রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক -ফেসবুকে লেখাটাই আজকাল আপদ । মৌমাছির ঝাঁক ধেয়ে আসে হুল নিয়ে। আমি প্রবাসী বাঙালী। তাদের বক্তব্য পশ্চিম বঙ্গ নিয়ে, ভারত নিয়ে এগুলো আমার অনধিকার চর্চা। দেশে না থাকলে দেশের রাজনীতি নিয়ে চর্চা করার অধিকার আমার নেই! ইগনোর করেছি বহুদিন। ইদানিং ব্যপারটা বিরক্তির পর্যায়ে লেবু কচলানো। লেবু কচলালে তিঁতোই হয়, তবুও গালাগাল কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করে, একটা লম্বা কৈয়ফত নামানো বেটার মনে হল।
অভিজিত রায় হত্যাকান্ডে আমি বাংলাদেশীদের রিয়াকশন দেখেছি। অধিকাংশ লোকের বক্তব্য ছিল-কেন অভিজিত রায় বাংলাদেশের উন্নতির জন্য কাজ না করে, আমেরিকা থেকে আস্তিকতা, নাস্তিকতা নিয়ে ক্যাঁচাল করে ! আমেরিকা থেকে অভিজিত রায়ের বাংলাদেশ চর্চা আসলেই অনাধিকার চর্চা! কি আর বলবো। যারা ওকে চিনতেন তারা বিলক্ষন জানেন ওর দেহটা ছিল আমেরিকাতে, মনটা সব সময় ছিল বাংলাদেশে। অভিজিতের হৃদয় মনের সবটাতেই ছিল বাংলাদেশ। প্রবাসী ভারতীয়, বাংলাদেশী-সবার দেহটাই শুধু বিদেশে। মন এবং হৃদয় সব সময় বাল্যের নন্দনকাননে!
যারা প্রবাসী বাঙালীদের বিরুদ্ধে হুল ফোটাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই আর্থ সামাজিক ইস্যু গুলো নিয়ে গভীরে ভাবেন নি। বারবার এককথা লিখে যাতে লেবু কচলাতে না হয় -তাই নিজের দুসেন্ট লিখে ফেললাম ।
(১) প্রথম গুরুত্বপূর্ন বিষয় দেশের ট্যাক্স পেয়ারের টাকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে থেকে, ভারতের কি লাভ হল? এটা কি দেশের সাথে প্রতারণা করা হল না? ট্যাক্সটা ত পাচ্ছে আমেরিকা!
–অবশ্যই যৌত্বিক প্রশ্ন। কিন্ত উলটো সাইডের আর্গুমেন্টটাও জানা উচিত। ভারতে আজকের শিক্ষিত তরুন তরুনীরা করে খাচ্ছে আই টি শিল্পের জন্য। ভারতে এই বিশাল আই টি শিল্পের ৬৫% ক্লায়েন্ট হচ্ছে আমেরিকা। আউটসোর্সিং শিল্পের ইতিহাস পড়লে দেখা যাবে, আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয়রা আই টি শিল্পের উত্থানের মূল কান্ডারী।
যদি ভারত থেকে ইনারা আমেরিকাতে না যেতেন-সেখানকার ব্যবসা এবং প্রযুক্তির স্কিল গুলি রপ্ত না করতেন- আজকে ভারতের আই টি শিল্প যেখানে, তার ৯০% ও তৈরী হত কিনা সন্দেহ আছে। কারন সেক্ষেত্রে আই টি আউটসোরসিং এর হাব হত ইস্টার্ন ইউরোপ, রাশিয়ান ফেডারেশন।
এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে, যেখানে গ্লোবালাইজেশন কাজে লাগিয়েই ভারতের অধিকাংশ নতুন উন্নত চাকরি তৈরী হচ্ছে সেখানে পৃথিবীর অন্য দেশে কাজ করতে যাওয়াটাই কাম্য। কারন সেটা না হলে সেই দেশের সার্ভিস ব্যবসা, ভারতে আসা মুশকিল আছে।
(২) দ্বিতীয় প্রশ্ন ভারতের অর্থনীতিতে একজন প্রবাসী কি ভাবে অবদান রাখে?
আমি যেহেতু ব্যবসায়ী এবং আমার ডেভেলেপমেন্ট সেন্টার এবং কর্মীদের অধিকাংশ ভারতেই ( মুষ্টিমেয় কিছু ইস্টার্ন ইউরোপে )-আমার ক্ষেত্রে উত্তরটা সরাসরি দেওয়া যায়। সেটা সমস্যা না। প্রশ্ন হচ্ছে বাকী প্রবাসীরা যারা ব্যবসা করে না-শুধু চাকরি করে-তারা কি ভারতের অর্থনীতিতে কিছু দিচ্ছে না?
ভারতের অর্থনীতিতে প্রবাসী ভারতীয়দের অবদান, ভারতে থাকা ভারতীয়দের দ্বিগুনের কিছু বেশী। আমেরিকান ভারতীয়দের ক্ষেত্রে এটি দশগুন। এই তথ্যগুলো যাচাই করে দেখে নিন
২০১২-১৩ সালে ২২ মিলিয়ান প্রবাসী ভারতীয় পাঠিয়েছিল ৭২ বিলিয়ান ডলার। যা ভারতে আসা এফ ডি আই (৪৫ বিলিয়ান ঃ২০১২) এর থেকে অনেক বেশী। শুধু তাই না, এই টাকাটা ভারতের জিডিপির ৪%। অর্থাৎ ২% এন আর আই, ভারতের জিডিপির ৪% অবদান রাখে। যা গড়ে দ্বিগুনের বেশী।
৭২ বিলিয়ানের ৩০% ছিল উত্তর আমেরিকা থেকে ( ইউ এস, কানাডা)। এখানে থাকে তিন মিলিয়ান ভারতীয়। সুতরাং 0.3% ইন্ডিয়ান আমেরিকান , ভারতের জিডিপিতে শুধু রেমিটান্সের মাধ্যমে 4 % x0.3 =1.2% দিচ্ছে। অর্থাৎ শুধু রেমিটান্সের মাধ্যমেই একজন ইন্ডিয়ান আমেরিকান একজন ভারতবাসীর চেয়ে চার গুন বেশী অবদান রাখছে।
এবার রেমিটান্স ছাড়াও ব্যবসার মাধ্যমে ভারতে টাকা আসছে প্রবাসীদের জন্য। ইনফ্যাক্ট এফ ডি আই এবং আউটসোর্সিং রেভিনিউএর একটা বড় অংশ প্রবাসী আমেরিকান ভারতীয়দের জন্যই আসে। সেটা ফ্যাক্টর ইন করলে, ভারতের অর্থনীতিতে প্রবাসী ইন্ডিয়ান আমেরিকানরা গড়ে একজন ভারতীয়র চেয়ে দশগুনের বেশী অবদান রাখছে।
শুধু নাম্বার দিয়ে দেখলে, অবশ্য শর্ট সাইটেড হবে । আমেরিকার কোম্পানীগুলি সব সয় ভারতে নতুন নতুন ডেভেলেপমেন্ট সেন্টার খুলছে-এবং ভারতে খুলবে না ইস্টার্ন ইউরোপে খুলবে-এই সিদ্ধান্তগুলির পেছনে, ওইসব কোম্পানীর ভারতীয় কর্মীরা সব সময় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। আমি অবশ্যই চাইব, আমেরিকার অধিকাংশ বিজনেসে ভারতীয় কর্মী থাকুক-যাতে তারা যখন আউটসোর্সিং এর সিদ্ধান্ত নেবে তখন যাতে ভারত প্রাধান্য পায় তাদের জন্য।
(৩) এর পরেও প্রশ্ন ওঠে। ব্যবসা করা ত নিজের মুনাফার জন্য। এটা কি ভারতের জন্য কিছু করা হল ??
আমি সবিনয়ে নিবেদন করতে চাই, সৎ ভাবে মুনাফা অর্জনের মধ্যে হীনতা কিছু দেখি না। ছোটবেলা থেকে আমাদের সামনে যেসব চরিত্র মূলোর মতন ঝোলানো হত-নেতাজি, বিবেকানন্দ-এরা নিঃস্বার্থ ত্যাগের মূর্ত প্রতীক । এর থেকে বাঙালীদের মনে বধ্যমূল ধারনা যারা নিঃস্বার্থ ত্যাগী তারা মহান, যারা মুনাফার জন্য ব্যবসা করে-সবাই চোর ডাকাত ধান্দাবাজদের দলে। এর মূল কারন ভারতের ব্যবসায়ী শ্রেনীটী বেসিক্যালি ওই টাইপের। এই জন্য বিবেকানন্দ আমেরিকাতে এসে বলেছিলেন, আমেরিকাতে ব্যবসায়ীরা সন্মানের দিক দিয়ে প্রথম সারিতে-কারন তারা দেশ গড়ার কারিগর। আর ভারতে ব্যবসায়ী বলতে লোকে মূলত চোর ছ্যাঁচড়দের বোঝে।
যারা নিঃস্বার্থ ত্যাগীদের প্রথম সারিতে রাখবেন–তাদের নিয়ে আমার আপত্তি নেই। শ্রদ্ধাই আছে। তবে আমরা নশ্বর মানুষ। অর্থনীতি নিঃস্বার্থ ত্যাগে চলে না। তা চলে মুনাফার তেলে। মুনাফার ভাল খারাপ দিক সবই আছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ন সত্য এটাই, মার্কেট এবং গ্লোবালাইজেশনকে অস্বীকার করা মানে ব্যক্তি এবং জাতি হিসাবে শ্রেফ আত্মহত্যা। তবে আত্মহত্যা বাজে, বেঁচে থাকা ভাল। এমন তত্ত্বের জনক আমি নই । সুকুমার রায়ের ফকিরের খেতেও কষ্ট হত। সেও তার দৃষ্টিকোন থেকে ঠিক। কারন জীবনের পরম উদ্দেশ্যত আসলেই নেই। সবটাই আপাত। তাই জীবনে কি করা উচিত সেই মেঠো বিতর্কে না গিয়ে আপাতত ধরা যাক নশ্বর সাধারন মানুষ হিসাবে আমার চাহিদা সামান্যই-সেটা হচ্ছে নিজের পোলাপানদের জন্য খাদ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসার নিরাপত্তা। তাই আমি এমন একটা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে চাই, যেখানে শুধু আমার সন্তানের জন্য না-বাকী সবার জন্যও এই নিরাপত্তা থাকবে। ভেবে দেখুন ভারতের অবস্থা-খাদ্যে অসম্ভব ভেজাল, শিক্ষা শেষ করে দিচ্ছে প্রাইভেট টিউশন আর প্রাইভেট স্কুল কলেজ গুলো-আর চিকিৎসা? কোলকাতায় নার্সিং হোমে ভর্তি হওয়া আর কসাই খানায় ছাগল হিসাবে নাম লেখানো একই ব্যপার। এমন নয় যে আমেরিকা স্বর্গ। এখানেও ভেজাল আছে। কিন্ত ভারতের তুলনায় তা অনেক অনেক গুনে ভাল। ভারতে এই সব পরিসেবাতে অসম্ভব দুর্নীতি– কারন মার্কেটের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রন নেই। চোরেরা চালাচ্ছে এইসব ব্যবসা। এর মূল কারন ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসব সংস্কারের দরকার ছিল তা হয় নি। মোদিজি কত বল্লেন তিনি ভারত থেকে এই সব আদ্যিকালের আইন কানুন তুলে দেবেন। তা উনার এক বছরে দেখলাম উনি শুধু বাতেলা মেরেছেন-বরং কাল সার্ভিস ট্যাক্স ১২% থেকে বেড়ে ১৪% হল! আচ্ছে দিন! ব্যবসা করতে যদি এত সার্ভিস ট্যাক্স দিতে হয়-কে আর আইন মেনে ব্যবসা করতে চাইবে? এত সার্ভিস ট্যাক্স দিয়ে একমাত্র তারাই ব্যবসা করতে পারবে যারা চুরি করতে সক্ষম!
ক্যাপিটালিজমকে পরিস্কার ভাবে স্বীকার না করলে কিভাবে কি করে ক্যাপিটালিজমের গলায় ঘন্টা লাগাবেন? মার্কেট নিয়ন্ত্রন করা কঠিন কাজ-আমেরিকাও করতে হিমসিম খায় । কিন্ত আমেরিকাতে খাদ্য-ড্রাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফ ডি এ এতটুকু অন্তত করেছে যে খাদ্য এবং মেডিসিনে ভেজাল নেই । ওই টুকু বেসিক নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ ভারতের সিস্টেম।
ক্যাপিটালিজমের তীর্থ ক্ষেত্রে আমার ছেলেকে প্রাইভেট স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে না। আর ভারতে একজন রিক্সাওলাও তার ছেলেকে প্রাইভেট স্কুলে পাঠাচ্ছে!! শিক্ষাক্ষেত্রে কি মারাত্মক অবস্থা!
মার্কেটকে নিয়ন্ত্রন করার মধ্যেই আমেরিকার এই সাফল্য। আর মার্কেটকে নিয়ন্ত্রন করতে হলে প্রথমেই স্বীকার করতে হবে, মার্কেটই মূল চালিকা শক্তি-তাই সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন মার্কেটের ওপর থাকার দরকার। মার্কেট বাজে, মুনাফা বাজে-তাই রোম্যান্টিক বামপন্থী সুলভ দিন বদলের কবিতা এবং গানে ডুব দিলে-মার্কেট চোর ডাকাত এবং দৈত্য রূপেই জীবনে উদিত হবে। সেটাই ভবিতব্য হয়েছে পশ্চিম বঙ্গের জনজীবনে।
আমেরিকাতে আসার আগে আমিও বামপন্থী চিন্তাতেই চালিত ছিলাম। আমেরিকাতে আসার পরে বিবেকানন্দ একশো বছর আগে যা দেখেছি্লেন- আমি ও তাই দেখলাম । এই সমাজ চলে ব্যবসার ওপরে এবং ব্যবসায়ীদের দ্বারা। আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা পিতারা সবাই একেকজন উদ্যোগপতি। বেঞ্জামিন ফ্যাঙ্কলিন আধুনিক ডাক ব্যবস্থা থেকে আরো অনেক নতুন সিস্টেমের জনক সেকালে। একালের আমেরিকা তৈরী হয়েছে থমাস এডিসন, নিকোলা টেসলা, হেনরী ফোর্ডদের হাত ধরে যার বাটন আজ বিল গেটস, স্টিভ জবস -মার্কজুকারবার্গ দের হাতে। আমাদের ছোটবেলার হিরো ছিলেন বিবেকানন্দ, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ। যারা একাধারে কর্মবীর, স্বার্থত্যাগী, নিস্পাপ চরিত্র!! আমেরিকাতে হিরো আবিস্কারক উদ্যোগপতিরা। আমেরিকাতে লেখকদের মধ্যেও যদি আমি দেখি-ধরুন মার্ক টোয়েনের কথা। উনি একাধারে লেখক আবার উদ্যোগপতি। উনার আধুনিক ছাপাখানার পেটেন্ট ছিল।
সব থেকে বড় কথা আমেরিকাতে এডিসন-টেসলাদের পূজো করা হয় না। এরা নিস্পাপ নিঃস্বার্থ চরিত্র ছিলেন এমন মূলোও ঝোলানো হয় না। বরং থমাস এডিসন এসি কারেন্ট আটকাতে কিভাবে নিকোলা টেসলাকে বাম্বু দিয়েছিলেন, সেই কাহিনী এখানে অনেক বেশী প্রচলিত। এডিসন থেকে বিল গেটস-এদের সবার চরিত্রে যেটা আমার চোখে পড়েছে এরা আবিস্কার করেছেন, কোম্পানী গড়েছেন আবিস্কারের, নতুনের আনন্দে। নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দ আমেরিকান সমাজে প্রবল। আমার আশেপাশের যত সফল উদ্যোগপতি দেখি তাদের একটা বড় অংশই এই নতুনের আনন্দে চালিত। টাকা পয়সা, ক্ষমতা এবং রিকগনিশনের দিকটা অবশ্যই আছে-কিন্ত এসব ছাপিয়ে কাজ করার যে আনন্দ এদের মধ্যে দেখেছি-এটাই আমার মূল কারন আমেরিকান সমাজে থেকে যাওয়া। শুধু টাকা বানাবার জন্য কেও এডিসন বা স্টিভ জবস হয় না। একজন কবি বা পেইন্টার সৃজনশীলতার যে আনন্দ পান, একজন উদ্যোগপতিও ব্যবসা বা প্রযুক্তিতে নতুনের সৃঞ্জন করে একই আনন্দ পান। টাকায় সেই শক্তি নেই যা সৃজনশীলতার আনন্দে আছে।
মোদ্দা কথা ইতিহাসে আমার যেটুকু সামান্য জ্ঞান, তাতে এটা পরিস্কার— একটা জাতিকে যত কম ভাববাদি আধ্যাত্মিক মূলো দেখানো হয় ততই ভাল। আধ্যাত্মিক মূলোতে ভাল কবিতা, গান ইত্যাদি হতে পারে-কিন্ত রাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্পূর্ন ধ্বসে যাবে।
(৪) তৃতীয় প্রশ্ন- ব্যবসা যদি করতে হয়-আন্তার প্রেনার কালচার যদি কাম্য হয়-তাহলে ভারতে নয় কেন? কেন আমেরিকাতে?
প্রথমত, আমি যত আমেরিকান-ভারতীয় উদ্যোগপতিকে জানি, তাদের সবার ব্যবসার কিছু অংশ ভারতে আছে। সুতরাং ব্যবসা সবাই ভারতেও করছে। ভারতে ব্যবসা করাটা ইস্যু না।
প্রশ্ন ওঠে এবং ওঠা উচিত-আমেরিকার এই আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর সংস্কৃতি আমরা ভারতে, ভারতের উন্নতির জন্য পৌছে দিতে পারছি কি না?
এখানেই প্রবাসী ভারতীয়দের বিশাল ব্যর্থতা। এই পয়েন্টটা একটু ডিটেলসে লেখা দরকার। আমেরিকাতে প্রায় সব আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কোম্পানীতে সি ই ও থেকে ঝাড়ুদার পর্যন্ত সবাই কর্মী। আমরা এখানে সবাই আগে প্রথমে একজন কর্মী, তারপরে বন্ধু, তারপরে বস। ভারতে কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট এবং মালিকেরা যেভাবে কর্মীদের সাথে ব্যবহার করে তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না। সবাই স্যার স্যার করছে!! আমি অনেক আমেরিকান-ভারতীয় উদ্যোগপতিকেই জানি যারা ভারতে আমেরিকান ওয়ার্ক কালচার আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারন মিডল ম্যানেজমেন্ট। তারা বলে যে যদি ভারতে আমেরিকান সাম্যের বানী আনা হয় ওয়ার্ক প্লেসে, তাহলে কেও নাকি আর ম্যানেজারদের কথা শুনবে না! তাই নাকি ভারতে ওই স্যার, তেল মারা কালচার, ভয় দেখানো কালচার চালু রাখতে হবে!! ভীষন ডিসগাস্টিং হোপলেস সিচুয়েশন এটা। যেহেতু আমাদের আমেরিকাতেই থাকতে হয় এবং আমরা ভারতের ম্যানেজারদের ওপর নির্ভরশীল-এই একটা স্থলে কিছুতেই ভারতে আমেরিকান ওয়ার্ক কালচার এবং ওয়ার্ক প্লেসে সাম্যের যে বানী সেটা আনা সম্ভব হচ্ছে না। ” আমরা সবাই কর্মী, আমাদের এই কর্মজগতে” -এই মহান আমেরিকান সংস্কৃতিটি ভারতে আনতে প্রবাসীদের দ্বায়িত্ব বিরাট। কিন্ত তারা ভারতে ফিরে, সেই ব্রাহ্মন্যবাদি কালচারে ফিরে যান। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
এর একটা মূল কারন ভারতে কাস্ট সিস্টেম, ব্রাহ্মন্যবাদ একদম রক্ত মজ্জায় ডুবে গেছে। ফলে একজন কর্মী- ম্যানেজার হওয়া মাত্রই নিজেকে ব্রাহ্মন ভাবতে থাকে। সে আর শুদ্রের কাজ করবে না !! আমেরিকাতে আমরা নিজেরা নিজেদের ল্যাব পরিস্কার করি, পোষ্ট অফিসের সব কাজ নিজেরাই করি-ওয়ার্ক শপেও নিজেরাই যায়। আবার এলগোরিদম ও আমরাই লিখি। ভারতে কোন একজন ইঞ্জিনিয়ারকে যদি বলা হয় মেশিনটা এদিক থেকে ওদিকে সরিয়ে দে-সে অপমানিত বোধ করবে।
দুহাজার ছয় সালে পুনেতে একটা পার্টনার কোম্পানীতে ট্রেনিং দিতে গেছি। একটা ফাইভ স্টার হোটেলের কনফারেন্স হল বুক করে ট্রেনিং হচ্ছে। আমি গাড়ি থেকে নামলাম। হাতে বিশাল সুটকেস । নিজেই সুটকেসটা টানতে টানতে কনফারেন্স রুমের দিকে এগোচ্ছি। হঠাৎ দেখি এক ভারতীয় ম্যানেজার হাঁপাতে হাঁপাতে আমার দিকে ছুটছে। কাছে এসে বলে স্যার করছেন কি। এটা আমেরিকা না। আপনি যদি নিজেই এই ভারী বাক্স টানতে টানতে সবার সামনে
কনফারেন্স রুমে ঢোকেন, এই সব ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে আপনার আর ইজ্জত থাকবে না। আপনি হচ্ছেন গিয়ে মূল বক্তা। আপনাকে ভারতে ওয়েট রেখে চলতে হবে। এসব শোনার পরে আমার মাথা বঁই বঁই করে ঘুরছিল-মনে মনে আবৃত্তি করলাম “হে মোর দুর্ভাগা দেশ! “।
(৫) আমেরিকাতে আমরা আরামের জীবন বেছে নিয়েছি-ভারতের জীবন অনেক কষ্টের বলে-
এই অভিযোগ ও সত্য না। ফাক্ট হল ভারতে অনেক চাকর বাকর থাকে বলে, আমি ত দেখি টাকা থাকলে ভারতেই সুখ সুবিধা বেশী। আমার ত ভারতে গিয়ে আর ফিরতে ইচ্ছা করে না। সব সময় ভাল ভাল খাদ্য পানীয়-কেও না কেও রান্না করে দিচ্ছে, সব কিছু কাজ করে দিচ্ছে। এখানে সকালে উঠে বাগানে গাছের যত্ন নেওয়া, সার দেওয়া, ঘাস কাটা থেকে ব্রেকফাস্ট নিজেকেই তৈরী করে নিতে হয়। উইকেন্ডে ভাল মন্দ খাওয়া হয় পার্টিতে -কিন্ত বাকী দিনগুলোতে ফ্রীজের বাসি খাবারেই ক্ষুদানিবৃত্তি। এরপরে ছেলে মেয়েদের বিশাল এক্টিভিটি-কখনো ছেলেকে নিয়ে সকারে ত মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে। ভীষন বিজি এবং হেক্টিক জীবন। এর থেকে ভারতের জীবন অনেক ভাল।
কিন্ত ওই সমস্যা-নিরাপত্তা নেই। ব্যবসায়ীদের জীবনে আরো নিরাপত্তা নেই। তাদের পুলিশ, রাজনীতিবিদ, গুন্ডা ম্যানেজ করে বাঁচতে হয়।
আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এটা বলা না যে সব ভারতীয়র আমেরিকাতে আসা উচিত। অথবা আমি যা করছি, বাকী ভারতীয়দের ও তাই করা উচিত। বরং আমি উল্টোটাই বলব। সবাই তার নিজের মতন করে সুখের সন্ধান করুক। সবাই নিজের মতন করে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজবে। সুকুমার রায়ের ফকির সাহেব ও ঠিক, বিল গেটস ও ঠিক। বেঠিক সেই ব্যক্তি-যে ভাবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ একটা মনোলিথিক আদর্শের মোল্ডে চলবে । হিন্দুত্ববাদি, ইসলাম এবং কমিনিউস্টদের সাথে আমার বিরোধিতা মূলত এই কারনে। কারন এরা মনে করে মানুষ, সমাজ এবং রাষ্ট্রের তাদের মত করে, তাদের আদর্শে চলা উচিৎ। সব মানুষকে এক ছাঁচে গড়ার চেষ্টাটাই সব থেকে বড় ভুল।
আমাকে কেউ বললে, আমি বলি তুই যা করিস আমিও তাই করি। ফেবুতে বসে দেশপ্রেম চর্চা। তুই না পারলে আমি নয় কেন?
যদি কোনো দেশ অত্যধিক শিল্পন্নত হয়, তবে পন্য বিক্রির জন্য তাকে অন্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। তখন ছলে বলে কৌশলে সে অন্য দেশ দখল করে। যে দেশ সে দখল করে সেই দেশের কাচামাল যেমন তার হস্তগত হয় আবার সেই দেশই হয় তার উতবৃত্ত পন্নের বড় বাজার। আমেরিকার ইরাক আগ্রাসন এর বড় উদাহরন
শেষ বাক্যটা প্রবাদের মত সত্য।
বিপ্লব স্যর, (ইয়ে মানে বেরিয়ে গেল আর কি – মাপ করবেন)
এটা ঠিক কৈফিয়ত হল না – comparative statement হয়ে গেল। আর তাছাড়াও কৈফিয়তের দরকার আছে কি?
অধুনা পঃ বঃ সরকার লালিত পালিত এক সুরকার / গায়কের দাবী – আমার নিন্দে করার আগে, আমার মতো খেয়াল গেয়ে দেখাতে হবে।
তবে তিনি যখন একজন blasphemous লেখিকার নিন্দে করেন তখন উনি ভুলে যান – ওই লেখিকা পেশায় ডাক্তার। বলাই বাহুল্য, সেই গায়ক / সুরকার ডাঃ ডি কে লোধের (যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ) সমকক্ষও নন, তবুও।
এগুলো (দূর থেকে গালি দেবেন না) আসলে অক্ষমের ছেঁদো কথা। ভুলটা ভুল-ই সেটা, স্থান কাল পাত্রের ওপরে নির্ভরশীল নহে। সত্যি কথা যে কেউ বলতে পারে – ঘনাদা থেকে টেনিদা পর্যন্ত। কে আগে কত মিথ্যে বলেছে – তাহা বিচার্য নহে (notwithstanding) – words should be counted on its own individual merit – nothing else!
ওই যে কোথায় বলে মেচেদার চপ আর বাংলা আধুনিক গান – দুটোই শিল্প। সেগুলোই বাঙালির মনোহরণ করে – শিল্পীর সে দায় নেই।