লিখেছেন: সৈয়দ মাহি আহমদ
পর্ব এক –
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো যে , আমি কোন মেডিক্যালের ছাত্র না ; আর শিক্ষক তো অনেক দূরের ব্যাপার ! যে বিষয়টা নিয়ে আমি লিখছি সে-বিষয় সম্পর্কে আমার লেখার কথা না ; যোগ্যতা বলেও না , আবার অধিকার বলেও না । তাহলে , প্রশ্ন আসে কেন আমি লিখছি ? আমি এই কারণে লিখছি যাতে করে সাধারণ মানুষ খুব সহজভাবে বিষয়গুলো জানতে ও বুঝতে পারে । আগেই বলে রাখি যে , এটি সাধারণ মানুষদের জন্য সাধারণ ভাষায় একজন সাধারণ মানুষের লেখা ; এটি কোনো বিশেষজ্ঞদের জন্য লেখা না । আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো যে , এই লেখা আমি লিখছি অনেকগুলো ইংরেজি বই , সাইট , জার্নাল , ম্যাগাজিন ইত্যাদি থেকে যা রেফারেন্স হিসেবে লেখার শেষে দিব । তবে আমি কোন বই , জার্নাল , ম্যাগাজিন হুবুহু অনুবাদ করছি না বিধায় অনেক ক্ষেত্রে আমি আমার নিজের যুক্তিযুক্ত ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা , উদাহরণ , বিশ্লেষণ দেবার চেষ্টা করব । তাহলে , চলুন শুরু করি –
আমাদের মাথা নিয়ে যে গবেষণা , তথ্য , তত্ত্ব , পরীক্ষা , পর্যবেক্ষণ মানে যে বিজ্ঞান তৈরি হয়েছে তাই মাথাবিজ্ঞান বা মস্তিষ্কবিজ্ঞান । এটাকে আবার নিউরোবিজ্ঞানও বলা হয় । কেন বলা হয় ? একটা উদাহরণ দেই – ধরুন , আপনি চাল কিনতে গেছেন । আপনি দোকানদারকে তখন কী বলবেন ? আপনি বলবেন যে , আমাকে চাল দাও । দোকানদার কি তখন আপনাকে চাল দিয়ে দিবে ? না , দিবে না । সে জানতে চাইবে যে , আপনার কয় কেজি লাগবে মানে ( সে আপনি কী পরিণাম চাল কিনবেন তা জানতে চাচ্ছে ) ? মনে করুন যে , আপনি বললেন পাঁচ কেজি চাল লাগবে । দোকানদার পাঁচ কেজি চাল দিল । এখন দেখেন , এই যে আপনি পাঁচ কেজি চাল কিনলেন অসংখ্য চাল আছে । ধরুন সেখানে এক লক্ষ চাল আছে অর্থাৎ এই এক লক্ষ চাল আপনি কিনলেন যা হচ্ছে পাঁচ কেজি । তাহলে , আমরা বলতে পারি যে , এই পাঁচ কেজির ভিতর এক লক্ষ্য চাল আছে । এখন ধরুন এই পাঁচ কেজি হচ্ছে মাথা , আর এই যে এক লক্ষ চাল সেগুলো মাথার ভিতরে আছে ; আর ঐ মাথার ভিতরের এক একটি চালকেই বলা হচ্ছে এক একটি নিউরণ । চাল যেমন ছোট , নিউরনও তেমনি ছোট । আর এই নিউরন নিয়েই যে বিজ্ঞান তাকেই নিউরনবিজ্ঞান বা নিউরোবিজ্ঞান বলা হয় । স্নায়ু শব্দটা অনেক অনেক কঠিন কঠিন লাগে , তাই আমরা একে স্নায়ুবিজ্ঞান না বলে নিউরনবিজ্ঞান বা নিউরোবিজ্ঞান-ই বলি ।
আমাদের মাথার ওজন হচ্ছে ১ . ৩৬ কেজি এবং মাথার ভিতরে আছে এক হাজার কোটি নিউরন । ব্যাপারটা একবার কল্পনা করুন তো । মনে রাখবেন কল্পনা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস । আইন্সটাইন বলেছেন “জ্ঞানের থেকেও কল্পনা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস” । ধারণা থেকেই জ্ঞান আসে – অ্যারিস্টটল । যারা কল্পনা বা ধারণা করবেন না , সরাসরি পরীক্ষা করবেন ; তারা এক কাজ করুন দেড় কেজি ওজনের চালের বস্তা হাতে নিন আর এটাই ধরুন মাথার ওজন , আর একটি সাদা কাগজে এক হাজার কোটি বার একই বিন্দু বসান , প্রতিটি বিন্দুকে ধরুন একটি নিউরন ; তাহলেই বোঝতে পারবেন কত নিউরন আছে আমাদের মাথার ভিতরে !
নিচে নিউরনগুলোর একটা ছবি দেয়া হল –
চিত্র – ১
অনেকেই বিজ্ঞানকে মনে করেন রসকষহীন । কিন্তু আসলে কী তাই ? বিজ্ঞান হচ্ছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় কারণ সে নিজেকে জানতে দেয় , বুঝতে দেয় , কল্পনা করতে শেখায় । এটা কি আনন্দের বিষয় নয় ? এই যে আপনার মাথার ওজন প্রায় দেড় কেজির মত , কখনো কি মনে হয়েছে আপনি প্রায় দেড় কেজি ওজনের কিছু বহন করছেন ? সাধারণভাবে মনে না হবারই কথা । মনে না হবার পিছনে আছে পদার্থবিজ্ঞান মানে ফিজিক্স ; এখানে ফিজিক্সের মেকানিক্স মানে বলবিদ্যা কাজ করে । আমরা সাধারণ মানুষ বিষয়টা সাধারণভাবেই বুঝতে চেষ্টা করি । ধরুন , আপনার ওজন ৬০ কেজি । এই যে ৬০ কেজি ওজন নিয়ে আপনি দিব্যি চলাফেরা করছেন , প্রেমিকার সাথে প্রেম করছেন , বউয়ের সাথে একটা ফাটাফাটি ফাইট দিচ্ছেন , কখনো কি মনে হয় আপনার এতো ওজন ! আবার চালে ফিরে যাচ্ছি । বাঙ্গালী তো , শুধু শুধু খাই খাই স্বভাব – কথাটা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর । অথচ দেখেন ৬০ কেজি ওজনের চালের বস্তা বহন করতে কি ওজন লাগেরে বাবা ! এখানে যারা আবার রোম্যান্টিক প্রেমিক বা স্বামী আছেন তারা আমার কথায় আপত্তি তুলতে পারেন । তারা বলতে পারেন যে , কই আমি রোমান্সের সময় তো ওকে তুলো মারলাম , কাঁধে তুললাম ; ওর ওজন তো প্রায় ৫০ কেজির উপরে কিন্তু আমার কাছে তো এতো ওজন মনে হল না । এখানে অনেক বিষয় কাজ করে । আপনি যখন আপনার প্রেমিকাকে রোমান্সের সময় তুলো মারলেন বা কাঁধে তুললেন তখন আপনার শরীরে কয়েক ধরনের হরমোন কাজ করে ; আর এই হরমোনগুলোর কাজের কারণেই আপনার প্রেমিকার ওজন আপনার কাছে হাল্কা মনে হয় – আইন্সটাইনের ভাষায় ( Theory of Relativity ) ও শরীরবিজ্ঞান ( Physiology ) ও যৌনবিজ্ঞানের ভাষায় ( Sexology ) । পরে যখন শরীরবিজ্ঞান ও যৌনবিজ্ঞান নিয়ে লিখব তখন ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করব । আপাতত এইটুকই । এই যে আমাদের শরীরের এতো ওজন কিন্তু আমরা সাধারণভাবে বুঝতে পারি না তার কারণ এই যে আপনি ৬০ কেজি ওজন ভূমিকে দিচ্ছেন , ভূমিও কিন্তু আপনাকে ৬০ কেজি ওজন দিচ্ছে ফলে কাটাকাটি হয়ে ভারসাম্য হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ আপনি একজনকে চড় মারলেন সেও আপনাকে চড় মারল – শেষ মামলা খতম । একে বইয়ের ভাষায় বা বলবিদ্যার ভাষায় বলে ‘বলের ভারসাম্য নীতি’ । এই যে আমাদের মাথার ওজন তা নিয়ে নেয় আমাদের কঙ্কাল , হাত , পা ইত্যাদি । ফলে , আমাদেরকে ওজনের ভারে আর নুইয়ে পড়তে হয় না । দেখলেন তো এক বিষয়ের মাঝে কত বিষয় ! মস্তিষ্কবিজ্ঞানের সাথে সাথে চলে আসল শরীরবিজ্ঞান , যৌনবিজ্ঞান , পদার্থবিজ্ঞান , বলবিদ্যা । আসলে , দর্শন মতে , জ্ঞান অভিভাজ্য ও অসীম । এই যে এতো বিষয় ফিজিক্স , কেমিস্ট্রি , ম্যাথ , বায়োলজি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় আসলেই এক বিষয়-ই । আবার যাই চালে , আমরা চাল খাই । কিন্তু বাজারে বিভিন্ন রকম চাল আছে । যেমন – মালা , পাইজম , চিনিগুঁড়া , কাটারিভোগ , বাসমতি ইত্যাদি ইত্যাদি ; কিন্তু সবগুলো আসলে চাল-ই ; সবগুলোর মাঝেই সুগার , পানি ইত্যাদি উপাধান আছে । এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেই চালের উদাহরণটা খাটে । আহমেদ শরীফ একবার বলেছিলেন যে , জ্ঞানের স্পেশিয়ালাইজেশন হয় না – কথাটা পুরোপুরি সত্য । চলুন আবার মাথায় যাই , এবার আর মাথায় না , মাথার ভিতরে যাই । মাথার ভিতর সুরক্ষিত আছে স্কালের মাধমে । এই স্কালের কাজ হচ্ছে মাথার ভিতরে যাতে কোন প্রকার আঘাত না লাগে । আমাদের মাথার ভিতরের টিস্যুটা জিলাটিনের তৈরি । চলুন , তাহলে জানি জিলাটিন জিনিসটা কী ? gelatine – A colourless or pale yellow water-soluble protein obtained by boiling collagen with water and evaporating the solution . It swells when water is added and dissolves in hot water to form a solution that sets to gel on cooling . ……….. . সংজ্ঞার্থ দেখে অনেকের ভয় ভয় লাগতে পারে কিন্তু আমরা সহজভাবে ব্যাপারটা বুঝব । সহজভাবে বললে বলা যায় যে , জিলাটিন হল এক ধরনের প্রোটিন , প্রায় জেলির মত তরল , যা দিয়ে আমাদের মাথার ভিতরের টিস্যু তৈরি । এই যে মাথার ভিতরে এক হাজার কোটি নিউরন আছে । এই এতো এতো নিউরন কি শুকনো অবস্থায়-ই আছে ? কিন্তু , আমরা যে জানি , পানির অপর নাম জীবন । জীবন গঠনের জন্য পানি অবশ্যই লাগবে । তাহলেই , এক হাজার কোটি নিউরনের মাঝে মানে মাথার ভিতরে কি কোন পানি নাই ? হুম , পানি আছে , পানি থাকলে চলবে নাকি ? এক ধরনের তরল বা পানির মত পর্দাথ আছে যাকে বলা হয় ‘ সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ( Cerebrospinal Fluid বা CSF )’ ।
নিচে সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড কীভাবে আমাদের মাথা থেকে দেহে প্রবাহিত হয় তা দেখানো হল
চিত্র – ২
তাহলে এই যে , সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ( Cerebrospinal Fluid বা CSF ) এর কাজ কী ? সহজভাবে আমরা বলতে পারি যে , এর কাজ হচ্ছে –
১ । মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গ যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে ।
২ । এই তরলটা মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর শক , আঘাত ইত্যাদি থেকে মাথার বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে । আমরা এটাকে সহজ করি । আমাদের এটা মনে রাখলেই চলবে যে , আমাদের মাথার ভিতরে এক ধরনের তরল আছে যার কাজ হচ্ছে মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে । এই তরলটা মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতিকর শক , আঘাত ইত্যাদি থেকে মাথার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে রক্ষা করে । ব্যাস , এটুকু হলেই চলবে ।
আমরা প্রথমেই আমাদের মাথাকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করি । যথা : –
১ । মাথার সামনের ভাগ ( Forebrain )
২ । মাথার মাঝখানের ভাগ ( Midbrain )
৩ । মাথার শেষ ভাগ ( Hindbrain )
নিচে মাথার বিভিন্ন অংশ চিত্রের সাহায্যে দেখানো হল –
চিত্র – ৩
এখন খুব সহজভাবে বলা যায় কোন অংশের কাজ কী কী ?
মাথার সামনের ভাগ – ব্যথা-বেদনা ও আনন্দ অনুভূতি প্রকাশ ; আহার , নিদ্রা ও রোগের প্রকাশ ; স্মৃতি , মেধা ও যুক্তি প্রকাশের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে ।
মাথার মাঝখানের ভাগ – দেহের ভারসাম্য রক্ষা , বিভিন্ন পেশীর কাজে সমন্বয় করা , দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি ।
মাথার শেষ ভাগ – শ্বসন , হৃদস্পন্দন , রক্তচাপ , দেহভঙ্গি ও পেশীর সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি ।
এবার আমরা চট করে আমাদের মাথাকে সমান দুভাগ করে দেই । ফলে আমরা মাথার দুটো অংশকে পাব – একটি ডান পাশের মাথা , অপরটি বাম পাশের মাথা ; অর্থাৎ একটি ডানপন্থী , অপরটি বামপন্থী । এখন চলুন দেখি তাদের কাজ কী কী ?
আমরা সহজভাবে তাদের কাজগুলো বোঝার চেষ্টা করব । আমরা অনেকেই বলি বিশেষ করে রাজনীতিতে যে সে ডানপন্থী , আর ও বামপন্থী । আমরা কেন এ কথা বলি ? এই বিষয় নিয়ে মনে কি কোন প্রশ্ন বা সন্দেহ বা সংশয় জেগেছে ? প্রশ্ন , সন্দেহ বা সংশয় যদি জাগে তাহলেই আপনি জ্ঞানী মানুষ । আবার দর্শন শাস্ত্রে চলে যাই । দর্শন মতে , যদি কোন বিষয় সম্পর্কে আপনার প্রশ্ন , সন্দেহ , সংশয় জাগে তাহলেই আপনি তখন জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন ; নতুবা নয় । সংশয় থেকেই জ্ঞানের উৎপত্তি – কথাটা বার্টান্ড রাসেলের । তাঁর আরো একটি কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ । সেটি হল – মূর্খরা সুন্দর প্রশ্ন করতে পারে না । বাংলাদেশের একজন খুব মৌলিক দার্শনিক , চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ ছিলেন । যার নাম সাইদুর রাহমান । তিনি বলতেন , “সংশয় থেকেই জ্ঞানের জন্ম হয়” । আরেকজন দার্শনিক ছিলেন আরজ আলী মাতুব্বর । পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত বইয়ের নিবেদন অংশে আইয়ুব হোসেনের কথাটা স্মরণীয় – “মানব জীবন যদি জিজ্ঞাসাবিযুক্ত হয় , হয় প্রশ্নহীন তবে তো ক্রমান্বয়ে ভর করে অন্ধ আবিলতা ( মূর্খতা ) । যুক্তি-তর্ক ব্যতিরেক বিশ্বাস ও মূল্যবোধ গ্রাস করে সমাজকে । মূর্খতায় , অন্ধ আবেগে পরিচালিত হয় তাবত সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আচরণ” ।
এই যে আমরা ডানপন্থী বামপন্থী বলি তার কারণ কী ? আসুন একটু বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখি ব্যাপারটাকে – আমরা ডানপন্থী মানুষ বললেই বুঝি এরকম মানুষকে যারা প্রচলিত সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির বিভিন্ন বিষয় মেনে নেয় বিনা প্রশ্নে , সংশয়ে ও জিজ্ঞাসায় । সমাজ , ধর্ম , প্রথা তাদেরকে যেভাবে চলতে , করতে ও মানতে বলে তারা সেভাবেই চলে , করে ও মানে । তারা সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির পক্ষেই যাত্রা করে । তারা সৃষ্টিশীল না , তারা অনেক অনুকরণশীল ; অর্থাৎ তাঁরা কোন কিছু তৈরি করতে পারে না , কিন্তু যেকোন কিছু মানতে পারে । অপর দিকে , যারা বামপন্থী তারা প্রচলিত সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির বিভিন্ন বিষয় মেনে নেয় না বিনা প্রশ্নে , সংশয়ে ও জিজ্ঞাসায় । সমাজ , ধর্ম , প্রথা তাদেরকে যেভাবে চলতে , করতে ও মানতে বলে তারা সেভাবেই চলে না , করে না ও মানে না । তারা সমাজ , ধর্ম , প্রথা ইত্যাদির বিপক্ষেই যাত্রা করে । আর বিপক্ষেই যাত্রা করে বলে তাঁরা হয় সংগ্রামী , সাহসী , বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ । তারা তর্ক করতে পারে , যুক্তি দিতে পারে , ব্যাখ্যা করতে পারে , বিশ্লেষণ করতে পারে , চিন্তা করতে পারে । তারা সৃষ্টিশীল , অনুকরণশীল না । তারা প্রশ্ন করে , জবাব চায় , সন্দেহ ও সংশয় পোষণ করে । তারা তাদের মত করে চলে , করে ও মানে । ফলে , তাঁরা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে না , কিন্তু যেকোন কিছু মানতে ও করতে পারে না । আর ডানপন্থীরা সমাজ , ধর্ম , প্রথার পক্ষে চলে বলেই তারা যুক্তিহীন , তর্কহীন , ভীরু , বুদ্ধিহীন মানুষ । তারা ব্যাখ্যা করে না , বিশ্লেষণ করে না , চিন্তা করে না । আমাদের মাথার ডান ও বাম অংশের কাজও প্রায় অনেকটা এই রকম ।
মাথার ডান অংশের কাজ – শিল্প ও সাহিত্যে মনোযোগ দেয়া , গানে সাড়া দেয়া , গভীরভাবে কোন কিছুকে দেখা , কোন কিছু গ্রহণ , সচেতন যুক্তিতর্ক বা বিচারবিশ্লেষণ ছাড়া কোন কিছু সম্পর্কে জ্ঞান , অবাস্তব কল্পনা , কোন কিছুর থ্রি ডি ইমেজ তৈরি করা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মাথার বাম অংশের কাজ – চিন্তা করা ; বিশ্লেষণ করা ; লেখালেখি করা ; যুক্তি দেয়া ; বিজ্ঞান ও গনিতের কাজ করা ; ভাষা শেখা ; ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মজার ব্যাপার হল – মাথার ডান অংশ বাম হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে , আর মাথার বাম অংশ ডান হাতকে চালায় ।
নিচে একটি চিত্র দেয়া হল –
চিত্র – ৪
এই মাথার ডান ও বাম অংশ অনেকগুলো সুতার মত নিউরন ( নিউরন ফাইবার ) দ্বারা পরস্পর পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে । আর অনেকগুলো সুতার মত নিউরনকে বলে কর্পাস কলুসাম ।
নিচে একটি চিত্র দেয়া হল –
চিত্র – ৫
আমি যে ডানপন্থী ও বামপন্থীর কথাটা বললাম সেটা থেকে কিন্তু ডান ও বামপন্থী এই বিষয়গুলো রাজনীতিতে আসেনি ; এগুলো সম্পর্কে জানতে পড়তে হবে ইতিহাস , আরো সঠিকভাবে বললে রাজনৈতিক ইতিহাস , এবং আরো সঠিক ও যথাযথভাবে বললে বলা যায় যে ফ্রান্সের রাজনৈতিক ইতিহাস । আমি এ বিষয়ে লিখলে ব্যাপারগুলো আরো বিস্তারিত ও সহজভাবে লেখার চেষ্টা করব ।
লেখাটি কেমন হল মানে সহজ হল কিনা না তা আমাকে একটু দয়া করে জানাবেন । লেখাটি সহজ হলে আমি আরো দুটি বইয়ের অনুবাদ করব । একটি হল – A Universe from Nothing – L . Krauss ; আরেকটি হল – The Fabric of Cosmos – B . Greene .
ধন্যবাদ ।
আমি এসব বিষয়ের সাথে যুক্ত প্রায় নয় বছর ধরে । চাইলে আমি অনেক বই , ম্যাগাজিন , জার্নাল , ভিডিও ইত্যাদির রেফারেন্স দিতে পারি ; কিন্তু তা পাণ্ডিত্য দেখানো হবে বলে আর উল্লেখ করছি না । যে রেফারেন্সগুলো না দিলেই নয় শুধু সেগুলো উল্লেখ করছি ।
সহায়ক গ্রন্থ :
১ । Neuroscience for kids from youtube
২ । The mind and brain – BBC Documentary from youtube
৩ । Map of the human brain – the structural and functional relationship from you tube
৪ । EMT1-4-Overview of the human body and physiology
৫ । 7d brain structure and function
৬ । The Brain Documentary – on the abilities of human brain from you tube – BBC
৭ । Black Medical Dictionary
৮ । The British Medical Illustrated Dictionary
৯ । মন ও মানুষ – ডা . মো . তাজুল ইসলাম
১০ । মানব মনের গতি-প্রকৃতি – ডা . মোহিত কামাল
১১ । মানবমস্তিষ্ক – আব্দুল হাই – বাংলা একাডেমী ।
১২ । Fitzgerald , M . J . T ( 1996 ) . Neuroanatomy , basic and clinical .
১৩ । Athen’s Theory of everything from youtube .
১৪ । একটুখানি বিজ্ঞান – জাফর ইকবাল ।
১৫ । গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে বিভিন্ন ছবি নেয়া হয়েছে ।
শিক্ষার্থী , সমাজবিজ্ঞান বিভাগ , শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় , সিলেট ।
আপনার বিজ্ঞানকে এতো সহজ ভাবে উপস্থাপনের (স্বার্থক) চেষ্টাটি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে ।
বিজ্ঞানকে খুব সহজ এবং মজাদার ভাবে উপস্থাপনটি খুবই ভালো লেগেছে ।
@মানবিক মানব, মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
নিউরোলজি নিয়ে আপনার আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে, তবে অনেকগুলো ইংরেজি বই , সাইট , জার্নাল , ম্যাগাজিন- এর তথ্যে কিংবা তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিতে হয়ত গলদ থেকে যাচ্ছে। অথবা যা বুঝাতে চাচ্ছেন তা ঠিক আসছে না। নয় বছর ধরে ‘এসব বিষয়ে’র সাথে যুক্ত থাকার বিশাল ব্যানারটা থাকার পরেও সাহস করে কয়েকটা কন্ট্রোভার্সি একটু তুলে ধরি, ঠিক আছে?
লেখাটার আপনি যেখান থেকে বিজ্ঞানটা শুরু করেছেন- “আমাদের মাথার ভিতরের টিস্যুটা জিলাটিনের তৈরি ।”
জেলাটিনের সংজ্ঞাটা তাক লাগানো সন্দেহ নেই। তবে, ইয়ে মানে কোন টিস্যুটা? আশা করি টিস্যু কী জিনিস, সঠিক জানেন।
পানি নিয়ে কথাটা ভালো লেগেছে। পানি ছাড়া জীবিত কোষ আসলেই সম্ভব না। তবে সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড এর কাজ “মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গ যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে ।” -এটা একটু কেমন হয়ে গেল। বোঝার বা লেখার ভুল হয়ত।
নয় বছরের অভিজ্ঞতা পুঁজি করে নিউরোসায়েন্স নিয়ে যখন লিখতেই বসেছেন তখন নিশ্চয়ই ভেন্ট্রিকল, মেনিনজেস, সাব-অ্যারাকনয়েড স্পেস, এপেন্ডাইমা, সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বা সংক্ষেপে সিএসএফ সার্কুলেশন ইত্যাদির সাথে পরিচিত, আপনার দেয়া ছবিতেই দেখা যাচ্ছে যদিও। ‘শুকনা নিউরন’কে ঠিক ‘ভিজিয়ে’ রাখার কাজ সিএসএফ করে না মশাই। কথাটা মিসলিডিং। বিজ্ঞানকে সহজ করে না মোটেই।
প্রতিটি নিউরন নিজেই এক একটা কোষ। কোষের সাইটোপ্লাজমে জলীয় অংশের পরিমাণ যথেষ্ট। এইটা নিউরোসায়েন্সের জ্ঞান না অবশ্য। বেসিক বায়োলজি, ৬ষ্ঠ শ্রেণির জ্ঞান।
নিরেট মাথার কারণ ভিন্ন, তাতে বিজ্ঞানের চেয়ে দর্শনের ভার বেশি।
আর ‘মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গ’ কিংবা “প্রত্যঙ্গ(!!)” নিয়েও একই কথা। জীববিজ্ঞানে কোষ, কলা, অঙ্গ, তন্ত্র অথবা ইংরেজিতে সেল, টিস্যু, অরগ্যান, সিস্টেম ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন শব্দ, সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ বহন করে, তাই না?
কর্পাস ক্যালোসাম বুঝলাম; কিন্তু ভেজাল লাগল সহজে বুঝতে গিয়ে-“নিউরন (নিউরন ফাইবার)”।
নিউরন ফাইবার কী বস্তু ঠিক বুঝলাম না। নিউরনের গঠন কি আপনি আরেকবার পড়ে দেখবেন? মাধ্যমিকের বইতে হলেও হবে। তারপর না হয় মস্তিষ্কের হোয়াইট ম্যাটারস নিয়ে লেখার চেষ্টা হবে। নিউরন কিন্তু একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ/ পূর্ণাঙ্গ কোষ, স্নায়ুকলার একক।
বাকি যে কটা লাইন বিজ্ঞান আছে, তাতে আর গেলাম না। ওই ব্যাপারগুলা এমনিতেই অনেক জটিল।
তো বিজ্ঞানকে সহজ করতে গিয়ে বিজ্ঞানের পিণ্ডি চটকে গেলে সমস্যা না? বিজ্ঞানে থেকেই সহজে বিজ্ঞান বোঝানো যায় নিশ্চয়ই, তাই না?
একটা সবিনয় অনুরোধ করি, আপনি এই সিরিজের ‘পর্ব দুই’ লেখার ব্যাপারে ভেবে দেখবেন। একই অনুরোধ শরীরবিদ্যার( যদি আপনি এটা বলতে শারীরবিদ্যা বা শারীরতত্ত্ব বা ফিজিওলজি বুঝিয়ে থাকেন) ক্ষেত্রেও।
আপনার ইতিহাস, রাজনীতি, থিয়োরি অব রিলেটিভিটি, দর্শন, সাহিত্য ইত্যাদিতেও তো ভাল দখল মনে হল(হরমোন না, একই সমস্যা)। সমাজবিজ্ঞানে তো বটেই। ওইগুলো নিয়েই লিখুন না!
@পলাশ, আন্তরিক ধন্যবাদ আপনার সমালোচনার জন্য । আমি ভুলের বা সমালোচনার ঊর্ধে নই , কাজেই অবশ্যই সমালোচনা করবেন – এই আশা-ই রাখি । আপনার সাথে অচিরেই আলোচনা হবে এবং আপনার প্রশ্নের বা মন্তব্যের যথাসাধ্য চেষ্টা করব উত্তর দিতে । ধন্যবাদ ।
@পলাশ, “আমাদের মাথার ভিতরের টিস্যুটা জিলাটিনের তৈরি ।” – আমার এই বক্তব্যটি যদি আপনার বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে আরো যথাযথভাবে বললে বলা যায় যে , ব্রেইন টিস্যুতে জিলাটিন আছে ।
আর নিউরন ফাইবার বা নিউরোফাইবার নিয়ে যদি বুঝতে অসুবিধা হয় , তাহলে ২০১০-এ প্রকাশিত গাজী আজমল ও গাজী আসমত-এর বই ( যদিও আমি চাইনি রেফারেন্স দিতে কিন্তু আপনি যেহেতু পাঠ্যপুস্তকের কথা তুললেন ) উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র : প্রাণিবিজ্ঞান বইয়ের ৮ / ৬.২ , পৃ – ২৪৫ –এ উল্লেখ আছে যে , খন্ডদুটি ভেতরের দিকে কর্পাস ক্যালোসাম নামে চওড়া স্নায়ুগুচ্ছ দিয়ে যুক্ত । এই বিষয়ে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন – http://www.youtube.com/watch?v=2Y8SpG7GY58
CSF নিয়ে আপনি যেকথা বললেন সেকথা কি ঠিক ? আপনি আমার লেখার এক অংশ নিয়ে কথা বললেন অপর অংশকে বাদ দিয়ে । উপরের লেখা থেকে বক্তব্য হাজির করছি – তাহলে এই যে , সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড ( Cerebrospinal Fluid বা CSF ) এর কাজ কী ? সহজভাবে আমরা বলতে পারি যে , এর কাজ হচ্ছে –
১ । মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গ যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে ।
২ । এই তরলটা মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর শক , আঘাত ইত্যাদি থেকে মাথার বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে । আমরা এটাকে সহজ করি । আমাদের এটা মনে রাখলেই চলবে যে , আমাদের মাথার ভিতরে এক ধরনের তরল আছে যার কাজ হচ্ছে মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাতে শুকিয়ে না যেতে পারে । এই তরলটা মাথার ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতিকর শক , আঘাত ইত্যাদি থেকে মাথার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে রক্ষা করে । ব্যাস , এটুকু হলেই চলবে ।
নিউরন কিন্তু একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ/ পূর্ণাঙ্গ কোষ, স্নায়ুকলার একক। – আমি কি কখনো তা না করেছি ? পানি তরল , প্রস্রাব তরল , তেলও তরল । নিশ্চয়ই পানি তরল বিধায় তেল তরল হতে পারবে না এমন তো কথা নয় ।
আরো কিছু অসঙ্গতি আছে আমার লেখায় । কিছু উদারণ দেই –
১ ) মাথার ওজন ১.৩৬ কেজি। এটা কি সঠিক ওজন ? উত্তর – না ।
২ ) এক হাজার কোটি নিউরন আছে । এটা কি সঠিক সংখ্যা ? উত্তর – না ।
৩ ) আমি বলেছি “মাথাবিজ্ঞান” । কিন্তু কথাটা কি ঠিক ? সুন্দর ও সঠিক শব্দ হবে “মস্তিষ্কবিজ্ঞান” । এর মাঝে আমি মস্তিষ্কের সংজ্ঞার্থও দেয়নি । ২০১০-এ প্রকাশিত গাজী আজমল ও গাজী আসমত-এর বই ( যদিও আমি চাইনি রেফারেন্স দিতে কিন্তু আপনি যেহেতু পাঠ্যপুস্তকের কথা তুললেন ) উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র : প্রাণিবিজ্ঞান বইয়ের ৮ / ৬.২ , পৃ – ২৪৫ –এ উল্লেখ আছে যে , সুশুমাকান্ডের শীর্ষে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্ফীত অংশ করোটির মধ্যে অবস্থান করে , তাকে মস্তিষ্ক বলে । – সংজ্ঞার্থটা অনেক কঠিন কঠিন লাগে আমার কাছে ( আমার মত সাধারণ মানুষদের কাছেও ) ; অবশ্য তা অনেক সহজ মনে হবে আপনার কাছে ।
এরকম আরো অসঙ্গতি আছে আমার লেখায় । আলস্যের অভাবে তা আর লিখছি না । আমি আমার লেখাটা লিখেছি সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণভাবে । ধন্যবাদ ।
এমন বিজ্ঞান লেখা আসুক আরও অনেক! বিজ্ঞানশিক্ষার আসর আবার হয়ে উঠুক মুক্তমনা!
@গুবরে ফড়িং, আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব । আশা করি , আমার অভিযাত্রায় আপনাদেরকেও সাথে পাবো । ধন্যবাদ ।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
@তামান্না ঝুমু, আন্তরিকতার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
স্বাগতম মুক্তমনায়। :rose:
@লাবিব ওয়াহিদ, আন্তরিকতার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।