মুক্তমনা
‘মুক্তমনা’ শব্দটার মাঝে অদ্ভূত এক সৌন্দর্য আছে। সৌন্দর্য এত বেশি যে অনেকেরই সহ্য হয় না। কারণ, তারা পারেনা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করতে। তাহলে যে বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিশীলতাকে মেনে নিতে হয়! মেনে নিতে হয় বিবর্তনকে। ভয়, যদি এতদিনের এত বছরের ঠুনকো চেতনাগুলো ধ্বসে পড়ে এক নিমিষেই। অতএব, লাগো এর পিছনে! বলো – নাস্তিকতা আর মুক্তমনা কি এক নাকি! নাস্তিকতাকেতো এরই মধ্যে অপরাধের তালিকাভূক্ত করা হয়ে গেছে। মহামান্য সুশীলদের কেউ কেউতো নাস্তিকতাকে ‘রোগ’ বলে রায় দিয়ে দিয়েছেন। আর এসব নাস্তিকদের সাথেই কিনা ‘মুক্তমনা’র এত সুন্দর একটা বিশেষণের অপব্যবহার? এও কি মেনে নেয়া যায়?
একটা প্রোফাইল পিকচারে কয়টা নাম ধরে?
‘I am Avijit Roy’ লেখা একটা প্রোফাইল পিকচার দিয়েছিলাম ফেসবুকে। নাহ্, কেবল লোকদেখানো নয়, এই প্রোফাইল পিকচারটাকে আমার আদর্শের আয়না মনে হয়। প্রোফাইল পিকচারটা দেয়ার পর মনে হলো, আমি শুধু অভিজিৎ নই, আমি হুমায়ূন আজাদ, রাজীব হায়দার আর ওয়াশিকুর রহমানদেরও বুদ্ধিভিত্তিক পরিবারের সদস্য। যত্ন নিয়ে এডিট করলাম – একে একে ক্রম অনুসারে হুমায়ূন আজাদ, রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, আর ওয়াশিকুর রহমানের পরে নিজেকেও অন্তর্ভূক্ত করে নিলাম শীঘ্রই আসছে বলে। খুব বেশিদিন গেলো না, অনন্ত বিজয় এ তালিকায় ঢুকার সকল যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছেন। না হয় ওনাকেও যোগ করে দেবো, কিন্তু একটা প্রোফাইল পিকচারে কয়টা নাম ধরে বলুন? আর কত নাম যুক্ত হবে এ তালিকায়? কি হারে যুক্ত হবে বলুন? প্রতিমাসে একটা করে? নাকি আরো দ্রুত?
এবং অন্যান্য
বাংলাদেশে লেখক হত্যার বিরুদ্ধে আমেরিকাতে এক প্রতিবাদ সভা আয়োজিত হতে যাচ্ছে তাত্তিক পদার্থবিদ লরেন্স ম্যাক্সওয়েল ক্রাউসের উদ্যোগে (লিঙ্ক এখানে)। এর শিরোনামের বাংলা করলে দাঁড়ায় – বাংলাদেশে অভিজিৎ এবং অন্যান্য খুন হওয়া লেখকদের স্মৃতিতে মৌন প্রতিবাদ। খেয়াল করুন “এবং অন্যান্য” অংশটুকু। খুন হওয়া লেখকদের তালিকা এতই বড় হয়ে গেছে যে তারা এখন “এবং অন্যান্য” হয়ে গেছেন। না, আমি এ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে বলছি না; বরং ঘটে যাওয়া ও ঘটতে থাকা ভয়াবহতার কথা বলছি। এত ভয়াবহ যে প্রোফাইল পিকচারের জায়গা হয়না, প্রতিবাদের ব্যানারে জায়গা হয় না। কিছুদিন পর যখন আমি খুন হবো, তখন হয়তো কেউ জানবেও না। সর্বোচ্চ হয়তো সে খবর হবে “আবহাওয়া” অংশ।
হে লেখকগণ
আপনরার যারা লেখালেখি করেন, তাদেরকে বলছি, যদি ভেবে থাকেন সরকার নামের কেউ আপনার নিরাপত্তা দেবে, তাহলে ভুল করছেন। আপনার বেডরুমের নিরাপত্তা যে সরকার দেবে না, তাতো আগেই বলে দিয়েছেন মন্ত্রীবর্গ। একে সামান্য পরিবর্তন করে ভাবুন, আপনার বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার নিরাপত্তা দেয়াও সরকারের কম্মো নয়। আর আমাদের মহামান্য প্রধানমন্ত্রীপুত্রতো নাস্তিক হত্যার গ্রিন সিগন্যাল দিয়েই দিয়েছনে। পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তারা কোন নাস্তিক চাননা, নাস্তিক হত্যার বিচার তারা করবেন না। ভুলে যাবেন না, সকল লেখকই নাস্তিকের সমান। ভাবছেন, লেখালেখি ছেড়ে দেবেন? লাভ হবে না কোনো। কেউই পার পাবেন না, তালিকা তৈরি আছে, কেবল কার পরে কার পালা, সেটা ঠিক করা বাকি। ভাবছেন, আপনি সেই তালিকায় নেই? তাতেও লাভ নেই, তালিকা হালনাগাদ করার নিয়মিত টিম আছে। অতএব, তৈরি হোন।
আর হ্যাঁ, এ আশাও করবেন না যে, আপনার মৃত্যুর পর কেউ শোক করবে। নির্বোধ দু-চার জন কিছুটা কষ্ট পেলেও পেতে পারে, তবে অধিকাংশ লোকজনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, যাক, আরো একটা আপদ বিদেয় হলো! আজও হয়তো অনন্তদের জন্য একটা-দুইটা লেখা আসে, তবে যেদিন আপনি মরবেন, আপনাকে নিয়ে হয়তো কোন লেখা বের হবে না। আজও হয়তো কেউ-কেউ অভিজিৎদের মৃত্যুতে আহা-উহু করে, আপনাকে নিয়ে কেউ আহা-উহুও করবে না। আর কত আহা-উহু করা যায় বলুন?
বাধা মাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার দীক্ষা নিয়েই আমাদের এই দুর্গম পথে যাত্রারম্ভ। এহেন দুর্গম গিরি পথে সরকারকে কেন কোন সহযাত্রী পাওয়ার কল্পনাও দূরাশা মাত্র। তাই কারো সোহবতের আশা না করে নিজের সমস্ত যোগ্যতাসমুহকে একীভূত করে এই যাত্রাকে অব্যাহত রাখাই কর্তব্য।
খুবই সত্য কথা। মুক্তমনারা তা জানেন। কিন্তু তাই বলে কি কাজ ফেলে এখন থেকেই আহা-উহু করতে শুরু করবেন তারা? আমার তো মনে হয় মুক্তমনারা কিছুদিন পর চাপাতির কোপকেও একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার বলে ধরে নেবেন – যেমন সড়ক দুর্ঘটনা বা আত্মঘাতী বোমা হামলা।
কলম চলুক।
সরকার বাংলাদেশের সংবিধান রক্ষায় ব্যর্থ তাই বর্তমান সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে । আজ যদি মৌলবাদের সাথে আপসকামী এই সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান এর আহ্বান জানানো হয় দেশের মানুষ সাড়া দেবে না । বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ না গণতান্ত্রিক , না সমাজতান্ত্রিক ও না ইসলামিক তারা হচ্ছে ‘ মুসার কালে মুসা ঈশার কালে ঈশা ‘ এই ফর্মুলায় বিশ্বাসী ।
সরকার, সুশীল সমাজ, এসব আবার কি! সব মিডিয়ার সৃষ্টি। সরকারকে এই ইস্যুতে একটা কারনেই ধন্যবাদ দেয়া যায়- ‘আওয়ামী লীগ সর্বদা প্রগতির পক্ষে থাকা একটি দল’ এমন একটি মিথ মুক্তমতের মানুষদের মাঝেও প্রচলিত ছিলো- এই সরকার মাশাল্লাহ সেটা ভেঙে দিতে পেরেছে। এজন্য অবশ্যই তাদের ধন্যবাদ।
সরকার সরকারের মতো চলুক, আমরা আমাদের চিন্তায় মুক্তি খুঁজি।
নাস্তিকদের সরকার-বিরোধী দল কেউ ওউন করে না। রাজনীতির যোগ্যও নই আমরা। রাজনীতির জন্যেও কেউ আমাদের লাশের পাশে এসে দাঁড়ায় না। আমরা সমাজে এতোটাই অপাক্তেয়
আগে মনে হয়েছিল, সরকার চোখ বুজে আছে। এখন নিশ্চিত হয়েছি, সরকারই করাচ্ছে।
সরকার এখন রথ দেখা আর কলা বেচা নিয়ে অাছে। অতএব তাদের কাছে আর কিছু আশা করে লাভ নেই।