অগাষ্ট মাসে চট্রগ্রামে একটি ছোট হোটেলে নাস্তা করতে বসে পরোটার সাথে ডিম মামলেট চাইলাম। ওয়েটার বলে মামলেট হবে না ওমলেট খান। আমি অবাক কেন হবে না? সহজ উত্তর পেয়াজের দাম বেশি।পেয়াজের দাম তখন ৭০/৮০টাকা। কেন হঠাৎ পেয়াজের দাম বেড়ে গেল জানি না। কিন্তু বেড়ে গেছে এটা বাস্তব।
আরো কিছু উদাহরণ দেখে নিতে পারি। এক সময় গ্রামীনফোন কথা বলার জন্য ১০টাকা প্রতি মিনিট কেটেছে। তার পর মোবাইল কোম্পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা শুরু হয় তারা কলরেট কমাতে থাকে। আমরা গ্রাহকরা ভালই প্রতিযোগীতায় কিছুটা সুযোগে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। আর বাহবা দিতে থাকি এই তো মুক্ত বাজারের সুবিধা। কিন্তু এই সুবিধা খুব বেশিদিন থাকেনি। মোবাইল কোম্পানি গুলো জোট বেঁধে একটা এসোসিয়েশন তৈরী করে নেয়, সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা সর্বনিম্ন রেট ধার্য করে দেয়।
একদিন সকালে দোকানে নাস্তা করতে গিয়ে দেখি পরোটার দাম আট টাকা। ৫টাকা থেকে ৬টাকা, ৬টাকা থেকে ৮ টাকা। আমি তার পর একে একে হোটেল পরিবর্তন করতে থাকি। কিন্তু অবাক বিষয় সব হোটেলেই পরোটা ৮টাকা করে। জানতে পারলাম হোটেল এসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা এখন থেকে ৮টাকা করে পরোটা বেঁচবে,৭টাকা করে সিঙ্গাড়া এবং ৮টাকা করে সমোচা। ভূক্তা হিসেবে আমি এখন ৮টাকা করে পরোটা খেতে বাধ্য হচ্ছি।
এক শিক্ষক তার বাসায় ছাত্র পড়ানোর সময় ঘোষনা দিলেন সামনের মাস থেকে সবাইকে জনপ্রতি ৬০০টাকা করে দিতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এর কম নেব না, ছাত্র জানতে চাইল কারা সিদ্ধান্ত নিলেন? এবার চতুর শিক্ষক তার ভুলটা বুঝতে পারলেন তার পর অন্য কথা অন্য কথা। আসল কথা হলো এই কলেজের কিছু শিক্ষক এক সাথে হয়ে ছাত্র পড়ানোর একটা নুন্যতম টাকা ধার্য করেছেন।এই শিক্ষকরা যেহেতু ব্যবসায়ী তাই অন্য ব্যাবসায়ী থেকে এই সিন্ডিকেটের বিষয়টা রপ্ত করে দুষের কিছু করেনি।
প্রশ্ন হচ্ছে প্রতিযোগীতার বাজারে আসলেই কি প্রতিযোগীতা হয়? হলে তা কি করে হচ্ছে? প্রতিযোগীতার জন্য দাম কমানোর উদাহরন হিসেবে প্রায়ই মোবাইল কোম্পানি গুলোর কথা শুনি। কিন্তু পক্ষান্তরে আমাদের দেশের ঔষধ কিন্তু প্রতিযোগীতা মূলক বাজারেই আছে তাদের কি অবস্থা? একই রকম দেখতে ওরস্যলাইন এসএমসি এবং এসএনসি । পার্থক্যটা ধরতে পারলেন? SMC এবং SNC । এমন অনেক কোম্পানিকেই একই পন্য উৎপাদনের অনুমুতি দেয়া আছে। একই সমপরিমান ওরস্যালাইনে সব উপাদান যদি সমান ভাবে দেয়া থাকে তবে কোম্পনি ভেদে তার দাম কি করে এত পার্থক্য হয় এবং একটার চেয়ে অন্যটার দাম অর্ধেক হতে পারে? অর্থাত প্রতিযোগীতায় টিকতে তারা পন্যের মান কমিয়ে দিচ্ছে। ঔষধের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের ব্যপারে যদি কোম্পানি গুলো প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের সাথে ধোকা দিতে পারে তাহলে অন্য পন্যগুলোর অবস্থা কোথায় আছে?
গত কয়েক দিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত নকল,ভেজাল,মেয়াদ উত্তির্ণ ঔষধ বিক্রি করার দায়ে কয়েকটি দোকানে সিলগালা করে দেয়, এবং ভেজাল ঔষধ জব্দ করে নেয়। কিন্তু ফল কি হলো?
“এই পরিস্থিতিতে দুপুরে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ঔষধ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যেসব ব্যবসায়ীকে জেল জরিমানা করা হয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত করতে তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগামী সাত দিনের মধ্যে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এখন উপায় কি?
মুক্তবাজারের যে সকল সুবিধার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা হচ্ছে বাস্তবে কি তাই আছে?
কয়েক দিন আগে সকল সিএনজি ও ফুলয়ে পাম্পের মালিকরা তাদের এসোসিয়েশনে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের পাম্প ধর্মঘটের ডাক দেয়। বন্ধ করে দেয় দেশের সব ফুয়েল পাম্প। কারন কি? তাদের কমিশন বাড়তে হবে।কোন একটা রাস্তার পরিবহন মালিক মিলে তাদের বাস বন্ধ রাখে তাদের ভাড়া বাড়াতে হবে? (হাসপাতালের ডাক্তার থেকে শিক্ষক সবাই এই এসোসিয়েশনের মাধ্যমে তাদের দাবী কিছু যৌক্তিক এবং বেশির ভাগ অযৌক্তিক দাবীর জন্য সরকারকে চাপ দিতে থাকে,বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষা এবং চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্র্ণ সেবা খাত।)
মুক্তবাজারে যে প্রতিযোগীতার স্বপ্ন আমরা দেখেছি আসলে সেখানে কতটুকু প্রতিযোগীতা কি আছে?
তার মানে কি মুক্তবাজার একটা নিদ্রিষ্ট সময় পরে আর মুক্ত থাকে না। তারা প্রতিযোগীতার বদলে সিন্ডিকেট করায় দক্ষ হয়ে উঠে। প্রতিদন্ধিতার বদলে তারা একে অন্যের সিন্ডিকেটের সহযোগী হয়ে উঠে। একটি গনতান্ত্রিক সরকারের সময় সরকার দলের প্রতিনিধিরা তাদের সমর্থকরা দেশে শক্ত অবস্থান থাকার পরেও যদি নানা রকমের এসোসিয়েশন করে বাজারকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে তবে এই সিন্ডিকেটকে কেবল রাজনৈতিক ভাবে দেখলেই হবে না,ভিন্ন ভাবে দেখতেই হবে। সহজ সূরে বলা যেতেই পারে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রন রাখতে পারছে না। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রন করতে গেলে ব্যবসায়ীরা বলবে তারা মুক্তবাজারে সুবিধা পাচ্ছে না। তারা ব্যবসা করতে পারছে না। বিশ্বব্যাংক চিৎকার করবে সরকার ব্যবাসয়ীদের উপর খবদরারি করছে…. ইত্যাদী ইত্যাদি।
যে সরকারই আসুক ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেটের ভেতর দিয়েই তাকে দেশ শাসন করতে হবে। ব্যবসয়ীদের সাথেই আঁতাত কর চলতে হবে। বিগত দুই বছর সেনা শাসনের সময়েও পন্যের দাম ঠিক রাখতে বিডিয়ার শপ খুলতে হয়েছিল। তার পরও পন্যের দাম ছিল নাগালের বাইরে। অতএব এই সিন্ডিকেটকে সক্রিয় রেখে কোন পদ্ধতিতেই বাজার নিয়ন্ত্রন করা যাবে না।
অতএব এটাকে সহজে সরকারে ব্যর্থতা বলে চালাতে আমি রাজি নই। এটা মুক্তবাজারের ব্যর্থতা। মুক্তি বাজারের বিকাশের একটা সীমা অবশ্যই আছে এবং এই সীমা অতিক্রম করলে মুক্তিবাজার পদ্ধিতি আর জনবান্ধব থাকবে না। একটি নিদ্রিষ্ট সময় পরে প্রতিযোগীতার কোন অবস্থান থাকবে না পন্যের দাম আবার বাড়তে থাকবে। এবং ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে কোন পন্যের দাম কেমন বাড়বে।
একটা সময় ছিল যখন চাল,ডাল,লবন তেল বিক্রি করতো ছোট ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতে বসে বা বাজারের চালার নিচে বসে এসব বিক্রি করতো। এখনো হয়তো করে কিন্তু কম। এখন এসেগেছে সুপার স্টোরের যুগ। একই দোকানে,মাছ,মাংস ডিম ডাল কলা পেপে থেকে হারপিক সাবান,জামা,জুতা,গহনা,ডলার সবই পাবেন। যে কোন মফস্বলে এখন কম করে চার পাঁচটা সুপার শপ আছে। সুপার শপ গুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এই সুপার শপের চার পাশের ছোট ব্যবসায়ীরা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। একটা বড় সুপার শপ অন্তত ৫০টা ছোট দোকানের ক্রেতাকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন ছোট পূজির এই দোকান গুলোর কি হবে? প্রতিযোগীতায় টিকতে হলে ক্ষুদ্র ব্যসায়ীদের কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ক্রমান্ময়ে বিনিয়োগ করতে না পারলে পুঁজিবাদী বাজারে টিকতে পারবে না। এখন তাদের পক্ষে কি রাতারাতি কোটি টাকা বিনোয়াগ করা সম্ভব? সম্ভব নয় । তাহলে তাদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুক্ষিন হবে।
এই প্রতিযোগীতায় টিকতে হলে তাদের ও সুপার শপের মতো বিনিয়োগ করতেই হবে। ধরে নিতে পারি তাদেরএকটা পথ খোলা আছে ৫০জন মিলে যদি একটি সুপার শপ প্রতিষ্ঠা করা।মুক্তি বাজারে এভাবেই যৌথ বিনিয়োগের দিকে যেতে হচ্ছে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতার কথা যতই বলা হোক ব্যবসার ক্ষেত্রে তা মোটেও সুখকর নয়। পুঁজির এই একই জায়গায় সন্নিবেশ ভাল কোন লক্ষন নয়। এই পুঁজি বড় হতে হবে একসময় দেশের সীমা পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করতে থাকে। বৃহত্তর পুঁজির কাছে অসহায় হতে থাকে রাষ্ট্র কাঠামো।
“বিশ্বে যত পণ্য ও সেবা উৎপন্ন হয়, তার প্রায় এক-চতুর্তাংশ উৎপাদন করে বহুজাতিক কোম্পানি। অনেক কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ এত বেশি যে কোনো কোনে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদও এর তুলনায় তুচ্ছ। ২০০৯ সালে ওয়াল মার্টের মোট বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৪১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই বছর বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদ ছিল মাত্র ৮৯.৩ বিলিয়ন ডলার।”
অর্থনীতির ছাত্র আমি কখনোই ছিলাম না, তাই তাত্বিক আলোচনায় যাওয়ার আমার পক্ষে সম্ভব না তাই উদাহরন দিয়ে ব্যক্তকরার চেষ্টা করেছি।
পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে সরকার নিজেই পেঁয়াজ আমদানীকরে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে টিসিবির মাধ্যমে খোলাট্রাকে পেয়াজ বিক্রি শুরু করতেই একদিন আশি থেকে ৫০টাকায় নেমে আসল। সব দোকানে তখন ৫০ করে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ ব্যবসায়ীরা কি করে এত কম দামে বিক্রি করছে? তাহলে আগে বেশি দামের বেচার কারন কি? কারন খুবই সহজ, আপনিও জানেন আমিও জানি,সিন্ডিকেট।
প্রতিবছরই সংযমের মাস রমজান আসলে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু গত রমজানটা কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। চিনি,তেল,চাল,ছোলা,ডালের দাম বাড়েনি। টিসিবির খোলা ট্রাকে করে এসব বিক্রি করার জন্য দোকানদাররা সিন্ডিকেট করতে পারেনি।
চালের দাম,ডালের দাম,সয়াবিনের দাম বেড়ে গেলে সরকারকেই আমদানীর দ্বায়িত্ব নিতে হয়। সরকাকেই যদি ব্যবাসা করতে হয়, আমদানী করতেহয়,সরকারকেই যদি ট্রাকে করে মালামাল বিক্রি করে জনগনের চাহিদা মেটাতে হয় তাহলে মুক্তবাজার নিয়ে এত লাভঝাপ করার কি আছে? এই সংকট উত্তরনে মুক্তবাজারের কি কৌশল আছে?
আমি প্রতিযোগীতার বিপক্ষে না, আমার অবাধ বাজারকে নিয়ন্ত্রনহীন করে দেবার পক্ষেও না। ছোট শিশুকে মাঠে খেলতে ছেড়ে দিলেও মা যেমন তাকে নজরে রাখে, একটু বেশি দূরে গেলেই আবার ধরে নিয়ে আসে। বাজারের অবস্থাটাও আমি এভাবেই দেখি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ যতই চিৎকার করুক আমাদের দেশের বাজার আমাদের সরকার কতৃক নিয়ন্ত্রীত হতে হবে।
আপনাদের সমস্ত আলোচনা ভালভাবে পড়ে এবং বিশ্লেষণ করে এটাই সহজে বোঝা গেল যে মুক্তবাজার অর্থনীতির তুলনাই সরকার নিয়ন্ত্রিত বাজারই সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে ।
তাই সকলকে সরকারের কাছে এই দাবীটিই উত্থাপন করা উচিৎ যে ‘ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করতে হবে । অবশ্য এতে অনেকে সমাজতন্ত্রের দুর্গন্ধ পেয়ে বিরোধিতা করবেন ‘ ।
‘
…. এইটাই আসল কথা। আমেরিকা তেও Anti trust law, ইত্যাদি আছে পুজিপতিদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। পূর্ণ প্রতিযোগিতা পুজিপতি রা চায় না। যে দেশ ওই মুনাফাখোর দের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে শুধু সেখানেই বাজার অর্থনীতি সুফল দিতে পারবে।
অনেক দিন পর ডাইনোসর সাহেবের লেখা পড়ে ভাল লাগল।
সিন্ডিকেট গঠন করে বাজার নিয়ন্ত্রনের কৌশল অত্যন্ত কার্যকরী। এর বিরুদ্ধে সফল ভাবে কি করা যায় বলা মুশকিল। প্রতিযোগীতার বাজারে ব্যাবসায় টিকে থাকতে দাম কমাতে হবে, তবে এক পর্যায়ে কেউই চাইবে না তাতে নিজেদের স্থায়ী ক্ষতি হোক, কাজেই একটা সমঝোতায় আসবেই। তবে এর ভাল দিকও যে একেবারে নেই তাও কিন্তু নয়। প্রতিযোগীতার বাজারে টিকে থাকার জন্য পন্যের মানের সাথে কম্প্রোমাইজ করার ভয়াবহ দিকও আছে। দাম কমা মানেই যে ভোক্তার জন্য সব সময় ভাল এমন নয়। ভুরি ভুরি উদাহরন দেওয়া যায়। কাজেই একটা পর্যায়ের পর দাম আর না কমাই ভাল। আপনি নিশ্চয়ই ৮ টাকার মোটামুটি মান সম্পন্ন পরোটা খাবার চাইতে ৪ টাকায় পঁচা আটা মেশাল দেওয়া পরোটা খেতে চাইবেন না।
সিন্ডিকেট গঠনের ভিন্ন কায়দার মত এখন বিশ্বময়ই মার্জ করার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। বড় বড় কোম্পানী মার্জ করে এক হয়ে যায়, বেহুদা প্রতিযোগীতা করে করে নিজেদের নামিয়ে ফেলার চাইতে এক হয়ে চুটিয়ে ব্যাবসা করাই বেশী লাভজনক। এতে ছোট ব্যাবসায়ীদের বারোটা বাজছে, মানে বাজারে প্রতিযোগীতা কমছে। মার্জ করা কোম্পানীগুলিতে কর্মচারীরাও অনেকে চাকরি খোয়ায়। ওয়াল মার্ট যেখানেই যায় সেখানেই অন্য ছোট খুচরা বিক্রেতাদের মাঝে ক্রন্দনের রোল পড়ে যায়। এদের কারনে বহু ব্যাবসা উঠে গেছে। তবে তাতে সাধারন ভোক্তাদের কিছু যায় আসে না, তারা ওয়াল মার্ট থেকে কম দামে জনিস পাচ্ছে এটাই বড় কথা। ওয়াল মার্ট তাদের কর্মচারীদের কিভাবে কম দামে খাটায় ঠকায় এসব নিয়ে কে চিন্তা করতে যাবে। কাজেই এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান ঠেকানোরও কার্যকরী পায় নেই। কানাডাতে বহদিন ওয়াল মার্ট প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, তবে অবশেষে আর ঠেকানো যায়নি। সেখানেও বীর বিক্রমে ওয়াল মার্টের রাজত্ব চলছেই। জার্মানীতে শুনেছি সম্প্রতি বন্ধ করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট গঠন করে বাজার নিয়ন্ত্রন মোটামুটি বিশ্বময় হলেও আমাদের দেশে মনে হয় এর মাত্রা আরো গায়ে লাগে; সম্ভবত অতি নিত্য প্রয়োযনীয় পন্য যেমন খাদ্য সামগ্রীর মূল্যও কিছু লোকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রন করতে পারে বলে। মুদ্রাস্ফীতি, তেলের দাম এসব কারনে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পন্য আমদানীর খরচ বেড়ে গেলেও আমাদের দেশে যেভাবে পন্যের দাম লাফ দেয় তা কোন ভাবেই ব্যাখ্যা হয় না। এখানেই সততার মাত্রাগত বিভেদের প্রশ্ন আসে।
আমেরিকার গত অর্থনৈতিক সংকটের সময় এটা পরিষ্কার বোঝা গেছে যে সব কিছু প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দিয়ে সরকার গায়ে বাতাস লাগাতে থাকলে কি ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে। সরকারী নিয়ন্ত্রনের প্রশ্ন এক সময় আসতেই হবে। মুশকিল হল এর মাত্রা ঠিক কতটা হবে, অপটিমাম পয়েন্ট কোথায় তা নির্ধারন মুশকিল। কানাডায় আমেরিকার তূলনায় সরকারী নিয়ন্ত্রন বেশী, এ কারনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় কানাডায় আমেরিকার মত দেখা যায়নি। বিশেষ করে আমেরিকায় যখন একের পর এক ব্যাংক/অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়েছে কানাডার ব্যাঙ্কগুলি তখনো ভাল লাভ করেছে। অন্যদিকের চিত্র হলে সরকারী নিয়ন্ত্রন/লাল ফিতের দৌরাত্ব বেশী হওয়াতে কানাডায় ব্যাবসা বানিজ্য খোলা, প্রসার আমেরিকার তূলনায় কঠিন।
আমাদের সরকারের পক্ষে যাবতীয় পন্য আমদানী, এরপর পরিবহন করে খুচরা/খোলা বাজারে বিক্রয় নিশ্চয়ই সম্ভব নয়। প্রাইভেটাইজেশনের ওপর নির্ভর করতেই হবে। মানুষের মাঝে ব্যাক্তি পর্যায়ে সততার ন্যূনতম এক পর্যায় না থাকলে শুধু অর্থনৈতিক বই ঘেটে সমাধান সম্ভব হবে না।
ঔষধ ব্যাবসায়ীদের সাম্প্রতিক যে উদাহরন দিলেন তাতে মনে হয় আমাদের বাস্তবতা অনেকটা বোঝা যেতে পারে। বিশ্বে সব দেশেই দূর্নীতি, জালিয়াতি, মেয়াদোর্তীন পন্য বিক্রি এসব আকছার ঘটে। আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হয়, এটাই দস্তুর। এর সাথে আমাদের দেশ তূলনা করলে বেশ ইউনিক একটা চিত্র পাওয়া যায়। আমাদের দেশে কোন এক কারনে ক্রিমিনাল/ক্রাইমের সংযে যুক্ত লোকজনের নৈতিক বল অত্যন্ত শক্ত। পৃথিবীর আর কয়টা দেশে নকল ভেজাল পন্য (তাও আবার ঔষধ) বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেবার পর তারা ধর্মঘট ডাকতে পারে এবং তাতে সরকার আবার মিন মিন করে ফনা নামিয়ে অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেবার ঘোষনা দিতে পারে আমার তেমন জানা নাই। একই চিত্র দেখা যায় প্রায় সবখানেই।
লাইসেন্স বিহীন, জাল লাইসেন্স ওয়ালা কিংবা ট্রাফিক আইন ইচ্ছেকৃতভাবে লঙ্ঘন করে মানুষ মারলে কিংবা সার্টিফিকেট বিহীন বাহন চালানো গণপরিবহনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যাবস্থা নিলেও একই ধরনের চিত্র দেখা যায়। তারা নানান গোলযোগ শুরু করে, দেশ অচল করার হুমকি দেয়।
আমাদের সময় ছোটবেলায় মেট্রিক/ইন্টার এর মত পাবলিক পরীক্ষায় নকলবাজি, এরপর পরীক্ষার পর খাতার পেছনে অভিভাবকদের ছুটাছুটি ছিল ডালভাত। এসবের মোটামুটি পদ্ধুতিগত উপায় ছিল। দেশের বহু এলাকায় নকল বন্ধ করা নিয়ে ব্যাপক সঙ্ঘর্ষ/ বিরাট গোলযোগ হয়ে যেত। অনেক যায়গায় নকল করার সুবিধে দেবার দাবীতে গনমিছিল দেখা যেত।
যে দেশে অপরাধীদের নৈতিক জোর এমন প্রবল হতে পারে সে দেশে সিণ্ডিকেট গঠন করে বাজার নিয়ন্ত্রন সামান্যই বলতে হবে।
বটম লাইন হল সরকারী নিয়ন্ত্রন লাগে, তবে প্রাইভেটাইজেশন ছাড়াও সম্ভব নয়। প্রতিযোগীতারও দরকার আছে, তবে সেটাও হতে হবে এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে তেমনই মনে হয়। প্রতিযোগীতাহীন ব্যাবস্থাও টেকে না।
@আদিল মাহমুদ,
আদিল ভাই আমার সাথে আপনার বিতর্কহীন মন্তব্য দেখে ভাল লাগল। :rotfl:
আমি শুনেছি, কানাডার মতো ফ্রান্সেও নাকি সরকারের অনেক নিয়ন্ত্রন আছে, আমাদের দেশের সাথে ঐ দুইটার দেশের বাজারর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রনের একটা চিত্র পেলে ভাল হতো। আপনার সময় হলে এই নিয়ে একটা লেখা দেবেন।
@ডাইনোসর,
আপনি বিতর্ক না করলে জমবে কেমনে? ডাইনোসর মানুষ হয়েও যদি এমন অহিংস নীতি বজায় রাখেন তো তর্ক জমবে কার সাথে??
অন্তত পরোটার দাম নিয়ে তো তর্ক করতে পারেন। আমিও পারি, আপনার দাবী এখানে ভুল আছে। আমি গত ডিসেম্বরে ঢাকা গিয়ে আপনার দাবীকৃত ন্যূনতম ৮টাকা দামের কম দামে সিংগাড়া সমুচা খাইছি।
শুধু কানাডা ফ্রান্স নয়, ইউরোপের বেশীরভাগ দেশই অমন জাতীয়। বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলি। কানাডা আসলে অনুসরন করা শুরু করেছিল সুইডিশ মডেল, এটা অনেকটা সোশাল ডেমোক্রেসী। এসব দেশ আমেরিকার মত পূর্ন পূঁজিবাদে বিশ্বাসী নয়। ফল দুই দিকেই আছে। এসব দেশের প্রবৃদ্ধির হার আমেরিকার মত নয়। তবে অন্য দিকে এদের উত্থান পতন তেমন নাটকীয় হয় না, নাগরিকরা ন্যূনমত কিছু সুবিধা লাভ করে যেমন বিনে পয়সায় চিকিতসা যা আমেরিকায় নেই।
@আদিল ভাই,
এটাই মনে হয় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনকল্যান মুখী আর বাস্তব ব্যবস্থা তাই না? আপনার কি মনে হয়?
@অর্ফিউস,
দুই ধরনের পদ্ধুতিরই ভাল মন্দ আছে। এটা দৃষ্টিভংগীর ওপর কিছুটা নির্ভর করে। আমি দুই ধরনের সিষ্টেমের সাথেই কম বেশী পরিচিত। কম বয়সে অবশ্যই আমেরিকান ব্যাবস্থা ভাল লাগত, কারন এর দূর্বলতাগুলি অল্প বয়সে তেমন টের পাওয়া যায় না। চাকরি গেলে টের পাওয়া যায় আমেরিকা কি জিনিস। আপনার রোগ শোক হলে আপনি মোটামুটি রাহে লিল্লাহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দয়ার ওপর আর নইলে আল্লাহ ভরসা।
সোশ্যালিষ্টিক সিষ্টেমগুলি অনেক নিরাপদ, তবে চাকচিক্য নেই। ল্যান্ড অফ অপর্চূনিটি এসব দেশগুলি হবে না, হবে আমেরিকাই।
@আদিল ভাই,
এটা ঠিক বলেছেন। তবে যেখানে সারা দুনিয়াতে অভাব এতই বেশি সেখানে মনে হয় চাকচিক্যের চেয়ে নিরাপত্তাই বড়।যেমন অনেক আমেরিকান নাকি চিকিৎসার জন্য ভারতে আসে, শুধুই আমেরিকার গলাকাটা চিকিৎসা খরচের হাত থেকে বাঁচার জন্য। নরওয়েতে নাকি শিক্ষা ফ্রী? এখানে দেখলাম! যদিও এটাই দুনিয়ার সবচেয়ে ব্যয় বহুল দেশ, তবে ইনকামও নাকি ভাল। অথচ দেখেন আমেরিকা আর যুক্তরাজ্যের লেখাপড়ার কি খরচ। কানাডার অবস্থা কি দয়া করে জানাবেন।
মেলাদিন পর দেখলাম আপনাকে। ভাল আছেন তো ভাই?
কি আর হবে আমরা হাঁটাহাঁটি করে অফিসে মার্কেটে যাব। শরীর স্বাস্থ্য ভাল থাকবে :lotpot:
এইটা মনে হয় বেস্ট কিক হবে যদি তেল পাম্প বন্ধ থাকে। কোন যান বাহন চলতে পারবে না, এমনকি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বা আম্বুল্যান্সও না। কি শর্বনাশ!!! :-O :-s
@অর্ফিউস,
ডাইনোসরের মতো প্রাণীকে কি আপনি সব সময় দেখতে চান? এটা নিশ্চয় আপনার জন্য মঙ্গলময় হবে না। তাই মাঝে মাঝে দর্শন দেই। এই দেহটা নিয়ে নিশ্চয় আপনাদের মতো হুট হাট করে লগিন করতে পারিনা( আসলে আমি প্রায়ই লগিন পাসওয়ার্ড মনে করতে পারিনা) হা হা হা….. তাই পড়েই চম্পট দেই। আর ভাল লাগলেও সব লেখায় আমার কমেন্ট করার মতো কিছু মাথায় আসে না, এটাই বড় কারন। :))
@ডাইনোসর,
মন্দ বলেননি :))
:hahahee: ব্যাপক মজা পেলাম আপনার কথা শুনে। আমিও আগে আমার মেইলের পাস ওয়ার্ড ভুলে যেতাম, পরে বিশেষ কোড ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড দেই, তাই আর ভুলি না 😉