ভার্সিটির থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় প্রথমবারের মত নিজ দায়িত্বে প্রাইভেট বাসায় একা থাকা শুরু করি । প্রথম বাসাটা ছিলো পুরনো জং ধরা ছোট একরুমের স্টুডিও ফ্ল্যাট । জানলার বাইরেই জংলা জায়গা, ঝোঁপঝাড়, একটা পরিত্যাক্ত বাড়ী । ঠিক এসময় আমার কিছু ইংরেজি সিরিয়াল দেখার নেশা ধরলো । ফ্রেন্ডস, এক্স-ফাইলস । এক্স-ফাইলস এর প্রথম সিজনে একটা কাহিনী ছিলো ইউজিন ভিক্টর টুম নামে এক লোককে নিয়ে যে প্রতি ত্রিশ বছর পরপর শীতনিদ্রা থেকে উঠে পাঁচটা মানুষের লিভার চিবিয়ে খেয়ে আবার ত্রিশ বছরের জন্য শীতনিদ্রায় চলে যেতো । এক্স-ফাইলস বানানোই হয়েছে এইসব আজগুবি কেচ্ছা-কাহিনী নিয়ে । আমার দোষ নাই এই বর্ণনায় । ইউজিনের আরেকটা বৈশিষ্ট্য ছিলো , সে নিজের শরীরকে দুমড়ে মুচড়ে খুবই ছোট কোন ছিদ্র দিয়ে ঢুকতে ও চলাচল করতে পারতো । নিজের হাত পাকে কিছুদূর পর্যন্ত বড় করতে পারতো । এই ক্ষমতা ব্যাবহার করে সে খুব দক্ষতার সাথে কোন ক্লু না রেখে তার শিকার ধরতো । কেউ হয়তো চিন্তাই করতো না ভেন্টিলেটর বা টয়লেটের কমোড বেয়ে কেউ উঠে আসতে পারে । এজন্য তার খুনগুলার কোন কূল কিনারা হতো না । আমার জং ধরা রং চটা বাসা আর জানলার বাইরে ঝোপ-জঙ্গল পরিত্যাক্ত বাড়ীর জন্য বিশেষ করে বৃষ্টির দিনগুলোতে বাইরের আবহে ভয় লাগতো । মনে হতো কখন আবার কোন ইউজিন চলে আসে আমার লিভার খাওয়ার জন্য । দীর্ঘদিন তাই আমার অভ্যাস হয়ে গেছিলো কম্পিউটারে ভিডিও ছেড়ে রেখে ঘুমানো ।
দুই পর্বে বিস্তৃত এই ঘটনার প্রথম পর্বে দেখা যায় এক্স ফাইলসের দুই এজেন্ট ফক্স মল্ডার ও ড্যানা স্কালি মিলে ইউজিনের সে সিজনের চতুর্থ শিকারের খুনের পর তাকে মোটামুটি সনাক্ত ও কোনঠাসা করে নিয়ে আসে । ইউজিন তখন হতাশা থেকে স্কালিকে আক্রমণ করে বসে ও ধরা খায় । ক্রিমিনাল কোর্টে মল্ডারের উদ্ভট তত্তকে মোটামুটি হেসে উড়িয়ে দেয়া হলেও স্কালির উপর আক্রমণের কারণে তাকে জেলে দেয়া হয়, কিন্তু অন্য চারটি খুনের সাথে তাকে সম্পৃক্ত করার মত যথেষ্ঠ প্রমাণ হাজির করা সম্ভব হয় না । তখন অপরাধীদের নিয়ে কাজ করা সমাজবিজ্ঞানী ও মনোস্তত্তবিদদের দয়া হয় ইউজিনের উপর । তাকে হতাশাজাত আক্রমণের ছোট অপরাধের জন্য দীর্ঘমেয়াদে জেলে রাখাকে অবিচার হিসাবে ধরে নিয়ে সমাজকর্মী একজন মনোবিজ্ঞানী তার প্যারোলে মুক্তির ব্যাবস্থা করে দেন মল্ডারের চরম বিরোধীতা ও হতাশার মুখে । আর মাত্র একটা লিভারের জন্য ইউজিন শীতনিদ্রায় যাওয়া থেকে আটকে থাকে । দ্বিতীয় পর্বে দেখা যায়, যে মনোবিজ্ঞানী তাকে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসে মল্ডারের অদ্ভুত তত্তকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তাকেই খুন করে তার লিভার খেয়ে ইউজিন সেবার শীতনিদ্রায় চলে যায় । অবশ্যই দর্শকের দৃষ্টিসীমা থেকে সে মনোবিজ্ঞানীর কাজকর্মে বিরক্তি চেপে উঠে এবং ইউজিনের হাতে তার খুন হওয়াতে আমার মুখে একটা হালকা তাচ্ছিল্যের হাসি খেলে যায় । খুব ভালো হইছে, এইবার পরকালে গিয়া ইউজিনের দোষহীনতা মারা গিয়া ।
সিটকমের চটুল কাহিনী হলেও , এই ঘটনার এ ধরণের মোড় নেয়া কিন্তু অপরাধবিজ্ঞান ও আইনের দার্শণিকতার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্যারাডক্সকে তুলে আনে । এখানে আপাতভাবে যেসব তাত্তিক মনে করেন অপরাধপ্রবণতার একটা জৈবিক ও বংশগতীয় অংশ আছে তাদের দৃষ্টিভংগীকে কিছুটা ভিন্ডিকেইট করে । গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে বিগত দুই শতকের ব্লাংক স্লেইট তত্তকে কঠিন যুক্তি ও পরীক্ষনের কাঁচিতে কেটেছিড়ে ফেলা আমার ছয় নবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এডওয়ার্ড ও উইলসনের সোশিওবায়োলজি থেকে শুরু করে পরবর্তীতে যে নতুন প্যারাডাইম গড়ে উঠে অপরাধবিজ্ঞান, মনস্তত্ত , আচরণগত অর্থনীতি ও সামাজিকীকরণবিদ্যার (developmental psychology) চিন্তার ক্ষেত্রে, তার কিছুটা ছাপ পাওয়া যায় এক্স ফাইলসের এই কাহিনীতে । (কৌতুহল যদি কারো থেকে থাকে – বাকি পাঁচ নবী হলেন, Steven Pinker, Richard Dawkins, Robert Trivers, Matt Ridely ও Judith Rich harris. )
পুরোনো প্যারাডাইমে মানুষকে ধরা হতো ব্লাংক স্লেইট হিসাবে । অর্থাৎ জগতের সব শিশু জন্ম নেয় সাদা মন, সাদা মস্তিষ্ক নিয়ে । শিশু যেভাবে যে পরিবেশে বেড়ে উঠে, যে ধরণের শিক্ষা পায় শিশুকালে সেই অনুযায়ী তার মনস্তত্ত, অপরাধপ্রবণতা, জীবনে সাফল্য, জীবন ও জগত সম্পর্কে দৃষ্টিভংগী এসবকিছু নির্ভর করে। এই তত্ত এখন অন্তত একাডেমিক দুনিয়াতে ফেলনা হয়ে গেলেও কিছুদিন আগ পর্যন্ত কঠোর বৈজ্ঞানিক প্রটোকল মেনে না চলা ক্ষেত্রগুলোতে এখনও এর দোর্দন্ড ও কিছু ক্ষেত্রে হ্যাঙ্গওভার প্রভাব আছে । তবে অবশ্যই বলে রাখা ভালো যে এর উৎপত্তি কিন্তু কোন খারাপ নিয়ত বা এজেন্ডা থেকে না । হাজার হাজার বছরের সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে আলোকিত মানুষদের বিপ্লব ছিলো এই তত্ত । রাজার সন্তান রাজা হবে, উঁচুজাতের সন্তান উঁচুজাত হবে , দাসের সন্তান দাস হবে এই অমানবিক ও বর্বর প্রথাকে ছুড়ে ফেলার জন্যই তখনকার তাত্তিকরা এই হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছিলেন যে রাজার সন্তান রাজা হয় কেবল রাজার ঘরে বড় হয় সেজন্য , দাসের সন্তান দাস হয় দাসের ঘরে খারাপ পরিবেশে, সুযোগের অভাবে । সেটা অনেকাংশে ঠিক হলেও , মানুষের সমাজ যেমন করে আগায়, যখন ডানে যেতে থাকে তখন ভারসাম্য বিন্দু পার হয়েও মেলাদূর চলে যায়, যখন বামে তখনও তাই, সেকারণে এই তাত্তিকরাও মানুষের মনস্তত্ত ও চরিত্র ঘটনে বংশের প্রভাবের ধারণাকে পুরোপুরি অস্বীকার করেন ।
আবার এই ব্লাংক স্লেইটের তত্তও যে একেবারে আনকোরা নতুন ছিলো তাও না । এর উৎপত্তি তারও হাজার বছর আগে থেকে মানুষের মধ্যে চলে আসা, জীবজগতের সাথে মানুষের অমোচনীয় পার্থক্যের ধারণা থেকে উদ্ভুত । ডারউইন বুড়া যখন তার দুনিয়া কাঁপানো বিবর্তন তত্ত দিলেন তখন চারপাশের অন্যান্য জীবনের সাথে মানুষের আত্নীয়তার সম্পর্ক স্বীকার করা হলেও বড় বড় পন্ডিতরাও মানুষের বেলায় এসে কেবল থেমে যেতেন । ধরে নিতেন , মানুষের মধ্যে কিছু একটা আছে যেটা অন্যান্য জীবের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । একারণে অন্যান্য জীবের মধ্যে যেসব জৈবিক প্রবৃত্তির কথা স্বীকার করে নেয়া হতো সেগুলো কেবল মানুষের বেলায় তারা ধরে নিলেন যে জৈবিক মৌলিক কোন তাড়না থেকে না, বরং পরিবেশ ও পরিস্থিতির মিথস্ক্রিয়ায় বরং মানুষের আচরণ ঠিক হয় । মানুষেরও জৈবিক মৌলিক তাড়না ও সংশোধনের অযোগ্য কোন প্রবৃত্তি থাকতে পারে এর উল্লেখ করাও ছিলো ব্লাসফেমির শামিল ।
উইলসনের সোশিওবায়োলজির পর থেকে এই ব্লাসফেমির বাধা অতিক্রম করে মানুষকেও অন্যান্য প্রাণীর কাতারে শামিল করার বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন চলতে থাকে । এখানে অবশ্য মানুষকে এক্সক্লুসিভলি আলাদা রাখার পক্ষের তাত্তিকরা একটি মিথ্যা দ্বন্দ দাঁড় করান । সোশিওবায়োলজিস্টদের দাবী ছিলো বেশ বিনয়ী । মানুষের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের একটা অংশ আছে জিনগতভাবে ঠিক হওয়া যেগুলো পরিবর্তন করা দূরুহ, যদি পুরোপুরি অসম্ভব নাও হয়। কিন্তু এই দাবীকে আচরণবাদীরা ভুল বুঝে ধরে নেন যে সোশিওবায়োলজিস্টরা বলছেন , মানুষের স্বভাব চরিত্র পুরোটাই তার জিনের উপর নির্ভর করে, বেড়ে উঠার পরিবেশ ও সামাজিকীকরণের কোন প্রভাব নাই তাতে । এই ধরণের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো যুক্তি অবশ্য খুব সহজ । আসল দাবীর বিপক্ষে কোন যুক্তি দাঁড় করাতে না পেরে, দাবীটাকে নিজের মত করে বিকৃত করে , তারপর সে নকল দাবীর বিপক্ষে মোক্ষম মোক্ষম যুক্তি দিয়ে , আসল দাবীকে কুপোকাত করা হয়েছে ভেবে আত্নতৃপ্তি লাভ করা যায় ।
আচরণবাদীদের গাঁইগুঁইকে এরই মধ্যে অন্তত একাডেমিক দুনিয়াতে সাপপেটার মত পিটিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে । যেসব জায়গা থেকে মানুষের আচরণ স্বভাব চরিত্র ও মনস্তত্তে একটা মোটামুটি বড়সড় অংশে দুস্পরিবর্তনীয় জেনেটিক প্রভাব পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজি । মানুষের ক্ষেত্রে যেহেতু কন্ট্রোলড পরীক্ষণ চালানো সম্ভব না, অর্থাৎ এমন ধরণের পরীক্ষা চালানো সম্ভব নয় যেখানে একটা গ্রুপের মধ্যে জেনেটিক গঠন একরকম রেখে তাদের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে রেখে ফলাফল বিশ্লেষণ নৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে পরিত্যাজ্য, (ক্লোনিং এর মাধ্যমে, প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব হলেও) সেহেতু মানুষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করা যায় এপিডেমিওলজিক্যাল গবেষণা । মানে, বিভিন্ন গ্রুপের উপর বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ করে সেখানে পরিবেশ ও জেনেটিক মিল-অমিল অনুসারে ভাগ করে কোন বৈশিষ্ট্যের সাথে কোন ফলাফলের কোরিলেশন পাওয়া যায় সেগুলো দেখা । মানুষের ক্ষেত্রে এই ধরণের গবেষণাতে প্রকৃতির এক বিচিত্র খেয়ালি আচরনের কারণে খুবই কাজের একটা গ্রুপের মানুষ পাওয়া যায় । আমরা একই জিনের এক হাজার মানুষ তৈরী করে তাদের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ফেলে রাখতে পারি না । কিন্তু হোমোজাইগোটিক জমজ নামে যেসব মানুষ আছে তারা প্রাকৃতিকভাবেই প্রায় শতভাগ একই জিন বহন করে । অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে জিনকে কন্ট্রোল ফ্যাক্টর হিসাবে ধরা যাবে । আরেকটি সুবিধাজনক মানবিক প্রতিষ্ঠান, দত্তক নেয়ার সিস্টেম থাকার কারণে , একই ধরণের জিন ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে কি ধরনের প্রভাব ফেলে ঐ জিন বহনকারী মানুষদের উপর তা দেখা যায় । সহজ ভাষায় অনুবাদ করলে, হোমোজাইগোটিক জমজদের দুইজন যদি দুই পরিবেশে বড় হয়, তাহলে তাদের আচরণ ও স্বভাবের যেসব পার্থক্য আমরা পাবো , ধরে নেয়া যাবে সেগুলো তাদের পরিবেশের ভিন্নতার কারণে তৈরী হয়েছে । এতটুকু পর্যন্ত ঠিকই আছে । কিন্তু ব্লাসফেমি শুরু হয়, যখন উপরের ঘটনার কাউন্টার পার্ট বর্ণনা করা হয় । মানুষের ব্লাংক স্লেইট তত্ত অনুযায়ী মানুষের চরিত্র, আচরণ, স্বভাব ও মনস্তত্ত যদি শুধু পরিবেশ দিয়েই ঠিক হয়, তাহলে আলাদা পরিবেশে বড় হওয়া হোমোজাইগোটিক জমজদের মধ্যে কোনপ্রকার চারিত্রিক ও মনস্তাত্তিক মিল পাওয়া যাওয়ার কথা না, যতটুকু মিল তাদের পরিবেশের মধ্যে ছিলো ততটুকু ছাড়া ।
কিন্তু জমজদের মধ্যে চালানো বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া যাচ্ছে যে একেবারে আলাদা পরিবেশে বড় হওয়া হোমোজাইগোটিক জমজদের মধ্যেও প্রায় অর্ধেক পরিমাণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাচ্ছে যা হুবহু একই রকম । এই গবেষণা সবচে জমজমাট ভাবে চালাচ্ছে ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা টুইন-সিটি, মিনেসোটা টুইন ফ্যামিলি স্টাডি নামে । এই গবেষণা মূলত দীর্ঘমেয়াদি বা লংগিচুডিনাল । মানে হচ্ছে গবেষণার পাত্রদের দীর্ঘমেয়াদে , প্রায় জীবনভর অনুসরণ করে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হবে । এরা যদিও সব ধরণের জমজদের উপরই তথ্য সংগ্রহ করছে, এখানকার আলোচনায় হোমোজাইগোটিক কিন্তু জন্মের পর থেকেই আলাদা আলাদা পরিবারে দত্তক দিয়ে দেয়া জমজদের উপর চালানো পরীক্ষার ফলাফল বেশ কৌতুহলজনক । গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেটা পাওয়া গেছে তা হচ্ছে হোমোজাইগোটিক জমজরা যে ধরণের পরিবেশেই বড় হোক না কেনো , সব ক্ষেত্রেই তাদের মনস্তাত্তিক প্রোফাইলের মধ্যে ৫০ ভাগ মিল পাওয়া যায় । ধারণা করা হয় এটা জেনেটিক সমতা থেকে উদ্ভুত এবং এই অংশের উপর পরিবেশের কোন প্রভাব নাই । দ্বিতীয়ত অনেকগুলো এনেকডোটাল ঘটনা পাওয়া যায় এই স্টাডি থেকে । এরা দেখা যায় জন্মের পর আলাদা হয়ে যাওয়া জমজদের দাওয়াত দিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা-টুইন সিটিতে নিয়ে যায় । এক সপ্তাহের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত খরচ প্লাস কিছু উপরি সহ । সাধারণভাবে এইসব জমজদের প্রায় সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অন্য ভাই বা বোনের সাথে জন্মের পর এই প্রথম দেখা । অথচ অনেকগুলো ক্ষেত্রেই দেখা গেছে দুইজন দুই প্রান্ত থেকে এসেছে আলাদা আলাদাভাবে, কিন্তু একই ড্রেস পরে, অথবা হুবহু একই রকম উদ্ভট চুলের কাটিং নিয়ে, অথবা একই রকম উদ্ভট অভ্যাস যেমন লিফটের ভিতরে ফেইক হাঁচি দিয়ে সবাইকে ভয় দেখানোর প্রবণতা নিয়ে, একই রকমের রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগী নিয়ে ; এরকম আরো অনেক ছোটখাট জিনিস নিয়ে যেগুলো দৈবাৎ ঘটার সম্ভাবণা প্রায় শূণ্য । যেকারণে মোটামুটি ধরে নেয়া যায় এগুলোর গভীরে কোন জেনেটিক উৎস আছে ।
আমার নিজস্ব একটা পর্যবেক্ষন আছে,সেটা হল চৌর্যবৃত্তির মনোভাব সম্পন্ন লোকেদের মাথার খুলির গড়ন প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। এদের অধিকাংশেরই চুরির কোন প্রয়োজন নেই, তবুও অন্যের জিনিস হাতাতে পছন্দ করে।
এখনকার পৃথিবী বিশ্লেষন করলে আপাত ভাবে বলা যেতে পারে হয়তো, কোন দূর্বোধ্য কারণে বাদামী-কালোদের অপরাধ প্রবনতা বেশি। আবার অন্য দিকে দেখলে, ভারতীয়দের তুলনায় বাংলাদেশি-পাকিস্তানিদের অপরাধ প্রবনতা বেশি। মরোক্কান, টার্কিস এদের মধ্যেও সেদিকে ধর্মের কোন ব্যপার আছে? এতো চায়নীজ, ভারতীয় বিদেশে তাদের নিয়ে বদনাম নেই বললেই চলে
বুদ্ধিমত্তার কিছুটা সম্পর্ক আছে সম্ভবত । ধর্মের আছে কিনা নিশ্চিত না । তবে মুসলিমদের কিছুটা থাকতে পারে । কারণ অন্য ধর্মগুলার চাইতে মুসলিমরা নিজেদের ধর্মের সত্যতা নিয়ে গড়পড়তা কনফিডেন্ট বেশি । এই কনফিডেন্সের কারণে তার পৃথিবীর সবকিছুর খলিফা মনে করে নিজেদের । কাফেরদেরন উপর চালানো অপরাধকে তারা অপরাধ বলেই মনে করে না ।
সামাজিক মনোবিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দূরের পাখিকে ধন্যবাদ। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
কলম চলুক।
ধন্যবাদ ।
তাহলে কি আমাদের জীনই আমাদের জীবনের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক যেমন আমাদের আচার- আচোরন, ভাব অনুভূতি, সত্য- মিথ্যাচার, অপরাদ প্রবনতা,একে অন্যের সাথে জুচ্চুরি করা, এসবের পরিবেশগত শর্তাবলী তেমন নিয়ামক হিসাবে কাজ করে না ??
দারুন উদ্দীপকমূলক লেখনশৈলী আপনার,,,
পরের পর্বের আশায় থাকলাম।
কলম যুদ্ধের দ্বারা আমাদের জং ধরা ভোতা মাথা চূর্ন- বিচূর্ন হয়ে যাক,,,,,,,,,,
সবকিছুর নিয়ামক জিন নয় । এমন দাবী কেউ করেও নাই । কিন্তু জিন আমাদের , মানুষের আচরণ ও মনস্তত্তের গঠনের ব্যাপারে দুস্পরিবর্তনীয় ভূমিকা বিন্দুমাত্রও রাখতে পারে এটাকে অনেকে ভয় করেন । অবশ্য ভয়টা একেবারে অমূলক ও না । বংশপরম্পরায় শাসন, সম্পদের অধিকার , বংশের গৌরব দিয়ে মানুষের উপর তো আর কম অত্যাচার চালানো হয় নাই । সমস্যা হচ্ছে বিজ্ঞানের কোন নৈতিক অবস্থান নাই । সমাজের কল্যাণের জন্য অসুবিধার হইলেও সত্য ঘটনাকে সত্য হিসাবে উম্মোচন করার চেষ্টা বিজ্ঞান করতেই থাকবে ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।