হে বাংলা মায়ের সন্তান, তৈরী করবে আর কত গণকবর?
জন্ম দিয়ে মোরে মৃত্যুপুরীতে
ঠেলে দিও না’গো মা,
গণ কবরের আর্ত চিৎকার
তুমি কেন শুনো না!
জন্ম দিলে তুমি, মা হলে তুমি
তুচ্ছ করে মোর জীবন,
দুমুঠো ভাতের জন্য গো মা
কেউ তো হলো না আপন।
বাঁচার জন্য ঝুঁকি নিয়ে আজ
মৃত্যুপুরীতে তাও,
নিরাপদ জীবন দিতে পারো যদি
তবেই জন্ম দাও।
একটা কক্ষে দুইজন মানুষ বাস করে। অনুরুপ আরেকটা কক্ষে ষোল জন মানুষ বাস করে। এই দুইটা কক্ষের মানুষর জীবন যাপন এক রকম না। প্রথমেই বলা চলে, দুইজন যে অক্সিজেন পাচ্ছে, ষোলজন সেই অক্সিজেন পাচ্ছেনা। দুইজন যে খাদ্য খাচ্ছে তার অনুরুপ খাদ্য অন্যকক্ষে ষোলজন ভাগ করে খাচ্ছে। সুতরাং পুষ্টির অভাব হচ্ছে। দুইজনের উচ্চশিক্ষা অর্জন যতটুকু সহজ, ষোলজনের নিম্নশিক্ষা অর্জন তারচেয়েও কঠিন। দুইজনের দুইমত থাকলেও শিক্ষিত হবার কারণে একজন আরেকজনের মতকে সম্মান করে। অন্য কক্ষে ষোলজনের ষোল মত, যার একটিও গ্রহণযোগ্য না। ফলে কেউ কাউকে বুঝতেও পারছেনা, সম্মানও করছেনা। খাদ্যের অভাব, পুষ্টির অভাব, শিক্ষার অভাবের ফলে এখানে ‘জোর যার মুলুক তার’ নিয়ম চলে। কাজের অভাবে এখানের অনেকেই বেকার। শক্তিশালীরা দুর্বলের কাছ থেকে যা পারে কেড়ে নেয়। তখন সবাই উপোস থাকতে বাধ্য হয়।। এমনিতেই পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের অভাব। তার উপর খাদ্য বেশি সময় রাখা যায়না, পচে যায়। তখন সবার উপোস থাকার প্রয়োজন হয় বাংলাদেশে। ফলে খাদ্যের অভাব পুরণের জন্য দরকার হয় ফরমালিনের। ফরমালিন এমন এক ধরণের বিষ যা সেদ্ধ করলেও তার কোন পরিবর্তন হয়না। সেই ফরমালিন খাওয়ার চুড়ান্ত ফল হচ্ছে ক্যান্সার। ফলে একজন করে ক্যান্সার হতে থাকে, আর ষোলজন থেকে মরে মরে কমতে থাকে। এক সময় ষোলজনের সেই কক্ষটা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর সেই ষোলজনের অসুস্থ কক্ষটা হচ্ছে ষোলকোটি মানুষের বাংলাদেশ।
ফলে বাঁচার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয় মানুষ। কম খরচে জীবন গড়ার সন্ধান খুজে। জীবনের করুণ পরাজয়ের মধ্য দিয়ে একসময় নিজেকে আবিষ্কার করে কোননা কোন গণকবরে।
থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে গত বছরের অক্টোবরে ১২২ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তাদেরকে থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে পাচারকারীরা।
গত কয়েকদিনে থাইল্যান্ডে যে কয়েকটা গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়, তার প্রথমটিতে ২৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যেখানে অন্তত ১০ বাংলাদেশির মৃতদেহ ছিল। বাকি ৫টি গণকবর থেকেও মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
বঙ্গোপসাগরের ঝুকিপুর্ণ রুট দিয়ে গত তিন বছরে ৮৭ হাজার মানুষ থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে ট্রলারে তোলার আগে প্রতিজনের কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা নেয় পাচারকারী চক্র। এরপর সাগরের মাঝপথে বা থাইল্যান্ড জঙ্গলে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে জনপ্রতি ২-৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। কারো পরিবার মুক্তিপণ দিতে অপারগ হলে তার ভাগ্যে জোটে করুণ মৃত্যু। আর এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অশিক্ষিত এবং দরিদ্র মানুষ।
নিজদেশেই যেমন বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা নেই, তেমনি পৃথিবীর অনেক দেশেই নিরাপত্তা নেই। তবুও দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য, একটুখানি ভালভাবে বেঁচে থাকার আশায় বাংলাদেশের মানুষ পাড়ি জমায় পৃথিবীর অনেক ঝুকিপুর্ণ দেশেও। আফ্রিকায় প্রায়ই নিরীহ, নির্দোষ বাংলাদেশিকে হত্যা করে কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা।
বাংলাদেশীদের হত্যা করলে সেখানে কোন বিচারও হয়না। লিবিয়া এবং ইয়েমেনে যুদ্ধে আটকে পড়ে অনেক বাংলাদেশি। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর অনেক ঝুঁকিপুর্ণ দেশে বাংলাদেশিরা অবস্থান করছে।
জীবন তো কারো কাছে ছোট বিষয় না। তবু কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাচারকারী দ্বারা প্রতারিত হয় মানুষ? সামান্য নিরাপত্তা নিয়েও সে তার নিজ দেশে বেঁচে থাকতে পারছেনা বলে।
যে বাবা-মা এই সন্তানদের জন্ম দিয়েছিলেন, তারা কেন একবারও চিন্তা করেন নি, এদেশে তাদের সন্তানের বেঁচে থাকার মত সামান্যতমও নিরাপত্তা নেই। তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিতে হবে।
সন্তান জন্মদানের আগে আপনার সন্তানের নিরাপত্তা বিধান করবেন আপনি। আপনার সন্তানের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং আরো যে চাহিদাগুলি রয়েছে, সেগুলির নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আপনার।যদি সে নিরাপত্তা বিধান না করতে পারেন, তাহলে আপনার সন্তান জন্মদানের কোন অধিকার নেই। আপনার সন্তান যদি সম্পদ হয়, তাহলে সে দেশেরও সম্পদ। আর আপনার সন্তান যদি বোঝা হয়, তাহলে সে দেশেরও বোঝা। পরিকল্পনা ব্যতিত ইচ্ছামতো সন্তান জন্ম দিয়ে কেন এই সন্তানদের বিপদে ফেলানো? একটি সন্তান মানুষ বানানোর ক্ষমতা নেই, আপনি ১০ টি সন্তান জন্ম দিবেন কেন? আর আপনার দায়িত্বহীন জন্মদানের কারণে আপনার সন্তানদের যে গণকবর তৈরী হচ্ছে, তার দায় কার?
বাংলাদেশের কোন কুকুর বিড়ালের এমন গণকবর আজো কোথাও পাওয়া যায়নি। এদেশের মানুষের মূল্য এত বেশি কমে গেছে যে, কুকুর বিড়ালকেও হার মানিয়েছে।
আয়তন অনুযায়ী বাংলাদেশের তুলনায় চীনে মাত্র আড়াই কোটি মানুষ। তবুও চীনে কঠোর এক সন্তান নীতি কার্যকর আছে। যেখানে বাংলাদেশে মাত্র দুই বা আড়াই কোটি মানুষই যথেষ্ট ছিল, সেখানে ষোলকোটি মানুষ। অথচ দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব সহকারে কোন উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছেনা। আয়তন অনুযায়ী জনসংখ্যায় ৮ম অবস্থানে বাংলাদেশে। জনসংখ্যা সমস্যার ফলে একের পর এক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। আগামীর জন্য দুর্বল জাতি তৈরি হচ্ছে। দেশে মারাত্মকভাবে খাদ্য ও পুষ্টির অভাব চলমান। কারণ, দুজন মানুষের খাদ্য ষোলজন ভাগ করে খাচ্ছে। জনসংখা বৃদ্ধি অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। দেশে বেকার সমস্যা। যেখানে চাকুরীর জন্য মাত্র একটি সিট খালি, সেখানে দরখাস্ত পড়ে শত থেকে হাজার পর্যন্ত। যেখানে মাত্র একজনের চাকুরীর সুযোগ রয়েছে, সেখানে এই শত, হাজার জনের জীবনের ব্যবস্থা কি?
দেশে আয়তনের তুলনায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের স্থায়ী এবং স্বাস্থ্যকর বাস স্থানের অভাব রয়েছে। দেশে নিরক্ষর এবং মুর্খ মানুষের সংখ্যা এখনো তিনভাগের একভাগেরও বেশি। অতিরিক্ত জনসংখ্যা হবার কারণে প্রতিটি মাথাকে বিকশিত করা সম্ভব হচ্ছেনা। দরিদ্র এবং অক্ষম মানুষ গুলি একসময় হয়ে উঠছে অপরাধপ্রবণ। মূর্খতা, দারিদ্র্যতা এবং অক্ষমতা মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। যে বাংলাদেশে মাত্র আড়াই,তিন কোটি পরিপূর্ণ মানুষই যথেষ্ট এবং সম্ভব ছিল, সেখানে ষোল কোটি অপূর্ণ মানুষের প্রয়োজন কি? প্রকৃত জ্ঞান নিয়ে বাঁচার মত বাঁচার মধ্যেই তো সবচেয়ে বড় সার্থকতা। একশ জন পঙ্গু মানুষের চাইতে মাত্র একজন জ্ঞানী মানুষ কি বেশি শক্তিশালী নয়? এমনকি পঙ্গু একটা জাতির চাইতেও স্বাভাবিক একজন জ্ঞানী মানুষ কি বেশি শক্তিশালী নয়?
দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলেই এত অনিয়ম, এত বিশৃঙ্খলা, এত দারিদ্র্যতা, এত লুটপাট, এত অশিক্ষা, এত বর্বরতা। বাংলাদেশের মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু তা না করে বাঙালির কাজ হচ্ছে একের পর এক বাচ্চা জন্ম দেওয়া। আগামীর স্বপ্ন ষোলকোটি থেকে বত্রিশ কোটিতে পরিণত হবে। আর জাতি পতাকা সমুন্নত রেখে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কামড়া কামড়ি করবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৈ্রি করবে একের পর এক গণকবর।
এত গণকবর কে সামনে রেখে বাংলার পতাকা আগামী বিশ্বের সামনে পতপত করে উড়বার সাহস পাবে কি? নাকি সেই কবরের মধ্যেই স্থান হবে আমাদের লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন পতাকা? আমাদের অস্তিত্ব কি আসলেই বিলীন হতে চলেছে?
খুবই দু:খজনক বিষয়। এটা নজরে আনার জন্য ধন্যবাদ।
ভিক্টোরীয় বৃটিশদের মত, রোমাঞ্চপ্রিয় বাংগালিরা উন্নত কাজের সন্ধানে দেশ ছেড়ে বিদেশ ছুটছে। অনেক জাতির দরিদ্র নিপীড়িত জনগোষ্ঠী ধরেই নেয় যে দারিদ্রতা ঈশ্বর দিয়েছে। তারা এটাকে মেনে নেয়।
কিন্তু বাঙ্গালি জানে, সে ধারণাটা সত্য নয়। বিপুল মিথ্যা। অসৎ লোকের কুটিল স্বার্থ হাসিলের জন্যে বানানো।
অসত্য ধারণা মেনে নেয়ায় কোন গৌরব নেই। গৌরব হলো, সবার জন্য ঈশ্বরের বানানো এই বিশ্বটাতে — ঈশ্বরই বা কী রেখেছেন, অবিশ্রান্তভাবে সেই সত্যটাকে তালাশ করার মধ্যে।
বিদ্রোহী কবি, সত্যদ্রষ্টা। তিনি জানতেন সবার আগে:
“থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে,
কেমন করে ঘুরছে মানুষ, যুগান্তরের ঘূর্ণি পাকে….
কেমন করে বীর ডুবুরী, সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে,
কেমন করে দু:সাহসী চলছে উড়ে স্বর্গপানে….”
সে বিদ্রোহীর উত্তরসূরি, বীর বাংগালিরা সিন্ধুকে হেলায় অতিক্রম করবেই। বঞ্চিত, প্রতারিত হবে, নিহত হবে। দেশ ছেড়ে বিদেশ বিভূঁয়ের গভীর অরণ্যে, অনেকেই যাবে চিরকালের তরে চিহ্ণহীন কবরের মাঝে হারিয়ে।
কিন্তু তবুও সে অপ্রতিরোধ্য, অজেয়। অদমিত শক্তি নিয়ে তাড়া করে ফিরবে সে তার স্বপ্নকে।
হেমিংওয়ে যেমন বলেছিলেন:
“ম্যান ক্যান বি ডেস্ট্রয়েড, বাট নট ডিফিটেড”।
বাংগালিরা কেউ কেউ এইসকল নরকের কীটের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু পরাজিত হবে না। অভিযান চলবে। কেননা, বাংগালিরা “পুরুষ” — কাপুরুষ নয়।
আমরা মরছি দেশে এবং বিদেশে। এ থেকে কবে যে মুক্তি পাব?
দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য গভীর ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয়া এই লেখাটা পড়ে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং ভবিষ্যতের জনসংখ্যার অনুমান সম্পর্কে শিক্ষানবিস বিস্তারিত বলেছেন।
আসলে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি ঘনত্বের জনসংখ্যা আরো কয়েকটি দেশে আছে। বাংলাদেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ২০১৩ সালের হিসেব অনুযায়ী ১২০৩। সিঙ্গাপুরের ঘনত্ব ৭৭১৩। বাহরাইনের ১৭৫৩। সিঙ্গাপুরকে উদাহরণ হিসেবে ধরতে পারি। মানব উন্নয়নের সূচকে এই দেশ পৃথিবীর প্রথম সারিতে। দুর্নীতি থেকে প্রায় মুক্ত এই দেশ। জনসংখ্যা অবশ্যই আমাদের একটা বিরাট সমস্যা। কিন্তু প্রধান সমস্যা নয়।
কলম চলুক।
দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের চমৎকার উদ্যোগ অনেক আগেই সেই আশির দশক থেকেই নেয়া হয়েছে, এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এক বিস্ময়কর উদাহরণ। চীনের মতো মানবতাবিরোধী স্বৈরাচারী কোনো আদেশ জারি না করেই যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ। বিশ্বাস না হলে প্রখ্যাত জনস্বাস্থ্য গবেষক হান্স রসলিং এর এই ভিডিওটা দেখুন:
বাঙালি বর্তমানে মোটেও একের পর এক বাচ্চা জন্ম দেয় না। বাংলাদেশে বর্তমানে মা প্রতি সন্তানের গড় সংখ্যা ২.২ বা তারও কম এবং শীঘ্রই তা হবে কেবলই ২। এবং কোনো দেশের গড় আয়ু যদি ৭০-৮০ বছরের মধ্যে থাকে এবং মা প্রতি সন্তানের সংখ্যা যদি ২ হয় তাহলে সহজ পারিসাংখ্যিক হিসাবই জানিয়ে দেয় যে সেই দেশে জনসংখ্যা আর বাড়বে না। কারণ যতজন মারা যাবে ঠিক ততজনই জন্ম নিবে। বাংলাদেশ এখন ঠিক সেই অবস্থাতেই আছে। এমনকি গোটা পৃথিবীও এখন সেই অবস্থাতে আছে। গোটা পৃথিবীর গড় মা-প্রতি-সন্তান-সংখ্যা বর্তমানে ২.৫ এর মতো, যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। তারপরও পৃথিবীর জনসংখ্যা আর বাড়বে না। তবে হ্যাঁ, ৭০০ কোটি থেকে বড় জনসংখ্যাটা ১০০০ কোটি হবে, যার কারণ সেই বিখ্যাত বয়স-ফাঁক-পূরণ। যতজন মারা যায় ঠিক ততজন জন্ম নেয়ার পরও কেন আগামী দুই দশক ধরে জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১০০০ কোটিতে গিয়ে চিরতরে স্থির হয়ে যাবে তা রসলিং এর আরেকটা ভিডিও দেখলে (১০ মিনিটের পর থেকে) বুঝতে পারবেন:
তারপরও কারণটা বর্ণনা করছি। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে বয়স অনুযায়ী ৫ অংশে ভাগ করা যাক: ০-১৫, ১৫-৩০, ৩০-৪৫, ৪৫-৬০, ৬০-এর বেশি। একেক অংশে জনসংখ্যা বর্তমানে অনেকটা এমন হতে পারে:
০-১৫: ৪ কোটি
১৫-৩০: ৪ কোটি
৩০-৪৫: ৩ কোটি
৪৫-৬০: ৩ কোটি
৬০-ঊর্ধ্ব: ২ কোটি
এখন এই ০-১৫ এর মধ্যে জনসংখ্যা, অর্থাৎ শিশুসংখ্যা ভবিষ্যতে আর কোনোদিন ৪ কোটির বেশি হবে না। সুতরাং কোনো অংশের জনসংখ্যাই ৪ কোটির বেশি হতে পারবে না কোনোদিন, কারণ শিশুগুলাই তো একসময় বেশি বয়সের অংশগুলাতে যাবে। ভবিষ্যতে যা হবে তা হলো, ৬০-ঊর্ধ্ব ২ কোটি মারা যাবে, সবাই এক ঘর করে নিচে নেমে যাবে, অর্থাৎ ৪৫-৬০ রা ৬০-ঊর্ধ্বতে চলে যাবে ইত্যাদি, এবং নতুন ৪ কোটি শিশু যোগ হবে। এভাবে মারা যেতে যেতে এবং নতুন ৪ কোটি শিশু যোগ হতে হতে এমন এক সময় আসবে যখন এই ৫টি অংশের প্রত্যেকটির জনসংখ্যা হবে ৪ কোটি করে। তাহলে মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে: ৫×৪=২০ কোটি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা কোনোদিন ২০ কোটির বেশি হওয়াটা গাণিতিকভাবেই পুরোপুরি অসম্ভব। এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যদি আর নাও বাড়ে তারপরও জনসংখ্যা ২০ কোটিতে পৌঁছানো ঠেকানোও গাণিতিকভাবেই অসম্ভব। বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা শতভাগ সফল এবং এটা বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত জনস্বাস্থ্য গবেষকের মতেই একটা ‘মিরাকল’।