Atheist দের প্রতি আস্তিক (তথা মুসলিমদের) ১টি প্রচলিত প্রশ্ন হচ্ছে “আপনি তো এখন আর মুসলিম নেই তাহলে কেনও এখনও মুসলিম নাম চেঞ্জ করছেন না ? ”
প্রায়ই এই প্রসঙ্গে অনেক মুসলমানই atheist দের ব্যাক্তিগত আক্রমন করার চেষ্টা করে এবং Atheist এর নামের উৎস নিয়ে ক্যাচাল করে আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গে ঘোরানোর চেষ্টা করে। প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ছাগুরা অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রসঙ্গটি নিয়ে Atheist দের বিরক্তি উৎপাদন করে। এই লেখাটি লেখার মূল উদ্দেশ্য এটাই।
অর্থাৎ, তখন যে তর্ক শুরু হয় আস্তিক-নাস্তিক দের মাঝে তা হচ্ছেঃ “নাম ধর্মের নাকি ভাষার ” ?
তারা দাবি করেন যে নাস্তিক/ atheist / Agnostic / skeptic / rationalist ইত্যাদি হওয়ার পরে তাদের নাম পাল্টিয়ে রাখা উচিৎ ঠিক যেমন এক ধর্ম থেকে আরেক ধর্মে দিক্ষিত হলে নাম পাল্টিয়ে রাখা হয়। তাদের দাবির পিছনে যথেষ্ট যুক্তি তারা দিতে পারেন কিন্তু সেই যুক্তি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে কিছু যুক্তি দিতে চাই।
১। ইসলামের প্রচলন শুরু হয় ৬১০ খৃষ্টাব্দ থেকে (নবীর বয়স যখন ৪০)। তখন নবী সহ যে সকল মানুষ জীবিত ছিল তারা জন্মের সময় কি মুসলমান ছিল ? ছিলনা। তারা ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হয়ে কি তাদের নাম পাল্টে ফেলেছিলো ? না ফেলেনি। তাদের জন্মের সময় তাদের যে নাম রাখা হয়েছিলো সেই নাম সমুহ কি আদৌ ইসলামী নাম হতে পারে ? বরং যদি দাবি করা হয় যে ঐ সকল নাম খাটি প্যাগানদের নাম তাহলে তা অস্বিকার করার কোন পথ খোলা থাকবে না। বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম পরিবারে সন্তুানের নাম রাখাহয় বিখ্যাত সাহাবিদের নামে। সেইসব সাহাবাদের জন্মের সময় কি তাদের ইসলামী নাম ছিল ? অবশ্যই তাদের নাম রাখা হয়েছিলো প্যাগান ধর্ম, ঐতিয্য অনুসরনে। “আব্দুল্লাহ” নামটি সবথেকে বেশি সহী ইসলামী নাম। আব্দুল্লাহ ছিলেন নবীজির পিতা যিনি নবীজির জন্মেরও আগে মারা যান। খেয়াল রাখতে হবে, আব্দুল্লাহ পউত্তলিক হিসেবেই মারা যান। আব্দুল্লাহ নামের অর্থ আল্লাহর দাস। কিন্তু কোন আল্লাহর দাস ? তখনও ইসলামের জন্মও হয়নি এবং ইসলামের প্রচারকেরও জন্ম হয়নি। ইসলামের পুর্ববর্তি ইহুদি খৃষ্টান ধর্মেও আল্লাহ বলে কোন শব্দই নেই। এই আল্লাহ সেই প্যাগানদের মধ্যে প্রচলিত আল্লাহ নামের দেবতা যে লাত, মানাত ও উজ্জাতের পিতা।
নবী ও সাহাবিরা নাম কোন ধর্মের পরিচয় বহন করত বলে মনে করতেন না। কেননা নামকে তারা যদি ধর্মের পরিচয় বহনকারী হিসেবে ভাবতেন তাহলে ইসলাম গ্রহনের সাথে সাথে তারা তাদের পুরনো পৌত্তলিক ধর্মের নাম বাদ দিয়ে নতুন ইসলামিক নাম নিতেন। অর্থাৎ, “নবি ও সাহাবি রাই প্রমাণ দিয়ে গেছেন “নাম কোন ধর্মের হয় না… ” এরপর কি আরও প্রমাণের দরকার আছে ?”
২। ( মাত্র ২০ জনের মত সাহাবি নাম চেঞ্জ করেছেন কারণ তাদের নামগুলো শিরক ও বাজে অর্থ এর মত দোষে দুষ্ট ছিল ।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “পিতার উপর নবজাতকের হক হলো তার জন্য সুন্দর নাম রাখা” (মুসলিম)।
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যার (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তার দাদা হাজন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে গেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন তোমার নাম কি? তিনি বললেন আমার না ম হাজন (শক্ত)। নবীজি (সাঃ) বললেন তোমার নাম হওয়া উচিত “সাহল”(সহজ সরল)। ( সহিহ বুখারি গ্রন্থ ৮ এর ২১৩ নং হাদিস) ও (মেশকাত শরীফ)।
সহিহ মুসলিম শরীফ এ নাম সংক্রান্ত অনেক গুলো হাদিস আছে।
১০০৬,১০০৭,১০০৮,১০০৯, ১২৫১ নং হাদিস পড়ে নিন।
নবী আসিয়াহ (অর্থঃ অবাধ্য / দুর্বল) এর নাম পরিবর্তন করে বললেন আজ থেকে তুমি হচ্ছ জমিলাহ (অর্থঃ সুন্দর ও সাস্থবান) (মুসলিমঃ ১০০৭)
“হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত জুওয়ারিয়া (রাঃ) এর পূর্ব নাম ছিল ‘বাররাহ’। রাসূল (সাঃ) তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জুওয়ারিয়া ।” (মুসলিমঃ ১০০৮)
খেয়াল করে পড়ুন পাঠক, নবী নিজেই ইসলামিক নাম রাখতে বলেননি, বলেছেন সহজ, সুন্দর, অর্থবোধক নাম রাখতে।
তারপরও যদি কেউ গোঁ ধরতে চান তাকে আমি বলব কোরানের আয়াত বা হাদিস হাজির করতে… যেখানে বলা আছে “ইসলামিক নাম রাখার কথা” … আমি আবারও বলছি , সবখানেই বলা হয়েছে “ সহজ, সুন্দর, অর্থবোধক নামের কথা ”।
৩। একটা নাম কোন বিশেষ গোষ্ঠী বারবার ব্যাবহার করতে থাকলে লোকজন সেই নাম ধারীকে সেই গোষ্ঠীর ভাবা শুরু করে… এইটা ঠিক। কিন্তু তার মানে এই না যে নামটা সেই গোষ্ঠীর একার সম্পত্তি হয়ে গেল।। আর কেউ সেটা রাখতে পারবে না বা ব্যাবহার করতে পারবে না। যেমনঃ “খান” নামটি তো মঙ্গলিয়ান নাম কিন্তু মুসলমান রা এটিকে এত ব্যাবহার করেছে যে এখন কেউ এই নাম বললে সাধারনত ভাবা হয় সে একজন মুসলিম। কিন্তু তার মানে এই না যে “খান” নামটি এখন মুসলমান ছাড়া আর কারও হতে পারবে না…
৪। নাম একজন মানুষের ধর্মের পরিচয় বহন করে এই ভুল ধারণাটা আসলে মুসলমানদের মধ্যে গেঁথে বসেছে হুজুরদের কারণে । লোকজন সন্তান জন্মের পর হুজুরদের কাছে গিয়ে যখন ইসলামিক নাম চায় তখন হুজুররা সাধারনত আরবি ডিকশনারি খুলে ১টা শব্দ ধরিয়ে দেয় বা সাহাবীদের নাম ধরিয়ে দেয় (যদিও সাহাবীদের এই নাম কিন্তু তারা পৌত্তলিক থাকার সময় থেকেই যেটা ছিলও সেই নাম)। এবং তারপর হুজুররা বলে “নেন, আপনার সন্তানের জন্য সহীহ ইসলামিক নাম খুঁজে দিলাম” । অতঃপর সেই অভিভাবক তার সন্তানের সহীহ ইসলামিক (পড়ুন আরবি) নাম নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
ইদানীং অবশ্য সহীহ ইসলামিক নাম এর বই বের হয়েছে যা আসলে আরবি-বাংলা ডিকশনারি থেকে সংকলিত কিছু শব্দ সম্ভার মাত্র।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইসলাম ধর্ম আরবি ভাষায় প্রচলিত হয়েছে বলেই আরবি ভাষার সব শব্দ ইসলামের একার সম্পত্তি হয়ে যায় না। এবং অভিভাবকরা সহিহ ইসলামিক নাম ভেবে সন্তানের যে নাম রাখছেন তা আসলে সাধারণ আরবি শব্দ ছাড়া কিছুই না।
৫। নাম / শব্দ যে কোন ধর্মের হয়না তা ১টা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝান যায়।
ধরুন, বাংলাদেশের এই খারাপ আর্থ-সামাজিক অবস্থা দেখে কোন এক সমাজ সংস্কারক বাংলাদেশে বাংলা ভাষার মাধ্যমে “অং-বং” নামে কোন ধর্ম প্রচার করলেন , কিছু বাঙালি অনুসারিও পেলেন… এখন কিছুদিন পর এই অং-বং ধর্মের অনুসারিরা যদি দাবি করেন যে অং-বং ধর্ম যেহেতু বাংলা ভাষায় প্রচারিত হয়েছে অতএব বাংলা ভাষা তাদের নিজেদের, সব বাংলা শব্দ / নাম তাদের নিজেদের এবং তারা যদি দাবি করেন “অং-বং” ধর্মের অনুসারিরা ছাড়া আর কেউ বাংলা নাম রাখতে পারবে না … তাহলে ব্যাপারটা কি হাস্যকর লাগবে না ?
একইভাবে , ইসলাম যেহেতু আরবি ভাষায় প্রচার হয়েছে , সুতরাং মুসলিম রা ছাড়া আর কেউ আরবি নাম রাখতে পারবে না… তাহলে ব্যাপারটা কি হাস্যকর লাগে না ?
পাকিস্তানি শাসকরাও বাংলা কে হিন্দুর ভাষা হিসেবে ভাবত…
১৯৫২ / ১৯৭১ এ এই ভুলের মাশুল তারা দিয়েছে…
৬। এরাবিক নাম দেখলেই অনেকে ভাবতে শুরু করেন সেটা মুসলিম নাম । তা ঠিক নয়। আরবের মুসলমানরা সহ অনেক খ্রিস্তান-ইহুদি – কাফির সবার নাম এখনও একইরকমই হয়।
প্রমাণঃ
>> নবী মুহাম্মদ এর সাহাবি ও তার বিরধীতাকারি কাফেরদের নামে আপনি difference খুঁজে পাবেন না। একই নামের সাহাবি ও কাফের দুইটাই ছিল। উদাঃ খালেদ বিন ওয়ালিদ (মুসলিম) ও ওয়ালিদ বিন মুঘাইরা ( কাফের)। মুনাফিকদের সর্দার এরও নাম ছিল আব্দুল্লাহ বিন উবায় ইবন সালুলি। আরও একজন ইহুদী মুনাফিক এর নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবন সাবার।
৭। কোন নাম শুধুমাত্র তখন ই ধর্মের একার শব্দ হবে যখন সেটা হবে ধর্মীয় মৌলিক শব্দ (অর্থাৎ ধর্মটি প্রচলনের আগে সেই শব্দটি কোন ভাষায় প্রচলিত ছিলও না…) এরকম মৌলিক শব্দ ইসলামে খুব বেশী নেই… আমি একটাও পাইনি। (এই বিষয়ে আমার ভুল হতেও পারে এবং ইসলামের মৌলিক শব্দ কারও জানা থাকলে আমাকে বলুন, তাহলে এই নোট এ সেটা Add করে দিব। )
আল্লাহ, আল্লাহর ৯৯টি নাম, মুহাম্মদ, আহমদ , ইত্যাদি কোনটাই মৌলিক শব্দ নয় … সবগুলোই ইসলাম আসার আগে থেকেই পৌত্তলিক আমল থেকেই প্রচলিত ছিলও।
সাহাবিদের মধ্যে প্রায় ১৫০ জনের নাম ছিল আব্দুল্লাহ ও শতাধিক সাহাবির নাম ছিল আব্দুর রাহমান। দুইটা শব্দই ইসলাম আসার আগে থেকেই প্যাগান দের মাঝে বহুল প্রচলিত শব্দ ছিল।
কারও নাম যদি কোন ধর্মের এইরকম মৌলিক শব্দ হয় (অর্থাৎ ধর্মটি প্রচলনের আগে সেই শব্দটি কোন ভাষায় প্রচলিত ছিলও না…) শুধুমাত্র তখনই বলা যাবে নামটা হচ্ছে সেই ধর্মের।
৮। উপরের এর যুক্তি গুলোতে স্পষ্ট হয়ে যায় ইসলামিক না বলে কিছু নেই… সবই এরাবিক নাম। তারপরও কেউ যদি জোর করেই বলতে চান যে “ নাম হচ্ছে ধর্মের একার সম্পত্তি … নাস্তিকরা ধর্মত্যাগের পরও মুসলিম নাম নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে কেন ? ” তাহলে আমি বলব … নাস্তিক রা / সংশয়বাদীরা আসলে নবী মুহাম্মদ ও তার সাহাবীদেরই আদর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন … (নবী সাহাবিরাও ধর্ম ত্যাগের পর নাম চেঞ্জ করে নাই, নাস্তিক / সংশয়বাদীরাও ধর্মত্যাগের পর নাম চেঞ্জ করবে না।)
৯/ কেউ যদি আমার নিজের নাম নিয়েও প্রশ্ন তুলতে চান তবে তাদের বলব আমার নাম এর শব্দগুলোর দুইটি উৎস থেকে এসেছেঃ
আহমদ – এরাবিক
রনি – অ্যাংলো স্যাক্সন
অন্য সবার মতই আমার অভিভাবকও সহিহ ইসলামিক শব্দ ভেবেই আহমদ শব্দটি আমার নামের মাঝে জুড়ে দিয়েছিলেন … এবং অন্য সবার মতই তাঁরাও হয়ত জানতেন না আহমদ শব্দটি ইসলামিক নয়… ইসলাম আসার আগে থেকেই আরবের প্রচলিত শব্দ।
১০। লেখাটি ছাগুদের উদ্দেশ্যেই লেখা… নাম নিয়ে ছাগুদের টেনশন করার কারণ অবশ্য আছে, ইসলামের প্রাথমিক যুগ এ মুসলিম সেজে অনেক ইহুদিরা ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করত। তাই তারা ভাবে বর্তমানকালেও কেউ মুসলিম সেজে ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে কিনা। কিন্তু তারা মুসলিম সেজে ইসলামের ক্ষতি করা আর কারও এরাবিক নাম থাকার পার্থক্য ধরতে পারে না।
পুনশ্চঃ অনেক পুরাতন এই লেখাটি পোস্ট করে দিলাম সাম্প্রতিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর সত্য বক্তব্যের সূত্র ধরে উঠা সমালোচনার প্রেক্ষিতে।
ইসলাম নবী মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহিওয়াসাল্লামের সময় থেকে শুরু হয়নি বরং প্রথম নবী আদম আলাইহিওয়াসাল্লাম থেকে শুরু হয়েছে।ব্লগার এখানে চরম অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।
অসাধারন লেখনী। ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
আমিও অসংখ্য বার এমন প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছি কিন্তু অইসব আবাল ভাষা নিরক্ষর দের বুঝানো মুশকিল যে এগুলা শুধু মাত্র ভাষা বিকৃতি প্রসবন ছাড়া কোন মাইনা রাখেনা। ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য।
ইসলামিক নাম বলে কিছু নেই, সবই এরাবিক নাম।
লেখক আহমদ রনিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলছি লেখাটি চমৎকার।
ধর্ম আর ভাষা এক নয়। ধর্ম তৈরি করেছেন যে কোন এক জন। আর ভাষা কি একজনে তৈরি করতে পারে? আরবি ভাষা মুহাম্মদের তৈরি নয়। মুহাম্মদ তৈরি করেছেন গ্রন্থ আল-কোরান। তিনি কোন ভাষা বিজ্ঞানি ছিলেন না। তার মাতৃভাষাতেই কোরান তৈরি। ৭ থেকে ৮ ধরনের ভাষায় কোরান পাড়াতেন তিনি। এই ধরুন আমাদের দেশে পানি কে নোয়াখাইল্লারা বলে হানি। কুমিল্লারা বলে ফানি। আর কেউ বলে জল। প্রবন্ধটি নিয়ে “কর্ণ” আর “অতিথি লেখক” এর পান্ডিত্য দেখে – লালনের কথা মনে হয়ে যায়। ” এই সব দেখি কানার হাট বাজার। আরবি একটি অর্ধপূর্ণ ভাষা। আরবি বর্নমালায় একার বলতে কোন বর্ণ নাই। আহমদ কোন আরবি শব্দ নয়। আহ্মাদ হচ্ছে আরবি শব্দ। কাদের, নাদের, মুসলেম এগুলিও আরবি নয়। কাদির, নাদির, মুসলিম এগুলো আরবি শব্দ।
ফেসবুকে এই দূর্দান্ত লেখাটা অনেক আগেই পড়েছিলাম। ফেসবুকের লেখাটা হুবহু না দিয়ে ব্লগের জন্য আরেকটু ম্যাচিউর্ডভাবে দিলে ভালো হতো। তারপরও উপস্থাপনা যেমনই হোক না কেন অসাধারন যুক্তি ও তথ্যে ভরপুর লেখাটির আবেদন অনেক। এদেশের মুসলমানরা তো পারলে নাম, ভাষা, সংস্কৃতিকেও খৎনা করিয়ে মুসলমান বানিয়ে দেয়। আশা করছি তারা এ থেকে কিছু শিখবে।
বাক্যটির শানে নুজুল বা তাফসির কী?
অতিথি লেখকের কমেন্টের প্রতি দ্রষ্টব্য।
আপনি লিখেছেন বকর-গাভী।
যদ্দুর জানি,বকর মানে গাভী না,বাকারা মানে গাভী।কুরানের দ্বিতীয় সূরার নাম আল বাকারা,কারণ সূরাটি একটি গাভীর কাহিনী সম্বলিত।আর বকর মানে-Young Camel
তথ্যসুত্র:http://www.behindthename.com/name/bakr
আর আরবিতে আমি এখনো পর্যন্ত আমি “হ্যাসান” নামের কোন নাম দেখিনাই,যে নামটি আছে সেটা হলো “হাসান”(حسن),যার অর্থ Handsome,good,benefactor.
তথ্যসূত্র:https://en.wikipedia.org/wiki/Hassan_(given_name)
আপনি কি দয়া করে ব্যাপার দুটি পরিষ্কার করবেন?
আগাম ধন্যবাদ 🙂
এরপর আরো কিছু অসংগতি চোখে পরলো।
মায়িজ/মায়েজ-ছাগল।
কিন্তু আমি যা পেলাম,মায়িজ(Maiz),مائز এর অর্থ Arabic for “distinguisher”, one who distinguishes between good and bad, or between truth and falsehood.
তথ্যসূত্র-http://quranicnames.com/maiz/
এরপর লিখেছেন:
জারাফা-জিরাফ।
কিন্তু wordorigins.org এর ৫ জুন ,২০০৯ এর একটি general discussion এ দেখলাম:
The word giraffe comes from the Arabic zarafa. As a verb it means to jump or to hurry, leading to the noun one who walks swiftly.
সুতরাং জারাফা মানে জিরাফ না কখনোই।তবে হ্যাঁ,Zarfa নামে বিখ্যাত একটি জিরাফ ছিল।এখানে দেখতে পারেন-https://en.wikipedia.org/wiki/Zarafa_(giraffe)
এরপর আরো লিখেছেন:
ওয়াহিদ-গন্ডার।
কিন্তু আমি যা পেলাম:
The baby boy name Wahid is pronounced as WAAHHIYD †. Wahid’s origin, as well as its use, is in the Arabic language. It is derived literally from the word ‘wahid’ meaning singular, peerless, unique.
এরপর আরো লিখেছেন:
জামাল উদ্দিন-ধর্মের উট।
Wikipedia তে যা পেলাম:Jamal ad-Din, Jamal ud-Din or Jamal al-Din (Arabic: جمال الدين), meaning ‘Beauty of the Faith’,
তথ্যসূত্র-https://en.wikipedia.org/wiki/Jamal_ad-Din
আরো এরকম অসংগতি আছে কিনা বুঝতে পারছিনা,দয়া করে কি একটু পরিষ্কার করে ব্যাপারখানা বুঝিয়ে বলবেন?
তথ্যসূত্র:http://www.babynamespedia.com/meaning/Wahid
দাদা আপনার একটা সৌর্সে হলো http://www.behindthename.com/info/
এটা তো মাইক কাম্প্বেল নাম একজনের লেখা যাতে সব কালচারের সব রকম নাম আছে. এই লোকটা কি আরবি জানে বা আরবি কালচার সম্বন্ধে কিছু জানে? আমার মনে হয় না. এটা একটা অতি সাধারণ নামের গুদামঘর. এর বিশ্বাসযোগ্যতা কি?
উইকিপেডিয়া এমন একটা সোর্স যেখানে যে কেউ যা খুশি লিখতে পারে. সব সময় এটার কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়
আমি http://arabic.desert-sky.net/animals.html থেকে আরবি ভাষায় পশুর নামের একটা তালিকা খুঁজে পেয়েছি. তাতে
উট এর আরবি একবচনে জামাল বহুবচনে জিমাল. তাহলে জামাল উদ দীন কেন ধর্মের উট হবে না?
ছাগল এর আরবি একবচনে মাযেজ বহুবচনে মাওয়ায়েজ.
গন্ডারের আরবি ওয়াহিদ অথবা আল কারন .
জিরাফের আরবি একবচন জারাফা , বহুবচন জারাফাত.
আশা করি বিষয়টি এখন পরিষ্কার. এই ওয়েবসাইট টি এমন একজনের যে বহুবছর ধরে আরবি পড়াশুনা করেছে. সে মার্কিন ইউনিভার্সিটি অফ কায়রো থেকে স্ট্যান্ডার্ড ও ইজিপ্সিয়ান এরাবিক এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এবং ইউনিভার্সিটি অফ জর্ডন এর আরবির ছাত্র ছিল.
http://arabic.desert-sky.net/about.html
সুতরাং তার কথা কি উইকিপেডিয়ার চেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য নয়?
অতিথি লেখকের প্রতি
//এটা তো মাইক কাম্প্বেল নাম একজনের লেখা যাতে সব কালচারের সব রকম নাম আছে. এই লোকটা কি আরবি জানে বা আরবি কালচার সম্বন্ধে কিছু জানে? আমার মনে হয় না.//
-আপনার মনে হওয়া না হওয়া থেকে কি কিছু যায় আসে ভাই? 🙂
আপনার বক্তব্য অনুসারে সেটা “অতি সাধারণ নামের গুদামঘর”-অতি সাধারণ নাম বলতে কি বুঝাচ্ছেন??পরিষ্কার করে বললে ভালো হয়।নাকি অতি সাধারণ নাম হলে সেই নামের অর্থ বিভিন্নভাবে পালটে যায় সেটা বুঝাচ্ছেন? 🙂
আপনার কথামত ধরে নিলাম ওই সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই,সমস্যা হলো আরো কয়েকটা সাইটে Bakr নামের একই অর্থ দেখলাম।
আপনি বলেছেন-//উইকিপেডিয়া এমন একটা সোর্স যেখানে যে কেউ যা খুশি লিখতে পারে. সব সময় এটার কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়//
আপনার এই কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত।কিন্তু এইক্ষেত্রে যে এইখানে ভুলভাল লেখা আছে সেটাই বা আমি বিশ্বাস করব কীভাবে?
তারপরও ধরে নিলাম উইকিপিডিয়ার কথাগুলি ভুল।তবে আমি অন্যান্য সাইটেও নামগুলি পরীক্ষা করে দেখেছি,একই ফলাফল।যেসব নামগুলির অর্থ আমি উইকিতেও পেয়েছি সেইসব ক্ষেত্রে আমি উইকি সোর্সটা ব্যবহার করেছি।
আর আপনিই দেখুন,আপনি যে সোর্সটা দিয়েছেন,সেখানে প্রথমেই লেখা আছে // cow بقرة (ج) بقرات baqara (pl.) baqaraat //-আপনি এটাকে বকর বানিয়ে দিয়েছেন?!!!!
আবার আপনার সোর্স্ থেকে পেলাম //horse حصان (ج) حصن HiSaan (pl.) HuSun//—যেখানে উচ্চারণ হুসুন,সেখানে সেটার উচ্চারণ আপনি বানিয়ে দিয়েছেন “হ্যাসান”-এবং সেইটাকে প্রচলিত “হাসান” এর সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। 😀
এরপর,মাইজ,আপনার সোর্স থেকে এই শব্দটার আরবি বানান পেলাম ماعز যেখানে মাইজ নাম হিসেবে যে বানান হয় সেটা হলো مائز
এইক্ষেত্রে আমার একটু কনফিউশন আছে,আমি বুঝতে পারছিনা দুটো কি একই বানান নাকি।
এরপর ওয়াহিদ নামটি সম্পর্কে বলেছেন গন্ডার,তবে আপনার সোর্স যা বলে তা হল //rhinoceros وحيد القرن waHiid al-qarn//-আপনার কমেন্টে al-qarn বেমালুম গায়েব হয়ে গিয়েছে
দয়া করে পরিষ্কার করুন।
আপনি বলেছেন্ন,//খিন্জির>খিজির//–খিজির শব্দটা খিঞ্জির থেকে আসছে কোথা থেকে পেলেন?সোর্সটা দিলে একটু ভালো হত। 🙂
ঠিক কথা দাদা. কিন্তু একই কথা আপনার উদ্দেশ্যেও বলা যায়. আপনি ওই সব মানেতে বিশ্বাস করেন আমি আমার মানেতে বিশ্বাস করি. এসবি বিশ্বাসের ব্যাপার আর তো কিছু নয়.
মানেটা হলো যে এই সাইটে সব কালচারের সব নাম আছে. এটা তে আরবি নামের সঠিক অর্থ আছে কিনা সন্দেহ. কিন্তু আপনি বলবেন আমার সন্দেহে কিছু যায় আসে না. ইত্যাদি.
সাইট গুলির নাম দয়া করে দেবেন?
আরবি অনেকরকম আছে : স্ট্যান্ডার্ড আরবি, ইজিপ্সিয়ান আরবি, ইত্যাদি আছে. সবার বানান তো এক নয়. আর মাযেজ -এর মানেটা তো ঠিক পেয়েছেন.
আমি লিখেছিলাম আল কারন . ওয়াহিদের ঠিক পাশে.
একটু খেয়াল করবেন. এই আপনি বলেছিলেন ওয়াহিদের মানে:
দিচ্ছি তো. খিন্জির হবে না ওটা হবে জিঞ্জির উচ্ছারন (xinziir) . মানে শুকর. বয়স হচ্ছে তো তাই দেখতে ভুল হয়ে গেছে.
আপনার সাথে কথা বলে মনে হলো আপনি আপনার বিশ্বাসের সমর্থন খুঁজে চলেছেন, সত্যকে না. সুতরাং আর কোনো বার্তালাপ করে লাভ নেই.
নিজেই বললেন
///সাইট গুলির নাম দয়া করে দেবেন?///
এবং পরে বললেন
//আপনার সাথে কথা বলে মনে হলো আপনি আপনার বিশ্বাসের সমর্থন খুঁজে চলেছেন, সত্যকে না. সুতরাং আর কোনো বার্তালাপ করে লাভ নেই.///
Conflicted কথাবার্তা।
আপনার এইসব বক্তব্যেরও উত্তর দিতে চেয়েছিলাম ।
তবে আপনি যখন চাচ্ছেন না তখন আমিও আর কথা বাড়াচ্ছিনা।ধন্যবাদ। 🙂
আপনি আরো লিখেছেন
//তাওর – বলদ//
অথচ আপনার সোর্স থেকেই যা পেলাম //bull, ox ثور (ج) ثيران toor (pl.) tiiraan///
আপনি ‘তুর’কে তাওর বানিয়ে ফেলেছেন 🙂
তাওর আর তুরের মধ্যে পার্থক্য কি? তাওর শব্দের কি অন্য মানে আছে যা বলদের সাথে রিলেটেড নয়? মানেটা আর সোর্সটা দিলে বাধিত হব.
গন্ডারের আরবি ওয়াহিদ আলক্বারন । অর্থাৎ ওয়াহিদ অর্থ এক আলক্বারন অর্থ শিং । এক শিং। গন্ডার কি দুই শিংয়ের আছে? আমার জানা নাই। গন্ডারের প্রকৃত আরবি আলকারকুদন্।
আরে ভাই নামতো আমি রাখেনি; নাম রেখেছে আমার অভিভাবকরা। নাম হলো আমার সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার একটি ধাপ; এটি আমার ব্যক্তিত্ব বা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। তারাতো এ বিষয়েও অবগত নয় যে জন্মসূত্রে মুসলিম হলে সে মোটেও মুসলিম নয় যেমন জন্মসূত্রে কেউ হিন্দু হলে সে কিন্তু হিন্দু নয়। ধর্মটাকে গ্রহণ করতে হয় বাচাই করে; তার জন্য তাকে যাবতীয় সব ধর্ম পড়তে হবে এবং তারপর এর থেকে উৎকৃষ্ট ধর্মটাকে গ্রহণ করে এর বিধান অনুসারে চলতে হবে।
শুধুমাত্র যারা অন্যধর্ম থেকে মুসলমান হয়েছে তারাই প্রকৃত মুসলমান।
নিজে মুসলিম নাকি হিন্দু নাকি অন্য কিছু ; সেটার ঠিক নেই; উল্টো কে আস্তিক আর কে নাস্তিক তার সনদ দিচ্ছে।
ধন্যবাদ। পড়ে ভাল লাগলো।
ভালো লিখেছেন ।
“নাম নয় কাজে হোক পরিচয়” 🙂
আরবি নামগুলো ভয়ংকর অর্থ বহন করে . কয়েকটি নামের অর্থ দিলাম:
তালাব – পাতিশিয়াল
তাওর – বলদ
বকর – গাভী
জামাল – উট
নামির – বাঘ
ওয়াহিদ (waheed al qarn) – গণ্ডার
আসাদ – সিংহ
হিমার – গর্দভ
নাসির (نسر) – ঈগল
জারাফা – জিরাফ
মায়িজ/মায়েজ – ছাগল
হ্যাসান (حصان) – ঘোড়া
খিন্জির>খিজির- শূকর
আর এগুলোর সাথে আল-বিন-বিনতে এসব জুড়ে দিলে তো আরও ভয়ংকর অর্থ দাঁড়ায়:
আবু-বকর – গরুর আব্বা
জামাল উদ্দিন – ধর্মের উট
ইবনে মায়েজ – ছাগলের পুত্র
বিনতে তাওর – বলদের কন্যা
তথ্য সুত্র:
অতিথি লেখক, দারুণ উদাহরণ! আর লেখককে ধন্যবাদ একটি যুগোপযোগী বিষয় নিয়ে লেখার জন্য। আমি অনেক বছর আগে এ বিষয়টি ভেবে আমার সন্তানদের নাম উপাধি বিহীন বাংলা নাম রেখেছি। প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি কথা, সাদ্দামের তথ্যমন্ত্রী তারিক আজিজ কিন্তু মুসলমান ছিলেন না। লেখকের ভাষায় আরবী নাম মাত্র।
ধন্যবাদ. তবে তারিক আজিজের ব্যাপারটা অদ্ভুত. উনি তাহলে কি ছিলেন?
তারেক আজিজ ছিলেন ক্যাথলিক খ্রীস্টান।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “পিতার উপর নবজাতকের হক হলো তার জন্য সুন্দর নাম রাখা” (মুসলিম)। ওদিকে আবার আবু হুরায়রা মানে বিড়ালের পিতা। হেহে
হুম ভাল লিখেছেন। তবে অনেকেই বলে যে, মহানবী আসার আর ও অনেক আগ থেকেই, ইসলাম দুনিয়াতে ছিল। মহানবী শুধু ইসলামকে স্প্রেড করেছেন