লিখেছেন – আহসান জামান
প্রথমেই পাঠকের কাছে কিঞ্চিৎ ক্ষমা প্রার্থী অপটু এবং ভুল যুক্ত বাংলায় আর্টিকেলটি লেখার জন্য। একজন অলস কাল্পনিক লেখক হওয়ার সুবাদে খুব সাজিয়ে-গুছিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে ভাষার মারপ্যাঁচ মারা আমার সাধ্য বহির্ভূত। নিজ গুনে ক্ষমা করবেন (না করলেও আক্রমণাত্মক হব না)।
সূচনা পরবর্তীতে আসল কথায় আসা যাক, যে উদ্দেশ্য নিয়ে লেখাটা লেখার কথা বাধ্যতামূলক মনে হল। উদ্দেশ্য হল “রূপবান” সম্পর্কে সংক্ষেপে বিষদ কিছু কথা বলা। অন্ততপক্ষে চেষ্টা সেটাই থাকবে।
এখানে বলে রাখা ভাল যে বাংলাদেশী সমকামী সমাজ সম্পর্কিত “রূপবান” নামক ম্যাগাজিনটি ব্যাক্তিগত পদক্ষেপে করা একটি কাজ, এর সাথে জড়িত কেউই কোনরূপ আর্থিক মুনাফা লাভের আশায় অন্তর্ভুক্ত হন নাই। রূপবান এই বিষয়টি জোরাল ভাবেই প্রকাশ করেছে তাই আমারও এখানে উল্লেখ করা উচিৎ বলে মনে করি।
রূপবানের আত্মপ্রকাশের মাস পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক যে বাংলাদেশের মত একটা রক্ষণশীল দেশে সমকামী/সমপ্রেমিদের (কে কোনটা গ্রহণযোগ্য অগ্রহণযোগ্য মনে করে তা ঠিক করা আজকাল প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে) আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা-আশা, উদাসীনতা (বা তার বিপরীতটা) নিয়ে এই প্রথম একটা ম্যাগাজিন বের হলেও শুরুর দিকের কিছু পত্রিকার রিপোর্ট আর তার নিচে ঘৃণাপূর্ণ (সব না কিন্তু বেশিরভাগই) কমেন্ট ছাড়া তেমন একটা নাড়াচাড়া দেখলাম না। পত্রিকাগুলো ২/৩ দিন কিছু খবর ছাপাল, জনগন কিছুদিন “জাত গেল-ধর্ম গেল-দেশ গেল” বলে চিল্লাচিল্লি করল, দুই একজন বাক্সের বাইরে চিন্তা করে সমকামী/সমপ্রেমিদের পক্ষে কিছু বলার চেষ্টা করল (এবং অকথ্য গালি খেলো) আর মোল্লারা কিছুটা লাফাল। উল্লেখ্য, কুরুচিপূর্ণ সকল ধরণের মন্তব্যের বিপরীতে “আত্ম-অধিকার রক্ষামূলক” মন্তব্যের সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিন্তু তারপর? কেমন একটা অপরাধীসুলভ চেহারা ধরে রূপবান এখন চুপচাপ। কেউ যখন কিছু বলতে নারায তখন নিজেরই কিছু বলা উচিৎ বলে মনে হচ্ছে। নিজেই একজন সমকামী হওয়ার সুবাদে “রূপবান” সম্পর্কে নিজের মতামতটা দেয়া খুব দরকারি হয়ে গিয়েছে, যদিও এটাকে অনেকে পানি ঘোলা করার সাথে তুলনা দিবে।
প্রথমেই আসা যাক রুপবান-এর উদ্দেশ্য নিয়ে, কি প্রকাশের জন্য বা জানানোর জন্য এটি আত্মপ্রকাশ করল। রূপবান-এর সাথে ব্যাক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম যে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশী LGBT কমিউনিটির, বিশেষ করে সমপ্রেমিদের, মতামত প্রকাশ ও এর অন্তর্ভুক্ত সকলের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তৈরি। রুপবান-এর উদ্দেশ্য হল ভালোবাসার কথা বলা আর তাকে উদ্বুদ্ধ করা, কোন বিশেষ যৌনাচার বা যৌন চাহিদাকে প্রকাশ করা নয়। ভাল কথা। ব্যাপারটা পুরোপুরি সেরকম হলে “রূপবান” শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার পর সে বিষয়ক আমার অনেক বর্তমান চিন্তাই অকারন-চিন্তা হত। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে সম্পূর্ণ তা না। রুপবান-এর সম্পাদকীয়তে খুব পরিষ্কার ভাবেই বলা আছে “এই ম্যাগাজিন বাংলাদেশী সমপ্রেমি জনগণের আত্মপ্রকাশের একটি প্রামাণ্য দলিল”। তাই যদি হয় তাহলে প্রশ্ন হল, সমপ্রেমিরা কি নিজেদের কাছেই আত্মপ্রকাশের জন্য এই ম্যাগাজিনটি বের করেছে? নিজেদেরকেই জানান দেয়ার জন্য যে দেশের রক্ষণশীলতার সাথে সমপ্রেমিদের উপস্থিতি বা অনপুস্থিতির কোন সম্পর্ক নাই? কথা হল, ম্যাগাজিনটা সমাজের সর্বোচ্চ (বা সর্বনিম্ন) যে সমপ্রেমি শ্রেণী পর্যন্ত পৌঁছাবে তারা সকলে ইতোমধ্যেই নিজের অস্তিত্ব বিষয়ক বেশিরভাগ প্রচলিত ভুল চিন্তাগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন, সেটা ক্রমাগত সমচিন্তার মানুষের সান্নিধ্যে থেকেই হোক বা নিজ বুদ্ধিতেই হোক না কেন। তাই ধরে নেয়া যেতে পারে নিজেদের কাছে আত্মপ্রকাশের জন্য নয় বরং সমাজের “অচেতন” অংশের কাছে অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্যই রুপবান-এর সূচনা। তাহলে প্রশ্ন হল, কিছু সময় যাওয়ার পর রূপবান তার মৌলিক উদ্দেশ্য কেন পরিবর্তন করল? তার চেয়ে বড় কথা, একবার নিজেদের (যেহেতু এটা ব্যাক্তিগত জার্নাল নয়, পূর্বে অ-উল্লেখিত সমাজের একটি সম্পূর্ণ অংশের উপস্থাপক) অস্তিত্ব প্রকাশের পর “ঠিক হয় নাই” চিন্তা করে পিছনে সরে যাওয়ার অধিকার কি তাদের আছে? আমি কোনভাবেই মানতে পারবো না, যে কিনা নিজেকে আমার ও আমার মত আরও অনেকেরই একজন উপস্থাপক হিসাবে প্রকাশ করবে, তার এইরূপ আচরণ।
এরপর আশা যায় ম্যাগাজিনটির অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য বিষয়গুলোতে। আর্টিকেলগুলোকে এক কাতারে ফেলা যাবে না, কোনটা শিক্ষামূলক, কোনটা কাঠখোট্টা প্রয়োজনীয় তথ্য নির্ভর আবার কোনটা হালকা গোছের। বৃষ্টি, চিঠি আর কম বয়সের ভালবাসার কথা সম্বলিত “হার্ট ওয়ার্মিং” লেখাও আছে। আর কিছু অংশ আছে যেগুলো দেখলে আর পড়লে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতে হয়, কারন এদের প্রকাশনার উদ্দেশ্য কি কোনভাবেই বুঝে ওঠা যায় না। এর কোনটায় বলা হয়েছে ব্যাক্তিগত অপ্রচতিল যৌন চাহিদার (সোজা কথায় বললে “ফেটিশ”) কথা আবার কোনটায় বলা হয়েছে সমপ্রেমিরা ঢাকার কোন কোন জায়গায় গিয়ে আলো আর অন্ধকারের সান্নিধ্যে “সমকামী”-তে পরিবর্তিত হয়। সোজা কথায়, মোটামুটি বিনা খরচে সস্তা যৌন চাহিদা মিটাতে সহজে পার্টনার কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে তার বিবরণ। এই অংশগুলো সম্পর্কে আসলে আরেকটু বিষদ বলা উচিৎ যেহেতু এদের ইমপ্যাক্টের ক্ষমতা শূন্য বা মারাত্মক যেকোনোটাই হতে পারে, পাঠকের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।
ফেটিশ নির্ভর লেখাটা বেশি দৃষ্টিকটু কারণ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এতে সমপ্রেমি/কামিদের সম্পর্কে প্রচলিত খুব বাজে একটা কথার মোটামুটি ভিজুয়াল পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। গল্পটা (বা ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতাও হতে পারে, স্পষ্ট করে কোথাও উল্লেখ করা হয় নাই) শুরু হয় ১৫/১৬ বছরের একটা ছেলের নিজের মধ্যে খুঁজে পাওয়া কিছু অপ্রচলিত চাহিদা অনুধাবনের মধ্য দিয়ে। একই লিঙ্গের প্রতি তার আকর্ষণের কথা আমি বুঝাচ্ছি না, বলতে চাচ্ছি শারীরিক আঘাত প্রাপ্তির মাধ্যমে তার যৌন তৃপ্তি লাভের কথা। পড়া চালিয়ে যেতে থাকলে অচিরেই জানা যায় যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুধু চামড়া আর মাংসের ব্যাথায় তার চাহিদা পূরণ হচ্ছিলো না, তার সাথে সাথে মনের ব্যাথা পেতেও সে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আর সে কথা মাথায় রেখেই ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে ওঠা সমপ্রেমি ছেলেটি একজনের পর একজনকে ভালবাসতে শুরু করে এবং যখনই কোন ভালবাসা (সেটা যার বা যেটার প্রতিই হোক না কেন) গভীর হয় তখনই সে সেই সম্পর্কের ইতি টানে। লেখাটা পড়লে আর যাই হোক, ভালবাসার নাম গন্ধ টের পাওয়া যায় না। পরিশেষে যদিও এই চাহিদার Masoquismo/Masochism শীর্ষক একটা গম্ভীর নাম দেয়া হয়েছে কিন্তু তাতে ভালবাসার কোন মান রক্ষা হয় নাই। এই লেখাটা পড়ে বাইরের জগতের একজন ব্যাক্তির এই ধারনা হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক যে “সমপ্রেমি”-রা আসলে “সমকামী” হতেই বেশি আগ্রহী, ভালবাসার প্রতি আকর্ষণ তাদের কাছে খুবই ক্ষীণ (যদি সম্পূর্ণ শুন্য না হয়ে থাকে আর কি)? দুইটা ছেলে বা মেয়ের মধ্যে সম্পর্ক বলতে আমাদের সমাজের মানুষ তো আসলে যৌনাচার/ব্যাভিচারই মনে করে, আত্মার চিরস্থায়ী সম্পর্ক তো তাদের কাছে অচিন্তনীয়। এই লেখাটা ঐ মতবাদের বিপক্ষে না বলে বরং পক্ষেই বলে।
তারপর আসা যাক সমচাহিদার মানুষগুলোকে কিভাবে খুঁজে বের করতে হবে তা নিয়ে লেখা তথ্যবহুল উপস্থাপনাটি সম্পর্কে। “ঢাকার পাঁচ”। যারা কিছুটা ধারণা করতে পারবেন তারা সহজেই বুঝে যাবেন যে এই টাইটেলের নিচে কি লেখা থাকতে পারে। এখানে বর্ণিত আছে ঢাকার সেরা পাঁচটি স্থানের কথা যেখানে সমপ্রেমিরা কাম বাসনা পূরণ করতে যান, তা সে যতই ক্ষীণ ও ক্ষুদ্র হোক না কেন। এখানে বেশ সংক্ষেপে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে কোথায় গেলে কিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে নুন্যতম সময় খরচে ফলাফল পাওয়া যায়, অন্য ভাবে বলা যায় কিভাবে বাসনা পূরণ করা যায়। লেখাটি না পড়ে (শুধু এখানে এই সম্পর্কে পড়ে) আসলে অনেকের কাছেই মনে হতে পারে হয়ত আর কোন উপায় না দেখে সমলিঙ্গের প্রতি সামাজিক ভাবে অবৈধ আকর্ষণ মিটানোর শেষ আশ্রয় হিসাবে প্রকাশ করার জন্যই ঢাকার এই পাঁচটি স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকটা বলা যায় যে সমাজের অবৈধ আচরণের কারনে সমপ্রেমিদের কোথায় যেয়ে শেষ পর্যন্ত দাড়াতে হচ্ছে তার এক দুঃখ মিশ্রিত বিবরণ। আসলে ব্যাপারটা তার ধারের কাছেও না। ব্যাপারটা হল উপায় বাতলানো… আর ঐ উপায়ের সঠিক ব্যাবহারের জন্য সাহস যোগানো। অন্ততপক্ষে আমার কাছে তাই মনে হয়েছে এই রকম লাইনগুলো পড়ে, “হয়তো টেরটিও পাবেন না কার হাত ঘুরে বেড়াচ্ছে আপনার সবচেয়ে দামী রত্নে!”। এই লাইনটি পড়ে অন্ততপক্ষে এটা বোঝা যায় যে লেখক বেশ রসালো মনের মানুষ। এইরূপ মন্তব্যের ঘাটতি নাই। আরও জানা যায় কোথায় কিভাবে দাড়াতে হবে, কার দিকে কিভাবে তাকাতে হবে, কখন ভয় পাওয়া যাবে না সহ যাচাই-বাছাইয়ের বেশ কিছু বটিকা। একটা বাহবা দিতেই হবে যে মাত্র পাঁচটা ছোট প্যারায় এতো পরিষ্কার করে উপস্থাপিত বস্তু/বিষয় আমি ইহজনমে খুব বেশি পড়ি নাই। দুঃখজনক যে লেখাটা পড়া শেষ করে অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে সকল সমপ্রেমি/সমকামিদের জন্য এই পাঁচটি স্থানে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং সমাজের এই জনগোষ্ঠীর জন্য এ এক হরহামেশা ব্যাপার। মনে হয় না স্বয়ং লেখকেরও এই উদ্দেশ্য ছিল। আরেকটা ব্যাপার হল যে জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তা, অযাচিত ভয় আর অনাস্থায় ভোগে তাদের চারণক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে এইভাবে বিবরণ দেয়াটা কতটা ঠিক হল সে বিষয়ে আমি অনিশ্চিত। একদিকে চরম গোপনীয়তা আর আরেকদিকে গোপনীয়তা ভঙ্গের বিবরণ… প্যারাডক্সের বাংলা আমার জানা নাই। সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণকে শুধুই একপ্রকার যৌন উন্মাদনা হিসাবে যদি নাও মনে করতে চাই একজন ভীত সমপ্রেমি লেখাটি পড়ে এইভাবে সঙ্গী খুঁজতে যে “অ-আত্মবিশ্বাসী” হবে সে ব্যাপারে আমার অনিশ্চয়তা নাই।
তালিকায় এরপর আসে “গন্তব্য সিলম Soy 4”। সেক্স টুরিসমের জন্য যে থাইল্যান্ড বেশ ভাল পরিমাণেই প্রসিদ্ধ তা আমরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোন না কোন ভাবে জেনেই গিয়েছি। এটি হল সে বিষয়েই (প্রায়) লেখা একটি আর্টিকেল। থাইল্যান্ডের সিলমে পৌঁছানোর প্রণালি বাতলানো থেকে শুরু করে “নিষিদ্ধ কামাচারের উগ্র গন্ধের চাইতে নিজের যৌন চাহিদাকে স্বীকৃতি দেয়া”, পছন্দনীয় বারটি (মাল্টি পারপাস) খুঁজে বের করার সহজ রাস্তা, আকর্ষণীয় বয়স ও গঠনের ম্যাসুয়ার পাওয়ার জন্য সুলভ “ম্যাসাজ হাউস”-এর ঠিকানা সহ আরও জানা যায় কোথায় গেলে রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষারত থাই “রূপবান”-দের দেখা পাওয়া যাবে। ব্যাপারটা অবশই এমন না যে ঐ থাই “রূপবান”-দের সাথে কিছু করতেই হবে, চাইলে তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা ড্রিংকও সেরে নেয়া যায় (লেখক এই বিষয়ে উৎসাহিত করতে ভুলেন নাই)। “পজিটিভ থিংকিং” একজন লেখাটি পড়ে এটাও বলতে পারেন যে সেখানে তো এটাও বলা হয়েছে সিয়মে কিভাবে সহজে খাবার আর হোটেল খুঁজে বের করা যায় আর সস্তায় শপিং করা যায়, তাহলে এতো “নেগেটিভলি” বিষয়টা কেন দেখছি? কথা সত্য। কিন্তু আমার মনে হয় না পর্ণের শুরুতে রন্ধনরত অভিনেতা/অভিনেত্রিকে দেখানোর মানেই সেটা “ফুড এন্ড ট্রাভেলস” বিষয়ক ডকুমেন্টারি হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, এটাও ঠিক যে দরকারি কিছু ছোট ছোট টিপস আসলেই পাওয়া যায়। যেমন লেখাটি পড়ে আমি জানতে পারলাম যে থাইল্যান্ডের বেশিরভাগ পাবলিক টয়লেটেই পানি থাকে না, টাকা দিয়ে টিস্যু কিনে কাজ সারতে হয়। এই অতিরিক্ত খরচ এড়ানোর সহজ উপায় হল দেশ থেকেই কিছু পকেট টিস্যু কিনে নিয়ে যাওয়া।
পাতা উল্টাতে থাকলে শেষ পর্যায়ে এসে পুরো দুই পাতা জুড়ে অনেকগুলো ছবির সমারোহ দেখা যায় যেগুলো ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে করা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রঙ্গিন আলো, রকমারি খাবার ও পানীয় সহ ছোট ছোট জনসমারহের ছবিগুলোকে ছাপিয়ে খুব কটু ভাবে চোখে লাগে শুধুমাত্র আন্ডারওয়্যার ও সুইমওয়্যার পরিহিত অবস্থায় ছেলেপুলেদের আলোআঁধারির মধ্যে নেয়া “পুল পার্টির” অনেকগুলো ছবি। এর সবগুলোই একই পার্টির কিনা জানি না কিন্তু তাতে আসলে কিছু যায় বা আসেও না, আধিক্যের পরিমাণ নিয়ে হল কথা। ২/৩ টা এমন ছবিও পাওয়া যায় যেখানে ছেলেরা মেয়ে সেজে শরীর দুলিয়ে নৃত্যরত অবস্থায় আছে। অবশ্য ছবিগুলো যদি হিজড়াদের কোন গেট টুগেদার থেকে নেয়া হয়ে থাকে তাহলে এখানে খারাপ লাগার কিছু নাই। সমস্যা হল, সেটা না। একশ শব্দের চাইতে একটা ছবি অনেক বেশি কথা বলে। আর মানুষ লেখা পড়ার চেয়ে ছবি দেখতেই বেশি সহজে আগ্রহী হয়। এরকম এতগুলো ছবি দেখে একজন নিরপেক্ষ ব্যাক্তি, যে কিনা সমকামিতার পক্ষে বা বিপক্ষে নাই, যদি এই ধারণা করে বসেন যে এই জনগোষ্ঠীর অজানা অনুষ্ঠানগুলোতে সবসময়ই এরকম উগ্র আচরণকে উৎসাহিত করা হয় তাহলে তাকে দোষ দেয়ার অধিকার থাকে না। আর তাছাড়া বাঙ্গালীরা যে খুব সহজেই একজন সমকামী পুরুষ আর হিজড়াকে একই কাতারে ফেলে দেয় তা আমরা সবাই জানি। এই ভিজুয়াল উপস্থাপনাগুলো ঐ ধরণের মতবাদের বিপক্ষে না বরং পক্ষেই প্রমাণ দেয়।
মজার ব্যাপার হল যতগুলো বিষয়ের বিপক্ষে এতক্ষণ বললাম তার সবগুলোই বৈধ ও আকর্ষণী, এবং মাঝে মাঝে সরাসরি প্রয়োজনীয়। কিন্তু সম্পূর্ণ স্থান-কাল বুঝে। মানুষ নিঃসন্দেহে এমন ম্যাগাজিনের প্রতি খুব একটা আগ্রহী হবে না যেটা কিনা একটা কাটখোট্টা তথ্য আর কিছু হালকা প্রমের (বা ঐ জাতীয়) কাহিনীর মিশ্রণ। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ঐ বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী হয় যেগুলো কিছুটা হলেও মানুষের গোপন যৌনাচার নিয়ে আলোচনা করে। এটা আমরা সবাই করি, করি না বললে মনে হয় না আসলে সেটা সত্যি বলা হবে (হতেও পারে কিন্তু সেটা আসলে বেশ দুর্লভ)। একটা পত্রিকা চালানোর জন্য এই ধরণের অংশের দরকার আছে এটা ঠিক। কিন্তু “রূপবান”-এর প্রথম সংখ্যার জন্য এটা কতটা দরকারি? সত্যি বলতে একেবারে কবীরা গুনাহ পর্যায়ের হারাম। যেখানে কিনা আমাদের এই কমিউনিটি সম্পর্কে হাজারখানেক নোংরা আর মিথ্যা মতবাদ ইতমদ্ধেই প্রচলিত আছে সেখানে তাদের (মতবাদগুলোকে) আরও জোরদার করার জৈব সার দেয়ার কোনই কারণ থাকতে পারে না। নিঃসন্দেহেই প্রথম সংখ্যার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল ঐ বিষয়গুলোকে ফলাও করা যেগুলো আমাদের সমাজে সাধারনভাবে “ভালো” হিসাবে স্বীকৃত এবং সমকামী সমাজেও যেগুলো উপস্থিত (যেমন ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করতে চাওয়ার আগ্রহ)। উচিৎ ছিল “ভালো” বিষয়গুলোকে তেল মেখে চকচকে করে আরও ভালো হিসাবে উপস্থাপন করা। করা হয়েছে ঠিক তার বিপরীতটা। মানুষ যেহেতু নামী মানুষের উক্তি দামী হিসাবে নেয় (ফেসবুক দেখলেই জানা যায়) তাই অ্যাডলফ হিটলারের নিম্নোক্ত উক্তিটি উল্লেখ করা খুবই দরকার বলে মনে হয়ঃ
“<for those who wishes for the change> it would be both foolish and criminal to commit mistakes which could be used as weapons in the hands of those who are opposed to such change.”
কথাটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর সঠিক সে বিষয়ে আলোচনায় যাওয়ার কোন দরকার আছে বলে আমার একেবারেই মনে হয় না। ম্যাগাজিনটির অস্তিত্বের খবর যে শুধুমাত্র এই কমিউনিটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এই প্রথম প্রচলিত দেয়াল পার হয়ে অজ্ঞ জনগণের একটা অংশের চোখের সামনে গিয়েও পরবে তা প্রকাশকরা নিঃসন্দেহেই জানতেন। আসলে তাদের জানা না-জানার প্রশ্ন তোলাই ঠিক না কারণ তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য তাই ছিল, এখন তারা যতই জোর দিয়ে বলুন না কেন যে শুধুমাত্র সমপ্রেমী/কামীদের মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের জন্য এটি প্রকাশ করা হয়েছে, এতো পাবলিসিটি অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়ে গিয়েছে। একথা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য। কই, আগে তো কখনো অনলাইন পত্রিকাগুলোর ব্রেকিং নিউজে “গোপন আড্ডাখানায় যৌন উন্মাদনায় মাতলো ধনীর সমকামী দুলালরা!”-এর মত কোন সস্তা হেডলাইন দেখলাম না? এই গোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষগুলো যে বিষয়ে অবিশ্বাস্য রকমের পটু তা হল আত্ম-গোপনীয়তা বজায় রাখা, বিশেষ করে তারা যারা “ক্রাউড হ্যান্ডলিং”-এর দায়িত্বে থাকেন। কারণ বলার দরকার নাই, ব্যাপারটা বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সম্পূর্ণ যৌক্তিক। তাই যদি হয় যে আজ পর্যন্ত সমাজের একটা বিশেষ অংশের গোপনীয়তা রক্ষায় যারা এতটা পটু দায়িত্ব পালন করেছেন, এবার কিভাবে তাদের হাত থেকে “রূপবান”-এর মত একটা টাইম বোম ফস্কে বের হয়ে গেল? নিঃসন্দেহেই তাহলে এটা কোন ফস্কানোর ঘটনা না, না বুঝে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দেয়াই বলা ভাল হবে। যদি তা না হত তাহলে মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ভিনদেশী ব্যাক্তিদের (উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম, ব্যাক্তিগত ভাবে কেউ জেনে থাকলে তো জানেনই) আমন্ত্রণ জানানো হত না।
সত্যি বলতে এটা বলাও অযৌক্তিক হবে না যে রূপবান সমকামী ও বিসমকামী উভয় গোষ্ঠীর জন্যই সমকামীদের জেনারালাইযড করে ফেলেছে। “রূপবান”-এর উপর ভিত্তি করে একজন অজ্ঞ বিসমকামী ব্যাক্তি যেমন মনে করতে পারেন “সমকামীরা এইরকমই হয়”, তেমনি এখনো বুঝে উঠতে পারে নাই কোনাটা কি এই রকম এক অপ্রাপ্তবয়স্ক (শরীর বা মন বা দুইয়েই) সমকামী ছেলে/মেয়েও ধরে নিতে পারে “সমকামী হলে এইরকমই হতে হয়”। আমি সাধারন জনগণকে এতটা বুদ্ধিমান হিসাবে দেখি না যে তারা জটিল ও বর্তমানে অগৃহীত বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব গভীর চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়। নাকি রূপবান সমকামীদেরও একটা নির্দিষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত যেতে চায়? ম্যাগাজিনটির বিভিন্ন লেখায় সমকামী/প্রেমীদের নতুন করে “রূপবান” নামকরণেরও চেষ্টা করা হয়েছে, দুঃখের বিষয় তা অনেকে হাশি মুখে স্বীকারও করে নিয়েছে। আমি বা আমার মত অনেকে কখনই এটা পছন্দ করবে না যে তাদের রূপবান বলে ডাকা হচ্ছে, তা সেটার যতই নিগুড় অর্থ থাকুক না কেন।
শেষে আমার এটাই চিন্তা যে “রূপবান”-এর অস্তিত্বের বৈধতা এখন আর কতটা আছে? অনাকাঙ্ক্ষিত(!) পাবলিক রিয়াকশনের কারনে তারা তাদের মূল ইচ্ছা থেকে সরে এসে এখন শুধু সমপ্রেমী/সমকামী সমাজে প্রকাশনার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। অপরিকল্পিত ও অবুঝ ক্রিয়াকর্মের কারনে এখন এটার সাথে আর দশটা “গোপন” সামাজিক গেট টুগেদারের কোন পার্থক্য থাকল না। নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের আরও একটা মাধ্যম হিসাবে টিকে থেকে “অর্থ ক্ষয়” ছাড়া আর কি কোন উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে রূপবান? একটা ছদ্ম বা অসম্পূর্ণ নামে লেখা লিখে বা ছবি তুলে একজন আরেকজনের কাছে আত্মপ্রকাশ করা যাবে না, চেহারা প্রদর্শন তো নাহয় বাদই দিলাম। তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতা আর মডিফাইড অবজেক্টিভ নিয়ে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার কারণ কি হতে পারে আমার জানা নাই, যেহেতু ব্যাবসা করা নিঃসন্দেহেই তাদের উদ্দেশ্য নয়। মূল লক্ষ্যই যখন রূপবানের ঠিক নাই তখন বাহবা কিসের উপর ভিত্তি করে দেয়া সম্ভব। হিটলারের মতে (এবং আমারও) তারা বোকামি ও অপরাধ দুইই করে ফেলেছে, নিজেরই ঘরের বিরুদ্ধে।
আমার জীবনে জানা দামী কথাগুলোর মধ্যে অন্যতম সঠিক উক্তিটি হল “Wisdom is everywhere”, আর রূপবানও এর বাতিক্রম না। আইনজীবী সারা হোসেনের সাথে যে সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছে সেখেনে তিনি একপর্যায়ে সমকামী সমাজে সবচেয়ে নিগৃহীত চিন্তাটির কথা না জেনেই (সম্ভবত) উল্লেখ করেন। উক্তিটি হল “যদি সংগঠন করতে চান তাহলে ৩৭৭-এর মতো একটা স্টুপিড ল’কে কেন্দ্র করে না করাই ভালো, যেটা কিনা সমস্যার একটা অংশ মাত্র, কখনোই মূল সমস্যা নয়”। ৩৭৭ ধারাকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য যতই চেষ্টা চালানো হোক না কেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা সম্পূর্ণ পণ্ডশ্রম ছাড়া আর কিছুই হবে (হচ্ছে) না, তা সে শ্রম যতই সিন্সিয়ার হোক না কেন। যে শিশুর হাত নাই তাকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে খুশি করা সম্ভব না। যতই সমমনা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া আর হাসাহাসি করা হোক না কেন তা যদি হয় শুধুমাত্র একজন আরেকজনের সমাজের চাপিয়ে দেয়া দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য, তাহলে কোনরূপ সংগঠনই ফলপ্রসূ হবে না তা সে বন্ধু, পার্টি বা ইন্টেলেকচুয়ালই হোক না কেন। অধিকার ভিক্ষার আশায় সবাই একসাথে হাত পেতে বসে আইনি তন্ত্রমন্ত্র চালানোর চেষ্টা করলে বা “অন্যেরা তো চেষ্টা করছেই আইন পাল্টানোর” চিন্তা করলে কেউই অধিকার দেবে না। অধিকার নেয়ার বিষয়, টেকনিক্যালিটির প্রয়োগে পাওয়ার বিষয় না। না বিদেশী প্ররোচনায় দেশী জনগণ সমকামীতাকে হঠাৎ মেনে নেবে, না দশটা সিঁড়ি এক লাফে পার হয়ে লাইফ স্টাইল পত্রিকার সাহায্যে সে রাস্তা সুগম করা যাবে। শুরুটা হতে হবে নিজেদের দাঁড়ানোর ইচ্ছা হওয়া থেকে। যতদিন না নিজেদের সম্পর্কে বলা বিতিকিচ্ছিরি নোংরা মন্তব্যের বিপরীতে জবাব দেয়ার জন্য সামান্য কীবোর্ডের বোতাম চাপার সাহসটাও না হয়, ততদিন পর্যন্ত অধিকার চাওয়া ও পাওয়ার সকল ইচ্ছা ও ক্রিয়াই ফলহীন সময়ব্যায় ছাড়া আর কিছু হবে না। আর না হবে অধিকার পাওয়ার অধিকার।
খুবই ভালো উদ্যোগ. এই প্রথম বাংলায় সমকামীদের মাগাজিন. আমাদের পশ্চিমবাংলা তো বার করতে পারল না. বাংলাদেশকে ধন্যবাদ.
আহ্সান জামান এবং সমমনা বন্ধুগন,
যৌনতা নিয়ে লেখা বের হলে, কথা বল্লে কিংবা নিজেকে সমকামি (সমপ্রেমি নয়) বলে পরিচয় দিলে problem কোথায়?
@রাজিব, সমস্যা হল দেশ ও জাতি উচ্ছন্নে যাবে। ধর্ম নাশ হবে। আল্লাহ্র গজব নামবে।
মনে হয় এই ধরনেরই কোন উত্তর আশা করছিলেন।
এখন কথা হল, যৌন ক্রিয়া কর্মের বংশদ্ধার করতে আমি কিছু বলি নাই। তাহলে তো নিজে যা করি বা করেছি সেগুলোকে তো স্বপ্ন বলে মনে করতে হবে, এতো বড় মিথ্যা তো নিজের সাথে বলা সম্ভব না! অন্ততপক্ষে আমার জানা নাই সেটা বলা সম্ভব কিনা। এখন কে সমান কাম করল আর কে অসমান কাম করল তা বের করে তাদের সমাজ তাড়িত করার কোন ক্রুসেডে নামার প্রয়াস নাই আমার। ওটা ঐ মানুষটা ছাড়া অন্য কারোর হাতড়ানোর বিষয় না। আপনার প্রশ্নে মনে হচ্ছে আমার লেখাতেই কোন সমস্যা আছে, যেটা কিনা চিন্তার বিষয়ই হবে।
রূপবান সম ও অসমকামী উভয় শ্রেণীর হাতেই পৌছাতে পারে এই জন্য প্রথম সংখ্যাতেই যৌনতার উপস্থাপক এতগুলো অংশ অন্তর্ভুক্ত করা রূপবানের কৌশলগত ভুল হয়েছে, আমার বক্তব্য এটা। কে কার সাথে ব্যাক্তিগতভাবে কি করল এবং সে সম্পর্কে কথা বললে দেশ রসাতলে যাবে, এই উদ্ভট বিষয়ে আমার কোন আগ্রহ নাই। যৌনতা সমকামীদের জীবনের একটা বাস্তবতা এটা উজ্জ্বল ভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে এই বাস্তবতা না ভুলে যাওয়াই ঠিক হবে যে আমাদের সমাজে বিবাহপূর্ব শারীরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য (যদিও সবাই বিবাহপূর্বে কিছু না কিছু করেই থাকেন), আর একই লিঙ্গের দুইজন হলে তো কথাই নাই! সব বাস্তবতা একবারে গ্রহন করা গেলে সারা জীবনে যত খাবার খাওয়া প্রয়োজন তাও একবারেই খেয়ে ফেলা যেত।
শেষে বলছি, কে শুধুই সমকামী হল, কে শুধুই সমপ্রেমী হল আর কে একটার নাম নিয়ে অন্যটা হল… এইরকম ব্যাক্তিগত বিষয়ে কথা বলার কোন ইচ্ছা নাই আমার, যতক্ষণ পর্যন্ত উল্লেখিত ব্যাক্তিটির ঐ সব ক্রিয়াকর্মের প্রভাব আমার উপর না পড়ে।
@আহসান জামান, আপনার উত্তর কি হবে সেটা লেখা পড়েই ক্ষানিক বুঝেছি। কিন্তু তারপরেও এ প্রশ্নের অবতারণা করলাম আমাদের আলোচনা (এবং আপনার রূপবান নিয়ে মূল আপত্তির যায়গা) আরো গভীরে নিয়ে যাবার জন্য।
যৌনতা নিয়ে আপনার অবস্থান জেনে ভালো লাগলো। তাহলে ব্যপারটা আসলে সমকামীতা বা বিসম্কামীতা নয়, খুব সহজ ভাষায় যৌনতা, বা যৌনতার বহিঃপ্রকাশ বা যৌনতার ‘devilization’. আপনি যথার্থই বলেছেন বাংলাদেশের বাস্তবতায় যৌনতাকে ‘উজ্জ্বল ভাবে উপস্থাপন’ করে সমকামিদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন (বা রূপবানের প্রকাশ) বেশি দূর আগাবে না। একজন সমকামি হিসেবে এ আন্দোলণের স্বরূপ কেমন হবে বা কোন কৌশল বেশি কার্যকর হবে তা বলার আপনার শতভাগ অধিকার আছে। সেই অধিকারের সূত্র ধরেই আপনি যদি এ কৌশলগত দিকটা নিয়ে কিছু বলেন তাহলে আলোচনাটা অনেক বেশি বস্তুনিষ্ঠ হবে। 🙂
@রাজিব, একজন সমকামী হিসাবে “রূপবান”-এর অনুসরনীয় কৌশল সম্পর্কে আমার মতামত হল তাদের যৌনাচার বিষয়ক অংশগুলো প্রথম সংখ্যায় দেয়া সম্পূর্ণ অনুচিত হয়েছে। পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে ক্রমান্বয়ে দিলে তাতে সমস্যার কিছু আছে বলে মনে হয় না। একটা ম্যাগাজিন দীর্ঘ সময় চালাতে যে এই ধরণের অংশেরও প্রয়োজন আছে সেটা আমি আগেই বলেছি। এছাড়া অন্য কোন অংশের প্রতি কোন আক্রোশ আমার নাই বা ভুলও মনে করি না। আশা করি আমার অবস্থান বুঝতে পেরেছেন। বা কৌশলীও নীতি নির্ধারণ আমি নিজে হলে কিভাবে করতাম তাও বুঝতে পেরেছেন। যেহেতু অন্য কোন অধিকার আদায় বিষয়ক আন্দোলনের কৌশলগত দিক নিয়ে কথা হচ্ছে না তাই মনে করি না আপনি সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আমার অভিমত জানতে চাচ্ছেন।
@আহসান জামান, ধন্যবাদ চটজলদি উত্তর দেয়ার জন্য। I am sure রূপবান টিম আপনার সাজেশন গুরত্ব সহকারে নিবে। আপনার কথা মতই, যেহেতু অন্য কোন আন্দোলন নিয়ে কথা হচ্ছে না, তাই আর সেদিকে গেলাম না। সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যত্র LGBT movement নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা করার আশা থাকলো।
পৃথিবীতে কখনো কখনো কিছু অভিশপ্ত মানুষের জন্ম হয়। কোন এক অদ্ভুত কারণে এরা ভালো লাগা, ভালবাসা, স্নেহ, মমতা, সুখ-শান্তি নামক পরম প্রশান্তিময় অনুভূতিগুলো থেকে বঞ্চিত থাকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।
কেউ তাদের পক্ষে থাকেনা; অল্প কিছু মানুষ যারা তাদের পক্ষে থাকে তাদের বিপক্ষের লোকেরা পিষে মাড়তে চায়।
পৃথিবী-স্বর্গ উভয়ই সবলের জন্য; দুর্বলের জন্য কেবলই ধিক্কার।
সময়ের পরিবর্তন কাম্য।
শুরুতে লেখক কে উদ্দেশ্য করে বলব, আমাদের জীবনে প্রাপ্তির সংখ্যার চেয়ে অপ্রাপ্তির সংখ্যাটাই বেশি, এই পাওয়া আর না পাওয়ার দুঃখ ভুলে থাকার জন্য মাঝে মাঝে কল্পনার রাজ্যে নিজেদের হারিয়ে ফেলতে হয়তো ভালই লাগে। কিন্তু সেই কল্পনার রাজ্যে দু’নলা বন্দুক দিয়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিকার করা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তব জীবনে শুধু বন্দুকটা হাতে নেয়াও তার চেয়ে অনেক কঠিন। তাই কল্পনার সেই রাজ্যে বিচরণ না করে তার থেকে বেরিয়ে আসাটাই আমাদের সকলের জন্য মঙ্গলজনক। আমি রূপবান কে এই কারণে আন্তরিক অভিনন্দন দিতে চাই, যে সকল পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতা কে উপেক্ষা করে সে তার নিজের অবস্থান কে সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে একটা অনলাইন ফেসবুক গ্রুপ মাত্র এক জন অ্যাডমিন কে দিয়ে চালানো সম্ভব হয় না, সেখানে একটা ৫৬ পৃষ্ঠার ম্যাগাজিন তৈরি, মুদ্রণ এবং বিপণন যে একজন ব্যাক্তি কেন্দ্রিক হতে পারে এই ধরণের ভ্রান্ত ধারণার কারণ আমার বোধগম্য নয়। আবার যেখানে সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণী নিজেদেরকে বিশেষায়িত করার জন্য সমাজের পশ্চাদপদ মানুষ গুলকে বাঁকা চোঁখে দ্যাখে সেখানে এটি আশা করার কোন অবকাশ নেই যে সমাজের সব স্তররের মানুষ নিজের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত, আজ কাল অনেকেই হয়তো পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পায় তার মানে তো আর এই না পরীক্ষায় সবাই জিপিএ ৫ পাবে। আর যারা জিপিএ ৫ পায়না তাঁদের কে এক ঘরে করে দিতে হবে, ঠিক তেমনি ভাবে সকল সমপ্রেমি নিজেদের অবস্থান নিয়ে দৃঢ় এটি ভাবারও আমি কোন কারণ দেখি না। তাই আমার মনে হয় রূপবান সমাজের সেই সকল মানুষকে তার ছায়াতরু তলে নেয়ে আসতে চায় যারা এখনও এই ছায়াতরুর খোঁজ পায়নি।
আমি রূপবানের বিভিন্ন সেগমেন্ট পড়েছি, একজন পাঠক হিসাবে আমার কাছে লেখা গুলো ভাল লেগেছে। বিশেষ করে প্রছদ, জুনের সকালটা, আদর্শ লিপি, আর রাশি রূপ ইত্যাদি লেখা আমার রূপবানের পরবর্তী সংখ্যা গুলো পড়ার আগ্রহ বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। আপর দিকে আমাদের সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ মাইকেল মধুসূদন দত্তের উপর লেখা খ্যাতিমান যারা, সারা হোসেনের আলাপচারিতা আর বিজ্ঞানের সচালায়তন আমার জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়েছে। তাই একজন সচেতন পাঠক হিসেবে আমি রূপবানের পরবর্তী সংখ্যায় এই সংক্রান্ত বিষয়ে আরও লেখা পড়তে চাই, যা কিনা আমার মতো পাঠকের চিন্তার খোরাক যোগায়।
এইবার একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পাঠক হিসাবে নিজের অভিমত দিতে চাই, আজ কাল ইন্টারনেটের এই সময়ে আমি ইন্টারনেটে যেই ধরণের সস্তা ও সুড়সুড়ি দেয়া গল্প দেখি তার চেয়ে কালো গোলাপ লেখাটি আমার কাছে অনেক মার্জিত এবং নিছক হাস্যরসের উপাদান মনে হয়েছে। তাই আমি কালো গোলাপের ময়না তদন্ত না করে বলব যদি কেউ এই কালো গোলাপের রসবোধ বুঁজতে না পারে তার দোষ আমরা কোন ভাবেই রূপবানের উপর দিতে পারিনা। ঢাকার পাঁচ বা রমনা পার্ক বিষয় গুলো আমার কেন আমাদের কারও কাছেই নূতন কিছু নয়, বিষয় গুলো আমরা সবাই কমবেশি জানি তবুও কেন জানি কথা বলতে ইতস্তবোধ করি, আর যা সমাজের মধ্যে আছে তা অস্বীকার করিই বা কিভাবে করি। এইচআইভি/এইডস নিয়ে কথা বললেই যে এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে তা ঠিক নয়, ঠিক তেমনি রমনা নিয়ে কথা বললে আমরা সমাজের চোখে খারাপ হয়ে যাবো তাও নয়। আর আমরা কাদের কথা বলছি, গিয়ে দেখে আসুন তাঁদের মধ্যে কত জনকে ঐখানে পাওয়া যাবে আর আমাদের কয়জন কে পাওয়া যায়। কই আমরা তো তাঁদের নিয়ে কথা বলছিনা তবে কেন তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিবো। আমি মনে করি সমাজে যা বিদ্যমান তাকে অস্বীকার না করে স্বীকার করাটাই বাঞ্ছনীয়। এবং রসিক পাঠক হিসাবে ভবিষ্যৎ সংখ্যায় এই ধরণের লেখা পড়তে আমার মোটেও খারাপ লাগবে না।
আরও একটা কথা না বললেই নয়, আমরা যারা ব্যাংকক বা অন্য কোথাও ঘুরতে যাই, তাঁরা সবাই কিন্তু পুণ্য অর্জনের জন্য যাই না, মাঝে মাঝে নিছক বিনোদনের জন্যও যাওয়া হয়, সুতরাং সেইসব বিনোদনের জায়গার খোঁজ খবর রূপবানে পেতে চাই। লেখক আমি রূপবানের কথাও এমন কিছু পাইনি যাতে আমার মনে হতে পারে, যে যেই মানুষ গুলো সমপ্রেমি তাঁদের জীবনে কাম নামক বিষয়টি নেই আপর দিকে সমকামীদের জীবনে কামই একমাত্র বিষয় তাঁদের মনে কোন প্রেম নেই। আমার মনে হয় জীবনের প্রতিটা অংশে আমরা একে অন্যর সাথে জড়িত তা আমরা যেই নামে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাই না কেন। তাই নিজেদের মধ্যকার বিভেদটা না হয় নাই তৈরি করি।
পরিশেষে বলব, জাতি হিসেবে আমরা অন্যের ভুল ধরতে পারা অথবা অন্যের সমলোচনা করতে পারা টাকে যতটা বেশি গুরুত্ব দেই তার চেয়ে কম গুরুত্ব দিই টাকে সাহায্যের ক্ষেত্রে। কিন্তু আমরা কি একটি বারও তাঁদের জায়গায় নিজেদের দাঁড় করিয়ে দেখেছি? আমরা নিজেরা যেখানে কোন কিছু করছি না, সেখানে অন্য একজনের সমালোচনা অধিকার কি আমরা রাখি? আমাদের উচিৎ রূপবানকে গলাটিপে হত্যা না করে তাঁদের দিকে বন্ধুত্তের হাত বাড়িয়ে দেয়া। কারণ আমরা তো এটি অস্বীকার করতে পারি না তাঁরা আমাদের জন্যই কাজ করছে।
আমি আশা করব রূপবান আরও বিকশিত হোক, সকল নিন্দা আর প্রশংসা সাথে নিয়ে এগিয়ে চলুক এবং আমাদের আরও ভালো কিছু উপহার দিক।
@ফয়সাল আহমেদ মিশা, প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তির পরিমাণ বেশি হলে কেউ কল্পনার জগতে কিভাবে বসবাস করে ঠিক বুঝলাম না। ঐ ব্যাক্তিতা তো “কিছুতেই কিছু পাব না” বলে কান্নাকাটি করতেই ব্যাস্ত থাকবে, বন্দুক হাতে নেয়া তো বহুত পরের ব্যাপার!
আর আমি বলেছি যে একটা সম্পূর্ণ ম্যাগাজিন একটিমাত্র ব্যাক্তি কেন্দ্রিক, এই রকম উদ্ভট দোষারোপ করার আগে তো লেখাটা খেয়াল করে পড়া উচিৎ ছিল, নাকি?
আর ভাই চিন্তা করবেন না! না আমার একার পক্ষে রূপবানকে গলা টিপে মারা সম্ভব, না ঐ উদ্দেশ্য আমার আছে। আমি একা একা চিল্লালাম “রূপবান খারাপ, রূপবান খারাপ” আর কেউ পাত্তাও দিলো না, তাতে রূপবানের কি ক্ষতিটা হয়ে যাবে বলেন? রূপবান চলবে, আমিও চলার চেষ্টা করবো। আর রূপবান যদি সঠিক হয় আর আমি বিপরীতটা, তাহলে একসময় আমার চুপ হয়ে জেতেই হবে। এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
আপনার কমেন্টের অনেক কিছুই ঠিক আমার লেখার সাথে যায় নাই কিন্তু পড়তে কেন যেন ভালো লাগলো।
আহসান জামান, আপনাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আপনার সুদীর্ঘ একপেশে মন্তব্য প্রকাশের জন্য। আপনার লেখার হেডিংটাই যথেষ্ট আপত্তিজনক হবার পরেও আমাদের পুরো ম্যাগাজিন গভীর মনোযোগের সাথে পড়বার জন্য আবারো ধন্যবাদ। আমি আগেই বলে নিচ্ছি, রূপবানের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন হবার পরেও আমি আমার এই সংশ্লিষ্টতার সকল জামা-কাপড় খুলে নিতান্তই আমার নিজের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে উত্তর দিবো, রূপবান থেকে আমি নিশ্চিত আমার চেয়ে শোভন ভাষায় কথা বলবার আরো অনেকেই আছে, প্রাতিষ্ঠানিক লেহাজের দায়িত্ব আপাতত উনাদের উপরেই থাকলো। ব্লগে লিখছেন, ব্লগীয়ভাবেই উত্তর দেই, চলেন পয়েন্টে যাই!
১। উল্লেখ্য, কুরুচিপূর্ণ সকল ধরণের মন্তব্যের বিপরীতে “আত্ম-অধিকার রক্ষামূলক” মন্তব্যের সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিন্তু তারপর? কেমন একটা অপরাধীসুলভ চেহারা ধরে রূপবান এখন চুপচাপ। কেউ যখন কিছু বলতে নারায তখন নিজেরই কিছু বলা উচিৎ বলে মনে হচ্ছে।
এটা সত্য সমকামিতা ব্যাপারটা নিয়ে বাংলাদেশের মূল-ধারার সংবাদপত্র এর আগে একসাথে কখনো এমন কাভারেজ দেয় নাই। ফলাফল অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল, সবাই গালির বাক্স নিয়া ঝাপাই পড়ছে, আপনি তখন কই ছিলেন, কয়টা কমেন্ট করছেন আমার খুব জানার ইচ্ছা। আমি ব্যক্তিগত না হতে চেয়েও হয়ে যাচ্ছি, আপনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, কিন্তু যতটুকু দেখেছি সেটা হচ্ছে একটা অনলাইন গ্রুপে ‘ফেইক আইডি (সবাই তাই বলে, আমার যদিও এই শব্দে আপত্তি আছে)’ খুলে যাবতীয় লেখালেখি চালান। এখন আমি আপনারে প্রশ্ন করি, যে আপনি সমকামী আর বিষমকামী বন্ধুদের আলাদা করবার জন্য দুইটা আলাদা আইডি চালান, যে আপনি আপনার ‘রিয়েল আইডি’তে এক্সপোজ হয়ে যাবার ভয়ে আরেকটা আইডি খুলে সবার সাথে যোগাযোগ করেন, তার তো সামাজিক বাস্তবতার খুব টনটনে বোধ আছে বলেই আমি ধরে নিবো। রূপবান প্রকাশের পর আমাদের ব্যক্তিগত অবস্থান কি হয়েছে ভেবেছেন কোনোদিন একটু সময় করে? রূপবান বের হবার পর আমি আমার ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারি নাই, আমার এবং আমাদের ইনবক্সে থ্রেট ম্যাসেজ দিয়ে ভরে গেছে, মেরে ফেলার হুমকি দিছে, কারণ আপনার মতো আমার একটা চকচকা ‘ফেইক আইডি’ ছিলো না তাই। আপনার নাম ধরে কেউ আপনার ‘ফাঁসি চাই’ বা ‘কুত্তার *** মাইরা মাটিতে গাইড়্যা ফালা’ বলে নিশ্চই কেউ কোনোদিন কমেন্ট করে নাই। অনেক ব্যক্তিগত প্যাঁচাল পারতেছি, থ্রেট খাইছি তাতে আপনার কি, আপনার ডিলিং রূপবানরে নিয়া। রূপবান অপরাধী চেহারা নিয়ে চুপ যায় নাই। ওটা একটা ‘স্ট্রাটেজী’ ছিলো সব ঠান্ডা হবার আগ পর্যন্ত। যাতে আমরা আসলেই না থেমে যাই, যাতে আমাদের প্রকাশনা সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা না করে। আমার ঘাড়ের উপর যে কল্লাটা আছে, সেটা আপনার দান না, আজ বাদে কাল যদি আমার বা আমাদের গ্রুপের কারো কিছু হয়, আপনাদের মতো ফেসবুকে ফেইক আইডি এর বালিতে মুখ গোঁজা উট অনেক পাওয়া গেলেও প্রতিবাদ জানানোর মতো দুইজনকেও পাশে পাবো কিনা সন্দেহ। এখানে দিনে বাইশ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজের জন্য আপনি বা আপনারা আমার পকেটে দুইটা টাকা গুঁজে দেন নাই, কেউ দুই বেলা খাইতেও ডাকেন নাই। এইখানে যারা কাজ করছে, যতটুকুই করছে, ভুল-ভ্রান্তি সব সহই বলতে পারি এটা তাদের কারোরই মূল কাজ না। এটা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম ছিলো। সেই স্বেচ্ছাশ্রমের জন্য লোক পাওয়াও কিন্তু দুষ্কর। এরকম ম্যাগাজিনের সাথে কয়জন নিজের নাম জড়াতে চায়! রূপবানের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের মতো ভার্চুয়াল জগতের বালির বস্তায় যারা মুখ লুকিয়ে রাখে, তাদেরকে এটা বলা যে এবার সময় এসেছে মুখ তোলার, এবার সময় এসেছে ভার্চুয়াল জগতে নয় বরং বাস্তবতায় কথা বলবার। এই ম্যাগাজিন প্রথমে অনলাইনে বের করবার সিদ্ধান্ত নিয়েও যে কারণে নিজের গাঁটের পয়সা আর শ্রমের পরিমাণ দশগুণ করে এটাকে কাগুজে ফর্মে আনা হয়, তার মূল কারণ ছিলো এটা বলা যে আমরা শুধু ভার্চুয়ালি ঘুরে বেড়ানো কিছু ইথার তরঙ্গ না, আমরা বাস্তব এবং বর্তমান। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অসংখ্য থ্রেটের কারণে আমরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ কেবলমাত্র আমাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট দেয়া থেকে বিরত ছিলাম , কিন্তু না আমরা আমাদের পেজ বন্ধ করে দিয়েছি, না আমাদের প্রকাশনা। তবে দিনশেষে আমার মা এর একটা কথা খুব মনে পড়ে আমার, ‘ঘরের খেয়ে বনের মইষ তাড়ায়া কি লাভ!’ আসলেই তো, কি লাভ!
২। কথা হল, ম্যাগাজিনটা সমাজের সর্বোচ্চ (বা সর্বনিম্ন) যে সমপ্রেমি শ্রেণী পর্যন্ত পৌঁছাবে তারা সকলে ইতোমধ্যেই নিজের অস্তিত্ব বিষয়ক বেশিরভাগ প্রচলিত ভুল চিন্তাগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন, সেটা ক্রমাগত সমচিন্তার মানুষের সান্নিধ্যে থেকেই হোক বা নিজ বুদ্ধিতেই হোক না কেন। তাই ধরে নেয়া যেতে পারে নিজেদের কাছে আত্মপ্রকাশের জন্য নয় বরং সমাজের “অচেতন” অংশের কাছে অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্যই রুপবান-এর সূচনা।
ভাই, আয়োডিন খান! আপনার কাছে আমাদের চিন্তাভাবনা ভুল, আমাদের কাছে আপনি এক চোখে দেখেন, তাইলে বলেন প্রচলিত সব ভুল ধারণা কাটায় উঠা মানুষ আসলে কারা! এই ম্যাগাজিনের মূল গ্রাহক সমাজের অচেতন/সচেতন কোনো অংশই নয়। রূপবানের মূল গ্রাহক ছিলো ‘কমিউনিটি’ নিজেই, আমাদের মধ্যে যে সমস্ত ধ্যান-ধারণা, চিন্তা বা কুচিন্তা, তার সবটা এইজন্যেই প্রকাশ করা হয়েছে কারণ আমাদের মাত্র ৬০০ কপির মূল ভোক্তা ছিল আমাদের মধ্যকার লোকজনই। কেবলমাত্র বিদেশী মানবাধিকার কর্মী কিংবা বিশেষ সামাজিক কর্মীদের টার্গেট করে বানানো হলে প্রথমত আমরা হয়তো এটা বাংলাতে করবার চেষ্টাই করতাম না এবং অনলাইনের বাইরেও আনতাম না। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের মধ্যে যারা শিক্ষিত, যারা ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত, তাদের বাইরেও যেন ম্যাগাজিনটা পৌঁছায়। এবং তারাও যেনো পড়তে পারে, বুঝতে পারে। আমাদের ‘কমিউনিটি’র মধ্যে ‘কমিউনিটি’ সেন্স তৈরি করাটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, এখনো তাই আছে। তবে রূপবান যেহেতু যেভবেই হোক আমাদের কমিউনিটি এর বাইরেও অনেকের কাছে প্রকাশ পেয়েছে, তাদেরকেও তাই এর একটা ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে এটা বলে যে, আমরা সমপ্রেমী এবং আমরাও সমাজের অংশ!
৩। তাহলে প্রশ্ন হল, কিছু সময় যাওয়ার পর রূপবান তার মৌলিক উদ্দেশ্য কেন পরিবর্তন করল? তার চেয়ে বড় কথা, একবার নিজেদের (যেহেতু এটা ব্যাক্তিগত জার্নাল নয়, পূর্বে অ-উল্লেখিত সমাজের একটি সম্পূর্ণ অংশের উপস্থাপক) অস্তিত্ব প্রকাশের পর “ঠিক হয় নাই” চিন্তা করে পিছনে সরে যাওয়ার অধিকার কি তাদের আছে?
আপনি যদি গ্যাঁজানোর খাতিরে গ্যাঁজাইতে চান, তাহলে আপনি সারারাত সেটাই করেন, কিন্তু আপনি যদি প্রশ্নের উত্তর শুনতে চান, তাইলে নোট প্যাড নিয়া বসে নোট-ডাউন করেন, আমাদের মৌলিক উদ্দেশ্য কি বলেন তো? উপরে একবার বলছি, যদি মাথায় না ঢুকে আবার বলি, আমাদের নিজেদের কমিউনিটি এর কাছে যাওয়াটাই, বিশেষ করে যারা ঢাকার বাইরে থাকে, তাদের সাথে একটা যোগাযোগ এবং এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো। মিডিয়াতে হাঙ্গামা করে তসলিমা নাসরিন হওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। আমাদের মূল গ্রাহক আমাদের ভিতরকার লোকজন, তবে কেউ যদি এর বাইরেও আমাদের সমর্থন করে (যেমন অভিজিৎ দা) বা আমাদের সমর্থন দেয়, তাদেরকেও সাথে নিবো আমরা। আপনার অতি উর্বর মস্তিষ্কের কাছে আমার প্রশ্ন, আমরা কোথায় বলছি ‘যা করছি ঠিক হয় নাই’ এবং কখন পিছনে সরে গেছি? ঠিক হয় নাই মনে হলে তো এতোদিনে আপনার মতো কয়েকটা আইডি খুলে অনলাইন ক্রুজিং করে বেড়াতাম, যাবতীয় থ্রেটের পরেও দ্বিতীয় সংখ্যার কাজ শুরু করতাম না, নাকি? আপনি আগে আপনার গোলমালটা সারেন, মূল উদ্দেশ্যটা কি সেটা নিয়ে নিজের অলীক কল্পনা না করে দয়া করে আমাদের সাথে কথা বলুন!
৪। আর কিছু অংশ আছে যেগুলো দেখলে আর পড়লে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতে হয়, কারন এদের প্রকাশনার উদ্দেশ্য কি কোনভাবেই বুঝে ওঠা যায় না। এর কোনটায় বলা হয়েছে ব্যাক্তিগত অপ্রচতিল যৌন চাহিদার (সোজা কথায় বললে “ফেটিশ”) কথা আবার কোনটায় বলা হয়েছে সমপ্রেমিরা ঢাকার কোন কোন জায়গায় গিয়ে আলো আর অন্ধকারের সান্নিধ্যে “সমকামী”-তে পরিবর্তিত হয়।সোজা কথায়, মোটামুটি বিনা খরচে সস্তা যৌন চাহিদা মিটাতে সহজে পার্টনার কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে তার বিবরণ।
লেখার কন্টেন্ট নিয়া কথা বলছেন, খুব ভালো, আমি খুব মন দিয়ে আপনার কথা পড়ে ‘ট্র্যাশ’ করে দিতে বাধ্য হলাম। দুঃখিত! যথেষ্ট যুক্তি নির্ভত না হওয়ায় বাতিলের খাতায় ফেলতে বাধ্য হলাম। কন্টেন্টের ব্যাপারে বাকীদের অবগতির জন্য আমার নিচের কথাগুলো। গতবার যেহেতু প্রথম সংখ্যা ছিলো, কন্টেন্ট তৈরির পর আমরা কমপক্ষে পাঁচবার মিটিং করেছি কেবল কন্টেন্টের সেন্সিটিভিটি চিন্তা করে। এক পক্ষের মতামত ছিল সম্পূর্ণ বাস্তবতায় যেহেতু আমাদের মধ্যে যৌনতার প্রাধান্য বেশি, সেহেতু সেই বাস্তবতাকেই তুলে ধরা হোক। এখন আমাদের মধ্যে যৌনতার প্রাবাল্য কতটা সেটা অভজিত দা আন্দাজ করতে না পারলেও বাকীরা নিশ্চয়ই জানেন। অন্য পক্ষের (যার মধ্যে আমিও ছিলাম) যুক্তি ছিলো, যেহেতু ভালোবাসা শব্দটার গ্রাহক অনেক বৃহত্তর, সমকামী বা বিষমকামী যেকোনো মানুষের কাছে যেহেতু এই শব্দের কম-বেশি আবেদন আছে, তাই আমরা ভালোবাসাকেই ‘হাইলাইট’ করবো সেটা একটু বাড়িয়ে-চাড়িয়ে হলেও। সব আলোচনার পর দ্বিতীয় পক্ষই জয়যুক্ত হয়, ঠিক হয় রূপবান মূলত দুজন মানুষের মধ্যে প্রেমের সপক্ষে কথা বলবে। কিন্তু তার মানে কি? আমাদের মধ্যে যৌন-ক্ষুধার যে বিপুল তরঙ্গ আছে সেটাকে উপেক্ষা করে? ঠিক হয় ৭০-৩০% মতবাদ। ম্যাগাজিনের ৭০% অংশ জুড়েই আমরা যেখানে পারবো প্রেমের কথা বলবো (যেকারণে সমকামী শব্দটি নিতান্তই না ব্যবহার করলে নয় এমন জায়গা বাদে সব জাগাতেই সমপ্রেমী শব্দটি ব্যবহার হয়েছে)। এরপরেও যে ৩০ শতাংশ অংশে ‘সমকামের’ কথা বর্ণিত আছে, সেখানেও চেষ্টা করা হয়েছে আমাদের ‘হেটেরোনরমিটিভ’ সমাজের ‘কাম-শুদ্ধতা’কে ব্যঙ্গ করবার! আমরা বলতে চেয়েছি দুজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত সম্মতিতে যদি রমণে লিপ্ত হয় তবে সেখানে তৃতীয় ব্যক্তির নাক গলানোর কিছু নেই। বাংলাদেশে কিছু পুরুষ রমনা পার্কে অন্য পুরুষের সন্ধানে যায়, নানারকম যৌন কর্মকান্ডেও জড়ায়, এই বাস্তবতা জানে না এমন কেউ আমাদের মধ্যে আছে বলে মনে হয় না। যেহেতু আমাদের মূল গ্রাহক আমারা নিজেই, আমরা রমনা পার্কের লেখার মাধ্যমে কেবল সেই বাস্তবতাকেই তুলে ধরতে চেয়েছি। ভাই, আপনি কি ফরেনার? না! আপনি যেহেতু আমাদের কমিউনিটির একজন, আপনি বলেন আমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে রমনা পার্ক নিয়ে জানে না? যাক আর না যাক, কে জানে না? যে জায়গা সম্পর্কে সবাই জানে, সেই জায়গায় বিনা খরচে চাহিদা মেটানোর জন্য যাবার জন্য অনুপ্রাণিত করা কিভাবে সম্ভব? প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওখানে লোকের জমায়েত রূপবানে এটা নিয়ে লেখার আগেও হয়েছে, আজও হয়, যাদের যাওয়ার ইচ্ছা তারা এই লেখা পড়লেও যাবে, না পড়লেও যাবে। আর সেটাও মূল বিষয় না, আমাদের লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল আপনার মতো লোকদের জন্যেই, যারা মনে করে রমনা পার্ক ‘সোডম নগরী!’ পাপাচারপূর্ণ বেশ্যাখানেকে যেভাবে বিষমকামীরা অস্বীকার করে। আমাদের লেখার উদ্দেশ্য ছিলো রমনা পার্কের আঁধার কমানো, ওখানে যেসমস্ত ঝূঁকিপূর্ণ যৌনাচারণ হয়, সেগুলোকে আরো স্বাস্থ্যসম্মত করা। আমরা যৌন চাহিদাকে গালি দেইনি, গালি দিয়েছি সেই যৌনতাকে তাড়া করে ফেরা পাপ বোধকে, বলতে চেয়েছি মেডিক্যাল ঝূঁকির কথা। আর সেটাও মূল ম্যাগাজিনের মাত্র ৩০ শতাংশ অংশে। আপনার যদি মনে হয় এটাও ঠিক না, আমরা ম্যাগাজিনে কেবল বাংলায় সূরা লিখবো, সেটা আপনি আমাদের বলতে পারতেন, আমরা সেটাও বিবেচনা করতাম। বা আমরা তো আসলে কোনো জাইগির নিয়ে রাখি নাই, আমাদের এটাতে কাজ করবার কোনো বাধ্য বাধকতাও নেই, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে করা। আপনার এতো আপত্তি থাকলে আপনি নিজেই একটা বের করে ফেলেন না কেন? যেখানে পাতায় পাতায় প্রেমের গল্প থাকবে, গল্পের শেষে লেখকের কোনো ফেইক নাম!
৫। পরিশেষে যদিও এই চাহিদার Masoquismo/Masochism শীর্ষক একটা গম্ভীর নাম দেয়া হয়েছে কিন্তু তাতে ভালবাসার কোন মান রক্ষা হয় নাই। এই লেখাটা পড়ে বাইরের জগতের একজন ব্যাক্তির এই ধারনা হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক যে “সমপ্রেমি”-রা আসলে “সমকামী” হতেই বেশি আগ্রহী, ভালবাসার প্রতি আকর্ষণ তাদের কাছে খুবই ক্ষীণ
মূলত কারোর ব্যক্তিগত জীবনের হুবুহু বর্ণনা এই গল্প না। একজন ডাক্তারের পি এইচ ডি থিসিস পেপারের রেফারেন্সে ফিকশন লেখা হয়েছে। সেটা মূল কথা না, মূলটা হচ্ছে এটা আমাদের নীতিগতভাবে এই ম্যাগাজিনের সর্বোচ্চ ‘এডাল্ট’ লেখা ছিলো। এই বিভাগের লেখায় আমরা কিছুটা উদার হবো (সেই উদারতা যৌনতার বৈচিত্র্যের প্রতিও), সেটা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিলো। সেক্ষেত্রে এলেবেলে না গিয়ে কিছুটা মেডিক্যাল রেফারেন্স এই জন্য নেয়া হয়েছে যে ‘ম্যাসোকিজম’র মতো অপ্রচলিত ব্যাপারও আমাদের মধ্যে আছে। এই বিভাগের নামই ছিলো ‘কালো গোলাপ’ যেখানে বিভিন্নরকম বৈচিত্র্যতাকে স্থান দেওয়া হবে বলে ঠিক ছিলো। পুরো ম্যাগাজিনের সতেরোটা মৌলিক কন্টেন্ট, চারটা বাদে যার সবগুলোতেই প্রেম নিয়ে কথা বলা হয়েছে, সেখান থেকে কোনো ‘বাইরের জগতের মানুষ’ যদি এই লেখাটাকেই বেছে নিয়ে মতামত বানাতে চায়, তাহলে আমার কিছু বলবার নেই। তবে অনলাইনে বা ফেসবুকে সমকামীদের নিয়ে যতো গ্রুপ বা ব্লগ আছে(আপনি নিজেও তার অনেকগুলোরই সদস্য আশা করি), তার যেকোনোটায় গেলে যেরকম রগরগে চটি গল্প পাওয়া যায়, সেগুলো পড়তে আপনার কেমন লাগে জানতে ইচ্ছা করছে? একটা ‘সাইকো-সেক্সুয়াল টার্মিনোলজি’ ব্যাখ্যা করতে ফিকশনের সাহায্য নেয়া নিয়েই আপনার এতো আপত্তি!
৬। এখানে বেশ সংক্ষেপে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে কোথায় গেলে কিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে নুন্যতম সময় খরচে ফলাফল পাওয়া যায়, অন্য ভাবে বলা যায় কিভাবে বাসনা পূরণ করা যায়। লেখাটি না পড়ে (শুধু এখানে এই সম্পর্কে পড়ে) আসলে অনেকের কাছেই মনে হতে পারে হয়ত আর কোন উপায় না দেখে সমলিঙ্গের প্রতি সামাজিক ভাবে অবৈধ আকর্ষণ মিটানোর শেষ আশ্রয় হিসাবে প্রকাশ করার জন্যই ঢাকার এই পাঁচটি স্থানের উল্লেখ করা হয়েছে।
এটাও সেই ৩০ শতাংশের আরেকটি লেখা যেখানে কোনোভাবেই, কোনো অবস্থাতেই এসব জায়গায় গিয়ে বাসনা পূরণের কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে কেবলমাত্র সেই বাস্তবতার কথা, যেটা আমাদের মধ্যে অন্তত কমবেশি সকলের জানা। ‘আরমানিটোলায় একটা বেশ্যাপাড়া আছে’ বলার মানে না বেশাবৃত্তিকে খাটো করে দেখানো, না কাউকে সেখানে যেতে অমুপ্রাণিত করা। এটা কেবল বাস্তবতাকে বাস্তবতা হিসেবে দেখানো। এখন খুনের সংবাদ পড়ে যদি আপনার প্রথমেই খুন করতে ইচ্ছা হয় তবে আমার কি করবার! এভাবে আসলে প্রত্যেকটা পয়েন্ট নিয়েই জবাব দেয়া যায়, টায়ার্ড লাগতেছে আপাতত!
৭।নিঃসন্দেহেই প্রথম সংখ্যার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল ঐ বিষয়গুলোকে ফলাও করা যেগুলো আমাদের সমাজে সাধারনভাবে “ভালো” হিসাবে স্বীকৃত এবং সমকামী সমাজেও যেগুলো উপস্থিত (যেমন ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করতে চাওয়ার আগ্রহ)। উচিৎ ছিল “ভালো” বিষয়গুলোকে তেল মেখে চকচকে করে আরও ভালো হিসাবে উপস্থাপন করা। করা হয়েছে ঠিক তার বিপরীতটা।
এই উক্তিতে এসে আপনার মূল মনোভাব আসলে স্পষ্ট হয়। ধরে নিলাম আপনার কথা একশতভাগ ঠিক, চারটা ফিচারে যৌনতার কথা স্বীকার করে রূপবান সমকামী সমাজের ধ্বংস ডেকে এনেছে, তাইলে বাকি ১২ টা ফিচারের কি দোষ? ১২ টা ফিচারে ভালোটা বলেও আমরা উলটা করছি? সমালোচনা করবেন, মোস্ট ওয়েলকাম, দিল খুলে করেন, কিন্তু মিথ্যাচারের মানে কি?
৮।আর জনগণকে বাস্তবতার সাথে পরিচিত করার আগে ফেরেশ্তার সাথেই পরিচিত করা উচিৎ, বাস্তবতা যদি ঐ সময়ে অগ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। সোজা কথায়, ভালটাকে অতিরিক্ত ভালো হিসাবে প্রচার করা, তার যদি ৫০% বানানোও হয়ে থাকে।
সমকামীদের ৫০% ভালো করে ফেরেশ্তা হিসেবে দেখাতে চাইলে সেটা আপনি নিজেই করতে পারেন, আমরা বাহাবাই দেবো। আমরা আপাতত মানুষ হিসেবে কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পাই!
৯। শেষে আমার এটাই চিন্তা যে “রূপবান”-এর অস্তিত্বের বৈধতা এখন আর কতটা আছে? অনাকাঙ্ক্ষিত(!) পাবলিক রিয়াকশনের কারনে তারা তাদের মূল ইচ্ছা থেকে সরে এসে এখন শুধু সমপ্রেমী/সমকামী সমাজে প্রকাশনার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। অপরিকল্পিত ও অবুঝ ক্রিয়াকর্মের কারনে এখন এটার সাথে আর দশটা “গোপন” সামাজিক গেট টুগেদারের কোন পার্থক্য থাকল না। নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যে ভাব আদানপ্রদানের আরও একটা মাধ্যম হিসাবে টিকে থেকে “অর্থ ক্ষয়” ছাড়া আর কি কোন উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে রূপবান? একটা ছদ্ম বা অসম্পূর্ণ নামে লেখা লিখে বা ছবি তুলে একজন আরেকজনের কাছে আত্মপ্রকাশ করা যাবে না, চেহারা প্রদর্শন তো নাহয় বাদই দিলাম।
বিষেদগারের চূড়ান্ত! একেবারে নিঁখাদ বিষেদগার! আমাদের মূল ইচ্ছা তো ভাই আমাদের চেয়ে আপনিই বেশি জানেন! আমরা কি রাস্তায় মাইকিং করে ফেরি করতেছি, নাকি সব পেপার স্ট্যান্ডে ম্যাগাজিন পাওয়া যাচ্ছে? রূপবানের আদি এবং মূল গ্রাহক সর্বদাই সমপ্রেমী সমাজ ছিলো এবং সেটাই থাকবে। সেই সাথে সমাজের মূল অংশের কাছেও গ্রহণযোগ্যতার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে তাদের গ্রহণযোয়তার ভিক্ষা পাবার জন্য নিজের জীবন থেকে যৌনতাকে কেটে ফেলে তাদের শিখিয়ে দেয়া যৌন শুদ্ধাচারবোধে রূপবান আগ্রহী নয়। আর শেষের দুইটা লাইন পড়ে হাসিই পাচ্ছে। আপনি নিজে একটা ‘ফেইক আইডি’ খুলে একটা ফেসবুক ‘ক্লোজড গ্রুপে’ লুকায়ে আছেন। আপনার এই চারিত্রিক দ্বৈততা কিন্তু সবকিছুতে বিষমকামীদের গ্রহণযোগ্যতা খোঁজার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ফুটে উঠে।
সবশেষে সবার উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো, রূপবান কেবল আলাভজনক সেটাই নয়, নিজের গরজে, নিজের খরচে বের করা এই ম্যাগাজিনের মূল স্বপ্ন একটাই, সেটা হচ্ছে কিছু পরিবর্তন আনা, আমাদের প্রেমের কথা, প্রেমেতে আমাদের অধিকারের কথা বলা। এই ম্যাগাজিন দিয়ে কোনোরকম লাভের আশা যেমন আমরা করি না, তেমনি হুট করে আগামীকালই সবাই এই ম্যাগাজিনের জন্য আমাদের মেনে নিবে, সেটাও আমাদের কল্পনায় নেই। আমরা ‘কমিউনিটির’ ভিতরে ‘কমিউনিটি’ সেন্স যদি তৈরি করতে না পারি, কাল আমাদের মতো নয় এমন একজন আমাদের কথা কিভাবে সহ্য করবে? আমরা শুরুতে নিজেদের কাছে যাবো, ধীরে ধীরে বাদবাকী সবাই হয়তো আসবে।
প্রথম সংখ্যা হিসেবে, আমাদের লোকবলের অপ্রতুলতা হিসেবে, বিষয়ভিত্তিক সংবেদনশীলতা হিসেবে আমাদের অসংখ্য ত্রুটি রয়েছে। অসংখ্য ভুল রয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বের হওয়া এই ম্যাগাজিনের সেই ত্রুটির দায়ভার আপনি নিজেও কি এড়াতে পারেন? আপনার যদি পুরো ব্যাপারে এতোটাই সংবেদনশীলতা থাকতো, তাহলে কমিউনিটির একজন হয়ে হলেও হয়তো আমাদের এই ম্যাগাজিনে কাজের জন্য যে প্রাণনাশের হুমকি আসছে, সেটার একবার বিরোধিতা করতেন, ম্যাগাজিনের অগণ্য ভুলের সাথে একটা ভালোর কথাও বলতেন, মুক্ত-মনা’তে এসে ‘রূপবান আত্মহত্যা’ জাতীয় লেখা লেখবার আগে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের ভুলের কথা বলতেন। আমরা যেখানে সবার অংশগ্রহণের জন্য মুখিয়ে আছি, যেখানে আমরা সবার জন্য মতামত একেবারে উন্মুক্ত করে দিয়েছি, সেখানে কিছু না বলে আপনি ঠাস কর এখানে এসে লিখলেন যে আর ম্যাগাজিন বের হবার দরকার নাই! একবারো আমাদের সাথে যোগাযোগ করে কিভাবে আরো ভালো কিছু করা যায় বলার বদলে এখানে বুগি-চুগি যা মনে আসছে লিখে বলে দিলেন রূপবান মরছে! আমি ম্যাগাজিনের তরফ থেকে বলতে পারি যে আপনার মতামত অনেক গুরুত্বের সাথে অনেকেই দেখছে, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, আপানার মতো আয়োডিনহীন এসব মতামত গোণায় আনার আমার টাইম নাই!
We have a long way to go!
@আহমেদ, দারুন লাগলো আপনার উত্তটা পড়ে 🙂
@আহমেদ, ভাই আপনারই তো অপেক্ষায় ছিলাম! “রূপবান”-এর একমাত্র বিগ গান, সম্পাদক সাহেব। আপনার কমেন্টটা আসলে এতো বড় যে শেষে এসে শুরুটা ভুলে যেতে হয়েছে, আয়োডিন কম কিনা! কমেন্ট না করে আর্টিকেল হিসাবে প্রকাশ করতে পারতেন, আমারটা হলে আপনারটা তো বাধ্যতামূলকভাবে প্রকাশিত হত। আয়োডিনহীন এসব মতামত গোণায় আনার আমার টাইম না থাকার পরেও যে পরিমাণ টাইম দিলেন, গোণায় ধরলে না জানি কি করতেন!
আসলে আমার ফেক আইডি নিয়ে আপনি যেভাবে পরেছেন তারপর আমার পক্ষে কি বলা সম্ভব বুঝতেছি না। আমার দুইটা আইডি আছে ফেসবুকে এটা আমি জানি, কিন্তু তার মধ্যে যে একটা ফেক তা জানতাম না। বারবার বলে জানিয়ে দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ, যদিও কথার তোড়ে রানীর কালো ছেলে শেষে এসে ঝাঁকে ঝাঁকে কাকে পরিণত হয় তাও শিশুকালে জেনেছি।
তবে আপনার মন্তব্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুই পেলাম না, সম্পাদক সাহেব কিভাবে কথা বলেন সে সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা ছিল। কিছুদিন আগে তার ছোট্ট একটা উপস্থাপনাও দেখেছিলাম। আমার “ফেক” আইডি দিয়ে একটা “ক্লোসড গ্রুপে” পোস্ট দিয়েছিলাম আর সেখানে আপনার “মেইন” ও একমাত্র আইডি দিয়ে কমেন্টও করেছিলেন, আশা করি মনে আছে। মজার ব্যাপার হল পোস্টটা ছিল মানুষের রূপবানের প্রতি অনাগ্রহ নিয়ে, রূপবানের ফিডব্যাক সংগ্রহের অনাগ্রহ নিয়ে না। কিন্তু আপনি সব নিজের গায়ে নিয়ে ফিডব্যাক জোগাড়ের জন্য মাইক ভাড়া করে মাঠে নামা আপনার দায়িত্ব না বলে চলে এলেন। গায়ে পড়ে দোষ নিলে আমার কি করার আছে ভাই? আপনি আপনার মেইন ও একমাত্র আইডি নিয়ে ওখানে গিয়েছেন সেটা আপনার পরিবর্তিত নামে কালিমা লাগিয়ে দিয়ে পারতো, যেখানে কিনা আমার মতো ফেক আর বস্তায় মুখ গুজে থাকা (সম্ভবত এটাই বলেছেন?) ভণ্ডদের আড্ডাখানা!
আর আপনার অবস্থানটা খুবই কন্ট্রাডিকটোরি, কেউ ফিডব্যাক দেয় না বলেও মেজাজ খিচড়ে রাখবেন আবার কেউ দিলে তার অতীত ও ভবিষ্যৎ চৌদ্দ গুষ্টি (সর্বমোট আটাশ গুষ্টি) উদ্ধার করে দিবেন। আপনি যে পরিমাণ ব্যাক্তিগত আক্রমন করতে পারেন ভাই, এই কথা জানলে কোন বাপের ব্যাটার সাহস আছে আপনার আর আপনি যে কাজের অন্তর্ভুক্ত সে সম্পর্কে কিছু বলে? নাকি খালি মধু মিশানো “জম্পেশ হয়েচে দাদা” টাইপের কথা শুনতেই আগ্রহী। হতাশ হওয়া ছাড়া অন্য কিছু হবেন না সে ক্ষেত্রে।
আরেকটা কথা, বার বার ব্যাক্তিগত খরচ ব্যাক্তিগত খরচ (নাকি নিজের বললেন, ঠিক খেয়াল নাই) বলছেন কেন? প্রকাশনার জন্য তো ফান্ড রেইজিং-এর ব্যাবস্থাও করা হয়েছিল, সেটা তো উল্লেখ করা উচিৎ। নাকি তাদের অবদানের দাম দিতে অনাগ্রহী? নিশ্চয়ই না!
পরিশেষে বলব কষ্ট করে করেছেন বলেই ভালো ছাড়া অন্য কিছু শুনতে রাজি নন এমন চিন্তা বাদ দেন। মধু আর মরিচ দুইটাই পাবেন। দুইটাই গ্রহন না করতে পারলে অন্যকে পক্ষপাত দুষ্ট বলতে যাবেন না।
পরি-পরিশেষে বলি, একমাত্র বিগ গান হওয়ার সমস্যা হল ওভার হিটেড হয়ে গেলে গুলি ছোড়ার আর কিছু থাকে না। দল ভারি করুণ, একা আর কতক্ষন চালাতে পারবেন আমার মতো “বিশেষ-ভাবে-অজ্ঞ” পাব্লিকদের সাথে?
পি এসঃ ম্যাগাজিনে আপনার লেখাটা কিন্তু আমার খুবই পছন্দ হয়েছে, শেষ পর্যায়ে গিয়ে অনেকটা আবেগআপ্লুতও হয়ে গিয়েছিলাম (নো মিথ্যা ইনক্লুডেড)।
@আহমেদ দাদা, আইফনে দেহি মাজে মাজে আগো দেশি কোঁতা কওনের চেষ্টা হরেন বালাইতো! আফনেরে কি কেউ কইসে যে আফনের অ্যাংগার ম্যানেজমেন্টের পুব্লেম আসে? মাইনশে যে আফনারে মারবার চায় এইলেজ্ঞাই মনে অয় আর আফনে বাবতাসেন রুব্বান বাইর করবার লইজ্ঞা। হাগুল মাইনশে রুব্বানের শুম্পাদক অয় আর আমি বইয়া তাহি ধুরু!!! :-Y
রুব্বানের বিগ :guli: দাদা আফনে নিজের ফুঁরা নাম দেন নাই কেলা? লন :thanks: পাতা খান মাতা টাণ্ডা অইব।
আমি বড় আশা করেছিলাম এই ম্যাগাজিনটা নিয়ে, আমি ভেবেছিলাম যে সংখ্যাটা হাতে পেয়ে সবার আগে আমি পরব এবং তারপর আমার বড় বোন যার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক কিন্তু এখনো আমার sexuality সম্পর্কে তাকে বলা হয়নি তাকে ম্যাগাজিনটা পরতে দিবো, যাতে আমার তার কাছে বের হোয় আসতে সহজ হয়, আমি ভেবেছিলাম আমার থেকে ডিসেন্ট ভাবে ও সুন্দর ভাবে এই ম্যাগাজিনটা তাকে সমকামিতা সম্পর্কে বুঝাতে পারবে। কিন্তু আমাকে হতাশ হতে হোয়ছে এমন কিছু “মসলাময়” অধ্যায়র জন্য যেগুলো পড়ে আমি বিস্মিত হোয়ছি আর বড় বোনকে তো পড়তে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যাই হোক “ধন্যবাদ রূপবান”
@শহীদ রেজা, রূপবান বইটি তো আপনার বোনের জন্য বের করা হয়নি। আপনার জন্য বের করা হয়েছে।
@রিয়াজ ওসমানী, তার জন্য বের করা হলে তো নিজে ক্রয় করার পর এর যেকোনো রূপ ব্যাবহার করার অধিকার তার আছে, নাকি? সেক্ষেত্রে যদি সে চায় রূপবানের সাহায্যে নিজের সম্পর্কে বোনকে অবহিত করবে, সেটা তো খুব অস্বাভাবিক চাওয়া হবে না। এখন যদি অন্য আরেক সমকামী ব্যাক্তি বলেন যে “এই সব জিনিসের জন্য ম্যাগাজিনটা পড়তে ইচ্ছা হয় না” (বলতে শুনেছি তাই বলছি, যদিও উক্তিটি সম্পূর্ণ বৈধ তাও না) তাহলে কি তার জন্যও এটা প্রকাশিত হয় নাই? আমার মনে হয় না সমকামীদের জন্য প্রকাশিত তাই শুধুই সমকামীরা এটা ধরতে পারবে এমন মনে করা উচিৎ হবে, রূপবান নিজেও এটা মনে করে বলে মনে হয় না।
@শহীদ রেজা,
আপনি নিজে কিনেছেন, অনেকে তাও করতে রাজি হয়নি; আবার দু’একজন তার ভাই-বোন বা বন্ধুকে পড়তে দিয়েছে। সবাইকে খুশি করতে পারলে আমাদেরও ভালো লাগত; তা এক ম্যাগাজিনে তা সম্ভব না, তবুও চেষ্টা থাকবে।
ভাষাটা একটু কঠিন ছিল জামান ভাই। আরেকটু সহজ হলে ভালো হতো। মানুষ যেমন সবাই আলাদা তেমন সমকামিরাও সবাই আলাদা কেউ ভদ্র কেউ অভদ্র কেউ লাজুক আবার কেউ ডানপিটে। রুপবান সবাইকে এক পাল্লায় মাপতে চেয়ছে সেটা কিন্তু ঠিক নয়, আমরা সবাই এক চিন্তার মানুষ নই মোটেও। সেখানে সবাইকে রুপবান বলা হয়ছে আমি কোনও রুপবান নই আমি একজন মানুষ যে আরেকজন একি লিঙ্গের মানুষকে ভালোবাসি তাই বলে আমাকে রুপবান ডাকার অধিকার দেয়নি কেউ আপনাদের।
আপনার লেখা পড়ে মনে হল যে বাংলাদেশী সমকামিদের উচিৎ বিষমকামিদের মত একটা নির্দিষ্ট ভাবে জীবন যাপন করা যাতে তথাকথিত সমাজ আরেকটু সহজে সমকামিদের মেনে নেয়। আর তাই রূপবানের প্রথম সংখ্যায় লেখা কিছু কিছু বিষয় আপনার ভাল লাগেনি। কিন্তু এখানে বলা উচিৎ যে সমকামিরা অনেকেই বিষমকামিদের রক্ষনশীলতা মেনে নেবে না সেটাই সাভাবিক। সমকামিদের জীবনগুলোকে বিষমকামিদের জীবনধারার ছকে ফেলার প্রয়াস হবে ব্যর্থ। রূপবান বাংলাদেশে সমকামিদের জীবন এখন যেমন ঠিক সেই ভাবেই লিখেছে অন্য সমকামিদের উদ্দেশ্য করে। সমাজের কাছ থেকে দয়া ভিক্ষা করবার জন্য নয়।
@রিয়াজ ওসমানী, সমকামী বা বিসমকামী টাইটেল মাত্র, কে কোন লিঙ্গের প্রতি আগ্রহী তা দিয়ে মানুষ ভালো খারাপ ঠিক করতে গেলে বোকামি হবে। পার্থক্য একটাই তা হল বর্তমানে একটা সামাজিক ভাবে স্বীকৃত আর আরেকটা অস্বীকৃত। আকর্ষণীয় লিঙ্গের উপর নির্ভর করে ঠিক হবে কে শুধুই পার্টি করবে, কে বাসায় বসে দুনিয়া উদ্ধার করবে বা কে দেশের জনগণের জন্য জীবন উৎসর্গ করবে, এই রকম উদ্ভট চিন্তা না করাই উচিৎ। সমকামী বলে নিজেকে বিসমকামীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং উন্নত মনে করার সাথে হোমোফোবিয়ার কোন পার্থক্য নাই। অপ্রচলিত মানেই বিপ্লবী না, বা তার বিপরীতটা।
@আহসান জামান, আমি তো কোথাও বলিনি যে সমকামী বলে বিসমকামিদের কাছ থেকে নিজেকে উন্নত মনে করব?
@রিয়াজ ওসমানী, “সমকামিরা অনেকেই বিষমকামিদের রক্ষনশীলতা মেনে নেবে না”, মানে কি? বিসমকামীরা রক্ষণশীল আর সমকামীরা তার বিপরীতটা? অবান্তর রক্ষণশীলতা তো ভালো কিছু না, তার মানে তো তার বিপরীতটা ভালো। আবার বলছেন “সমকামিদের জীবনগুলোকে বিষমকামিদের জীবনধারার ছকে ফেলার প্রয়াস হবে ব্যর্থ”, লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের জন্য কি জীবন যাপনের পদ্ধতিও উল্টাপাল্টা হয় নাকি? দুই দল এতো যদি “বিসম” হয় তাহলে “সম”-অধিকার চাওয়া বা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হবে।
যে কোন কিছুর গঠনমূলক সমালোচনা ভালো। আহসান ভাই একেবারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন। রূপবানের উদ্যোক্তাদের মতই বাংলাদেশে সমপ্রেমী হবার যে কি জ্বালা আহসান ভাই তা ভালোই বুঝতে পারেন বলেই মনে হয়েছে। চতুর্মাসিক একটি পত্রিকার দুটি সংখ্যার মাঝে একটু চুপচাপ থাকাটা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়নি। আর আমরা সবাই জানি ও বুঝি যে রাতারাতি অবস্থার উন্নতি হবে না। হয়ত একই কারনে রূপবান ধীরে চলো নীতি নিয়ে এগুচ্ছে। যত যাই হোক না কেন ম্যাগাজিন বের করার কারণে কাউকে যেন বিপদ্গ্রস্ত হতে না হয় সেটা তো আমরা সবাই চাই। রূপবানের ফেসবুক পাতাটি কিন্তু অনেক প্রানবন্ত ছিল।সেটাও আপাতত একটু চুপচাপ, যা একেবারেই অনভিপ্রেত নয় আমার কাছে। যাই হোক আমার দৃড় বিশ্বাস রূপবানের পরবর্তী সংখ্যা সময়মত পাঠকদের কাছে আসবে এবং প্রথম সংখ্যার অভিজ্ঞতার আলোকে সম্পাদক মন্ডলি লেখায়, উপস্থাপনে আরো অভিজ্ঞ ও উপভোগ্য লেখা উপহার দেবেন। আহসান ভাই, রূপবানের পরবর্তী সংখ্যায় আপনার অংশগ্রহন অর্থাৎ লেখা দেখতে চাই। আশাকরি আপনি আমাদের আর্জি বিবেচনায় রাখবেন।
অনেকের কাছে আপনার লেখা অর্থহীন মনে হচ্ছে, কিন্তু ভাই আপনার লেখা আমার ভাল লেগেছে!
রূপবান authority ভাল করার থেকে খারাপ টাই করেছে বেশি।
আপনাকে ধন্যবাদ রূপবানের ভুল গুলো তুলে ধরার জন্য, আমি চাইছিলাম খুব শিগ্রই এমন কিছু লেখা হোক।
আমি আপনার সাথে একমত। আমি বলতে চাই যে Homosexuality এবং হিজড়া সম্প্রদায় সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়, রূপবানে তাঁদের আলাদাই রাখা বাঞ্ছনীয় ছিল, তাঁদের ছবি কিংবা খবর ছাপা থেকে বিরত থাকা উচিৎ ছিল। একজন Homosexual person কে কোনভাবেই “রূপবান” নামকরণ করার চেষ্টা করা উচিৎ হয়নি। প্রথম Bangladesh Homosexual community এর কণ্ঠ হিসেবে এই magazine এর নাম রূপবান হওয়াটা খুবই আপত্তিকর। Homosexuality স্পর্শকাতর একটি বিষয় বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সেখানে প্রথম Bangladesh Homosexual community এর কণ্ঠ হিসেবে এই magazine এর আরও দায়িত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল “ঢাকার পাঁচ” এবং “আমার ছেলে বেলা”র মতো article ছাপা উচিৎ হয়নি। আরও অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু আমি আমার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত রাখতে চাই।
রূপবান নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিষয়বস্তু নিয়ে সমালোচনা একপেশে লেগেছে। উল্লেখিত লেখাগুলো ছাড়াও আরো অনেক রকম লেখা ছাপা হয়েছে যা প্রেম, সম্পর্ক, সাহিত্য, জীবনাচার, আইন, স্বাস্থ্যবিষয়ক। সেসব নিয়ে মতামত জানা গেলনা। বিষয়বস্তু নির্বাচনে ম্যাগাজিনের গ্রহনযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও বিপনন ছাড়াও বাংলাদেশী রূপবানদের ফেরেস্তা নয় বরং মানুষ হিসাবে উপস্থাপনের বিষয়টি গন্য করা হয়েছে। প্রেম, সম্পর্ক, স্বাস্থ্য বা ফ্যাশনের মত “ফেটিশ”, রমনা পার্ক, পুল-পার্টি, এই সবই তাদের (বা তাদের অনেকের) বাস্তবতা;যা অস্বীকার করা মিথ্যাচারের শামিল।
জানামতে, রূপবানের পরবর্তী সংখ্যার কাজ চলছে; সুতরাং তারা “এখন চুপচাপ” বা “অস্তিত্ব প্রকাশের পর “ঠিক হয় নাই” চিন্তা করে পিছনে সরে যাওয়ার” মত কিছু হয় নাই। তবে প্রকাশকদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে, তাই অনেক ভুল-ত্রুটি রয়ে গেছে যা অবশ্য পরিত্যয্য।
আত্মহত্যা নয় সামনে ভালো করবে রূপবান এই আশা করি।
@জুলহাজ মান্নান, রূপবানের পরবর্তী সংখ্যার কাজ চলছে তা মোটামুটি সাবাই জেনে গিয়েছে ইতোমধ্যে, যেহেতু আগ্রহী লেখকদের লেখা প্রদানের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। রূপবানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য, সমকামী বিশমকামী উভয় শ্রেণীকে সংযুক্ত করা, থেকে সরে আসাটাই রূপবানের মৃত্যু। ভবিষ্যতে যে এর প্রকাশিত সংখ্যার হিসাব রাখা দুষ্কর হয়ে যাবে সে বিষয়ে আমি অ-আশাবাদি নই।
প্রকাশিত সংখ্যায় যে সুন্দর সুন্দর লেখালিখিও ছাপা হয়েছে তা আমি নিজেই উল্লেখ করেছি, হয়ত আপনার মিস হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। সমস্যা হল, ৫৪ পাতার ম্যাগাজিনে ১০ পাতার “খারাপ” জিনিস ছাপা হয়েছে যেটা সমকামীতা (বা সমপর্যায়ের যে কোন স্পর্শকাতর বিষয়) নির্ভর পত্রিকার প্রথম সংখ্যার জন্য অনুচিত। লেখাটির মূল উদ্দেশ্য সেটাই ছিল তাই প্রতিটা লেখার উপর আলোকপাত প্রয়োজনীয় মনে হয় নাই। আর জনগণকে বাস্তবতার সাথে পরিচিত করার আগে ফেরেশ্তার সাথেই পরিচিত করা উচিৎ, বাস্তবতা যদি ঐ সময়ে অগ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে। সোজা কথায়, ভালটাকে অতিরিক্ত ভালো হিসাবে প্রচার করা, তার যদি ৫০% বানানোও হয়ে থাকে। একবারে এতো বাস্তবতা খুব একটা গ্রহণযোগ্য হওয়া স্বাভাবিক না।
@আহসান জামান,
মিস হয়নি…তবে,”বৃষ্টি, চিঠি আর কম বয়সের ভালবাসার কথা সম্বলিত “হার্ট ওয়ার্মিং” লেখাও আছে।”, এইটুকুতে কি আর মন ভরে বলুন; যখন ‘খারাপ’এর সমালোচনায় ছিলনা কার্পন্য।
এক ম্যাগাজিন বা তার এক সংখ্যা দিয়ে কোনো উদ্দেশ্যই যেমন অর্জিত হবেনা, তেমনি নেমে আসবেনা কোনো বড় দূর্যোগ। আশা রাখি পরবর্তী সংখ্যায় আপনিও লিখবেন এবং রূপবানের এই আশংকিত মৃত্যু ঠেকাবেন।
@জুলহাজ মান্নান, এটা অস্বীকার করার কোনই অবকাশ নাই যে “সুশীল” বিষয়গুলো নিয়ে আমি একেবারেই সীমিত লিখেছি, কিন্তু আমি বেশ কয়েকবার বলেছি যে ঐ বিষয়গুলোর উপর কড়া ভাবে আলোকপাত করাই আমার উদ্দেশ্য ছিল যেগুলো আমার কাছে স্ট্রাটেজিক্যালি অতিরিক্ত মারাত্মকভাবে অনুচিত মনে হয়েছে। ভালো কথা বলার তো মানুষের অভাব নাই, আর তাদের ভালবাসার মানুষেরও অভাব নাই। আমার কাছে যেগুলো বিষয় খারাপ লেগেছে আমি চেয়েছি সে বিষয়েই কথা বলতে, কারণ সেগুলো আমার কাছে প্রচণ্ড ভুল ও অনুচিত মনে হয়েছে।
আর আরেকটা ব্যাপার, রূপবানকে গলা টিপে হত্যা করার কোনই আগ্রহ আমার নাই (সম্পাদক যতই এটাকে আমার ব্যাক্তিগত আক্রশ হিসাবে দেখাতে চান না কেন)। আসলে সেটা তো সম্ভবও না। একটা নীতির অনুসারী যদি শুধুই একজন হয় তাহলে তার পক্ষে তো বিরাট কিছু করে ফেলা প্রায় অসম্ভব, নাকি? রূপবান ভালো করলে শুধু তার প্রশংসা করতে আমি যেমন পিছপা হবো না, তেমনি খারাপ করলেও কিছু না বলে চুপ করে বসেও থাকবো না (ভালো খারাপের মাঝখানে কিছু করলে কি করবো বলতে পারতেছি না)। আপনাদের পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় আছি, এটা সম্পূর্ণ সত্যি কথা।
খুব খারাপ লাগব বিসটা! 🙁
ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে ‘রূপবান’ পত্রিকাটি সম্পর্কে এই সুচিন্তিত অভিমত সহকারে লেখা প্রবন্ধটি মুক্তমনায় প্রেরণের জন্য। বোঝা যাচ্ছে আপনি ম্যাগাজিনটি খুব খুঁটিয়ে পড়েছেন। এটাই কাঙ্ক্ষিত। আমি ‘রূপবান’ হাতে পাইনি, কাজেই ম্যাগাজিনটির মান সম্পর্কে আমি একেবারেই আঁধারে। তবে সমকামীদের অধিকার নিয়ে উচ্চকিত হয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির কিছু মানুষ তাদের একটি পত্রিকা বের করেছিলেন সেটাতে আমি আশান্বিত হয়েছিলাম। ‘হিডেন মাইনোরিটি’র খোলস ভেঙে তারা সামনে এগিয়ে এসেছেন সেটাই বড় ব্যাপার দেশের জন্য।
তবে আপনি রূপবানের আত্মহত্যার যে বিষয়টি বলছেন সেটা ঠিক কিনা জানি না। ম্যাগাজিনটির সাথে সংযুক্ত দু এক জনের সাথে পত্রিকাটি প্রকাশের পরে আমার ইমেইলে যোগাযোগ হয়েছিল। আমার মনে হয়নি যে রূপবানের আশু মৃত্যু হবে। তারা বলেছিলেন পরের সংখ্যার জন্য তারা কাজ করেছেন। সেটা সত্য হয়ে থাকলে ‘আত্মহত্যা’ বা মৃত্যুর যে ইঙ্গিত আপনি করেছেন সেটা হয়তো সত্য নয়। আমি মনে করি রূপবান বের হবার সময় মাত্রাতিরিক্ত চ্যাঁচামেচি হয়েছে। গালিগালাজও কম হয়নি। কাজেই হয়তো তারা ‘লো লেভেলে’ আছেন। তবে আমি নিশ্চিত নই।
রূপবানের ব্যাপারে আমার সহমর্মিতা থাকলেও আপনার অভিযোগগুলো সত্য হলে আমি আপনার মতোই হতাশ হব। রূপবান নামটি আমারও খুব একটা পছন্দ হয়নি। আর সমকামীদের রূপবান ডাকাটা আরো হাস্যকর হবে। আর আমি মোটেই চাইনা সমকামিতার মত স্পর্শকাতর বিষয়ে যারা ম্যাগাজিন বের করছেন তারা সমকামীদের অধিকারের কথা না বলে চটুল বিষয়ে মনোনিবেশ করবেন। বিশেষ করে ফেটিশ, টয় কিংবা ঢাকার পাঁচ টাইপ প্রবন্ধ না প্রকাশ করাই ভাল হবে। এ পত্রিকাটি ডেটিং সংক্রান্ত পত্রিকা না হওয়াই কাঙ্ক্ষিত। বরং আলোচনা যতদূর সম্ভব একাডেমিক এবং মানবাধিকারের সাথে সংযুক্ত থাকা উচিৎ। হয়তো পত্রিকাটির সাথে যারা যুক্ত আছেন তারা পরের সংখ্যাটির ব্যাপারে যত্নবান হবেন। পত্রিকাটির ব্যাপারে আপনার অভিমতের পর তাদের বক্তব্য শুনতেও আমি আগ্রহী। জানিনা সেটা এখানে হবে কিনা।
আপনি যে বিষয়টি নিয়ে চমৎকার আলোচনার সূত্রপাত করেছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মুক্তমনায় স্বাগতম। ভবিষ্যতে আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
@অভিজিৎ, লেখাটি প্রকাশের জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ, আর আপনার মন্তব্যের জন্যও।
কিন্তু একটা বিষয় মনে হয় আমার পরিষ্কার করে বলা উচিৎ ছিল, মৃত্যু বলতে আমি কি বুঝাচ্ছি। আমি জানি যে তারা প্রকাশনার ইতি টানছেন না। মৃত্যু বলতে আমি তাদের পরিবর্তিত অবস্থার কথা বুঝাতে চেয়েছি। ঐ ইচ্ছার পরিবর্তন যা পূরণের উদ্দেশ্যে তারা যাত্রা শুরু করেন।