সেই কবে অন্নদাশঙ্কর টিপ্পনী কেটেছিলেন বুড়ো-খোকাদের নিয়ে, কিন্তু আজও আমরা বুড়ো খোকারা তেলের শিশি ভাঙলে খুকুদের উপর রাগ করি, কিন্তু নিজের ভাঙাভাঙি চালিয়ে যাই দলীয় আনুগত্যের নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। বাংলা ভাঙা কিংবা ঐক্য ভাঙা আজ বুঝি অপরাধ নয়। আজ যেনো এটাই স্বাভাবিক। শত সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যে, অপ্রচারের মধ্যে ছাপোষা বাঙালীর গর্বের মুহূর্তগুলোই দলীয় আনুগত্য দেখাতে গিয়ে আমরা নিমিষেই ধুলোয় মিলিয়ে দেই দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে।

ক্রম আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠা শহুরে বাঙালীকে ৪২ বছরের জমানো ক্ষোভ উদগ্রে দেয়ার প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছিলো গণজাগরণ মঞ্চ। মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা গতানুগতিক হালুয়া রুটির রাজনীতির বিপরীতে বিশুদ্ধ একটি পরিবেশের জন্য তৃষিত ছিলো যে মানুষ, সেই তৃষ্ণার্তের কাছে সুপেয় জল নিয়ে এসেছিলো শাহবাগ। বাঁধ ভাঙা জোয়ার নিয়ে ঘাটের টাকা খরচ এককেন্দ্রিক শহুরে বাঙালী কাতারে কাতারে সামিল হয়েছিলো তারুণ্যের মোহনায়। আন্দোলনের ধরন, বুকের মধ্যে লুকানো আবেগ, যুদ্ধাপরাধীর প্রতি তীব্র ঘৃণা, শাসকদলের প্রতি সন্দেহ, প্রচলিত রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা সব গিয়ে উগড়ে পড়েছিলো শাহবাগে।

যুদ্ধাপরাধীর জন্য ঘৃণা জমা ছিলো আগে থেকেই। সাথে ২০১৩ সালের শুরু থেকে দেশব্যাপী জামাতের তাণ্ডব মানুষকে মনো-জাগতিক ভাবে অসহায় করে তোলে। সেই মুখ-বুজে থাকার অসহায়ত্বের প্রতি উপহাস করে শিবির ০৪ ফেব্রুয়ারি শাপলা চত্বরে পুলিশের হাতে রজনীগন্ধার স্টিক তুলে দিলে মানুষ হতভম্ব হয়ে যায়। সাধারণের অসহায়ত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জামায়াত হুমকি দেয় গৃহযুদ্ধের। মানুষ বুভুক্ষের মতো অপেক্ষা করে ০৫ তারিখের রায়ের জন্য। গণহত্যার প্রমাণিত অভিযোগে মামুলি দণ্ড পেয়ে বিজয়ের ভি চিহ্ন দেখিয়ে এবং ন্যায় বিচারের আশায় চাতকের মতো বসে থাকা বাঙালীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আদালত ত্যাগ করে কাদের মোল্লা । এ যেনো পূর্বপুরুষের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। তেঁতে উঠে মানুষের অসহায় মন। প্রতিবাদ আসে সব দিক থেকেই। কেউ রেখে ঢেকে, কেউবা রাজনীতির মারপ্যাঁচে কথা বলেন। সরকারী দল আদালতের উপর হাত নেই টাইপ কথা বলে শুরুতে ডিপ্লোম্যাটিক স্ট্যান্ড নেয়।

উদাহরণ দেয়া যাক। রায় ঘোষণার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ‘বিচার করেছেন ও রায় দিয়েছেন আদালত। আদালত যা করবেন, তার প্রতি আমাদের সন্তুষ্ট থাকতেই হবে। যদিও আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’ তিনি আরো বলেন ‘ট্রাইব্যুনালের কর্মকাণ্ডে সরকারের যে কোনো প্রভাব নেই, তা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।’ এ সময় প্রতিমন্ত্রী জামায়াতের প্রশংসা করে বলেন, ‘জামায়াতের তরুণ কর্মীরা নিজামী, মুজাহিদের চেয়ে ভালো’। এই সংক্রান্ত নিউজটি পাবেন এখানে

নবম সংসদের অধিবেশন তখন চলছিলো। রাশেদ খান মেনন সহ অধিকাংশ সাংসদ রায় নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে অনির্ধারিত আলোচনায় সমালোচনা মুখর হয়ে উঠলে তৎকালীন সংসদ উপনেতা তড়িঘড়ি করে সেটি থামিয়ে দেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ডেপুটি স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা না করে দিনক্ষণ ঠিক করে আলোচনা হতে পারে। কারণ এটি আদালতের বিষয়’

আদালতের বিষয় বলে সেদিন তাঁরা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনলাইন এক্টিভিস্টদের সচেতন উদ্যোগের সাথে প্রগতিশীল ছাত্র সমাজের সাহসী উপস্থিতি সাধারণ মানুষকেও সাহসী করে তোলে। সরকারের সুরও শক্ত হতে থাকে ক্রমে। বলে রাখা ভালো ছাত্রলীগও সেদিন শাহবাগে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন গুলোর পাশাপাশি। বাদ ছিলো শুধু ছাত্রদল।

যেই সরকার আজ শাহবাগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছেন, আন্দোলনের যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না, থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন, সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে বলেছিলেন- তার মন পড়ে আছে শাহবাগে। তিনি আরো বলেন ‘আমি তরুণ প্রজন্মকে বলতে চাই, আমরাও তোমাদের সঙ্গে একমত। তোমাদের শপথ বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার, আমরা করব। তরুণ প্রজন্ম জাতীয় সংসদে যে স্মারকলিপি দিয়েছে, তার প্রতিটি কথা যুক্তিসংগত।’ আওয়ামী লীগ তথা ছাত্রলীগও দ্বিগুণ উৎসাহে লেগে পড়ে শাহবাগ সমর্থনে।

‘যদি’ ‘কিন্তু’ ‘তবে’ করে করে, ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নিয়ে বিএনপিও প্রথম বিবৃতি দেয় ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ। বিবৃতিতে বলা হয়- ‘বিগত এক সপ্তাহ ধরে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী ১৯৭১ সালের মানবতা-বিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকার শাহবাগে অবস্থান করছেন। তাদের সমাবেশে অবশ্য আরও কিছু অতিরিক্ত বিষয় নিয়ে প্রস্তাব পাঠ করা হয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম জাতির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী হবেন এবং যৌক্তিক ও কার্যকর অবস্থান নেবেন এটাই কাঙ্ক্ষিত। তাই তারুণ্যের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সিরাজ সিকদার হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়গুলো শাহবাগে সমবেত তরুণদের উদ্বেগ ও প্রতিবাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে আন্দোলন আরও মহিমান্বিত হতো’।

বেগম জিয়া শাহবাগ সম্পর্কে প্রথম সরাসরি বিপরীত অবস্থান নেন ২০১৩ সালের মার্চের ১৫ তারিখ। মুন্সিগঞ্জের এক সমাবেশে প্রথম উনি প্রজন্ম চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ বলে টিটকারি করেন এবং সাথে সাথেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সামন্ত প্রভুর এই মনোভাব। বিএনপি সহ জোটভুক্ত দল গুলো সরাসরি বিরোধিতায় নেমে পড়েন। দৃশ্যপটে আসে আস্তিক্য নাস্তিক্যবাদের ধুয়ো। দৃশ্যপটে নিয়ে আসা হয় হেফাজতে ইসলামকে। হেফাজতের কর্মসূচি নির্ধারণ করা নিয়ে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমিরের সাথে টেলিফোনিক আলাপ আনেকেই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেই শুনেছেন। ৫ মে সন্ধ্যার পর থেকে চলতে থাকা হেফাজতের তাণ্ডব লীলার সমর্থনে এই কাঠমোল্লাদের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহবান জানিয়েছিলেন বেগম জিয়া। এইসব ইতিহাস সবারই জানা, পুনরুল্লেখ শুধু মনে করিয়ে দেবার জন্য। এইজন্য মনে করিয়ে দেয়া যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্লজ্জ স্বার্থপরতা এবং তাঁদের দলকানা সমর্থকদের দলীয় নেতৃত্বের প্রতি সামন্ত প্রভুর তো আনুগত্যের দিকটি সামনে আনা।

আমারদেশ পত্রিকা যেদিন শিরোনাম করেছিলো ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ সেদিন খুব আঁতে ঘা লেগেছিলো আওয়ামী লীগের। নিশ্চয়ই আমারদেশ পত্রিকার একটি জঘন্য উদ্দেশ্য ছিলো এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ এবং তার লেজগুলো যে ভাষায় কথা বলছে সেটা আমারদেশ পত্রিকার প্রতিধ্বনি নয় কি? শাহবাগের আন্দোলনে ইমরান এইচ সরকারকে মুখপাত্র বানানো হয়েছিলো সর্বসম্মতি ক্রমে। মনে রাখা ভালো তাঁকে নেতা বলা হয়নি, বলা হয়েছিলো মুখপাত্র। ব্যক্তি ইমরান কখনোই গুরুত্বপূর্ণ ছিলোনা আন্দোলনকারীদের কাছে। সে শুধু ঘোষক বা মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করতো। কিন্তু তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে জামাত হেফাজত গং। শাহবাগ আন্দোলনকে নিয়ে কুৎসা রটনার পাশাপাশি ব্যক্তি ইমরানকে তারা আক্রমণ করেছে, যেনো এই আন্দোলন শুধু ইমরানের ইচ্ছেতেই চলছে। এটির মাধ্যমে জামাত-হেফাজত গং মূলত বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিলো। সেটিতে ব্যর্থ হয়ে তারা মনোযোগ দেয় আন্দোলনকে নিয়ে কুৎসা রটাতে। যেমন এখানে গেলে টাকা পাওয়া যায়, নেশা-দ্রব্য পাওয়া যায়, যৌন নিপীড়ন কিংবা নীতি বহির্ভূত যৌনাচার হয় এরকম অনেক কিছু। আজ যেসব ছাত্র সংগঠন বলছেন ইমরান স্বেচ্ছাচারীর মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মসূচী নিয়ে, তারা কি প্রকারান্তরে বলছেন না ইমরান ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করেছে? যারা বলছেন আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা, তারা কি আমারদেশ কিংবা জামাত-হেফাজতের কুৎসার প্রতিধ্বনি করছেন না? বাপ্পাদিত্য বসু সহ পাঁচ সংগঠনের নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন এবং পরে বিভিন্ন যায়গায় বলছেন আলোচনা চলছে, আশা করছি আমরা মতভেদ উতরে একযোগে কাজ করতে পারবো, তাঁদের বলি- নিজেদেরতো বামধারার সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিতে বিপ্লবী রোমান্টিসিজম বেশ অনুভব করেন। তাহলেতো জানার কথা ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’ বলে এইটা রাজনৈতিক ট্রার্ম এই ধারায় বেশ প্রচলিত। সেটির মাথা খেয়েছেন আপনারা? যে আলোচনার কথা এখন বলছেন, সেই আলোচনা আগে কেন করেননি? সম্মিলিত ভাবে কেন সাংবাদিক সম্মেলন করলেন না? ছাত্রলীগের সুতাটা আগেই টানা হয়েছে সামন্ত প্রভুর হাত থেকে। আপনাদেরও কি সুতায় টান পড়েছিলো? আপনারাও কি ছাত্রলীগের মতো নিজে থেকে নড়েন নি? নাড়ানো হয়েছে? ছাত্রলীগের সাথে একটি ক্ষুদ্র পার্থক্য এই পাঁচ ছাত্র সংগঠনের এখনো চোখে পড়ছে সেটি হচ্ছে ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগ মনে করছে গণজাগরণ মঞ্চের আর প্রয়োজন নেই। তাঁরা ভুলে গিয়েছে ছয় দফা, ভুলে গিয়েছে শপথ, তোফায়েল আহমেদ ভুলে গিয়েছেন তিনিই প্রথম ঘোষণা করেছিলেন ‘রাজীব হচ্ছে নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে প্রথম শহীদ’। আপনারা কী ভাবছেন? গণজাগরণ মঞ্চের অপ্রয়োজনীয়তার কথা এখনো বলেনি এই পাঁচ সংগঠন। কিন্তু সুতোর টানটা জোরে পড়লে হয়তো এটিও বলে বসতে পারে ভবিষ্যতে।
ভুঁই ফোঁড় অনেকেই আজ গজিয়ে উঠছেন। অব্যাহতি দিচ্ছেন ইমরানকে, তা জনাব আপনাকে কে অথরিটি দিয়েছে কাউকে অব্যাহতি দেয়ার? কে আপনাকে মুখপাত্র মনোনীত করলো? আমরা যারা সাধারণরা ছিলাম আপনাকেতো আমাদেরচে’ আলাদা কোন ভূমিকায় দেখিনি? আজ একেবারে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়ে হাজিরা দিচ্ছেন!

আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই এই আন্দোলন থেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করেছে, নিয়েছেও। বাকী সংগঠন গুলোও যে নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে কাজ করেনি তা নয়, কিন্তু এঁদের এজেন্ডাগুলো অনেকটাই শাহবাগের এজেন্ডার সাথে মিলে যায়, ফলে এঁরা ফায়দা লুটেছে কিনা সেটি দৃশ্যমান নয়। শাহবাগ যে চেতনাটা ধারণ করেছিলো সেটি নিয়ে শাহবাগ ব্যবসা করেনি। আওয়ামী লীগ সেটা অনেক আগে থেকেই করেছে এবং করছে, ছাত্রলীগ তার রি-টেইল এজেন্ট। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে উঠা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলে আন্দোলনের কফিনে পেরেক ঠুকেছে আওয়ামী লীগ। কারণ জামায়াতের সাথে কৌশলগত ঐক্য তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তখন, ফলে চেতনা কিছুদিন কফিনে আবদ্ধ ছিলো। ২০১৩ তে এসে সেই কফিন খোলার সুযোগ এবং প্রয়োজনীয়তা যখন এলো তখন আবার রি-টেইল – হোল-সেল দুটোই চলল কিছুদিন। এখন আপাতত রি-টেইল বন্ধ, হোল-সেল চলবে।

এদিকে তেঁতুল হুজুরতো নতুন ‘আদাওয়াত তত্ত্ব’ দিয়ে আওয়ামী লীগকে রিচার্জ করে দিয়েছেনই। জামায়াতের ঘরেও স্বস্তির নিঃশ্বাস বলে পত্রিকায় খবর আসে। তাই আমার আক্ষেপ আওয়ামী লীগের চেতনা ব্যবসা নিয়ে নয়, কারণ সেটি সামন্ত দাসের মতো দলকানা এই দেশে অত তাড়াতাড়ি বন্ধ হবেনা। আমার আক্ষেপটা ছাত্রলীগসহ যেসব ছাত্র, যুব, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন শাহবাগে সামিল হয়েছিলেন সেইসব সংগঠনকে নিয়ে। যে শহুরে মধ্যবিত্ত,আত্মকেন্দ্রিক বাঙালী আপনাদের কাছে নিজের সব আবেগ, ভালোবাসা সপে দিয়ে রাজাকার মুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলো, সেই বাঙালীর প্রতি যে প্রতারণা আপনারা দলীয় আনুগত্য দেখাতে গিয়ে এখন করছেন এবং সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে নিজেদের অর্জিত সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, সেটি প্রকারান্তরে বাঙালীর আবেগকে অপমান করা, তাঁদের নির্ভরতার শেষ আশ্রয়টুকু কেড়ে নেয়া। শাহবাগে সামিল হওয়া লাখো বাঙালী বিব্রত, কারণ তাঁরা আপনাদের উপর আস্থা রেখেছিলো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। ভবিষ্যতের কোন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে কোন ভরসায় তাঁরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবে বলতে পারেন? কিসের আশায়?

সর্বশেষ বলি ঘটনা পরম্পরায় ইতিহাস যখন সৃষ্টি হতে থাকে, ইতিহাসের নায়ক-খলনায়কেরা কিন্তু তখন বুঝতে পারেনা কে হবে সিরাজ-উদ-দৌলা কে হবে মীরজাফর। আরেকটা বিষয় মাথায় রাখা ভালো ইতিহাস চেতনা নিয়ে ব্যবসা করেনা, চেতনা ধারণ করে এগিয়ে যায়। বিষয়গুলো শাহবাগে সামিল হওয়া সকল তরুণরা মনে রাখলে ইতিহাস উপকৃত হবে আশাকরি।