রাতারাতি পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। যশোরের অভয়নগরের চাঁপাতলা গ্রামের মালোপাড়া, আজ আর সেই মালোপাড়া নেই। যে রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাই ছিল দায়, সেই প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা শুরু হলো পাকা করার কাজ। এরই মধ্যে এক-তৃতীংশ কাজ শেষ, বাকিটা ধীরে ধীরে হবে। যেখানে মেলেনি আজ পর্যন্ত বিদ্যুতের ছোঁয়া, আজ সেখানে গাড়া হলো বৈদ্যুতিক খুঁটি। টানা হলো প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের কাজ, জ্বলে উঠলো বাতি। যে টিনের বা মাটির ঘরে চলেছিল সেদিন তাণ্ডব লীলা, আজ সেখানে বিজিবির তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে ২০ ফুট বাই ২০ ফুট আধা-পাকা ঘর। পাঁচটির কাজ সমাপ্ত, নির্মাণাধীন আছে আরো ৬০টি ঘরের কাজ। তিন লাখ টাকা করে ধরা হয়েছে প্রতিটির ব্যয়। সেই সাথে নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় আছেএকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। নিরাপত্তার জন্য মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে দু-দুটি পুলিশ ক্যাম্প। সেখানে মোতায়েন সার্বক্ষণিক আছে ৭৫ জন পুলিশ।
যে মানুষদের কখনও সেখানকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি, সেখানেই প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তো বটেই, এমপি-মন্ত্রীরা পর্যন্ত দিনরাত এসে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেন। সবকিছু যেন আলাদিনের গল্পের মতো হয়ে গেল। চেরাগের ইচ্ছাপূরণ-দৈত্য এসে পাল্টে দিলো সব। তা তো হতেই হবে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলে কথা। সে তো আর চাট্টিখানি বিষয় নয়! অতঃপর প্রধানমন্ত্রী আসলেন, অর্থ ও আশ্বাস দিলেন।
ধ্বংসস্তূপের সামনে সঞ্চিতা বর্মণের কোলে তার সাড়ে চার বছরের কন্যা বিপাশার কান্নার ছবিটির কথা হয়ত অনেকেরই মনে আছে। সেটি প্রকাশ করেছিল জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকা। প্রথম পাতায় এমন একটি ছবি দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল সেদিন। হামলার পরদিন দুপুর পর্যন্ত একমুঠো ভাত মেয়ের মুখে তুলে দিতে পারেননি মা। তাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদছিল শিশুটি, কাঁদছিল মা সঞ্চিতাও। সেই মা ও মেয়ের ছবি ছাপা হয় ওই একই দৈনিকে আবার। এবারো প্রথম পাতায়। তবে এবার কিন্তু কান্নারত নয়; বরং এক আনন্দমাখা ছবি ছিল সেটি। ছবিতে দেখা যায়, সঞ্চিত তার ঘর নির্মাণের জন্য স্তূপীকৃত ইট পাশে রাখা ড্রামের পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করছেন। কোলে বসে খেলছে তার মেয়ে বিপাশা।
এই যে এত উৎসব, এতো আয়োজন, সব ক্ষত কী তবে ম্লান হয়ে গেল? এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। স্থানীয় দুলাল বিশ্বাসের মেয়ে অনিতা বিশ্বাস যখন এটিকে মূল্যায়ন করেন- দাম দিয়ে কেনা হয়েছে এ উন্নয়ন-তখন নীরব ক্ষতের কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়।
খুলনা বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এ ছাত্রী বর্ণনা করেন সেদিনের ঘটনা, ৫ জানুয়ারি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই দফা হামলা চলে মালোপাড়ায়। সারাটি দিন কাটে তাদের অবর্ণনীয় ভয়ের মধ্যে। অবশেষে আশঙ্কা বাড়তে থাকলে এক পর্যায়ে পাশের ভৈরব নদ পার হয়ে অপর পার দেয়াপাড়া গ্রামের পালপাড়ার পূজামণ্ডপে আশ্রয় নিতে হয় তাদের।
কোনো উন্নয়ন কী মুছিয়ে দিতে মনিরামপুরের ঋষিপাড়ার সেই দুই গৃহবধূর ক্ষত কিংবা সেই বিভীষিকাময় রাতের স্মৃতিটুকু?পরিবারে পুরুষদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণধর্ষণ করার কথা শুনেছিলাম একাত্তরের ইতিহাসে। আজও তাই শুনতে হলো। আর পত্রিকায় পড়তে হলো,ঘটনার পর গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত দুটি পাড়া- ঋষিপাড়া ও নমশূদ্রপাড়ার অবিবাহিত তরুণী মেয়ে ও অল্পবয়সী গৃহবধূদের সম্ভ্রম বাঁচাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্য এলাকার আত্মীয়-পরিজনদের কাছে।
দিনাজপুরের কর্ণাই গ্রামের পাঁচটি পাড়া- তাঁতিপাড়া, ঋষিপাড়া, প্রীতমপাড়া, তেলিপাড়া আর মুরগিপাড়া। কেবল ভোট দেওয়ার অপরাধে সেদিন ভাঙচুর, লুট, আগুন দেওয়া হয় সেখানকার হিন্দুধর্মাবম্বীদের বাড়িঘর। ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় তাদের দোকানপাট। গ্রামের ১৫৩টি পরিবারের কোনো না কোনো ক্ষতি হয়েছে। পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে ১৫টি দোকান। বিকেল ৩টার দিকে দেশি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে বাড়ি-দোকান ভাঙচুরের পাশাপাশি চলে লুটপাট। রেহায় পায়নি ৭০ বছরের বৃদ্ধা সুমী রায়ও। কানে তার এক রত্তি স্বর্ণের দুল ছিল। কানের লতি ছিড়ে সেটা কেড়ে নেওয়া হয়। যাওয়ার আগে কোমর থেতলে দেওয়া হয় ইট দিয়ে। হামলার পর পরই স্থানীয় আলতা রানী রায়ের কিশোরী মেয়ে জয়ন্তী রায়কে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ২২ কিলোমিটার দূর এক আত্মীয়বাড়িতে। কনকনে শীতের মধ্যে গ্রামের প্রায় সকল হিন্দু যে যেভাবে পেরেছে পালিয়ে বেঁচেছে।
আক্রমণটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত- কেননা ভোটের আগেই ওইসব এলাকায় গিয়ে একাধিকবার হুমকি দেওয়া হয়- ভোট দিতে গেলে খুন করা হবে তাদের। শাসানো হয়, “হিন্দু, মালাউনরা ভারতে যাও। এখানে থাকতে পারবে না”। হামলা শুরু হওয়ার পর কার কার হাতে ভোটের কালি আছে তা দেখে দেখে নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বারবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। মুরগিপাড়া ও তেলিপাড়ায় আক্রমণের তিন ঘণ্টা পর সেখানে বিজিবি সদস্যরা হাজির হলেও গাড়ি থেকে নামেনি তারা। সাহায্যে এগিয়ে আসেনি মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, পুলিশ কিংবা সেনাবাহিনী। তবে আজ সেখানে বসানো হয়েছে পুলিশি-প্রহরা। তবুও বৃদ্ধা কইচু বালা রায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন- ‘কেমনে বাইচপ্যু?’অথবা রাজগোপাল রায় বিলাপ করে উঠেন- ‘পুলিশ চলি যাবার পরে হামরার কী হবে’, ‘আইত হইলে ভয় করে’, ‘হামাক তো ঘেরাও করি ধরি ফেলাইছে’, ‘হামরা কেমন করি বাইচপো?’পোলিং এজেন্ট প্রতিমা রায় পালিয়ে ছিলেন, কিন্তু হামলাকারীরা তাঁকে বাড়িতে গিয়ে খুঁজেছে। তাঁর ভয়, ‘আমি তো এখন চিহ্নিত হয়ে গেলাম। আমি কীভাবে বাঁচব? ’হাহাকার করছিলেন অন্যরাও- “আমরা সাহায্য চাই না, নিরাপত্তা চাই।”
দিনাজপুরে আক্রমণের শিকার হয় মূলত নির্বিবাদী ও দরিদ্র রাজবংশী হিন্দু জনগোষ্ঠী। বাড়িঘর ভাঙচুর করে, দোকান লুটপাট ও ভেঙে ফেলার মাধ্যমে তাদের বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির যথাযথ তালিকা প্রস্তুত করে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে হয়তো এই বস্তুগত ক্ষতি পোষানো সম্ভব; কিন্তু অপূরণীয় ক্ষতি যা হয়েছে তা হলো, তাদের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। এই আস্থার সংকট প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা ফিরবে না। অনেকেই দেশ ছাড়ার ব্যাপারে ভাবছেন। তাঁরা বারবার বলেছেন, ‘ইলিপ চাই না, নিরাপত্তা চাই।’ রবীন্দ্রনাথের মতো করে বলতে হয়- “দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।”
ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া ও আকচা গ্রামের দৃশ্যও একই। আকচা গ্রামের ১৬ হাজার ভোটারের মধ্যে ১৪ হাজারই হিন্দু। অপরাধ সেখানেই। ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্য আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে রয়েছে এ হামলার অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা বলেন, ঘটনার দিন এই খালেকের নেতৃত্বে চলে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট। ‘হিন্দু শালাক জবা করিম’হুঙ্কার দিয়ে আক্রমণ চালায় খালেক মেম্বার। নিরাপদ আশ্রয় পেতে গ্রামের পুরুষেরা পালিয়ে যায় আর নারীদের নিয়ে যাওয়া হয় পাশের গ্রামের ইসকন মন্দিরে। সকালে দলবেঁধে ভারতের সীমানা পেরিয়ে দেশত্যাগ করার প্রস্তুতিও নেয় অনেকে।
হামলা চালানো হয় সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, রংপুর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, নেত্রকোণার বাদে-দুধকোড়া গ্রাম, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, বগুড়ার নন্দীগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ভাঙা হয় মন্দিরের প্রতিমা, লুট করা হয় প্রতিমার গায়ের অলংকার ও দানবাক্স। হামলা চলছে আজও। নির্বাচনের এত দিন পরেও এ হামলা অব্যাহত আছে। হামলার পেছনে বারবার ঘুর ফিরে আসছে নির্বাচন প্রতিহতকারী বিএনপি-জামায়াতের নাম। এমনকি কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সম্পৃক্ততাও। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সরকার গঠন হওয়ার পরেও কীভাবে এমন হামলা চলতে পারে তা জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বারবার কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়ার কথা ঘোষণা দিচ্ছেন। কঠোর হয়েছে প্রশাসন। রদবদল করা হয়েছে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনী। গ্রেপ্তার হয়েছে অসংখ্য। তবে মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে- সেই খবরও প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তাও আস্থা ফিরে আসছে না, কাটছে না শঙ্কা। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এ হামলার দায় চাপাতে চাচ্ছেন সরকারের ওপর। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায় দাবি করেছেন- “নির্বাচনে হিন্দুরা ভোট দিতে যায়নি বলে তাদের ওপর হামলা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।”
এদিকে লোক দেখানোই হোক বা দায় এড়ানো এবং চাপানোর উদ্দেশ্যেই হোক বিএনপি নিজ উদ্যোগে দেশে নির্বাচনোত্তর সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সাধারণত সরকারের তরফ থেকে ‘তদন্ত কমিটি’গঠন করা হয় ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। আর অভিযুক্ত বা প্রতিপক্ষরা যদি নিজেরাই ‘তদন্ত কমিটি’ গড়ে তুলেন তাতে নিঃসন্দেহে দায়মুক্তি এবং দায় চাপানোর কৌশল থাকে। এসব পুরানো নোংরা রাজনীতির হাত থেকে মুক্তি চাই। হিন্দুদের কেবল ভোট হিসেবে দেখার মনোবৃত্তি থেকে রেহাই চাই।
‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ সংগঠনের মতো বলে চাই- অবিলম্বে আক্রান্ত জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞাতনামা শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়, বরং সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধীদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এসব অপরাধীর বিচার নিষ্পত্তি করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক ভিত্তি ভেঙে ফেলতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে। পুলিশি প্রহরায় জীবন নয়, জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্যাতিত ব্যক্তিদের মধ্যে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি পূরণের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেটেলারদের বিষয়টি মীমাংসা করতে হবে। স্থানীয় জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বোধ তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে; বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।
সবশেষে বলতে চাই, এ সাম্প্রদায়িক হামলার পর বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুদের মনে যে অবিশ্বাসের জন্ম নিয়েছে তা কি আর্থিক সহায়তা, ঘরবাড়ি গড়া, রাস্তাঘাট পাকাকরণ কিংবা বিদ্যুৎ-সুবিধা দিয়ে মুছে ফেলা সম্ভব? অভয়নগরের কলেজছাত্রী প্রিয়া সরকারের কথা দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই- “নিয়ে যান আপনাদের সব উন্নয়ন, ফিরিয়ে দেন আমাদের ৫ জানুয়ারির আগের দিনগুলো। কলেজ থেকে ফিরতে কোনো দিন দেরি হলে পাশের গ্রামের কোনো চাচাদের পেলে স্বস্তি পেতাম। মনে হতো, এই তো একজন মুরব্বি পেয়ে গেলাম। এখন কি আর আগের মতো করে ফিরতে পারবো আমি?”
আসল কথা এখানেই। বারবার প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বলেই তারা আবার একই কাজ করার সাহস পায়।
সাম্প্রদায়িকতা রুখতে অন্তত দু’ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। প্রথমত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বোঝাতে হবে যে তাদের এই অনাচার রোধে রাষ্ট্র “জিরো টলারেন্স” নীতি গ্রহন করবে। কেউ অমুসলিমদের প্রাণহানী, নির্যাতন, মূর্তি ভাঙ্গা, সম্পত্তি দখল কিংবা ধবংস করার মতো অপরাধ করলে তা অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। দ্বিতীয় কার্যক্রম হবে দীর্ঘ মেয়াদী যাতে সার্বিকভাবে নতুন প্রজন্ম সহনশীল হয়ে গড়ে ওঠে। এজন্য আমাদের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও এর সুফল তুলে ধরে এমন সব গল্প, প্রবন্ধ বা সত্য ঘটনার অন্তর্ভুক্তি খুবই প্রয়োজন, যাতে করে অল্প বয়সেই শিক্ষার্থীরা বুঝতে শেখে যে অমুসলিমরাও আমাদের দেশ ও সমাজের সমান অংশীদার। জনপ্রিয় মিডিয়াগুলোও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে নজর রাখতে হবে কিভাবে দেশে ধর্মীয় উগ্রতা কমানো যায়। ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ-সহ মাদ্রাসা শিক্ষা-ব্যবস্থার বিলোপ বা নিদেনপক্ষে যুগোপযোগীকরণ এখন সময়ের দাবী।
@মনজুর মুরশেদ, সাম্প্রদায়িক হামলা রুখতে এবং সকল ধৰ্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসৰ্ম্পক গড়ে তুলতে আপনার দেখানো দুইটি কাৰ্যক্রম চালু করা এখন খুবই জরুরী।
টিভি, রেডিও, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সাম্প্রাদায়িক হামলার উষ্কানিমূলক সংবাদ প্রচার বন্ধ করতে হবে। যেমন ধরেন বাংলাদেশে নিৰ্বাচন পরবৰ্তী যে সহিংসতা হয়েছে ভারতের কিছু অনলাইন সংবাদপত্র দেখলাম সেগুলো সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে। অন্য দিকে বাংলাদেশের কিছু অনলাইন সংবাদপত্র আছে যেগুলো ঐ ধরনের উষ্কানিমূলক সংবাদ প্রচারের জন্য মুখিয়ে থাকে। আমার মতে যেহেতু বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক হামলার আশংকামুক্ত নয় তাই ঐধরনের খবর প্রচার বন্ধ করতে হবে।
@মনজুর মুরশেদ, আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমিও মনে করি যেকোনো ঘটনা, বিশেষত সংবেদনশীল বিষয়ের ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা আরও বেশি পেশাদারিত্বের দাবি রাখে। তবে পাশাপাশি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কথাও সত্য- “অন্ধ হলে কী প্রলয় বন্ধ থাকে?”
চাঁপাতলা গ্রামের মালোদের ক্ষত তো শুকাবেই না, বরং এ ক্ষত অন্যান্য এলাকার সংখ্যালঘুদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে— ছড়াবে।
@গীতা দাস, দিদি, আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার কথার সপক্ষেই বলতে চাই, শরীরের ক্ষত হয়ত একদিন শুকিয়ে যাবে খয়ারি দাগ রেখে। কিন্তু মনের ক্ষত শোকানোর মলম কোথায় পাবে মানুষ?
পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক কিংবা আন্তঃসাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা হামলা দেখতে চাই না আর…