অনলাইন জুড়ে আজ শোক। নিলয় নীলকে নিয়ে কথা, আলোচনা। এর আগে অভিজিৎ রায়, বাবু ভাই আমার পরিচিত ছিলেন, তাদের লেখা আমি নিয়মিত পড়তাম। অভিজিৎ রায় প্রায় আমার লেখায় লাইক দিতেন, একদিন কমেন্ট ও করেছিলেন, তবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। বাবু ভাইয়ের সাথে তো আলাপ হয়েছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু অনন্ত বিজয় দাস সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না বলে তার ব্লগগুলো ঘাটাঘাটি করলাম। অনেকেই হয় তো জানেন না অনন্ত সহ তার নয় সহযোদ্ধা ২০০৮ সালে মরণোত্তর চক্ষু দান করেছিলেন। তার নিলয় নীল চোখগুলো দানের ক্ষেত্রে আস্তিক নাস্তিক ভাগ করেন নি। ধর্মের দোহায় দিয়ে এমন মানবতাবাদী মানুষটিকেই কিনা খুন করল ধার্মিকেরা? আমি ভাবছিলাম, তাকে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার চোখ গুলো কি অক্ষত আছে? কোন মানুষকে তার চোখ গুলো দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে?
ফেব্রুয়ারীতে অভিজিৎ হত্যা, মার্চে বাবু হত্যা, এপ্রিলে টিএসসিতে যৌন সন্ত্রাস যার উদেশ্য ছিল বাঙ্গালী সংস্কতির উপর আঘাত, মে’তে অনন্ত হত্যা। বাংলাদেশটাকে বাকিস্তান বানানোর জন্য তারা সম্ভবত প্রতি মাসে মাসে এমন হত্যা যজ্ঞের কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। কারা করছে এইটা নিয়ে সম্ভবত কোন বিতর্কের প্রয়োজন পরে না। এই দেশে সব জঙ্গি সন্ত্রাসীদের দল জামায়েত ইসলাম। তারা কখনো হেফাজতে ইসলাম নামে
দেশে জঙ্গি মিছিল করে, লুটপাট চালায়, কখনো আনসার উল্লাহ বাংলা টীম নামে ব্লগার হত্যা করে, এক নামে ফেইল করলে নতুন নামে নতুন দল করে। মুল কিন্তু একই থাকে।
অভিজিৎ হত্যার প্রায় দুই মাস পর আলকায়দা ভিডিও বার্তা পাঠায় যে, তারাই নাকি অভিজিৎকে হত্যা করেছে। আলকায়দা হত্যার দায় স্বীকার করার পর সরকার অনেকটা চাপমুক্ত, কারন আলকায়দার বিচার তো তারা করতে পারবে না। কিন্তু অভিজিৎকে কি বিদেশ থেকে জঙ্গি আমদানি করে হত্যা করা হয়েছে ? দেশে এত জঙ্গি কারখানা মাদ্রাসা থাকতে বিদেশ থেকে জঙ্গি আনার কি দরকার পড়েছে? অভিজিতের হত্যাকারীরা এদেশীয় জঙ্গি। তাদের সাথে আলকায়দার যোগসুত্র তো থাকবেই, এতে অবাক হওয়ার কি আছে? ওরা ভাই ভাই। এক ভাইয়ের বিপদে আরেক ভাই দায় স্বীকার করে জানান দিয়েছে যে ভাই ভাইয়ের পাশে আছে।
অনেকে বলছেন, কি দরকার ছিল এসব লেখালেখি করার, লিখেছে কোপ খেয়েছে। কিন্তু লেখালেখি না করলে কি কোপ খেত না? নিশ্চয়ই খেত, সেটা ব্লগিং করার জন্য না হয়ে অন্য কোন কারনে হত হয়তো। যারা নিলয় নীল অভিজিৎ বাবু অনন্তদের হত্যাকে কেবলই ব্লগার হত্যা বলে নিজেরা নিরাপদে আছেন বলে মনে করছেন, তাদের জানিয়ে রাখি, তারা ব্লগার হত্যা দিয়ে শুরু করেছে। সব ধ্বংস না করে কিন্তু তারা শেষ করবে না এই হত্যা যজ্ঞ। এখন তারা নাস্তিক ব্লগার হত্যা করে ধার্মিকদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা প্রথমে মুকচিন্তার পক্ষের সব নাস্তিকদের একে একে হত্যা করে নাস্তিক মুক্ত দেশ গড়বে, অতপর বিধর্মী মুক্ত দেশ গড়বে। তারপর মোডারেটদের ধরবে, এভাবে ধীরে ধীরে শিয়া-সুন্নী-কাদিয়ানী নিজেদের মধ্যে এমন বিভেদ করে নিজেরা নিজেদের হত্যা করবে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের মসজিদ বোমা মেরে উড়িয়ে দিবে যেমনটা পাকিস্তান আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশগুলোতে ঘটছে। কাজেই ব্লগার হত্যা বলে বলে এই হত্যাযজ্ঞকে হালকা ভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশকে জঙ্গিবাদীদের হাত থেকে রক্ষা করতে চাও তো আস্তিক নাস্তিক ধর্ম বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক হও। নয়তো দেশ বাংলাস্তান হতে আর বেশিদিন নেই বলে রাখলাম।