সেই কবে অন্নদাশঙ্কর টিপ্পনী কেটেছিলেন বুড়ো-খোকাদের নিয়ে, কিন্তু আজও আমরা বুড়ো খোকারা তেলের শিশি ভাঙলে খুকুদের উপর রাগ করি, কিন্তু নিজের ভাঙাভাঙি চালিয়ে যাই দলীয় আনুগত্যের নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। বাংলা ভাঙা কিংবা ঐক্য ভাঙা আজ বুঝি অপরাধ নয়। আজ যেনো এটাই স্বাভাবিক। শত সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যে, অপ্রচারের মধ্যে ছাপোষা বাঙালীর গর্বের মুহূর্তগুলোই দলীয় আনুগত্য দেখাতে গিয়ে আমরা নিমিষেই ধুলোয় মিলিয়ে দেই দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে।
ক্রম আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠা শহুরে বাঙালীকে ৪২ বছরের জমানো ক্ষোভ উদগ্রে দেয়ার প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছিলো গণজাগরণ মঞ্চ। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা গতানুগতিক হালুয়া রুটির রাজনীতির বিপরীতে বিশুদ্ধ একটি পরিবেশের জন্য তৃষিত ছিলো যে মানুষ, সেই তৃষ্ণার্তের কাছে সুপেয় জল নিয়ে এসেছিলো শাহবাগ। বাঁধ ভাঙা জোয়ার নিয়ে ঘাটের টাকা খরচ এককেন্দ্রিক শহুরে বাঙালী কাতারে কাতারে সামিল হয়েছিলো তারুণ্যের মোহনায়। আন্দোলনের ধরন, বুকের মধ্যে লুকানো আবেগ, যুদ্ধাপরাধীর প্রতি তীব্র ঘৃণা, শাসকদলের প্রতি সন্দেহ, প্রচলিত রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা সব গিয়ে উগড়ে পড়েছিলো শাহবাগে।
যুদ্ধাপরাধীর জন্য ঘৃণা জমা ছিলো আগে থেকেই। সাথে ২০১৩ সালের শুরু থেকে দেশব্যাপী জামাতের তাণ্ডব মানুষকে মনো-জাগতিক ভাবে অসহায় করে তোলে। সেই মুখ-বুজে থাকার অসহায়ত্বের প্রতি উপহাস করে শিবির ০৪ ফেব্রুয়ারি শাপলা চত্বরে পুলিশের হাতে রজনীগন্ধার স্টিক তুলে দিলে মানুষ হতভম্ব হয়ে যায়। সাধারণের অসহায়ত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জামায়াত হুমকি দেয় গৃহযুদ্ধের। মানুষ বুভুক্ষের মতো অপেক্ষা করে ০৫ তারিখের রায়ের জন্য। গণহত্যার প্রমাণিত অভিযোগে মামুলি দণ্ড পেয়ে বিজয়ের ভি চিহ্ন দেখিয়ে এবং ন্যায় বিচারের আশায় চাতকের মতো বসে থাকা বাঙালীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আদালত ত্যাগ করে কাদের মোল্লা । এ যেনো পূর্বপুরুষের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। তেঁতে উঠে মানুষের অসহায় মন। প্রতিবাদ আসে সব দিক থেকেই। কেউ রেখে ঢেকে, কেউবা রাজনীতির মারপ্যাঁচে কথা বলেন। সরকারী দল আদালতের উপর হাত নেই টাইপ কথা বলে শুরুতে ডিপ্লোম্যাটিক স্ট্যান্ড নেয়।
উদাহরণ দেয়া যাক। রায় ঘোষণার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ‘বিচার করেছেন ও রায় দিয়েছেন আদালত। আদালত যা করবেন, তার প্রতি আমাদের সন্তুষ্ট থাকতেই হবে। যদিও আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’ তিনি আরো বলেন ‘ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ডে সরকারের যে কোনো প্রভাব নেই, তা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।’ এ সময় প্রতিমন্ত্রী জামায়াতের প্রশংসা করে বলেন, ‘জামায়াতের তরুণ কর্মীরা নিজামী, মুজাহিদের চেয়ে ভালো’। এই সংক্রান্ত নিউজটি পাবেন এখানে।
নবম সংসদের অধিবেশন তখন চলছিলো। রাশেদ খান মেনন সহ অধিকাংশ সাংসদ রায় নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে অনির্ধারিত আলোচনায় সমালোচনা মুখর হয়ে উঠলে তৎকালীন সংসদ উপনেতা তড়িঘড়ি করে সেটি থামিয়ে দেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ডেপুটি স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা না করে দিনক্ষণ ঠিক করে আলোচনা হতে পারে। কারণ এটি আদালতের বিষয়’।
আদালতের বিষয় বলে সেদিন তাঁরা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনলাইন এক্টিভিস্টদের সচেতন উদ্যোগের সাথে প্রগতিশীল ছাত্র সমাজের সাহসী উপস্থিতি সাধারণ মানুষকেও সাহসী করে তোলে। সরকারের সুরও শক্ত হতে থাকে ক্রমে। বলে রাখা ভালো ছাত্রলীগও সেদিন শাহবাগে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গুলোর পাশাপাশি। বাদ ছিলো শুধু ছাত্রদল।
যেই সরকার আজ শাহবাগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছেন, আন্দোলনের যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না, থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে বলেছিলেন- তার মন পড়ে আছে শাহবাগে। তিনি আরো বলেন ‘আমি তরুণ প্রজন্মকে বলতে চাই, আমরাও তোমাদের সঙ্গে একমত। তোমাদের শপথ বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার, আমরা করব। তরুণ প্রজন্ম জাতীয় সংসদে যে স্মারকলিপি দিয়েছে, তার প্রতিটি কথা যুক্তিসংগত।’ আওয়ামী লীগ তথা ছাত্রলীগও দ্বিগুণ উৎসাহে লেগে পড়ে শাহবাগ সমর্থনে।
‘যদি’ ‘কিন্তু’ ‘তবে’ করে করে, ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নিয়ে বিএনপিও প্রথম বিবৃতি দেয় ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ। বিবৃতিতে বলা হয়- ‘বিগত এক সপ্তাহ ধরে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী ১৯৭১ সালের মানবতা-বিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে অবস্থান করছেন। তাদের সমাবেশে অবশ্য আরও কিছু অতিরিক্ত বিষয় নিয়ে প্রস্তাব পাঠ করা হয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম জাতির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী হবেন এবং যৌক্তিক ও কার্যকর অবস্থান নেবেন এটাই কাঙ্ক্ষিত। তাই তারুণ্যের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সিরাজ সিকদার হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়গুলো শাহবাগে সমবেত তরুণদের উদ্বেগ ও প্রতিবাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে আন্দোলন আরও মহিমান্বিত হতো’।
বেগম জিয়া শাহবাগ সম্পর্কে প্রথম সরাসরি বিপরীত অবস্থান নেন ২০১৩ সালের মার্চের ১৫ তারিখ। মুন্সিগঞ্জের এক সমাবেশে প্রথম উনি প্রজন্ম চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ বলে টিটকারি করেন এবং সাথে সাথেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সামন্ত প্রভুর এই মনোভাব। বিএনপি সহ জোটভুক্ত দল গুলো সরাসরি বিরোধিতায় নেমে পড়েন। দৃশ্যপটে আসে আস্তিক্য নাস্তিক্যবাদের ধুয়ো। দৃশ্যপটে নিয়ে আসা হয় হেফাজতে ইসলামকে। হেফাজতের কর্মসূচি নির্ধারণ করা নিয়ে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমিরের সাথে টেলিফোনিক আলাপ আনেকেই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেই শুনেছেন। ৫ মে সন্ধ্যার পর থেকে চলতে থাকা হেফাজতের তাণ্ডব লীলার সমর্থনে এই কাঠমোল্লাদের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহবান জানিয়েছিলেন বেগম জিয়া। এইসব ইতিহাস সবারই জানা, পুনরুল্লেখ শুধু মনে করিয়ে দেবার জন্য। এইজন্য মনে করিয়ে দেয়া যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্লজ্জ স্বার্থপরতা এবং তাঁদের দলকানা সমর্থকদের দলীয় নেতৃত্বের প্রতি সামন্ত প্রভুর তো আনুগত্যের দিকটি সামনে আনা।
আমারদেশ পত্রিকা যেদিন শিরোনাম করেছিলো ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ সেদিন খুব আঁতে ঘা লেগেছিলো আওয়ামী লীগের। নিশ্চয়ই আমারদেশ পত্রিকার একটি জঘন্য উদ্দেশ্য ছিলো এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ এবং তার লেজগুলো যে ভাষায় কথা বলছে সেটা আমারদেশ পত্রিকার প্রতিধ্বনি নয় কি? শাহবাগের আন্দোলনে ইমরান এইচ সরকারকে মুখপাত্র বানানো হয়েছিলো সর্বসম্মতি ক্রমে। মনে রাখা ভালো তাঁকে নেতা বলা হয়নি, বলা হয়েছিলো মুখপাত্র। ব্যক্তি ইমরান কখনোই গুরুত্বপূর্ণ ছিলোনা আন্দোলনকারীদের কাছে। সে শুধু ঘোষক বা মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করতো। কিন্তু তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে জামাত হেফাজত গং। শাহবাগ আন্দোলনকে নিয়ে কুৎসা রটনার পাশাপাশি ব্যক্তি ইমরানকে তারা আক্রমণ করেছে, যেনো এই আন্দোলন শুধু ইমরানের ইচ্ছেতেই চলছে। এটির মাধ্যমে জামাত-হেফাজত গং মূলত বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিলো। সেটিতে ব্যর্থ হয়ে তারা মনোযোগ দেয় আন্দোলনকে নিয়ে কুৎসা রটাতে। যেমন এখানে গেলে টাকা পাওয়া যায়, নেশা-দ্রব্য পাওয়া যায়, যৌন নিপীড়ন কিংবা নীতি বহির্ভূত যৌনাচার হয় এরকম অনেক কিছু। আজ যেসব ছাত্র সংগঠন বলছেন ইমরান স্বেচ্ছাচারীর মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মসূচী নিয়ে, তারা কি প্রকারান্তরে বলছেন না ইমরান ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করেছে? যারা বলছেন আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা, তারা কি আমারদেশ কিংবা জামাত-হেফাজতের কুৎসার প্রতিধ্বনি করছেন না? বাপ্পাদিত্য বসু সহ পাঁচ সংগঠনের নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন এবং পরে বিভিন্ন যায়গায় বলছেন আলোচনা চলছে, আশা করছি আমরা মতভেদ উতরে একযোগে কাজ করতে পারবো, তাঁদের বলি- নিজেদেরতো বামধারার সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিতে বিপ্লবী রোমান্টিসিজম বেশ অনুভব করেন। তাহলেতো জানার কথা ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’ বলে এইটা রাজনৈতিক ট্রার্ম এই ধারায় বেশ প্রচলিত। সেটির মাথা খেয়েছেন আপনারা? যে আলোচনার কথা এখন বলছেন, সেই আলোচনা আগে কেন করেননি? সম্মিলিত ভাবে কেন সাংবাদিক সম্মেলন করলেন না? ছাত্রলীগের সুতাটা আগেই টানা হয়েছে সামন্ত প্রভুর হাত থেকে। আপনাদেরও কি সুতায় টান পড়েছিলো? আপনারাও কি ছাত্রলীগের মতো নিজে থেকে নড়েন নি? নাড়ানো হয়েছে? ছাত্রলীগের সাথে একটি ক্ষুদ্র পার্থক্য এই পাঁচ ছাত্র সংগঠনের এখনো চোখে পড়ছে সেটি হচ্ছে ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগ মনে করছে গণজাগরণ মঞ্চের আর প্রয়োজন নেই। তাঁরা ভুলে গিয়েছে ছয় দফা, ভুলে গিয়েছে শপথ, তোফায়েল আহমেদ ভুলে গিয়েছেন তিনিই প্রথম ঘোষণা করেছিলেন ‘রাজীব হচ্ছে নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে প্রথম শহীদ’। আপনারা কী ভাবছেন? গণজাগরণ মঞ্চের অপ্রয়োজনীয়তার কথা এখনো বলেনি এই পাঁচ সংগঠন। কিন্তু সুতোর টানটা জোরে পড়লে হয়তো এটিও বলে বসতে পারে ভবিষ্যতে।
ভুঁই ফোঁড় অনেকেই আজ গজিয়ে উঠছেন। অব্যাহতি দিচ্ছেন ইমরানকে, তা জনাব আপনাকে কে অথরিটি দিয়েছে কাউকে অব্যাহতি দেয়ার? কে আপনাকে মুখপাত্র মনোনীত করলো? আমরা যারা সাধারণরা ছিলাম আপনাকেতো আমাদেরচে’ আলাদা কোন ভূমিকায় দেখিনি? আজ একেবারে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন!
আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই এই আন্দোলন থেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করেছে, নিয়েছেও। বাকী সংগঠন গুলোও যে নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে কাজ করেনি তা নয়, কিন্তু এঁদের এজেন্ডাগুলো অনেকটাই শাহবাগের এজেন্ডার সাথে মিলে যায়, ফলে এঁরা ফায়দা লুটেছে কিনা সেটি দৃশ্যমান নয়। শাহবাগ যে চেতনাটা ধারণ করেছিলো সেটি নিয়ে শাহবাগ ব্যবসা করেনি। আওয়ামী লীগ সেটা অনেক আগে থেকেই করেছে এবং করছে, ছাত্রলীগ তার রি-টেইল এজেন্ট। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে উঠা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলে আন্দোলনের কফিনে পেরেক ঠুকেছে আওয়ামী লীগ। কারণ জামায়াতের সাথে কৌশলগত ঐক্য তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তখন, ফলে চেতনা কিছুদিন কফিনে আবদ্ধ ছিলো। ২০১৩ তে এসে সেই কফিন খোলার সুযোগ এবং প্রয়োজনীয়তা যখন এলো তখন আবার রি-টেইল – হোল-সেল দুটোই চলল কিছুদিন। এখন আপাতত রি-টেইল বন্ধ, হোল-সেল চলবে।
এদিকে তেঁতুল হুজুরতো নতুন ‘আদাওয়াত তত্ত্ব’ দিয়ে আওয়ামী লীগকে রিচার্জ করে দিয়েছেনই। জামায়াতের ঘরেও স্বস্তির নিঃশ্বাস বলে পত্রিকায় খবর আসে। তাই আমার আক্ষেপ আওয়ামী লীগের চেতনা ব্যবসা নিয়ে নয়, কারণ সেটি সামন্ত দাসের মতো দলকানা এই দেশে অত তাড়াতাড়ি বন্ধ হবেনা। আমার আক্ষেপটা ছাত্রলীগসহ যেসব ছাত্র, যুব, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন শাহবাগে সামিল হয়েছিলেন সেইসব সংগঠনকে নিয়ে। যে শহুরে মধ্যবিত্ত,আত্মকেন্দ্রিক বাঙালী আপনাদের কাছে নিজের সব আবেগ, ভালোবাসা সপে দিয়ে রাজাকার মুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলো, সেই বাঙালীর প্রতি যে প্রতারণা আপনারা দলীয় আনুগত্য দেখাতে গিয়ে এখন করছেন এবং সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে নিজেদের অর্জিত সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, সেটি প্রকারান্তরে বাঙালীর আবেগকে অপমান করা, তাঁদের নির্ভরতার শেষ আশ্রয়টুকু কেড়ে নেয়া। শাহবাগে সামিল হওয়া লাখো বাঙালী বিব্রত, কারণ তাঁরা আপনাদের উপর আস্থা রেখেছিলো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। ভবিষ্যতের কোন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে কোন ভরসায় তাঁরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবে বলতে পারেন? কিসের আশায়?
সর্বশেষ বলি ঘটনা পরম্পরায় ইতিহাস যখন সৃষ্টি হতে থাকে, ইতিহাসের নায়ক-খলনায়কেরা কিন্তু তখন বুঝতে পারেনা কে হবে সিরাজ-উদ-দৌলা কে হবে মীরজাফর। আরেকটা বিষয় মাথায় রাখা ভালো ইতিহাস চেতনা নিয়ে ব্যবসা করেনা, চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যায়। বিষয়গুলো শাহবাগে সামিল হওয়া সকল তরুণরা মনে রাখলে ইতিহাস উপকৃত হবে আশাকরি।
গত কয়েকদিন ইমরান আর অন্যান্যদের পাল্টাপাল্টিতে আমার মনে হচ্ছে শাহবাগ আন্দোলনের চেতনা এখন ক্ষমতার মোহে , খ্যাতির মোহে, রাজনীতির প্যাঁচে বিভ্রান্ত। এ খন্ড বিখন্ডতায় আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হল।
@গীতা দাস,
আমারও তাই ধারণা দিদি, এখানে খ্যাতির মোহে অচ্ছন্ন হতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। সবচে’ ভালো হতো ক্রিয়াশীল সব সংগঠন মিলে একজন মুখপাত্র নির্বাচন করে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচীকে এগিয়ে নিলে। কিন্তু সেই পরিবেশটাও এখন নেই। পাঁচ সংগঠন যে পথ দেখিয়েছে গতকাল দেখলাম অনলাইন এক্টিভিস্টদের একাংশও সেই পথ ধরেছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে জোটবদ্ধ আন্দোলন এগিয়ে নেয়া দুরহ।
গণজাগরণ মঞ্চের কাঠের ঘোড়াটি অনেক আগেই রং হারিয়ে বিবর্ণ। এরপরেও যারা ঘোড়াটি একদিন চিহিঁ রবে কেশর দুলিয়ে টগবগিয়ে উঠবে বলে আশা করেছিলেন, এই সুযোগে তাদের মোহভঙ্গ ঘটেছে। ওদিকে ডিজিটাল রক্ষী বাহিনীর বরকন্দাজ পিয়াল+আইজু+লেডি আইজু, ওরফে অদিতি ডিগবাজী দিয়েছেন। সুশান্ত-ইফতি চুরি-চামারির তালিকা টাইপ করছেন হন্যে হয়ে, এসব বিনোদনও নজরে আনা দরকার। এতো কিছুর পরেও শাহবাগ চেতনার মৃত্যু নেই। এমন কি সেখানে আওয়ামী মুসলীম লীগের হানাদারীও অসার। জয় বাংলা। (Y)
@বিপ্লব রহমান, আওয়ামী মুসলিম লীগ ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করবেন কি? তারা কেমন চেতনার ক্ষতি করছেন একটু বলবেন ভাই?
@দেবাশীষ দেব,
মদিনা সনদ! 😉
@বিপ্লব রহমান, হুম চিন্তার বিষয়। তবে কি জানেন, আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন রিং মাস্টারের মতো। রক্ষনশীলদের কাছে হয়ে গেছে নাস্তিক লীগ, প্রগতিশীলদের কাছে মুসলীম লীগ। রক্ষনশীলদের একেবারে ফেলে না দিয়ে আমাদের উচিত সামগ্রিকভাবে বুঝানো এর উপরেও কিছু আছে। এজন্য মুক্তমনার মত ব্লগ যেটা করে যাচ্ছে তা অসাধারণ।
মানলাম আওয়ামীলীগ এই আন্দোলনের ফায়দা নেয়ার জন্যই সংহতি জানিয়েছিল এবং হয়ত ফায়দাটা পেয়েছেও। কিন্তু বাকী সংগঠনগুলো তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারেনি এর দ্বায়িত্বটা কিও আওয়ামীলীগ কিংবা ছাত্রলীগকে নিতে হবে। বাকী সংগঠনগুলো( যেগুলো আপনি উল্লেখ করেছেন) সেগুলো কিন্তু আওয়ামীলীগের মতোই প্রাচীন এবং যথেষ্ট পরিপক্ষ। কিন্তু তবু তাদের গ্রহনযোগ্যতা আমাদের দেশের মানুষদের কাছে এত কম কেন বলতে পারবেন? মানলাম শাহবাগ একটা স্বপ্ন দেখিয়েছে এবং তা নিয়ে তারা ব্যবসাও করেনি। আপনি কি স্বপ্নের বাস্তবায়নকে ব্যবসা বলবেন? এই বিভক্তিতে সুড়সুড়ি না দিয়ে আমাদের উচিত ব্যাপারটার সমযোতা করার চেষ্টা করা। যেটা আপনার লেখায় এসেছে। ধন্যবাদ।
@দেবাশীষ দেব,
দৃশ্যমান জনসমর্থন এই সংগঠন গুলোর নেই এটা সত্য, কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা নেই বললে বোধকরি অত্যুক্তি হবে। তাঁদের কর্মসূচী, অন্দোলনের ইস্যু সবকিছুই ঠিক আছে, কিন্তু নেতৃত্বের দুর্বলতার সাথে আমাদের ভোগবাদী সংস্কৃতিও এঁদের কর্মসূচী বাস্তবায়নে বড় বাধা বলে মনে হয়। যারা এইসব ‘ছোটখাটো’ সংগঠনের সাথে জড়িত তাঁদের কাছে পরিচিত জনদের একটা কমন প্রশ্ন থাকে ‘এই রাজনীতি করে লাভ কী?’ রাজনীতিটাকে আমরা ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতি দিয়ে বিবেচনা করি। দুনিয়াকো মজা লেলো, দুনিয়া হামারে হ্যায় টাইপ।
স্বপ্নের বাস্তবায়ন অবশ্যই ব্যবসা না। আমিও বলিনা। আপনার মতো আমিও বলি-
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@দেব প্রসাদ দেবু, দাদা আপনার মত আমি কিংবা কেউ হয়ত কাগজে কলমে স্বীকার করবেনা যে রাজনীতিতে নিজের লাভ করাটাই মুখ্য। তবে এইটাতো মানতেই হবে যে আপনার(!) ছোটখাটো সংগঠনগুলোর শুধু নেতৃত্ব সংকটই নয় বরং তাদের গঠনতান্ত্রিক দুর্বলতাটাও বড় একটা বাঁধা এজেন্ডা বাস্তবায়নে। আমরা মানে সাধারন মানুষরা যখন এসব সংগঠনের ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে যাই, তখন ঐসব সংগঠনের বিজ্ঞ নেতারা দুইধরনের কথাই বলে। প্রথমটা, আমরা জাগতিক সব আসক্তির উর্ধে তাই ক্ষমতায় গিয়ে দেশের জন্যে কাজ করা আমাদের দ্বায়িত্ব নয়। আমাদের দ্বায়িত্ব শাষক শ্রেনীর দোষ এবং শুধু দোষ খোঁজা। দ্বিতীয়টা, এদেশের মানুষের আমাদের রাজনীতি বুঝার ক্ষমতা নেই। শিক্ষার বড়ই অভাব। হয়ত আমার উল্লেখিত দুইটা ব্যাপার ছাড়া অনেক গুণ থাকতে পারে, তবে আমার ক্ষুদ্র জীবনে আমি শুধু এই দুইটা কথাই ঘুরে ফিরে শুনেছি।
দাদা, হয়ত কথাগুলো অপ্রাসঙ্গিক এবং বাচালতা হয়ে গেলো। তবে কাওকে এই কথাগুলো বলার বা জানার লোভটা সামলাতে পারলাম না। অত্যুক্তি হলে, আমার পঙ্কিল অপরিপক্ক বাক্যঘাত ক্ষমা করবেন আশা করি। আমি এই ব্লগ জগতে একদম নতুন। আনকোরা বলা যায়। আবারো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। :-Y
@দেবাশীষ দেব,
আমার মনে হচ্ছে- হয় আপনি অতি বামের পাল্লায় পড়েছেন, নয়তো যারা বাম সংকীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁদের পাল্লায় পড়েছেন। এভাবে কেউ যদি আপনাকে উত্তর দিয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে- সে বিপ্লবী রোমান্টিসিজম থেকে বাম হবার ভড়ং ধরেছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজ বদলানো সম্ভব নয়। এনিওয়ে, এই প্রসঙ্গটা ভিন্ন তাই মন্তব্য আর বাড়াচ্ছিনা।
নূতন পুরাতন কোন কথা নয় ভাই, আমি নিজেই এখনো পরিপক্ষতা অর্জন করতে পারিনি।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা আপনার জন্য।
@বাঘা, গণজ়াগরণ মঞ্ছের সাথে ছাত্রলীগের সাথে আরো যেসব ছাত্র সংগঠন ছিল তাদের মদ্যে ইউনিয়ন ও ফ্রন্ট ছাড়া বাকি গুলো মূল দল সরকারের অংশীদার। তারপর ও কী আপনার বুঝতে বাকী যে কেন আজকে ছাত্রলীগের সাথে তারাও নেই?
গণজাগরণ মঞ্চের বিভক্তি দেখে সত্যিই খুব লজ্জা হয়, এতো দিন গর্ব করে যেসব এন্টি-শাহবাগীদের সাথে বাকযু্দ্ধ করেছি, তাদের কাছে মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব অনৈকের অবসান হোক, গণজাগরণ মঞ্চ চলুক তার আপন গতিতে।
@আদম অনুপম,
আপনার মতো আমিও বিব্রত, লাখো মানুষ আজ বিব্রত। অনেক সমালোচনা গণজাগরণ মঞ্চের আছে, করাও যায় নিশ্চয়ই। কিন্তু রাজনীতির ভিন্ন স্বাদ গণজাগরণ মঞ্চই দিয়েছিলো, স্বপ্ন তারাই দেখিয়েছিলো। তাই আপনার মতো আমিও চাই গণজাগরণ মঞ্চ চলুক তার আপন গতিতে।
ধব্যবাদ আপনাকে।
আওয়ামী লীগের সুবিধা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা ইতিহাস নিয়ে যে কোন নাগরিক আন্দোলনের সুফলটা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল হিসাবে আওয়ামী লীগের খাতায় যোগ হয়। আর সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারণকারী নাগরিকদের সঙ্কট হল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতার রাজনীতির বেদিমূলে বহুপূর্বেই মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার আদর্শকে বিসর্জন দিয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধী পাশের পর আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদর্শ ধারণ করে সেটা বিশ্বাস করার কোন যুক্তি আছে। তাই প্রচ- রাজনৈতিক সংকটে গণজাগরণ মঞ্চের ভূমিকা যখন তাদের রাজনৈতিক ফায়দা দেবে মনে করেছে, তখন তারা তাকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু পাছে তাদের সে আন্দোলন আওয়ামী লীগের আদর্শ বিচ্যূতি, দুর্নীতি, অপশাসন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে সে ভয়ে তারা সদা সন্ত্রস্ত ছিল। গণজাগরণ মঞ্চের তরুন প্রজন্ম যে চেতনায় আজ উদ্বুদ্ধ সে চেতনা ধারণ করার উপযোগিতা আওয়ামী লীগও বহু পূর্বে হারিয়েছে-গণজাগরণের মঞ্চের কুশীলবদের এটা মাথায় রাখতে হবে। বিদ্যমান রুগ্ণ রাজনীতির সকল ধারক-বাহক- সে আওয়ামী লীগ কিংবা তার সহযোগী সুবিধাভোগী বাম-কেউ গণজাগরণ মঞ্চের তারুণ্যের ঐতিহাসিক চেতনার জাগরণকে কখনো সহজে মেনে নেবে না।
@মোঃ জানে আলম,
এটিকে আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারণকারী নাগরিকদের মূল সঙ্কট হিসেবে দেখতে নারাজ। আমার মতে সঙ্কটটা হল দ্বিদলীয় বৃত্তের বাইরে ভাবতে সাহসী না হওয়াকে। মানুষকে আগে বিশ্বাস করতে হবে বিকল্প সম্ভব। যে রঙ মিস্ত্রী বিশ তলা ভবনে রশির উপর ভিত্তি করে রঙ করে সে বিশ্বাস করে সে এটি পারবে। আপনাকে বা আমাকে রঙ করতে দিলে পারবোনা কারণ আমাদের সেই বিশ্বাসটা নেই, ফলে মনে জোরও নেই। আত্মবিশ্বাসী না হলে কাউকে স্বপ্ন দেখানো বা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা বেজায় কঠিন বৈকি।
আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন করবে কিনা সেই ভয়ের চেয়ে আমার মনে হয় বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন এবং উপজেলা নির্বাচনে আশানুরূপ সাফল্য না পাওয়ার পেছনে তাঁরা মনে করেছে- হেফাজতের ভূমিকার কারণে তাঁরা সাফল্য কম পেয়েছে। ফলে হেফাজতকে বাগে আনতে গণজাগরণ মঞ্চকে একটা ‘শিক্ষা দেয়া’ এই হালুয়া রুটির রাজনীতির জন্য জরুরী হয়ে পড়েছিলো। দেশের সেক্যুলার রাজনীতির জন্য আত্মঘাতী আওয়ামী লীগের এই ভুল রাজনৈতিক পদক্ষেপের ফল হবে সুদূর প্রসারী। গণজাগরণ মঞ্চের সাম্প্রতিক অস্বস্তিকর মতবিরোধ চরমভাবে বিব্রত করেছে সাধারণ মানুষদের, যারা শাহবাগে সামিল হয়েছিলেন। ভবিষ্যৎ কোন গণান্দোলনে এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমার মনে হয়।
ধব্যবাদ আপনাকে।
দরকারী লেখা। ক্ষমতার রাজনীতিতে নাগরিকের অধিকার ক্ষমতাবানেরা কব্জা করে রেখেছে অনেক দিন থেকেই। শাহবাগ থেকে এরা শেখেনি বরং ওটাকেই নিজেদের অস্ত্র বানিয়েছে। নাগরিক মনে রাখবে ব্যাপারটা। আবার শাহবাগের চেয়ে বড় কিছু করে দেখাবে জনগণ। কূটিল ক্ষমতালোভী শাসকদের ছুঁড়ে ফেলে দেবে নতুনরাই। স্বপ্ন দেখি দেশটা একদিন নাগরিকের হবে। অন্তত কিছুটা তো হবেই। মুক্তমনে জনমত তৈরী অব্যাহত রাখুন।
ম্রিয়মান বিবর্ণ বুড়ো আর নতুন ফুলগুলো তবু বেঁচে রয়।
বুড়োর চোখ জ্বলে। ফুলগুলো ম্রিয়মান থেকে ফের উজ্জল হয়।
কয়লা কালো আর ব্ল্যাক পাউডার মিলেমিশে একাকার হয়।
আমরণ বুড়ো চেয়ে রয় ক্রমান্বয়ে উজ্জল নতুন ফুলগুলোর দিকে;
ঠিকাদার জন্তুমানবগুলোকে ফের কষে লাত মারবার অপেক্ষায়।
@কাজী রহমান,
(Y)
নিশ্চয়ই দিন আসবেই দিন সাম্যের। ধব্যবাদ আপনাকে।
বুঝলাম আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে শাহবাগে গিয়েছিল এবং বাপ্পাদিত্য বসুরাও চ্যাতনা বেচতে শাহবাগে গিয়েছিল|
এখন ইমরানের পাশে ছাত্র ইউনিয়ন/ ছাত্র ফ্রন্ট এর পোলাপান ছাড়া আর কাউকে(জনতা -জনার্ধন) দেখা যায় না কেন? ঐ ছাত্র ইউনিয়ন/ ছাত্র ফ্রন্ট এর ইমরানের কাধে চড়ার পেছনে উদ্দেশ্য কি ??
@বাঘা,
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ওখানে গিয়েছিলো না বলে বলা ভালো গিয়ে ফায়াদা লুটার চেষ্টা করেছে এবং লুটেছে। কারণ শুরুতে ছাত্রলীগ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ওখানে গিয়েছে, কারো ডিক্টেসন বা অনুরোধে নয়।
বাপ্পাদিত্য বসুরা কেন পিছিয়ে এসেছে সে্টা বোধকরি আলোচনায় বলা আছে বা ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ইমরানের কাঁধে চড়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে ভালো হত, ইমরান ভারবাহী পশু নয় যে তাঁর ঘাড়ে কাউকে চড়িয়ে বেড়াবে।
সবগুলো সংগঠন কি ইমরানকে মুখপাত্র নির্বাচিত করেছিল কিনা? নাকি ইমরান স্বপ্রণোদিত হয়ে মুখপাত্র ঘোষণা করেছিলো নিজেকে মিঃ বাঘা?
জনতা আজ নেই কারণ জনতা বিব্রত। এই বিব্রতটা কে করেছে বলে আপনি মনে করেন?
@দেব প্রসাদ দেবু,
প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করাকে কি বলে জানেন ?
:-পিছলামী !
আমার প্রশ্ন ছিল ছাত্র লীগ/ছাত্র মৈত্রী/ … ইত্যাদি ছাত্র সংগঠনগুলো শাহবাগে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার উদ্দেশ্যে যদি গিয়ে থাকে তবে ছাত্র ইউনিয়ন/ছাত্র ফ্রন্ট এর শাহবাগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য কি অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে ভিন্ন হতে পারে ??
ডা: ইমরান যেহেতু এই আন্দোলনের শুধুমাত্র একজন মূখপাত্র সেহেতু সব সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হয় | এক্ষেত্রে মুখপাত্রের দ্বায়িত্ব কয়েকজন/একটা কমিটির উপর ছেড়ে দেওয়াই উচিত যাতে আন্দোলনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি নির্ধারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয় |
জনতা চেয়েছিল আন্দোলনটিকে সারা বাংলায় ছড়িয়ে দিতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শক্ত জনমত তৈরি করতে| শাহবাগের সেই লাখো জনতা কখনো চায়নি কোন “মঞ্চ” তৈরি করে সেখান থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া হোক এবং তারা মঞ্চ নামে কোন রাজনৈতিক দলগঠনের দাবি নিয়েও শাহবাগে যায়নি !
@বাঘা,
াআপনার সাথে খানিকটা দ্বিমত পোষন করছি। প্রথমতঃ কোন সংগঠনের মুখপাত্র সাধারনতঃ একজনই হয় তবে বিকল্প একাধিক হতে পারে পরিস্থিতি বিবেচনায়। দ্বিতীয়তঃ মুখপাত্র নীতিনির্ধারক নন, ঘোষক। কাজেই কয়কজনকে মুখপাত্র ঘোষনা করে গনতান্ত্রিকতা প্রতিপালিত হয়না। আর সেখানে একটা কমিটি বা অনলাইন এক্টিভিষ্ট গ্রুপের তরুন নেতারা একত্রেই তো ছিলেন… তাহলে এই বিভাজনের মানে কি? আর শাহবাগের আন্দোলন যে সরকার বিরোধী ছিলো তা কি নতুন নাকি? কাদের মোল্লার শাস্তির মাত্রা দেখেই তো আমরা প্রতিবাদে নেমেছিলাম, প্রতিবাদ করেছিলাম তার ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শকরে আদালত ত্যাগের ঘটনায়! সভাবতঃই এখানে সরকারের সংশ্লিষ্টতা অনুমান করেই তরুণ প্রজন্ম ফেটে পড়েছিলো। বরং বলা ভালো যে, এই শাহবাগ সেদিন সরকারের অসহায়ত্ত্বকে সহায়তা দিযেছিলো। যার জন্যে একটি বিচার প্রকৃয়া তার যথার্থতা পেয়েছিলো। সরকার মনে করছে এই শাহবাগ এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে, তাই এর বিভাজনের আয়োজন সম্পন্ন হলো!
এখানে কোন ছাত্রসংগঠনই ফায়দা লুটতে প্রথমে যায়নি। পরবর্তীতে যে সব ছাত্রসংগঠন নীতিহীন রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তিতে লিপ্ত, তারা তাদের মাতৃসংগঠনের দায় মাথায় নিয়ে প্রভাববিস্তারে সচেষ্ট হয়েছে। যার ফলাফল দৃশ্যমান এখন! আর ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র প্রন্টের কথা যদি বলেন, তাহলে বলবো এই মুহূর্তে তাদের মাতৃসংগঠনের (ছাত্র ইউনিয়ন ছাড়া, যদিও বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাথে তাদের একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে) বিশাল রাজনৈতিক ফায়দা লোটার মতো অভিপ্রায় বা সম্ভাবনা নেই। সেই কারনে যে অংশ মনে করছে শাহবাগ সরকারের বিপরীতে দাঁড়াতে যাচ্ছে, তারাই সরকারের এজেন্ডা সম্ভবতঃ বাস্তনায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমার এ অনুমান সঠিক হোক কিংবা না হোক, আমি মনে করি শাহবাগ এদেশের স্বাধীনতাকামী মুক্ত মন গুলোকে মুক্তচেতনার আলোয় এনেছিলো। আমি আগেও কোন মন্তব্যে অন্য প্রসংগে বলেছিলাম এ সরকার বস্তুতঃ শাহবাগ আন্দোলনের পিঠে অযাচিত ছুড়িকাঘাত করেছে। এখনো করে চলেছে। সরকারের মস্তিষ্কে পাকি ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে এবং ভালোই কাজ করে চলেছে!
পরিশেষে, জনতা এই আন্দোলনকে সাড়া বাঙলায় ছড়িয়ে দিতে চায়নি, বরং বলা ভালো জনতা এই আনদোলনের সাথে স্বতস্ফূর্ত ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছিলো, দেখেছিলো আশা! এখানে যে ৬ দফা ঘোষনা করা হয়েছিলো, তাকেই কি রাজনৈতিক বক্তব্য বলা হচ্ছে? কি রাজনৈতিক বক্তব্য এখানে দেওয়া হয়েছে? আর যে কারনে শাহবাগের অভ্যূদয় তা তো রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় বোধ সংক্রান্ত। সেতো রাজনৈতিক হতে বাধ্য, নয়কি? আপনি যদি কোন বিশেষ দলের হয়ে চিন্তা করেন, তাহলেই আমাদের চিরায়তঃ স্বাধীনতার চেতনা কোন রাজনৈতিক দলের মনে হবে। কোন রাজনৈতিক দল যদি নিজেদের স্বাধীনতার ধারক-বাহক বলে মনে করে তাহলে কি দেশ জনতার যারা এদলের সাথে সমপৃক্ত নন তাদের সেই সেই চেতনা পরিত্যাগ করতে হবে এই বলে যে, সেটা রাজনৈতিক বক্তব্য? জামাত-শিবির তো ইসলাম ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, তাহলে যারা জামাত-শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত নন, তাদের কি উচিৎ হবে ইসলাম ধর্মকেই পরিত্যাগ করা? কি পরিহাস….! হা হা হা…….
তবে আমি বিশ্বাস করি এইসব বস্তাপচা রাজনীতিকদের জায়গা সহসাই জ্ঞানদগ্ধ আধুনিক তরুণেরা অচীরেই ছিনিয়ে নেবে। নীচে কাজী রহমান যেমন বললেন, আমিও মনে করি আধুনিক বাংলাদেশ হয়তো বেশী দূরে নয়।
@বাঘা,
আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞেস করেন ‘কেমন আছেন?’ লোকটি যদি বলে- ‘ভালো আছি, আপনি?’ তাহলে কি লোকটিকে আপনি পিছ্লা বলবেন? 😀 :lotpot: কারা শুধু প্রশ্ন করতে পছন্দ করে জানেনতো?
উত্তরটা দেখুন আলোচনাটিতেই-
বাঘা ভাই মুখপাত্র আর সভাপতি বা আহ্বায়কের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝেনতো? কয়েকজন মুখপাত্র নির্বাচন করা হলেই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক হবে এই অদ্ভুত সাংগঠনিক বুদ্ধি আপনাকে কে দিল? তারচেয়ে আপনি যদি বলতেন শাহবাগে ক্রিয়াশীলদের নিয়ে একটি নীতিনির্ধারণী সাংগঠনিক কমিটি করে আন্দোলন পরিচালনা করলে সিদ্ধান্তগুলো আরো বেশি গণতান্ত্রিক বলে দৃশ্যমান হতো, তাহলে বরং অনেক পরিপক্ষ বক্তব্য হতো আপনার।
রাজনৈতিক দলগঠন কল্পে মুখপাত্র ইচ্ছে পোষণ করেছেন এই সংক্রান্ত কোন লিংক আছে আপনার? অন্যজনের অভিযোগ থেকে নয়, মুখপাত্রের বলা কোন লিংক দেন।