আজ হঠাৎ ঘোষনা করে দিলাম
নিয়তির সাথে যুদ্ধ,
নিয়তি তার ঢাল তলোয়ার সমেত এলেন
আমার বিস্তির্ণ রণময়দানে।
স্বাগতিক হিসেবে আমিই প্রথম তাকে জানালাম
আমার হাস্যময় অভিবাদন।
আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিলাম
বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ আমার।
নিয়তির ভ্রু গেলো কুঁচকে এই দেখে যে
আমার হাতে নেই কোন ধাতব অস্ত্র,
বুকে নেই প্রতিরক্ষা বর্ম।
নগ্ন প্রতিপক্ষকে দেখে যেন
একটু করুনাই হলো নিয়তির।
তারপরও
প্রতিপক্ষ প্রতিপক্ষই।
গেরিলা আক্রমনের আশঙ্কায়
নিয়তি ঝাপিয়ে পড়লেন আমার উপর
আর ঢুকিয়ে দিলেন তার দুর্বার তলোয়ার
আমার বুকের মধ্য অক্ষ বরারব।
বেচারা থমকে গেলেন,
অবাক চেয়ে রইলেন আমার পানে;
কেননা
তখন তলোয়ারের ক্ষত থেকে ঝরছিল
অভিমানের মত অজস্র নীল অপরাজিতা।
ভ্রান্তি ভেবে এবার হেচকা টানে বের করতে গেলেন
তীক্ষাগ্র তরবারি।
আবারও অবাক করে দিয়ে
তরবারিটা কোমল রমনীর স্বরে
কেঁদে বললো,
আমি যাবনা।
নিয়তি চোঁয়াল শক্ত করে চুড়ান্ত হেঁচকা টানে
বের করে নিলেন
নির্মম তরবারিখানি।
আমি তখন স্মিত হাস্যমুখে কেবল
তাকিয়ে রইলাম নিয়তির দিকে।
নিয়তি গেলেন ক্ষেপে।
রাগে টগবগ করতে করতে
এবার হত্যাযন্ত্রটা চালালেন মগজের চূঁড়াস্থলে।
মগজের গহব্বর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে এলো
রঙফড়িংয়ের দল।
তাদের প্রত্যেকের চোখে এতো দ্রোহ ছিল যে
নিয়তি ঘাবড়ে দৌড় দিতে ধরলেন।
আমি তার পথরোধ করে বললাম,
আপনি যাবেন না।
এতটা দিন কেবল আমি
আপনার দাসের মত আপনার পায়ের কাছে
কুকুর হয়ে বসে ছিলাম।
আপনার স্বৈরতন্ত্র আমাকে
কেবল বানিয়েছে
এক অবহেলিত শব্দ শিল্পি।
জীবনের মত বৃহৎ এক শিল্পের
ছোঁয়া আপনি কখনই আমায় দেননি।
আজ আমি হারার জন্যই
নেমন্তন্ন করেছি আপনাকে
আমার এই জীর্ণ রণময়দানে।
হে সর্বশক্তিমান নিয়তি
আমাকে বিদ্ধ করুণ,
আমাকে বিক্ষত করুন
আপনার অপার অনাদি পরাক্রমশীলতায়।
আমার মস্তিস্ক কিংবা হৃৎযন্ত্র ভেদ করা
আপনার পক্ষে অসম্ভব।
কেননা ওখানে অজস্র শব্দেরা
নির্ঘুম পাহাড়ায়।
আপনি কেবল আমার অক্ষিযুগল
উপড়িয়ে ফেলুন
যে কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছে
জীবনের পানে,
আর আমার কর্ণকূহর আঘাতে
করে দিন স্তব্ধ,
যে কেবল নির্লজ্জের মত শ্রবণ করেছে
জীবনের কলকল ধ্বনি।
তবেই আমি পরাহত হবো
আপনার অব্যার্থ আঘাতে।

নিয়তি ঠোঁট নাড়লেন কেবল একটি বাক্যে,
কে তুমি হে ক্লান্ত প্রাণ?
আমি লজ্জায় অবনত হয়ে বললুম,
আমি কবি।

লেখকঃ প্লাবন ইমদাদ
প্রকাশিত গ্রন্থঃ শাঁখের করাত