(এই লেখাটা লেখা হয়েছে মুলত বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোরের জন্য। মুক্তমনাতেও দিয়ে দিলাম। মুক্তমনার পাঠকদের কাছে জানা তথ্যই মনে হবে হয়তো। সেজন্য আগেভাগেই দু;খপ্রকাশ করে নিচ্ছি।)

ডয়চে ভেলের অত্যন্ত সম্মানজনক দ্য ববস জুরি পুরস্কারে এবার ভূষিত হয়েছে মুক্তমনা ব্লগ। এটি শুধুমাত্র মুক্তমনার জন্যই নয়, বাংলাদেশ তথা বাংলাভাষী সকল মানুষেরর জন্যই অত্যন্ত গৌরব এবং আনন্দের বিষয়।

ডয়চে ভেলে আয়োজিত ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ প্রতিযোগিতায় ১৪টি ভাষায় বিজয়ী বেছে নেওয়া হয়৷ ভাষাগুলো হচ্ছে, অর্থাৎ আরবি, বাংলা, চীনা, জার্মান, ইংরেজি, ফরাসি, হিন্দি, ইন্দোনেশীয়, ফার্সি, পর্তুগিজ, রুশ, স্প্যানিশ, তুর্কি এবং ইউক্রেনীয়। এর জন্য বাছা হয় এমন সব ব্লগ বা মাইক্রোব্লগ, ফেসবুক পাতা, টুইটার প্রোফাইল কিংবা ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে পরিচালিত সক্রিয় উদ্যোগ, যেগুলি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আঙ্গিকে ইন্টারনেটে মুক্ত আলাপ-আলোচনার ধারক ও বাহক৷

২০০৪ সালে এই পুরস্কার চালু করা হয়৷ মূল উদ্দেশ্য ছিলো, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মতবিনিময়ের বৈচিত্র্য এবং তাৎপর্যকে তুলে ধরা, সেই ধরনের মতবিনিময়ের শ্রেষ্ঠ নমুনাগুলিকে পেশ করা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে আলাপচারীর ব্যাপারে বিভিন্ন ভাষার ব্লগারদের মধ্যে একটি সংলাপ সৃষ্টি করা৷

সব মিলিয়ে ১৭টি বিভাগে বব্স পুরস্কার প্রদান করা হয় এ বছর। এই সতেরোটার মধ্যে চৌদ্দটি হচ্ছে ভাষাভিত্তিক। মাত্র তিনটি হচ্ছে ভাষা নিরপেক্ষ। অর্থাৎ এ বিভাগ তিনটিতে চৌদ্দটি ভাষার সব ব্লগই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। এই তিনটি ভাষা নিরপেক্ষ বিভাগের প্রতিটিতে একটি করে জুরি পুরস্কার দেওয়া হয়। বিভাগ তিনটি হচ্ছে, সামাজিক পরিবর্তন বিভাগ, গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা বিভাগ এবং শিল্প ও সংবাদমাধ্যম বিভাগ। এই তিনটার অন্যতম একটা সামজিক পরিবর্তন বিভাগে বাকি তেরোটি ভাষার ব্লগকে পিছনে ফেলে জুরি এওয়ার্ড জিতে নেয় বাংলাভাষী ব্লগ মুক্তমনা।

এই পুরস্কার এমন এক সময়ে এসেছে যখন মুক্তমনা তার প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয় একজন বিজ্ঞান লেখক এবং যুক্তিবাদী ব্যক্তিত্ব অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুতে বিলাপরত, বিপর্যস্ত, বিস্রংস্ত এবং বিহ্বল। মাত্র দুই মাস আগে বইমেলা থেকে ফেরার পথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ গেটের সামনে ঘাতকের চাপাতির আঘাতে নৃশংসভাবে নিহত হন তিনি। সেই আক্রমণে তাঁর সহধর্মিনী বন্যা আহমেদ, যিনি নিজেও একজন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক এবং যুক্তিবাদী মানুষ, মারাত্মকভাবে আহত হন। মাথা, এবং ঘাড়ের বিভিন্ন জায়গায় কোপ খান তিনি এবং বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর। বর্তমানে তিনি এক রকমভাবে শারীরিক পঙ্গু অবস্থাতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই পুরস্কার প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে ডয়চে ভেলে জানায় যে তারা গত কয়েক বছর ধরেই মুক্তমনা ব্লগের দিকে নজর রাখছিল। ডয়চে ভেলে লেখক এবং ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করেছে এবং তাঁর নির্মম হত্যকাণ্ডের বিচারের দাবী জানিয়েছে। বাকস্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার প্রসারে মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদের দীর্ঘদিনের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এপ্রিলে ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় মুক্তমনা ব্লগকে মনোয়ন দেওয়া হয়৷ শনিবার দ্য ববস-এর বিচারকরা বার্লিনে এক বৈঠকে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নির্ধারণ করেন৷ প্রতিযোগিতার অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ‘সামাজিক পরিবর্তন’ বিভাগে দীর্ঘ আলোচনা এবং ভোটাভুটির পর মুক্তমনা ব্লগকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়৷ আগামী জুন মাসে জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে এক অনুষ্ঠানের মুক্তমনা ব্লগার এবং অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদকে এই পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷

ববস এর জুরিমণ্ডলীর অন্যতম একজন সদস্য হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী ডঃ শহিদুল আলাম। তিনি মুক্তমনার এই পুরস্কারপ্রাপ্তি সম্পর্কে বলেন যে, ‘‘এটা কোনো সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না৷ প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকটি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, যেগুলোর প্রতি মনোযোগ প্রয়োজন ছিলো। নিশ্চিত বিপদের কথা জেনেও মুক্তমনা ব্লগের ব্লগাররা বাংলাদেশের প্রচলিত ব‍্যবস্থা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন৷ তাঁদের এই সাহসিকতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে দ‍্য বব্স৷”

http://www.dw.de/studio-interview-with-bobs-2015-jury-member-shahlidul-alam/av-18425963

দ্য ববস পুরস্কার বিজয়ে স্বাভাবিকভাবে অত্যন্ত আনন্দিত এবং দারুণভাবে গর্বিত হয় মুক্তমনা ব্লগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই। পুরস্কার পাওয়ার অনতিবিলম্বেই এর মডারেশন টিম থেকে একটা বিবৃতি দেওয়া হয়। সেই বিবৃতিতে মুক্তমনার মডারেশন টিম লিখেছে, “ডয়েচভেলের অত্যন্ত সম্মানজনক অনলাইন এক্টিভিজম এওয়ার্ড ‘দ্য ববস’ পাওয়ায় আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। যাঁরা মুক্তমনাকে এই পুরষ্কারের জন্য মনোনিত করেছেন তাঁদের সবার প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা রইলো। একটি ধর্মনিরেপক্ষ, অসাম্প্রদায়িক এবং বিজ্ঞানমুখী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, একটি উদার, প্রগতিশীল এবং বিজ্ঞানমনষ্ক প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য মুক্তমনা অনলাইনে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে গত চৌদ্দ বছর ধরে। এই পুরস্কার আমাদের সেই অক্লান্ত পরিশ্রমেরই স্বীকৃতি।“

এই পুরস্কার অবশ্য কিছুটা বিভ্রান্তিও তৈরি করেছিলো। ডয়চে ভেলের সরকারী প্রেস রিলিজের শিরোনাম ছিলো দ্ব্যর্থহীন। সেখানে পরিষ্কার ভাবে লেখা ছিলো যে, পুরস্কার পেয়েছে মুক্তমনা। ঝামেলাটা তৈরি হয় ভিতরের বক্তব্যে। সেখানে ভুলক্রমে কিংবা অসতর্কতার কারণে লেখা হয় যে, পুরস্কার পেয়েছে মুক্তমনার ব্লগার বন্যা আহমেদ। এই ভুলের কারণে পরের দিন প্রায় সব জাতীয় গণমাধ্যমেই এসে যায় যে, দ্য ববসের পুরস্কার পেয়েছেন বন্যা আহমেদ। যেটি আসলে সঠিক তথ্য নয়। এই পরিস্থিতিতে বন্যা আহমেদের নিজের পক্ষ থেকে এবং মুক্তমনার মডারেশন টিম থেকে ডয়চে ভেলের সাথে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করা হয় যে, আসলে কে পুরস্কারটা পেয়েছে? বন্যা আহমেদ, নাকি মুক্তমনা ব্লগ? কারণ, আগের দিনই তাঁরা বন্যা আহমেদের মাধ্যমে মুক্তমনার সাথে যোগাযোগ করেছে এবং জানিয়েছে যে, মুক্তমনা ব্লগ দ্য ববস পুরস্কার পেয়েছে। মুক্তমনার মডারেশন টিম একটা বিবৃতিও দিয়ে দিয়েছিলো এই পুরস্কার প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে। যেটি ডয়চে ভেলে ছাপিয়েও ছিলো তাঁদের প্রেস রিলিজে। এহেন অবস্থায় তাঁদের কাছ থেকে ক্লারিফিকেশন চাওয়া হয় উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য। এই যোগাযোগের প্রেক্ষিতে ডয়চে ভেল থেকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয় যে, পুরস্কার আসলে পেয়েছে মুক্তমনা ব্লগ। সেই পাওয়াটা অভিজিৎ রায় এবং বন্যা আহমেদের সারাজীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে। তাঁরা চায় যে, জুন মাসে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা জার্মানিতে গিয়ে এই পুরস্কার মুক্তমনার তরফ থেকে গ্রহণ করুক।

পুরস্কার নিয়ে এই বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় মুক্তমনার সকলেই সামান্য কিছুটা বিব্রত এবং বিচলিত ছিলো। যদিও বন্যা আহমেদ কিংবা মুক্তমনা, যেই পাক না কেনো, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি ছিলো না। দুটোই আমাদের জন্য সমান সম্মানজনক। এই বিভ্রান্তি কীভাবে দূর করা যায় , সে নিয়ে চেষ্টার কারো কোনো কমতি ছিলো না। এর নিরসনে বন্যা আহমেদ নিজেও উৎস্যুক ছিলেন। মুক্তমনাতে এ বিষয়ে তিনি লিখেছেন, “ধন্যবাদ ডয়চে ভেলেকে লেখালিখি এবং মুক্তমনা্র প্রতি অভিজিৎ রায়ের সেই প্রগাঢ় ভালোবাসাকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য। ডয়চে ভেলের প্রেস রিলিজটা একটু বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু ওনারা নিশ্চিত করেছেন যে, এই পুরষ্কারটা মুক্তমনা ব্লগ সাইটকেই দেওয়া হয়েছে মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ এর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। ওনারা মনে করেন যে, বাকস্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার প্রসারে মুক্তমনা যে ভূমিকা রেখেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এটি অভিজিৎ এবং অন্যান্য ব্লগারদের হত্যার বিচা্রে এবং মুক্তচিন্তার উপর বাংলদেশে আজকে যে আঘাত হানা হচ্ছে তার প্রতিকারে সহযোগীতা করবে। যে কোর টিমটি গত দুইমাস ধরে রাতদিন কাজ করে মুক্তমনাকে সজীব রেখেছেন এবং অভিজিৎ এর আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে কাজ করেছেন আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা না থাকলে আমার এই শারীরিক এবং মানসিক অবস্থায় মুক্তমনার জন্য কাজ করা আদৌ সম্ভব হতনা। ওনাদের অনুপ্রেরণা এবং প্রচেষ্টাতেই আজ মুক্তমনা এগিয়ে চলেছে। মুক্তমনার অসংখ্য শুভানুধায়ীদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ সময়ে আমাদের সাহস দেওয়ার জন্য এবং পাশে থাকার জন্য।“

মুক্তমনার জন্য সম্মানসূচক পুরস্কার পাওয়া অবশ্য এটা প্রথম নয়। মুক্তমনার জন্ম ২০০১ সালে। মূলতঃ অভিজিৎ রায় এককভাবেই এর প্রতিষ্ঠাতা। আরো কেউ কেউ যে ছিলেন না এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেটা বলছি না। আসলে একটি আলোচনাচক্রের মাধ্যমে এর জন্ম। কিন্তু, জন্ম সময় এবং জন্মের পরে এর বিকাশে তার একক অবদান অনেক বেশি প্রত্যক্ষ, প্রাচুর্যময় এবং প্রধানতর। মানব মনের বৌদ্ধিক বিকাশে যুক্তি-বুদ্ধি এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনার গুরুত্ব বৃদ্ধি করা, অন্ধবিশাসের বিরুদে লড়াই করাই ছিলো এর মূল কাজ। সেই লক্ষ্য নিয়েই নিরলসভাবে কাজ করে গেছে মুক্তমনা। মুক্তমনা যে শুধুমাত্র অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছে, তা কিন্তু নয়। নিরন্তর এই লড়াইয়ের পাশাপাশি মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষেও কাজ করেছে মুক্তমনা। যেখানেই মানবতা লংঘিত হয়েছে, অন্যায়-অবিচার হয়েছে, সেখানেই মুক্তমনা তার সামর্থের শেষ বিন্দু দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। হোক না তা বাংলাদেশে, ভারতে, ফিলিস্তিনে বা ইরাকে। মৌলবাদ অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও মুক্তমনা সোচ্চার কণ্ঠ। মুক্তমনার এই কর্মকাণ্ড চোখ এড়ায় নি সচেতন মানুষদের। এরই কারণে ২০০৭ সালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মুক্তমনাকে জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক ২০০৭ প্রদান করেছিলো। সেই পদক প্রাপ্তির সম্মাননায় লেখা হয়েছিলো, “বাংলাদেশে মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মুক্তচিন্তার আন্দোলনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পাশাপাশি গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখেছে ‘মুক্তমনা’ ওয়েবসাইট। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে ও বিদেশে কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সেক্যুলার মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করণের পাশাপাশি তাদের বিজ্ঞানমনষ্ক করবার ক্ষেত্রে ‘মুক্তমনা’ ওয়েবসাইটের জগতে এক বিপ্লবের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট মানবাধিকার নেতা ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক অজয় রায়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের তরুণ মানবাধিকার কর্মীরা এই ওয়েব সাইটকে তাদের লেখা ও তথ্যের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করছেন। ২০০১ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ‘মুক্তমনা’ তখন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত সংগঠনের পাশাপাশি আর্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে এবং ধর্ম-বর্ণ-বিত্ত নির্বিশেষে মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মুক্তমনা’ ওয়েব সাইটকে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক ২০০৭’ প্রদান করা হলো।“

এই পুরস্কারপ্রাপ্তি মুক্তমনার জন্য ময়ূখমালা হয়ে এসেছে। এটি যেমন আনন্দ ও গৌরবের, একইভাবে শোক এবং আক্ষেপেরও। যাঁর অবদানের জন্য এই প্রাপ্তি, তাঁকেই অকালে চলে যেতে হয়েছে মৌলবাদীদের নৃশংস আক্রমণের শিকার হয়ে। আমরা যারা মুক্তমনাকে ভালবাসি, তাদের জন্য দায়িত্বটা আরো বেড়ে গেছে পুরস্কারপ্রাপ্তিতে। যে স্বপ্ন নিয়ে অভিজিৎ রায় মুক্তমনার যাত্রা শুরু করেছিলো, দীর্ঘ বৈরি পথ প্রায় একাই পাড়ি দিয়েছিলো, সেই স্বপ্নযাত্রাকে এর গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হবে আমাদেরকেই। তা সেই যাত্রা যতই শ্বাপদসংকুল এবং শাকুনিকময় হোক না কেনো।

যে ময়ূখমালায় সিক্ত হয়েছে আজ মুক্তমনা, তারই কল্যাণ্যে শীঘ্রগামী হয়ে শীর্ষে পৌঁছানোর শুদ্ধতম প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে অবিরতই।