আমার ছোটবেলাকার কথা। তখন অনেকের মধ্যে একটা ধারণা ও মূল্যবোধ প্রচলিত ছিল, যে সকল বাবা-মা ও শিক্ষক যত বেশি নিষ্ঠুরভাবে কিঞ্চিৎ কারণে বা সম্পূর্ণ অকারণে ছেলেমেয়েদেরকে পিটিয়ে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারে সে তত বেশি আদর্শ ও অনুকরণীয় পিতামাতা ও শিক্ষক। যে সকল শিক্ষক ও পিতামাতা ছেলেমেয়েদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উত্তমভাবে ভেঙে চুড়ে চুরমার করে দিতে পারতো না আদর্শ পিতামাতা ও শিক্ষকের তালিকায় তাদের নাম গৌরবের স্থান পেতো না। আদর্শ পিতামাতা ও শিক্ষক হবার জন্য ও আদর্শবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হবার জন্য অনেকে প্রতিযোগিতা লাগাতো। তাই শিশুদের সত্ত্বাধিকারীরা কারণ ছাড়া ধরে অসহায় শিশুদেরকে জনসমক্ষে পিটিয়ে বাহবা নিয়ে নেবার অবিরাম একনিষ্ঠ চেষ্টাও করতো।
শৈশবে অনেককিছুর অভাব থাকলেও ধোলাইয়ের কোনো অভাব ছিল না। একেবারে দশদিক থেকে বেশ মুক্তহস্ত-পদে পেয়েছি সেটা। বাড়ির রিমান্ড থেকে বাঁচার জন্য ত্রাহি ত্রাহি করে স্কুলে দৌড় দিতাম। সেখানেও রিমান্ড। পথে ছেলেদের প্রেম-উৎপাত। সেজন্য বোনাস রিমান্ড স্কুলে ও বাড়িতে। কোন ছেলে আমার দিকে আড়চোখে তাকায়, কোন ছেলে মনে মনে আমাকে ভালোবাসে তা আমি জানার আগে বাড়িতে ও স্কুলে জেনে যায়। এজন্য উভয় জায়গায় চলতে থাকে এক ধোলাইয়ের সাথে অন্য ধোলাই ফ্রী। বিভিন্ন প্রকারের ও পদ্ধতির ধোলাই ও থেরাপি। যেমন, জুতা-থেরাপি, আগুন-থেরাপি, পানি-থেরাপি, সূর্য-থেরাপি, ঝাড়ু-থেরাপি, লাকড়ি-থেরাপি, খুন্তি-থেরাপি, পিড়ে-থেরাপি, হাতুড়ি-থেরাপি, পাতিল-থেরাপি, ইত্যাদি। এছাড়া হাত পা কনুই ও হাঁটু থেরাপি ছিল সকল প্রকারের থেরাপির সঙ্গে কমনভাবে ফ্রী। অমুক ছেলে তোর সাথে কথা বলার জন্য মনে মনে পরিকল্পনা করেছিল কেন, অমুক ছেলে তোর দিকে তাকানর চিন্তাভাবনা করেছিল কেন। অতএব থেরাপি ও ঢেঁকি-কোটা।
আমার ছোটফুফু দেখতাম তার অত্যন্ত ছোট ছোট বাচ্চাদের অন্যান্য থেরাপির পরে ফিনিশিং হিসেবে প্রতিদিন কয়েকবার করে পুকুর থেরাপি দিতো। পুকুর-থেরাপির সাথে আপনারা পরিচিত নন তো? খুবই উপকারী ও মজার থেরাপি কিন্তু। বাচ্চাদেরকে পিটিয়ে আধমরা করে পুকুরের মাঝখানে ছুঁড়ে মারতো ফুফু। ওরা হাঁসের বাচ্চার মতন মাঝপুকুর থেকে সাঁতরে কূলে চলে আসতো। তারপর তাদের আরও দূরে নিক্ষেপ করতো। আবারও চলে আসতো তারা। এভাবে অনেকক্ষণ চলতো পানিতে ফ্রী বাচ্চা-নিক্ষেপকরণ। এতে করে তারা সাঁতারও শিখে গিয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি। বড়ফুফু তার ইউনিভার্সিটিতে পড়া মেয়েকে নখ লম্বা রাখার অপরাধে পেতলের খুন্তি থেরাপি দিয়েছিল, ঝাড়ু-থেরাপি দিয়েছিল জরজেট ওড়না পরার অপরাধে। ছেলেকে জুতা-থেরাপি, ঝাড়ু-থেরাপি ও অবশেষে পানি-থেরাপি দিয়েছিল ইউনিভার্সিটি থেকে একটু দেরী করে ফেরার অপরাধে। আরেক মা তার ছেলেকে সাইকেলের চেইন খুলে পিটিয়েছিল। ছেলে মেট্রিকে স্ট্যান্ড করেছিল, ইন্টারমিডিয়েটে পেয়েছিল ফার্স্ট ডিভিশন। এটা ছিল অপরাধ।
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ছেলেবেলাতে লিখেছেন, তখনকার দিনের বাবা-মা’রা মনে করতো- ‘পিটুনির উপর না রাখলে ছেলেমেয়ে বিগড়ে যায়।‘ তাই ছেলেমেয়ে যাতে মারের অভাবে বিগড়ে না যায় সেদিকে বাবা-মার সতর্ক দৃষ্টি ছিল। রুটিন করে অকারণে পিটান হতো বাচ্চাদের। পিটাতে পয়সা তো খরচ হয় না। অতএব বিনে পয়সার সার্ভিস দিয়ে বিনোদন লাভ করতে অসুবিধে কোথায়? তাঁর এক মামা তাঁদের বাড়িতে থেকে ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে দিয়ে ফেল করতো। সে তার ভাগনে-ভাগ্নিদেরকে পানির কুয়োতে তাহ ধরে উপর থেকে ঝুলিয়ে রেখে বলতো, ফেলে দিলাম, ছেড়ে দিলাম। ঝুলন্ত শিশুটি ভয়ে চিৎকার করে কুয়ো বিদীর্ণ করে দিত। মামা তাতে মজা পেয়ে অট্টহাসি হাসতো। স্কুলে এক শিক্ষক হুমায়ূনকে কথায় কথায় খুব অপমান করতো। সেজন্য তিনি সে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন।
কবি জসীম উদ্দীন যেদিন প্রথম পাঠশালায় গিয়েছিলেন, সেদিন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, কয়েকটি ছেলে মধ্যাহ্নের গনগনে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। আরো কয়েকটি ছেলে বিচিত্র উদ্ভট ভঙ্গিতে শাস্তিরত। এসব দেখে প্রথমদিনেই পাঠশালা, বিদ্যাশিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রতি তাঁর বিষম ভীতি জন্মে গিয়েছিল।
বিদ্যাসাগরকে তাঁর পিতা শ্লোক মুখস্থ করার জন্য প্রতিদিন ক্রিকেট বলের মতো পেটাতেন। ব্রাহ্মণ ছিলেন তাঁরা। ব্রাহ্মণ-হত্যা নাকি মহাপাপ। তাই তাঁর প্রতিবেশীরা তাঁকে তাঁর ব্যাটিংরত পিতার হাত থেকে উদ্ধার করতে আসতো এই জন্য যে, তাদের আশেপাশে কোনো ব্রাহ্মণ খুন হয়ে গেলে প্রতিবেশী হিসেবে তাদের গায়েও ব্রাহ্মণহত্যার মহাপাপের ভাগ পড়বে; অসহায় বালকটির প্রতি মায়া বশত কিন্তু নয়।
অবনীন্দ্রনাথ স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন। ক্লাসে মাস্টার পড়াচ্ছেন, pudding- পাডিং। অবন বললেন, না মাস্টারমশাই, পাডিং না, পুডিং। আমি বাড়িতে পুডিং খাই তো। মাস্টার রেগে বললেন, পাডিং বল। অবন বললেন, না বলবো না। পুডিং। এভাবে সারাদিন চললো। স্কুল ছুটি হয়ে গেল। সব ছেলেরা চলে গেল যার যার বাড়ি। অবনকে আটকিয়ে রাখা হলো পাডিং বলানোর জন্য। অবন বারবার বললেন, পুডিং। এবার মাস্টার তাঁকে দড়ি দিয়ে ইচ্ছে মতন পেটালেন। রক্তাক্ত করলেন। তবুও অবন পাডিং বললেন না। বললেন, পুডিং।
আমাদের স্কুলের হেড স্যার শামসুল হুদা দেখতে খুবই রোগা ও পুষ্টিহীন ধরনের ছিলেন। তাঁর পুষ্টিহীনতা রোগ প্রকটভাবে প্রকাশিত হতো যখন তিনি কোনো ছেলেকে পেটাতেন। ছেলেদেরকে কারণে-অকারণে পিটিয়ে আনন্দ পেতেন তিনি। খোলা মাঠে বা স্কুলের বারান্দায়, যেখান থেকে স্কুলের ও স্কুলের বাইরের সবাই ভালো করে দেখতে পায় এমন জায়গায় এনে তিনি ছেলেদের ব্যাটিং করতে আরম্ভ করতেন। আক্রান্ত ছেলেটি আর্তনাদ করতো, স্যার গো স্যার, আর করবো না, স্যার গো পায়ে পড়ি, স্যার আপনি মা-বাপ, স্যার মাফ করে দেন। এতে স্যার দ্বিগুণ উৎসাহ উদ্দীপনায় অপার উল্লাসে গালি ও ব্যাটিঙের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে নিজেকে দুর্ভিক্ষকবলিত পিশাচ প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগতেন। অনেকক্ষণ পরে ছেলেটির চিৎকার থেমে যেতো। তার বিধ্বস্ত অজ্ঞান দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ত। তবেই স্যারের ব্যাটিং শেষ হতো। তবে গালি চলতে থাকতো। ছেলেটির জ্ঞান ফিরে এলে স্যার আবার ব্যাট নিয়ে দৌড়ে গিয়ে নেকড়ের মতো ক্রোধে জিজ্ঞেস করতেন, আর করবি, হারামজাদা? মেয়েদেরকে করতেন জঘন্য ভাষায় টিটকারি। মারতেনও। তাঁর কাছে শিক্ষকতার মানে ছিল মারপিট আর গালাগালি। ওটাই ছিল তার জীবিকার মাধ্যম। তিনি সরকারের কাছ থেকে ওইজন্যই বেতন পেতেন। বাদল নামের একটি ছেলেকে একদিন স্যার পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছিলেন। তার পরদিন বাদলের মা স্কুলে এসেছিল স্যারের সাথে কথা বলতে। জিজ্ঞেস করেছিল, আমার ছেলে অন্যায় করলে আপনি শাসন নিশ্চয়ই করবেন। তাই ব’লে এভাবে? মেরে ফেলে দেবেন ছেলেটিকে? সবাই সেদিন বলেছিল, কী বজ্জাত মহিলা রে বাবা!স্যার কারুকে ইচ্ছা করলে মেরে ফেলে দেবেন। তাতে আবার কথা কীসের? আমিও সুর মিলিয়েছিলাম কিন্তু তাদের সাথে। কারণ ওই পৈশাচিকতাকেই আমি মহত্ব ব’লে জানতাম। আমি যে তা-ই শিখেছিলাম আমার পারিপার্শ্বিকতা থেকে। আমাকে যে তা-ই শেখানো হয়েছিল। আরো কয়েকজন স্যার ছিলেন যাঁরা পিশাচের মতন ছেলেমেয়েদের পেটাতেন ও গালি দিতেন। কয়েকজন মানবিক স্যারও আবশ্যি ছিলেন। ক্লাস এইটে একটি মেয়ে একদিন জরজেট ওড়না পরে এসেছিল। তাপস স্যার তাকে বলেছিলেন, এই উজবুক, মশারি পরে এসেছিস কেন। তোকে কি মশা কামড়ায়? তারপর থেকে মেয়েটিকে সবাই মশারি ব’লে ডাকতো।
রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন, “ ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে অকালে ভরতি হইলাম। সেখানে কী শিক্ষালাভ করিলাম মনে নাই কিন্তু একটা শাসনপ্রণালীর কথা মনে আছে। পড়া বলিতে না পারিলে ছেলেকে বেঞ্চে দাঁড় করাইয়া তাহার দুই প্রসারিত হাতের উপর ক্লাসের অনেকগুলি স্লেট একত্র করিয়া চাপাইয়া দেওয়া হইত।“
আরেকজন শিক্ষকের কথা রবি বলছেন, “ তিনি এমন কুৎসিত ভাষা ব্যবহার করিতেন যে তাঁহার প্রতি অশ্রদ্ধা বশত তাঁহার কোনো প্রশ্নেরই উত্তর করিতাম না।“
ফাদার ডি পেনেরান্ডা নামে রবীন্দ্রনাথের একজন শিক্ষক ছিলেন। তাঁর ক্লাসে একদিন রবি অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিলেন। এক সময় তিনি রবির পেছনে দাঁড়িয়ে নত হয়ে তাঁর পিঠে হাত রেখে অত্যন্ত স্নেহের স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘টাগোর, তোমার কি শরীর ভালো নাই।“ রবি সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন জীবনস্মৃতিতে এইভাবে; “ বিশেষ কিছুই নহে কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই প্রশ্নটি ভুলি নাই। অন্য ছাত্রদের কথা বলিতে পারি না কিন্তু আমি তাহার ভিতরকার একটি মহৎ মনকে দেখিতে পাইতাম; আজও তাহা স্মরণ করিলে আমি যেন নিভৃত নিস্তব্ধ দেবমন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করিবার অধিকার পাই।“
এ’কটা লাইন যখনই পড়ি আমার মনে প’ড়ে যায় কবীর স্যারের কথা। কী যত্ন করে, কতো আন্তরিকভাবে ক্লাসে পড়াতেন তিনি। কতো ঋণ আমার তাঁর কাছে। শিক্ষার ঋণ, তার চেয়েও বড় স্নেহের ঋণ। এই ঋণ আমার কাছে এক বিশাল আনন্দের বোঝা। একবার কেউ একজন ফেসবুকে স্যারের সাম্প্রতিক কালের ছবি দিয়েছিল। স্যারের কোঁকড়ানো কালো চুলগুলি সব সাদা হয়ে গেছে দেখলাম। দেখেই মনের ভেতর হু হু ক’রে উঠলো। আহা, স্যার বুঝি বুড়ো হয়ে গেছেন!
বাবা-মা সন্তানকে পৃথিবীতে আনে। আবার অনেক বাবা-মাই সন্তানের পৃথিবী ও জীবনকে বিভীষিকাময় ক’রে তোলে। শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। তারাই অনেক ক্ষেত্রে মনুষ্য সন্তানকে গাধার মতন পিটিয়ে তাদের শারীরিক ও মানসিক চিরস্থায়ী বৈকল্যের সৃষ্টি করে। অনেক পিতামাতা ও শিক্ষক পেটানোর সময় এমন পিশাচ হয়ে ওঠে যে, খেয়ালই করে না কোন জায়গায় তারা আঘাত করছে। মগজে, চোখে,নাকে , মুখে, ফুসফুসে, কিডনিতে, কলিজায়, পাকস্থলীতে, হার্টে সমানতালে পিটাতে থাকে। এতে ক’রে ভিকটিম শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে, মনের ওপর পড়তে পারে চিরস্থায়ী প্রভাব, এমনি কি মারাও যেতে পারে। কতো শিক্ষকের পিটুনিতেই তো কতো কতো ছেলে মারা গেছে। এখন নাকি আইন পাস করানো হয়েছে, স্কুলে ছেলেমেয়েদের পিটানো যাবে না। তবুও কি বন্ধ হয়েছে পেটানো? মাদ্রাসার ছেলেদেরকে কীভাবে পেটানো হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন, “ শাসনের দ্বারা, পীড়নের দ্বারা, কানমলা এবং কানে মন্ত্র দেওয়ার দ্বারা, আমাকে যাহা কিছু দেওয়া হইয়াছে তাহা আমি কিছুই গ্রহণ করি নাই। যতক্ষণ আমি আপনার মধ্যে আপনি ছাড়া না পাইয়াছি ততক্ষণ নিষ্ফল বেদনা ছাড়া আর কিছুই আমি লাভ করিতে পারি নাই।“
উৎপীড়ন গালিগালাজ অত্যাচারের দ্বারা কারুর কাছ থেকে বাহ্যিক ভীতি ও আন্তরিক ঘৃণা আদায় করা সম্ভব। শ্রদ্ধা কিংবা ভালোবাসা নয়। এসব পারস্পরিক ব্যাপার।
মাইর দিয়ে যদি হত তা হলে বাংলা বিহার উড়িশা ডাক্তার, ইংজিনিয়ারে ভরে যেত।
@ ণিরাবেগ নাবিক, তাত্ত্বিক ভাবে দেখলে আপনি যেটা লিখেছেন একদম সঠিক। তবে আমাদের প্রত্যেকের তো কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তাই হয়ত সব বুঝতে পারিনা। তা ছাড়া শিশুরা তো সমাজ থেকেও শেখে তা না হলে আদর্শবান বাবা মার সন্তান অনেক সময় অমানুষ হয় কি ভাবে বলুন?
আপনার বিচক্ষণ মতামত দেবার জন্য ধন্যবাদ।
@অনিন্দ্য পাল, যারা ক্লাসে বেশি দুষ্টুমি করে তাদেরকে আলাদাভাবে পড়ানো যায়।যারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে তাদেরকে পৃথকভাবে বসানো যায়।কোনো শিক্ষার্থী যদি অমনোযোগী হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে শিক্ষকেরই অধিক ব্যর্থতা।ভীতি প্রদর্শন কখনো কোনো অবস্থাতেই গ্রহণীয় নয়। আমরা ধরে নিতে পারি, শাসনের মাধ্যমে শিক্ষক আসলে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে চাচ্ছেন।
মা-বাবার ক্ষেত্রেও একই কথা।মা-বাবার স্নেহ কখনো শিশুকে খারাপ কাজে উত্সাহ দেয় না, বরং শিশুকে বিপথে চালিত করে মা-বাবার নিজস্ব নৈতিক দূর্বলতা।আপনি সবসময় শিশুকে সত্ থাকতে বলবেন, অথচ পিএসসি পরীক্ষার আগের রাতে তাকে প্রশ্ন জোগাড় করে দেবেন; সবসময় সত্য বলার উপদেশ দেবেন, অথচ স্কুলে কম বেতন দেয়ার জন্য সন্তানকে বলবেন বাবার আয় কমিয়ে বলতে-এমন হলে তা সন্তানকে মানসিকভাবে বিকলাঙ্গই করে তুলবে।
আরেকটা কথা অনেকে বলে-“অনেক বুঝিয়েছি।তবু বুঝে না তাই এখন শাসন করি।” শিশুর বুঝতে না চাওয়ার কারণ কিন্তু একটাই-যে বুঝাচ্ছে তার ব্যক্তিত্ব শিশুর কাছে গ্রহণীয় নয়।তাই আগে নিজেকে বুঝতে হবে,নিজেকে হতে হবে গ্রহণযোগ্য।
এগুলোর সবচেয়ে বড় শিকার হয় অ্যাটেনশোন ডেভিসিয়েন্সি সিন্ড্রমে ভোগা ছেলে-মেয়েরা।
এখনতো শুনেছি ক্লাসে পেটানো আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কতটুকু মানা হয় কে জানে।
@তানভীরুল ইসলাম,
লিখিত আইন কতকিছুরই তো রয়েছে আমাদের দেশে। অনেক আইন আছে শুধু কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তার উলটো।
চমৎকার হয়ছে! পড়ে ভাল লাগল । অসংখ্য ধন্যবাদ 😀
@আরাফাত রহমান,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
@ মাহফুজ,
‘আমার কাছে মনে হয়- শাসনদন্ডের প্রয়োজন আছে; তবে গরুর মত পিটুনি দেয়ার মত নয়।’
হাঁ আমারও তাই মনে হয় । আমি তো স্কুলে যেতেই ভয় পেতাম। বিনা কারনে যে কত দিন মার খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে এখন অবস্তা যা দাঁড়িয়েছে তাতে কারনেও শাসন করা যাবে না। সারা ক্লাসে একটা বা দুটা ছাত্র পুরো ক্লাসের পরবেশ নষ্ট করে দিতে পারে। অথচ মাস্টারমশাই দের কিছু করার নেই। তাদেরও বয়ে গেছে শাসন করতে। মাইনাটা পেলেই হল। খবরে প্রকাশ ইংল্যান্ড এ আবার বেত ফিরিয়ে আনার কথা ভাবা হছে। পিটুনি আনলিমিটেড যেমন ভাল নয়। এখনকার নো শাশনও কিন্তু শিশুদের ভাল হয় নি।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্কুল জীবনের নানা তথ্য জানতে পারলাম, যা আগে জানতাম না।
আগের আমলে স্কুলে বেত দিয়ে শাসন করা হত। বর্তমানে ক্লাসে বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলা নিষেধ। তারপরও কোন কোন স্কুলে এখনও পিটুনি দেয়া হয়।
আমার কাছে মনে হয়- শাসনদন্ডের প্রয়োজন আছে; তবে গরুর মত পিটুনি দেয়ার মত নয়।
জ্ঞানী সলোমন বলেছেন- “কোন শাসন আপাতঃ আনন্দের বিষয় বলে বোধ হয় না; কিন্তু তদ্বারা যাদের অভ্যাস জন্মেছে, পরে তাদেরকে শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে।”
আজকাল অনেকে সবকিছুর মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিশু নির্যাতনের খোজ পেয়ে থাকেন। তসলিমা নাসরিন শিশু খতনাটাকে শিশু নির্যাতন-এর পর্যায়ে গণ্য করেছেন।
@মাহফুজ,
শিশুরা ভুল করলে তাকে শুধরে দেবার দরকার নিশ্চয়ই আছে। অন্যায় করলে শাসনের দরকার আছে। কিন্তু শাসন কখনোই দন্ড হতে পারবে না। তাহলে তা শোষণ বা নির্যাতন হয়ে যাবে। শারীরিক আঘাতের তো প্রশ্নই আসে না।
আমাকে অবশ্য ধোলাই দেয়ার আগে একটা সুযোগ দেয়া হত, কচি বাঁশের তৈরি ছাদখোলা বেড়ার মধ্যে আটকে রাখা হত। সেখান থেকে বের হলেই ধোলাই। এক্ষেত্রে দাদু মূল ভূমিকায় ছিল। কখনো ঐ ঘরের ভেতর বেঁধে রাখা হত। :-Y
@সুদীপ্ত শেল্ডন,
আমার দশদিকেই ছিল রিমান্ড থেরাপি আর ধোলাই। এছাড়া আর কিছুই না।