মুক্তিযুদ্ধ।
যে কোনো বিচারেই বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাস। বাঙালি তাঁর আত্মোৎসর্গের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শনের মধ্য দিয়ে পেয়েছে তাঁর স্বাধীনতা; যে স্বাধীনতা কেবল একটি ভূ-খণ্ডেরই নয়, যে স্বাধীনতা সামগ্রিক অর্থে তাঁর অবিনাশী মুক্তির চিহ্নমালা। উনিশশো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তাই কেবল নয় মাসের ঘটনাই নয়, এর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে তেইশ বছরের পাকিস্তানি শাসনের ক্ষত-বিক্ষত আখ্যান, জড়িয়ে আছে বাঙালির উদ্বেল মুক্তি-আকাঙ্ক্ষা।
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি অঙশগ্রহণ করেছিলো কেবল চেতনার আলোতে দাঁড়িয়েই নয়, এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলো বছরের পর বছর বাঙালির লাঞ্ছনার ইতিহাস। নয়মাসের গেরিলা যুদ্ধ তাই কেবল পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা-নারী নির্যাতন আর বর্বরতার বিরুদ্ধেই ছিলো না, ছিলো ‘পাকিস্তানি ভূত দর্শন’- এর বিরুদ্ধে এবঙ আরও মোটা দাগে বললে, সাতচল্লিশে যে ধর্মভিত্তিক দ্বি-জাতিতত্ত্বে দেশভাগ হয়েছিলো- তার বিরুদ্ধে। সাঙস্কৃতিক-সামাজিক কিঙবা রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য ছাড়াই পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান একই অঙশে থাকলো, কেবল ধর্মের ভিত্তিতে। তাই একাত্তরের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির যে বিজয়, তা কেবল পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই বিজয় নয়; সামগ্রিকভাবেই এ বিজয় ‘পাকিস্তানি অপ-আদর্শ’-এর বিরুদ্ধে এবঙ ধর্মের ভিত্তিকে জাতিগত বিভাজনের বিরুদ্ধে।
একাত্তর পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বাঙালি দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে। কিন্তু একাত্তরে তো কেবল অবকাঠামোরই ধ্বঙস হয়নি, নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে বুদ্ধিজীবী বাঙালিদের যাঁদের মেধার আলো অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশে। বাহাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হলো সঙবিধান, যার পবিত্র স্পর্শে ফুটে উঠলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সূর্য। কিন্তু পঁচাত্তরের পরই দৃশ্যপট বদলে গেলো। এরপর দীর্ঘ সময় বাঙলাদেশ ছিলো সামরিকতন্ত্র ও মোল্লাতন্ত্রের ভয়াল মেঘমালার নিচে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হয়েছে নানাভাবে। তথ্যকেন্দ্রীক এবঙ তত্ত্বকেন্দ্রীক। কিন্তু একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কতোটুকু মূল প্রেক্ষাপটকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বা যেটুকু দেযা প্রয়োজন ছিলো, তা উঠে এসেছে। বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান নানাভাবে আলোচনায় এলেও তা কতোটুকু নারীর গৌরবকে তুলে এনেছে এবঙ কতোটুকু তুলে এনেছে নারীর লাঞ্ছনার ইতিহাস, তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধ সামগ্রিক প্রশ্নেই একটি যুদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে নারীর গৌরবোজ্জ্বল অঙশগ্রহণের সাতকাহন। অনেকে জীবন বাজি রেখে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন। ফিরে নাও আসতে পারে জেনেও সন্তানকে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দেন। ধরা পড়লে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অস্ত্র পাচার করেন, অস্ত্র লুকিয়ে রাখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দান করেন। সাঙগঠনিক কাজে যুক্ত থেকে ঝুঁকি নিয়ে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করেন। ভিক্ষুক সেজে পাক-হানাদারদের ক্যাম্পের তথ্য সঙগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দলে, ক্যাম্পে ক্যাম্পে, ফিল্ড হাসপাতালে সেবিকার কাজ করেন। অনেকে ফাস্ট এইড ট্রেনিঙসহ অস্ত্র চালনা ট্রেনিঙ ও গেরিলা ট্রেনিঙ নেন। অনেক নারীই সেদিন বিভিন্ন শিবিরে রান্না-বান্নার দায়িত্ব পালন করেন, কেউবা নিয়োজিত থাকেন জনমত সঙগঠনে ও যুদ্ধের জন্য অর্থ সঙগ্রহ করতে আবার কেউবা গানের স্কোয়াডে অঙশ নিয়ে, স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্রে অঙশগ্রহণ করে শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্লান্তি ভুলিয়ে তাঁদেরকে উজ্জীবিত করতে তৎপর থাকেন। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে এই নারীদের সাহসী তৎপরতা, উৎসাহ, উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
কিন্তু ১৯৭১ সালের মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের উপর সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন গ্রন্থাবলী রচিত হলেও মুক্তিযুদ্ধে নারীদের গৌরবময় অবদানের উপর সুস্পষ্ট তেমন কোনো গ্রন্থ আমার চোখে পড়েনি। এটা আমার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাও হতে পারে। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে গ্রন্থগুলোর সন্ধান লাভ আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে, তার অধিকাঙশই বর্ণনামূলক, যার মূলে রয়েছে স্মৃতিচারণ, ধারাবর্ণনা, সমকালীন রাজনীতি, যুদ্ধের অবস্থা, সাঙগঠনিক দিকের বর্ণনা ও বিশ্লেষণ। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তাঁর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জিতে [১] মুক্তিযুদ্ধের বইকে কতোগুলো বিষয়ভিত্তিক শিরোনামে ভাগ করেছেন, সেগুলো হলো:
ক. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার প্রয়াস ও মূল্যায়ন;
খ. অবরুদ্ধ দেশ;
গ. প্রবাসী সরকার ও সঙগঠন ইত্যাদি;
ঘ. বিদেশীর দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধ;
ঙ. মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন;
চ. জেলা বা শহর পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ;
ছ. গণহত্যা;
জ. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন এসব বিভাজন পূর্ণাঙ্গ নয় বলে আরও কিছু সঙযোজন এনে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থপঞ্জি প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন [২]। তা হলো:
ক. মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
খ. মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক ইতিহাস রচনার প্রয়াস বা মূল্যায়ন;
গ. প্রবাসী সরকার ও প্রবাসে বাঙালির প্রতিক্রিয়া;
ঘ. মুক্তিযুদ্ধে বৈদেশিক প্রতিক্রিয়া;
ঙ. পাকিস্তানি ও পাকিস্তনপন্থীদের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধ
চ. মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গন বা সশস্ত্র সঙগ্রাম;
ছ. অবরুদ্ধ বাঙলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ;
জ. দলিলপত্র ও আলোকচিত্র;
ঝ. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ;
ঞ. সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ;
ট. মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য বই ইত্যাদি।
এ সমস্ত বিভাজনে মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজের অবদানের কোনো উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা গ্রন্থসমূহ শ্রেণীবিন্যাস করতে গিয়ে মুনতাসীর মামুন এবঙ দেলোয়ার হোসেন এমন কোনো গ্রন্থ পাননি, যা মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান বিষয়ক। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখাগুলি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৭২-৭৫ সময়কালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু লেখালেখি হলেও ১৯৭৫-৯০ সাল পর্যন্ত এ বিষয়ে খুবই কম লেখালেখি হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর পুনরায় লেখালেখি শুরু হয় এবঙ ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিদিনই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখা বের হচ্ছে। কিন্তু এ সকল লেখাতেও নারী মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় অনুপস্থিত। এ পর্যন্ত রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ (যেগুলো পাঠের সুযোগ হয়েছে) নারীর ভূমিকা যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তা নিম্নরূপ:
ক. কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত পনেরো খণ্ডের দলিলপত্রের [৩] তের হাজার পৃষ্ঠা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের উপর তেমেন কোনো আলোচনা স্থান লাভ করেনি। শুধু অষ্টম খণ্ডে কিছু নির্যাতিতা নারীর সাক্ষাৎকার রয়েছে, যা থেকে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক সুদীর্ঘ নয় মাসব্যাপী এদেশের নারী সমাজের উপর যে বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিক অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড সঙঘটিত হয়েছে তার বিবরণ পাওয়া যায়।
খ. ফোরকান বেগম তাঁর রচিত গ্রন্থে [৪] তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে অঙশগ্রহণের মাধ্যমে যে অবদান রেখেছেন, তা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন। তবে এ গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়িত না হলেও মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান মূল্যায়নের প্রাথমিক প্রয়াস বলা যায়।
গ. তপন কুমার দে তাঁর রচিত গ্রন্থে [৫] বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো, তা কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
ঘ. শহিদ জননী জাহানারা ইমাম তাঁর রচিত গ্রন্থে [৬] মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকার ঘটনাবলী দিনলিপি আকারে উপস্থাপন করেছেন। পহেলা মার্চ, ১৯৭১ থেকে শুরু করে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত তিনি ঘটনাবলী তুলে ধরেছেন। এই গ্রন্থটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ফ্রেমের প্রাধান্য থাকলেও গেরিলা অপারেশন, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও পাকবাহিনীর অমানবিক নির্যাতন নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। তবে তাঁর গ্রন্থে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বা মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের কথা বিশদভাবে উঠে আসেনি।
ঙ. বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর রচিত গ্রন্থে [৭] দেশের ভিতর থেকে মুক্তিযুদ্ধকে প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। আলাদা শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজের অঙশগ্রহণের কথা বর্ণনা না করলেও তাঁর ডায়রিতে মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজের সক্রিয় অঙশগ্রহণের চিত্র তুলে ধরেছেন।
চ. বেগম মুশতারী শফী তাঁর রচিত গ্রন্থে [৮] চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ সঙগঠিত হবার প্রাক্কালের ইতিহাস তুলে ধরেছেন গুরুত্বপূর্ণ দিকের অবলোকনে। ব্যক্তিগত জীবনের আখ্যান পেরিয়ে মুজিবনগর সরকার ও স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে সঙশ্লিষ্ট নারী-পুরুষের মুক্তিযুদ্ধে অঙশগ্রহণের নিরপেক্ষ বিবরণ দিয়েছেন। এছাড়া এখানে ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।
ছ. বেগম মুশতারী শফী রচিত অপর গ্রন্থে [৯] মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের সঙগ্রামী নারীদের সাহসী অবদানের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যদিও চট্টগ্রামের গ্রামগঞ্জের নারীদের নানা ভূমিকা থাকলেও সবকিছু এই গ্রন্থে লেখকের পক্ষে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। তারপরও তাঁর এই অঞ্চলভিত্তিক লেখা গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধে নারীর সাহসী অবদানের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জ. সাইদুজ্জামান রওশন, তুষার আবদুল্লাহ সম্পাদিত গ্রন্থে [১০] মুক্তিযুদ্ধে অঙশগ্রহণকারী কিছু নারীর স্মৃতিচারণমূলক অভিজ্ঞতার বর্ণনা থাকলেও এখানে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।
ঝ. ফরিদা আক্তার সম্পাদিত গ্রন্থটি [১১] তার নামকরণেই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তবে এই গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এ গ্রন্থের আলোকেই মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের ক্ষীণ উপস্থাপনের একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। আশ্চর্য হলেও সত্য, ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থেও তিনি কী যুক্তিতে ‘মহিলা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। স্মৃতিচারণমূলক অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত এ গ্রন্থে কতিপয় নারী মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকা ফুটে উঠলেও, তা কোনো সামগ্রিক রূপ ধারণ করেনি।
উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধে নারীরা যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, সে বিষয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ কিঙবা প্রবন্ধসমূহের কোনোটিতেই সামগ্রিক অর্থে গবেষণা বিচারে নারীর ভূমিকা উঠে আসেনি। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের প্রশ্নে অধিকাঙশ ক্ষেত্রেই সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে বিক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে, কিন্তু গবেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে গৃহীত হয়নি তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো সিদ্ধান্ত। ২০০৭ সালে বাঙলা একাডেমি শাহনাজ পারভিনের একটি গ্রন্থ [১২] প্রকাশ করে, যেখানে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আন্দোলনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদানের আলোচনা করা হয়, এবঙ তার আলোকেই আসে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের বিষয়টি। সন্দেহ নেই, লেখক যথেষ্ঠ পরিশ্রম করেছেন এবঙ চেষ্টা করেছেন যথাসাধ্য মূল বিষয়গুলো তুলে আনতে, কিন্তু এর জন্য গ্রন্থটির আকার যা হবার কথা ছিলো, তা হয়নি। ফলে অনেকক্ষেত্রেই লেখককে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে নয়, লেখককের বিবেচনাবোধের জায়গা থেকে। ফলে সম্পূর্ণ না হলেও আঙশিক, কখনও কখনও খাপছাড়া ইতিহাস উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান সম্বন্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে নারীর কী অবদান, এবঙ কোন কোন ক্ষেত্রে তা কীভাবে প্রভাব ফেলেছিলো, তার একটি বিস্তারিত লেখা তৈরি করাই এই নিবন্ধটির উদ্দেশ্য। ঠিক কী কী বিষয় নিয়ে সামনে আলোচনা করবো, তা এখনই ঠিক উল্লেখ করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ- পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে তথ্য ও গবেষণালব্ধ গ্রন্থের উপর।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন আলোকোজ্জ্বল এবঙ বর্ণিল আখ্যানে আকাশমুখী, তেমনি এ মহাসঙগ্রামে নারীর অঙশগ্রহণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুলিখিত গবেষণা না থাকায়, তার আভার খামতি থেকে যায়, সন্দেহ নেই। সেই তাড়না থেকেই এ যাত্রা; জানি না কতোদূর যেতে পারবে লেখাটি।
তথ্যসূত্র
১. মুনতাসীর মামুন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বই’, একুশের প্রবন্ধ ৯০ (ঢাকা: বাঙলা একাডেমি, ১৯৯০), পৃষ্ঠা: ২২-৪১
২. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জী (ঢাকা: মূলধারা, ১৯৯১), পৃষ্ঠা: ১৬-১৭
৩. হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাদিত), বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ঢাকা: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তথ্য মন্ত্রণলালয়, ১৯৮৪)
৪. ফোরকান বেগম, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নারী, (ঢাকা: সুমি প্রিন্টিঙ প্রেস এন্ড প্যাকেজিঙ, ১৯৯৮)।
৫. তপন কুমার দে, ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজ’, (ঢাকা: নিউ এজ পাবলিকেশন্স, ১৯৯৮)
৬. জাহানারা ইমাম, ‘একাত্তরের দিনগুলি’ (ঢাকা: সন্ধানী প্রকাশনী, ১৯৮৬)
৭. সুফিয়া কামাল, একাত্তরের ডায়রী, (ঢাকা: জ্ঞান প্রকাশন, ১৯৮৯)
৮. বেগম মুশতারী শফী, স্বাধীনতা আমার রক্ত ঝরা দিন (ঢাকা: অনুপম প্রকাশনী, ১৯৯২)
৯. বেগম মুশতারী শফী, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী (চট্টগ্রাম: প্রিয়ম প্রকাশনী, ১৯৯২)
১০. সাইদুজ্জামান রওশন, তুষার আবদুল্লাহ (সম্পাদিত), একাত্তরের অগ্নিকন্যা, (ঢাকা: অনুপম প্রকাশনী, ১৯৯৭)
১১. ফরিদা আক্তার সম্পাদিত, ‘মহিলা মুক্তিযোদ্ধা’, (ঢাকা: নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, ১৯৯৪)
২৫ আশ্বিন, ১৪২০
মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান নিয়ে তেমন কোন গবেষণা না হবার কারন খুব ই সহজ। এর কারন আকাশ মালিকের দুটি ভিডিও লিঙ্ক থেকেই বুঝা যায়,এক নারী মুক্তিযোদ্ধা বলছেন তার পরিবার তাকে গ্রহন করতে অপরাগতা প্রকাশ করে। আর ভিডিও লিঙ্ক দুটি আমি নিজেও এই প্রথম দেখলাম এবং ফেবু তে শেয়ার করলাম,লিঙ্ক দুটিতে দর্শকের পরিমান খুব ই কম। কাধে রাইফেল নিয়ে যে নারী যুদ্ধ করল সে অপাংতেয় হয়ে গেল!!, এই ত আমাদের ধর্ম। নারী খুব বেশী হলে হাসপাতালে নার্সের কাজ করতে পারে,যুদ্ধ ক্ষেত্রে কেন!!, এই আমাদের মানসিকতা। তাই মনে হয় কোন গবেষক নারীর যন্ত্রনা আর বাড়াতে চান না গবেষণা করে। অসাধারন একটি লেখার জন্য শনিবারের চিঠিকে ধন্যবাদ।
মুক্তিযুদ্ধের নারীর কথা আলাদা করে কেন গবেষনা করে বার করতে হয় সেটায় অবশ্যই চিন্তা করার আছে।
এখানে দেখি অনেকে পুরুষতন্ত্র, ধর্ম এসব নিয়ে বেশ আলোচনা করেছেন। এসবের ভূমিকা অবশ্যই আছে, তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ও প্রাসংগিকভাবে আলোচনার আছে। সেটা হল আমাদের সমাজের তীব্র শ্রেনীবিভাগের প্রভাব, সেটা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও এর প্রভাব দেখা যায়।
রূমী, আজাদ এরা হল আমাদের তরুন প্রজন্মের কাছে আইকনিক মুক্তিযোদ্ধা। এনাদের অবদান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কোন উপায় নেই। সাথে সাথে এও সত্য যে ওনাদের মত বীর মুক্তিযোদ্ধা আরো শত শহীদ হয়েছেন। তারা আইকনিক হতে পারেননি শ্রেনীগত কারনেই। সাধারন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের নিয়ে লেখালেখি হলেও সেগুলি শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মাঝে সেভাবে প্রভাব রাখবে না।
তারামন বিবি নিম্নবিত্ত পরিবারের না হয়ে সাধারন মধ্যবিত্ত হলেও কি তাকে খূঁজে পেতে ২২ বছর লেগে যেত? আমার মোটেও তেমন মনে হয় না।
শনির চিঠির এই লেখার উদ্দেশ্য মনে হয় না এসব দিক আলোচনা করার জন্য।
মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে করতে বললে আমার প্রথমেই মনে পড়ে যায় পিরোজপুরের ভাগিরথির কথা। তার কথা যারা জানেন না তারা এখানে পড়ে নিতে পারেন।
বহুদিন পর শনির লেখা ভাল লাগল, ভূমিকার পর আশা করি সহসাই মূল পর্ব আসবে। এরপর আশা করি মুক্তিযুদ্ধে মহিলা রাজাকারদের ভূমিকা নিয়েও লেখা হবে 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধে ‘মহিলা রাজাকার’? ভালো কথা বলছেন তো। আমি চেষ্টা করবো।
@শনিবারের চিঠি,
সিরিয়াসলি চেষ্টা করেন। ফেসবুকে সামান্য ঘোরাঘুরি করলেই বোঝা যায় বর্তমান প্রজন্মের ছাগ সম্প্রদায়ে মহিলাদের অবদান। সে আমলেও নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ছিল।
@আদিল ভাই,
ফেসবুকে আমিও এই সব মহিলাদের কিছু মন্তব্য পড়েছিলাম, গো হুজুর কে নিয়ে করা এক পেজে। পেজটি বর্তমানে অচল হয়ে গেছে। তবে এরা কি আসলেই মেয়ে? হাজার হোক ফেসবুক বলে কথা, কে মেয়ে আ কে ছেলে চিনা বড় মুশকিল। একেক জনের ১০/১২ টা করে আইডি থাকে কিনা!!
@আদিল মাহমুদ,
ফেসবুক অনলাইনে আসলেই ঠিক নাই। তবে নিশ্চিত জেনুইন জেনানা ছাগুও বেশ কিছুই আছে।
রিয়েল লাইফেও এত দেখছি যে এনাদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। আগে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবিরের পুরুষ সদস্য ছিল না বা থাকলেও গোপনে থাকত। প্রকাশ্যে ততপরতা চালাতো ছাত্রী সংস্থা, যেমন আমাদের সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এই অবস্থা ছিল।
@আদিল মাহমুদ,
এইটা ভাই খুবই সঠিক বলেছেন। রিয়েল লাইফে জেনানা ছাগুরাই কেন জানি একটু বেশি তৎপর থাকে, কারন মা বোনদের মগজ ধোলাই করতে তো আর এদের জুড়ি নাই। পুরুদের প্ল্যান্ট করা যে কোনই সন্দেহ নাই।
আপনি তাহলে ডাক্তার?তাইত বলি যে আপনাকে এত কম লেখেন কেন। ডাক্তারদের ব্যস্ততা আসলেই ভয়াবহ জিনিস।
আমার নিজের ২টা বন্ধু ডাক্তার, এরা যেহেতু আমারই বয়েসী মানে জুনিয়ার টাইপ, তাই দেখি যে এরা কাজের চাপের চোটে অনেক সময়ে খাওয়াদাওয়ার টাইমও পায় না। এরাই অবশ্য সিনিয়ার হয়ে গেলে বাংলাদেশে ভাল আয় করবে, কিন্তু জুনিয়ারদের অবস্থা সত্যি করুন! তবু এদের কপালে খালি গালিগালাজ জোটে। (N)
কানাডায় কেমন ব্যস্ত থাকেন ডাক্তার রা, সেইটা অবশ্য জানি না। দেশের বাইরে শুধু মাত্র ভারত ছাড়া আর কোথাও যাই নি, আর তেমন কিছু জানিও না।
@অর্ফিউস,
আমি ডাক্তার নই হে। চকচক করিলেই সোনা হয় না কিংবা ……ওয়্যার পরিলেই যেমন সুপার ম্যান হওয়া যায় না তেমনি মেডিকেল কলেজে ঘোরাঘুরি করিলেই ডাক্তার হওয়া যায় না। ঢামেক এ দুই মাস ক্লাস করে চিরতরে লম্বা দিয়েছিলাম, এইই হল আমার ডাক্তারির ইতিহাস।
সে সময় সেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন পড়েছিল। শিবিরের হয়ে ক্যাম্পেন করার মতও পুরুষ সদস্য ছিল না, ছিল সবই ছাত্রী সংস্থা। ওনারাই বোরখার আড়াল থেকে গ্যালারীতে তীব্র বিতর্ক করতেন।
শিবির রগ কাটা দল হলেও আগেকার দিনে তাদের নেটওয়ার্ক এত ব্যাপক ছিল না। আগে ছিল তারা পুরাই আঞ্চলিক সংগঠনের মত। রাজশাহী আর চিটাগাং এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তাদের ক্যান্টনমেন্টের মত। উত্তর বংগে তারা কিছুটা শক্তিশালী ছিল। তখন সকলে জানত যে পুরা দেশে শিবিরের হয়ে হামলাবাজির পেশীশক্তি আমদানী হত চাপাই নবাবগঞ্জ থেকে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে তাদের কোন পাত্তাই ছিল না।
@আদিল ভাই,
ভালই করছেন, মানে বাইচ্যা গেছেন!!
অথচ আজ দেখেন ঢাকায় শিবির আর তাদের সাইডকিক হেফাজত কি করছে। দেশের আর কিছু থাকল না। দেশ ছাড়তে পেরে ভালই করেছেন। এইবার জামাত বি এন পি ক্ষমতায় গেলে হেফাজত আরো বাড়বে, তখন ইনশাল্লাহ শরিয়া কায়েম হতে আর বাকি থাকবে না।ব্যপক ডরে আছি!! 🙁 ভাবতেসি দাড়ি রেখে দেব, কারন কোকাকোলার বোতলের সমান তালেবানী দাড়ি করতে মেলা সময় লাগবে।
সেক্ষেত্রে শরিয়া কায়েম না হলেও সমস্যা নেই, দাড়ি রাখার সুবাদের মৌলানা খেতাবও পেয়ে যেতে পারি, আর তার পর থেকেই মিলাদের ঘন ঘন নেমন্তন্ন :))
@আদিল ভাই,
তাহলে রগ কেটে দিত কারা? :-O
★১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ কেমন ছিলো ?
★নারীদের অংশগ্রহণের বিষয় টি কি ইতিহাসে যথার্থভাবে স্থান পেয়েছে ?
উওর দাও
@আদিল মাহমুদ,
এই লেখায় সেটা টানার কি কোন প্রয়োজন আছে? রোকেয়া কবীর, মুজিব মেহদী ‘মুক্তিযুদ্ধ ও নারী’ বইয়ের সমাপ্তি টেনেছেন এভাবে-
এই নোটটি গুরুচণ্ডালি ডটকম-এর “১০৭১: মুক্তিযুদ্ধের কথা” নামক সংকলনে যুক্ত করা হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ।
http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1355060761627&contentPageNum=6#.UllcutLTzIc
*১৯৭১
রোকেয়া কবীর ও মুজিব মেহদীর মুক্তিযুদ্ধ ও নারী বইটা খতিয়ে দেখতে পারেন।
@তনু হালদার, বইটার হার্ড কপি মানে লিখিত আকারে কোথায় পাওয়া যাবে জানেন কি? জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন!!আমি সংগ্রহে রাখতে চাই বইটা!!
@অর্ফিউস, মানে কাগজে লিখিত, নেটে না।
@অর্ফিউস,
বইটার সফট কপি একবার ডাউনলোড মেরেছিলাম, কিন্তু ফন্ট সমস্যার জন্য পড়তে পারিনি। চেয়ে লাভ নেই, দিতেছি না। গাঁটের পয়সা খরচা করে পড়েন।
@আদিল মাহমুদ, হেহেহে ভাইরে, গাঁটের পয়সাই তো খরচ করতে চাইতেসি, কিন্তু কোথায় করব?আমি তো সফট কপি চাচ্ছি না, আমি কাগজে লেখা বই কিনেই পড়তে চাচ্ছি, কিন্তু প্রকাশনা নাম জানি না। জানা থাকলে জানিয়ে দেন না, কিনে নিয়ে পড়ি 😀
@অর্ফিউস,
মুজিব মেহদী ভাই ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করেন ভালই। ওনাকেই সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আর সেই লিঙ্কেও তো পাবার সোজা উপায় আছে মাত্র ৩০ টাকা খরচ করে।
সর্পমানবীর বস্তুনিষ্ঠ কিচ্ছা আপনার ভাল লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম। আমার সর্প জীবনের ছবি এখান আর পাচ্ছি না। আমু ব্লগ বছর দুয়েক আগে মহা সমারোহে ফর্ম্যাট বদল করে। সেই বদলীর মূল্য হিসেবে পুরনো ছবি/ভিডিও অনেকই গায়েব হয়ে গেছে।
@আদিল ভাই,
আমি মফঃস্বলে থাকি। এখানে ইন্টেরনেট থেকে কেনাকাটার ব্যবস্থা নেই। দেখি ঢাকা থেকে কাউকে দিয়ে আনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব।
আহা ভেরি স্যাড কথা। জ্বিন হয়ে জ্বিনের ওঝার নানা রুপের ছবি দেখে চিনে রাখা উচিত ছিল। না হলে কখন যে নাকে মরিচ বাটা দিয়ে বসেন কে জানে :)) :hahahee:
@আদিল ভাই, একটা অফ টপিক কথা কই শুনেন, আপনার লিঙ্ক ফলো করে আমার ব্লগের সেই পোষ্ট মানে সর্প মানবী আর কি, মন্তব্য পড়তে পড়তে হাসিতে কাশি হইসিল, এবং পেট ব্যথা করতেসিল । কিন্তু আপনার নিজের সাপ হয়ে যাবার ছবিটা যে দেখা যায় না!!! ঘটনা কি? ওইটা দেখার ব্যবস্থা কি? না দেখলে যে জীবন ৪ আনা মাটি হয়ে যাবে :))
হায়রে পুরুষ, হায়রে সমাজ, এ কেমন অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা?
httpv://www.youtube.com/watch?v=AgxFZQkLKAo
httpv://www.youtube.com/watch?v=AJBuPa1Byg8
@আকাশ মালিক, হায়রে পুরুষ না বলে হায়রে সমাজটাই আমার বেশি ভাল লাগে।পুরুষও কিন্তু আমাদের সমাজের একধরনের বলি। যদি আপনাকে ছোট বেলা থেকেই বুঝানো হয় যে আপনি রাজা সেখানে বড় হবার পর এই মানসিকতা পরিবর্তন করা খুব কঠিন। তবু কিছু পুরুষ এটা করতে পারেন বেশিরভাগই পারেন না।
কাজেই আমি শুধু এই সমাজটাকে, সোজা কথায় সীমাহীন পুরুষতন্ত্র কে দোষারোপ করব, যার বলি নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও, যদিও একটু ভিন্যভাবে।
@অর্ফিউস,
মুক্তিযুদ্ধ ও নারী বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন আমি কেন পুরুষ ও সমাজকে ধিক্কার দিলাম। আসলে এর পেছনে আরো একটা কারণও আছে, সেটা হলো ধর্ম। তাই একই সাথে ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ রচয়ীতাদেরও ধিক্কার দেই। বইটির শেষের দিকে আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এখানে কাঁকন বিবির বীর প্রতীক উপাধি প্রাপ্তির উল্লেখ নেই। সম্ভবত বইটি প্রকাশ হয়েছিল ৯৬ সালের পরে তাই। পুরুষ, ধর্ম ও সমাজ যুগে যুগে কীভাবে নারীকে তুচ্ছজ্ঞান করেছে, নারীর অবদানকে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তা অল্প কথায় বইটিতে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও নারী তথ্য-গবেষণাবহুল একটি বই, না পড়ে থাকলে সংগ্রহ করে পড়ে নিন, ভাল লাগবে।
@আকাশ মালিক,
এটাই হল প্রধান সমস্যা। পৃথিবীর সব ধর্ম প্রনেতা যেহেতু পুরুষ, আর সবাই জন্মেছেন মোটামুটি প্রাগৈতিহাসিক যুগে ( যাদের বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আজকাল!) কাজেই এইসব আদিম যুগের লোকদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা বৃথা। আর সবচেয়ে খারাপ লাগে যে এদের মধ্যে যে বিশেষ শাখাটি যারা কিনা চিন্তা চেতনায় এখনো আদিম পর্যায়েই রয়ে গেছে।
বইটা কি বাজারে পাওয়া যাবে? তাহলে একটা কিনে নেব। এমন বই মফঃস্বলে দেখি না।ঢাকায় যাওয়া পড়লে অবশ্যই কিনে নেব। বইটা কোন প্রকাশনা প্রকাশ করেছিল জানা থাকলে জানাবেন দয়া করে।
৯৬ সালে আমি সবে মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ি মাত্র ১৪ বছর বয়স তখন আমার,কাজেই তখন এইসব বইয়ের তেমনটা খবর আসতো না, বুঝেনই তো টিন এজার রা এইসব বইয়ের চেয়ে মাসুদ রানার বই পড়তেই পছন্দ করে বেশি!!
আচ্ছা লেখক যে বইগুলার রেফারেন্স দিয়েছেন তার মধ্যে ৪. ফোরকান বেগম, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নারী, (ঢাকা: সুমি প্রিন্টিঙ প্রেস এন্ড প্যাকেজিঙ, ১৯৯৮)। এইটাও আছে। আপনি কি এই বইটাই বোঝাতে চেয়েছেন? নাকি অন্য কোন বই?
@আকাশ মালিক, আমার সত্যিই কিছু বলার নেই।
একজন অসাধারণ নারীর নাম এখানে পেলাম না যার ঐতিহাসিক এবং অবিস্মরণীয় ভুমিকা না থাকলে আজ বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লিখতে হত। যিনি একাই পরাশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে , অবিচল থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মে ধাত্রীর ভুমিকা পালন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে যার ভুমিকা নিয়ে মহাকাব্য রচনা করা যায় , সেই ইন্দিরা প্রিয়াদর্শিনী গান্ধীকে এই লেখায় খুুঁজে পেলাম না।
[img]http://www.images99.com/i99/02/24022/24022.jpg[/img]
@সংশপ্তক ভাই,
এখানে লেখক হয়ত সেটা নিয়ে না ভেবে শুধু বাংলাদেশী নারীদের নিয়েই আলাপ করতে চেয়েছেন। তবে সত্যি যদি ইন্দিরাকে আনতে হয়, তবে মনে হয় সত্যি শুধু উনাকে নিয়েই একটা মহাকাব্য হতে পারে! কারন মহান মুক্তি যুদ্ধের লড়াই টা ছিল খুবই অসম, সু সংগঠিত পাকি কসাই আর তাদের পা চাটা কুত্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা এত সহজ ছিল না আমারদের স্বল্প মেয়াদের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তি যোদ্ধাদের পক্ষে। এ ব্যাপারটা আপনি আমার থেকে হাজারগুন ভাল বুঝবেন!
কিন্তু তবু বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের আত্মত্যাগের কথা সামনে তুলে আনতে চান না।
জাতি হিসাবে আমরা যে কি পরিমান দৈন্য এই হীনমন্যতাই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।কাউকে তার প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে আমরা কেন পিছপা হই সেটা আমার জানা নেই। তবে সাধারন বুদ্ধিতে এটা বুঝি যে আমারা যদি এই মানসিক দৈন্য ঝেড়ে ফেলতে না পারি, তবে মুখে প্রগতিশীলতার বানী শুধু ফাঁকা বুলিই মনে হবে!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কথা উল্লেখ করার জন্য। এমন আরো অনেক ভারতীয় সেনাও আমাদের মহান ৭১ সালে শহীদ হয়েছিলেন, অথচ আমরা তাদের সেই প্রাপ্য সম্মানটুকুও দিতে নারাজ।
@সংশপ্তক, সহব্লগার অর্ফিউস উত্তরটা দিয়েছেন। উনাকে নিয়ে কেবল নয়; আমার এ রকম অনেকগুলো লেখা লেখার ইচ্ছে আছে।
@সংশপ্তক, (Y) (Y)
বুঝতে পারি না, আমরা যখনই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলি প্রায়শই কেন আমাদের অধিকাংশই ইন্দিরা গান্ধীর অবদান পাশ কাটিয়ে যাই?
অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম।
কারণ সম্ভবত একটাই আর তা হল আজো এই দেশে নারীদের ২য় শ্রেনীর নাগরিক বলে মনে করা হয়, কখনও সোজাসুজি ভাবে, আবার কখনও মুখে সমানাধিকারের বুলি আউড়ে কিন্তু মনের গহীনে তার বিপরীত ধারনাটা লালন করা ফলে। আবার অবচেতন মনেও অনেকের এই ধারনাটা কাজ করে থাকতে পারে হয়ত।
পুরা লেখাটাতেই এমন অনেক কিছু চিন্তার খোরাক আছে, কিন্তু, সে ক্ষেত্রে পুরো লেখাটাকেই উদ্ধৃতি আকারে তুলে ধরতে হবে।
যাই হোক , অসাধারন লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা লেখক কে। (F)
@অর্ফিউস, অনেক কৃতজ্ঞতা। আমি একটি বিষয়ে খুব আহতবোধ করেছি যে, অধিকাঙশ লেখককেরই নারী মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি বা মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বলার আয়োজন-প্রয়োজন কোনোটাই চোখে পড়েনি। অন্যদিকে নারী লেখকগণ কী অজানা কারণে জানি, লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ্যকে বড়ো করে তুলেছেন।
শনি দা,
নিচের টাইপো দুটো এডিট করে নিন।
মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে আমাদের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে
ব্যক্তিগত জীবনের আখ্যান পেরিয়ে সুজিবনগর সরকার ও স্বাধীন বাঙলা বেতার
@আকাশ মালিক, ঠিক করে দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ।
জাতীয়তা বোধের দৃষ্টি ভঙ্গীতে তালিকা দিয়েছেন। এখান আপনি যদি একটি একাডেমিক আকর এর দৃষ্টি ভঙ্গীতে মুক্তমনে তালিকা করতে চান আরেকটি অংশ যোগ করতে হবে – যেখানে বাঙ্গালী দের আত্ম-সমালোচনা থাকবে – যেখানে থাকবে বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধা এবং কতিপয় বাঙ্গালীদের অন্যায় আচরণ, সংখ্যায় কম হলেও এমন হয়েছে। আরও থাকবে কিভাবে যুদ্ধের পর পর মুক্তিযুদ্ধকে সবাই হাইজ্যাক করতে চেয়েছে নিজেদের স্বার্থে।
কতিপয় রাজনৈতিক সদস্যরা দেখাতে চেয়েছে এটা একমাত্র তাদের আন্দোলনের ফল যেন দেশটা তারা কিনে নিয়েছে।
সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্য মনে করেছে এটা মূলত যৌথ এলাইড কনভেনশনাল অপারেশনের ফসল যার ফলে বীরশ্রেষ্ঠ মাত্র সাতজন যাঁদের সবাই নিয়মিত বাহিনীর সদস্য – এক লক্ষের ও অধিক গণ বাহিনীতে কেউই বীরশ্রেষ্ঠ পদকের উপযুক্ত নেই এটাও বিশ্বাস করতে হয় । পদক দানের এমন উলটা পালটা কাজের জন্য এক সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধের সবচাইতে কঠিন যুদ্ধে বাংলাদেশের অংশের নেতৃত্ব দিয়েও পদক নিতে অস্বীকার করেছেন – কেননা তার অধীন মুক্তি বাহিনীর সাধারন সদস্যদের ন্যায্য মূলয়ন করা হয়নি।
অন্যদিকে, কমিউনিস্টরা চেয়েছে সাধারণ মানুষের মরার অবস্থায় আরেকটি খাঁড়ার ঘা বসিয়ে মাওবাদী আন্দোলন চালাতে।
আমাদের দেশের যুদ্ধ নয় মাস হয়েছে কাগজে কলমে – তবে খেয়াল করলে দেখা যাবে এর অপারেশনাল ব্যাপ্তি কিন্তু আরও কম – ছয় থেকে সাত মাস। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
আমি তিনজনের জানি নারী মুক্তি যোদ্ধা –
ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম
তারামন বিবি
কাঁকন বিবি
আশাকরি আপনার লেখার মাধ্যমে আরও জানতে পারব।
@সংবাদিকা,
নিবন্ধটির উদ্দেশ্য নিয়ে লেখক লিখেছেন-
আরো লিখেছেন-
তো আপনি যে দিকে ইঙ্গীত করছেন, তাতে লেখাটি তার মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক অন্তহীন ত্যানা পেচানীতে রূপ নিবে। আপনার আসল টার্গেটটা হলো অন্যত্র। কে, কারা বা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা দেখাতে চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ একমাত্র তাদের আন্দোলনের ফল, কারা দেশটা কিনে নিয়েছে, যুদ্ধের পরে কোন মুক্তিযোদ্ধা কার সাথে কোথায় অন্যায় অবিচার করেছে, এ সব নিয়ে আপনি আলাদাভাবে একটা লেখা ছাড়ুন আমরা পড়ে কৃতজ্ঞ হই।
@আকাশ মালিক,
লক্ষনীয়, আমি আসলে উপরোক্ত প্যাড়ার উপর ভিত্তি করে প্রথম কয়েকটি মন্ত্যব্য করেছি। আমি মোটেও অন্য দিকে আলোচনা ফিরাতে চাইনি।
আরও লক্ষনীয় আমি লেখকের উদ্দেশ্য বলেছি – আশাকরি আপনার লেখার মাধ্যমে আরও জানতে পারব।
@আকাশ মালিক, সংবাদিকার উদ্ধৃতি নিয়ে আমিও একটা লেখা আশা করব আপনার কাছ থেকে।
আমিও অনুরোধ করছি আন্তরিক ভাবেই যে, এ বিষয়ে আপনি যদি একটা লেখা দিতেন।
এইসব ব্যাপারে আপনি বেশ ভাল লেখেন, আমি দেখেছি আগেও। উদাহরণ স্বরূপ সাতক্ষীরার তান্ডব নিয়ে আপনার লেখাটি আমার মনে দাগ কেটেছিল, যদিও মনে হয় না আমি সে সময় মুক্ত মনাতে ছিলাম, শুধু মাঝে মাঝে পড়তে, নিয়মিত নয়।
@সংবাদিকা,
উপরের তিনজনের দুইজন তো বীর প্রতীক। আর আপনার মত মানুষই যখন মাত্র তিনজনের কথা জানেন তখন বুঝতে হচ্ছে উপরের লেখাটির কত প্রয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান বিষয়ক তথ্যের সীমাবদ্ধ দূর করতে এগিয়ে আসার জন্য শনিবারের চিঠির কাছে কৃতজ্ঞ। ভূমিকা পর্বের পরবর্তীর জন্য অপেক্ষায় থাকব।
@গীতা দাস,
আর আমাদের সিলেটের কাঁকন বিবি? খাসিয়া মেয়ে, জন্মসুত্রে বাঙালি নন। (এটা কি তার বিলম্বে বীর প্রতীক উপাধি পাওয়ার কারণ হতে পারে?) তিনি আমাদের ছোট বেলার আড্ডার গল্পের দস্যুরাণী ছিলেন। একটি লেখা থেকে জানি, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বীরপ্রতীক উপাধি দেন। [img]http://i1088.photobucket.com/albums/i332/malik1956/kakonbibi_zpsa21cdb13.jpg[/img] ২০০৬ সালে ভারতের সেনাবাহিনী কাঁকন বিবিকে কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামি দুর্গ মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করে।
@সংবাদিকা, আপনার মন্তব্যটি আমি মন দিয়ে পড়েছি। সহব্লগারগণ উত্তর দিয়েছেন। আমি ভাবছি, তবে এই সিরিজটা সম্পূর্ণ করা নিয়ে ভাবছি।
এটা একটা নাম হলো? বইটি পড়তে হবে। বহুদিন পরে এসে আধমরা মনটাকে যেন জাগিয়ে দিলেন। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির গর্ব, শ্রেষ্ট ইতিহাস। যতবার নীলিমা ইব্রাহিমের বই থেকে মিসেস টি নিয়েলসনের সেই সাক্ষাৎকারটি পড়েছি , ততবারই চোখের জলে গাল ভেসেছে। মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তবু জানিনা কেন কিসের টানে এমন হয়। কতবার যে এই সাক্ষাৎকারটি দেখেছি তবু তৃষ্ণা মেটেনা। এখানে আবার দিলাম।
httpv://www.youtube.com/watch?v=qfryIrKdXGU
@আকাশ মালিক, আসলে ‘মহিলা’ শব্দটির ব্যবহার ‘জনাবা’র মতোই হয় সর্বত্র। না বুঝে। মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির ভেতরে লিঙ্গান্তর করাটাও একটা বদ-মানসিকতা। চেতনা যেমন দুরন্ত দুর্বার এবঙ শাশ্বত, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ এবঙ মুক্তিযোদ্ধা। সাক্ষাৎকারটি আমার দেখা ছিলো না, সত্যিই দেখে খুব ভালো লাগলো।
ভালো লাগানোর কৃতিত্বটা কিন্তু আপনার। শুভ কামনা।