইজ ও গ্রুপ আছে যেগুলো তথাকথিত অনুভূতিতে আঘাত হানে। ইউজারের সংখ্যাও হাজার, লক্ষ ছাড়িয়ে। সেগুলো ফেসবুক ডিলিট করে না, কারণ সেগুলো অনেক বেশি মুনাফা এনে দেয় তাদেরকে। আমাদের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা মূলত ফেসবুকের ভিডিও নীতিমালার লুপহোলের সাথে জড়িত। তারা ভিডিওর ব্যাপারে চৌর্য্যবৃত্তির চর্চাকে উৎসাহিত করে, কিন্তু চুরি ধরা পড়লে তাড়াতাড়ি সেটা ডিলিট করে ভালোমানুষ সাজতে চায়। আমাদের ভিডিও নামে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ আসার পরে সেই “ভালোমানুষি” দেখিয়েছে তারা।
যে জিনিষটা আমি বলতে চাই তা হলো যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে উভয়পক্ষের কথা শুনতে হয় | এটা প্রিন্সিপল অফ ন্যাচারাল জাস্টিস | আপনাদের ভিডিও ডিলিট করার আগে কি আপনাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে ফেসবুক সেটা অন্যায় করেছে | ফেসবুক এমনটা তসলিমা নাসরিনের বেলাতেও করেছে | তার একাউন্ট সাসপেন্ড করে রাখা ছিল মৌলবাদীদের অনুভুতিতে আঘাত লাগার কারণে এবং ফেসবুক এটা করেছিল তাকে সম্পূর্ণ না জানিয়ে, তার পক্ষ না শুনে | এ নিয়ে আনন্দবাজারে খবর বেরিয়েছিল | ফেসবুকের এই নোংরা খেলার আমি কঠোর সমালোচনা করছি |
নোংরা খেলাটা মুক্তমনাদের নিয়ে নয়। নোংরা খেলাটা টাকা নিয়ে। ফেসবুক নিজেদের মুনাফা যে কাজে ঘটবে, সেটাই করে। আমি এটুকুই বলতে চাচ্ছিলাম।
হ্যা আমি এবিষয়ে একমত
অনীক ভাই, ধন্যবাদ আপনার পোস্টটার জন্য।
ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায়, যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞান লড়াই করে আসছে অপবিজ্ঞান, ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার আর মানুষের মনের গভীরে গেঁথে থাকা প্রাচীন বিশ্বাসের সাথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিতে যায় বিজ্ঞানই। তাই আমাদের লড়াইটা দেখে অবাক লাগছে না। অন্তত বুঝতে পারছি কোন বিষয়গুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও মানুষ মানতে চায় না, বা কোন বিষয়গুলোর উপর মানুষের জ্ঞান ভাসা ভাসা। ঠিক করতে পারছি কোন বিষয়গুলো আমাদের প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। এটা বেশ ভালো একটা স্টার্টিং। ধীরে ধীরে সব বিষয়ই ছোঁয়া হবে।
নির্ঝর, আমার মতে প্রথমে ভাসা ভাসা জ্ঞানকে ডোবা ডোবা করা দরকার। এভাবে ভিত্তি মজবুত হবে। বিজ্ঞানের জটিল ও চ্যালেঞ্জিং আইডিয়াকে গ্রহণের মন তৈরি হবে। তার পরে সেসব বিষয়কে ট্যাকল করা উচিত। (আমরা যারা প্রজেক্টে অংশ নিতে ইচ্ছুক, তাদেরও ম্যাচুরিটি ও এক্সপেরিয়েন্সের দরকার আছে, তাই সহজ বিষয় নিয়ে শুরু করাই ভাল)
নাহিদ রেইন্স যে কাজটা করেছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা আছে। কিন্তু সঙ্গত কারণেই সেই ভাষা এখানে প্রয়োগ করছি না। মেজাজ খারাপ হয়েছে ফেসবুকের উপর। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে স্রেফ অভিযোগের ভিত্তিতে একটা ভিডিও সরিয়ে নেওয়া কোনো মতেই গ্রহনযোগ্য নয়। এই ব্যাপারগুলোতে আরো প্রফেশনাল না হলে, ফেসবুকও এক সময় আর দশটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতই হারিয়ে যাবে।
তবে ভালো লেগেছে, এই ধাক্কায় বিজ্ঞানযাত্রার মধ্যে নতুন প্রতিজ্ঞা ও কর্মোদ্দীপনার স্ফুরণ দেখে। সেই দিন দূরে নয়, যে দিন কসমসের মত একটা টিভি প্রোগ্রাম বাংলাতেও বানানো হবে। এই বিজ্ঞানযাত্রার হাত ধরেই।
বিজ্ঞানযাত্রার অভিযাত্রীদের জন্য শুভকামনা।
প্রতীজ্ঞা করলাম।
তানভীর, ফেসবুকের ভিডিও ফিচার নিয়ে যত নেতিবাচক কথা শুনলাম, তাতে আশা করি না তারা সহসা এই মানসিকতা ত্যাগ করবে। লক্ষ লক্ষ চুরি করা ভিডিও তারা আপলোড করতে দেয়, এবং সেগুলো থেকে মিলিয়ন ডলার কামিয়ে নেয় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে। মূল ভিডিওর নির্মাতারা অভিযোগ করলে সেটা সরিয়ে ফেলে, কিন্তু ততক্ষণে তাদের মূল উদ্দেশ্য সফল।
নিউজ ফিড স্ক্রল করার সময় ভিডিওগুলো নিজে নিজে চালু হয়ে যাওয়াও সেই প্রজেক্টের অংশ। ইউজারকে তারা বাধ্য করছে ভিডিও দেখার জন্য। ইউটিউবে হ্যাঙ্ক গ্রিন, ASAPScience-সহ অনেকেই ফেসবুকের এই স্ট্র্যাটেজির সমালোচনা করেছেন। দেখা যাক সম্মিলিত প্রতিবাদে তাদের মানসিকতা বদলায় কি না (সম্ভাবনা যদিও ক্ষীণ)।
সবার সাথে ঘটনাগুলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
বিজ্ঞানচর্চা করতে এসে এতোটা রাজনীতি করতে হবে, সেটা বুঝতে পারিনি। রাজনীতি আছে সবখানেই, কথা ঠিক। কিন্তু এগুলো নিয়ে সময় চলে যাচ্ছে। জ্ঞানভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজে এগুলো কিছুটা হলেও সময় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সামনে আশা করি, এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা কমে আসবে। আর এলেও আমাদের উদ্যমে কোনোভাবেই ভাটা পড়বে না। বিজ্ঞানের নাম করে নিজের বিকৃত মতাদর্শিক আধিপত্য ছড়াতে চাইলে বিজ্ঞানযাত্রা বারবারই হুংকার ছাড়বে।
এই যাত্রায় বিজ্ঞানকে ব্যাপক সমর্থন দেয়ার জন্য সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কমেন্ট, শেয়ার, পেইজে ইনবক্সে মেসেজ করে সবাই যেভাবে পাশে থাকার প্রতীজ্ঞা ব্যক্ত করেছে, তা সত্যিকারের আনন্দানুভূতি দেয়। You guys are awesome.