রাজন নামের একটি ১৩ বছরের বালককে পিটিয়ে হত্যা করেছে কয়েকটি লোক। কী অপরাধ করেছিল রাজন? যে অপরাধই করুক না কেন একটি ছেলেকে খুঁটির সাথে বেঁধে পেটাতে পেটাতে মেরে ফেলতে হবে তাই বলে? এই হত্যাকাণ্ড ওরা ঘটিয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে, লোকজন সাক্ষী রেখে। একদল পিটিয়ে পিটিয়ে রাজনকে খুন করেছে অন্যদল চারদিকে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করেছে। পরম আনন্দে ভিডিও করেছে তাকে পিটিয়ে পিটিয়ে তিলে তিলে খুন করার দৃশ্য। তা আবার গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। বাঃ, কত আনন্দের ব্যাপার! কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি, নরপিশাচদের হাত থেকে রক্ষা করতে চায়নি কেউ তাকে। বাংলাদেশে মানুষ হত্যা আজ সবচেয়ে বড় উৎসব। কেউ হত্যা করে আনন্দ পায়, আর কেউ সেই হত্যাদৃশ্য দেখে আনন্দ পায়। বিচার যেহেতু কোনো হত্যাকাণ্ডেরই নেই তাই দিনদিন বেড়ে চলেছে এই উৎসবের ও আনন্দের মাত্রা।
নৃশংস ভিডিওটি আমি দেখিনি। আমার পক্ষে সম্ভব নয় দেখা। আমি শুধু খবরটি পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে রাজনের প্রতিটি আঘাত আমার গায়ে এসে পড়ছে, পড়ছে আমার সন্তানের গায়ে। যাদের সন্তান আছে তারা একবার ভেবে দেখুন, একটা ফুলের আঘাত যদি কেউ আমাদের সন্তানের গায়ে দেয় কেমন লাগবে আমাদের? আমাদের সন্তানকে এইভাবে কেউ পেটালে কেমন লাগবে আমাদের? ছেলেটিকে পেটাতে পেটাতে মেরেই ফেললো হায়েনারা। ওর ছোট্ট দেহ হতে ছোট্ট প্রাণটা বের করে নিল হায়েনারা। মা মা করে নাকি চিৎকার করছিল রাজন মার খেতে খেতে। আহা, কেমন লেগেছিল তখন ছোট্ট ছেলেটির। এই দৃশ্য দেখলে কেমন লাগতো তার মায়ের?
মানুষকে মেরে ফেলা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয় অবশ্য। এটা আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক দেখেছি আমি এই রকম মারের লাইভ দৃশ্য। চুরির সন্দেহে এক হতদরিদ্রকে রাতভরে পিটিয়ে পিটিয়ে মৃতপ্রায় করেছিল এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের কিছু লোকজন ও তাদের চেলাচামুণ্ডারা। কয়েকদিন পরে লোকটি মারা যায়। কোনো বিচার হবার প্রশ্নই অবান্তর। কলা চুরি করতে আসা একটি সাত বছরের দরিদ্র শিশুকে জনসমক্ষে পিটিয়ে আধমরা করেছিল সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক লোক। বিচারের কথা জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না। ৬/৭ বছরের হতদরিদ্র একটি অনাথ মেয়ে শিশুকে মুখে মুখে কথা বলার অপরাধে কয়েক ঘণ্টা তুলোর মতো পিটিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত ও অজ্ঞান করে ফেলেছিল প্রভাবশালী এক লোক। মেয়েটি শেষ পর্যন্ত বাথরুম করে দিয়েছিল। তাতেও সেই প্রভাবশালী পিশাচ তাকে পেটানো বন্ধ করেনি। বিচারের প্রশ্ন যথারীতি অবান্তর। এছাড়াও দেখেছি, অনাথ কাজের মেয়েকে পরিবারের সকলে মিলেমিশে পেটাতে, ছোট্ট কাজের ছেলেকে পরিবারের সবাই জামাতে পেটাতে, কাজের মেয়ের গায়ে ফুটন্ত পানি ঢেলে দিতে। বিচারের কথা জিজ্ঞেস করে লজ্জা দেবেন না প্লিজ।
হুমায়ূন আজাদের খুনীদের বিচার হবে না। কারণ, খুনীদের ধরা যায়নি বা হয়নি। অভিজিৎ রায়ের খুনীদের বিচার হবে না। কারণ তাদেরকে সরকার চেনেন না। অনন্তর খুনীদের বিচার হবে না, ওদেরও সরকার চেনে না। মুখ দেখেনি কোনোদিন। রাজনের খুনীদের বিচার কি হবে? ভিডিওতে খুনীদের সবার আপাদমস্তক ছবি থাকার পরেও? পুরো হত্যাকাণ্ডটির, সকল খুনীর ভিডিও থাকার পরেও রাজনের খুনের ও খুনীদের বিচার করবেন কি মাননীয় সরকার?
এইটা ঠিক হোল না নীলাঞ্জনা। পিটিয়ে মেরে ফেলার কৃতত্ব কেবল আপনি আপনার দেশের লোক কে দেবেন আর আমাদের উপেক্ষা করবেন এটা হতে পারে না। আমরাও পিটিয়ে আবাল বৃদ্ধ বনিতা মেরে ফেলতে খুব-ই সিদ্ধ এবং নিয়মিতই তা করে থাকি…আপনি সেই গৌরব থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারেন না। প্রত্যেক দিন মেট্রো শহর গুলোতে যে কি পরিমান শিশু নির্যাতন হয় সে কথা বলার নয়। মজা হচ্ছে আমরা আর এক কাঠি অপরে … এই একটি ঘটনায় আপনি লিখেছেন এতগুলো মাণুষ তাতে সমর্থনের মন্তব্য করেছেন…আমরা কিন্তু রোজ চা খেতে খেতে খবরের কাগজে গনপ্রহার শিশু নির্যাতনের খবর পড়ে কেবল বলি হম্ম্!
রাজেন নামের ১৩ বছরের ছেলেটিকে যেভাবে খুটির মধ্যে পিছ মোড়া করে বেঁধে অমানুষিক ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো, তাকে পৈশাচিক ভাব ছাড়া মনুস্তব্য বলা চলেনা। চোরের আপবাদ দিয়ে এইভাবে মেরে ফেলাকে মানা যায়না। ওরা অমানুষের ও অধম।
এরা সুস্থ সমাজকে কলুসিত করে। প্রকিত শিক্ষা আছে বলে মনে হয়না। এদের সঠিক বিচার হওয়া দরকার। যে বাবা মায়ের বুকের ধন চলে গেছে, তাকে ফিরানো যাবেনা ঠিক, কিন্তু এম্ন শিক্ষা দেওয়া উচিত, যাতে আর কেউ কোন দিন এই রকম কাজ না করতে পারে।
“রাষ্ট্রের চেয়ে মানুষ বড় ।…..মানুষকে বিকশিত করে তোলার জন্য সভ্যতার সমস্ত উপকরণ, রাষ্ট্রের যত বিচিত্র রূপ, মতবাদের যত বৈচিত্র্য, যত বিধিনিষেধ, শাস্ত্রের যত অনুশাষন। মানুষ যদি আত্মপ্রকাশের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে রইল…..তবে কিসের জন্য রাষ্ট্রের ইমারত্, কিসের জন্য বিধিব্যবস্থা, কিসের জন্য এত সাজ সরঞ্জাম?”-শ্রী শ্রী আনন্দমূর্তিজী
রাজনের হত্যাকারীদের ধরা হয়েছে। খবরটি স্বস্তিদায়ক। যে পুলিশ ১২ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে হত্যাকারীকে ছেড়ে দিয়েছিল এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হোক।
আমি হত্যাকারীদের থেকে ঐসব জানোওয়ার বেশী দিককার জানাই যারা এইসব দেখে থেকে বিন্দু মাত্র প্রতিবাত করেনি !!!! তাদেরও বিচার হওয়া উচিত !!! মানুষ মারার মদ্দে যে একরম মহা আনন্দ আছে আমরা আজ তাই প্রমান করলাম !!!!!
মানুষের মাঝে থাকে আমার মনে আতংক জাগে । এদের থেকে বনের হিংস্র জন্তুদের কাছেই যে বেশি নিরাপদ আমি ।
আমারও ঠিক তাই মনে হয়।
বিবিসি বাঙলাতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ পড়লাম। মনে করা হচ্ছে যে,
অধ্যাপক জিয়াউর রহমান আরো বলছেন যে,
এ কেমন ধারা গ্লোবালাইজেশান, যেখানে একটা ছোটো শিশুকে স্রেফ পিটিয়েই মেরে ফেলা হলো? আশ্চর্যের ব্যাপার কেউই এগিয়ে আসে নি থামাতে!
সেদিন একটি তিন বছরের ছোট্ট মেয়েশিশুকে নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে উদরদেশে একটি থলি নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। আজ আরেকজনকে প্রহার করেই মেরে ফেললো। হঠাৎ করে কেনো শিশুদের ওপরে গিয়ে পড়লো পৈশাচিকতা তা বুঝতে আমাকে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে।
‘সেদিন একটি তিন বছরের ছোট্ট মেয়েশিশুকে নারকীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে উদরদেশে একটি থলি নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। আজ আরেকজনকে প্রহার করেই মেরে ফেললো। হঠাৎ করে কেনো শিশুদের ওপরে গিয়ে পড়লো পৈশাচিকতা তা বুঝতে আমাকে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে।’
হায়েনা পিশাচদের কাছে শিশু কিংবা নারী কিংবা পুরুষ বলে কিছু নেই। খালি শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানবিক মানুষ হলেই হলো। তাহলেই ওরা হত্যা করবে, ধর্ষণ করবে, করবে আরো নানাবিধ অত্যাচার।
খুন করাটা, মেরে ফেলাটা কেমন যেন স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে! পিঙ্কারের মতে প্রাচীনকালের থেকে এখন নাকি হিংস্রতার পরিমাণ কমেছে এখনকার সমাজে। তাহলে আগে কত খুন হত কে জানে।
বাংলাদেশে খুন করা শুধু স্বাভাবিক নয় মহাউৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আগে দুর্নীতিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল এখন মানুষ হত্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ হতে চলেছে।