১৯৩৫ সালের মধ্য-জানুয়ারিতে বুদাপেস্টে ছেলে-মেয়েদের কাছে ফিরে গেলেন মার্গিট। প্রিন্সটনে স্বাভাবিক রুটিনে কাজ চলছে ডিরাকের। বুদাপেস্ট থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ডিরাককে চিঠি দেন মার্গিট। চিঠিতে পাতার পর পাতা জুড়ে আবেগ আর ভালোবাসার কথা। ডিরাক বুঝতে পারেন না এরকম আবেগের জবাবে কী লিখতে হয়। তিনি কয়েক লাইনেই মার্গিটকে জানিয়ে দেন – “আমি তোমার মত এত সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারি না। কারণ আমার অনুভূতি তোমার মত প্রখর নয়। আমার জীবন মূলত ঘটনার ওপর নির্ভরশীল, আবেগের ওপর নয়।”
এরকম সাদামাটা চিঠি পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায় মার্গিটের। তিনি বুঝতে পারেন ফ্লোরিডার দু’সপ্তাহ ডিরাক শুধু ঘটনা হিসেবেই নিয়েছেন, প্রকৃত অনুভুতি বুঝার মত ক্ষমতা তাঁর এখন তৈরি হয়নি। যা করার মার্গিটকেই করতে হবে। মার্গিট চিঠিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান প্রিন্সটনে কী কী হচ্ছে, ডিরাক কী কী করছেন, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করছেন কিনা, শরীরের যত্ন নিচ্ছেন কিনা ইত্যাদি। আরো জানতে চান মার্গিটকে ছাড়া একা একা কেমন লাগছে, মার্গিটকে মিস করছেন কিনা।
উত্তরে নিরুত্তাপ ভাষায় ডিরাক লিখলেন, “আমাকে নিয়ে তোমার এত চিন্তা করার দরকার নেই। তুমি তোমার জীবন এবং তোমার পাশে যারা আছেন তাঁদের কথা ভাবো। আমি একা একা বেশ ভালোই থাকতে জানি। মানুষের সাথে যত কম মিশতে হয় আমি ততই ভালো থাকি।”
চিঠির সাথে ডিরাক মার্গিটের চিঠিতে ইংরেজি শব্দ ও ব্যাকরণে কী কী ভুল আছে তারও একটা তালিকা পাঠান।
মার্গিট যখন চিঠির সাথে নিজের ছবি পাঠান – ছবি সম্পর্কে ডিরাক মন্তব্য করেন – “তোমার এই ছবিটা খুব একটা ভালো লাগেনি আমার। তোমার চোখগুলো বিষন্ন – যা তোমার মুখের হাসির পরিপন্থি।”
এরকম যান্ত্রিক চিঠি পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই মনটা খারাপ হয়ে যায় মার্গিটের। তিনি পরের চিঠিতে অনুযোগ করেন, “পল, তুমি আমার আগের চিঠির সব প্রশ্নের উত্তর দাওনি।”
ডিরাক আগের সব চিঠি বের করে আবার পড়েন। বুঝতে চেষ্টা করেন কী কী প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়নি। তারপর তালিকা করতে বসেন। ক’দিন পরে মার্গিট চিঠির বদলে একটা ছকবদ্ধ উত্তর পান ডিরাকের কাছ থেকে:
এরকম উত্তর পেয়ে কষ্টের পাশাপাশি মজাও পেলেন মার্গিট। তিনি বুঝতে পারলেন ডিরাক জানেন না কোন্টা প্রশ্ন আর কোন্টা অভিমান। তিনি পরিষ্কার করে লিখে জানালেন যে অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলো আসলে প্রশ্ন নয়।
“তোমাকে আরেকটা নোবেল পুরষ্কার দেয়া দরকার – নির্মমতার জন্য।”
“আমি তো বোকা একটা মেয়ে তাই তোমার মত বিখ্যাত মানুষের মনযোগ আশা করি।”
“আমি তো তোমার ভালবাসা পাবার যোগ্য নই।”
এরকম লাইনে ভর্তি থাকে মার্গিটের চিঠি। ডিরাক ঠিক বুঝতে পারেন না কোন্টার কী উত্তর দেবেন, বা আদৌ কোন উত্তর দেবার দরকার আছে কিনা। কী লিখবেন বুঝতে না পেরে ডিরাক ভাবলেন – মার্গিট কি ভাবছেন যে তিনি প্রেমে পড়ে গেছেন?
ডিরাক লিখলেন, “তোমার জানা উচিত যে আমি তোমার প্রেমে পড়িনি। আমি যেহেতু কখনো প্রেমে পড়িনি সুতরাং প্রেমে পড়ার মত সূক্ষ্ম অনুভূতি আমি বুঝতে পারি না।”
চিঠি পেয়ে একটুও অবাক হলেন না মার্গিট। মনে মনে বললেন, “প্রেমে পড়া কি জিনিস তোমাকে আমি বুঝিয়েই ছাড়বো প্রফেসর।”
সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞানী কাপিৎজাকে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে। কাপিৎজা রাশিয়ায় গিয়েছিলেন পারিবারিক কাজে। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে আর কেমব্রিজে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। স্ট্যালিন সরকার তাঁকে বলছেন সোভিয়েত ইউনিয়নে থেকে সরকারী বিজ্ঞানীদের কথামত কাজ করতে যা বৈজ্ঞানিক স্বাধীনতার পরিপন্থি। কাপিৎজার স্ত্রী আনা ডিরাকের সাহায্য চেয়েছেন। ডিরাক আমেরিকাতে যত পদার্থবিজ্ঞানী আছেন সবার কাছে চিঠি লিখে কাপিৎজার মুক্তির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি ঠিক করেছেন আমেরিকা থেকে ফিরে রাশিয়ায় যাবেন কাপিৎজার সাথে দেখা করতে।
১৯৩৫ সালের জুন মাসে আমেরিকা থেকে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন ডিরাক একটা জাপানি জাহাজে চড়ে। মার্গিটকে জানিয়েছিলেন তাঁর রাশিয়া যাবার কথা। মার্গিট ডিরাককে অনুরোধ করলেন রাশিয়া থেকে ফিরে বুদাপেস্টে তাঁর কাছে বেড়িয়ে যেতে।
রাশিয়ায় জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত কাটালেন ডিরাক। কাপিৎজার সাথে দেখা করলেন। কাপিৎজা মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছেন। সোভিয়েত সরকার ডিরাককে বাধা দিলেন না কোথাও। কিন্তু কাপিৎজাকে কিছুতেই কেমব্রিজে আসতে দিতে রাজী হলো না। কাপিৎজা ভাবছেন পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা বাদ দিয়ে মনোবিজ্ঞানের গবেষণা শুরু করবেন তাহলে সোভিয়েত বিজ্ঞানী আইভান পাভলভের সাথে কাজ করতে পারবেন।
কাপিৎজার জন্য কিছু করতে না পেরে সেপ্টেম্বরে কেমব্রিজে ফিরে আসার পথে বুদাপেস্টে মার্গিটের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন ডিরাক। মার্গিট তাঁর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার বাড়ির কাছে একটা বাড়িতে থাকেন। মার্গিটের মা-বাবা যে এত ধনী তা ডিরাক ধারণাও করেন নি। প্রাচুর্য উপচে পড়ছে সবখান থেকে। মার্গিট ক’দিন আগেই একটা সিক্স সিলিন্ডার মার্সেডিজ কিনেছেন। নয় দিন ধরে খুব আনন্দে কাটলো ডিরাক ও মার্গিটের। মার্গিটের মা-বাবা আশ্চর্য হয়ে গেলেন এই দুই বিপরীত চরিত্রের মানুষের মধ্যে মিলনের সম্ভাবনা দেখে।
কেমব্রিজে ফিরে এসে ডিরাক চিঠি লিখলেন মার্গিটকে। চিঠি পেয়ে মার্গিটের মনে হলো তাঁর এতদিনের চেষ্টা সফল হতে চলেছে। ডিরাক লিখেছেন – “তোমার কাছ থেকে চলে আসার সময় আমার খুব কষ্ট হয়েছে। এখানে আসার পরেও খুব মিস করছি তোমাকে। আমি আগে কখনো কাউকে মিস করিনি। আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে বদলে দিয়েছো।”
আসলেই কিছুটা বদলে গেছেন ডিরাক। অনেকের মতে তিনিও নোবেল ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছেন। নোবেল পুরষ্কার পাবার পর বিজ্ঞানীদের বৈজ্ঞানিক কাজের গতি কমে যায়। ডিরাকও মনে করছেন তাঁর গতি কমে যাচ্ছে। বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে তাঁর। আবার মনে হচ্ছে কী দরকার নতুন করে অসুখী হবার।
তাঁর মা-বাবার মধ্যে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বাবা এই বয়সে আরেকজনের সাথে থাকতে শুরু করেছেন। তাঁর মা প্রচন্ড মানসিক কষ্টে আছেন। ডিরাক বুঝতে পারেন না, যে মানুষ ভালোবেসে বিয়ে করে তাদের ভালোবাসা কেমন করে মরে যায়। ডিরাকের মা-বাবার মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাবার উপক্রম হলো।
ডিরাকের ছোটবোন বিয়াট্রিস পড়াশোনায় খুব একটা ভাল করতে পারেনি। মা-বাবাকে সেই দেখাশোনা করতো। কিন্তু বাবার আচরণে সেও খুব ক্ষুব্ধ। বিয়াট্রিস ঠিক করেছে বাবার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে একটা সেক্রেটারির চাকরি নিয়ে।
ডিরাকের বাবা হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অনেকদিন হাসপাতালে থাকার পর ১৯৩৬ সালের ১৫ জুন তিনি মারা যান।
বাবার মৃত্যুর পর ডিরাক হঠাৎ এক ধরনের মুক্তির স্বাদ পেলেন। তাঁর মনে হলো তিনি এখন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
ডিরাকের মায়েরও একই অনুভূতি হলো। বেঁচে থাকতে চার্লস একটা পয়সাও খরচ করতে চাইতেন না। মৃত্যুর পর দেখা গেলো তাঁর সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রচুর। উইলে তিনি অর্ধেক দিয়ে গেছেন তাঁর ছেলে ও মেয়েকে, অন্য অর্ধেক দিয়ে গেছেন স্ত্রীকে। ফ্লোরেন্স স্বামীর শোকের চেয়েও স্বস্তি পেলেন অনেক।
ডিরাক আবার রাশিয়া ভ্রমণে গেলেন। পিতৃশোক তিনি বুঝতে পারছেন না, কিন্তু একটা অস্বস্তি যাচ্ছে না কিছুতেই। বাবাকে তিনি কোনদিনই ভালবাসতে পারেন নি। অথচ মানুষটা মারা যাবার পর কিছুটা খালি খালিও লাগছে। মার্গিটকে লিখলেন বাবার সম্পর্কে তাঁর ঘৃণার কারণগুলো। মার্গিট ডিরাককে সান্ত্বনা দেন, বলেন সব ভুলে যেতে।
রাশিয়া থেকে ফিরে ডেনমার্কে নিল্স বোরের ইনস্টিটিউটে যান ডিরাক। সেখানে জিনেটিক্স সংক্রান্ত একটা সেমিনারে গিয়ে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো তাঁর। জিনেটিক্স সম্পর্কে কিছুই জানতেন না তিনি। যখন জানলেন যে মা-বাবার জিন সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয় – তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। মার্গিটকে লিখলেন – “ভেবেছিলাম বাবার কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি আমি, কিন্তু বাবার জিন আমার শরীরে বইছে। এর থেকে মুক্তি নেই আমার।”
কেমব্রিজে ফিরে এসে নতুন উদ্যমে গবেষণা শুরু করলেন। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারছেন না। তাঁর বাবার জিন তাঁর শরীরে। বিয়ে করলে তাঁর যদি সন্তান হয় – তাহলে সেই সন্তানের মধ্যে তাঁর জিন যাবে যাতে তাঁর বাবার জিনও আছে। বাবার জিন-প্রবাহ বন্ধ করতে হলে তাঁর উচিত কখনোই বিয়ে না করা, অথবা বিয়ে করলেও সন্তান না হওয়া।
মার্গিটের ব্যাপারে ভাবছেন ডিরাক। মার্গিটের স্বভাব বিশ্লেষণ করে দেখেছেন কোন মিলই নেই তাঁর সাথে। কিন্তু মাঝে মাঝে মার্গিটের কর্তৃত্বপরায়ণতা দেখলে তাঁর বাবার কথা মনে পড়ে। ডিরাক ভেবে পান না মার্গিটকে বিয়ে করবেন কিনা। কারো পরামর্শ নিতে পারলে ভালো হতো। মাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। কারণ মা তাঁর নিজের কর্তৃত্বের ভাগ কাউকেই দিতে রাজি হবেন না। উইগনারকে জিজ্ঞেস করলেও কোন লাভ হবে না। কারণ উইগনার তো তাঁর বোনের পক্ষেই বলবেন। তাছাড়া উইগনার তখন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাডিসন ইউনিভার্সিটিতে চলে গেছেন। সেখানে তাঁর সহকর্মী অ্যামেলিয়া ফ্রাঙ্ককে বিয়ে করার চেষ্টা করছেন। উইগনার মার্গিটকে আমেরিকায় ডেকে পাঠালেন অ্যামেলিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।
মার্গিট আমেরিকায় যাবার আগে কেমব্রিজে এলেন ডিরাকের সাথে দেখা করতে। ডিরাক মার্গিটকে নিয়ে গেলেন মিসেস ইজাবেল হোয়াইটহেডের কাছে। মিসেস হোয়াইটহেড কেমব্রিজে ডিরাকের ক্লাসমেট হেনরির মা। হেনরির বাবা রেভারেন্ড হেনরি মাদ্রাজে চার্চের বিশপ ছিলেন। ইজাবেল ভারতীয় খ্রিস্টান। ডিরাককে খুব স্নেহ করেন তিনি। ডিরাক ভাবলেন মিসেস হোয়াইটহেড মার্গিটের সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। মিসেস হোয়াইটহেডের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে মার্গিট সাউথহ্যাম্পটন থেকে জাহাজে চড়ে আমেরিকা চলে গেলেন।
মিসেস হোয়াইটহেড মার্গিটের সাথে কথা বলে বেশ খুশি হলেন। ডিরাককে বললেন, “মার্গিট খুব ভালবাসে তোমাকে। সিদ্ধান্ত নিলে এখনই নিতে হবে। তোমাদের স্বভাবের মিল নেই ঠিক, কিন্তু মনের মিল হলেই তোমরা সুখী হবে।”
কিন্তু একটা ব্যাপারে মিসেস হোয়াইটহেড খুব একটা সন্তুষ্ট নন। তা হলো ডিরাক আর মার্গিট কেউই বিয়ের ব্যাপারে ঈশ্বরের হাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
“দেখো পল, বিয়ে হয় ঈশ্বরের ইচ্ছেয়। ঈশ্বর স্বর্গ থেকে ঠিক করে দেন কে কাকে বিয়ে করবে। স্বর্গীয় প্রেম না থাকলে কোন বিয়েই টিকে না।”
“আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। বিয়ে করলে নিজেদের সিদ্ধান্তেই করবো।”
কিছুদিন পর মার্গিট ফিরে এলেন আমেরিকা থেকে। ডিরাক তাঁকে রিসিভ করতে গেলেন সাউথহ্যাম্পটন ডকে। গাড়িতে লন্ডনে আসার সময় তাঁর স্বাভাবিক নিরাবেগ গলায় মার্গিটকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে বিয়ে করবে মার্গিট?”
হ্যাঁ বলতে এক সেকেন্ডও দেরি করলেন না মার্গিট।
ডিরাক তাঁর মাকে যখন বললেন বিয়ের সিদ্ধান্তের কথা – খুবই ধাক্কা খেলেন ফ্লোরেন্স। তাঁর মনে হলো তাঁর সাম্রাজ্যের পতন হতে চলেছে। ছেলের ওপর থেকে নিজের কর্তৃত্ব সরিয়ে নিতে হবে ভাবতেই তাঁর খারাপ লাগতে শুরু করলো। তিনি মার্গিটের সাথে দেখা করতে গেলেন মার্গিটের হোটেলে।
ব্লু মস্বেরির রাসেল স্কোয়ারে ইম্পেরিয়েল হোটেলে উঠেছেন মার্গিট। হবু শাশুড়ির সাথে কথা বলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলো মার্গিটের। ৩৫ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এটাতেই তো খুশি হওয়া উচিত যেকোন মায়ের। অথচ ডিরাকের মা কেন এত অসুখী বুঝতে পারেন না মার্গিট। ফ্লোরেন্স বলেন মার্গিটকে, “তোমাদের তো শীঘ্রই বড় বিছানা লাগবে।”
“না, না। আমার নিজের আলাদা বেডরুম থাকবে। আমার বেডরুমে পলকে আমি ঢুকতেই দেবো না।”
“তাহলে তাকে বিয়ে করছো কেন?”
“কারণ আমি তাকে ভালবাসি এবং আমার একটা নিজের ঘর দরকার।”
ফ্লোরেন্স ডিরাককে চিঠি লিখে জানালেন সবকিছু। বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে পলকে সরানোর জন্য শেষ চেষ্টা করলেন, “মার্গিট খুবই ভালো মেয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু এখনো ভেবে দেখ – সে কিন্তু নিজের সুবিধার জন্যই তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।”
১৯৩৭ সালের ২রা জানুয়ারি সেন্ট্রাল লন্ডনের হলবর্ন রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন ডিরাক ও মার্গিট। বিয়েতে ডিরাকের মা ও বোন এবং মিস্টার ও মিসেস হোয়াইটহেড ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বিয়ের পর রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে অতিথিরা যে যাঁর বাড়িতে চলে গেলেন। বিয়ের কোন ছবি তোলা হয়নি। ব্রাইটনের হোটেলে গিয়ে উঠলেন নব দম্পতি। সেটাই তাঁদের হানিমুন।
কয়েক সপ্তাহ পর মার্গিট চলে গেলেন বুদাপেস্টে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে। যাবার আগে ডিরাককে বলে গেলেন সুখী দাম্পত্য-জীবন সম্পর্কিত কিছু বইপত্র পড়তে।
কেমব্রিজে ফিরে এসে ডিরাক একটা বাড়ি খুঁজতে লাগলেন আর রোমান্টিক বই-পত্র পড়তে লাগলেন। ‘সুখী দাম্পত্য জীবনে স্বামীর উচিত স্ত্রীকে রোমান্টিক ভাষায় চিঠি লেখা’ জাতীয় উপদেশ পেয়ে ডিরাক মার্গিটকে চিঠি লিখলেন – রোমান্টিক চিঠি:
“আমার জীবনের প্রথম প্রেমপত্র তোমাকে লিখতে বসেছি। যতই দিন যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি তুমিই আমার জীবনের একমাত্র প্রেম। বিয়ের আগে আমার মনে হয়েছিল বিয়ের পর সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া হবে আমার। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে যত বেশি জানতে থাকবো তত বেশি ভালোবাসতে থাকবো। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাও কি এরকম বাড়তে থাকবে, নাকি এখনই আমি তোমার সর্বোচ্চ ভালোবাসা পাচ্ছি?”
ডিরাক বইতে পড়েছেন স্ত্রীর শারীরিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে হয়। ডিরাক লিখলেন, “তোমার ফিগার খুবই সুন্দর, তোমার শরীর উত্তেজনাকর মসৃণ। তোমার শরীরের সবকিছুর মালিক এখন আমি ভাবতেই সুখ লাগছে আমার। তুমি কি মনে করো আমার ভালবাসা বড় বেশি শারীরিক হয়ে যাচ্ছে? প্রিয়তমা, তুমি আমার ভালোবাসা। তুমি আমাকে মানবিক করে তুলেছো। আমার জীবনে আর কোন সাফল্য না এলেও আমি শুধু তোমাকে নিয়ে সুখে বেঁচে থাকতে পারবো। আমার মনে হচ্ছে আমি যদি তোমাকে সুখী করতে পারি তাহলেই আমি সার্থক।”
ডিরাকের চিঠি পেয়ে যতটা খুশি হওয়া উচিত ততটা খুশি হতে পারলেন না মার্গিট। কারণ এরকম চিঠিতে সহজাত ডিরাক অনুপস্থিত। মার্গিট ডিরাককে জানালেন যে তাঁর জোর করে রোমান্টিক হবার দরকার নেই। তিনি যেমন আছেন তেমন থাকলেই চলবে।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে বেশ হৈ চৈ পড়ে গেলো ডিরাকের বিয়ের সংবাদে। কেউ চিন্তাও করতে পারেন নি যে ডিরাক মার্গিটের মত বিপরীত-স্বভাবের কাউকে বিয়ে করতে পারেন। রাদারফোর্ড তাঁর স্বভাবসুলভ উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন – “ডিরাকের মত লোককে সামলানোর জন্য অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে দরকার ছিলো। উইগনারের বোনের আট বছরের অভিজ্ঞতা আছে।”
সহকর্মী সহ-পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে মার্গিটকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় ডিরাক সবসময় ‘উইগনারের বোন’-ই বলতেন, কখনোই ‘আমার স্ত্রী’ বলতেন না। কেন এরকম করতেন প্রশ্ন করলে ডিরাক কোন জবাব দিতেন না।
১৯৩৭ সালের এপ্রিলে মার্গিট ফিরে এলেন কেমব্রিজে তাঁর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। ডিরাক মার্গিটের ছেলে-মেয়েকে আইনগত ভাবে নিজের করে নিলেন। গ্যাব্রিয়েল ও জুডিথ ডিরাক পদবী গ্রহণ করলো। কেমব্রিজের কাছে একটা বড় বাড়ি কিনলেন ডিরাক ও মার্গিট। ১৯৪০ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি তাঁদের প্রথম কন্যা মেরির জন্ম হয়। দু’বছর পর ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় তাঁদের দ্বিতীয় কন্যা মনিকা।
বাবা হিসেবে নিষ্ঠার সাথে সব দায়িত্ব পালন করেছেন ডিরাক। চার সন্তানের প্রতিই তিনি সমান স্নেহশীল ছিলেন। ছেলেমেয়েদের সাথে কখনোই রাগ করেন নি। তাদের সাথে নিয়মিত খেলাধূলা করেছেন। প্রত্যেক গ্রীষ্মকালে সবাইকে নিয়ে ছুটি কাটাতে চলে যেতেন দূরে কোথাও। প্রত্যেক রবিবার সকালবেলা মেয়েদের নিয়ে সাইকেল চালাতে যেতেন। বাড়ির লনে বাগান করেছেন নিজের হাতে। প্রতি শনিবার ও রবিবার বিকেলে বাগানের কাজ করতেন। নিজেদের গাছ থেকে আপেল পেড়ে একটা একটা করে ধুয়ে মুছে গ্যারেজের দোতলায় সাজিয়ে রাখতেন অনেক যত্নে। স্কেল দিয়ে মেপে দেখতেন যেন প্রত্যেকটা আপেল পরস্পর থেকে সমান দূরত্বে থাকে।
কুকুর পছন্দ করতেন না ডিরাক। কিন্তু মেয়েদের আবদারে তাদের বিড়াল কিনে দিয়েছিলেন। বিড়াল ঢুকার জন্য দরজা তৈরি করতে গিয়ে বিড়ালের গোঁফের দৈর্ঘ্য মেপে দেখতেন দরজার মাপ ঠিক করতে।
গ্যাব্রিয়েল ও জুডিথ বড় হয়ে যাবার পর যে যার ইচ্ছেমত কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। মেরি আর মনিকাকে প্রতি সন্ধ্যায় নিজের হাতে গণিত আর পদার্থবিজ্ঞান শেখাতেন ডিরাক। তারা আরেকটু বড় হবার পর তাদের যখন যা দরকার পরামর্শ দিতেন। কিন্তু তারা যখন জিজ্ঞেস করতো তাদের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত – ডিরাক সবসময় বলতেন, “তোমার যা ভালো লাগে তাই হও। মনযোগ ও ভালোবাসা থাকলে অবশ্যই ভালো করবে।”
মার্গিটের সাথে ডিরাকের সম্পর্কটা ভালোভাবেই টিকে গিয়েছিল। ডিরাক বিয়ের পরও খুব একটা বদলাননি। মানুষের সঙ্গ তিনি এড়িয়ে চলেছেন বরাবরই। অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে পছন্দ করেন না বলে কোন ধরনের দাম্পত্য-কলহ তাঁদের কখনোই হয়নি। সংসারে যা বলার একা মার্গিটই বলে গেছেন। আর ডিরাক চুপচাপ শুনেছেন। এভাবেই নীরব সুখে কেটেছে তাঁদের ৪৭ বছরের দাম্পত্য জীবন। তবে মার্গিটের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন ডিরাক। গান শুনতে শিখেছেন। যদিও কনসার্টে কখনো যেতেন না – কারণ সেখানে দর্শকের কাশির শব্দে নাকি তাঁর মনযোগ ব্যাহত হতো। তিনি ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনতেন রেডিওতে – আলো নিভিয়ে, চোখ বন্ধ করে।
সারাজীবনে দুই শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পরেও অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। রয়েল সোসাইটির রয়েল মেডেল পেয়েছেন ১৯৩৯ সালে, ম্যাক্স প্ল্যাংক মেডেল ১৯৫২ সালে, ১৯৬৯ সালে পেয়েছেন মায়ামি ইউনিভার্সিটির ওপেনহেইমার প্রাইজ আর ১৯৭৩ সালে পেয়েছেন অর্ডার অব মেরিট।
১৯৬৯ সালে ডিরাক লুকাসিয়ান প্রফেসর পদ থেকে অবসর নেন। ১৯৭১ সালে সপরিবারে ফ্লোরিডা চলে যান। সেখানে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেন। সেখানেই ছিলেন আমৃত্যু। ১৯৮৪ সালের ২০শে অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে মারা যান পল ডিরাক।
ডিরাকের মৃত্যুর পর ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান পাঠাগারের নাম রাখা হয় ‘ডিরাক সায়েন্স লাইব্রেরি’। মার্গিট ডিরাক এই লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন।
ডিরাকের মৃত্যুর পর আরো আঠারো বছর বেঁচে ছিলেন মার্গিট। ২০০২ সালের ৯ই জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্র:
১। Graham Farmelo, The strangest man the life of Paul Dirac, mystic of the atom, Basic Books, New York, 2009.
২। Otto R. Frisch, The nature of matter, Thames and Hudson, London, 1972.
৩। Lloyd Motz and Jefferson Hane Weaver, The story of physics, Avon Books, New York, 1989.
৪। Monica Dirac, Paul Dirac – my father, www.damtp.cam.ac.uk/events/strings02/dirac/dirac/ [accessed: 16/09/2013]
চমৎকার একটি লেখা, এক নাগাড়ে পড়ে ফেললাম। ড. প্রদীপ দেবকে ধন্যবাদ।
@দীপেন ভট্টাচার্য, অনেক ধন্যবাদ দাদা।
বহুদিন পর একেবারে মনের মতো একটা লেখা পড়লাম।ডিরাকের নামটাই কেবল পড়েছি, অনেক কিছু জানতে পারলাম। ট্রিলজি একসাথে পড়লাম।কোয়ান্টাম ভালোবাসা কী এবারের বইমেলায় বেরোবে নাকি?
অনেক অনেক ধন্যবাদ। 🙂
@অর্ণব, অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হবে ‘কোয়ান্টাম ভালোবাসা’।
অসাধারণ লাগলো। একজন নোবেল পাওয়া পদার্থবিজ্ঞানীর এমন চমৎকার জীবন-যাপন না পড়লে জানতেই পারতাম না। খুব ভাল লেগেছে…আশা করি এমন লেখা আরো পাব প্রদীপ দেব। ধন্যবাদ আপনাকে।
@বেণুবর্ণা অধিকারী, অনেক ধন্যবাদ।
সাবলীল লেখা. পুরো সিরিজ এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম. পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম…
@সমুদ্রপুত্র, অনেক ধন্যবাদ।
উফ ! কি দারুণ সাবলীল গদ্য। এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম। এরকম আরও চমৎকার সব পোস্ট পাবো এই প্রত্যাশায় রইলাম। ধন্যবাদ।
@বিলাস, অনেক ধন্যবাদ।
আগের দুটো পর্বসহ এই শেষ পর্বটিও পড়ে শেষ করলাম। জীবনী লেখায় ওস্তাদ আমাদের প্রদীপ দা। পাঠককে আকর্ষণীয়ভাবে ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। আর রসবোধ তো রয়েছেই। তিনটি পর্বই পিডিএফ করে আমার পিডিএফ রিডারে রেখে দিলাম।
@মাহফুজ, অনেক ধন্যবাদ। সকল প্রশংসা মুক্তমনার।
চমৎকার লিখেছেন। (Y)
@মইনুল রাজু, অনেক ধন্যবাদ। অনেকদিন আপনার লেখা পড়তে পাই না। খুব ব্যস্ত?
প্রদীপ দেব ক্রমশঃ নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। ডিরাকের ওপর লেখাটা আমি একেবারে প্রথম পর্ব থেকে শুরু করে টানা পড়ে গেলাম। পুরোটা শেষ করার পর থমকে ছিলাম অবেক্ষণ। মনে আছে, প্রদীপ লেখা শেখানোর স্কুল দিলে আমি সবার আগে ছাত্র হিসেবে যোগদান করব বলে বোধ হয় বলেছিলাম। আমি আসলেই তা চাই এখন।
ডিরাকের উপর সম্প্রতি যে বইটা বের হয়েছে – ‘The Strangest Man: The Hidden Life of Paul Dirac, Mystic of the Atom’ – সেটা কিছুটা বার্ন্স এন্ড নোবেলে পড়া শুরু করেছিলাম, কেনা হয়নি পরে। আমার মনে হয় প্রদীপের এই লেখা পরার পর ওটা কেনার আর দরকার আছে।
প্রদীপের এই সিরিজটা নীচের উদ্ধৃতিগুলোর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে (বেশিরভাগ উদ্ধৃতিই ২য় পর্বের, এ পর্বটাই সবচেয়ে রসালো) –
পল ডিরাকের উপর লেখাটা নিশ্চয় আপনার প্রকাশিতব্য ‘কোয়ান্টাম ভালবাসা’ বইয়ে স্থান পেয়েছে? বইটা আমি কিনবই। এই বই আমার শেলফে না থাকলে চলবে না।
শেষ করার আগে …আমার একটাই কথা… বিজ্ঞানীদের প্রেম জীবন নিয়ে যিনি এমন রসালোভাবে লিখতে পারেন, তার নিজের জীবনও প্রেমে বিরহে জমজমাট হবার কথা। সেই কথা শুনতে মঞ্চায়। :))
@অভিজিৎ, আপনি এমন ভাবে উৎসাহ দেন যে পঙ্গু হলেও সাহস জাগে পাহাড়ে চড়ার। আমি আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করি মুক্তমনা না থাকলে নিয়মিত লেখার উৎসাহ পেতাম না কোনদিনই। ডিরাক কোয়ান্টাম ভালোবাসার একটি অধ্যায়। বাকি তিনটি হলো নোবেল, আইনস্টাইন আর ফাইনম্যান।
আমিও তার কাছ থেকে জানার অপেক্ষায় আছি – “আমাদের গেছে যে দিন – একেবারেই কি গেছে?”
সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় লেখা অসাধারন একটা সিরিজ। আপনি লিখতে থাকুন … আমরা আছি পড়ার জন্য।
@তারিক, অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের উৎসাহ আর মুক্তমনার উদার প্রশ্রয় আমার পাথেয়।
প্রদীব দেব এর আরো একটা ক্লাসিক সিরিজ। লিখতে থাকুন বেশি করে, আমার মতো আরো অনেক ভক্ত আপনার লেখার প্রতীক্ষায় থাকে।
@রামগড়ুড়ের ছানা, অনেক ধন্যবাদ। সকল প্রশংসা মুক্তমনার।
বিজ্ঞানী ওপেনহেইমারকে নিয়েও এমন একটি লেখা চাই 😀
@তামিম, অনেক ধন্যবাদ। ওপেনহাইমারকে আমার ট্র্যাজিক পদার্থবিজ্ঞানী বলে মনে হয়। তাঁকে নিয়ে লেখার পরিকল্পনা আছে ভবিষ্যতে।
আরেকটা দারুণ সিরিজ শেষ হলো। এমন আরো লেখা পাবো, সেই আশা নিয়ে ভালোলাগাটা জানিয়ে গেলাম। (F)
@তানভীরুল ইসলাম, অনেক ধন্যবাদ।
গীতাদি, একদম আমার মনের কথাটি বলেছেন!
@কেশব কুমার অধিকারী, অনেক ধন্যবাদ দাদা।
ডিরাকের মনের মত যদি কোন পাঠক থাকে তারও মন বুলাতে ও ভুলাতে পারে প্রদীপ দেবের লেখা।
@গীতা দাস, অনেক ধন্যবাদ দিদি।