টিক টিক করে সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে; অনেকক্ষণ হলো হাতে কলম-খাতা নিয়েছি। কিন্তু কি লিখব আর কিভাবে লিখবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তবে আমি যা বলতে চাই তা আপনাদের জানানো খুব জরুরী মনে করছি। আমি আর খুব বেশী সময় আপনাদের মাঝে থাকবো না; তবে যাওয়ার আগে আমার জীবনের কিছু কথা আপনাদের বলে যেতে চাই। আমি কতক্ষন লিখতে পারবো সেটা সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই; যখন তখন আমার লেখা থেমে যেতে পারে। হয়তো লেখাটা শেষ করতে পারবো না; তাই খুব সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি।
কিভাবে গুছিয়ে লিখতে হয় আমি তা জানিনা; হাতের লেখাও তেমন ভালো না।
তবুও; আমাকে এড়িয়ে যাবেন না। আমার মতন আর কারো জীবন এভাবে ধ্বংস হতে দেবেন না দয়া করে।
আমি আয়েশা; অবশ্য আমাকে গোনায় ধরার মতন কেউ আমি নই। আমি অতি সাধারন একটা মেয়ে। আপন ২ বোনের মাঝে আমি ছোট। আমাদের বাবা মাড়া গিয়েছিলেন আমরা ছোট থাকতেই। আমাদের মা এরপর আরও একটা বিয়ে করেছিলেন; সেই ঘরে আমাদের আরেকটা ছোট বোন আছে।
মা-সৎ বাবা বেঁচে থাকতেও আমি আর আমার বোন দুটি আলাদা এতিমখানায় বড় হয়েছি।
আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই; মার সাথে থাকতে চাই কিন্তু আমরা অনেক গরিব। আমার সৎ বাবা মাড়া গেলেন প্রায় ২ বছর হয়ে গেল। আমাদের কপালে তাই কখনোই সুখ নেই; শুধু দুঃখ আর দুঃখ।
এতিমখানায় থেকেও আমি সেখানে কলেজে পড়তাম; লেখাপড়ায় ছিল আমার প্রবল আগ্রহ। পড়তাম বললাম কারন এখন আমাকে আর পড়তে দেয়া হয়না। সেই এতিমখানায় আমার আর ঠাই নেই; কোথাও আমার ঠাই নেই। কেন নেই সেটাই আপনাদের বলতে চাই।
প্রায় ১ বছর আগের এক সকালে হোস্টেল সুপার ম্যাম আমাদের সবাইকে একসাথে ডাকলেন। তিনি বললেন আগামীকাল সকালে নাকি আমাদের জন্য এক বিশেষ দিন। সবাইকে সকাল সকাল গোসল করে সবচাইতে ভালো জামা পড়ে সেজেগুজে থাকতে বললেন। আমরা মেয়েরা কানাঘুষা করলাম সারাদিন। কি এমন বিশেষ দিন হতে পারে সেটা নিয়ে একেক জন একেকটা অনুমান করতে লাগলো।
আমি অনুমান করলাম কাল হয়তো কোন ধনী লোক আমাদের একটা গরু না হলে অন্তত একটা খাসী উপহার দেবেন; অনেকদিন হয়ে গেল ফার্মের সাদা মুরগি ছাড়া অন্য কোন মাংস খাওয়া হয়না।
সেদিন সবাইকে সকাল সকাল উঠিয়ে দিলেন সুপার ম্যাম। গোসল করে সুন্দর করে সেজে গুঁজে থাকতে বললেন। গরু-খাসি পেতে হলে সাজা কেন লাগবে সেটা বুঝতে পারলাম না।
ঘন্টা খানেক পর আমাদের ডাইনিং হলে যেতে বলা হল।
হলে গিয়ে দেখলাম আগে থেকেই অনেকে সেখানে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমাকেও লাইনে দাড়াতে বলা হল; আমি দাঁড়ালাম।
মেঝে পর্যন্ত লম্বা সাদা জুব্বা আর মাথায় দাবার কোর্টের মতন নক্সা করা একটা রুমাল বাধা একজন লোক একজন একজন করে সবার সামনে যাচ্ছেন; ভালো করে দেখছেন মেয়েদের। অনেক বেশী অবাক হলাম। এরকম লাইনে এর আগেও আমরা বহুবার দাঁড়িয়েছি। কিন্তু সেটা যখন আমরা অনেক ছোট ছিলাম তখন। এখনো এতিমখানার ছোট বাচ্চাদের দত্তক নিতে মানুষ আসে; তখন ছোটরা এভাবে লাইনে দাড়ায়; বাচ্চাদের মধ্যে থেকে যাকে পছন্দ হয় তাকে তারা দত্তক নেয়।
কিন্তু এখানে আজকে সব বড় মেয়েরা; হচ্ছেটা কি এখানে?
আমরা সেদিন কোন গরু-খাসী এমনকি একটা মুরগীও পাইনি। ওই লোক আমাদের মধ্যে থেকে কাউকে দত্তকও নেননি। আমরা সবাই এখনো আছি। তবে উনি এসেছিলেন কেন? রহস্যটা রহস্যই থাকল; বিষয়টা আমরা সবাই ২ দিন পরেই ভুলে গেলাম।
তৃতীয় দিন মা আর আমার ছোট বোন এতিমখানায় এলেন; আমি ভাবলাম আমার ছোট বোনটাকেও মনেহয় এখানে দিয়ে যাবেন মা। আনন্দিতই হলাম; ছোট বোনটাকে অনেক ভালোবাসি; ওর জন্য আমার সবসময় পেট পোড়ে।
মা বের হয়ে আমাকে আমার জামা কাপড় গুছিয়ে নিতে বললেন। এখানে নাকি আর থাকা লাগবে না আমার।
কি সর্বনাশা কথা; আমার কলেজের কি হবে?
মাকে জিজ্ঞেস করলাম সে কথা। মা কিছু বললেন না।
আমরা সেদিন বাড়ি চলে গেলাম।
বাড়ি ফিরে মার কথা শুনে তো আমার বিশ্বাস হতে চাচ্ছেনা; ওই জুব্বা পড়া লোক এসেছিলেন আমাদের মধ্যে থেকে একজনকে বিয়ে করতে। ওই লোকের নাকি আমাকে পছন্দ হয়েছে। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না; এতিমখানা থেকে কেউ বিয়ে করে?
ওই লোক নাকি অনেক বড়লোক; মিডল ইস্টে থাকে। এতো বড়লোক মানুষ তবে আমাকে বিয়ে করতে চান কোন দুঃখে? আর ওনার বয়স তো আমার বাবার বয়সের চাইতেও বেশী; তবে আমার মতন মাত্র কলেজে পড়া একটা মেয়েকে তার বিয়ে করতে চাওয়ার কারন কি?
কলেজের কথা বলতে মনে পড়লো; আমি তো আরও পড়াশুনা করতে চাই। নিজে পায়ে দাড়াতে চাই। মায়ের কষ্ট দূর করতে চাই। আমি এখনো বিয়ে করতে চাইনা।
১ সপ্তাহের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়ে গেল।
এর মাঝে আমি একবার আমার এতিমখানায় গিয়েছিলাম; ম্যাডাম-স্যারদের সাথে আমার লেখাপড়া আর বিয়ে নিয়ে কথা বলতে। তারা বলেছেন ওই লোক নাকি অনেক ভালো মানুষ। সে আমাকে বিয়ের পর লেখাপড়া করতে দেবেন। ম্যাডাম-স্যারদের কথায় আর তারা আমাকে বুঝানোর কারনেই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।
বিয়ের পর আমার স্বামী আমাকে তার বাসায় নিয়ে জান নি; বিয়েটাও হয়েছে ঘরোয়া ভাবে। গায়ে হলুদ হলোনা; মানুষ খাওয়ানো হলোনা; এ কেমন বিয়ে? ২০ মিনিটেই বিয়ে হয়ে গেল; আর আমার স্বামী আমাদের বাসায় আসার ১ ঘণ্টার মধ্যেই আমাকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার চলে এলেন।
কক্সবাজারে নাকি সমুদ্র আছে পাহাড় আছে। এখানে প্রায় ২৫ দিন ছিলাম; কিন্তু সমুদ্র কিংবা পাহাড়ের দেখা আমি পাইনি।
ওই লোক আমার সাথে প্রতিদিন দিনে ৩-৪ বার জোর করে সহবাস করতো। আমার অনেক কষ্ট হত; চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে হত। তিনি আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রাখতেন। আমার চাইতে ৩ গুন বয়সী একজন কুৎসিত লোকটা যখন আমার উপরে উঠে পরিশ্রমে ঘামতেন তখন আমার দুঃখে কষ্টে সাগরে ঝাঁপিয়ে কিংবা পাহাড় থেকে লাফিয়ে মড়ে যেতে ইচ্ছা করতো।
নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিতাম; মেনে নেয়ার চেষ্টা করতাম যে এই লোকটা আমার স্বামী। সারা জীবন এর সাথেই কাটাতে হবে। ধর্ম স্যারের কাছে শুনেছিলাম জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে আল্লাহ নিজ হাতে লিখে দেন। আমার জন্য আল্লাহ এই লোককেই লিখে দিয়েছেন চিন্তা করে নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম।
লোকটা আমার সাথে এখন পর্যন্ত কোন কথা বলেন নি; বেশীরভাগ সময় তিনি বাইরেই থাকেন। আমি হোটেলের রুমে একা একা বসে থাকি। যখন তিনি আসেন তখন শুধুই সেক্স করেন; কোন কথা বলেন না। তিনি তো আমার স্বামী; আমার সাথে কি তার কথা বলা উচিৎ ছিল না? অন্তত আয়েশা তুমি কেমন আছ; কিংবা ভাত খেয়েছ। সে কিছুই বলেনা। সে আমার নাম জানে কিনা সেটাও এখন সন্দেহ হচ্ছে আমার।
একদিন তার দেয়া ওষুধ খাইনি বলে অশান্তির শুরু হল। কেন আমি ওষুধ খাবো জিজ্ঞেস করলাম। সে যে উত্তর দিলো তাতে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এতো টাকা খরচ করে ৪-৫ দিন মাসিকের কারনে সহবাস থেকে বিরতি সে চায়না বলেই এই ওষুধ। তার হাতে নাকি বেশী সময় নেই; টাকা উশুল করতে হবে।
সেদিন আমি তার মোবাইল থেকে আমার মাকে ফোন করলাম। যে ছেলেটা খাবার দিয়ে যায় তার কাছ থেকে হোটেলের ঠিকানা নিয়ে রেখেছিলাম। মা এলেন ২ দিন পর। মার সাথে লোকটার যে ব্যাবহার করলেন তা শাশুড়ি তো দূরে থাক রাস্তার কুকুরের সাথেও সেই আচরন কেউ করেনা।
সেদিন জানতে পারলাম আমাকে বিয়ে করার জন্য এতিমখানায় সে ২ লাখ আর আমার মাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন নগত। আমাকে কি তিনি তবে বিয়ে করেছিলেন নাকি কিনেছিলেন সেই প্রশ্নটা মনে উকি দিলো কয়েকবার। স্ত্রীর সাথে স্বামী যা ইচ্ছা করতে পারে; মা এখানে কি বলবে? তাই তিনি চলে গেলেন। দিনে ৩-৪ বার তার কোমরের অত্যাচারের সাথে নিয়ম করে মাড়ের অত্যাচার শুরু হল। প্রতিদিন মাড় খাওয়া আর বিছানায় লাশের মতন শুয়ে থাকতে থাকতে নিজের উপরেই ঘৃণা জন্মাতে শুরু করলো।
অবশেষে লোকটা আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেল। সেখানে তার মা আর তালাকপ্রাপ্ত একজন বোন আছেন। মনে মনে ভাবলাম, এখানে হয়তো আমাকে আর কোন অত্যাচার সহ্য করতে হবেনা।
ওই লোকের অত্যাচার আসলেই থেমে গিয়েছিলো; কারন এর ২ দিন পরই তিনি বিদেশ চলে গেলেন।
শাশুড়ি আর ননদের সাথে ভাবলাম এবার শান্তিতেই থাকা যাবে।
কিন্তু সেই সুখ আমার কপালে নেই। আমি কি ঘরের বউ নাকি ঘরের কাজের লোক সেটা নিয়ে সন্দেহ হতে শুরু করলো। আগে শুধু স্বামী মাড়তো; এখন শাশুড়ি মাড়ে ননদ মাড়ে। কথায় কথায় মাড়ে। সারাদিন কাজ করি; ধোয়া কাপড় আবার ধোয়ায়। সব কাজ শেষ হয়ে গেলে আগের করা কাজ আবার করতে বলে, দিনে ৫-৭ বার ঘর ঝাড়ু আর মুছতে বলে। সব আমি মুখ বুজে করে যাই।
আমি শাশুড়ির সাথে আমার কলেজে যাওয়া বিষয়ে কথা বলি। তিনি বলেন তার ছেলের সাথে কথা বলতে। জানতে পারি আর ১ মাস পরেই সে দেশে ফিরবে; আমি আশায় বুক বাধি।
হয়তো সে ফিরে এসে আমাকে কলেজে যেতে দেবে; আমি আবার লেখাপড়া করবো। শিখবো, জানবো; শিক্ষিত হব।
৩ দিন পর বিদেশ থেকে ফোন আসে; তিনি ফোন করেছেন। আমাকে চাচ্ছেন। এই প্রথম তিনি ফোন করে আমাকে চাইলেন; আমি অনেক খুশী হলাম। দৌড়ে এসে ফোন ধরলাম। তিনি তো নেই ফোনের ওপাশে; অন্য একজন। তিনি যা বললেন আমি শুনে পাথর হয়ে গেলাম। যিনি কথা বলছেন তিনি একজন ইমাম; আমাকে নাকি ওমর তালাক দিতে চায়। ওমর আমার স্বামীর নাম; ফোনেই আমাকে ৩ তালাক দিলেন। ইমাম সাহেব বললেন কিছুদিনের মধ্যেই নাকি আমার কাছে তালাকনামা পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমি ফোনটা কান থেকে নামাতেও ভুলে গেলাম। আমার শাশুড়ি আমার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিলেন।
এর ২-৩ দিন পর একটি তালাকনামার কাগজ ধড়িয়ে দিয়ে আমাকে এতিমখানায় পাঠিয়ে দেয়া হল।
এতিমখানায় প্রায় ১৫ দিন হতে চললো; আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি এই কয়দিন। আমি যেন সেখানে বন্দী। আমি ভাবলাম আমি হয়তো আবার কলেজে যেতে পারবো। কিন্তু আমার সাথে তো কেউ কথাই বলে না। আমি হেড ম্যামের অফিসে গেলাম। তিনি বললেন আমাকে কলেজে যেতে দেয়া যাবে না। এমনকি আমাকে নাকি এখানে থাকতেও দেয়া হবে না। বিবাহিত মেয়েদের নাকি এখানে থাকতে দেয়ার নিয়ম নেই। আমার মা এলেন তখন। আমি মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছিলাম।
আমাকে এতিমখানা থেকে মার সাথে চলে আসতে হল। আমি ঘরের বাইরে যাইনা। তালাক প্রাপ্ত মেয়ের চাইতে অবহেলিত আর ঘৃণার পাত্র সম্ভবত বেশ্যারাও নয়। আমি কি এমন পাপ করলাম যে সমাজের চোখে আমি বেশ্যার চাইতেও ঘৃণ্য?
বসে বসে আমি অনেক ভাবলাম। আমার তো কোন দোষ নেই। এতিমখানার লোকজন টাকার জন্য আমাকে ওমরের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন; এখন আমাকে যদি ওমর তালাক দেয় তবে আমার দোষ কোথায়? আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আমার দোষ জানতে এতিমখানায় যাবো।
পরদিন আমি রওনা হলাম; এবং সম্ভবত সেদিন বাসে না চড়লে আমার জীবনে অনেক ঘটনাই বাকি রয়ে যেত। বাসে আমার সাথে পরিচয় হয় জ্যোতি আপুর সাথে। তিনি একজন সমাজকর্মী। আমি তাকে সব খুলে বললাম। তিনি ভুরু কুঞ্চিত করে খুব মনোযোগ দিয়ে আমার সব কথা শুনলেন। সব শুনে তিনি আমার সাথে এতিমখানায় যেতে চাইলেন। আমি তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম।
এর পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে গেল। আমি আসলে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলাম না। এতিমখানা থেকে জানানো হল আমাকে ওমরের সাথে মুতাহ বিয়ে দেয়া হয়েছিলো। বিয়ের সময় আমার মাকে যে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিলো সেটাই নাকি মুতাহ বিয়ের টাকা। মুতাহ বিয়ে কি জিনিস আমার জানা ছিল না। যতটুকু বুঝলাম টাকার বিনিময়ে অল্প কিছু সময়ের জন্য ওমর আমাকে বিয়ে করেছিল। এটাকে কি বিয়ে বলে? আসলেই তো; বেশ্যা আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি রইলো? তিনি আমার সাথে যা করলেন তা কি ধর্ষণ নাকি স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র মিলন?
আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি; এতিমখানার ইমাম আমাকে কোরআন-হাদিস খুলে দেখালেন যে সেখানে আসলেই মুতাহ বিয়ের নামে নারী সম্ভোগের জন্য আল্লা-নবী পুরুষদের জন্য কিছু অভিনব আয়াত লিখে দিয়েছেন। এর আগেও নাকি অনেক মেয়েকে তারা মুতাহ বিয়ে দিয়েছেন; যারা বিয়ে করে মেয়েদের নিয়ে যায় তারা এতিমখানায় মোটা অঙ্কের টাকা দান করে। সেই লোভেই তারা আমাকে ওমরের কাছে বিক্রি করেছিল।
বিক্রি ই তো। জ্যোতি আপু সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন এর পরের দিন। এতিমখানায় সেবার নামে কি ব্যাবসা চলছে সেটা সকলকে জানানো তার কর্তব্য মনে করলেন।
সাংবাদিকদের আমি বললাম যে আমাকে বিক্রি করা হয়েছে। আমি বিচার চাইলাম।
যে কোরআনে মেয়েদের এভাবে বিক্রি করার কথা লেখা আছে সেই কোরআনে আমি থুঃথুঃ দেই বলেও জোর গলায় চিৎকার করলাম।
সেই খবর প্রচারিত হল; ছাপা হল।
কি থেকে কি হল জানিনা; আমাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল।
আমার ফাঁসী চেয়ে নাকি হাফাজতে ইসলাম নামের একদল লোক আন্দোলন করছেন বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে।
শুনেছিলাম আমার নামে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কোরআন অবমাননা করার অভিযোগে ব্লাসফেমি আইনে মামলা হয়েছিলো।
জ্যোতি আপু দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন খুব; তিনি আমাকে সাহায্য করতে এসে উলটো ঝামেলায় ফেলার জন্য অনেক বার দুঃখ প্রকাশ করলেন।
কিছুদিন পর তিনিও আসা বন্ধ করে দিলেন। পরে জেনেছিলাম তিনি দেখা করার অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাকে আমার সাথে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ।
হাজতের চার দেয়ালের মাঝে আমি আকাশ খুঁজি; অন্য কয়েদীরাও আমাকে খুন করতে চায়। আমি নাকি পাপী; আমি আল্লার বানীতে থুঃথুঃ দেয়ার কথা বলেছি।
কিন্তু আমার দোষটা কোথায়?
যারা অবৈধ অনৈতিক নারী সম্ভোগকে বৈধ করতে আয়াত লিখে তা আল্লাহর নামে প্রচার করতে পারে তাদের মুখে থুঃ থুঃ দেয়া কি অপরাধ?
এই কোরআন যে লিখেছেন তিনি আল্লাহ হতে পারেন না; তিনি একজন পুরুষ যিনি অবাধে নারীদের দেহ ভোগের জন্য এইসব লিখেছেন। যিনি নিজে মুতাহ বিবাহ করেছেন এবং অন্যদের করতে উৎসাহিত করেছেন তিনিও কোন ভাবেই নবী হতে পারেন না। আমি আজীবন জানতাম এবং বিশ্বাস করতাম আমাদের নবী শ্রেষ্ঠতম মানব; কিন্তু আমি এখন আর সেটা বিশ্বাস করিনা।
আমার বিচার হল; আদালত আমাকে ফাঁসীর আদেশ দিলেন ধর্মানুভুতিতে আঘাতের অভিযোগে। আজ আমার ফাঁসী। আমার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আমাকে একটা খাতা আর একটা কলম দেয়া হয়েছে। আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পর এই খাতাটা জ্যোতি আপুকে দেয়া হবে। আমি জানিনা এই চিঠি তিনি পাবেন কিনা; আপনাদের কাছে পৌঁছাবে কিনা আমার কথা।
আর বেশী সময় নেই; মৃত্যু ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছি।
আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই; আমার কি অপরাধ ছিল? আমি তো সহজ সরল সাধারন একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম। ধর্মের নামে আমাকে ধর্ষণ করা হল; বিক্রি করা হল। আমি এর প্রতিবাদ করলাম; প্রতিবাদ করা কি অপরাধ?
উহু প্রতিবাদ করা অপরাধ নয়; সম্ভবত আল্লাহ আর তার নবীদের অবিচার অনাচারের প্রতিবাদ করা অপরাধ।
খুব জানতে ইচ্ছে হয়; কেউ মুতাহ বিয়ের মতন একটা জিনিস প্রচার করে কোন বিবেকে? যারা কোরআন হাদিসে মুতাহ বিয়ে বৈধ করেছে মানুষ তাদের শ্রদ্ধাইবা করে কোন বিবেকে?
পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি; আমার ফাঁসীর প্রহর ঘনিয়ে এসেছে।
ধর্মের মুলা দেখিয়ে নারীদের অবমাননা বন্ধ করুন; সময় এসেছে কোরআন হাদিস সংশোধনের। সময় এসেছে আজব এই ব্লাসফেমি আইন বিলুপ্তির; যেখানে ধর্মের নামে মেয়েদের ধর্ষণ করা যায় কিন্তু সেই ধর্ষণের প্রতিবাদ করা যায়না।
নারী অবমাননার চাইতে আল্লাহ-নবীর অবমাননা কখনোই বড় হতে পারেনা।
মানবতার স্বার্থে এদের বিলুপ্ত করুন।
তালা খোলার আওয়াজ পাচ্ছি; কিছুক্ষন পরেই আমার ফাঁসী।
আমার চিঠিটি ফুরলো; জীবন প্রদীপটি নিভিলো।
এরচেয়ে ঢের মানবিক হতো, যদি আয়েশাকে জন্মের সাথেই জীবন্ত পুঁতে দেয়া হতো।
@নিরাবেগ নাবিক, কথা সত্য :good:
বন্ধু আপনার লেখায় আলপনা যুক্ত করার বিষয়টা চমৎকার-“ধর্মের মূলা” ভালোই লাগল।
@সাজ্জাদ, ধন্যবাদ 🙂
শুধু মুতাহ বিয়ে নয়, সকল প্রকার বিয়েকে বর্তমানে ধর্ষনের কিংবা নারীদেহ সম্ভোগের একটা অনুমতিপত্র হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। ভন্ড ধর্মগুরুরা যেমন নারীলোভী ছিল, তাদের অনুসারীরাও ব্যতিক্রম নয়।
যে পুস্তকে কিংবা গ্রন্থে এসব মুতাহ বিয়ে থেকে শুরু করে নারী নির্যাতনের অনুমতিমত্র প্রদান করা হচ্ছে, তা অচিরেই বয়কট হওয়া উচিত।
এ প্রসঙ্গে আয়েশার প্রশ্নটিই প্রণিধানযোগ্য,
@অলোক অর্ক, একমত (Y)
মুতা বিয়ে ইসলামে অনেক আগেই হারাম করা হয়েছে
@সাফায়েত জামিল, কিন্তু তাই বলে কি মুসলিমদের মুতা বিয়ে বন্ধ হয়েছে? এই বিষয়ে মাসে মাসে খবর আসে সংবাদপত্রে; চোখ খোলা রাখুন।
লিখলে অনেক কিছুই লেখা যায়; কিন্তু খুব সাধারন ভাবে আপনি যে ভুল সেটা প্রমান করে দিয়ে যাই।
একটা খুব সাধারন প্রশ্ন; এমডি যদি মুতা বিবাহ নিষিদ্ধই করে দিয়ে জান তবে আবু বকর পর্যন্ত মুসলমানেরা (যখন বেশীরভাগ সাহাবী ছিলেন জীবিত) মক্কায় মুতা বিবাহ করা চালু রেখেছিলেন কোন সাহসে??? ততদিনে মক্কা মদিনা থেকে সকল বিধর্মী লাত্থাইয়া খেদানো শেষ; তাই এইখানে অন্য জাতিদের কথা বলা হয়নাই।
এই একটা প্রস্নের উত্তর খুঁজলেই কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল সেটা বুঝতে পারবেন। আমি বললে নাও বিশ্বাস করতে পারেন। নিজেই উত্তর খুজুন; আমি জাস্ট খোঁজার রাস্তাটা দেখিয়ে দিলাম।
এম এস নিলয় ,
আপনার লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে গল্প লিখাটা আপনার মূল উদ্দেশ্য নয়। অপনার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মের মাধ্যমে যে অধর্মের আগমন ঘটেছে তার একটি উদাহরন তুলে ধরা।
গল্পটি কাল্পনিক হলেও এ জাতিয় বাস্তব ঘটনা গল্পের চেয়েও নির্মম যা ভারত,পাকিস্তানে অহরহ ঘটে চলছে এবং বর্তমানে সিরিয়ান উদবাস্তু শিবিরের এটি একটি চলমান ঘটনা। ইসলামিক আইনের মাধ্যমে এই আন্যায় কাজটি বহুু বছর যাবত চলে আসছে ।
এখন সময় প্রতিবাদের নয় রীতিমত প্রতিরোধের, কাউকে না কাউকে কাজটি শুরু করতে হবে।
ধর্মের আগমনের মূল উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে মানবকুলের নৈতিক চরিত্র গঠনের মধ্যদিয়ে একটি সৎ ও ন্যায় পরায়ন সমাজ বিনির্মান তা হলে এটা কেমন বিধান ?যে খানে মায়ের জাতিকে এমন অমানবিক পরিস্তিতির স্বীকার হতে হয়। এটি আর যাই হোক কোন ভাবেই স্রষ্টার বিধান হতে পারেনা।
@চলেপথিক, লেখাটির উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা এবং কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
একমত (Y)
গল্পের নারীচরিত্রটি একজন কুমারী মেয়ে। আমার জানামতে একজন কুমারী (virgin) নারীর মুতা-বিবাহ হয় না। মুতা বিয়ে হয় একজন non-virgin ( সাধারণত, তালাকপ্রাপ্তা) নারীর সাথে কোন পুরষের।
তবে, তাঁতে গল্পের মূল বক্তব্যটির হেরফের হয়না। গল্পটি ভলো লেগেছে।
আমার কাছে লেখাটা ভাল লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা মাদ্রাসাতে যে কত অমানবিক বিষয় ঘটে এবং ইসলামে যে কত অমানবিক অন্ধকার দিক আছে যা মডারেট মুসলিমরা অনেকে জানেই না, তা তোলে ধরা হয়েছে।
আমার ধারনা মুক্তমনা শুধু সাহিত্যের দিকটিই দেখে না, সমাজের অন্ধকার দুর করার বিষয়টিও দেখে।
আর সমালোচনাও কিন্তু সাহিত্যের ভেতর থেকে করা যায়।
গল্পের শুরুটা সাবলীল, চমৎকার কথন ছিল, শেষ দিকে কেমন দুর্বল হয়ে গেছে। … এ-হচ্ছে গল্পের সাহিত্যিক দিক নিয়ে মন্তব্য। কেউ কেউ দেখলাম লেখাটা প্রকাশ নিয়েই তীব্র প্রতিবাদ করে উঠছেন। কারণ কি? ধরা যাক এটা যদি মুতা বিয়ে নিয়ে কোন প্রবন্ধ লেখা হতো- তাহলেও কি এরকম প্রকাশের বিরোধীতা করে ধিক্কার জানানো হতো? আমি যতদূর জানি, লেখাটা মডারেশন পার হয়েই প্রকাশিত হয়েছে। কাজেই কোন “বিদ্বেষ” খোঁজার কারণ দেখি না…।
লেখাটি পড়া সময় কেন যেন হুমায়ুন আজাদের ”শুভব্রত ও তার সম্পর্কিত সুসমাচার” এর কথা মনে পড়ছিল। কাহিনীর মাধ্যমে কোন সত্য বের করে আনাটা আমার নিকট পছন্দের একটি বিষয়। তবে আকাশ মালিকের যে সত্য বলা হয়নি’র কথাও মনে পড়ছিল।
তবে আপনার কাছে আমি খৃস্ট ধর্মের সমালোচনা মূলক লেখা কামনা করি।
(Y)
ধর্মগ্রন্থ পড়লে মাঝে মাঝে মনে হয় পুরুষ শাসিত সমাজের যৌন আগ্রাসনের লিপিবদ্ধ সংবিধান পড়ছি।
@রসি মজুমদার,
এই বিষয়ে বেগম রোকেয়ার একটা কথা মনে পড়ে গেলো।
[img]https://fbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net/hphotos-ak-xpa1/t1.0-9/564704_10201984856676966_1731730355_n.jpg[/img]
@ নীলয়ঃ
একজন উগ্র নাস্তিক হিসেবে আপনি হয়তো নিজেকে পরিচিত করানোর মধ্যে মজা পেয়ে গেছেন।
কিন্তু, আমার মতে আপনার এখানে ‘আয়েশা’ নামটা ব্যাবহার করা ঠিক হয়নি। আপনি এখানে অন্য যে কোন নাম ব্যবহার করতে পারতেন। আপনাদের মত লোকের অবিমৃষ্যকারীতাই উগ্র মৌলবাদীদের গলা উচু করার সুযোগ করে দেয়।
ধর্মের সমালোচনা করা এক জিনিস, আর ধর্মের অবমাননা আরেক জিনিস। কেউ যদি বলে যে, আমি হযরত মোহাম্মদের এতগুলো বিয়েকে ভাল চোখে দেখিনা, উনি সেটা না করলেও পারতেন, তাহলে হয়তো সেটা উগ্র আস্তিকদের চোখে খারাপ কিছু মনে হবেনা। কিন্তু, তার চরিত্র নিয়ে বাজেভাবে অশ্লীল কথা বললে এবং ওনার মত একজন মানুষকে নিয়ে যদি কিছু অর্বাচীন চটি সাহিত্য তৈরি করার কু-উদ্যোগ নেয়, তবে মুসলমানরা অবশ্যই সেটাকে ভাল চোখে দেখবেনা। যেমন, আসিফ মহিউদ্দিন, রাজিব হায়দারের মত ব্লগার তো সবসময়ই ছিলেন বা আছেন। পাশপাশি কিছু ব্লগ সাইটই তৈরি করা হয়েছে ইসলাম ধর্ম ও এর প্রবক্তাকে নিয়ে কুৎসা রটনা করার জন্য। ব্লগ সাইট ‘চুতরাপাতা’ সেরকমই একটা ভয়াবহ অশ্লীল সাইটঃ
http://www.chutrapata.com/daripalla/167
উপরের পোষ্টটি পড়লেই বোঝা যায় ধর্মীয় বিষয়ের গঠনমূলক সমালোচনা করা এইসব ব্লগারের উদ্যেশ্য নয়, তাদের উদ্যেশ্য হল বিকৃত রুচির লেখা তৈরি করা ও এর প্রসার।
সমালোচনা হতেই পারে। তবে, উপরোক্ত পোস্টে যা করা হয়েছে, তা কোন সুস্থ ধারার কাজের মধ্যে পড়েনা। এরকম ব্লগ পোস্ট, সন্দেহ নেই, নামে বেনামে আরো অনেকে লেখেন। এদের এইরুপ লেখা পড়ে হেফাজতী আর হুজুর সম্প্রদায় যদি লেখকদের কল্লা চেয়ে বসে, তাহলে সেটা ব্যতিক্রম কিছু হবে?
এদিকে, একজনের পিতা যত খারাপই হোক না কেন, হক সে দুর্নীতিবাজ বা অসভ্য, সন্তানের কাছে পিতার সবসময় একটা আলাদা সম্মান থাকেই। তাদের সামনে তাদের পিতার কেউ যদি কলার চেপে ধরে, তখন সে অবশ্যই চুপ করে বসে থাকবেনা। সেইখানে তো, মুসলমানদের কাছে হযরত মুহাম্মাদ অনেক অনেক সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালবাসার এক নাম। তারা নিজের পিতা-মাতার থেকেও উনাকে অনেক উপরে রাখে। তাই, তাকে অপমান করে কেউ কোন কথা বললে বা লিখলে তারা চুপ করে বসে থাকবেনা, এটাই স্বাভাবিক।
এক্ষেত্রে, নাস্তিক বা উগ্র নাস্তিকদের ভূমিকা কি হতে পারে? ধরা যাক, নাস্তিকদের এক বন্ধুর বাবা ভাল মানুষ নন। কিন্তু, পিতা যতই মন্দ মানুষ হন, নাস্তিকেরা যদি তার বন্ধুর সামনে, তার বাবার কলার চেপে ধরে, তখন তার বন্ধুটি অবশ্যই চুপচাপ বসে থাকবেনা। সেখানে, হযরত মোহাম্মদের স্থান তো মুসলমানদের কাছে অনেক উপরে। তার ব্যাপারে কোন কুৎসা রটনা না করাই সমিচীন– এই বিষয়টাও নাস্তিকদের মাথায় রাখতে হবে।
নাস্তিকদের মধ্যে অনেক যথেষ্ট মানবিক গুনাবলিও বিদ্যমান। ব্লগার রাজিবকে নিয়ে মুক্তমনা ব্লগে তামান্না ঝুমুর লেখা থেকেই সেটা অনেকটা পরিস্কার বোঝা যায়ঃ
“একবার কয়েকদিন ধ’রে আমার ভীষণ মন খারাপ ছিল। আমার সেই বিষণ্নতা ছড়িয়ে পড়েছিল ফেসবুকেও। খুব মনমরা কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ফেসবুকে। আমার সেই বিধ্বস্ত দুরবস্থায় রাজীব প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছিল আমাকে হাসাতে, আমার মন ভালো করে দিতে। তার কথা শুনে শেষ পর্যন্ত সজল চোখেও আমি না হেসে পারিনি। আমার দুর্দিনে, বিষণ্ন সময়ে আমার পাশে এসে একান্ত আপনজনের মতন দাঁড়িয়েছিল রাজীব। আমার অশ্রু মুছিয়ে দিয়েছিল কথা দিয়ে, বন্ধুত্ব দিয়ে। আমার ব্যথাতুর মনে হাসির ঝলক এনে দিয়েছিল। কান্নার মাঝে হাসিয়ে ছেড়েছিল আমায়। তার এই দুর্মূল্য, দুষ্প্রাপ্য সহায়তার দান আমি কোনোদিন ভুলবো না”।
লিঙ্কঃ http://blog.mukto-mona.com/?p=39708
যারা কিনা এতটা মানবিক হতে পারেন, তারা চাইলে অবশ্যই অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাস বা আবেগের প্রতি সচেতন হতে পারেন বলেই বিশ্বাস করি। তারা চাইলেই অন্যের স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত দেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারেন। মানুষের বোধ, আবেগ আর অনুভূতিতে আঘাত না দেয়া বা সম্মান করাও নিশ্চয় মানবিকতা বা মানবধর্মের মধ্যে পড়ে, তাই নয় কি?
@শেহজাদ আমান,
আপনার কথা শুনে পাকিস্থানের একটা ঘটনার কথা মনে পড়লো। প্রথম আলোতে পড়েছিলাম মাস ২ আগে। দুই বন্ধুর মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। একজনের নাম ওমর অন্য জনের নাম মনে নাই। যার নাম মনে নাই সে ওমরের নাম ধরে গালি গালাজ করছিল। রান্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এক লোক। সে দেখলো যে ওমরের নামে অনেক বাজে বাজে গালি দিচ্ছে নাম না জানা লোক টি। সেই লোক থানায় গিয়ে ব্লাসফেমি আইনে নাম না জানা লোকটার নামে কেস করে দিলেন। ওমরের নামে বাজে কথা বলায় তার নাকি অনুভুতিতে আঘাত লেগেছে। নাম না জানা লোকটার ১০ বছরের জেল হয়ে গিয়েছে সেই মামলায়। ঝগড়া হচ্ছিল ২ বন্ধুর মধ্যে; ওমর এখানে একজনের নাম। সেখানে নবীর বন্ধু ওমর বলে সেই নামে গালি দেয়া যাবে না সেটা কি যুক্তির কথা??? এই অনুভূতি আর ব্লাসফেমি কতোটা বিষাক্ত চিন্তা করুন।
দুনিয়ায় যত মুসলিম জঙ্গি আছে সবার নামই নবী কিংবা সাহাবীদের নামে। বাংলার জেল গুলোতে খোঁজ করেন সব চোর ছ্যাঁচোর খুনিদের নামের আগে আছে মোহাম্মদ। তাই বলে কি তাদের জেল বাঁ ফাঁসী দেয়া যাবেনা ??? মুহাম্মদ বাঁ সাহাবীদের নামের কেউ কি চোর ছ্যাঁচোর খুনি হতে পারে না??? তাদের নামে কেস করা যাবে না???
আপনাকে বুদ্ধিমান জানি; কি বোঝাতে চাইছি আশা করি বুঝেছেন।
কোরআনের একটা আয়াত মনে পড়লো; “মোহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কারো পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।” [সূরা আহযাব ৪০]।
অর্থাৎ আগের নবী রাসুলেরা যদি হয় “সের”; তবে শেষ নবী হলের “সেরের উপরে সোয়া সের”। এর চাইতে ভেঙ্গে কিছু বলতে চাইনা। বুঝে নেন।
দুনিয়ার সব মনীষীর আমরা সমালচনা করতে পারি, তা সে যত ভালো মনীষী হোক কিংবা যত নিকৃষ্ট মনীষীই হোক না কেন।
মনীষীদের বাপের চাইতে প্রিয় বানিয়ে ফেলা আহম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয়। আহম্মকি শব্দটার মূল জানেন তো??? খেয়াল করে 😉
কেউ তো আর আন্তাজে বাঁ বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলছে না; কোরআন হাদিসে যা আছে সেটা থেকেই বলছে। বিনা প্রমানে কারো সম্পর্কে যারা কিছু বলে তারা আহম্মক। আমি তাদের দলে নই। আর যেটা সত্য এবং প্রমান আছে সেটা বলাকে কি কুৎসা রটনা বলে ???
নবীরা আকাম কুকাম করলে সেটা নিয়ে কিছু বলা যাবে না ???
বাইবেলে প্রতিটা নবী সম্পর্কেই কিছু না কিছু আকাম কুকামের কথা লেখা আছে। সেটা নিয়ে আলচনা করা যাবে না ??? কোরআনে অবশ্য সবাইকে নিস্পাপ সচ্চরিত্র বলে দাবী করা হয়েছে; তবে প্রমান আর যুক্তি কিন্তু অন্য কথা বলে।
সেটা নিয়ে আলোচনা কি কুৎসা ???
এইটা একটা ভালো কথা বলেছেন। আমিও আপনার দলে। আমিও চাই যারা অন্য ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি করে তাদের ধ্বংস। আমরা অনুভুতিতে আঘাত দেয়া কোথা থেকে শিখেছি সেটা জানেন ??? আপনার উচিৎ আমাদের কিছু না বলে সেই শেকড় টাকে উপ্রে ফেলা; তবেই আর কেউ অন্য ধর্মকে নিয়ে কুৎসা রটনা করা শিখতে পারবে না। এই লিংকের লেখাটা থেকে আশা করি বুঝতে পারবেন অন্যের ধর্ম নিয়ে কটু কোথা বাঁ অন্য ধর্মকে ভুয়া বানোয়াট বলা আমরা কোথা থেকে শিখেছি; লিঙ্ক।
@এম এস নিলয়,
আমার মনে হয় ধর্মীয় বিষয়-আসয় যেহেতু স্পর্শকাতর, সেহেতু এগুলোর সমালোচনা করতে গিয়ে আমাদের বেশ খানিকটা রক্ষণশীল হলেই মনে হয় ভাল হবে। আপনি যে মুসলমানদের নবী মোহাম্মদদের স্ত্রীকে তীব্রভাবে খোচা মারার মারার উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ‘আয়েশা’ নামটি ব্যবহার করেছেন — একথা মনে হয়না কেউই বিশ্বাস করবে।
আর আপনি বলেছেন,
বুঝলাম অন্য ধর্মের অনূভুতিতে ধার্মিক লোকেরাই বেশি আঘাত করে। কিন্তু, আপনি তো তার থেকে নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবে উপস্থান করতে সফল হতে পারলেন না। তারা অধম বলে তো আপনার উত্তম হতে মানা নেই, তাই না?
না গল্প হিসাবে, না প্রপাগান্ডা হিসাবে, কোন বিচারিক মান দন্ডেই এই লেখা মুক্তমনা তো দূরে থাকুক জগতের জঘন্যতম ব্লগেও প্রকাশের যোগ্যতা রাখে না। আমি চুড়ান্ত হতাশ মুক্তমনায় এই লেখা দেখে। চুড়ান্ত হতাশ!
@সাইফুল ইসলাম, মানুষ মান্য করে এমন অনেক গ্রন্থই শ্রেষ্ঠ কিংবা নির্ভুল কিংবা অবিকৃত তো দূরে থাক কারো পড়ারই যোগ্য না; উচিৎও না। সেইসব গ্রন্থই কিন্তু আজ ঘরে ঘরে। তাই কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা আপেক্ষিক। আপনার কাছে যেটা শ্রেষ্ঠ অন্য কারো কাছে সেটাই নিকৃষ্ট; তাই কারো কাছে ভালো লাগলো কি লাগলো না সেটার উপর অন্য পাঠকদের ভালো লাগা খারাপ লাগা নির্ভর করে না।
### আমি বিনয়ী; তাই হাঁটুতে যাদের ঘিলু তাদের মতন চ্যালেঞ্জ করলাম না যে “পারলে এর মতন একটা লেখা লিখে এনে দেখাও; তোমাদের সকল সৃষ্টিকর্তাদের সাথে নিয়া চেষ্টা করলেও এর মতন একটা লেখা লিখতে পারবে না” :hahahee:
মজা করলাম 🙂
আপনার চূড়ান্ত হতাশার অনুভূতি জানানোর জন্য ধন্যবাদ (Y)
@এম এস নিলয়,
কোন ধর্ম প্রচারকই সমালোচনার উর্দ্ধে নয়।কারন তারা রক্তে মাংশের মানুষ।কিন্তু সমাজে ধর্মের একটি বৈপ্লবিক অবস্থান রয়েছে।একজন ধর্ম প্রচারক নিজের কামনা বাসনা পূরণের জন্য সবকিছু করেছেন এমনটা বললে ভুল হবে।বরং বলা ভাল তারা তাদের দার্শনিক ইচ্ছার প্রতিফলন সমাজে দেখতে চেয়েছিল।
ফলে তারা সৃষ্টিকর্তা নামক একটি ধারণাকে কৌশল হিসেবে ব্যাবহার করেছে।যার অনেক কিছুই মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়নি বরং তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে।
আধুনিক সমাজে বিভ্রান্ত হওয়ার দায় মানুষের।এই বিভ্রান্ত হওয়ার সাথে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্যের সম্পর্ক রয়েছে।আপনার গল্পের আয়েশার পরিণতির জন্য শুধু ধর্ম দায়ী নয়।আয়েশার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থান তার জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে।তাই একতরফা ভাবে প্রচারককে গালি দিয়ে লাভ নেই।আর্থ সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করতে হবে কেন মানুষ ধর্মের নামে বিভ্রান্ত হয়।
@সাইফুল ইসলাম,
এমন রিয়্যাকশনের যুক্তিযুক্ত কারণ দর্শালে ভালো হয়?
আমার সেটা মনে হয়নি। জেলখানায় বসে লেখা একটি চিঠিতে মুখস্ত আয়াত লেখা কিছুটা বেমানান দেখাতো।
সম্ভবত আপনি আয়েশাকে আত্মহত্যা করানর কথা বলছেন।
এটা লিখতে গিয়ে নিজেকে বার বার ভাংতে হয়েছে; একবার লিখে আবার গোঁড়া থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।
একবার ভাবলাম আয়েশাকে আত্মহত্যা করাই; জ্যোতির মুখে ঘটনা বলাই। সন্তুষ্ট হলাম না তাই ছিঁড়ে ছুঁড়ে আবার নতুন করে আয়েশার মুখেই তার দুঃখের কথা বলালাম।
আত্মহত্যা করাতে পারতাম কিন্তু তাহলে ব্লাসফেমী অংশটা থাকতো না; এর নিষ্ঠুর দিকটা তাই গল্পে যোগ করে দিতে ইচ্ছে হল। হোটেলের বাইরে তার যাওয়া সম্ভব ছিলনা; নয়তো শিওর সে পাহাড় থেকেই লাফাতো 🙂
আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ 🙂
@এম এস নিলয়,
ঠিক আছে। আসল কথাটা বলে মানুষের কাছে পৌঁছানোটাই বড় কথা।
আয়েশাকে কেউ যেন মিথ্যেবাদী না বলতে পারে সেজন্য এক আধ লাইনে রেফারেন্স দেয়া মন্দ হত না। যেমন বলা যেত: এতিমখানার ইমাম আমাকে দেখালেন কোরানে নারীর স্থান কত জঘন্য। কোরানের সূরা নারী মানে সূরা আন নিসা, সেখানে আসলেই নারী সম্ভোগের ব্যবস্থা আছে। পুরুষদের সুবিধায় অভিনব সব আয়াত লেখা আছে। এত খারাপ কাজ করেও পুরুষরা নারীর চেয়ে বড়।
তবে যেভাবেই হোক, মানুষের কাছে পৌঁছানোটাই বড় কথা এবং আমার ধারনা এ লেখাটি পৌঁছুবে। ‘মড়ে’ ঠিক করে ‘মরে’ করে দেবার কথা বলেছিলাম আর কি; আত্মহত্যা নয়। মূল লেখা সবাই পড়বে শেয়ার হবে, মানুষ পড়বে। ব্লগে না এলে মন্তব্য হয়তো দেখা যাবে না। সেজন্য মূল লেখাতে আসল কথাগুলোর গুরুত্ব অনেক; তাই না?
ভালো থাকুন।
মূল লেখার এইখানে আয়াত্খানা দিয়ে দিলে ভালো হত না? যেমন:
আর
পাহাড় থেকে লাফিয়ে মড়ে যেতে ইচ্ছা করবার বদলে মরে যেতে ইচ্ছে করলে কেমন হয়? মড়া হয়তো মরে বাঁচতো (I)
@কাজী রহমান, ভুলে রিপ্লাই দিতে গিয়ে কমেন্ট হয়ে গেলো। নিচের কমেন্টটি আপনাকে দেয়া রিপ্লাই।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য দুঃখিত।
গল্পটি ইসলামের সবচাইতে গোপন একটি বিষয় নিয়ে; অধিকাংশ মানুষ যে বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা রাখেন না। ছোটবেলা থেকে তোতাপাখির মতন মুখস্ত বিদ্যা “একমাত্র ইসলাম দিয়েছে নারীকে সম্মান” বুলি আওড়েই তারা সন্তুষ্ট থাকতে চান। গল্প হলেও ঘটনাটি কিন্তু মোটেও অবাস্তব নয়; এই মুতা বিয়ে পাকা পোক্ত এবং সরকারী ভাবে চালু আছে ইরানে; এই কিছুদিন আগেইতো খবরে ভারতেও মুতা বিয়ের নামে নারী নির্যাতন এবং অধিকার ক্ষুণ্ণের খবর পড়েছিলাম।
লেখাটি লিখেছিলাম মূলত নেটে একটা বিশেষ খবর দেখে। “হালাল বেশ্যালয়” নামের একটা জিনিস নাকি চালু হয়েছে নেদারল্যান্ডে। যেখানে মুতা বিয়ের নামে অনৈতিক যৌনাচারকে হালাল বানানো হয়। মুতা বিয়ে নিয়ে কিছুটা লেখাপড়া করেছিলাম তখন। অবাক হয়েছিলাম খুব খুব; আমাদের ফারাবিরা কিন্তু দাবী করেন যে যুদ্ধ বন্দী বলে ইসলামে কিছু নেই কারন যুদ্ধ বন্দীদের সাথে সংগমের আগে মুতা বিয়ে করিয়ে নেয়া হত তাই যুদ্ধ বন্দী ধর্ষণের সময় তারা সাহাবী-নবীদের স্ত্রী ছিলেন। তাই তাদের যুদ্ধ বন্দী দাসী বলা যাবে না; তাদের সাহাবীদের স্ত্রী কিংবা নবীর স্ত্রী বলতে হবে। কতোটা বিকৃত মস্তিস্কের মানুষ হলে মুতা বিয়েকে সমর্থন দিতে পারে কেউ সেই চিন্তা করছি। একটি নারীর চোখের সামনে তার স্বামীকে হত্যা করা হল; তারপর নারীটিকে নিয়ে নিজেদের মাঝে লটারি হল। এর পর তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে তার সাথে টেস্ট সেক্স করা হল। সেই রাতেই এটা করা হচ্ছে; উপরে পরিশ্রমে ঘামাতে থাকা লোকটাই কিনা তার স্বামীকে হত্যা করেছিল সেদিন দুপুরেই। টেস্ট সেক্সে ভালো লাগলে তাকে চাইলে স্থায়ী স্ত্রী হিসেবে রেখে দেয়া যাবে। এই বিষয়ে মোহাম্মদের কত্রিক সাফিয়া বিন্তে হুয়াই কে বিয়ে করার ঘটনাটা বিশেষ ভাবে মনে পড়ছে। কি আজব এই মুতা বিবাহ। কি আজব এই ইসলাম।
বিশ্বাস হচ্ছেনা যে এটা কোরআনের আইন???
আসুন দেখা যাক কোরআনে মুতা বিবাহ নিয়ে কি লেখা রয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে মুতা বিবাহের জন্য কি পরিমাণ অর্থ লাগতে পারে?
উত্তর পাওয়া যায় এই হাদিসে।
এই হারিসের ঘটনাটা কি সেটা অনেক খুঁজেও কোথাও পেলাম না। সে যাই হোক; কোরআনে মুহাম্মদ যেটাকে হালাল করেছেন সেটা নিষিদ্ধ করার উমর কে???
এক মুঠো আটা??? এটা যে শুধুই মজ মাস্তি করার জন্য একজন বা কিছু পুরুষ কত্রিক ধর্ম গ্রন্থে ঢুকানো হয়েছিলো সেটা বুঝতে অনেক ধর্ম জ্ঞান কিংবা পরিপূর্ণ ব্যাকরণ সহ আরবি জানার দরকার রয়েছে কি ???