আন্ধারে ভরা রাতি, আলেয়া জ্বালায় বাতি।
বল না, বল না, কে যাবি, আনতে ভোর…।।
-সম্পাদকীয়, যুক্তি(প্রথম সংখ্যা)
সিলেট তথা বাংলাদেশে সামাজিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় মৌলবাদে আক্রান্ত আঁধারে আলো ফোটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে সিলেটে ২০০৫ সালের ২৭শে জুলাই যাত্রা শুরু করেছিল ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল,সিলেট’। ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল-সিলেট’ আর ‘মুক্তমনা’র সাথে আমার পরিচয় কাছাকাছি সময়ে। ২০১২ সাল। আমরা তখন ‘অসাম্প্রদায়িক’ সরকারের শাসনে আছি। তাই ২০০৫ সালের দিকে বিএনপি-জামাতের ‘মৌলবাদী’ শাসনের সময় থেকে এ ধরনের আন্দোলনের সূত্রপাত তো আমাদের কাছে রূপকথা! বিশেষত সাহসী আড্ডার মজার ঘটনাগুলোকে বিষ্ময়কর মনে হতো। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের অনেকের (অনন্তদা, সিদ্ধার্থদা, অভীকদা, তুষারদা) সাথে অবশেষে দেখা হলো আসিফ মহীউদ্দীনের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনে গিয়ে। এ ঘটনা অবশ্যই জীবনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কেননা এঁরা তো রূপকথার একেকটা চরিত্র! এত সাহস নিয়ে সিলেটের মত পশ্চাৎপদ জায়গায় বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী সমাজ গঠন করা চেষ্টা তো অবশ্যই রূপকথা, নাকি!
আজ সেই ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল,সিলেট’র জন্মদিন। এক দশক পূর্ণ হলো। অনন্তদা বেঁচে থাকলে হয়তো নতুন লেখা দিতেন। নতুন স্বপ্ন বুনতেন। স্বপ্নবাজ মানুষটি আর নেই। মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে বিযুকায় যোগ দিতে চেয়েছিলাম। দাদা বলেছিলেন এমনিতে ফর্ম ফিলাপ করে মেম্বার হওয়া যায়। তবে এর সদস্যদের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতেই হয় যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-১. যেকোনো বিষয়ে ক্রমাগত বিতর্ক করে যাওয়ার ক্ষমতা এবং ২. কোনো ধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়া যাবে না। এছাড়া কিছু বইয়ের লিস্টও দিয়েছিলেন। দাদা চলে যাওয়ায় আমার আর বিযুকায় যোগ দেয়া হল না। যাই হোক, বিযুকায় থাকি আর না থাকি, বিযুকার এই দশম জন্মদিনে প্রতিজ্ঞা করছি- যেখানেই থাকি, শেষ দিন পর্যন্ত যুক্তির লড়াই চালিয়ে যাব। আশা করি সংগঠনটি অনন্তকাল টিকে থাকবে। উদ্বুদ্ধ করবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে-বিজ্ঞানে, যুক্তিতে। দুই বছর আগে অকাল প্রয়াত অনন্ত বিজয় দাস এই দিনে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। নিচে শেয়ার করলাম-
“সেই ২০০৫ সাল। আজকের এই দিনে মানে ২৭ জুলাই তারিখের মধ্য দুপুরে সিলেটের কিছু বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ-যুবা মিলে গড়ে তুলেছিল “বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল” নামের সংগঠনটি।
পশ্চাদপদ ধ্যাণধারণার পূণ্যভূমি বলে খ্যাত সিলেটের আলাদা একটা পরিচিতি আছে গোটা বাংলাদেশেই। এই সিলেট যেখানে থেকে কাঠমোল্লারা তসলিমার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল, মুরতাদ আখ্যা দিয়ে কবি শামসুর রাহমানকে নিষিদ্ধ করেছিল, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নামকরণ চাইতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নাজেহাল হতে হয়েছিল, সেই সিলেটে, যেখানের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে রগকাটার প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নিয়মিতই লেগে থাকে, সেই সিলেট, যেখানকার অধিবাসীরা বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলের মানুষদের “আবাদী” বলে ডেকে চরম সুখ পায়! সেই সিলেট যেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের উপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বহু ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সাবেক মেয়রকে হত্যার জন্য গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল এই মৌলবাদীদের তীর্থভূমিতে, সেই সিলেটে বসে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা “চরম বোকামো” মার্কা কাজ বলে অনেকেই অভিহিত করেছিলেন তখনকার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীই। ঘরের খেয়ে বনের মোষ ক’জনই বা তাড়াতে যায়!
তবু আমরা বের হয়েছিলাম কয়েকজন। সিহাব ভাই, হাসান শাহরিয়ার, মাহমুদ আলী, আনোয়ার, শামীম, এবং আমি। কিছুদিনের মাথায় যুক্ত হলো সৈকত, লিটন, মনির, আলীম, কানন, রেজাসহ প্রমুখ। প্রথাভাঙ্গার দুর্নিবার সুখ অন্বেষণে আমরা তখন মহাব্যস্ত সময় পাড় করেছি। আমাদের মধ্যে দুয়েকজন ব্যতীত আর কারোই সংগঠন করার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। রেওয়াজমাফিক সংগঠন পরিচালনার ধারেকাছে না গিয়ে আমরা যে কাজটি নিয়মিতই করতাম তা হলো ধুন্ধুমার বিতর্ক। বয়সের কোনো পার্থক্য ছিল না আমাদের মাঝে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আল্লাহ-ঈশ্বর, ধর্ম, রাজনীতি, যৌনতা হেন কোনো বিষয় নেই আমাদের বির্তকের অংশ ছিল না। সে যেন আমাদের সোনালী দিন! আজকে এতোটা দিন পেরিয়ে এসে পিছনের দিকে তাকালে বড্ড অদ্ভুতই লাগে!
২০০৭ সালে যখন আমাদের সংগঠন থেকে যুক্তি বের করতে উদ্যোগী হলাম, ততদিনে আমাদের মাথার উপরের ছাদখানি সরে গিয়েছে। সুন্দর অভিজাত অফিস থেকে আমরা পৌঁছে গেলাম একেবারে ফুটপাতে। অনেকেই তখন ভেবেছিল… দুইদিনের গলা ফাটানি এইবার থেমে যাবে! ফুটানি আর কয়দিন থাকবো?!
কিন্তু না। আমরা ভাঙ্গি নাই। আমরা বানের পানির মতো ভেসে যাই নাই। বরং আরও শক্তভাবে জোড়া লাগলাম। প্রতি শুক্রবারে শহীদ মিনারের বেদিতে নয়তে শহীদ শামসুদ্দিন কবরস্থানে বসে চলতো আমাদের স্টাডি সার্কেল। সিটি কর্পোরেশন থেকে তখন দরখাস্ত দিয়ে অনুমতিও যোগাড় করে নিয়েছিলাম। বৃহস্পতি-শুক্র-শনি যেদিনই অবসর হতাম সেদিনই চলে যেতাম শহীদ মিনারে। চলতো আমাদের নিয়মিত আড্ডা, তর্ক, বিতর্ক। প্রচুর দর্শক, অনাহূত অতিথিও আসতো আমাদের মাঝে। মাঝে মাঝে স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয় দেখলেই গলা মেলাতো। ধর্ম নিয়ে খোলামেলা বাতচিত শুনলে হা করে তাকিয়ে থাকতো!! বুঝতে পারতাম কারও কারও নাক-মুখ-কান লাল হয়েও যেত! যা হোক, ওসব আমরা থোড়াই কেয়ার করেছি তখন। শহীদ মিনার থেকে আমাদের সরিয়ে দেয়া হলে চৌহাট্টা পয়েন্টের একদম রাস্তার ডিভাইডারে বসেও আমরা আড্ডা দিয়েছি! ভোলানন্দ নাইট স্কুলে কিছুদিনের জন্য ঢুকেছিলাম। এরপর গেলাম রিকাবী বাজারের সৈকত রেস্টুরেন্টের বারান্দায়! কত জায়গায়ই যে আমরা গিয়েছি তার কোনো ইয়াত্তা নেই। নিজস্ব অফিস যখন নিলাম তখন তো আমাদের আক্কেল গুড়ুম! আরে এইটা কিভাবে হইলো আমাদের!!
যাহোক, একটু পিছনের কথায় ফিরি। যুক্তি বের হলো প্রথম সংখ্যা। এর পিছনে বহু ঘটনা, বহু নাটকীয়তা। সে কথা এখন থাক। তবে যুক্তি বের হবার কিছু দিনের মাথায় প্রথম থ্রেট খেলাম। কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলাম! কল্লা নামিয়ে ফেলার হুমকি দেয়া হলো! ফোনটা এসেছিল বিয়ানীবাজার থেকে! যাহোক, এরপর আবারও আরেকটা হুমকি। এটা আবার সিলেটের বাইরে থেকে। মাস খানেকের মধ্যে আবার। কী অদ্ভূত, প্রত্যেকটা হুমকি-ধামকির বাক্যগুলি একই রকম। আমার জন্মলতিকা উদ্ধারের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। একটা বিষয় খেয়াল করলাম, মধ্যরাতের ফোনগুলি সাধারণত এইরকম হয়। যাহোক, আমরা আমাদের কাজে মনযোগী হলাম। আমাদের পিণ্ডি উদ্ধারের জন্য যারা অসীম দরদ নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছিল, তাদের সেই তথাকথিত প্রভুদের পিণ্ডি উদ্ধারে আমরাও নেমে পড়লাম।
ইতোমধ্যে চিন্ময় দা, তরুণ নাট্যকর্মী অসীম আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। আমাদের দল বেজায় ভারি হয়ে গেল। ছোটখাটো মিছিলটিছিল করার মতো লোক হয়ে গেল। ফলে একটা শোডাউন করার জন্য সবার মনটা আকুপাকু করতে লাগলো। সুযোগ খুঁজলাম কি করা যায়! ভাবতে ভাবতে পেয়ে গেলাম দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান করবো বড় করে।
২০০৭ সালের ২৭ জুলাই, সিলেটের সারদা হলে অনুষ্ঠিত হলো বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের প্রচুর শিক্ষার্থী সারদা হলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত। মনির হোসাইন “সবার উপরে মানুষ সত্য” বিষয়ক একটা প্রবন্ধ পাঠ করলেন। মদনমোহন কলেজের বাংলার অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, এমসি কলেজের শিক্ষক মোস্তাক আহমাদ দ্বীন, আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি নুরুল ইসলাম প্রবন্ধের উপর অসামান্য আলোচনা করলেন। আমাদের অত্যন্ত প্রিয় অরুণদা তো স্টেজে উঠে বক্তব্য দিয়ে একদম ফাটায়া দিলেন!! ঢাকা থেকে বিজ্ঞানবক্তা আসিফ এসেছিলেন। মহাজাগতিক ক্যালেন্ডার নিয়ে দারুন একটা বক্তব্য দিলেন। সাথে চললো ডকুমেন্টারি প্রর্দশণী।
এরপর যুক্তির দ্বিতীয়, তৃতীয় সংখ্যা বের হলো। প্রচুর নতুন মুখ আমরা পেলাম। দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের পরই আমরা পেয়ে গেলাম সিদ্ধার্থ, বিষ্ণু, অভীক, তুষারকে। যারা এখন এই সংগঠনের হাল ধরে আছেন। তবে আগের কেউ কেউ নাগরিক জীবনের স্রোতে টিকতে গিয়ে আমাদের থেকে আলগা হয়ে গেলেন।
যুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায়, কাগজে রিভিউ ছাপানো হলো। বাংলাদেশ টেলিভিশনে আলোচনাও হলো। এ আমাদের জন্য বিরাট পাওনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে একদম স্কুল ছাত্র পর্যন্ত প্রচুর সংখ্যক পাঠকের অনেক ভালোবাসা, আবেগের ছোঁয়া আমরা পেয়েছি। ঢাকা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের একদম অজপাড়াগাঁ থেকেও অনেক বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী ব্যক্তি আমাদেরকে প্রেরণ দিয়েছেন। তাদের ঋণ আমরা কেমন শোধ করবো?! একটা ঘটনার কথা এখানে শেয়ার করি আপনাদের সাথে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিভাগের তখনকার বিভাগীয় প্রধান ম্যাডাম (নামটি প্রকাশ করছি না) কোনোভাবে যুক্তি পেয়েছিলেন। সম্ভবত আজিজ সুপার মার্কেটের তক্ষশিলা থেকে তিনি সেটি কিনেছিলেন। যুক্তি পড়ার পর ফোন দিয়ে নিজের অনভূতির কথা আমাদেরকে জানালেন। ব্যক্তিগত অনেক ঘটনার কথাও বললেন। কিন্তু তিনি যখন জানতে পারলেন এই ছোটকাগজটি সিলেটের কতিপয় ২২-২৩ বছরের তরুণেরা ছাপিয়েছে তখন তো বিশ্বাসই করতে পারলেন না!! সিলেটে বেড়াতে আসার পর ফোন দিয়ে বললেন দেখা করার জন্য। ম্যাডামের হাসবেন্ড তিনিও অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সের টিচার। তাদের দুজনের সাথে যখন আমাদের দেখা হলো তখন দেখি যুক্তি’র প্রশংসাবাণীতে তারা ভাসিয়ে দিচ্ছেন আমাদের! ব্যাপারটা তখন এমন হলো যে, আমার তখন বেজায় লজ্জাই লাগলো!! পায়ের নীচ থেকে মনে হলো মাটি নেই! আমি যেন “বাকবাকুম” হয়ে আকাশে ভাসছি!!
আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সম্মানিত শিক্ষকের দেখা পেয়েছি, যুক্তিতে পাঠানো যার একটি লেখার কোনো কোনো পয়েন্টে তথ্যসূত্র চাওয়ায় প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়লেন আমার উপর। বললেন, “বাংলাদেশে তোমরা কি এমন পত্রিকা ছাপাবা যে আমার লেখার রেফারেন্স চাও? জানো আমি নিজেই একটা জ্বলজ্ব্যান্ত রেফারেন্স। আমি অধ্যাপক ড. ***.. আমার লেখা প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকালের পত্রিকা নেবার জন্য হুমড়ি খেয়ে আছে!! আর তোমরা আমার কাছে রেফারেন্স চাইছো!! জানো, আমি ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, নিউইয়র্ক টাইমস্, গার্ডিয়ান পত্রিকা নিয়মিত পড়ি। ওখান থেকে আমার লেখার রশদ যোগাড় করি। ওগুলোর এত্তো এত্তো… রেফারেন্স দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না..!!” সেলফোনের অপরপ্রান্ত থেকে স্বনামধন্য অধ্যাপকের কথা শুনে আমি শুধু একটা মুচকি হাসি দিলাম! ছোটবেলায় ঠাঠা মুখস্ত করা একটা কবিতা দ্রুত আবৃতি করে নিলাম : “আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয়… লোকে যারে … … টু টু টু টু…”!
দীর্ঘ পথ চলতে গিয়ে নানা ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। নানা ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছি। এগুলোর সবকটা লিখতে গেলে গোটা একখানা “বাইবেল” হয়ে যেতে পারে!
পেটের দায়ে মানুষ কিভাবে দ্রুত বদলে যেতে পারে, “ছেকুলার” থেকে দাড়িটুপি মার্কা মোল্রা হয়ে যায় চোখের নিমিষে তারও নমুনা যেমন দেখেছি তেমনি বিপদের দিনে নিঃসংকোচে পাশে দাঁড়াতে পারে এমন মানুষও আমরা পেয়েছি।
তাই আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখতে হিম্মত লাগে। সেই হিম্মত আমরা পেয়েছি আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে, আমাদের পাঠকের কাছ থেকে। যাদের ছাড়া আমাদের আলাদা কোনো অস্তিত্বই নেই।
আমাদের বিযুকা’র আজ জন্মদিন। দেখতে ৮টি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। সেদিনের সেই ভূমিষ্ঠ শিশুটি আজকে আট বছরে পড়েছে।
জন্মদিনের এই দিনে আমাদের সকল বন্ধু-দুশমন, শুভাকাঙ্ক্ষী, সুহৃদ, শত্রুমিত্র, লেখক-পাঠক-যুক্তিবিক্রেতা সকলকে জানাই আন্তরিক
“অন্তহীন” (অনন্ত!) শুভেচ্ছা!
জয়তু বিজ্ঞান, জয়তু যুক্তি”।
জয় হোক বিজ্ঞানের, জয় হোক মানবতার ।
আপনাদের সকলের প্রতি রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। আজকে বন্যাপার ভলতেয়ার লেকচারটার ভিডিও দেখছিলাম। বন্যাপা যখন অনন্ত দার কথা বললেন- বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিলো, বারবার মনে হচ্ছিলো স্কয়ার হাসপাতালের নিচে পাংশু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন অনন্ত দা। অভিদাকে হারিয়ে শোকে কাতর, বন্যাপা আইসিইউতে, তখনও আমরা নিশ্চিত নই, উনাকেও হারাচ্ছি কিনা। অনন্তদাকে সাবধানে থাকতে বললাম, কিন্তু সাবধানের থাকার মানে কী আমি নিজেই জানি না। চোখের সামনে হারিয়ে ফেললাম অনন্ত দাকেও… এখনও মনে হয় একটা দীর্ঘ দুঃস্বপ্ন দেখছি, হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখবো সব ঠিক হয়ে গেছে। হয়তো সেই ঘুম একদিন আমাদের ভাঙ্গবে, হাজার অনন্ত আমাদের সেই ঘুম ভাঙ্গাবেই।
অভিজিৎদা মারা যাওয়ার পর অনন্তদা ঢাকা ছুটে যায়। তখন বারবার উনাকে ফোন দিয়ে বন্যাপু-স্যারের খবর নিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবি নাই যে উনি এভাবে চলে যাবেন। তাই কখনও বলি নাই যে সাবধানে থাকুন। উনি মারা যাওয়ার পর কয়েকজন ফোন দিয়ে জানালো, সাবধান থাকতে বলল। আমিও বললাম যে সাবধানে থাকবেন। কিন্তু এ কথা বলে নিজেই ভ্রুকুটি করতাম! সাবধানে থাকে কিভাবে!
হাজার অনন্ত আসবে নাকি জানি না। কোনো কিছু নিয়ে কথা বলতেই মনে হয় অনেক শক্তি খরচ হয়ে যাচ্ছে!
“তাই আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখতে হিম্মত লাগে। সেই হিম্মত আমরা পেয়েছি আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে, আমাদের পাঠকের কাছ থেকে। যাদের ছাড়া আমাদের আলাদা কোনো অস্তিত্বই নেই।”
সেল্যুট – অনন্ত বিজয় দাস! জয়তু – “যুক্তি”!