আমি খুব ছোট বেলাতেই কয়েকটা পুরুষের মধ্যে আমার উপর হিংস্র প্রবনতার অনুভূতি বুঝে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই সমগ্র পুরুষ জাতির উপর তীব্র ঘৃণা নিয়ে পথচলা শুরু আমার।
তারপর বহু দিন চলে গেছে। একের সাথে আরেক যোগ করে দুই বানাই, আবার দুই থেকে এক বিয়োগ করে এক বানাই! দিন যায় রাত যায়, সময়ের ঘড়ির কাটা টিক টিক করে জানান দেয়, দিন পাল্টাচ্ছে! হঠাৎ-ই আমার জীবনে একজন কম বয়েসী তরুণের পদার্পন ঘটে, যে অতি সূক্ষ্মভাবে পুরুষ জাতটার প্রতি হারিয়ে যাওয়া আমার শ্রদ্ধাভাবটা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। আমি শ্রদ্ধা করতে শিখি নতুনভাবে, ভালোবাসতে শিখে যাই। বুঝি, একটা ছেলে একটা মেয়ে একে অপরের পরিপূরক। সেই ছেলেটা আমার টিচার ছিলেন। তখন একবার মনে হয়েছিলো যে ভালো মানুষ বলে কিছু একটা আছে। আমি একদিন তাকে প্রশ্ন করেছিলাম “ভাইয়া ভালোবাসাটা আসলে কি?” উত্তরে সে বলেছিলো “একজনের প্রতি আরেকজনের শ্রদ্ধাবোধ আর বিশ্বস্ততার আরেক নাম হচ্ছে ভালোবাসা।“
আমি প্রথম আমার পরিবার বাবা মা সবার ভেতরে সেটা উপলব্ধি করতে শুরু করলাম। দীর্ঘদিন যে অনুভূতি অকেজো হয়ে পড়ে ছিলো, সেটা আবার কাজ করতে শুরু করলো। নির্লিপ্ত পড়ে থাকা আমি মেয়েটার উচ্ছ্বলতায় ভরা দিন কাটাতে লাগলো!! তারপর জীবনে আরেকটা অঘটন ঘটে যায় হুট করেই! এবার আমি আবারও সব ভরসাগুলোকে হারিয়ে ফেলি। সময় আমার থেকে মায়ের আদর ভালোবাসা, বাবার সান্নিধ্য সব কেড়ে নেয়। আমি দূরের বদ্ধ গুমোট এক কূয়োর মধ্যে আটকা পড়ে থাকি একা একা। আমি তখন বিশ্বাস করতে থাকি যে, আমার মুক্তি মেলা অসম্ভব। আমার যখন এমনিভাবেই দিন চলছিলো তখন আরেকজন দেবদূতের পদার্পন ঘতে আমার জীবনে। তিনি এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন, আর সাথে সাথেই যেনো সবকিছু অন্যরকমভাবে বদলে গেলো! তিনি আমার হাত ধরে আমাকে টেনে তুললেন অন্ধকার থেকে। ফুলের গন্ধ চেনালেন, পাতার রং দেখালেন…. অতঃপর তার চিন্তাধারার পরিপূরক হিসেবে আমায় নতুন করে সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, এবার আমার নতুন জন্ম হলো.. আমার ইশ্বর আমার পিতা আমার সৃষ্টিকর্তা..
আমার এই কথাগুলো বলার কারণ একটাই যে, এত এত অমানুষের ভিড়ে এখনো কিছু মানুষ আছে যারা শ্রদ্ধা করতে জানে, ভালোবাসতে জানে। রাস্তার একই পাশে দাড়িয়ে থাকা কুকুরটা যখন স্তনের থলথলে মাংসপিণ্ড দেখার আশায় ওড়না ধরে টান দেয়, তখন পাশে দাঁড়ানো ভালোবাসার লোকটি সম্মান বাঁচাতে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে। ৩০ জন হায়েনা যখন নগ্নতার খেলায় উল্লাসিত হয়, একজন তখন নিজে নগ্ন হয়ে তার পাঞ্জাবিটা খুলে দেয় মেয়েটার লজ্জ্বা নিববারণের জন্য! বাবার বয়েসী লোকটা যখন সিএনজি তে ঝাঁকি খাওয়ার অজুহাতে বুকে হাত দেয়, সেই মুহূর্তে আরেকদিকে তার বয়েসী আরেক বাবা তার কন্যাকে পরম মমতায় বুকে আঁকড়ে ধরে রাখে। অনেক ভিড়ের মধ্যে যখন কয়েকজন বুক নিতম্বের সাইজ নিয়ে আলোচনা শুরু করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে নিয়ে, তখন ভাই এর বয়েসী অচেনা রিক্সাওয়ালা দেবদূতের মতো এসে বলে “আপা রিক্সায় উঠেন, আপনারে দিয়া আসি, এইহানে থাকলে সমস্যা হইতে পারে”!
আমি বিশ্বাস করি, ভালো আর খারাপ পাশাপাশি অবস্থান করে। খারাপের জোর বেশি থাকলেও সত্য আর সুন্দরেরই জয় হয় সবসময়। আমাদের একাত্তর বলে আমরা পেরেছি, পারার কারণ মানুষ ছিলো তখন সবাই; আর এখন পারছি না এর কারণ আমাদের পুরুষদের একটা বিশাল অংশ জানোয়ার হয়ে গেছে। আমরা মা জাতি, আমরা শহীদ রুমির মতো বহু বীর সন্তান জন্ম দিয়ে মাথা উঁচু করে হাঁটছি। আবার আমরাই তথাকথিত হায়েনাদের জন্ম দিয়ে লজ্জ্বায় ঘেন্নায় মাটিতে মিশে যাচ্ছি। কোনো মা তার ছেলেকে এমন জানোয়াররূপী দেখতে চায় না।
আপনাদের ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বলছি, নিজেদের শরীরে দন্ড আছে বলে আপনারা শক্তিশালী নন। দণ্ড চেতনায় উত্থিত হয়ে কাকে কতটা বাড়ি মারছেন সেই হিসেব হয়ত আপনি করছেন না, কিন্তু যে বা যারা আঘাতটা অনুভব করছে তারা কারো বোন, কারো মেয়ে এবং হয়তো বা ভবিষ্যতে আরেকজন পুরুষের মা। আপনাদের প্রথম খাবার যে মায়ের বুকের দুধ তার মতোনই আরেকটা মেয়ের বুকের দিকে কেনো এত হিংস্রতা ভরা লোলুপতা আপনাদের?
আমরা মেয়েরা এখনো ভরসা হারাই নি। আমারা সম্মান পেতে চাই। তাই সম্মান করে যাবো। কারণ, আমি বা আমরা বিশ্বাস করি, ভালো মানুষ এখনো আছে। এখনো সেই মানুষগুলো নিজে নগ্ন হয়ে আরেকজন মেয়ের নগ্নতা ঢাকার ইচ্ছে বা ক্ষমতা রাখে।
হ্যাঁ, এরাই সেই প্রকৃত শক্তিশালী পুরুষ মানুষ, ক্ষমতাশীল মানুষ.. সমস্ত নারীজাতীর ভরসাস্থল, শ্রদ্ধার পাত্র!
প্রিয়দর্শিনী, আপনার বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখতে ইচ্ছে করে
খুবই যুক্তিপূর্ণ জোরালো লেখা।
কলম চলুক।
“সমস্যাটার আদি মূল পুরুষতন্ত্রের ভেতর। যে কোন ধর্মশাসিত সমাজের মত তাই বাংলাদেশেও পুরুষতন্ত্রের প্রকোপ বেশী। কিন্তু সেটার মানে এইই না যে মুসলমান প্রধান দেশ বাদে আর কোথাও পুরুষতন্ত্র বা পার্টিকুলারলি এই সমস্যা নেই।
পাশের দেশে ভারতে একটু তাকায় দেখেন……।
আমেরিকার কিছু ষ্ট্যাটিসটিক্স দেখতে চান?”
-Shame on you. You justified the higher level of atrocities on women in Bangladesh by citing about our ‘religion driven society’ as the reason and tried to dilute our bad practices by pointing finger toward India and US. Why don’t you talk about some positive things of India and US and then find out if our ‘religion driven society’ is responsible for backwardness of Bangladesh.
আসলেই ভরসা হারানোটা উচিৎ নয় কখনওই তাদের (মেয়েদের) সময়ে বদলে গেছে কিছু পশু। দুঃখিত উক্ত চেতনাদন্ড প্রাপ্ত জানোয়ারগুলোকে মানুষ বলাটা বড্য বেশি বিব্রতবোধের জন্ম দেয় নিজের মধ্যে।ওদের কেউ মানুষ বললে মনে হয় আমাকেও গালি দিলো একটা বড্ড সন্তর্পণে। গালি তো হলো তবুও। আমরা সবাই আরেকটু চেষ্টা করি, চেষ্টা করি নাহয় আবার একটা মানবসমাজের অংশ হতে কিংবা মানব সমাজে বাস করতে। পশুগুলোকে খোয়াড় বন্দী করা হোক। ভালোবাসা সত্যি বিশ্বস্ততা আর শ্রদ্ধা। আমারা মানুষ আর তার হিসেবী দুটো দল নারী পুরুষ মিলে নাহয় আবার লিখি ভালোবাসার উপাখ্যান, চেনাক কেউ কাউকে মাটি, ফুল আর স্বপ্নের রঙ,মুঠোভর্তি করে এনে দিক দিক রোদ্দুর আর বৃষ্টির গন্ধ, বিশ্বস্ততার শুভ্র ছায়া দেখাক মনের মধ্যে।
আমরা সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে বেঁচে থাকি আদি থেকে আজ অবধি মানব মানবী। আমরা আজও নাহয় হতাশ না হয়ে গেলাম এগিয়ে।কারণ আমরা তো জানি সবাই মিলে সবাইকে ঠিকই একদিন বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা মিশিয়ে পারবো ভালবাসতে। সন্ধ্যার আবছা মায়া আলো তখন আর রবে না হায়েনা দের অভয়ারন্য।
বিঃদ্রঃ লেখিকাকে ধন্যবাদ সহজ গল্পগুলো বড্ড সহজ কথাছবিতে পরিণত করার জন্য। তাকে স্বাগতম আমাদের জগতে বিশ্বাসটুকু আজও স্বাধীনতার শিখার মত আঁকড়ে রাখার জন্য।
“আমি খুব ছোট বেলাতেই কয়েকটা পুরুষের মধ্যে আমার উপর হিংস্র প্রবনতার অনুভূতি বুঝে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই সমগ্র পুরুষ জাতির উপর তীব্র ঘৃণা নিয়ে পথচলা শুরু আমার। ”
আপু কয়েকজন পুরুষের জন্য সমগ্র পুরুষজাতির উপর তীব্র ঘৃণা থাকা উচিত নয়।
প্রথম পর্ব :
গেল মার্চে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ বাংলাদেশ ঘুড়ে সবেমাত্র ফিরে এসেছি।
বাড়ীর পাশে বনানী মসজিদ, ঘর থেকে দেখা যায়। প্রতি শুক্র বার উপচে পরা অবনত মুসুল্লির ভিড় চোখে পরার মত। এই ভিড়ে যে শুধু মোল্ল-মৌলবী তা না, ফিটফাট প্রৌঢ় সাহেব’দের উপস্থিতিও কম না।
২য় পর্ব :
ঐ দিন শুক্র বার, হ্যাপি জুম্মা। গুলশান ক্লাবের গেটের বাইরে অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি। হটাৎ কিঞ্চিত জটলা। ৬০-উর্ধ প্রৌঢ় বয়সী সাহেবের পথ আগলে ধরে আছেন আলতা পাউডার মাখা এক যুবতি। উভয়ের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, ক্রশটক। জানজোট, শব্দে বিষয়বস্তু বুঝা যাচ্ছে না। মুহুত্বেই সাহেব বেচারা ঠেলেঠুলে, ধাক্কা মেরে দ্রুত পদে ক্লাবের গেট দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ঢুকে গেলেন। প্রহরি’দের স্যালুট দেখে মনে হল, তিনি সম্ভবত ক্লাব মেম্বার।
যুবতিও ছাড়ার পাত্রি নন। এইবার আরো এগিয়ে এসে লোকটির প্রতি কিছু তিরস্কার মাখা শব্দ ছিটকে মারলেন- “বুইড়া ব্যাডা, কামের কাম পারে না, খালি কামড়াইতে পারে”
ভাবনা পর্ব :
লোকটির মাথায় তখনো আল্লহু খচিত জুম্মা টুপি। মনে মনে ভাবলাম- ৯৫% মুমিনের বাংলাদেশে দণ্ড চেতনা এবং ধর্ম চেতনা কতই না সোনায় সোহাগা।
পরিবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের প্রতি সম্মানবোধ আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারেই নেই। কাজের লোকদেরকে আজও আমাদের সমাজে মানুষ ভাবা হয় না। আজো আনেক পরিবারে কন্যা ও পুত্রবধূরা লাঞ্ছিত হয়। অনেক মা আজো তার ছেলে সন্তানকে শিক্ষা দেন, কন্যা সন্তান তার চেয়ে গুণে-মানে নিকৃষ্ট। এগুলো সবই আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা। সব মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে ও সম্মান করতে শিখতে হবে আগে। তার শুরু হতে হবে পরিবার থেকেই। মুক্তমনায় স্বাগতম জানুন। লেখাটি ভাল লেগেছে।
@ Muktar Ahmed Mukul,
আপনার কথায় যুক্তি আছ @ মুকুল ভাই।
আসলে হিন্দু, ক্রিশ্চিয়ানিটি, জুডাইজম, বুডাইজম……………… এ সবের সাথে ইসলামী কারিস্মার তুলনা করে যারা তৃপ্তি খুঁজে আমার কাছ তা পঁচে য়াওয়া ভাত-ডাল-ভর্তা-ভাজির সাথে পঁচা বিড়িয়ানী’র তুলনা করার মতই মনে হয়।
এ আশায় ই আছি। আর মুক্তমনায় স্বাগতম। লিখুন নারীদের নিয়ে। লিখতে লিখতেই অন্ধদের চোখ খুলতে পারবেন।
সমস্যাটার আদি মূল পুরুষতন্ত্রের ভেতর। যে কোন ধর্মশাসিত সমাজের মত তাই বাংলাদেশেও পুরুষতন্ত্রের প্রকোপ বেশী। কিন্তু সেটার মানে এইই না যে মুসলমান প্রধান দেশ বাদে আর কোথাও পুরুষতন্ত্র বা পার্টিকুলারলি এই সমস্যা নেই।
পাশের দেশে ভারতে একটু তাকায় দেখেন……।
আমেরিকার কিছু ষ্ট্যাটিসটিক্স দেখতে চান?
এদের চিনে নিন, সমাজে কৌশলে চিনিয়ে দিন। একদিন না একদিন এরা সুপথে আসবে নইলে ঝরে যাবে, যা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাবার কিছু নেই। তবে প্রশ্রয় দেবেন না। সে যতই ধর্ম কপচাক না কেনো প্রয়োজনে তাতেও থু থু ছুঁড়তে দ্বিধা করবেন না!আশাবাদী আমাদের হতে হবেই, কারণ আগামীকে নতুন করে নির্মানের তাগাদা আসছে…!
সমস্যাটা আসলে শুধু বাংলাদেশেরই নয়, গ্লোবাল বলা যায়। বাংলাদেশের মত দেশে নানান কারনে মাত্রাটা হয়ত উতকট।
পুরুষতন্ত্রের ডমিনেন্সের মাঝে মূল কারন……যে সমাজে এর প্রভাব বেশী সে সমাজে এটাকে নৈতিকভাবে অন্যায় মনে না করার প্রবনতাও বেশী।
নারী পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক। সন্দেহ, অবিশ্বাস, আতংক বিরাজ করলে সূস্থ সমাজ থাকে না। নারী হয়ত আতংকে ঘরে আটকে থাকবে, কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হবে না। লোলুপ পুরুষ নজর দেবে নিজ বাড়ির মা বোন মেয়ের ওপরই, কিছু কনজার্ভেটিভ দেশের উদাহরন তেমনই ইংগিত করে।
হ্যা সেজন্যই আমরা এখনো আশাহত হইনি। প্রতিরোধ আমরাই করতে পারবো যদি আপনারা নীরব দর্শক না হয়ে বাহবা দিতে পারেন। 🙂
এদের মত কিছু ভাল মানুষ এখনো আছেন বিশ্বাস করেই দেশটা নিয়ে ভাবি, আশা করি, ভরসা পাই একদিন দেশে স্বপরিবারে চলে যাবো।
মা তার গর্ভে মানুষই জন্ম দেন, সেই মানুষকে হায়েনা বানায় সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র। যে যুগে, যে দেশে সমাজ ও রাষ্ট্র ধর্মের তাবেদারী করেছে, সেই যুগে সেখানেই নারী হয়েছে সব চেয়ে বেশী নিগৃহিত অত্যাচারিত অবদমিত। পুরুষ, ধর্মের জন্মই দিয়েছে অবাধ নারী সম্ভোগের লক্ষ্যে।
হুম,ভালো লাগলো।