দাদা’র চিঠি
আকাশ মালিক
“যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়,তারা ধার্মিকও নয়,বৈজ্ঞানিকও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল,তারা তার বংশধর।”
— হুমায়ুন আজাদ।
প্রীয় অভিজিৎ দা,
বড্ড দেরী হয়ে গেল বোধ হয়। কী আর করি? লেখায় মন বসেনা, হাত লিখতে পারেনা, কত্তবার চেষ্টা করেছি। লিখতে বসলে বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এক লাইন লেখি আর ডিলিট করি, কিচ্ছুই ভাল লাগেনা। বয়স এ বৎসর ষাট হতে চলেছে, এমনিতেই সুগার ট্যাবলেট সর্বক্ষণ সাথে রাখতে হয়, ডাক্তারের নিষেধ, টেনশন-দুশ্চিন্তা মোটেই চলবেনা। খবরটা যখন শুনলাম, বিশ্বাস মোটেই হচ্ছিলনা। কমপিউটার অন করে সারা দুনিয়া তছনছ করছি আর মনে মনে বলছি-ওরে জগতের লোক তোরা কেউ তো বল-আমাদের অভিজিৎ মরে নাই, খবরটা মিথ্যা ভুয়া। অভিজিৎ মরতে পারেনা, অভিজিৎকে মারার শক্তি এই পৃথিবীর কারো নেই, অভিজিৎ মৃত্যুঞ্জয়ী। কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীরের সুগার লেবেল অনেক নিচে নেমে আসলো, হাত-পা কাঁপতে থাকলো। সাথে ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যাওয়ায় আর বসে থাকতে পারলাম না। আমার সেই বন্ধুকে ফোন করে খবরটা জানালাম, যে আমাকে ১৫ বছর আগে মুক্তমনার ঠিকানা দিয়েছিল। মনে আছে দাদা, আমার এই বন্ধুটি আজ থেকে প্রায় তেরো বছর আগে আপনাকে ফোন করে জানিয়েছিল যে, ধর্ম্মোদেরা আমার উপর ক্ষেপেছে? প্রায় সাথে সাথেই আপনি সিঙ্গাপুর থেকে আমাকে ফোন করেছিলেন সাথে জায়েদ ভাইও ছিলেন। আমার নিরাপত্তার জন্যে আপনি এত ব্যাকুল, এত চিন্তিত, আমার জন্যে আপনার সীমাহীন উৎকণ্ঠা আর নিজের নিরাপত্তার কথাটা কি একবারও মনে পড়লোনা দাদা? আপনার কোন ভয় নাই, প্রাণের মায়া নাই? থাকবেই বা কী ভাবে? মানুষ আপনাকে সতর্ক করেছিল, আপনি হেসে হেসে সাফ বলে দিলেন-‘ যে দিন থেকে ধর্মের বিরোদ্ধে কলম ধরেছি সেদিন থেকেই প্রাণটা হাতে নিয়ে রেখেছি’। কেন আমার মত অজানা অপরিচিত অশিক্ষিত ওজ পাড়াগাঁয়ের একটা মানুষকে আপনার আলোরপথের যাত্রী দলে স্থান দিতে গেলেন? কী দরকার ছিল আপনার মুক্তমনা পরিবারে আমাকে এত আপন করে নেয়ার? কেন জানি একটা অপরাধবোধ বারবার মনে জাগ্রত হয়।
পরের দিন কমপিউটারে ফিরে এসে দেখি পত্রিকায় পাতায় পাতায়, ব্লগে ব্লগে, ইন-বক্সে, ফেইসবুকে, টুইটারে লক্ষ-কোটি মুক্তমনা সমস্বরে সুর তুলেছেন ‘আমরা অভিজিৎ, আমি অভিজিৎ’। বলছিলাম না অভিজিৎ মরতে পারেনা? অভিজিতের শরীরের প্রত্যেকটি রক্তকণিকা থেকে একেক জন অভিজিতের জন্ম হয়েছে। জানেন দাদা, যারা সন্দেহ বা দুদোল্যমান অবস্থায় ছিলেন, যারা নিজের নাস্তিকতা গোপন রাখতেন তারা আজ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে অবিশ্বাসী হয়ে গেছেন। যারা কোনদিন ব্লগে লিখতেন না তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন এখন থেকে ধর্মের বিরোদ্ধে লিখবেন। সারা বিশ্বব্যাপি আপনার এত সমর্থক, মুক্তমনার এত পাঠক আছে আমি তা কল্পনাও করিনি, দেখলে আপনি নিজেও অবাক হয়ে যেতেন। একটি ব্লগ তাদের সম্পাদকীয় পাতায় কী লিখে রেখেছেন দেখুন-
নাগরিকব্লগ আজ থেকে ধর্ম-সমালোচনামূলক লেখাকে সক্রিয়ভাবে প্রমোট করবে
প্রিয় অভিজিৎ রায়,
আমরা ভুল ছিলাম। দাদা, আমাদের ক্ষমা করুন। নাগরিকের জন্মলগ্ন থেকেই নাগরিক রাজনৈতিক ইস্যুতে যতটা সরব, ঠিক ততটা সরব ধর্মীয় ইস্যুতে থাকে নি। আমাদের আধ-খ্যাঁচড়া কাটা-ছেঁড়া সংবিধানে ঠিক যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জোড়া-তালি দিয়ে ব্যাখ্যা করবার চেষ্টা করা হয়েছে, সেভাবেই আমরা ভেবে নিয়েছি— হয়তো এভাবেই হবে। এ কারণে সাধারণত রাজনৈতিক লেখাগুলোকেই বিভিন্ন সময়ে ফিচার্ড হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই এটাকে একটা রাজনৈতিক সমস্যা বলেই ধরে নিয়েছিলাম।
হুমায়ূন আজাদ আমাদের শিক্ষা দিতে পারেন নি। উনি বড্ডো দূরের মানুষ ছিলেন কিনা! রাজিব আমাদের নাকে খৎ দেওয়াতে পারে নি— তখন আমাদের আন্দোলন বাঁচানোর সে কী তোড়জোড়! কিন্তু প্রিয় অভিজিৎ’দা, আর কে কী করবে বা বলবে আমরা জানি না— তবে আমরা বুঝে গেছি আজকে। এ দেশে রাজনৈতিক সংকটের আগে প্রয়োজন তথাকথিত ধর্মানুভূতির সংকট মেটানো। টেইলরমেইড ধর্মনিরপেক্ষতা ভোট এনে দিতে পারে, কিন্তু সত্যিকার দেশ দিতে পারে না। আমরা সর্বতোভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আপনার কাছে— মুক্তমনার কাছে; যদিও নাগরিক ধর্মের যৌক্তিক সমালোচনাকে কখোনোই নিরুৎসাহিত করে নি, তবে আমরা আজকে থেকে সক্রিয়ভাবে নাগরিকব্লগে ধর্মকে সমালোচনা করে আসা লেখাকে স্বাগত জানাচ্ছি। বিশেষত বাংলাদেশের তথাকথিত রাষ্ট্রধর্মকে নিয়ে, এই সীমাহীন অসভ্যতাকে নিয়ে আসা যৌক্তিক লেখাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
গৎবাঁধা নিন্দা জানিয়ে আর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে নিজেদেরকে আর হাস্যকর করে তুলতেও চাই না। শুধু সরকারযন্ত্রকে জানাতে চাই— আমরা তোমাদের শুয়োরসঙ্গমে সঙ্গ দিতে রাজি নই।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফোরাম ঘোষণা দিয়েছে তারা অভিজিৎ স্মৃতি সৌধ তৈরি করবেন। এ সব দেখে শুনে ধর্মান্ধদের যে কী অবস্তা হয়েছে দাদা, আহ বেচারারা!
তারা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অভিজিৎ ও তার মুক্তমনা পরিবারের বিষোদাগার করলো, ওশ্লীল নোংরা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলো, মুখোশ উম্মোচন করলো, পনেরোটা বছর যাবৎ হিংসা বিদ্বেষ আর মিথ্যাচার করে করে শুধু কয়েকটা জানোয়ার খুনী ফারাবীই তৈরি করলো। ছিঃ ছিঃ ছিঃ। কই তাদের লেখা পড়ে একজন নাস্তিককে তো কোনদিন আস্তিক হতে শুনলাম না। বলে কী, রাজিব হায়দার ওরফে থাবা বাবা নাকি অভিজিতের ছদ্মনাম, আকাশ মালিক নাকি অভিজিৎ। দেখছেন অবস্তা? পনেরো বছর যাবত হিস্টোরিয়া রোগে ভুগছে বেচারারা। আমি বলি, ইউ আর এ লুজার ম্যান, ভেরি ব্যাড লুজার। বালি থেকে মাথাটা তোল, চোখ খোলে একবার চেয়ে দেখ সারা বিশ্বের এক প্রান্থ থেকে অপর প্রান্থ পর্যন্ত শুধু অভিজিৎ আর অভিজিৎই দেখা যায়। ধর্মান্ধদের জন্যে অভিজিৎ আজ এক দুঃস্বপ্ন এক নাইটমেয়ার। কী জ্বালাতনটা শুরু হয়েছে তাদের অন্তরে, একদম মৃগীরোগী পাগলপ্রায় অবস্তা। কখনও পর্দার আড়াল থেকে মুখ লুকায়ে শোক প্রকাশ করে, কুমীরের মায়াকান্না কাঁদে, পরমুহুর্তেই আবার নোংরা কুৎসিত চেহারাটা বের করে দেখিয়ে দেয়। তারা খুন সমর্থন করেনা তবে খুনের কারণ সমর্থন করে। না করে উপায় আছে? সেই যে পনেরো শত বছর আগে কবি আসমাকে তার পাঁচ শিশু সন্তানের পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় মুহাম্মদের নির্দেশে খুন করা হয়েছিল সে হাদিস তারা জানেনা, বিশ্বাস করেনা? করে। সেটাও রাতের অন্ধকারে চোরাগুপ্তা হত্যা ছিল। পনেরো শত বছর যাবত, যে কারণে অগণিত অসংখ্য মানুষ তারা খুন করেছে, ঠিক একই কারণে আজ অভিজিৎও খুন হয়েছেন। এ তো কোরান হাদিসেরই শিক্ষা, সেটা তারা অস্বীকার করে কেমনে? অনেকেই স্বীকারও করেছে, কলমের জবাব কলম দিয়ে হয়না, মাঝে মাঝে অস্ত্র হাতে খুনও করতে হয়। কেউ আবার স্বোকারোক্তি দেয় –
‘হত্যাকারী যেই হোক, মৃত্যুটাও যতই অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত হোক না কেন, অভিজিতের মৃত্যুতে পৃথিবী বাকসন্ত্রাসের এক দক্ষ কারিগরের এবং কুৎসিততম সাম্প্রদায়িক ঘৃণাযজ্ঞের হিংস্র এক মহাপুরোহিতের হাত থেকে নিস্কৃতি পেল’।
এদেরই কেউ কেউ যখন বলেন, ইসলামে সন্ত্রাস নেই, ইসলাম জঙ্গীবাদ সমর্থন করেনা তখন শয়তানও বুঝি শরমে মুখ লুকায়।
কোথায় পায় তারা এই শিক্ষা, এই প্রেরণা? হাজার হাজার প্রমাণের মধ্য থেকে কিছুটা নমুনা আবারও দেখাই-
narrated from ‘Ali that a Jewish woman used to insult the and say bad things about him, so a man strangled her until she died, and the Prophet ruled that no blood money was due in this case. Sunnah, Abu Dawood (4362)
narrated from Ibn ‘Abbaas that a blind man had a freed concubine (umm walad) who used to insult the Prophet and say bad things about him. He told her not to do that but she did not stop, and he rebuked her but she did not heed him. One night, when she started to say bad things about the Prophet and insult him, he took a short sword or dagger, put it on her belly and pressed it and killed her. The following morning that was mentioned to the Messenger of Allaah. He called the people together and said, “I adjure by Allah the man who has done this action and I adjure him by my right over him that he should stand up.” The blind man stood up and said, “O Messenger of Allaah, I am the one who did it; she used to insult you and say bad things about you. I forbade her, but she did not stop, and I rebuked her, but she did not give up her habit. I have two sons like pearls from her, and she was kind to me. Last night she began to insult you and say bad things about you. So I took a dagger, put it on her belly and pressed it till I killed her.” Thereupon the said: “Bear witness, there is no blood money due for her.” Abu Dawood (4361)
Sa’d ibn Abi Waqqaas said: “On the Day of the Conquest of Makkah, the Messenger of granted safety to the people except for four men and two women, and he named them, and Ibn Abi Sarh… As for Ibn Abi Sarh, he hid with ‘Uthmaan ibn ‘Affaan, and when the Messenger of called the people to give their allegiance to him, he brought him to stand before the Messenger of Allaah. He said, “O Prophet of Allaah, accept the allegiance of ‘Abd-Allaah.” He raised his head and looked at him three times, refusing him, then he accepted his allegiance after the third time. Then he turned to his companions and said: “Was there not among you any smart man who could have got up and killed this person when he saw me refusing to give him my hand and accept his allegiance?” They said, “We do not know what is in your heart, O Messenger of Allaah. Why did you not gesture to us with your eyes?” He said, “It is not befitting for a Prophet to betray a person with a gesture of his eyes.” Abu Dawood (2683)
স্যরি দাদা, আপনি তো ওদের কথায় কোনদিন কান দেন না, আমাকে খালি বলেন লিখুন, লিখতে থাকুন। আজ এদের কিছু কথা শুনাতে হলো। এরা হলেন দুধে ভাতে মল মুত্র মিশ্রন করে পানাহারকারীর দল। তারা দাবী করেন, ধর্মগ্রন্থ আর বিজ্ঞান নাকি এক সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। কত মানুষ কত্তভাবে যে আপনাকে মূল্যায়ণ করলেন, চিনলেন, জানলেন তার ইয়ত্তা নেই। আপনার নামের পাশে অসাম্প্রদায়িক লেখক, ব্লগার, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, প্রকৌশলী কত উপাধী যে তারা যুক্ত করলেন। আমি বলি অভিজিৎ একজন বিজ্ঞানমনষ্ক ভাল মানুষের নাম। একজন ভাল মানুষ হওয়ার জন্যে যতগুলো গুণাবলী থাকার প্রয়োজন অভিজিতের মাঝে তার সবটুকুই ছিল। বিদ্যার ভারে নুহ্য আরেকদল ভদ্রলোক টাইপের লোক আছেন তারা সংখ্যাগিরিষ্ট মানুষের পালস বুঝে কথা বলার উপদেশ দেন। তারা নারীর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, ধর্মের সমালোচনায়ও আপত্তি নেই কিন্তু। কিন্তু কী? নারীর ইচ্ছে মত কাপড় পরার আর ধর্ম নিয়ে সত্য কথা বলার পরিবেশ বা প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে এখনও তৈরি হয় নি। সুতরাং তাদের মতে মুসলমান দেশে সর্ট স্কার্ট আর টাইট ব্লাউজ পরা নারীর ধর্ষণের জন্যে দায়ী নারী নিজেই। নারীর শরীরের ভাঁজ দেখা গেলে একজন মুসলমানের সেক্সানুভুতি মাথায় উঠতেই পারে। তেমনিভাবে সংখ্যাগরিষ্ট ৯০ পার্সেন্ট মুসলমানের দেশে তাদের ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করলে একজন মুসলমান যুবকের মাথায় খুন চড়তেই পারে। তারা আপনার সকল লেখার সকল কাজের স্বিকৃতি দেন শুধু ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করাটা তাদের পছন্দ হয় নি। কারণ ইসলামের সমালোচনা করার পরিবেশ এখানে নেই।
আমি স্পষ্ট ভাষায় বলি অভিজিৎ ইসলাম বিরোধী ছিলেন কিন্তু মুসলিম বিদ্বেষী ছিলেন না। জগতের কোন জীবের প্রতি অভিজিতের কোনপ্রকার ঘৃণা ছিলনা, ঘৃণা করতেন সেই অসুরটাকে যার লোভে প্রতারণায় একজন মানুষ আরেকজন নির্দোষ মানুষকে খুন করে। কিসের নেশায়, কোন ভাইরাসের নির্দেশনায় একজন মানুষ পিপিলিকার মত আগুনে ঝাপ দিয়ে আত্মাহুতি দেয়, নিজেও মরে অন্যকেও মারে অভিজিৎ তার সন্ধান করেছেন।? পরিষ্কার দ্ব্যর্থ ভাষায় তিনি কোরান সহ সকল ধর্মগ্রন্থকে মহা অপবিজ্ঞান, মহা নির্বুদ্ধিতা বলেছেন। তার বিজ্ঞানময় কিতাব এর প্রমাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের শিক্ষক ‘আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখন্ডিত করা যায়’ বিশ্বাস করবেন, ‘এক রাতে সৌরজগত ভ্রমণ করা যায়’ শিখাবেন, জীববিজ্ঞানের শিক্ষক ‘নব্বই হাত লম্বা মানুষ এক হাজার বছর বেঁচে ছিলেন আর তার হাড্ডি থেকে সৃষ্ট তার বউ ১২০বার গর্ভবতি হয়েছিলেন মেনে নিবেন’, ইতিহাসের শিক্ষক ‘নুহের তরীতে সারা জগতের জীবের সংকুলান হয়েছিল’ শিখাবেন, বিজ্ঞানমনষ্ক অভিজিত এ ঢাহা মিথ্যা এ ভুল বিজ্ঞান মেনে নিবেন কেন? এই নির্দিষ্ট জায়গায়ই অভিজিতের তীব্র প্রতিবাদ। ভ্রান্ত বিজ্ঞান শুধু ইসলামই ছড়াচ্ছেনা, এই অপকর্মটি অন্যান্য ধর্মবাদীরাও করে আসছেন বহুদিন ধরে। অভিজিৎ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোকে সকল ধর্মের এই মিথ্যাচার, এই অপবিজ্ঞানের স্বরুপ জগতের মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। অভিজিৎ কুসংস্কারমুক্ত, অসাম্প্রদায়ীক বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। বিজ্ঞানমনষ্ক হতে হলে আপনাকে ধর্মহীন হতেই হবে, এ দু’য়ের সহাবস্থান অসম্ভব। প্রশ্ন করে করে যুক্তির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার নাম বিজ্ঞান আর যুক্তিহীন প্রশ্নাতীতভাবে বিশ্বাস করার নাম ধর্ম। বিজ্ঞানের বই পড়ে বিজ্ঞানী হওয়া যায় কিন্তু বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়া যায় না, তাই ফারাবী পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও একজন খুনী, আরজ আলী মাতুব্বর বিজ্ঞান না পড়েও বিজ্ঞানমনষ্ক একজন মানবতাবাদী। প্রশ্ন ও যুক্তির দ্বারা অভিজিৎ ধর্মবাদীদের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, তাই তারা তাদের মরনকামড় দিয়েছে, কিন্তু অভিজিতকে মারতে পারে নি। এক ফারাবী বা তার সমমনাদের বিচার করে তাদের শাস্তি দিয়ে অভিজিতের স্বপ্ন বাস্তবায়ণ হবেনা। এই খুনের সাথে হাজার হাজার অগণিত অসংখ্য ফারাবীর সমর্থন আছে, আঘাত হানতে হবে তাদের চিন্তা চেতনায়। সেই চেতনা সেই কুৎসিত অমানবিক মতবাদের বিরোদ্ধেই ছিল অভিজিতের যুদ্ধ।
দাদা, আমি জানি আপনি বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন লক্ষ কোটি মুক্তমনা মানুষের অন্তরে মানসে আমাদের চিন্তা চেতনায়। আপনার রক্তের কসম, আমরা আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ণে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবো, আমাদের কলম কোনদিনই স্তব্ধ হবেনা।
ইতি-
আপনার আকাশ মালিক।
আমি মনে করি আভিজিৎ দা মৌলবাদের কোপানলে পড়ার প্রধাণতম কারণ উনার প্রকাশ্য রুপ । অভিজিৎ দা ছিলেন একজন প্রকৃত যুক্তিবাদী (অসুখের সঠিক চিকিৎসক)মানুষ । আর আমরা যারা পর্দার আড়ালে থেকে লেখা লেখির চেষ্টা করি আর ধর্মকে (যুক্তিতে থেকে) সরাসরি টার্গেট করি ,এই আমাদেরই হওয়া উচিৎ ধর্মীয় মৌলবাদীদের প্রধাণতম টার্গেট । কিন্তু কোন কোন জায়গায় আমাদের নাম থাকলে দৃশ্যহীনতার কারণে আমরা আলোচনার বাইরে । আমি মুক্তমনায় না লিখলেও ব্লগের জন্মলগ্ন থেকেই পরিচিত । মুক্তমনায় কমেন্টে আসার আমার কোন অভিপ্রায় ছিলো না ,কিন্তু দাদার এই মৃত্যুকে আমি মোটেই মেনে নিতে পারিনি , আমার প্রতি মূহুর্তে অবচেতন মনে অভিজিৎ দা এসে হাজির হচ্ছেন । আমাদের নিজের মতবাদের মৃত্যুর মধ্যে মহত্ব নয় , আপরের ভ্রান্ত মতবাদের মৃর্ত্যু ঘটানো ,তা সে যে নামেই হোক ।মুক্তমনার সর্বর্গিন উন্নতি কামনা করি ।
ছদ্মনাম নিয়ে ক্যাঁচালে নুতন করে বলার কিছু নেই। অভিজিত নিজেও পুরনো ব্লগারদের ভয়াবহ তর্কাতর্কিতে বিব্রত বোধ করত।
ফরিদ ভাই এর ষ্ট্যান্ড এ যুক্তি থাকলেও ছদ্মনাম নেবার অন্য আরো অনেক কারন থাকতে পারে ব্যাক্তি বিশেষে, তারা সকলেই একই কাতারে পড়ে না। লেখাই বড় কথা, লেখকের ব্যাক্তিগত পরিচয় নিতান্তই গৌণ, চুড়ান্তভাবে এটাই হওয়া উচিত। আর মডারেটেড সাইট মুক্তমনায় তো আপত্তিকর কিছু প্রকাশ হবারই কথা নয়, অন্তত অচেনা চরিত্রদের। আমাদের মত সমাজে ছদ্মনাম পরিচয়ের দরকার কতটা তাতো অভিজিত নিজেই প্রমান করে গেছে, সকলে তো তার মত সাহসী হতে পারে না।
অভিজিতকে হত্যা করার পেছনে নেহায়েত মুক্তমনায় কিছু নামগোত্রহীন লোকের ধর্ম বিষয়ক খোঁচাখুচি এমনকি সেকেন্ডারি কারন এই ধারনাও আমার তেমন যুক্তিসংগত মনে হয় না। সেসব বিতর্কিত লোকজন বিতাড়িত হয়েছে বেশ ক;বছর, এমনকি অভিজিত নিজেও মুক্তমনায় হয়ে গেছিল অনিয়মিত।
ধর্ম বিষয়ক খোঁচাখুঁচি মূল কারন হলে অভিজিত কিছুই নয়। ফেসবুকে শুধু বেনামে নয়, স্বনামেও অনেকে ধর্ম/নবী বিষয়ক নানান উত্তেজক কথাবার্তা বলে আসছে দিনের পর দিন, তাদের কাছে অভিজিত বা মুক্তমনার সেসব ছদ্মবেশীরাও নস্যি।। ব্লগের ধর্ম ডিফেন্ডারগন কই তাদের টার্গেট করে না যেভাবে অভিজিত একচেটিয়া টার্গেট ছিল। অন্য কারো স্ত্রী, বাবার নাম তুলে (বৃদ্ধ সজ্জন ব্যাক্তি যিনি অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাকে পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক দাবী করে গালিগালাজ করেছে শুধুমাত্র অভিজিতের বাবা হবার অপরাধে) কেউ সিরিজ লিখে দেখেছেন?
অভিজিত আসলে বাংলা ব্লগ জগতে মুক্তচিন্তার আইকন, যার দেখানো পথ ধরে বিশেষ করে নুতন প্রজন্মের অনেকেই ধর্মকে যুক্তির আলোয় দেখার প্রবনতা অর্জন করছে। আমি নিজেও মুক্তমনা থেকেই পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মের অন্যদিক দেখার মাল মশলা প্রথম পাই। অভিজিতের এটাই অপরাধ, তার কোন মাফ নাই। ধর্মোন্মাদরা এ কারনে রহিম করিম যদূ মধু কিসিমের লোকেরা ধর্ম নবী রসূল জঘন্য ভাশায় গালি দিলেও তাদের পেছনে লাগে না, লাগে অভিজিতের পেছনে। কাড়ণ গালীবাজড়া নিতান্তই গালিবাজ ছাড়া আর কিছু না, তাদের থেকে বড় বিপদের সম্ভাবনা নেই। বড় বিপদের ভয় অভিজিতদের থেকে, কারন তারা অন্ধবিশ্বাসের গোড়াতেই এমন ভাবে হাত দেয় যার জবাব হয় না; জবাব হয় চাপাতির কোপে আর নয়ত যাদের সেই সাহস নেই তাদের জন্য দিনের পর দিন লেখার জবাবের নামে ব্যাক্তিগত বিষের থলি ঢালা। তাদের জন্য ভালই হয়েছে, তারা এখন টের পাবে সমাজে কত অভিজিত তৈরী হয়েই ছিল, আরো দিনে দিনে তৈরী হবে। এক মুক্তমনা আর অভিজিতোফোবিয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে তারা বাস্তব জগতে তেমন টের পায়নি।
@আদিল মাহমুদ,
আমার যা বলার ছিল, আপনি আর আরেফিন খুব সুন্দরভাবে তার সবটুকুই বলে দিয়েছেন। ছদ্মনাম ব্যবহারের ব্যাপারে আমি আরেকটু যোগ করবো- আমি বেশ কিছু মুক্তমনার লেখককে জানি তারা তাদের অসুবিধের কথা আমার কাছে ব্যক্ত করতেন। স্ত্রী তার স্বামীর ভয়ে, সন্তান তার বাবার ভয়ে, স্বামী তার স্ত্রীর ভয়ে সমাজের ভয়ে নিজের আসল নাম গোপন রেখে লেখালেখি করতেন। অনেকে শেষ পর্যন্ত ব্লগ ছেড়ে দিয়েছেন স্বামী পরিবার সংসার, সন্তান টিকিয়ে রাখতে। সত্যের মাপকাটিতে ফেলে এটাকে অপরাধ প্রতারণা বলা যেতে পারে। তবে এদের কাছে তাদের মনের আকুতি মনে্র ভাব তাদের চিন্তা ভাবনা প্রকাশের আর কোন উপায় ছিলনা। যাদের এই সমস্যা ফেইস করতে হয় না তারা বড়ই ভাগ্যবান। অনেকে নাস্তিক হয়েছে তার সংসার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক পরে, মা বাবা স্ত্রী স্বামী সন্তান পরিবার সমাজের অজান্তে। এ যাতনা তারা কীভাবে অনুভব করবেন যারা বিশ্বাসের বিষে দংশিত হন নি?
আরেকটা কথা যা আপনি আকারে ইঙ্গীতে বলেই দিয়েছেন। অভিজিতের খুনের কারণ হিসেবে তার লেখা ও দর্শন ব্যতিত অন্য কোন উপকরণ যোগ করা প্রকারান্তরে ব্যক্তি অভিজিৎ ও তার লেখারই অবমূল্যায়ণ। বাংলাদেশের মিডিয়া পত্র পত্রিকায় ‘সাম্প্রদায়ীকতা, কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা (ধর্ম নয়, অন্ধ ধার্মিকতা) বিরোধী লেখাকে অভিজিতের খুনের কারণ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এ গুলো তো ফারাবীও চায়। অভিজিতের লেখা ধর্মের গলার ফাঁসি, তাই তারা মরনকামড় দিয়েছে বাঁচার জন্যে।
ভাল লেগেছে আপনার লেখাটি
@তানবীরা,
থ্যাঙ্ক ইউ।
বারবার আঘাত হানব এই অন্ধগোড়া ধার্মিকদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদেরকে বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় নিয়ে মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করে আসছি। এখন আরো বাড়িয়ে দিব। দাদা আপনি আমাদের সাথে আছেন থাকবেন আজীবন। আপনার চিন্তা চেতনা প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে দিব, এই আমাদের প্রতিজ্ঞা।
মনে পড়ছে বেশ কয়েক বছর আগে অভিজিৎ দা’রই একটি লেখার মন্তব্য অংশে ছদ্মনামে লেখা নিয়ে খুব শোরগোল হয়েছিল। প্রসঙ্গের বাইরে কথাবার্তা শুরু হওয়ায় উনি বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন। প্রথমে ছদ্মনামে লেখাকে সমর্থন করে হালকাচালে জবাব দিচ্ছিলেন। মাঝখানে কিছুটা দুষ্টুমি করে সবাইকে ট্র্যাকে ফেরাতে চাইলেন। কিন্তু এক সময় তর্কাতর্কি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাওয়ায় সত্যিকারের অভিভাবকের মতো জুনিয়র কয়েকজন ব্লগারকে রীতিমত ধমকে বিষয়টি শেষ করেছিলেন। আহারে.. খুব মনে পড়ছে।
অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বিষয়টি এখন অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক। কারন, দেখতে পাচ্ছি অনেকেই স্বনামে লিখতে শুরু করার চিন্তা করছেন। তাদের যুক্তি আছে। আছে আবেগ। শুদ্ধতম আবেগ। সে আবেগের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই আমি এ বিষয়ে আমার দ্বিমত প্রকাশ করছি।
স্বনামে লিখে পেছন থেকে চাপাতির কোপ খাওয়ার ঝুঁকি বেশী সংখ্যক মানুষের মাঝে বন্টিত হলে আপনাদের কি মনে হয় কোপাকোপি কমে যাবে? কিংবা আরও বেশী সংখ্যক মুক্তমনা মানুষকে ওভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখলে অনেক সাধারন মানুষের মধ্যে চেতনা আসবে? আমার কিন্তু মনে হয় কোনটাই হবার নয়। প্রথমটি হবে না কারন আপনারা তাদের স্বার্থে আঘাত করছেন, এবং তারা কোপ দেবার জন্য অনেক ছোটবেলা থেকে মানসিকভাবে তৈরী, এবং তাদের হাতে চাপাতি সাপ্লাই দেবার লোকের অভাব নেই, এবং সর্বোপরি একজনের জায়গায় দশজন বা একশজনের রক্তাক্ত অপমানিত নিঃস্পন্দ শরীরে তাদের কিচ্ছু যায় আসে না। আবার দ্বিতীয়টিও হবার কথা নয় অর্থাৎ সাধারন মানুষ বা তথাকথিত মডারেট ধার্মিকদের চেতনা আসবে না। গত কয়েকদিনের “হত্যাকান্ড সমর্থন করি না কিন্তু ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করাও ঠিক না” ধরনের কথাবার্তায় সেটা আশা করি পরিস্কার হয়েছে।
এই দ্বিতীয় দলটিকে নিয়েই একটু বিস্তারিত বলতে হয়। তথাকথিত মডারেট ধার্মিকরা মডারেট কারন তারা ধর্ম সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানে না। একদম সোজাসুজি বলে দিলাম। খেয়াল করে দেখুন, কথাটা ভুল নয়। মডারেটরা বলে, ধর্মের সমালোচনা করা ঠিক নয়, কারন তারা আসলে মনে করে, ধর্মে সমালোচনা করার মত কিছু নেই। চাপাতি-ধার্মিক আর মডারেট-ধার্মিকের মধ্যে দিনশেষে একটাই পার্থক্যঃ মডারেট ধার্মিকদের সৎসাহস নেই।
শুনতে খারাপ লাগবে- ওভারঅল বাঙালী সম্পর্কে বলছি, আমার বলতেও খারাপ লাগে- এমন অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত কুপমন্ডুক জাতির জন্য আর কোন গর্ববোধ আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। ভেড়ার পালের সাথে এই জাতির খুব বিশেষ পার্থক্য নেই। শখানেক ভেড়াকে স্রেফ একটা কঞ্চি হাতে নিয়ে একটা কিশোর ছেলে যেমন নিয়ন্ত্রন করতে পারে তেমনি ধর্মগ্রন্থের প্রচ্ছদটুকু দেখিয়ে এই জাতিকে যেদিকে খুশি সেদিকে চালানো যায়। তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সেই প্রচ্ছদপট পার হয়ে ভেতরে কী আছে সেটা জনসমক্ষে দেখিয়ে দেয়া।
তা আপনারা দেখাচ্ছেনও। এবং এ মুহূর্তে আরও বেশী সংখ্যক মানুষ সে কাজে এগিয়ে আসছেন, যেমন নাগরিক ব্লগ। অভিনন্দন তাদের। কিন্তু আমি দ্বিমত করছি দেখানোর পদ্ধতি নিয়ে।
১। পদ্ধতিটি কি আক্রমনাত্মক হবে? অলসভাবে পড়ে পড়ে ঘুমানো এই জাতিকে লাথি মেরে জাগানো হবে? সেভাবে তো অনেকদিন চেষ্টা করা হল। লাভ হল কতটুকু? মডারেটদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তরুন সমাজে আস্তিকতা হয়ে উঠছে নতুন ফ্যাশন। তাই, আক্রমন নয়, শ্লেষ নয়, অশ্লীলতাতো নয়ই। এমনকি কোন মন্তব্য না করে শুধু কিছু আয়াত আর হাদিস কোট করলেই কাজ হয়। সেসব আয়াত আর হাদিসগুলো চাপাতি-স্পন্সররা তুলে দিক জিহাদীদের কানে; আমরা তুলে দেব মডারেটদের কানে, চোখের সামনে, যত্রতত্র ছড়িয়ে দিয়ে দেখাবো ‘এই হচ্ছে আপনার ধর্ম। আপনি হত্যাকান্ড সমর্থন করেন না? আপনার ধর্ম কিন্তু করে। আপনি শান্তি চান? আপনার ধর্ম কিন্তু চায় না।’
সমীকরনটি খুব সহজ। ‘ধার্মিক’ মাইনাস ‘ধর্ম বিশ্বাস’ ইকুয়ালস ‘মানুষ’। তাই ধার্মিককে নয়, তার ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হানবো। ধার্মিক মাইনাস ধার্মিক মানে কিন্তু শুন্য। শুন্য দিয়ে কী হবে ভাই! মানুষ চাই, মানুষ।
২। কিন্তু এই এক্টিভিটি কিভাবে চলবে? স্বনামে নাকি ছদ্মনামে? মন্তব্য শুরু করেছিলাম এই ভাবনা থেকেই। কী হবে, যদি আত্মপ্রকাশিত আরও কয়েকজন মুক্তমনাকে আমরা হারাই? মডারেটরা নড়ে চড়ে বসবে? কক্ষনো না। অভিজিৎ রায়ই বলে গেছেন, ধর্মবিশ্বাস হচ্ছে ভাইরাস। এই ভাইরাস তার পোষকের সেন্স নষ্ট করে দেয়। অন্য সমস্ত অনুভূতি তলিয়ে গিয়ে থাকে শুধু ধর্মানুভূতি। তাই, ঐ ভেড়ার পাল তার চলার পথ অমন পরোক্ষ ধাক্কায় বদলাবে না। এদের হজমশক্তি অসাধারন। মুখে চুক চুক শব্দে আফসোস করতে করতে ঠিক হজম করে নেবে। কারন, ‘কীঁ দঁরকাঁর ধঁর্মের সঁমালোঁচনা কঁরার…’।
শত্রুসংখ্যা যখন অনেক অনেক বেশী হয়, তখন সম্মুখ যুদ্ধ হল হঠকারীতা; বীরত্ব নয় এবং লাভজনক নয়। তখন প্রয়োজন গেরিলা যুদ্ধ। শুট এন্ড রান। একাত্তরের উদাহরন দেখুন। মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে চোরাগোপ্তা হামলা করে করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আগে যথেষ্ঠ বিপর্যস্ত করে নিয়েছে তারপর করেছে সামনা সামনি আক্রমন। তাহলে এখন কেন আমরা সম্মুখযুদ্ধ চাচ্ছি?
অভিজিৎ রায় তার দায়িত্ব শেষ করেছেন (মৃত্যু শব্দটি আমি তার বেলায় কখনো ব্যবহার করবো না)। স্বইচ্ছায় তো শেষ করেন নি। এবং কখনো চাননি এমন পরিনতি তার প্রিয় কোন মানুষের হোক। আমরাও চাই না। মুক্তমনা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে ঠিক; তবু সক্ষম যোদ্ধার সংখ্যা এখনো কি খুব একটা বেশী? যাদের আছে বিপুল পাঠাভ্যাস, নতুন চিন্তার ক্ষমতা, ক্ষুরধার লেখনী, এমন মানুষ কি এখনও যথেষ্ঠ সংখ্যায় আমরা পেয়েছি? না বোধহয়। তাহলে কেন এই হঠকারীতা! আর কতকাল আমরা আমাদের চোখের পানি দিয়ে মডারেট ধার্মিকদের বিনোদন দিয়ে যাবো!! নপুংসকদেরকে সম্মুখযুদ্ধের সম্মান আমরা কেন দেব?
বরং আসুন, আমরা শঠে শাঠ্যং নীতি গ্রহন করি। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে এসে যারা আক্রমন করে তাদেরকে অন্ধকারে থেকেই আমরা অস্ত্র ছুড়বো। নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে মজা দ্যাখে যারা তারা আমাদের অস্ত্রগুলোই দেখবে কেবল। মডারেটদের চিরকালীন মধ্যবিত্ত মনন একসময় নিজেকে ধার্মিক বলতে কুন্ঠিত হবে। সেই সময়টা আসার আগ পর্যন্ত স্বনামে লেখালেখি উচিত হবে না বলেই মনে হয়।
শুধু ছদ্মনামে লেখা কেন, আমিতো বলবো এমন ছদ্মনাম নিন যেটা দেখে ছদ্মনাম বলে মনে হবে না। অর্থাৎ ‘সনাতন পাঠক’ ধরনের নাম নয়, বরং ‘শওকত ওসমান’ ধরনের নাম নিন। ছদ্ম পরিচয় দিন। প্রোফাইল পিকচার থেকে নিজের ছবি সরিয়ে দিন। শুয়োরের সামনে সততার কোন মূল্য নেই। নপুংসক দর্শককে দলে পেতে হলে বীরত্ব নয় বিজয় চাই। শত্রুশিবিরে ভাঙন চাই।
তেমন দিন আসুক; আমরা বিলবোর্ডে বিশাল কার্টুন এঁকে বিজয় উৎসব করবো। সবাই বড় বড় করে নিজের নাম লিখে দেব সেখানে। তারপর না হয় সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে টিএসসির সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বহুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া কোন অভিজিতের কথা মনে করে খুব খানিকক্ষন কাঁদবো।
@নাফিজ আরেফিন,
এই অসময়ে এই বিতর্কটা শুরু করা আমার সঠিক হয় নি, সেই বিষয়টা প্রথমেই পরিষ্কার করে নেই। এ জন্য দু;খিত এবং লজ্জিত আমি। অনেকের মন্তব্যের সাথে দ্বিমত থাকার পরেও আমি গত দুইদিনে নিজে কোনো যুক্তিতর্কের অবতারনা করি নি, বিতর্কে লিপ্ত হই নি। এখনো যেটা করছি, সেটা বিতর্কের চেয়ে, কিছুটা আত্মপক্ষ সমর্থনই বলতে পারেন।
ছদ্মনাম, ছদ্মপরিচয়, পরিচয়হীনতা ইত্যাদি নিয়ে মুক্তমনায় আগেও বহু বিতর্ক হয়েছে। এবং তার প্রায় সবগুলোর সাথেই আমি মূলত দায়ি ছিলাম। ছদ্মনামের বিষয়টাতে আমার অবস্থান যতখানি জোরালো, অতখানি জোরালো অবস্থান খুব অল্প সংখ্যক মানুষেরই আছে বলে মনে হয়। সবাই সাধারণত এসে বলার চেষ্টা করেন যে, মূলত নিরাপত্তার কারণে লোকে ছদ্মনাম নেয়, ছদ্মনাম না নিলে এই বৈরি পরিবেশে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টাতে একমত আমি। লেখালেখির কারণে কেউই চাপাতির কোপ খাপ, এটা নিশ্চয়ই আমাদের কারো কাম্য নয়। নিরাপত্তার উপরে আর কিছু হয় না। বেঁচে থাকলে আপনি একদিন হয়তো লিখতে পারবেন, মরে গেলে তো সব শেষ।
আমি যখন ছদ্মনামী বা ছদ্মবেশীদের কথা বলি, তখন আমি মূলত নিরাপত্তাজনিত কারণে ছদ্মনাম নেওয়া লোকদেরকে বুঝাই না, বুঝাই অল্প কিছু সংখ্যক অজ্ঞাত, পরিচয়হীন লেখকের কথা। এরা পরিচয়হীনতার সুযোগ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই মন্তব্য করে যায়, লিখে যায়। বাস্তব জীবনে তারা নিজেরা কখনোই সেই বক্তব্যের দায় নেবার সাহস করে না, কিন্তু এখানে পরিচয় গোপন থাকার সুযোগটা নিয়ে সেই মন্তব্য করে যাচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে যে, তাদের সেই সব বক্তব্যের দায়ভার মুক্তমনাকেই নিতে হয়।
এই লোকগুলোর কেউ অল্পদিন অন্তর্জালে আছে ,কেউ দীর্ঘদিন। এরা মূলত অশরীরী প্রেতাত্মা, কেউ-ই জানে না যে তারা কারা। এরা যেহেতু শত্রু, বন্ধু, সবার কাছ থেকেই অজ্ঞাত অবস্থায় আছে, এদের নিরাপত্তার চাদর পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত। বিপদের কোনো ভয় তাদের নেই। যেহেতু তাদের কর্মকাণ্ডের দায়ভার তাদের নিতে হয় না, কাজেই ঘৃণার বিষ উগরানো তাদের পক্ষে সহজ। এখানে মুহাম্মদকে কুতসিত একটা গালি দিয়ে সেই একই লোক হয়তো মসজিদ পানে ছুটছে নামাজে ইমামতি করার জন্য। তার মেহেদি মাখানো নুরানি দাঁড়ি দেখে কার সাধ্য আছে বলা যে, সে হামাসের মতো লক্ষ্যবস্তুতে মিজাইল ছুড়ে দিয়ে এসেছে। এখন সেই মিজাইলের কারণে যখন ইজরায়েলি সেনা অভিযান শুরু হয়েছে, তখন সে চলে গেছে নিরাপদে আশ্রয়ে, আর বেচারা নিরীহরা মারা যাচ্ছে অকাতরে।
কোপাকোপি কমবে না, কিন্তু স্বনামে সবাই লিখলে, আমি আমার গায়ে যে চাপাতির আঘাত পাবো তা শুধু আমার ভাগেরটাই। এখন আপনি বেনামীতে বলে চলেছেন, আপনাকে তারা পাচ্ছে না, কাজেই আপনার ভাগেরটাও আমাকেই বহন করতে হচ্ছে। এটা কিন্তু আনফেয়ার। আপনি সাগরে তুফান তুলে নিরাপদে বসে ঘরে লুডু খেলছেন, আর আমি চাপাতির আঘাত পেয়ে রাজপথে লুটোচ্ছি, সেটা তো ঠিক না।
মাত্র কদিন আগে সচলায়তনে মামুনুর রশীদ নামে এক ভদ্রলোক একটা লেখা লিখেছেন অভিজিৎ রায়রা কেন খুন হয়? দায় আমার শিরোনামে একটা লেখা লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেনঃ
এরকম উপলব্ধি সবার হলে, আমাদের কম দায়িত্ব নিতে হতো।
গেরিলা যুদ্ধে আপনারা যেতে চাইলে যেতে পারেন। আমি যুদ্ধের খোলা ময়দানেই থাকবো। এই ফরিদ আহমেদ তার গলায় চাপাতির কোপ লাগার আগেও, নিজের নামেই তার কথাগুলো বলে যাবে। একটাই মাত্র স্বল্পস্থায়ী জীবন, চাপাতির কোপে গলাটা না গেলেই যে অনন্তকাল বেঁচে থাকবো, সেরকমও কিছু না। যে জীবন এমনিতেই একদিন যাবে, সেটাকে সামান্য কটা দিন বেশি বাড়ানোর জন্য কাপুরুষতার কলংকে ঢেকে দিতে রাজি নই আমি।
@নাফিজ আরেফিন,
@নাফিজ আরেফিন,
একজন সুযোগ্য অভিভাবকের শ্রেষ্ট উদাহরণ হলেন অভিজিৎ দা’। অনেক উথাল-পাতাল ঝড় তুফান বয়ে গেছে মুক্তমনা পরিবারের উপর দিয়ে, অভিজিৎ দক্ষতার সাথে সবসময় বাঁচিয়ে রেখেছেন তার মুক্তমনাকে সমুহ বিপদ থেকে। যেদিন হতে প্রথম পরিচয় হয় সেদিন হতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটাই কথা তার কাছে থেকে শুনতাম- ‘আপনি মুক্তমনায় লিখুন’। অভিজিতের সাথে শেষ কথা হয় ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফেইসবুকে। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘দাদা, মুক্তমনায় নতুন একটি লেখা এসেছে, লেখাটি বহু পুরাতন চর্বিত চর্বণ ছাড়া কিছু নয়। লেখককে চেনা চেনা লাগে মুক্তমনায় এ রকম লেখার প্রয়োজন নেই’। তিনি বলেছিলেন- ‘ধন্যবাদ বিষয়টি নজরে আনার জন্যে, আমি দেখছি’। অভিজিৎ মারা যান ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। এর মাস খানেক আগে থেকে কথা উঠলেই একজন অভিভাবকের মত বলে উঠতেন ‘কোন অজুহাতেই কলম থামানো চাইনা, আপনি মুক্তমনায় লিখুন’। বহুদিনের অভিমান ছেড়ে গত মাসে তারই কথায় আবার লিখলাম-‘বিবর্তনের বাঁকে বাঁকে’। অভি খুশী মনে একটি মন্তব্য করলেন। খুব খুশী হতেন আমার লেখায় একটু বিবর্তনবাদ, একটু সমকামিতা, একটু এল জি বিটি মানুষের (অভি, হিজড়া শব্দ ভাল পেতেন না) উল্লেখ পেলে।
অভিকে যারা ইসলাম বা মুসলিম বিদ্বেষীরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা সেই কাজটি শুরু করেছিল, যে দিন থেকে অভিজিৎ ধর্ম নিয়ে লেখা শুরু করেছেন। সেটা ২০০২ সাল, প্রায় তেরো চৌদ্দ বছর পূর্ব থেকে তারা শুরু করেছিলেন, অভির মৃত্যুর পরেও আজ অবদি করে চলেছেন। সেই সময়ের অভির উপর আনিত অভিযোগ, তার লেখা ও মন্তব্যের স্ক্রিনশট নিয়ে নিয়ে কী ভাবে দুনিয়ার সামনে তাকে একজন ভয়ংকর ইসলাম ব্যাশার, মুসলিম বিদ্বেষী, বেনামী ছদ্ধনামী একজন হিন্দু মৌলবাদী হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, যদি সময় ও শরীরে কুলায় একদিন দেখাবো নিশ্চয়। সেই ২০০২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত একটি দিনের জন্যেও অভিজিত তাদের চক্ষুর আড়ালে ছিলেন না। সময়ে সুযোগে অভিজিতের উপর আনিত অভিযোগের, মিথ্যা প্রচারণার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছি অন্য ব্লগে। তাতে করে মডারেইট মুসলিমদের কাছ থেকে অভির পা চাটা গোলাম, মুক্তমনার দালাল সনদ পেয়েছি।
বন্যা, ধর্মের সমালোচনা করে কিছু লিখতেন না, মুক্তমনাকে বৈজ্ঞানিক প্লাটফর্ম রূপে দেখতে চেয়েছিলেন কথা সত্য কিন্তু তার লেখা-‘আমরা এলাম কোথা হতে’ ধর্মবাদীদের বাবা আদমকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিতে যথেষ্ট। তারা শুধু এই একটি লেখার কারণে তার উপর ক্ষ্যাপা ছিল। তাকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছে, কুৎসিত মন্তব্য করেছে। মুক্তমনা যদি শুধুই বিজ্ঞানের প্লাটফর্ম হতো, কিংবা অভি যদি মুক্তমনার জন্ম না দিতেন, অথবা মুক্তমনায় অন্য কেউ যদি কোনদিন ইসলামের সমালোচনা, মুহাম্মদের সমালোচনা না করতেন তবুও অন্ধকারের বাসিন্দারা অভিকে খুন করতো। কারণ অভির হাতে যে আলো ছিল, মুক্তমনার কারো হাতে সেই শক্তিশালী আলো ছিলনা। ২০০২ সালে তিনি একা একাই লড়ে চলেছিলেন খুনী নরপশু হায়েনাদের সাথে, আমার মত অনেকের তখন লেখালেখির জগতে জন্মই হয় নি।
কে কোন নামে, কোন অবতারে লিখছে, সেটা নিয়ে না ভেবে বরং এটাই নিশ্চিত করা উচিত যে মুক্তমনা যেন কারুর বিরুদ্ধে, কোন জাতিগোষ্ঠি বা দেশের বিরুদ্ধে ঘৃণার প্লাটফর্ম হিসাবে ব্যবহৃত না হয়। আস্তিক মৌলবাদের উত্তর দিতে হবে। কিন্ত সেটা করতে নাস্তিকরাও সব দোষ ইসলামের এই এপ্রোচ নিলে-সেটাও অবৈজ্ঞানিক হবে।
আর ফরিদ ভাই এর একটা পয়েন্টের সাথে আমি একমত নয়। কেও যদি মুক্তমনা নিয়ে রটিয়ে থাকে, সে দায় কারুর না। রটনার দায়,যারা রটায় তাদের। সেটা ধর্মীয় মৌলবাদিরা এমনিতেও থামাবে না। মিথ্যে প্রচার ওদের একমাত্র সম্বল-কারন ওরা ধার্মিক। স্বাভাবিক বুদ্ধি, সাধারন নৈতিকতা লোপ পেলে লোকে ধর্মে ঢোকে। যে সৎ তার ধর্মে কোন প্রয়োজন নেই। ধর্মের প্রয়োজন তার যে অসৎ।
আকাশ মালিক ভাই,
ওরা অনেকেই বিজ্ঞানী হয়েছে বলে গর্ব করে বটে…তবে কাপড়ের নীচের দেহটা মোটেও মানুষ হয়নি…..সেটা বুঝতে পারেনা….!
ধন্যবাদ ভাই আকাশ মালিক। একখানা উপযুক্ত পোষ্ট হয়েছে।
যৌক্তিক বিশ্লেষণ না করে যদি একজন বিশ্বাসীর বিশ্বাসকে অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হয় তবে সেই বিশ্বাসী প্রতিক্রিয়াশীল আচরন করবে।সে তখন যুক্তি বোঝার চেষ্টা না করে ঘৃণা করতে শুরু করবে। যারা অভিজি্ৎ রায়ের লেখা পড়েছেন তারা জানেন তিনি বিজ্ঞানের আলোকে ধর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন।সেখানে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ কিংবা ঘৃণা ছিলনা।কিন্তু এখন অনেক ছদ্মবেশী নাস্তিক অভিজিৎ রায়কে মুসলিম বিদ্বেষী প্রমান করার চেষ্টা করছে।তারা মানুষের কাছে ভুল ধারনা পৌঁছে দিচ্ছে।
ফরিদ আহমেদ ভাই .
াাআপনার লেখাটির সংগে পুরোপুরি একমত হতে পারছি না । আপনার থেকে উত্তর জানবার জন্য আমার মনে দু’টি প্রশ্ন উদয় হয়েছে । আমি মনে করি সমাজের প্রতি গোত্রেই তিন ধরণের মানুষ বসবাস করে – সহনশীল ,মধ্যপন্থি ও বিদ্বেষী ।
প্রশ্ন দু’টি
১, মানুষ ধর্ম বিদ্বেষী কখন হয় ?
২, ছদ্মনাম ধারণ করে কখন ?
কারণ ছদ্ধানামধারী ব্যাক্তিগণ জানেন ,আমাদের সমাজে ও আমাদের আশে পাশে বিচরণ করছেন ভিন্নমত সহ্য করার ক্ষমতাহীন হিংস্র মানুষ গুলো ।
বরং বলতে পারেন ,বিশেষ একটি ধর্মকে ঘায়ের করার জন্য নাস্তিকতাকে ঠাল হিসাবে ব্যাবহার করে তারা ।
আমাদের কিছু সত্য কথনের প্রয়োজন আছে। অভির মৃত্যুর পিছনে মুক্তমনায় পরিচয় গোপন করে যারা ঘৃণার চাষ করেছে, তাদের দায়কেও অস্বীকার করা যায় না। আমরা এই প্লাটফর্মটাকে তৈরি করেছিলাম নৈর্ব্যক্তিকভাবে ধর্মকে কাটাছেড়া করার জন্য, এর অপ্রয়োজনীয়তাকে সবার সামনে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরার জন্য। আমাদের সেই সরল ইচ্ছাটাকে গরলে ভরিয়ে দিয়েছিলো কিছু লোক। এর দায়ভার কাঁধে নিয়ে আজ অভিকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে হয়তো আমাকেও দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে একইভাবে। অথচ ঘৃণার চাষ যারা করলো, তারা ঠিকই নিরাপদে থেকে গেলো পরিচয়হীনতার অন্ধকারে। মুক্তমনা থেকে চেরি পিক করে বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের স্ক্রিনশট নিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অন্তর্জালের প্রতিটা কোণায়। মোটামুটি সফলভাবে প্রমাণ করে ফেলা হয়েছে যে, অভিজিৎ রায় ছিলেন একজন ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক। এর আড়ালে কেউ দেখলো না যে, শুধুমাত্র ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধেই নয়, বছরের পর বছর একজন ফরিদ আহমেদ, একজন অভিজিৎ রায়, একজন বন্যা আহমেদ, এই সব ছদ্মনামী বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধেও লড়েছে সমানতালে।
@ফরিদ আহমেদ,
এটাই সঠিক পথ। ধর্মের অনুসারীদের কাছে আগে পৌঁছতে হবে; ব্যঙ্গবিদ্রূপ আর বিদ্বেষ নিয়ে এগুলে তা শুরুতেই বিরুপ মনোভাব, ক্ষোভ আর সন্দেহের জন্ম দিতে পারে, যা আলোচনার মূল উদ্দেশ্যকে বিঘ্নিত করবে।
আপনাদের ইচ্ছায় কোন ভুল ছিল না; আবার অন্যদিকে বিদ্বেষপূর্ণ লেখাগুলো মুক্তমনায় প্রকাশিত হয়েছে, সংরক্ষিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কাজেই ধরে নিচ্ছি এগুলো মুক্তমনার নীতিমালা মেনেই লেখা হয়েছে। মুক্তমনায় প্রকাশিত লেখার দায়ভার লেখকের; লেখকের মতামত পুরো ব্লগের বা এর প্রতিষ্ঠাতার মতামত হিসাবে চালানোর অবকাশ নেই। যারা অভিজিৎ-র মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের এই বোধটুক নেই বলেই বিশ্বাস। তবে বিদ্বেষপূর্ণ লেখাগুলো প্রকাশিত না হলেও যে মৌলবাদীরা কোন ছাড় দিত একথা বলা যায় না। এরা অন্ধকারের জীব, অতি সামান্য কারনেই এরা মানুষের প্রাণ নিতে সিদ্ধহস্ত।
বুঝতে পারছি, নিকটজন হারানোর কষ্ট থেকেই এই মন্তব্য। বিভিন্ন কারণে আমি স্বনামে লেখার পক্ষে, কিন্তু দেশে-বিদেশে যা অবস্থা তাতে অবস্থান বিচারে স্বনামে বা ছদ্মনামে লেখার বিষয়টি লেখকের উপর ছেড়ে দেয়াই বোধহয় ভাল।
আমরা যারা মুক্তমনার পাঠক তারা একথা জানি। সমস্যা হচ্ছে যারা ‘চেরি পিক’ করতে অভ্যস্ত তাদের নিয়ে। তবে যাই ঘটুক, আপনার চেয়ে কেউ ভাল জানেনা যে এখন একসাথে থেকে এগিয়ে যাওয়ার সময়। একজনকে হারিয়েছি আরেকজনকে হারাতে চাই না। আপনাদের পাশে আছি।
@ফরিদ আহমেদ,
যথার্থ বলেছেন। ছদ্মনানের আড়ালে নিজেকে আড়াল করলেও আমার মনে হয় কোথাও না কোথাও তাদের পরিচয়টা স্পষ্ট থাকাটা যৌক্তিক।
@কেশব কুমার অধিকারী,
এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ছদ্মনাম নিয়ে লেখার পক্ষেও যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। সমস্যা হয় তখনই, যখন কেউ মুক্তমনার আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় নিজের এমন কোন লুকানো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুক্তমনাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন । ছদ্মনাম/পরিচয়ের আড়ালে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া তুলনামূলক-ভাবে সহজ। মডারেটরদের কৃতিত্ব প্রাপ্য, মুক্তমনায় প্রকাশিত নিকট অতীতের লেখাগুলো পড়ে মনে হয় নি যে এটি একটি গুরুতর সমস্যা।
আপনার লেখার অপেক্ষায় ছিলাম। ধন্যবাদ!
খুবই সত্যি কথা। অনেকেই ধর্মের সমালোচনা করেন, কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে সেই সমালোচনা ব্যক্তিগত বিদ্বেষের প্রকাশ হয়ে দাঁড়ায়, যা সমালোচনার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করতে পারে।
ধর্ম-বিশ্বাসীরা প্রায়ই বিজ্ঞানকে নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেন। তারা বলেন যে বিজ্ঞানের তথ্য সবসময় ধ্রুব নয়, এর পরিবর্তন হয়। তারা বোঝেন না যে এটা আসলে বিজ্ঞানের শক্তি। যুক্তি আর পরীক্ষালব্ধ ব্যবহারিক জ্ঞান দিয়ে যে কেউ বিজ্ঞানের তথ্যকে যাচাই-বাছাই করতে পারেন বা পালটে দিতে পারেন; এজন্য কেউ দা হাতে মারতে আসবে না, কারণ দেব-দানোর রূপকথায় অন্ধ-বিশ্বাস নয়, যুক্তি-নির্ভর সত্য প্রতিষ্ঠাই বিজ্ঞানের লক্ষ্য।
এই অন্যায় ধারণা অবশ্য কেবল মুসলমান দেশেই প্রচলিত নয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশেও সম্প্রতি এনিয়ে বিতর্ক চলছে, হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন।
অভিজিৎ মুক্তমনা নামের এই অনন্য প্ল্যাটফর্মটি আমাদের উপহার দিয়েছেন। তার সমমনারা এর লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখুক এই কামনা করি।
সমমত ও সমব্যাথি । কে যেনো আছে , কে যেনো নেই
ধন্যবাদ আকাশ মালিক ভাইকে