কথায় আছে যে, কুকুরের লেজ নাকি কোনদিন সোজা হয় না। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হেরে, এবং দশম জাতীয় সংসদ বর্জন করার পরে বি এন পি এখন খুব বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় নেই বলেই মনে হয়। কিন্তু ভুল থেকে যে তারা শিক্ষা নিতে রাজী নয় তার প্রমান আবার বি এন পি দিয়ে দিল।

বি এন পি আবারো প্রমান করল যে এরা কোনদিন শোধরাবে না। না হলে বি এন পির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এমনটা কেন বলবেন যে জামায়াত আছে এবং থাকবে

কিছুদিন আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন যে জামায়াতের সাথে জোট কোন স্থায়ী জোট নয়। অথচ এখন বি এন পির পক্ষ থেকে আসল আরেক ধরনের কথা। সাঈদি রাজাকারের ফাঁসীর রায়ের সময় থেকেই বি এন পির রহস্যময় নিরবতা তথা পরোক্ষ ভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানোটা দেশের সচেতন মানুষদের মধ্যে বি এন পির অবস্থান নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল, এবার প্রত্যক্ষ ভাবে এই কথা বি এন পির পক্ষ থেকে বলে আসলে বি এন পি প্রত্যক্ষ ভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিল।

এইবার উদার গনতন্ত্র মনাদেরকে একটা বিনীত প্রশ্ন করতে চাই যে, যদি বাংলাদেশের অনেক মানুষ রা মনে করে যে, যুদ্ধাপরাধী তথা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করতে হলে আমরা যেকোন বিকল্প গ্রহন করতে রাজী আছি, সেক্ষেত্রে তাদেরকে কতটা দোষ দেয়া যায়? যদি নির্বাচন মানেই হয় শুধু আওয়ামী লীগ আর বি এন পি, তবে এটাও কতখানি গনতন্ত্র মনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ থেকেই যায়। যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী তে আওয়ামী লীগ আর বি এন পি অংশ নিত, কিন্তু অন্য কোন দল, যেমন জাতীয় পার্টি অংশ না নিত, তবু কি এটা নিয়ে এত সমালচনা হত? মনে হয় না, কারন যেহেতু আওয়ামী লীগ আর বি এন পি ছাড়া আমরা মনে প্রানে আসলেই আর ৩য় বিকল্প চাই বলে মনে হয় না, যদিও মুখে ৩য় বিকল্প বলে ফেনা তুলে ফেলি।

আর তাছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন কে কি আসলেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের সাথে পুরোপুরি মিলিয়ে ফেলা যায়? যেখানে ১৯৯৬ সালে মুলধারার কোন রাজনৈতিক দল, এমনকি তাদের বর্তমান সবচেয়ে বড় মিত্র জামাত পর্যন্ত অংশ নেয় নি, অথচ ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এ জাতীয় পার্টি অংশ নিয়েছে।

কিভাবে কি কৌশল করে জাতীইয় পার্টি কে নির্বাচনে আনানো গেছে, সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল জাতীয় পার্টি ভোটে অংশ নিয়েছে, এবং এখন তারা প্রধান বিরোধী দল হিসাবে সংসদে আছে। জাতীয় পার্টি কে একেবারে তুচ্ছ চাচ্ছিল্য না করলেও চলতে পারে, কারন একক বা জোটবদ্ধ প্রত্যেক নির্বাচনেই জাতীয় পার্টি বেশ ভালই আসন পেয়েছে; হয়ত সেটি লীগ বা বি এন পির ধারে কাছে নয়, কারন যেহেতু জাতীয় পার্টি এখনও শক্তিশালী ৩য় পক্ষ হিসাবে আবির্ভুত হতে পারেনি। কিন্তু এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, একদিনেই কেউ বড় হয় না।
তবে যদি ২ দল তত্বেই আমরা বিশ্বাস করি, সেখানে আর বিশেষ কিছু বলার থাকে না। তবে একটি দল অংশ না নিলেও যদি অগনতান্ত্রিক হয়, তবে কেন বি এন পি আর জাতীয় পার্টি কে সমান ট্রিটমেন্ট দেয়া হবে না?
আর এরশাদের স্বৈরাচার নিয়ে যারা খুবই খড়গহস্ত, তাঁদের সবিনয়ে জানিয়ে দিতে চাই যে, বি এন পির জন্মও কিন্তু একই উপায়ে হয়েছে।

সেখানে বি এন পি বেশি ভোট পায়, এইসব যুক্তি খুব বেশি খাটে না এই জন্যেই যে, জার্মানীতে নাৎসি পার্টিও জনতার সমর্থনেই ক্ষমতায় এসেছিল। পরের ইতিহাস আমাদের কারোরই অজানা নয়।

যাহোক নিচে পুর্ববর্তী প্রতিটি নির্বাচনে ৩য় শক্তি হিসাবে জাতীয় পার্টির ভোট এবং আসন প্রাপ্তি

১৯৯১ সালের নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ফলাফলঃ লিঙ্ক

বি এন পি ৩০.৮ % ভোট, এবং ১৪০ আসন
আওয়ামী লীগ ৩০.১ শতাংশ ভোট এবং ৮৮ আসন
জাতীয় পার্টি ১১.৯ % ভোট এবং ৩৫ টি আসন ,
জামায়াতে ইসলামী ১২.১% ভোট এবং ১৮ টি আসন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন সমস্ত বিরোধী দল বয়কট করেছিল বি এন পির বর্তমান রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত ইসলামী সহ।বি এন পি ভোট প্রাপ্তির হার ১০০ শতাংশ, এবং ৩০০ আসন। লিঙ্ক

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ফলাফলঃ লিঙ্ক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩৭.৪ % ভোট এবং ১৪৬ আসন
বি এন পি ৩৩ .৬ % ভোট এবং ১১৬ আসন
জাতীয় পার্টি ১৬.৪% ভোট এবং ৩২ আসন
জামায়াতের ইসলামী ৮.৬ % ভোট এবং ৩ আসন

২০০১ সালের নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ফলাফলঃ- লিঙ্ক
চারদলীয় জোটঃ ( প্রধান দুই মিত্রের ফলাফল)

বি এন পি ৪১.৪০ % ভোট এবং ১৯৩ আসন
জামায়াত ইসলামী ৪.২৮ % ভোট এবং ১৭ আসন

বাকিদের ফলাফলঃ
আওয়ামী লীগ ৪০.০২ % ভোট এবং ৬২ আসন
জাতীয় পার্টি( এরশাদ) ৭.২২ % ভোট এবং ১৪ আসন

২০০৮ সালের নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ফলাফলঃ-লিঙ্ক
মহাজোট ( প্রধান দুই মিত্রের ফলাফল)ঃ

আওয়ামী লীগ ৪৯.০% ভোট এবং ২৩০ আসন
জাতীয় পার্টি ৭% ভোট এবং ২৭ আসন

চারদলীয় জোটঃ ( প্রধান দুই মিত্রের ফলাফল)
বি এন পি ৩৩.২ % ভোট এবং ৩০ আসন
জামায়াত ইসলামী ৪.৬ % ভোট এবং ২ আসন

২০১৪ সালের ভোটের ২০০৮ সালের প্রধান বিরোধী দল বি এন পি নির্বাচন বয়কট করে।লিঙ্ক

এখানে দেখা যায় যে বি এন পি আর জামায়াতের ভোটের চেয়েও প্রতিবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ , জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের( ইসলামিক গুলো বাদে) মোট ভোট বরাবরি বি এন পির ও তার মিত্রদের মোট ভোটের চেয়ে বেশি থেকেছে। সেখানে কি দেশের সিংহভাগ জনতাও এমনকি বড় না, শুধু বি এন পির বা জামাতের বা তাদের জোটের সমর্থকরাই আসল?

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে জাতীয় পার্টি একক বা জোট বদ্ধ নির্বাচনে একেবারে খারাপ ফল করেনি। অন্তত সেই বিচারে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কি পুরোপুরি ভাবে ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রিয়ারির মানের ভোট বলা যায় কিনা সেটা আমার জানা নেই।

তবে ২০১৪ সালে ভোটের আগে আমরা দেখেছি যে সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু সেটার ব্যাপারে কোনপ্রকার আগ্রহ না দেখিয়ে বিরোধী দল বি এন পি নির্বাচন ঠিক করার নামে যেভাবে হরতাল আর অবরোধ দিয়ে দেশকে অচল করে দিয়েছিল, সেটা আমরা যারা বাংলাদেশে থাকা ভুক্ত ভোগী তারা জানি।

অথচ এই তথাকথিত অবৈধ নির্বাচন বাতিলের জন্য এখন বি এন পির কোন সাড়া নেই কেন? এখন তারা যদি অহিংস পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে, তবে ভোটের আগে কেন গনতান্ত্রিক অধিকারের নামে জালাও পোড়াও শুরু করেছিল ? এটা কিসের গনতান্ত্রিক অধিকার?

আগে অহিংস পদ্ধতি গ্রহন করাটা কি খুবই অগনতান্ত্রিক ছিল? গণতন্ত্রকে বেদ জ্ঞানে পুজারী সব প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছেই বিনীত প্রশ্ন রাখছি।
মানুষ পোড়ানো, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করা এবং প্রতিবারের মত ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের খুন, ধর্ষণ, সম্পদে অগ্নিসংযোগ করে এবং বাড়ি ছাড়া করে কি প্রমান দিচ্ছে?
মানবাধিকারের লঙ্ঘন যারা ( সে যেই হোক না কেন) এইরকম ভাবে করে থাকে তাদের রাজনীতি করার আদৌ কোন অধিকার থাকা উচিত কিনা সে নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলছি।

সবশেষে বি এন পি প্রমান করে দিল যে তারা জামাতের পাশেই আছে, এমন সময়ে প্রমান করে দিল, যখন, কিনা সারাদেশে ৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। বি এন পি কি এই ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে আসলে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষই নিল না এবার প্রত্যক্ষ ভাবে? জাতির বিবেকের কাছে আজ এটা একটা বিরাট প্রশ্ন হয় দাঁড়িয়েছে বলেই মনে হয়।

এখনো সরকারের পক্ষ থেকে বি এন পি কে প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে যে আদালতের রায়ে নিবন্ধন করতে না পারা জামায়ত কে বাদ দিয়ে নতুন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে, কিন্তু এই সময়ে নি এন পির এই একগুঁয়ে স্বভাব, আর প্রত্যক্ষ ভাবে জামাতের পাশে এসে দাড়ানোর হটকারী সিদ্ধান্ত দেশের জন্য কতটা ভাল ফলাফল বয়ে আনবে? নাকি সব দায় ভার শুধুই আওয়ামী লীগের একার?

আর ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এটা ঠিক, কিন্তু বি এন পি অংশ নিলেই এটা হত না। বাকি আসন গুলোতে নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে প্রায় ৪০ % ভোট পড়েছে

অবশ্য যদি আওয়ামী লীগ এবং বি এন পি এই দুই দলের একদল অংশ না নিলে নির্বাচন অবৈধ হয়ে যায়, ( দুই দল তত্ব আর তাছাড়াও বি এন পির অংশগ্রহনের জন্য সরকার কম সচেষ্ট ছিল বলেও মনে হয় না, এখনো সচেষ্ট আছে বলেই মনে হয়) তবে বুঝা লাগবে যে আমরা গনতন্ত্র বলতে শুধু দুই দলীয় গণতন্ত্র বুঝে থাকি এবং সেক্ষেত্রে এটাও বুঝতে হবে যে আমরা নিজেরা যত বড় বড় কথা বলি না কেন, নিজেরাই আমরা এখনো ৩য় বিকল্প শক্তির জন্য তৈরী নই।

কারন আমরা জাতীয় পার্টিকে গোনার মধ্যে ধরছি না, অথচ তারা আজ প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আবির্ভুত হয়েছে বি এন পির নির্বাচন বর্জনের কারনে, এবং অতীতেও মোটামুটি ভালই জনসমর্থন ও আসন পেয়েছে।

এখানে কিছু জাতীয়তাবাদের সমর্থক ব্লগার ( নিজেদের মধ্যে ও কিছু অতিথিকে উত্তর দেয়ার সময়ে বলেছিলেন যে যুদ্ধের মধ্যে নাকি মানবতা মানবতা করে কান্না করা হচ্ছে) ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে বি এন পি জামাতের সহিংসতাকে নির্বাচক ঠিক করার মেকানিজম বলেছিলেন, সেটা কোন মানবিক কথা ছিল না, অথচ আজ যদি মানবাধিকার রক্ষার্থে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ( ২০০১ সালের শিক্ষা নিয়ে), এবং সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে জাতীয়তাবাদী সুশীলদের কথার পপ্রতি উত্তরে ভিন্ন মতাবলম্বীরা মতামত দেন যে, তাঁরা এইসবের জন্য সব ধরনের সমঝোতা করতে রাজী আছেন, সেখানে তাঁদের কতটা দোষ দেয়া যায়?

মানবতার খাতিরে সাময়িক ভাবে অনেক কিছু সমঝোতা করতে রাজী হওয়াটা( অনেক মানুষ করেছেন যে চিন্তা) কতটা অপরাধ আর ধ্বংসাত্বক চিন্তা হতে পারে এই বিচার করার আগে ,
ইলেকশন মেকানিজম ঠিক করার নামে গনহত্যার প্রতক্ষ সাফাই গাওয়াটা ( জাতীয়তাবাদী সুশীল রা যেটা করেছেন) কোন মানবিক আচরন হতে পারে কিনা, সেই প্রশ্ন প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে রেখে গেলাম, এবং আগে সেইটা নিয়ে ভাবতে বা কাঁটাছেড়া করার বিনীত অনুরোধ করে গেলাম।