অবিশ্বাস্য! শিশুর খুব কাছের মানুষ যারা তারাই করে এই অন্যায়। জন্ম থেকে যারা সব’চে আপন তারাই শিশুর মাথায় ঢোকায় ভয়। ভুত, পেত্নী জ্বীন, রাক্ষসের ভয়। ঈশ্বর, আল্লা, গড, দেবতা ইত্যাদির ভয়। পরকালে আত্মাকে শাস্তি দেবার ভয়। দোজখের ভয়। রূপকথার দানবের ভয়। নিঃসঙ্কোচে এবং দ্বিদ্ধাহীন চিত্তে তারা এইসব করে চলেছে বংশ পরম্পরায়, যুগ যুগান্ত ধরে। কেই কেউ আঙুল দেখিয়ে বলেন যে মা বাবারা এভাবেই আসলে শিশু নির্যাতন করে।
যে মা বাবারা যুক্তি প্রমানের তোয়াক্কা না করে শিশুকে ভয় দেখিয়ে বিশ্বাস করায় রূপকথার মত গায়েবী নানান ধর্ম, সেই মা বাবারাই আবার তাদের শিশুকে দেয় কঠিন শাস্তি যদি সন্তান দুই আর দুই যোগফল এর উত্তর চার বলতে ভুল করে ফেলে। অথচ ধর্মের বেলায় যোগফলের উত্তর অগ্রাহ্য করা হয়। শিশুকালেই শেখানো হয় যে ধর্মের অদেখা, অজানা অদ্ভুতকে প্রশ্ন করা ক্ষমাহীন ভয়ঙ্কর এক শাস্তিযোগ্য এক অপরাধ। লক্ষ লক্ষ বছর পুড়তে হবে নরকের আগুনে। কে শেখায়? এই একই মা বাবারা। ভয় দেখিয়ে ধর্ম মানতে বাধ্য হবার এমন মগজ ধোলাই করেই চলেছে কাছের মানুষরা, বড়রা আর মা বাবারা। ধর্ম ছাড়া অন্য কোন কিছু কিন্তু যুক্তিহীন হতে পারবে না, শুধু ধর্ম শেখা আর চোখ বন্ধ করে তা পালন করায় কোন যুক্তি থাকবে না। প্রশ্ন করা যাবে না একেবারেই। শুধুমাত্র ভয় করতে হবে। মেনে নিতে হবে। সত্য মিথ্যা যাঁচাই করার চেষ্টাও করা যাবে না। শিশুমনে ধর্মভয় আসলে ঢোকায় মা বাবারাই, কাছের মানুষ, বড়রা, মগজ ধোলাই করে এই মগজধোপারা। ব্যতিক্রম নেই তা নয়। অনেক সচেতন, উদারমনা এবং মুক্ত মনের সোনার মানুষ রয়েছেন যারা খুব ভালো ভাবেই বড় করে চলেছেন তাদের শিশুদের। এরা দায়িত্বশীল সুন্দর মানুষ। প্রানপনে চেষ্টা করে চলেছেন গতানুগতিক না হবার। এসব মানুষই নিয়ে যাচ্ছে অন্যদের সত্যের কাছাকাছি, নিরন্তর।
মগজধোপাদের দিকে আবার একটু চোখ ফেরানো যাক। মগজধোপারা তাদের শিশুদের নিয়ে কি খেলা খেলে তা নিয়েও একটু কথাবার্তা বলা যাক।
প্রায় ১০০ বছর আগের কথা। একটি সুস্থ সুন্দর শিশুকে ভয় দেখাবার পরে সে কিভাবে বদলে যায় এ নিয়ে ১৯২০ সালে আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরীক্ষা চালানো হয়, এইটি লিটল এলবার্ট এক্সপেরিমেন্ট নামে পরিচিত। যৌথ ভাবে পরীক্ষাটি চালান জন বি ওয়াটসন এবং রসেলী রাইনার নামের দুজন বিজ্ঞানী। পরীক্ষাটিতে আলবার্ট নামের ন’মাসের একটি শিশুর সামনে কয়েকবার একটা সাদা ইঁদুর ছেড়ে দেয়া হয়, প্রথম পর্বে। ইঁদুরখানা শিশুর চোখের সামনে ঘোরাফেরা করে চলে যায়। ন’মাসের এলবার্ট মোটেও ভয় পায় না। সে ইঁদুরটিকে ছুঁয়েও দেখে। দ্বিতীয় পর্বে সেই একই শিশুর সামনে ঐ ইঁদুরটাই আবার ছেড়ে দেয়া হয়, কিন্তু এবার শিশুটি প্রতিবার ইঁদুর ছোঁয়ার সাথে সাথে পরীক্ষকরা শিশুর চোখের আড়াল থেকে একটি ইস্পাতের পাতে হাতুড়ি পিটিয়ে জোর শব্দ তোলে। বারবার চমকে উঠতে থাকে শিশুটি। পরবর্তী পর্বগুলোতে ইঁদুর দেখলেই ভয় পেতে শুরু করে শিশু এলবার্ট, শব্দ করবারও দরকার হয় না ভয় দেখাতে। ভয়’কে অনেকটা এভাবেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয় শিশুমনে। পদ্ধতিটা শব্দই হোক বা অযৌক্তিক শাসন, আতঙ্ক কিংবা পিটুনিই হোক, ব্যপারটা ওই একই, ভয়।
ইচ্ছে করলে এই ভিডিও ক্লিপটি দেখতে পারেন (ব্যাক এরো দিয়ে আবার লেখাটিতে ফিরে আসতে পারবেন)।
লিটল এলবার্ট এক্সপেরিমেন্টের পরীক্ষাপদ্ধতি আজকের মাপকাঠিতে নিষ্ঠুর। শিশুটি যা দেখে, স্পর্শ আর অনুভব করে ভয় পেত না, ভয় দেখানোর ব্যপার ঘটবার পর এখন ইঁদুর দেখলেই ভয় পাচ্ছে সে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন বুঝবেন যে আজকের বেশিরভাগ মা বাবা, বড় যারা, শিশুর কাছের মানুষ যারা, তারা তাদের আদরের শিশুটিকে গায়েবী ভয় দেখিয়ে বড় করছে। করছে নিঃসঙ্কোচে, দ্বিদ্ধাহীন চিত্তে, অন্ধ বিশ্বাসে, মনের সুখে এবং ধর্মীয় আনন্দে। শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে অলিক রুপকথাভিত্তিক আরও অনেক বিধিনিষেধ। শিশুমনে অতি নির্দয় ভাবে দিয়ে দেয়া হচ্ছে শক্ত বেড়া, মুক্ত চিন্তায় বড় হতে দেবার বদলে দেওয়া হচ্ছে বাধা এবং অর্থহীন নিষেধের কাঁটাতার। শিশুটি বড় হয়ে গেলেও ভয়ের চোটে অনেক কিছুকে নিয়ে অতি সাধারণ প্রশ্নটিও করতে পারছে যে এটা কি, কে, কেন, কখন, কোথায় অথবা কিভাবে হল? ধর্ম নিয়ে তো নয়ই। খামোখাই এক মহা স্ববিরোধী মানসিক যন্ত্রণাতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে শিশুকে।
বিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী নিল দেগ্রাস টাইসন বলেন শিশুদের পথ থেকে সরে দাঁড়াও। প্রাসঙ্গিক একটি ক্লিপ এখানে (ব্যাক এরো দিয়ে আবার লেখাটিতে ফিরে আসতে পারবেন)।
আর প্রখ্যাত প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স বলেন, বড় হয়ে আপন জীবন দর্শন বেছে নেবার সুযোগ দেবার বদলে মা বাবারা যখন শিশুকালেই শিশুর ওপর ধর্মের বোঝা চাপিয়ে দেয় সেটা শিশু নির্যাতনই বটে। তবে ধর্ম বিষয়ে জানা, এতে কোন সমস্যা নেই। প্রাসঙ্গিক একটি লিঙ্ক এখানে।
ধনী, ক্ষমতাশালী, পেশীশক্তি আর চালাকদের সাথে আঁতাত করে ধর্মবাদীরা সহজ সরল মানুষদের ভেতর ঢুকিয়েছে পরকালের ভয়। এটা না হলে আজকের গরীব মানুষেরা তাদের পাওনা ছেড়ে দিত না কক্ষনো। ছিনিয়ে নিত তাদের অধিকার। সরল মানুষেরা সংখ্যায় অনেক অনেক বেশি হওয়া সত্বেও চাপানো ধর্মীয় ভয়ের চোটে ধনী, ক্ষমতাশালী, পেশীশক্তি আর চালাকদের বারোটা বাজায়নি। বরঞ্চ সহজে নিজেদেরকে হতে দিয়েছে প্রতারণা প্রবঞ্চনার শিকার।
একসময় যুক্তিবাদী মানুষেরা সুযোগ সন্ধানী ধর্মবাদীদের কোনঠাসা করত যুক্তি দিয়ে। প্রশ্ন তুলে। বলত মানুষ মরে গেলে তো দেখা যাচ্ছে তার দেহ গলে পচে মিশে যায় মাটির সাথে। কল্পনার চাপানো স্রষ্টা কি করে আবার এই মিশে যাওয়া দেহকে শাস্তি দেবে? যুক্তির কথা। এইবার ধর্মবাদীরা ‘আত্মা’ নামের এক গায়েবী জিনিস পয়দা করল। বলতে শুরু করল, ওই আত্মাকেই দেওয়া হবে কঠিন শাস্তি। সরল মানুষ ক্রমে ক্রমে মেনে নিলো এমন প্রবঞ্চনা। ধর্মবিশ্বাস নামের এই গায়েবী প্রতারণাকে সত্য মানা শুরু করে দিল। অথচ কেউ কোনদিন বৈজ্ঞানিক ভাবে আত্মাকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ পেল না, পাবেও না। কাজেই আত্মা বলে কিছু আছে তা কল্পনাতেই রয়ে গেল। ওদিকে সহজ সরল মানুষেরা, তাদের মা বাবাদের কাছ থেকে পাওয়া বিশ্বাস আর ভয় বংশ পরম্পরায় তাদের শিশুদের ওপর চাপাতে থাকলো। যা ক্ষতিকর ভাবে আজও চলছে একযোগে, সগৌরবে!
‘আত্মা নিয়ে ইতং বিতং’ এই নিয়ে অভিজিৎ রায় এর সহজ করে চমৎকার কিছু লেখা পড়ে নিতে পারেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে । এসব নিয়ে যে কোন ভালো লেখা পড়লেই বোঝা যাবে এই পরকাল আত্মা এইসব কতখানি অপরীক্ষিত, ফালতু আর কল্পিত।
এ মুহুর্তে আরেকজন মুক্তমনা ব্লগারের লেখার কথা মনে পড়ছে। অনিক। তার প্রাসঙ্গিক লেখাটি সময় পেলে পড়ে নিন চট করে এখানে ।
এখনকার প্রজন্ম আজকের এই মুক্ত তথ্যযুগে যে কোন বিষয়েই তথ্য যাঁচাই করে নিতে পারে নিমিষেই। আজকের মানুষ চাইলেই দ্রুত জেনে নিতে পারে আসল ব্যপার। তারা যখন জানতে পারছে ধর্মের গল্প আর রূপকথায় কোন পার্থক্য নেই, দেখছে ঠাকুমার ঝুলি বা থলের ভেতর দেখছে অদ্ভুত সব কল্পজগতের অবাস্তব কাহিনী, মা বাবাদের নিয়ে তখন তারা কি ভাবছে? মুক্ত তথ্যযুগে জ্ঞানের আলোয় নতুনরা উদ্ভাসিত যেমন হচ্ছে তেমনি বিব্রতও হচ্ছে তারা তাদের অভিভাবকের দায়িত্বহীনতার কথা ভেবে। কষ্ট হচ্ছে মেনে নিতে তাদের প্রিয় মানুষদের এই অন্যায়।
দেশের প্রায় সকল শিশুই মানসিক ভাবে নির্যাতিত। ধর্মভয় দেখিয়ে অভিভাবক নিয়ন্ত্রন করেছে শিশুর ধর্মাচরণ। বিনা প্রশ্নে আর নি:সংশয়ে ধর্ম মানতে বাধ্য করা হচ্ছে শিশুদের। অভিভাবকদের চাপানো আপোষহীন ধর্মীয় শাসন, শিশুকালে ঢোকানো ভয়, নিষেধ, শাস্তি ও গায়েবী পুরস্কার আজকের শিশুকে অস্বভাবিক করে বড় করছে। জ্ঞানার্জনের অপার অসীম সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে ধর্মীয় নিষেধের সীমানা টেনে। সাধারণ জ্ঞান অর্জনে শিশুকালে রোপিত ভয় হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর এক মানসিক বাধা। এইসব শিশুরা, যারা বিদ্যান হচ্ছে তাদের মধ্যেও অনেকের রয়ে যাচ্ছে ধর্মীয় অন্ধত্ব, বাড়াবাড়ি, মৌলবাদী ভাবনা আর যুক্তিহীন গোঁড়ামী। এই দৃষ্টিতে আজকের মানুষদের ধর্মীয় গোঁড়ামীর জন্য অভিভাবকরাই দায়ী।
সুতরাং নতুন পুরনো মা বাবারা, শিশুদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সবচেয়ে কাছের মানুষেরা যেন শিশুমনে আর ভয় না ঢোকায় তা আশা করা যাক। এখনকার অভিভাবকরা হোক মুক্ত মনের, হোক সত্যিকার স্নেহপরায়ন আর দ্বায়িত্বশীল মানুষ। শিশু বড় হলে তারপর তাকে তার জীবন দর্শন বেছে নেবার অধিকার দিক এ প্রজন্মের নতুন মা বাবারা। আজকের শিশুদের মগজ ধোলাই বন্ধ হোক। জীবন সুন্দর হোক।
তথ্যসূত্র:
[…] relevant to discussions on belief and conditioning. সহযোগী আর্টিকেল: ভয়, কাজী রহমান, […]
ধর্ম নিয়ে শিশুদের মগজ ধোলাই বন্ধ হোক।
মনকষ্ট পাবার মত তেমন কিছু হয়নি বন্ধু। এখন নিজেকে আলোর পথে রাখলেই হয়ে গেলো। বাকিটুকু সচেতন প্রচেষ্ঠা। আপনি আমি জন্মাবার পর অনেক অন্যায় প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই যে, ধর্ম প্রভাবে আমাদের মা বাবারা ছিলেন প্রধান চরিত্র। ওরা ভাবেনি, আমরা ভাববো, নতুনদের ভাবতে পথ দেখাবো। আর নতুন শিশুদের মুক্ত মনে বড় করতে হলে আমাদের সচেতন চেষ্টাটি করতেই হবে তাই না?
আপনার চমৎকার মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ। উপহার হিসেবে এই ছড়াটি:
ছিল
(সর্ষেতে ভূত)
ভাবনাতে যা ধুলোমাখা, কালকে সেটা আমার ছিল,
হয়ত সেটা স্বপ্ন ছিল, কিংবা ওটা ঝাপসা ছিল,
গায়ের জোরে আড়াল ছিল, সেইটা কারো চক্ষে ছিল,
আমার দেখার চোখটা ছিল, কিন্তু সেটা অন্য ছিল।
অনেক গুলো বছর ছিল, ভেবেছিলাম আমার ছিল,
রঙের জটিল বাহার ছিল, দশদিকেতে ছড়িয়ে ছিল,
হরেক জাতের কথা ছিল, কল্পনাতে ডানাও ছিল,
সাগর পাহাড় এমনি ছিল, চিন্তাকথাও তেমনি ছিল।
ছোট্ট বেলায় বন্ধু ছিল, টিনের একটা ব্যাঙও ছিল,
কাঠের একটা ঘোড়া ছিল, ঘুড্ডি এবং নাটাই ছিল,
বিশ্বাস মূল ব্যাপার ছিল, হাওয়াই মিঠাই সেটাও ছিল,
ভ্যাজাল তবে কিসে ছিল? সর্ষে দানায় বাপমা ছিল!
“মগজধোপা” টার্মটি খুব যুৎসই লাগল, বন্ধু। নিজের হাত দুটি ধুয়ে আসতে ইচ্ছা করছে, আমিও তো কোন না কোন ভাবে একজন মগজধোপা !
পরিবারে মুক্ত পরিবেশে মুক্তভাবে বেড়ে ওঠার সৌভাগ্য ক’জন শিশুর ঘটে।
@তামান্না ঝুমু,
সৌভাগ্য টৌভাগ্য আবার কি? নিজেদেরটা নিজেদেরই করে নিতে হয়। ঘটনা ঘটবার জন্য বসে না থেকে ঘটাতে হবে।
এই জন্য খোলামেলা ভাবে নতুনদের কাছে পৌঁছুবার এই চেষ্টা। ওদের সাহায্য করতে হবে ভয় কাটাতে। একই সাথে নতুন মা বাবাদের বোঝাতে হবে নতুন শিশুদের ভয় না দেখাতে।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে পারলে কিছুটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যেত। আমার ছেলে ক্লাস নাইনে উঠলে তাকে বিঞ্জান শাখায় পড়েও সাথে বাধ্যতামূলক ধর্ম পড়তে হয়েছে। আমি চেষ্টা করেও ইস্কুল থেকে বিষয়টি পরিবর্তন করতে পারিনি বোর্ডের অনুমোদন নেই বলে।বিঞ্জানের সাথে ধর্মেরর জু জু বুড়ির ভয় লাগিয়ে রাখে।
@গীতা দাস,
তা হলেই দেখেন অবস্থা। এই ব্যবস্থা কিন্তু বেশির ভাগ মা বাবারা খুব স্বাভাবিক ভাবেই নেবে। অদ্ভুত, তাই না? একবার ভেবেও দেখবে না হয়ত কেন ধর্ম বাধ্যতামূলক না হলেও চলে।
আমার ধারণা, শিক্ষা ব্যবস্থা সাজাতে হলে অভিভাবকদের ভাবনা ব্যবস্থা ঠিক করতে হবে। ধীর গতি সম্পন্ন দীর্ঘ সময়ের ব্যপার। সেজন্যই নতুন অভিভাবকদের কাছে আবেদন করছি। ওরা আজকের শিশুদের ওইসব বাধ্যতামূলক ধর্মীয় ক্ষুদ্রতা থেকে রেহাই দিতে পারলে আগামী নিশ্চই সুন্দর হবে। আজকের শিশুরা বড় হয়ে তাদের মা বাবাদের আর সর্ষেভূত বলবে না, বরং গর্ব করে বলবে যে, তারা তাদের অভিভাবকের জন্যই এত সুন্দর হতে পেরেছে।
মজার একটা ছড়া না দেবার লোভ সামলাতে পারছি না; ওই যে:
কুতকুত
কুত কুত কুত কুতকুত কুত
বাবা মায়ের বাধ্য পূত;
মানুষ হ’রে নয়রে ভূত,
কুত কুত কুত কুতকুত কুত।
কুত কুত কুত কুতকুত কুত
মরলে আত্মা হয় ফুড়ুৎ;
এই কথাটার নাইরে রুট,
কুত কুত কুত কুতকুত কুত।
কুত কুত কুত কুতকুত কুত
শুনিস অনেক কথাই ঝুট;
শুনে শেখায় রয় যে খুঁত;
কুত কুত কুত কুতকুত কুত।
কুত কুত কুত কুতকুত কুত
না বুঝে খাস উটের মূত;
দিসনে হতে নিজকে লুট,
কুত কুত কুত কুতকুত কুত।
কুত কুত কুত কুতকুত কুত
বাপমা দ্যাখো পাকায় ঘুট;
রইলু বেঁচে ধম্মে যুৎ,
কুত কুত কুত কুতকুত কুত।
কুত কুত কুত কুতকুত কুত
কথা কোন নয়রে কূট;
কুত কুতা কুত কুতকুত কুত,
করিস না আর পুতুরপুত।
অনেক দিন পরে গদ্য লিখলেন। দারুণ।
আমরা পারিবারিকভাবে ধর্ম নিয়ে কখনোই কোনো আলোচনা করি না। না এর পক্ষে, না এর বিপক্ষে। এর কারণে আমাদের ছেলেটা পুরো ধর্মহীন হয়ে বেড়ে উঠেছে। ধর্মের প্রতি তার যেমন কোনো প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা নেই যেমন। তেমনি, এর প্রতি কোনো আক্রোশ বা বিদ্বেষও তার নেই। অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মতো, ধর্মটাও তার কাছে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটা জিনিস।
@ফরিদ আহমেদ,
আমাদের ছানাদেরও একই অবস্থা। এসব ধর্ম ফর্ম ওদের কাছে কোন গুরুত্বই বহন করে না। তবে একটা ব্যপার না বলে পারছি না; ধর্মে অনাকর্ষণ কিন্তু ওদের সামাজিক নানান উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের খাওয়া দাওয়া আর বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজির ব্যপারে বিন্দুমাত্র বাধা সৃষ্টি করে না। মজায় আছে ওরা। হিংসে হয় দেখে। আহা আমরা যদি ওদের মত করে বেড়ে উঠতে পারতাম।
সঠিক লিখেছেন। আমার মেয়ে যখন খুব ছোট ছিল তখন একদিন বলেছিল তার ঠাকুমা কে, ‘ জানো আম্মু, বিল্লু টা (ওর পোষা বিড়াল) অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু ওর ভুতের ভয় করেনা কারন ও তো কোন দিন ভুতের গল্প পড়ে নি তাই” ।
‘ধর্ম আফিম, ধর্ম মেহনতি মানুষের হাহাকার’, কার্ল মার্ক্স আমাদের বহুদিন আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এটাও ঠিক প্রচলিত ধর্ম যখন ছিল না তখনও আত্মার ধারনা ছিল ।
তবে আমার মনে একটা প্রশ্ন আছে, যখন একজন মৃত্যু পথ যাত্রী ব্যাক্তি বুঝতে পারে সে তার সব কিছু প্রিয় জন দের ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে, তার স্ত্রি, শন্তান, নাতি, বন্ধু এবং এই মায়াময় পৃথিবী ছেড়ে তাকে চিরদিনের মত চলে যেতে হবে, সব কিছু তেমন থাকবে শুধু সেই থাকবে না এই চিন্তা তাকে বেদনাহত করে।
তখন আত্মার ধারনা তাকে মানসিক আরাম দেয়। আত্মার ধারনার এই দিকটা আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয় ।
@অনিন্দ্য পাল,
কি চমৎকার ব্যপার তাই না? একটি শিশুও বুঝতে পারে যে অদৃশ্যে বিল্লুর ভয় পাওয়ার কোন আশঙ্কা নেই কারণ ওটিকে কেউ ভয় পেতে শেখায়নি। অথচ আমাদের মা বাবা কাছের মানুষেরা শিশুকালেই খুব করে ধর্মভয় গেঁথে দিয়েছে আমাদের মনে। এখন, যেহেতু আমরা, আজকের মানুষেরা এসব ভয়ের শেকড় কে সহজেই যাঁচাই করে নিতে পারি, সেহেতু নতুন প্রজন্ম যাতে অন্ধ বিশ্বাসে ভয় না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
গুরুজন মুরুব্বীদের চলে যাবার সময় ভুল ভাঙিয়ে দিলে কষ্ট হবে বৈ কি। জীবনভর লালিত ধারনায় তাদের বিদায় শান্তিপূর্ণ হওয়াটাও হয়তো বাঞ্চনীয়। এটি ব্যক্তি ও পরিবারভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আর অন্যদিকে আজকের শিশুদের মুক্তমন নিয়ে বড় করবার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই। এতে অবহেলা করা চলে না। কি বলেন?
আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন (C)
সহমত। (Y)
@তারিক,
ধন্যবাদ তারিক (C)
বাতিঘর
আলো জ্বেলে হাইপেশিয়া জ্বলে;
পাদ্রী মোল্লার স্বার্থপর গনিতে।
জাতিভাগে কাটে দাগ মৌ-লোভী
অবিরাম মারে নিরীহ মানুষ।
চেতনাতে তৃপ্ত মগজধোপা বাপমা
স্বর্গবীমা কিনে বেচে বিশ্বাসে।
পাল্টে চলে সভ্যতার সংজ্ঞা;
অসভ্য সভ্যতা অসভ্য রেখে।
তবু বাঁচে কয়েকটা আলোধরা;
একাগ্র কৌতূহল দিয়ে উপহার।
আমাদের শক্তি তুমি আমি
চলো বাতিঘর বুনি যতনে।
@কাজী রহমান ভাই, কবিতাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। এই লেখাটির মূল বক্তব্যের সাথে “বাতিঘর” কবিতাটির অর্থ অসাধারন মিল।
একটি বিজ্ঞানমনষ্ক ও যুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন প্রজন্ম তৈরী করতে হলে, অলৌকিক/অতিপ্রাকৃতিক শক্তির ভয় ভীতি দেখিয়ে শিশুদের মগজ ধোলাই বন্ধ করতে হবে।
এই মা বাবারা তাদের শিশুদের ঠিকঠাক মত মোগজ ধোলাই না করতে পারলে, নিজেদের ব্যার্থ ভাবে।আদতে এরা নিজেরাও মগজ ধোলাইয়ের স্বীকার, এসবের বাইরে তারা কিছু ভাবতেই পারে না।
সমাজে তেমন কোন ব্যাতিক্রম উদাহরণও দেখা যাচ্ছে না,মগজ ধোলাই তাই চলছেই।
@প্রাক্তন আঁধারে,
সে কারনেই নতুন মা বাবাদের দিকে তাকাতে হবে। আমন্ত্রণ করতে হবে চোখ মেলে দেখবার জন্য। আসল নকল যাঁচাই আর মানসিকতা পরিবর্তনে নিতে হবে আজকের এই প্রযুক্তি নির্ভর তথ্য সুবিধা। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। ব্যাতিক্রম দেখা যাচ্ছে। রূপকথার ধর্ম বিশ্বাসের মত ফালতু ব্যপার ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে নতুনরা। সঙ্গত কারনেই অনাগ্রহী হচ্ছে এই অন্ধ বিশ্বাস পদ্ধতিতে। আগ্রহ দেখাচ্ছে তথ্য নির্ভর সত্যে, আগামী দিনগুলো সুন্দর করতে।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
চমৎকার লাগলো। শিশুরা মুক্তমনা হয়ে উঠুক। আকাশ মালিকের প্রাসঙ্গিক একটি লেখা পড়েছিলাম, সম্ভবত ‘মুক্তমনা শিশুরা’ নামে।
প্রতি বছর দেশে যে হারে মসজিদ মাদ্রাসা বাড়ছে তাতে সহজে মগজ ধোলাই বন্ধ হবে না রে ভাই!
@মাহফুজ,
‘মুক্তমনা শিশুরা’ শিরোনামে লেখাটি কোথাও খুঁজে পেলাম না। অনুগ্রহ করে পরবর্তীতে কষ্ট করে লিঙ্কটা শেয়ার করে দেবেন।
তা বটে, সহজে বন্ধ বন্ধ হবে না। তবে আজকের নতুন মা বাবারা অন্ধ বিশ্বাসী মগজধোপা না হলেই হোল। অন্তত পক্ষে তাদের শিশুদের মগজ ধোলাই না করুক এমন তো চাইতেই পারি; নয় কি? যত বেশি সম্ভব শিশু একটু বড় হয়ে বেছে নিক তাদের জীবন দর্শন। এমন সুযোগ দেয়া হোক তাদের। আজকের মা বাবারা আর যেন সর্ষেভুত হয়ে না থাকে। এমন তো চাইতেই পারি; নয় কি?
অনেক মানুষ
খুব আঁধারে চাদরমোড়া অনেক মানুষ,
বাদুড় চোখে মন পাখাতে রঙিন ফানুস,
ওটাই জীবন, যাপন তাদের সেইখানেতেই,
অনেক মানুষ, অনেক মানুষ, সবাই ওরা ওখানেতেই।
এদিক সেদিক রোদপুড়ে রয় অল্প কজন,
আলোয় ঘেরা দিনের বেলাও ঝাপসা সুজন;
তাদের কাছেই, চোখ্গুলো যার দেখছে রাতে,
দিনের আলো সয়না তাদের, সবাই তারা ওইখানেতে।
অনেক মানুষ অনেক মানুষ একখানেতে;
ছুটছে কেবল ধরতে আঁধার; এক মনেতে,
শব্দবিহীন ঢাকের তালে নাচছে ওরা, সবজনেতে।
আলোটাকে ছায়া ভেবে বুদ্ধিহারা; সবাই ওরা; ওইখানেতে।
মুক্তিপাগল রোদপোড়ারা ছুঁড়তে থাকুক আলো যত,
মগজ ধোপার ছানারা সব; ঘাড় ঘুরিয়ে; পালায় তত;
সর্ষে-ভূতের ধোপায় বলো; ভয় তাড়াতে, ওহে দূর বনেতে,
জানলাগুলো নিপাট খোলো, আলোধরা রোদপোড়াদের এইখানেতে।
@কাজী রহমান,
শিরোনাম হবে- আজিকার মুক্তমনা শিশু। অনেকদিন আগে পড়েছিলাম; শিরোনাম বলতে ভুল হয়েছে। সরি।
http://www.mukto-mona.com/Articles/akash/ajikar_MM.pdf
@মাহফুজ,
লিঙ্কটির জন্য ধন্যবাদ।
বেশ পুরোনো প্রথম দিককার মুক্তমনার কথা মনে করিয়ে দিলেন, পি.ডি.এফ
আমলের। আপনিও যে ওই সময় বা তারও আগে থেকে থেকেই এখানে আছেন সেটাও কিন্তু বেশ বোঝা গেল 🙂
সুন্দর সময়কে মনে করিয়ে দেবার জন্য আবারো ধন্যবাদ (C)