আগের পোস্টে বলা হয়েছিল, “আইনস্টাইনের তত্ত্বের সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে সমন্বিত করে একটি একীভূত তত্ত্ব গঠন করতে হলে আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বল, আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কে ভালমতো জানতে হবে”। এই পোস্টে প্রথম মৌলিক বল, “মহাকর্ষ” আবিস্কার ও চারটি মৌলিক বলের পরিচিতি থাকবে।
।এক।
ইংল্যান্ড, ১০৬৬ সাল । ব্রিটিশ ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর। নরমাল্যান্ডের ডিউক, উইলিয়াম দ্যা কনকিউরের সৈন্যদল ইংল্যান্ড আক্রমণ করেছে। যুদ্ধের সময় এক অদ্ভুত দর্শন ধূমকেতু যুদ্ধক্ষেত্রের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। রাজা হ্যারোল্ডের ভীত স্যাক্সন সৈন্যদের পরাজিত করার এইতো সুযোগ। মুহূর্তের মধ্যে রাজা হ্যারোল্ডকে পরাজিত করে নরমানরা ইংল্যান্ড দখল করে নেয়। প্রতিষ্ঠিত হয় আধুনিক ব্রিটিশ রাজতন্ত্র।
কিন্তু ইংল্যন্ডবাসির মনে তখন একটিই প্রশ্ন, কোথা থেকে আসে এই রহস্যময় ধূমকেতু ? কোথায়ই বা যায় ? ধূমকেতুর আগমন মানে কি একটি রাজ্যের পতন ? তখন কেউই এই প্রশ্নের উত্তর জানত না। শুধু এতটুকুই জানা ছিল, একটি ধূমকেতু মানে এক ভয়ংকর অশুভ বার্তা।
চিত্র: ধূমকেতুর আগমনে ভীত ইংল্যান্ড-বাসী
যে অশুভ ধূমকেতু এসে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সূচনা করেছিল, সেই একই ধূমকেতু আবারও ১৬৮২ সালে লন্ডনের আকাশে দেখা যায়। ইউরোপ-বাসির মনে আবারও ভয়; এবার না জানি কি হয় ! কারণ ততদিনে মানুষের মনে এই ভয় ঢুকে গিয়েছিল- একটি ধূমকেতুর আগমন মানে একটি রাজার পতন। তবে ইতিমধ্যেই গ্যালিলিও, কোপার্নিকাসের প্রভাবে অনেকেই মহাকাশের বস্তুদের আচরণ নিয়ে উৎসাহী হয়ে পরেছে। তেমনি একজন ছিলেন এডমন্ড হ্যালি। হ্যালি ছিলেন ইংল্যান্ডের একজন বিশিষ্ট ভদ্রলোক, নামকরা ধনাট্ট ব্যক্তি ও শখের জ্যোতির্বিদ। হ্যালি এই ধূমকেতু সম্পর্কে কৌতূহল দমন করতে পারলেন না। হ্যালির এক বন্ধু ছিল ক্যামব্রিজের বৈজ্ঞানিক আইজ্যাক নিউটন। বন্ধুত্ব তখনও অতটা গভীর না। মাঝে মাঝেই যোগাযোগ হয়। হ্যালি চিন্তা করলেন নিউটনের কাছে গেলে অবশ্যই কিছু জানা যাবে । যেমন চিন্তা তেমন কাজ। একদিন ক্যামব্রিজে গিয়ে হাজির হলেন বন্ধু নিউটনের কাছে। কোন ভূমিকা না করে প্রথমেই হ্যালি বলতে শুরু করলেন- নিউটন , কেউই জানে না এই ধূমকেতু আসলে কি ? কোথা থেকে আসে আর কোথায়ই বা যায় ? কি এদের গতিপথ ! হ্যালি যথেষ্ট উত্তেজিত থাকলেও নিউটন খুব শান্তভাবে জবাব দিলেন, “ ধূমকেতুরা আসলে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথ মেনে সূর্যের চারদিকে ভ্রমণ করে চলেছে ” । হ্যালি অবিশ্বাসের সাথে বললেন “কিন্তু কোন শক্তির প্রভাবে এরা ঘুরে চলেছে তা আমরা কেউই জানি না !” । এবারও নিউটনের শান্ত উত্তর, “ ধূমকেতু সহ প্রতিটি গ্রহই আমার আবিষ্কার করা মহাকর্ষ বলের ব্যাস্তবর্গীয় নিয়ম মেনে তাদের কক্ষপথে ঘুরে চলেছে। আর আমি আমার নিজের আবিষ্কার করা দূরবীক্ষণ দিয়ে বিগত ২০ বছর ধরে এই ধূমকেতুর কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করছি। প্রতি রাতেই আমি দেখি, আমার গণিতের নিয়ম মেনে এটি একটি কক্ষপথে ছুটে চলছে, ইচ্ছে করলে তুমিও পরীক্ষা করে দেখতে পার”।
নিউটনের কথা শুনে হ্যালি তখন বুঝতে পারলেন, অন্তত একজন মানুষ এই স্বর্গীয় বস্তুটির রহস্য ভেদ করতে পেরেছে। আর প্রতি রাতেই তার গণনা করা পথ দিয়ে এরা চলাচল করে কিনা, সেটিও বিগত ২০ বছর ধরে পরীক্ষা করে দেখছে। হ্যালির কাছে এটি ছিল অসম্ভব এক কাজ। হ্যালি তাই আবারও প্রশ্ন করল তুমি একটি কিভাবে পারলে? নিউটন এবার কিছুটা অধৈর্য হয়ে উত্তর দিলেন, “ কেন ? আমি হিসেব করেছি ” ।
নিউটনের সব কাজ দেখার পর হ্যালি নিউটনকে সম্ভবত বলেছিল, “ ঈশ্বরের দোহাই, তুমি কেন এই আবিষ্কার এখনো প্রকাশ করনি ?” । নিউটন হ্যালিকে বুঝিয়ে বলেন, “আমি যে ক্যালকুলাস ও মহাকর্ষ বলের সূত্র আবিষ্কার করেছি সেগুলোকে সামারাইজ করা অনেক সময় ও অর্থের ব্যাপার। আমি এত সম্পদশালী ব্যক্তি নই যে সবকিছু বাদ দিয়ে এগুলিকে প্রকাশ করার জন্য কাজ করতে পারব ”। হ্যালির উত্তর ছিল, “আমি একজন ধনী ব্যক্তি, তুমি যে মহান আবিষ্কার করেছ তার জন্য সমস্ত খরচ আমি বহন করব। তুমি অবশ্যই এই আবিষ্কার প্রকাশ করবে ” । পরে হ্যালির ক্রমাগত অনুরোধে নিউটন মহাকর্ষ বল ও ক্যালকুলাস সংক্রান্ত সবকিছুর সুন্দর বর্ণনা দিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। বইটি প্রথম ল্যাটিন ভাষায় প্রকাশ করা হয়। নিউটন বইটির নাম দেন, “Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica.”।বইটির ইংরেজি শিরোনাম ছিল, “Mathematical Principles of Natural Philosophy”। বলা হয়ে থাকে মানব জাতি আফ্রিকা ত্যাগ করার পর এই বইটি আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা। এই একটি বই মানব জাতির ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে। নিউটন তার বইয়ে গতি বিষয়ক তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন। এই গতিসূত্রের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে সূচনা হয় বলবিদ্যা বা মেকানিক্সের। আর শুরু হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন। এক কথায়, মানব জাতির গতিপথ পাল্টে দেবার জন্য এই একটি বই’ই যথেষ্ট ছিল।”
চিত্র: নিউটনের লেখা যুগান্তকারী গ্রন্থ, “ প্রিন্সীপিয়া”
নিউটনের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার সমাজ ও রাষ্ট্রের সবকিছুকেই প্রভাবিত করেছিল। শিল্পচর্চা থেকে আইনকানুন সবই। নিউটনের এই আবিষ্কারে সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আঠারো শতকের কবি অ্যালেকজান্ডার পোপ লিখেছিলেন:
Nature and nature’s laws lay hid in the night,
God said, Let Newton Be! And all was light.
হ্যালি এই ধূমকেতু নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যান। অনেক পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে তিনি দেখতে পান এই একই ধূমকেতুটি ১০৬৬ পরও ১১৪৫, ১২২২, ১৩০১, ১৩৭৮, ১৪৫৬, ১৫৩১ ও ১৬০৭ সালে দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ঘোষণা করেন এই ধূমকেতুটি আবারও ৭৬ বছর পরে দেখা যাবে। তার নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় হ্যালির ধূমকেতু। তার করা ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে ৭৬ বছর পর ধূমকেতুটি আবার দেখা গেলেও তিনি তার ১৭ বছর আগেই মৃত্যু বরন করেন।
।দুই।
নিউটনের মহাকর্ষ আবিষ্কার নিয়ে অনেক রকম গল্প প্রচলিত আছে। সবচেয়ে প্রচলিত গল্প হল, নিউটন একদিন বাগানে বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, আর তার সামনেই ধুপ করে একটি আপেল মাটিতে পরে। আর তিনি প্রশ্ন করেন, আপেলটি কেন মাটিতে না পরে ঝুলে রইল না ? এভাবেই তিনি মহাকর্ষের সূত্র আবিষ্কার করেন। অনেকে আবার একধাপ এগিয়ে আপেলটিকে নিউটনের মাথায়ই ফেলে দেন। যেন আপেলের গুঁতো খেয়ে নিউটনের মাথা খোলে। তবে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রেই আপেলের এই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় না। বরং বেশিরভাগ নির্ভরযোগ্য সূত্রই বলে গল্পটি একদম বানোয়াট।
১৯৬৫ সালে কথা, নিউটন তখন ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। এসময় পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে প্লেগ মহামারী শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হয়ে গেলে নিউটন তার গ্রামের বাড়ি উলসথ্রোপে(Woolsthrope) চলে যান। নিউটনের হাতে তখন অনেক সময়। ছুটির এই পুরোটা সময় জুরেই তিনি নানা রকম পরীক্ষা করে কাটান। পুরো দেড় বছর সময় তিনি নিজের মত করে গবেষণার কাজ করতে পেরেছিলেন। এসময়ই মহাকর্ষের বিষয়টি তার মাথায় আসে। অনেকেই মনে করেন নিউটনের জন্য এই অবসর সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্লেগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়য় ছুটি না থাকলে তিনি হয়ত এতটা সময় নিবিষ্ট মনে ভাবার সময় পেতেন না। আর হয়ত এই মহাকর্ষের নিয়ম থেকে আমরা আরও কয়েক শতাব্দীকাল বঞ্চিত থাকতাম।
এই দীর্ঘ অবসর সময়ে নিউটন অভিকর্ষ বল নিয়ে চিন্তা করছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কোন বস্তুকে উপরে ছুড়ে দিলেও এটি আবার মাটিতে ফিরে আসে কারণ পৃথিবী অবশ্যই এই বস্তুগুলোকে আকর্ষণ করে। নিউটন আরও বুঝতে পেরেছিলেন শুধু পৃথিবীই বস্তুগুলোকে আকর্ষণ করেনা, বরং বস্তুগুলোও পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু নিউটনের কাছে প্রশ্ন ছিল আপেলের মত বস্তু যদি মাটিতে পরে যায়, তাহলে চাঁদও কি সবসময় পড়ছে ? উত্তর হল হ্যাঁ, চাঁদও আপেলের মত সবসময়ই পড়ন্ত অবস্থায় আছে। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে একটি গোলাকার কক্ষপথের ভিতর সবসময়ই পৃথিবীর উপর পড়ছে। কিন্তু এটি পৃথিবীতে আঘাত করছে না কারণ এর উপর একটি বল কার্যকর রয়েছে [1]।
নিউটন হিসেব করে দেখলেন, যদি এই বল ব্যাস্তবর্গীয় নিয়ম মেনে চলে তাহলেই শুধুমাত্র এরকম কোনকিছুর চারপাশে কেন্দ্র করে আবর্তন করা সম্ভব। সহজ করে বললে বলা যায়, কোন বল যদি এমন হয় যে- দূরত্ব দ্বিগুণ করলে বল চারভাগের একভাগ হয়ে যাবে, দূরত্ব তিনগুণ করলে বলের পরিমাণ নয়ভাগের একভাগ হয়ে যাবে, শুধুমাত্র তাহলেই এরকম কোন কক্ষপথ মেনে চাঁদ পৃথিবীকে আবর্তন করতে থাকবে। তবে এই হিসেব করা কিন্তু এত সহজ ছিল না। সেকালের প্রচলিত গণিতের সাহায্যে কোনভাবেই এই গণনা করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু নিউটনকে তো এই বলের রহস্য ভেদ করতেই হবে। তাই তিনি তার নতুন আবিষ্কার করা বলের হিসেব করার জন্য গণিতের এক নতুন শাখার সূচনা করলেন। গণিতের এই শাখার নামই ক্যালকুলাস। ভাবতে অবাক লাগবে, আজকের দিনের শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে প্রথম এই ক্যালকুলাসের সাথে পরিচিত হয়। আর নিউটন ছাত্র অবস্থায়ই এমন একটি জটিল গণিত শাখার সূচনা করেন।
চিত্র: মহাকর্ষ বলের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন ।
।তিন।
নিউটন তার বইয়ে যে নিয়মগুলো উল্লেখ করেছিলেন, তা শুধু পৃথিবীতে অবস্থিত কোন বস্তুর জন্যই নয়, বরং মহাবিশ্বের সকল বস্তুই এই নিয়মগুলো মেনে চলে। তিনি তার বই শুরু করেছিলেন তিনিটি নিয়ম বর্ণনা করার মধ্য দিয়ে। কোনও গতিশীল বস্তু কেমন আচরণ করবে এই নিয়মগুলো থেকে তার সবই গণনা করা যায়। প্রথম নিয়মে নিউটন বলেন, প্রতিটি বস্তুই তার অবস্থা ধরে রাখতে চায়; স্থির বস্তুকে কোন বল প্রয়োগ না করা হলে সে চিরদীন স্থিরই থাকবে, আর গতিশীল বস্তুকে বাহির থেকে কোন বল প্রয়োগ না করা হলে সে চিরদীন সোজা পথে চলতেই থাকবে। এই নিয়ম মেনে চলার অভিজ্ঞতা কিন্তু আমাদের সবারই আছে। দ্রুতবেগের গাড়িকে যখন হঠাৎ ব্রেক করা হয় তখন সিটে বসা সবাই সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ি।আর গাড়ির গতি বেশি থাকার পরও কষে ব্রেক করলে তো সামনের সিটের সাথে মাথার গুঁতো মিস নেই। এমন হয় কারণ- গাড়ি যখন চলতে থাকে তখন আমাদের শরীরের সব অংশই একই বেগে গাড়ির সাথে চলতে থাকে । কিন্তু হঠাৎ ব্রেক করা হলে শরীরের নিচের অংশ গাড়ির সাথে থেমে গেলেও, উপরের অংশ তো গাড়ির সাথে লাগানো না, তাই উপরের অংশ সমান বেগে সামনের দিকে চলতে থাকে। ফলে একটি গুঁতো উপহার পাওয়া যায়। এই সূত্রটিকে বলা হয় জড়তার নিয়ম(Law of inertia)। দ্বিতীয় নিয়ম বলা হয়, বল কিভাবে কাজ করে আর কোন দিক বরাবর কাজ করে। এই সূত্র থেকেই বলের একটি স্পষ্ট সংজ্ঞাও বেরিয়ে আসে। তৃতীয় নিয়মটি দেখতে সাদামাটা মনে হলেও এই নিয়ম মেনেই রকেট মহাকাশে পাড়ি দিতে পারে। এই সূত্রে বলা হয়, প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। একারণেই রকেটের পেছন পেছন দিক থেকে প্রচণ্ড বেগে ধোয়া ছেড়ে ধাক্কা দিলে রকেটটিও প্রচণ্ড বেগে তার বিপরীত দিকে এগিয়ে যায়। আর এই নিয়ম আমাদের পৃথিবীর পাশাপাশি মহাশূন্যেও প্রযোজ্য। তাই এই সহজ নিয়মকে পুঁজি করে আমরা দূর মহাকাশে পাড়ি দিতে পারি। এই নিয়মটি বলা হয় প্রতিক্রিয়ার নিয়ম(Law of reaction)।
নিউটনের নিজের ভাষায় লেখা মূল ল্যাটিন সূত্রগুলোকে এন্ডু মোট্টে ১৭৭২ সালে অনুবাদ করেন। দেখা যাক তার ভাষায় সূত্রগুলো কেমন ছিল:
LAW I: Every body preserves in its state of rest, or of uniform motion in a straight line, unless it is compelled to change that state by force impressed thereon.
LAW II: The alteration of motion is ever proportional to the motive force impressed; and is made in the direction of the right line in which that force is impressed.
LAW III: To every action there is always opposed and equal reaction; or the mutual action of two bodies upon each other are always equal, and directed to contrary parts.
।চার।
নিউটন যে বল আবিষ্কার করেন তার নাম মহাকর্ষ। এই বল কিভাবে কাজ করে তিনি তার নিয়ম বলে গেছেন। এই বলের নিয়ম অনুযায়ী মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু প্রতিটি বস্তুকে আকর্ষণ করছে। আকর্ষণ বলের পরিমাণ কত হবে তা নির্ভর করে বস্তুদুটির ভরের গুণফলের উপর। বস্তু-দুটি যত ভারি হবে বলের পরিমাণ তত বাড়তে থাকবে। আর এই বল কার্যকর হবে এদের সংযোজক রেখা বরাবর। ভরের পাশাপাশি এটি দূরত্বের উপরও নির্ভর করে। দূরত্ব যত বাড়তে থাকে বল তত কমতে থাকে। দূরত্বের ক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হল- দূরত্ব দ্বিগুণ হলে বল চারভাগের একভাগ হয়ে যাবে, দূরত্ব তিনগুণ হলে বল নয়গুণ কমে যাবে। অর্থাৎ দূরত্বের বর্গ অনুপাতে কমে যাবে। আর একারণেই একে বলে ব্যাস্তবর্গিয় নিয়ম(Inverse square law) ।
এই নিয়ম কতটা কার্যকরী তা ভাবাই যায় না। এই এক নিয়ম দিয়েই চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ নক্ষত্রের গতি প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে, তাদের সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করা যাচ্ছে। চন্দ্র-সূর্যগ্রহণের পূর্বাভাস এখন আর অলৌকিক কোন বিষয় না। শুধু মহাকাশের গোলকগুলোই না, পৃথিবীর বুকে যত রকম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তারও হিসেব করা যাচ্ছে এই নিয়ম দিয়েই। কেন জোয়ার আসে কেনই বা ভাটা পড়ে তা এখন আর ব্যাখ্যার অতীত না। এখানে মূল বিষয়টি ছিল, এসবের ফলে আমরা একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি পাই, যার দ্বারা মহাবিশ্বের একটি নতুন রূপ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়; যেখানে কোনকিছুই ব্যাখ্যার অতীত না।এর আগে গ্রহদের আচরণ থেকে কোন বস্তুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সবকিছুই ছিল ব্যাখ্যার অতীত। কেউই জানত না গ্রহগুলো কিভাবে আর কেন ভ্রমণ করে চলেছে।
।মৌলিক বল।
সাধারণভাবে দেখলে গ্রহদের ছুটে চলা আর একটি আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়াকে দুটি আলাদা ঘটনা বলেই মনে হয়। সাধারণ কোন মানুষ হয়ত কখনই ভাববে না, এই ঘটনাগুলো একই কারণে হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানের কাজ হল, ঘটনার পেছনের ঘটনাকে খুঁজে বের করা। নিউটন যখন বুঝতে পারলেন, আপেল মাটিতে পড়া আর গ্রহদের ছুটে চলা মূলত একই বলের কারণে হচ্ছে, তখন তিনি একটি মৌলিক বল ও মৌলিক কারণের সন্ধান পেলেন। এই বলকে মৌলিক বলার কারণ হল, এই বলটি অন্য কোন বলের প্রতিক্রিয়ার ফলে তৈরি হচ্ছে না। যেমন- যদি কেন্দ্রবিমুখী বলের কথা বলি, এটি কিন্তু মৌলিক বল না। কিন্তু মহাকর্ষ একটি মৌলিক বল এবং মানব জাতির আবিষ্কার করা প্রথম মৌলিক বল। মহাকর্ষের মত এরকম আরও তিনটি মৌলিক বল রয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ করা দুনিয়াতে যা কিছু হচ্ছে তার সবকিছুর মুলে আছে এই চারটি মৌলিক বল। বলগুলো হল:
* মহাকর্ষ
* তড়িৎ-চুম্বক বল
* সবল নিউক্লীয় বল
* দুর্বল নিউক্লীয় বল
মহাকর্ষ
চারটি মৌলিক বলের ভিতর সবচেয়ে পরিচিত বল হল মহাকর্ষ। আমরা প্রতিনিয়ত সেসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখি তার বেশীরভাগই এই বলের কারণেই হয়। পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহকে তাদের কক্ষপথের চারপাশে প্রদক্ষিণ ও গ্যালাক্সিগুলোকে বেধে রাখার জন্য এই বল দায়ী। এই বল না থাকলে পৃথিবী সহ অন্য গ্রহগুলো সূর্যের চারপাশে না ঘুরে, বরং মহাশূন্যে হারিয়ে যেত। মহাশূন্যে সূর্যের আলো কম থাকায় তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কম, ফলে সেখানে জীবনধারণ অসম্ভব। পৃথিবীর কোন মহাকর্ষ না থাকলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে আমরা শূন্যে ছিটকে যেতাম।আবার এই বলই বায়ুমণ্ডলকে পৃথিবীর সাথে ধরে রেখেছে।মহাকর্ষ না থাকলে বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে মহাশূন্যে মিলিয়ে যেত।চাদের পর্যাপ্ত ভর নেই বলে তার মহাকর্ষ বলও অনেক কম, তাই চাঁদের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। মজার ব্যাপার হল, মহাকর্ষ বল না থাকেল সূর্য নিজেই থাকত না, ভেতরের পারমাণবিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তির চাপে বিস্ফোরিত হয়ে যেত। এমনকি এই মহাকর্ষ ছাড়া কোন গ্যালাক্সিও তৈরি হত না। মহাকর্ষের টানেই মহাজাগতিক ধূলিকণাগুলো একত্র হয়ে গ্যালাক্সি ও নক্ষত্রগুলো তৈরি করেছে।
মহাকর্ষ বল সব সময় আকর্ষণ-ধর্মী হওয়ায় এই বলের প্রভাব সবথেকে বেশি দৃশ্যমান। এই বলের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, এই বল পাল্লা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ সেই বিলিয়ন কিলোমিটার দুরের কোন লক্ষত্রও আমাদের পৃথিবীকে এমনকি আমাদেরকেও আকর্ষণ করছে। কিন্তু দূরত্ব অনেক বেশি হবার কারণে এই বলের পরিমাণ এতটাই কমে গেছে যে হয়ত মাপাটাই সম্ভব নয়।কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে আরও বেশি দূরত্বের বস্তুও পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তবে অন্য তিনটি বলের তুলনায় মহাকর্ষ বল খুবই দুর্বল ।
তড়িৎ-চুম্বক বল
একসময় বিদ্যুৎ শক্তি, চুম্বক শক্তি ও আলো এই তিনটি জিনিসকে আলাদা মনে করা হত। এদের ভিতর সম্পর্ক থাকার প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮২০ সালের ২১ এপ্রিল। সেদিন হেন্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড লেকচার দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন ব্যাটারির সুইচ অন অফ করার সময় পাশের কম্পাসের কাটাটি কেপে উঠছে।এই বিষয়টি নিয়ে পরে কাজ করে তিনি বুঝতে পারেন তড়িৎ প্রবাহের ফলে চৌম্বকক্ষেত্র প্রভাবিত হয়।এরপর মাইকেল ফ্যারাডে দেখান যে, তড়িৎ ক্ষেত্রের কারণে চুম্বক ক্ষেত্র প্রভাবিত হলে চুম্বক ক্ষেত্রের কারণেও তড়িৎ ক্ষেত্রে প্রভাবিত হবে। ফ্যারাডে তড়িৎ ও চুম্বককে এক সুতোয় গাথতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, দুটি চুম্বককে এদের বলক্ষেত্রের ভিতর দ্রুত ঘোরালে, তার দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে।এই সাধারণ নীতির উপর ভিত্তি করেই ইলেকট্রিক জেনারেটর তৈরি করা হয়। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি না থাকায় তিনি তড়িৎ-চুম্বক বলের গাণিতিক কাঠামো তৈরি করে যেতে পারেন নি।
চিত্র: ফারাডে ডিস্ক ছিল পৃথিবীর প্রথম ইলেকট্রিক জেনারেটর। চিত্রের অশ্বখুরাকৃতির চুম্বক A ডিস্ক D এর ভিতর একটি চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে। যখন ডিস্কটি ঘুরানো হয় তখন চুম্বকের বলরেখা ছেদ করার মাধ্যমে এখানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে থাকে। চিত্রের m অংশ দিয়ে একটি তারের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ অন্য কোন বর্তনীতে প্রবাহিত করা যায়।
জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল তড়িৎ ও চুম্বকে ক্ষেত্রের জন্য গাণিতিক কাঠামো তৈরি করেন।তিনি তড়িৎ ও চুম্বকের ক্ষেত্রের জন্য মোট আটটি সমীকরণ গঠন করেন যেগুলো তড়িৎ-চুম্বক ক্ষেত্র মেনে চলে। এরপর থেকে তড়িৎ ও চৌম্বক আর আলাদা বল না। এই দুই বল মূলত একই বলের দুটি আলাদা রূপ।আর এই তড়িৎ-চুম্বক বল হল একটি মৌলিক বল। ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের গণনা থেকে দেখা যায়- যখন তড়িৎক্ষেত্র ও চৌম্বকক্ষেত্র দুটি একইসাথে উৎপন্ন করা হবে তখন একটি তরঙ্গ সৃষ্টি হবে। এই তরঙ্গকে বলা হয় তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ। ম্যাক্সওয়েল তার সমীকরণ ব্যাবহার করে এই তরঙ্গের বেগ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। ম্যাক্সওয়েল অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন এই তরঙ্গের বেগ আর আলোর বেগ একই। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আলো নিজেও একটি তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ।
চিত্র: মাইকেল ফ্যারাডে
শহরময় ঝলমলে বাতি, রক ও মেটাল মিউজিক, স্টেরিও সাউন্ড সবই তড়িৎ-চুম্বক বলের ফল। রেডিও,টেলিভিশন,রাডার, মোবাইল ফোন এমনকি মাইক্রোওয়েভ ওভেন সবই তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ ব্যাবহার করে চলে।তড়িৎ-চুম্বক বল ব্যাবহার করে সম্প্রতি কম্পিউটার ও লেজারের মত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলো আমাদের জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করেছে। তড়িৎ-চুম্বক বলের কারণেই ধনাত্মক চার্জ যুক্ত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেকট্রন ঘুরছে।যদি তড়িৎ-চুম্বক বল না থাকত তাহলে পরমাণু বলে কোন কিছু থাকত না। সকল প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণও এই বল। এই বল না থাকলে পরমাণুগুলো মিলে কোন অণু গঠন করত না, তাই থাকত না এত রকম পদার্থ। তড়িৎ-চুম্বক বল না থাকেল তড়িৎ-চুম্বক বিকিরণ বলেও কিছু থাকত না।আর আলো যেহেতু একটি তড়িৎ-চুম্বক বিকিরণ তাই মহাবিশ্বে আলো বলেও কিছু থাকত না। সবকিছুই অন্ধকারে ডুবে থাকত ।
মহাকর্ষ বলের সাথে এই বলের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।যেমন- মহাকর্ষ সকল বস্তুর ভিতর কার্যকর ও সবসময় আকর্ষণ-ধর্মী। কিন্তু তড়িৎ-চুম্বক বল শুধুমাত্র চার্জ-যুক্ত কণিকাদের মধ্যেই কাজ করে। বিপরীতধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে আর একই চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। একই সাথে আকর্ষণ ও বিকর্ষণ ধর্ম থাকার কারণে এই বলের ক্ষেত্রে কাটাকাটি হয়ে যাবার সুযোগ আছে। যেমন- একটি পরমাণুতে সমান সংখ্যক ধনাত্মক চার্জ-যুক্ত প্রোটন ও ঋণাত্মক চার্জ-যুক্ত ইলেকট্রন থাকে। ফলে একটি পরমাণু সবসময়ই চার্জ নিরপেক্ষ। ফলে পরমাণু দিয়ে গঠিত সব বস্তুও চার্জ নিরপেক্ষ। তাই সচরাচর কোন বস্তুর ভিতর এই বলের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু মহাকর্ষ বল সব সময়ই আকর্ষণ-ধর্মী হওয়ায় সব বস্তুর মধ্যেই এই মহাকর্ষের প্রভাব কাজ করে।তবে এই বলের পাল্লাও মহাকর্ষ বলের মত অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।
দুর্বল নিউক্লীয় বল
দুর্বল নিউক্লীয় বলকে সংক্ষেপে দুর্বল বল নামেও ডাকা হয়। এই বল নিউক্লিয়াসের বিটা ক্ষয়ের জন্য দায়ী। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে যে তেজস্ক্রিয় রশ্নি বিকিরণ হয় তা মূলত দুর্বল বলের কারণেই হয়ে থাকে। এরকম পদার্থ থেকে বিকিরণের সাথে প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে একটি পরমাণু ভেঙ্গে আরেকটি পরমাণুতে পরিণত হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে তেজস্ক্রিয় শিলাগুলো এভাবেই তাপশক্তি বিকিরণ করে বিভিন্ন সময় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়। দুর্বল বল না থাকলে কোন তেজস্ক্রিয় পদার্থই থাকত না। তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো দিয়ে একদিকে যেমন জীবন রক্ষাকারী যন্ত্র বানানো যায় আবার এই বিকিরণ মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই বলের পাল্লা খুবই ক্ষুদ্র; এক ফার্মি বা ১০^ -১৫ মিটার। এই দূরত্বের বাইরে গেলেই এই বল কাজ করবে না। এমন ক্ষুদ্র পাল্লার বল হবার কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব বোঝা যায় না। কিন্তু এই বলের প্রভাবে পরমাণুর অভ্যন্তরের কাঠামতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া হয়। তাছাড়া মৌলিক কণিকাদের আচরণ বোঝার জন্য এই বলের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
সবল নিউক্লীয় বল
এই বলকে সবল বল নামেও ডাকা হয়। নক্ষত্রগুলোর জ্বালানী শক্তি আসে এই বল থেকে। নক্ষত্রগুলো আলোকিত হবার পেছনেও সবল বল দায়ী। যদি হঠাৎ করে সূর্য থেকে সবল বল উধাও হয়ে যায় তাহলে মুহূর্তেই সূর্য আলো বিকিরণ করা বন্ধ করে দেবে, ফলে পৃথিবীতে প্রাণের চিহ্নও থাকবে না। কয়েকজন বিজ্ঞানীর গবেষণায় দেখা গেছে, আজ থেকে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে একটি বড়সড় ধূমকেতুর ধ্বংসাবশেষ আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল। এরপর অনেকদিন ধূমকেতুর ধুলোর ফলে পৃথিবীতে সূর্যালোক পৌছাতে পারে নি ফলে তাপমাত্রা খুব দ্রুত কমে গিয়েছিল। এই আকস্মিক তাপমাত্রার পতনে ডাইনোসররা টিকে থাকতে পারে নি। মজার ব্যাপার হল, এই বলের কারণেই নক্ষত্রের ভিতর আমাদের জীবনের জ্বালালি তৈরি হয়ে চলেছে, আবার একদিন এই বলের কারণেই সূর্য একদিন সুপারনোভা বিস্ফোরণ হয়ে আমাদের জীবনের অবসান ঘটাবে।
সবল বলের পাল্লাও দুর্বল বলের মত খুব ক্ষুদ্র; মাত্র কয়েক ফার্মি। আর এই বল চার্জের উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ এই বলের পাল্লার ভেতরে একটি ধনাত্মক কনিকাও একটি ঋণাত্মক কণিকাকে প্রবল বেগে আকর্ষণ করবে। কারণ তড়িৎ-চুম্বক বল যে শক্তিতে এদের বিকর্ষণ করবে সবল বল তার থেকে অনেক শক্তিশালী হওয়ায় বিকর্ষণ বলকে অগ্রাহ্য করতে পারে। একারণেই পরমাণুর ভেতরে নিউট্রন ও প্রোটন এই বলের সাহায্যে যুক্ত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করতে পারে। একটি প্রোটন ও নিউট্রন তিনটি কোয়ার্ক দ্বারা গঠিত, এই কোয়ার্ক তিনটিও সবল বলের সাহায্যে যুক্ত হয়ে প্রোটন ও নিউট্রন গঠন করে। এই বলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের কমে এই বল বিকর্ষণ-ধর্মী হতে পারে। দেখা গেছে, নিউক্লিয়াসের ভিতর কণিকাদের দূরত্ব ১.২ ফার্মি থেকে ৩ ফার্মি হলে এই বল আকর্ষণ-ধর্মী ও এই দূরত্ব ১ ফার্মির কম হলে তা অবশ্যই বিকর্ষণ-ধর্মী হবে। প্রকৃতিতে যতগুলো বল আছে তার মধ্যে সবল বল হল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী বল।
বলগুলো কতটা শক্তিশালী-ভাবে মিথস্ক্রিয়া করবে তা নির্ভর করে এদের কাপোলিং কন্সট্যান্টের উপর। নিচে দুর্বলতার ক্রম হিসেবে চারটি মৌলিক বলকে সাজানো হল। এ থেকে বোঝা যাবে কোন বল কতটা শক্তিশালী।
1. মহাকর্ষ
2. দুর্বল নিউক্লীয় বল
3. তড়িৎ-চুম্বক বল
4. সবল নিউক্লীয় বল
সবল নিউক্লীয় বলের শক্তিকে ১ ধরলে অন্যবলগুলোকে শক্তির ক্রমানুসারে এভাবে সাজানো যেতে পারেঃ
সবল নিউক্লীয় বল———————– ১
তড়িৎ-চুম্বক বল————————–১০^-২
দুর্বল নিউক্লীয় বল————————১০^ -৫
মহাকর্ষ———————————-১০^ – ৪০
উপরের তালিকা থেকে বোঝাই যাচ্ছে অন্য বলগুলোর তুলনায় মহাকর্ষ বল কতটা দুর্বল। প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞান মহাকর্ষ বলের এই অস্বাভাবিক দুর্বল হবার কারন অনুসন্ধান করে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানী আজকাল মনে করেন, এই বলের বিষয়টি অতিরিক্ত মাত্রার সাথে জড়িত। তাই স্ট্রিং থিওরির সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে অনেকেই আশা করছেন।
মহাকর্ষ ও তড়িৎ-চুম্বক বলের সন্ধান অনেক আগেই পাওয়া গেলেও গত শতাব্দির ৬০-এর দশকের আগে নিউক্লীয় বলগুলোর(সবল ও দুর্বল নিউক্লীয় বল) সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। আইনস্টাইন যখন একটি একীভূত তত্ত্ব গঠন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন তখন তিনি নিউক্লীয় বল সম্পর্কে অবগত না থাকায় তিনি সফল হতে পারেন নি।
পাদটীকাঃ
[1] একটি ভারি বস্তুকে সুতোর মাথায় বেধে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘুরালে, দেখা যায় সেটি আমাদের হাতের চারপাশে ঘুরে চলেছে। আর হাতের বাহিরের দিকে একটি বল অনুভূত হয়। এই বলের নাম কেন্দ্রবিমুখী বল।একটি বস্তু যখন গতি-প্রাপ্ত হয় তখন এটি বাহিরের দিকে এই বলটি অনুভব করে, ফলে আকর্ষণ বল ভিতরের দিকে টানলেও কেন্দ্রবিমুখী বল বাহিরের দিকে টানে। এতে একটি সাম্যাবস্থা তৈরি হয় এবং বস্তুটি চারিদিকে ঘুরতে থাকে। চাদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। পৃথিবীর আকর্ষণ বলের কারণে এটি যখন গতি-প্রাপ্ত হয় তখন এটি বাহিরের দিকে একটি কেন্দ্রবিমুখী বল অনুভব করতে থাকে।ফলে এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠে এসে না কক্ষপথের চারদিকে ঘুরতে থাকে। পৃথিবী থেকে অনেকগুলো কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করা হয়েছে যেগুলো এভাবেই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে। আহ্নিক গতির কারণে পৃথিবীও যেহেতু পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সবসময় ঘূর্ণায়মান, তাই পৃথিবীর সমান গতিতে যদি কোন কৃত্রিম উপগ্রহ ঘুরতে থাকে, আমাদের কাছে সেটিকে শূন্যে ভাসমান ও স্থির মনে হবে।
স্যার লিখাটি অনেক ভাল তবে গানিতিক প্রমান টা পেলে খুশি হব। আশা করি পাব।
অসাধারণ লেখা… সহজ ভাষায় পড়াশুনা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মহাকর্ষ বল কেন সৃস্টি হয়? এর উওর পেলে এক টু যানাবেন।
খুব ভালো ! তবে, একটা প্রশ্ন এই কেন্দ্র বিমুখী বলটা ঠিক কি ধরনের বল ? ধন্যবাদ |
খুব প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপনের জন্য লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
চমৎকার লিখেছেন।
ভাই , লেখাটা পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম , কিছু জিনিস আগে ক্লিয়ার ছিলাম না এখন ক্লিয়ার হইলাম । ^_^
খুব ভাল লাগল পড়ে । অনেক কিছু জানতে পারলাম
অনেক অনেক ধন্যবাদ সহজ সরল ভাষায় লেখার জন্য,আপনার কছে অনেক অনেক লেখা আমরা আসা করতেই
পারি, আর একটু কষ্ট হলেও আপনি রাখতেই পারেন।
@আসাদ,
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধনবাদ। আর লিখার চেস্টা করে যাব। 🙂
ভাল লাগলো। সহজ ভাষায়, সহজ ভাবে, কঠিন তত্ত্বের উপস্থাপন।
@মুক্তমনা,
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আসলে আমি চেস্টা করেছি যতটুকু সহজভাবে উপস্থাপন করা যায় । 🙂