টিভিতে এক সময় একটা ডালভাজার বিজ্ঞাপন দেখাতো। ক্যাম্পাসে কিছু তরুণ-তরুণী গোমড়া মুখে বসে আছে, তাদের হাতে অফুরন্ত সময় কিন্তু কী করে তা কাটাবে ভেবে পাচ্ছে না। তখনই হাস্যোজ্জল মুখে এক মডেল এসে সবাইকে ডাল ভাজার প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। সঙ্গে বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইন- “অমুক ডাল ভাজা, মুঠোয় মুঠোয় সময় পার”। যেন সময় একটা যন্ত্রণা। ডালভাজা এসেছে আমাদের সেটা থেকে বাঁচাতে। অবশ্য ডালভাজা ওয়ালাদের আর কী দোষ দেব। আমরা তো আমাদের জীবনটাই এভাবে পার করে দেই। তাও ডালভাজার মত মজার কিছু না চিবিয়েই। বন্ধু মামুন-আর-রশিদ এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব-ই চিন্তিত। তার ছাত্রীরা মন দিয়ে পড়ে না। বিজ্ঞান-টিজ্ঞান শিখতে চায়না। জীবনটাকে মুঠোয় মুঠোয় (আসলে মুঠোফোনে) নষ্ট করে ফেলছে। আমাকে বললো, “দোস্তো তুমি তো বিজ্ঞানী মানুষ, আমার ছাত্রীদের জন্য কলেজ ম্যাগাজিনে একটা লেখা দাও তো। ওদেরকে একটু ইন্সপায়ার-টিন্সপায়ার করো। মন দিয়ে পড়লে ওরাও তো মাদাম কুরীর মত বিজ্ঞানী হতে পারে”।
সে নিজেও বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রেমী তাই সবাইকে জোর জবরদস্থি করে বিজ্ঞানী বানাতে চায়। আমি অবশ্য সেটা করব না। কারণ বিজ্ঞান চর্চা বেশ কঠিন। ঘন্টার পর ঘন্টা মোটা মোটা গণিতের বই সামনে নিয়ে কঠোর সাধনার ব্যাপার আছে। তার পর ল্যাবের এক্সপেরিমেন্ট। কাজগুলো অকল্পনীয় মজার হলেও খুবই পরিশ্রম সাধ্য। যারা বিজ্ঞানপ্রেমী তারা প্রেমে অন্ধ হয়ে যায় বলে যত কঠিনই হোক গবেষণা নিয়ে মেতে থাকে। যাকে বলে ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’! কিন্তু পৃথিবীর সব ভালো জিনিসই সবার ভালো লাগতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। যেমন আমার ছোটো বোনের ইলিশ মাছের গন্ধই সহ্য হয় না। ওকে যদি চাপাচাপি করি যে, “সকাল বিকাল ইলিশ মাছ খাবি, শয়নে-স্বপনে শুধু ইলিশ মাছ নিয়ে চিন্তা করবি, তাহলেই তুই বিশ্বসেরা ইলিশমাছ খোর হয়ে উঠবি।” তাতে কি কোনো লাভ হবে? হবে না। তাই জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার কী ভালো লাগে সেটা খুঁজে বের করা। একবার খুঁজে পেলেই জীবন এত আনন্দময় হয়ে উঠবে, এত কিছু করতে মন চাবে, যে আফসোস হবে-জীবন এত ছোটো কেন! তাই আমি ভেবেছি তোমাদের জন্য কেতাবি ভাষায় যাকে বলে ‘আত্মঅনুসন্ধান’, তাই নিয়ে লিখব।
তবে সবকিছুর আগে একটা কথা বলে নেই। জীবনে খাটা-খাটুনি থেকে কিন্তু মানুষের কোনো নিস্তার নেই। সে অফিস-আদালত-ব্যবসায় হোক কিংবা বাড়ি-ঘর-সংসার। আমাদের বাবা-মাদের দিকে দেখলে বোঝা যায়, কেমন বিরতিহীন ভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জীবনভর। তাদের মধ্যে যারা ভাগ্যবান, তারা নিজের ভালোলাগার বিষয়কেই জীবিকা হিসাবে নিতে পেরেছেন। কিন্তু যাদের তেমন সৌভাগ্য হয়নি তাদের কথা ভাব? স্রেফ জীবিকার তাগিদে বা সন্তানদের কথা ভেবে একটা নিরানন্দ কাজ বছরের পর বছর করাটা কেমন কষ্টের! যখন তোমাদের সময় আসবে তখন তোমাদেরও কাজকর্ম করতেই হবে। তাহলে এখন এই ছাত্রাবস্থাতেই অবস্থাতেই নিজের ভালোলাগার কাজটা অনুসন্ধান করে রাখাটা বুদ্ধিমানের মত হবে না?
দুঃখের ব্যাপার হলো, নিজের ভালোলাগার বিষয়কে পড়ার বিষয় হিসাবে পছন্দ করার রেওয়াজ আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। ফলে খুব ভালো ছাত্র, ভালো রেজাল্ট করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাই করছে, তাদের মধ্যেও কর্মজীবন নিয়ে হতাশা থেকে যায়। হয়তো তার ভালো লাগত অর্থনীতি। হয়ত তার এতটাই ভালো লাগতো যে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনায় সে বিশ্বসেরা হতে পারত। হতে পারত আমর্ত্য সেনের মত ভুবন বিখ্যাত কেউ। অথবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নাফিস বিন জাফরের মত অস্কার জয়ী কোনো স্পেশাল ইফেক্ট ডিজাইনার। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই নিজের ভালোলাগাটা বুঝতে পারি না। আর যারা বুঝতে পারি তারাও সাহস করে সেদিকে এগিয়ে যাই না।
কোথায় পাবো তারে?
তাহলে নিজের ভালোলাগা খুঁজে পাবার উপায় কি? সন্ন্যাসী হয়ে হিমালয়ে গিয়ে নিজের খোঁজে ধ্যানমগ্ন হতে হবে? উহু। নিজেকে খুঁজতে হয় মানুষের মাঝেই। আমার কোনো বিষয় ভালো লাগবে কি না, সেটা বুঝতে ঐ বিষয় ভালো লাগে তেমন কিছু মানুষের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে। তারা কী করে, কিভাবে করে সেগুলো যদি দেখা যায় তাহলে খুব সহজেই বোঝা সম্ভব ও’কাজ আমাকে দিয়ে হবে কি না। ইণ্টারনেটের কল্যানে ব্যাপারটা এখন খুব সহজ। যেমন, কারো গণিতবিদ হতে ভালো লাগবে কি না বোঝার জন্য, সে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের অনলাইন ফোরামে যোগ দিতে পারে। ওখানকার সদস্যদের উৎসাহ উদ্দিপনা যদি নিজেকে নাড়া দেয় তাহলে সে নিজেও সেটা শুরু করতে পারে। চাই কি প্রোগ্রামিং নিয়েও ঘাটাঘাটি করা যায়। কারো যদি ছবি আঁকতে ভালো লাগে, অনলাইনে এমন অনেক ফোরাম/ফেসবুকগ্রুপ আছে যারা নিজেরাও বিশ্বমানের আঁকাআঁকি চর্চা করে। নতুনদের কেও খুব ভালোবেসে সহযোগিতা করে। কিংবা হয়তো তোমার ভালো লাগে বাচ্চাদের সঙ্গ। ছোটো বাচ্চারা যখন পেনসিল কামড়ে কামড়ে কিছু একটা লিখতে থাকে তোমার মনটা হয়তো তখন একদম গলে যায় ভালোলাগায়। তাহলে তুমি হতে পারো সবার প্রিয় একজন শিক্ষিকা। যার ছাত্র-ছাত্রীরা সারা জীবন তাকে মনে রাখবে। ভেবে দেখ, আমাদের সবার জীবনেই এমন কোনো টিচারছিলেন যাদের কথা আমরা আমৃত্যু শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করব। এভাবে নানান মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে কথা বলে তাদের ভালোলাগার ব্যাপারটা আমারো ভালো লাগে কি না সেটা যাচাই করা যায়। সবচেয়ে বড় লাভ হলো, কাজটা নিয়ে নিজের মাঝে প্যাশন খুঁজে না পেলেও এর ফলে চমৎকার কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হবে, হয়তো বন্ধুত্বও হবে, যারা নিজেদের কর্ম নিয়ে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে আছে। আর আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সঞ্চয় তো আমাদের বন্ধুরা।
ভয় যদি হয়
অনেকের মধ্যে ভয় কাজ করে। যদি ভুল হয়? মানে যদি এমন একটা বিষয় সিলেক্ট করলাম, যে ঐ সময় আমার মনে হলো এটা করাই আমার জীবনের লক্ষ। কিন্তু পরে যদি দেখি অন্য কিছু ভালো লাগছে? তাতেও বিচলিত হবার কিছু নেই। তুমি খেয়াল করলে দেখবে বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বসেরা যারা তারাও বেশিরভাগ সময় অন্য কিছুদিয়ে শুরু করে। পরে নিজের বিষয়টা খুঁজে পায়। যেমন, সাকিব আল হাসান শুরুতে হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার! আর এখন সে বিশ্বের ১ নাম্বার ক্রিকেটার। তাই তুমি এই যাত্রা শুরু করার আগে বুঝতে পারবে না যে কোথায় তুমি পৌছাবে শেষমেষ। তবে বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে কিছু হবার পরিকল্পনা না করাই ভালো। মানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা খুব পাত্তা পাচ্ছে তাই আমাকেও সেটাই হতে হবে। বা আমাকে যেতে হবে বিসিএস ফরেন সার্ভিসে। এভাবে ভাবা ঠিক নয়। তোমার মধ্যে যদি নানান রকম পাজল/ধাঁধা সমাধানের ব্যাপারে ভালোলাগা কাজ করে তাহলে তুমি নিশ্চিত ভাবেই বিশ্বমানের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে। আবার তোমার যদি, বিশ্বরাজনীতি নিয়ে খুব কৌতূহল হয়। আমেরিকা-রাশিয়ার দ্বন্দ। দেশবিদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এসব নিয়ে আগ্রহবোধ করো তাহলে নিশ্চিত ভাবেই তুমি ফরেন সার্ভিসে গেলে বড় কূটনীতিবিদ হয়ে গড়ে উঠবে। এসব শুনে অবশ্য কেউ কেউ চোখ উলটে বলতে পারে, “হুহ, আমি চাইলেই বুঝি সবাই আমাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, কিংবা ফরেন সার্ভিসে নিয়োগ মুখে তুলে দেবে?” না আমি বলিনি এটা পাওয় সহজ হবে। কিন্তু ব্যপারগুলো নিয়ে স্রেফ বাহ্যিক গ্লামারের কারণে না হয়ে যদি তোমার মধ্যে অন্তর্গত ভালোবাসা কাজ করে, তাহলে অন্য যে কারো চেয়ে বেশি পরিশ্রম তুমি করতে পারবে সেই লক্ষ্য অর্জনে। পরিশ্রমকে তখন পরিশ্রমই মনে হবে না। মজার কাজ মনে হবে। এবং তুমি পারবেই। বিশ্বখ্যাত লেখক পাওল কোয়েলুর একটা কথা আছে, “When you want something, all the universe conspires in helping you to achieve it”।
জনারণ্যে তুমি
এর পর এসে ভর করে আরেকটা ভয়। এই যে এতশত বেকার তরুণ-তরুণী। মন মত কাজ তো দূরের কথা, স্রেফ খেয়ে পরে বাঁচার মত কাজই পাচ্ছে না। এর মাঝে আমার ভালোলাগার কাজটা আমাকে কে দেবে? এত শত প্রতিযোগী দেখে ভড়কে যাবারকিছু নেই। কারণ এই ব্যাপারটা অনেকটা এরেঞ্জড ম্যারেজে বিয়ের পাত্র-পাত্রী দেখার মত। আত্মীয় স্বজনের বেলায় খেয়াল করেছ নিশ্চয়ই এত শত ডাঙ্গর ছেলে মেয়ে চারিদিকে কিন্তু উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারটা কর্মক্ষেত্রেও ঠিক তেমন-ই। সারা বিশ্বজুড়েই বড়বড় কোম্পানিগুলো তাদের কাজে লাগবে এমন মানুষই খুঁজে পায় না। বেশিরভাগ প্রার্থী ই হয়তো ঐ কাজটাকে ভালোবাসে না। বা আগ্রহই পায়না। ফলে নিজেকে যোগ্যভাবে গড়ে তোলেনি। তুমি যখন তোমার ভালোলাগার বিষয়টা প্রাণ ঢেলে চর্চা করবে, দেখবে তোমার চাকরী খোঁজা লাগবে না চাকরী-ই তোমাকে খুঁজবে। আমার জীবনের প্রথম চাকরী এবং পরে পিএইচডির এডমিশন কোনো কিছুর জন্যই আমাকে কোথাও আবেদন করতে হয়নি। ওরাই আমাকে খুঁজে বের করেছে। জিআরই, টোফেল স্কোরও লাগেনি। আমার রেজাল্টও একেবারে পিছনের সারির। দুঃশ্চিন্তা না করে স্রেফ নিজের ভালোলার বিষয় নিয়ে মেতে থাকাতেই এটা হয়েছে।
পথের পাথেয়
তার মানে কি যা কিছু আমার অত ভালো লাগে না তা কখনোই করব না? উহু, তেমন করলেও তো চলবে না। আমাদের কিছু বেসিক স্কিল থাকতেই হয়। যেমন, ধরো হাতের লেখা। অনেক বাচ্চারই লিখতে ইচ্ছে করে না একদম। তারপরও সবাইকেই এটা শিখতে হবে। এর মাঝে যারা নিজের ভালোলাগা খুঁজে পাবে তারা হয়তো বড় হয়ে হয়ে উঠবে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার। কিংবা তারা হয়তো নানান রকম ফন্ট বানাবে লেখার জন্য। যার ভিতরে ভালোলাগাটা নেই সে চাইলেও ক্যালিগ্রাফার হতে পারবে না। তাই বলে লেখালিখি-ই না শিখলে তো নিরক্ষর হয়ে থাকতে হবে! সেটা কি ভালো? স্কুল কলেজ পর্যায়ে আমাদের সিলেবাসগুলো তাই এমন ভাবে ঠিক করা হয় যে সবাই যেন কিছু জরুরী বিষয় সম্পর্কে কার্যকরভাবে কিছু হলেও শেখে। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিশেষ কিছু নিয়ে নিজের মন মত পড়াশুনা করতে হয়। তারপও দেখা যাবে কম্পিউটার বিজ্ঞান যারা পড়ছে তাদেরকে কেমিস্ট্রি, কিংবা মেকানিক্যাল ড্রইং এর ক্লাস করতে হয়। কারণ কোনো কিছুই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। ভালোলাগার বিষয়টা শিখতেও এমন অনেক কিছু জানা লাগতে পারে যেগুলো হতো অতটা ভালো লাগবে না তোমার। শেখার সময় বুঝতে না পারলেও পথ চলতে গিয়ে এক সময় ঠিকই উপলব্ধি করবে যে এই বাড়তি শেখাটা কত উপকারী ছিলো!
ভুল পথ সঠিক পথ
আগেই বলেছি, প্রথম চেষ্টাতেই নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাবার সম্ভাবনা খুব কম। আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি, যারা সামাজিক বিজ্ঞান, ইংরেজী সাহিত্য, দর্শন, পড়তে শুরু করে এখন কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসাবে ভুবনবিখ্যাত। আমাদের গবেষণাগারেই, কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে কাজ করছে যারা, তাদের কেউ কেউ কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে, কেউ কেমিস্ট্রি, কেউ গণিত, কেউ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে এসেছে। ফিল্ডস মেডেল জয়ী বিশ্বের সেরা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড উইটেন, যিনি স্ট্রিং থিওরীর প্রবাদপুরুষ হিসাবে পরিচিত, শুরুতে বি এ পাশ করেছিলেন ইতিহাসে। তার ছোটো বোন গণিতে পড়ত। তার বই ঘাটাঘাটি করতে গিয়েই পরে তিনি গণিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এবং মাস্টার্সে ভর্তি হন গণিত বিষয়ে। কিন্তু সেখানেও মন টেকেনি, কিছুদিন পর তিনি পিএইচডি শেষ করেন পদার্থবিজ্ঞানে। আসলে নিজের ভালোলাগার বিষয়টা খুঁজে পেলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে তখন আর অনন্ত জলিলকে লাগে না। নিজেই করা যায়।
দিবাস্বপ্ন তোমার বন্ধু
সবার আগে সবাইকে দোষে গুণে নিজেদের মত মানুষ ভাবতে পারতে হবে। তা সে নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী, অস্কারজয়ী পরিচালক, দুর্দান্ত কোনো ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট কিংবা বিশ্বজয়ী রাষ্ট্র প্রধাণ যেই হোক না কেন। আমাদের মত তাদেরও সকালে ঘুম থেকে উঠতে আলসেমী লাগে, কখনো পেটে ব্যাথা হয়, মন খারাপ হয়, হয় নানান সাংসারিক ঝামেলা। তারা স্রেফ নিজের ভালো লাগার বিষয়টা নিয়ে মেতে থাকে বলেই ঐ অবস্থানে যেতে পেরেছে। নিজে ঐ অবস্থানে পৌছানোর আগে, নিজেকে ঐ অবস্থানে ভাবতে পারতে হবে। ব্যাপারটা দিবাস্বপ্ন দেখার মত। কিন্তু তুমি যে কাজটা করে ফেলবে বলে কল্পনা করারই সাহস রাখো না সেটা তো করতে পারবেই না! তাই দিবাসপ্ন দেখা নিয়ে লজ্জার কিছু নেই। কেন যে দিবাস্বপ্ন দেখা নিয়ে আমাদের সমাজে হাসাহাসি করা হয়! এইসব ছোটোখাটো কারণেই ছেলে-মেয়েরা নতুন কিছু করার কল্পনা করতে পারে না। এই যে মাশরাফির ক্যাপ্টেন্সিতে আমাদের ক্রিকেট দল কেমন আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে উঠেছে। একের পর এক হারিয়ে দিচ্ছে ক্রিকেট পরাশক্তিদের। এই খেলোয়াড়রাই কিন্তু আগেও খেলত আর নিয়মকরে হারত। এখন তারা নিজেদেরকে ছোটো না ভেবে চ্যাম্পিয়নদের মত ভাবতে পারছে বলেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তুমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালে দেখবে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পড়া ছেলে-মেয়েরাও যারা নিজের ভালোলাগার বিষয়টা খুঁজে পায়নি তারাও তোমার নাগাল পাবে না।
আর যা কিছু
এই লেখায় আমি নানান রকম কর্মকান্ডকে উদাহরণ হিসাবে দেখিয়েছি। এর সবগুলোই হয়তো তোমার খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু এগুলোই তো সব নয়। আরো কতো কিছু করার আছে! পৃথিবী তার অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে বসে আছে তোমার জন্য। তুমি যদি সচেষ্ট হও, দেখবে এমন কিছু খুঁজে পাবে, যার জন্য জীবনটাই গড়ে উঠবে বর্ণিল রঙে। আজ-ই জানলাম বিশ্ব দরবারে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে পরিচিত হতে পেরেছি আমাদের শ্রমজীবি মানুষের পরিশ্রমের কারণে। এখন যদি আমরা অন্যের ভ্রূকূটি উপেক্ষা করে নিজের সৃষ্টিশীলতা বিকাশ করার এবং নিজের ভালোলাগার কাজটা নিয়ে মেতে ওঠার চর্চা করতে পারি তাহলে অচিরেই আমাদের দেশটা জ্ঞানে ও সম্পদে বিশ্বের সেরা দেশ হয়ে গড়ে উঠবে। আমাদের একটাই জীবন। এটাকে শুধু ঘানি টানার মত করে যাপন করলে চলবে না, উদ্যাপন করতে পারতে হবে। কাজী নজরুল ইসলাম যেভাবে বলেছেন,
“পাতাল ফেড়ে নামব আমি
উঠব আমি আকাশ ফুঁড়ে,
বিশ্বজগৎ দেখব আমি
আপন হাতের মুঠোয় পুরে।”
প্রজন্মের জন্য দরকারি নোট। শেয়ার দিলাম। চলুক
ধন্যবাদ।
…যদি আমরা অন্যের ভ্রূকূটি উপেক্ষা করে নিজের সৃষ্টিশীলতা বিকাশ করার এবং নিজের ভালোলাগার কাজটা নিয়ে মেতে ওঠার চর্চা করতে পারি তাহলে অচিরেই আমাদের দেশটা জ্ঞানে ও সম্পদে বিশ্বের সেরা দেশ হয়ে গড়ে উঠবে
অনেক ভালো লাগলো । ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
খুবই দরকারি এবং উৎসাহ-জাগানিয়া লেখা। শিক্ষার্থীদের অনেক কাজে লাগবে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের মা-বাবাকেও বোঝানো দরকার যেন তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের জিপিএ গোল্ডেন এ+ পাওয়া বাধ্যতামূলক করে না তোলেন।
সত্যি! আমারও মনে হয় স্কুল গুলোতে শিক্ষার্থীদের বাবা-মা দেরকে নিয়ে নানান রকম কর্মশালা আয়োজন করা উচিৎ। কারণ প্রচুর শিশুর শৈশব শিক্ষাজীবন ‘নষ্ট’ হচ্ছে বাবা-মায়ের অজ্ঞতায়। তাদেরকে টার্গেট অডিয়েন্স ধরে লেখালিখিরও খুব একটা চল নেই এদেশে। এই যায়গাটাতে বড় একটা অবদান রাখা সম্ভব।
সমস্যা হলো আমি নিজে বাবা নই বলে সন্তান পালনের বিষয়ে লেখাটা আমার এখতিয়ার বহির্ভুত হয়ে যাবে। :-/