[প্রাক্তন আধারকে একটি কমেন্ট করার সময় ভাবলাম পোষ্টাকারেই দেই]
সীমান্তে নির্বিচারে মানুষ হত্যার সাথে আমাদের সংস্কৃতিরও এক বিশেষ দিক জড়িত আছে, ভারতের সংস্কৃতিও এমন কিছু উন্নত নয়। সেটা হল উর্দিওয়ালারা যা ইচ্ছে করতে পারে, বিশেষ করে গরীব লোকের ওপর, সরকার গা করবে না, বড়জোর কিছু মানবাধিকার সংস্থা কান্নাকাটি করবে। সোজা কথায় দুই দেশেই মানবাধিকারের স্বাভাবিক ধারা চরম ভাবে লঙ্ঘিত হয় নিত্যই, এবং তাতে সরকারগুলির, এমনকি কখনো বা আম জনতারও সায় থাকে। আমাদের দেশে এর চরম উদাহরন ক্রশফায়ার। ক্রশফায়ার প্রকল্প যে কোন মানবাধিকার সংস্থাই নিন্দা জানাবে কিন্তু সরকারের পূর্ন অনুমোদিত জনতার কাছে এই পদ্ধুতি বিপুল জনপ্রিয়। এই দিক উপেক্ষা করে কেবল গালাগালি কান্নাকাটি করলে কিংবা চটকদার মহাষড়যন্ত্র তত্ত্ব কল্পনার মিশেল ঘটিয়ে আমদানি করে অপূর্ব কথ্য ভাষায় রাজনৈতিক ফ্যান্টাসি রচনা সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা মূলও বোঝা যাবে না।
আমার কথা খুব আঁতেলীয় কিছু নয়। অত্যন্ত বাস্তব। অন্ধ আবেগ, এক তরফা বিশ্লেষন থেকে একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তথ্য যুক্তি দিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কথা উঠেছে যে ‘গরু চোর’ কিংবা অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমকারি হলেই তাদের কি গুলি করে হত্যা করা যায়? মানবাধিকারের স্বীকৃত ধারা, এমঙ্কি ভারতীয় স্বাভাবিক আইনের ধারাও বলে যে অবশ্যই যায় না। অন্যদিকে ভারতীয় আইন রক্ষকরা সরাসরিই বলে থাকেন যে তারা গরু চোরদের যায়গাতেই গুলি করে মারা জাষ্টিফাইড বলে মনে করেন। ভারতীয়দের গুল্লি মারি? ব্যাটারা নব্য সাম্রাবাজ্যবাদী, গরীব ছোট বাংলাদেশকে পাত্তা দেয় না? বর্বরের মত আচরন করে?
এবার হজম করার মত তথ্য হল যে এই গুলি করে নির্বিচারে ‘গরু চোর’ নিধনে আমাদের দেশের সীমান্তরক্ষীরাও প্রকাশ্যেই জাষ্টিফাইড বলে ঘোষনা করেন। কি বুঝলেন? সভ্য জগতের যাবতীয় কালা কানুন, মানবাধিকার মাড়িয়ে শুধুমাত্র গরু কিংবা আদম পাচারকে ভারত বাংলাদেশ দুই দেশের সীমান্ত রক্ষকরাই অন দ্যা স্পট গুলি করে হত্যা করার মত মহা অপরাধ বলে মনে করেন! বাংলাদেশ পক্ষ থেকে শুধুমাত্র সেসব ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ জানানো হয় যেখানে ভিক্টিম কথিত গরু চোর নয়, নিরীহ চাষী, কিংবা বিএসএফ সীমান্ত পেরিয়ে যখন মাস্তানি করে তখন। স্পেসিফিক্যালি বিএসএফ এর বেশ কিছু গুলি করে হত্যা করার ঘটনা আমাদের বিজিবি জাষ্টিফাইড রায় দেয়, হয়ত মিডিয়ায় সেসবই প্রকাশ হলে আমরা ভারতীয়রা কত বর্বর বলে কান্নাকাটি করি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট থেকেঃ (সূত্র নীচে আছে)
ভারতীয় সীমান্ত কর্তার ভাষ্য শুনুনঃ
During an official visit to Bangladesh in September 2010, Raman Srivastava, Director General of the BSF, responded to Bandgladesh’s complaints that the BSF were killing “innocent, unarmed” Bangladeshi civilians by saying: “We fire at criminals who violate the border norms. The deaths have occurred in Indian territory and mostly during night, so how can they be innocent?”
(বলার অপেক্ষা রাখে না যে ভারতীয় আইনানুযায়ীই শুধুমাত্র অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি এমনকি আদম/ গরু পাচারের জন্যও কাউকে গুলি করে হত্যা করা যায় না, ভারতীয় আইনেও গুলি করা কেবল মাত্র তখনই জাষ্টিফাইড যখন সীমান্তরক্ষীর নিজের প্রান বিপন্ন হয়)
এবার শুনে বাধিত হন আমাদের সীমান্তকর্তার বক্তব্যঃ
BDR chief Maj. Gen. Mainul Islam, explaining that there was a history of “people and cattle trafficking during darkness,” said of the killings: “We should not be worried about such incidents…. We have discussed the matter and will ensure that no innocent people will be killed.”
(সোজা কথা অনেকটা এমন যে আমাদের সীমান্তকর্তাও মানুষ কিংবা গরু পাচারকারিদের অন দ্যা স্পট গুলি করে মারা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামান না। ওনারা কেবল চিন্তা করেন একেবারেই নিরীহ লোকে গুলি খেলে তখন)।
The BDR raises serious concerns with the BSF only when cases of indiscriminate firing lead to the death of villagers not involved in smuggling
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর অঘোষিত কার্ফু জারী হয়। আগে গুলি তারপর লাশের কাছে প্রশ্ন। সেখানে যাকেই অন্ধকারে পাওয়া যায় তাকেই বিনা প্রশ্নে গুলি করা হবে এটাই বিএসএফ এর নীতি, দুই দেশেরই স্থানীয় জনগন এটা জানে ও সে অনুযায়ীই সেখানকার জীবনযাত্রা চলে। রাতের আঁধারে শুধু গরু কিংবা আদম পাচারকারিই নয়, মাঝে মাঝে ফেলানিরাও সীমান্ত পাড়ি দেয়। যাদের কপাল ভাল তারা সফল ভাবে পাড়ি দিতে পারে, ফেলানির মত কপাল খারাপ হলে মারা পড়ে। কথা হল ট্রিগার ভারতীয় পক্ষ টানলেও এহেন হত্যার পেছনে কি আমাদের সীমান্ত রক্ষকদেরও দায় একেবারেই নেই তা কি বলা যায়? হিউম্যান রাইটসের মন্তব্যঃ
These comments suggest that officials of both governments believe that it is legal to use lethal force against those suspected of being engaged in smuggling or other illegal activities. This amounts to a de facto shoot-to-kill policy for smugglers, and violates both national and international standards on the right to life and the presumption of innocence which are applicable in India and Bangladesh.
বলাই বাহুল্য আপনি কোন রকম বিচার আচার দূরে থাক, তদন্ত ছাড়াই যায়গায় দেখামাত্র গুলি করা জাষ্টিফাইড বলে রায় দেবেন সেখানে বোনাফাইড গরু চোরের সাথে সাথে দুয়েকজন ফেলানিও মারা যাবে। এটা বুঝতে খুব সূক্ষ্ম বুদ্ধি কিংবা জটিল আলোচনার দরকার হয়? তারা মারা পড়ে মিডিয়া সেনসেশন হলে তখন উত্তপ্ত বক্তব্য দিয়ে দেশপ্রেমের পরকাষ্ঠা দেখাবেন?
হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টটি পড়লে দেখা যায় যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ এর স্বেচ্ছাচারী নীতি শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, ভারতীয় নাগরিকদের জন্যও অনেকটা একইভাবেই প্রযোজ্য। বহু ভারতীয় নাগরিকও নির্মমভাবে এদের হাতে অত্যাচারিত এমনকি নিহতও হয়। হিউম্যান রাইটস এমন বহু ঘটনা ডকুমেন্ট করেছেন, তাতে অবোধ নিরীহ শিশুও আছে। নিহতের হার নিঃসন্দেহে ভারতীয়দের জন্য কম স্বাভাবিক কারনেই কারণ তাদের বাংলাদেশীদের মত সীমান্ত পাড়ি দিতে হয় না।
যেখানে আমাদের সীমান্ত কর্তারাও বিনা বিচারে যায়গায় দেখামাত্র গরু পাচারকারিদের হত্যা করা জাষ্টিফাইড রায় দেন সেখানে কিছুটা আত্মসমালোচনার দরকার পড়ে না?
যে কোন গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় বিএসএফ এরও পুলিশ রিপোর্ট ফাইল করতে হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হল যে তাদের সেই রিপোর্টও হয় একেবারে গত বাধা, আরো বিস্ময়কর এ কারনে যে সেই রিপোর্টগুলি অনেকটাই ক্রশফায়ার ঘটনাগুলির পর আমাদের র্যাবের তরফ থেকে দেওয়া অফিশিয়াল ভাষ্যের মত। গরু পাচারকারিরা বিএসএফ বেচারাদের ঘিরে ফেলে……দা বটি নিয়ে আক্রমন করে……প্রানের মায়ায় বেচারাদের নিতান্তই বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়…
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে সম্ভবত বিশ্বে সবচেয়ে বেশী মানুষ মারা যায়, আমাদের বিজিবির হাতেও হত্যার কিছু নজির থাকলেও মূল হত্যাকারী ভারতীয় বিএসএফ, এবং সেসব হত্যাকান্ড অধিকাংশই স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন তো বটেই এমনকি ভারতীয় আইনেরও লঙ্ঘন। তবুও কাজটি দিনের পর দিন চলছে, ভারত সরকার নিঃসন্দেহে জানে, সেখানকার কিছু মানবাধিকার সংস্থা এ নিয়ে বহুদিন সোচ্চার আছে, তাতে কোন ফল আসছে না। ফেলানির ব্যাপারটাও ব্যাপক ভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রথম এসেছে ভারতীয় দিক থেকেই। বোঝই যায় যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিএসএফ এর কিলিং স্প্রীতে পূর্ন মত আছে। তারা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকানো এতই গুরুত্বপূর্ন মনে করে যে তা ঠেকাতে এমনকি নিজেদের নিরীহ নাগরিকদেরও অত্যাচার এমনকি হত্যাকান্ড নিয়ে মোটেও বিচলিত নয়।
ভারত বাংলাদেশের সমস্যাগুলি অনেক জটিল, সমাধান নিঃসন্দেহে গালিগালাজ করে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোতে হবে না,আবেগের দরকার আছে। তবে আবেগ থেকে শক্তি তৈরী করে তা কার্যকরভাবে ব্যাবহার করতে হবে, নইলে শুধু আবেগের দাম কানাকড়িও নয়। সীমান্তে হত্যা নিয়ে আমার পূর্নাংগ লেখা লেখার সময় আপাতত নই, তবে মনে হল যে এই সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ন একটি দিক সব সময় অবহেলিত থেকে যায় যা সকলের চিন্তা করা প্রয়োযন। এদিকটা উপেক্ষা করে এই সমস্যার গভীরে যাওয়া যায় না। এই কৌশলও মনে হয় অনেকটাই আমাদের ক্রশফায়ার কায়দায় সন্ত্রাস/অপরাধ দমনের সাথে সংগতিপূর্ন। ক্রশফায়ারে যেমন ১০টা সন্ত্রাসীর সাথে একজন নিরীহ মানুষ মারা যেতেই পারে…তখন চুক চুক চুক…করে দায় সারা যায় তেমনি সীমান্তে হত্যার ব্যাপারেও একই। মিডিয়া সেনসেশন কিছুদিন চললে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে, নন-লিথ্যাল অস্ত্র ব্যাবহার করা হবে জাতীয় ঘোষনা……
আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তেও মেক্সিকো থেকে প্রচুর ড্রাগ/মানব চোরাকারবারি,নিরীহ লোকেও উন্নত জীবনের আশায় প্রতিদিন অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেবার চেষ্টা করে, কেউ সফল হয়, অনেকেই হয় না। আমেরিকান পক্ষ একেবারেই নিজেদের ওপর হামলা শুরু না হলে কাউকে গুলি করে হত্যা করে না। এমনি অনেক বড় দালাল যাদের আগে থেকেই চিনে তাদেরও গুলি করে না, যদিও ইচ্ছে করলেই কাজটা তারা করতে পারে। আদম পাচারকারি দালালরা নিরীহ মেক্সিকানদের মরুভূমিতে ফেলে চলে গেলে বহু ঝামেলা হুজ্জত পুইয়ে আমেরিকান বর্ডার গার্ডরা তাদের উদ্ধার করে, চিকিতসা করে তারপর মেক্সিকো পাঠিয়ে দেয়। কাগজে কলমে ভারতের কাছ থেকেও এমন আচরনই আশা করার কথা, কিন্তু দেশটি ভারত, আমেরিকা নয় এটিই কথা। দুই দেশের সংস্কৃতি ভিন্ন। দেশের নাগরিকরাও সেভাবেই অভ্যস্ত। সে কারনেই আমেরিকা কানাডার মত দেশের একজন নাগরিকও বিএসএফ এর হাতে নিহত না হলেও তারা বিএসএফ কর্তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ভিসা দিতে অস্বীকার করতে পারে, আর ভারতীয় বিএসএফ কর্তা আমাদের দেশে বসেই হত্যা কারা পূর্ন জায়েয বলে সবক দিয়ে যেতে পারেন। আমাদের কর্তারাও তাতে একমত হন।
আমেরিকায় পুলিশের হাতে কেঊ অত্যাচারিত হয়ে হাত পা খোয়ালে তার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য খুলে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। যেমন রডনি কিং পুলিশের পিটুনি খেয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার পায়, তার কোন অংগহানিও হয়নি। আর আমাদের দেশের লিমনকে পা খুইয়ে কারাগারে থাকতে হয়, পরিবারকে মুখোমুখি হতে হয় আইনী বে-আইনী নানান ঝামেলার। (কারাগারের সেলের ভেতর এক পা হারা লিমনের ছবি আমার দেখা জীবনের অন্যতম কুতসিত ছবি)। ফেলানি ঘটনা নিয়ে মানুষ যত সোচ্চার লিমনের ঘটনা নিয়ে লোকে এতটা সোচ্চার কেন হননি এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে? আপনি লিমনদের ব্যাপারে মুখ বুঁজে থাকবেন আর অত্যাচারী পক্ষ বিদেশী হলে তখনই কেবল মানবাধিকার দেশপ্রেমের ঝান্ডা খুলে বসবেন? ক্রশফায়ার পদ্ধুতি সমর্থন দেবেন আর বিএসএফ এর বিনা প্রশ্নে গুলি করার প্রসংগে তীব্র নিন্দা জানাবেন? লিমনের মত দূর্ভাগ্য আর কারো হবে না এটা কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? কয়টা লেখা ব্লগে ফেসবুকে এসেছে এ নিয়ে? পাহাড়ে আমাদের উর্দিভাইদের নানান কেচ্ছাকাহিনী বাদই দিলাম। আমি যতটা বুঝি বিএসএফ এর দেখা মাত্র হত্যা নীতি দর্শনগত ভাবে ভারত সরকারের এক ধরনের ক্রশফায়ার নীতি যাতে এমনকি আমাদের সীমান্তরক্ষীদেরও সায় আছে। আফটার অল সংস্কৃতিভাবে দুই দেশই মানবাধিকার ফাধিকার এসবের তেমন মূল্য দেয় না।
যে কোন সংস্কারই নিজ ঘর থেকে শুরু করা উচিত নয় কি? নইলে রাতের বেলা চোরাকারবারি হত্যা জায়েয বলে একদিকে নীতি নিয়ে আরেক দিকে ফেলানিদের জন্য চোখের পানি ফেলাটা আমি ভন্ডামি কিংবা মূর্খতাই বলবো। বাংলাদেশের সীমান্তকর্তার যে উক্তি কোট করেছি তা ওনার নিজের এমনকি বাহিনীরও একার কোন কথা নয়, দেশের প্রচলিত সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। ভারতের উন্নত অর্থনীতির প্রতি গরীব বাংলাদেশীরা আকৃষ্ট হবেই, অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়িও তারা দেবে, দূঃখজনকভাবে এই ধরনের মানসিকতা যতদিন থাকবে ততদিন ফেলানির মত ঘটনা আরো ঘটবে।
সূত্রঃ
আদিল সাহেব,
আপনার লেখাটি পড়লাম। বেশ ভাল লাগল। কয়েকটি প্রসঙ্গে সহমত, যেরকম
এ বিষয়ে আলোচনা পরিধি একটু বিস্তৃত হলে খুশি হতুম। অর্থাৎ, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতিনিয়ত কত জন অবৈধ উপায়ে পারাপার করে থাকেন, প্রভৃতির উল্লেখ । বিশেষতঃ যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো-র তুলনা টানা হয়েছে
যদিও মূল লেখার আলোচ্য বিষয় শুধু-ই মানসিকতা – এবং এইখানে পরিসংখ্যান প্রদান বা গ্রহণ করা – বিনা বিচারে বন্দুকের শিকার হওয়া নিরীহ মানুষদের (গরুচোর কেও গুলি করে মারার নিদান ভারতে নেই – অতএব তারাও বন্দুক এর সামনে নিরীহ) প্রতি হয়ত খানিকটা অবিচার-ও – তবু বলছি মানসিকতা কিন্তু সংখ্যানির্মিত। ভারতে যত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী (শুধু) বাংলাদেশ থেকে এসেছেন – তার মান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সামগ্রিক (সব দেশ ধরে) অনুপ্রবেশকারী-র তুলনায় তিনগুণ। বলাই বাহুল্য ভারত তুলনায় আকার প্রকারে যুক্তরাষ্ট্র-র তুলনায় ৩ গুণ ছোট – অর্থনীতি কথা না হয় বাদ-ই থাক। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এসব জাতিসঙ্ঘীয় ‘ফালতু কথা‘য় কান দেন না – তাদের মতে বাংলাদেশে গারমেন্ট হবার পর বাংলাদেশী জনগণ শুধু মধ্য প্রাচ্যে বৈধ ভাবে যান।
অবশ্যই – এই জাতিসঙ্ঘী হিসেব ফালতু। একজন ভারতীয় হিসেবে আমি এ কথা হলপ করেও (যদিও আমার হলপের দাম কাগজে কলমে কানাকড়িও নেই) বলতে পারি। আসল সংখ্যা এর কয়েকগুণ। অবস্থা এরকম হয়েছে যে দিল্লীতেও বাংলাদেশী অপরাধচক্র পুলিশের ঘুম কেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কথা বাদ দিলেও – শুধু আসাম এর অনেক জেলায় (তপশিলী উপজাতিদের জন্য চিহ্নিত জেলা বাদে) জনসংখ্যা বৃদ্ধিহার – বাংলাদেশের গড় বৃদ্ধিমানের চেয়েও বেশী – যা কিনা বছরে ২৫ লাখ / ১৫ কোটি। এর জন্য আর অতিসূত্র দেবার দরকার নেই – দুই দেশের সরকারের তথ্য পঞ্জি দেখলেই মিলে যাবে।
এবার আসি মূল কথায়, ভারত সরকার (বা রাজ্য সরকারগুলি) কিন্তু এই সব অনুপ্রবেশকারী কে ভোটব্যাঙ্ক ভাবতেই অভ্যস্ত – তারা মোটেও চায় না যে এই জিনিষ বন্ধ হোক। ভারতের সাধারণ লোক (অন্তর্জাল ব্যাবহারকারী) ভোট ফোট দেয় টেয় না – তাই এই অনুপ্রবেশকারী-রাই (তাদের মতে) শিবরাত্রির সলতে। তা সত্ত্বেও বিএসএফ মানুষ মেরে থাকে – তা তাদের ব্যাক্তিগত অভিরুচি। এইখানেই আমি দ্বিমত পোষণ করি, আপনার এই বক্তব্যের সঙ্গে
১] মদত বা সায় তো নেই-ই, উল্টো কাজটিকেই তারা ভাল মনে করেন
২] বিএসএফ মোটেই অনুপ্রবেশ থামাতে গুলি চালায় না – চালায় নিজেদের রোজগার বাড়াতে – ফেলানি-র মত কিছু পারানির কড়ি বিহীনা কে মারতে পারলে – রোজগার কমে না – উলটে শাঁষালো খদ্দের দের ভয় পাইয়ে – বাড়তি উপায় হয়।
এখানে প্রশ্ন – তাহলে ভারত সরকার ব্যবস্থা নেয় না কেন? এর উত্তর তো সহজ – ভারতে কোন সরকার নেই – আমরা সবাই রাজা – অন্য কারণ যা লোকে বলে থাকেন – সরকার পুলিশ মিলিটারির গায়ে হাত দেয় না – সেটা সত্যি – কিন্তু ভারতবর্ষে সেটি বিবেচনা করার মতও কেও নেই।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি অনুপ্রবেশের বিরোধী – কিন্তু সেটি আটকানো সম্ভব নয় – কোন ভাবেই – এর থেকে বেশি গুলি চালিয়েও নয়। মানসিকতায় পরিবর্তন এনে হয়ত কিছু প্রাণ বাঁচানো যায় – সেটিই পাখির চোখ করতে হবে। আর মানসিকতা সংখ্যাধিক্যে খারাপ হয়। ভূমন্ডলে মানুষের সংখ্যা হয়ত পঙ্গপালের থেকেও বেশি – তাই আমাদের গুরুত্বও কমে গেছে। বিশেশতঃ পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া তে যত লোক থাকে – তা বাকি পৃথিবীতেও মেলে না (তাই বলি কি – তাদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করে লজ্জা দেবেন না)। সেজন্য, একটু ভীড় কমানোর চেষ্টা করলে কাজের কাজ হত – তবে বেড়ালের গলায় ঘন্টাটি বাঁধা বেশ কঠিন কাজ। সে কাজে গেলে গণধোলাই প্রাপ্তি-র প্রভূত সুযোগ। তার চেয়ে রামকেস্টার মত ‘তোমাদের /আমাদের চৈতন্য হোক’ বলাই ভাল অবশ্য।
পরিশেষেঃ ফেলানির মৃতদেহ দেখে বুকটা কেঁপে গেল। কিন্তু তাতে বন্দুকধারীদের মন গলবে না – আমরা আম জনতা, আমরা শুধু ফেলানির কাছে আর তার পরিবারের কাছে এক দেশি বন্দুকবাজের কীর্তির জন্য করজোড়ে মার্জনা চাইতে পারি। তাতে কোন লাভ নেই যদিও – তবু সামান্য যা অবশিষ্ট বিবেক রয়েছে – তার শুদ্ধিকরণ হবে।
@বকধার্মিক,
আপনার মত ভারতীয়রা আরো বেশী করে এ জাতীয় আলোচনায় যোগ দিলে ভাল হয়। আমরা আপনাদের দৃষ্টিভংগী জানতে পারি, হয়ত সাহায্য আশা করাটাও অন্যায্য হয় না। হাজার হোক মানবতার সীমানা, জাত, ধর্ম, বর্ন থাকা উচিত নয় নিশ্চয়ই।
– আমি যা বলতে চেয়েছি তার জন্য আসলেই তূলনামূলক পরিসংখ্যানের তেমন দরকার নেই। ভারতে অবৈধ বাংলাদেশী হয়ত সংখ্যানুপাতে আমেরিকায় অবৈধ ল্যাটিনোদের চেয়ে বেশী তার মানেই নিশ্চয়ই এই দাঁড়ায় না যে ভারতের বিএসএফ রক্তলোলুপ হয়ে উঠবে। আমেরিকায় অবৈধ ল্যাটিনোরা বহু সামাজিক সমস্যার বড় কারন, ক্রাইম রেটের একটা বড় কন্ট্রিবিউশন সেখান থেকে হয়। এসবের জের ধরে আমেরিকানরাও কি দেখা মাত্র গুলির এপ্রোচ নিতে পারে? পারে না, আজ অবৈধ মেক্সিকান সংখ্যা ৩ গুন হলেও সে এপ্রোচ তারা আভ্যন্তরীন কারনেই নিতে পারবে না।
অবৈধ বাংলাদেশীরা ভোট ব্যাংক হিসেবে কাজ করে, বিশেশ করে সরকারই চায় না এরা আসা বন্ধ হোক এ ভাবনা আমার কাছে অনেকটা নুতন। আমি যতটা জানি বিজেপি এ বিষয়ে সবচেয়ে সোচ্চার, তাদের দাবী বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধরা বেশীরভাগই মুসলমান বিধায় তাদের বিরুদ্ধে ভোট ব্যাংক তৈরী করে। এটা কতটা সম্ভব ঠিক জানি না, কারন আমার জানামতে ভারতে পাসপোর্ট পাওয়া খুব সহজ নয়।
– এ বিষয়টা একেবারেই বুঝলাম না।
– হতে পারে। আমারো তেমনই মনে হয়, এই নির্বিচারে মানুষ হত্যার পেছনের মূল মোটীভেশনই হল ভয় পাওয়ানো। টাকা পয়সা আদায় কতটা বড় তাতে আমার কিছুটা সন্দেহ আছে, সেটা সাইড বিজনেস হতে পারে। মূল কারন সম্ভবত সরকারেরই কোন অঘোষিত নীতি। এমন গুরু দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয় তারা স্বাভাবিকভাবেই বেপরোয়া হয়ে উঠবে, নিজ দেশের নাগরিকও কিছু নিকেশ হবে। যেহেতু নিকেশ হওয়া ভারতীয়রা সীমান্ত অঞ্চলের গরীব জনসাধারন তাই এদের নিয়ে ভারত সরকারেরো তেমন মাথাব্যাথা নেই। যেমনটা আমাদের দেশের হতদরিদ্রদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। থানা পুলিশ এদের যা খুশী করতে পারে, কেবল পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে আলোড়ন না তুললেই হল।
এটা বন্ধ করার উপায় বা দায় দাদা প্রধানত আপনাদেরই। বিকট অর্থনৈতিক বৈষম্যের দুই দেশ পাশাপাশি থাকলে অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম হবেই। আপনারা সহজাত মানবিকতা দেখালেই কাজটা সহজেই করা যায়, সরকারী নীতি যাইই হোক না কেন। আমাদের গরীব অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমকারীদের যত খুশী গারদে পুরুন আমাদের আপত্তি নেই, গারদে দুচার ঘা লাগিয়ে দিতেও পারেন। শুধু দয়া করে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার দায়ে গুলি করবেন না। এইটুকু প্রত্যাশা আপনাদের থেকে করতেই পারি।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে মন্তব্য করার জন্য।
@আদিল মাহমুদ,
একদম-ই উচিত নয়।
তা হয়ত ঠিক-ই – কিন্তু দেখা মাত্র গুলি, এই বিধান কিন্তু নেই – খাতায় কলমে দূরে থাক – সীমান্ত প্রহরীরাও তা করেন বলে মনে হয় না। হলে কি, ভারতে এত লোক ঢুকতে পারে? আর বড় একটা সংখ্যা শুধু নিয়মিত এপার ওপার করে কারবার করে – তারা নিশ্চয় কেউ জেমস বন্ড নয় যে – গুলি বৃষ্টির মাঝে অম্লান বদনে বেরিয়ে যাবে। একটা সামান্য চিন্তা পরীক্ষণ করে দেখুন ‘দেখা মাত্র গুলি’ (shoot at sight) – এই শব্দবন্ধটি ভারতবর্ষে জাতিদাঙ্গা-র সময়ে ব্যবহৃত হয় – এবং তাতে অচিরেই দাঙ্গা থামে – অনুপ্রবেশকারী – দাঙ্গাবাজ দের থেকেও হিংস্র এবং বেপরোয়া নিশ্চয় নয় – হলে ভিটেমাটি ছাড়ার কথা ভাবত না।
হ্যা বি জে পি খুবই সোচ্চার – তবে তারা কিন্তু শুধু অনুপ্রবেশ এর বিপক্ষে – তাদের দাবি ভারতবর্ষে প্রবেশ করতে চায় তাদের কর্ম-পাট্টা (work-permit) দেওয়া হোক। তাতে তারা সমস্ত নায্য সুযোগ সুবিধা (যে টুকু সামাজিক সুরক্ষা ভারতে প্রচলিত এবং সাধারণ নাগরিক রা পেয়ে থাকেন) পাবেন – খালি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না। এই পাট্টা-টি অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনর্নবীকরণযোগ্য হবে – মানে যতদিন খুশি ততদিন। অনেকটা যেরকম এই ব্লগস্থ নামজাদা লেখক রা মার্কিনী সবুজ-পত্র (green-card) সহযোগে ওখানেই স্থায়ী ভাবে বাস করেন। কংগ্রেস বা কমুনিস্ট দল গুলি-র চাই ভোট ব্যাঙ্ক – তারা অবাধে অনুপ্রবেশ করতে দিতে ইচ্ছুক – সামান্য একটা তুলনা দিলেই বোঝা যাবে – পশ্চিমবঙ্গের আয়তন বাংলাদেশের অর্ধেক (ক্ষেত্রফল এ) অন্যদিকে জনসংখ্যা কিন্তু ২/৩ ভাগ – তার মানে কি এপার বাংলার বৃদ্ধিমান বেশি? ও পার থেকে যারা আসেন তারা সহজেই রেশন কার্ড ও ভোটের কার্ড পেয়ে যান। এবং তারা কৃতজ্ঞ চিত্তে এক পুরুষ ভোট দেবে – এই চিন্তায় – রাজনৈতিক দলগুলো এসব করে থাকে।
না সবাই মুসলিম – তা কিন্তু মনে হয় না – এমনকি বেশীরভাগ-ই তাই কিনা সেটাও বলতে পারব না। ভারতে এক অদ্ভূত নামকরণ প্রথা চালু রয়েছে – হিন্দু এলে শরণার্থী আর মুসলিম এলেই অনুপ্রবেশকারী – এই মনোভাব এর কারণ অবশ্যই পেট্রো-ডলার। তবুও এই রকম শ্রেণীবিন্যাস মনে হয় না থাকায় ভালো। কিন্তু ভোট বড় বালাই – মুসলিম রা এককাট্টা ভাবে উলেমা দের ফতোয়া শুনে ভোট দেয় – এই বিশ্বাস এ – পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী – বিশেষ ইমাম ও উলেমা ভাতা চালু করেছেন – যেটিকে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অসংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। মমতা আপা পানি দেয় না বলে আপনাদের বিস্তর অভিযোগে রয়েছে – কিন্তু কোনো মুসলিম যদি একবার এদেশে চলে আসে – তাকে সেচ এর জন্য মমতা দেবী রোজ দু-ট্রাক মিনারেল পানি দেবেন – বিশ্বাস না হলে একবার এসে দেখে যান – ভ্রমণার্থী হিসেবে।
হ্যা – পাসপোর্ট পাওয়া একটু কঠিন বৈকি ভারতে – ১২০ কোটির দেশ কিন্তু – কোনো জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় সমস্যা হয়।
ওপরে অনেক লিখেছি – আশা করি একটা তোষণের রাজনীতির একটা ধারণা দিতে পেরেছি। কোন প্রশ্ন থাকলে স্বাগত।
এটা আমার মনে হয় না – সুরত-এ-হাল হিসেবে যা দেখি – সবই এর বিরুদ্ধে। এ কারণেই আমি সংখ্যা উল্লেখ করতে বলছিলুম – রোজ x লোক কে গুলি করা হয় – x এর মান এক হলেও সেটি ভয়ঙ্কর – কিন্তু তার পরেও যদি y লোক এপার ওপার করে সুস্থভাবে – তখন এ দুটির অনুপাত-ই স্থির করে দেবে – যে এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি অঘোষিত নীতিমালা। তাও – এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলাই ভাল – আমি শেষ কথা বলতে অপারগ। তবে সেটি আরো মাটির কাছাকাছি (পড়ুন সীমান্তের কাছাকাছি) লোকদের থেকেই কাম্য – দূরে বসে এসব বিশ্লেষণ খুব একটা সার্থক হবে না বলেই বোধ হয়।
দোষ পুরোই আমাদের প্রহরীদের, দায় তাই আমাদের-ই। তবে তা বলে আপনি পুরো ঝাড়া হাত পা নন কিন্তু। আমাদের দায়িত্ব যেমন মানবিকতা দেখান – এবং প্রহরীদের মানবিক করে তোলা। আপনাদের সেরকম দেশেই – কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে / জনসংখ্যা বৃদ্ধিহার কমাতে হবে – নইলে এভাবে অবাধে কত দিন চলবে? একটা কথা – বাংলাদেশীরা – একমাত্র নন – নেপালি লেপচা তামিল ইত্যাদি নানা সমস্যা ভারতের রয়েছে – মানবিক উন্নয়নের সূচক মতে – আমরা বাংলাদেশ এর থেকেও পিছিয়ে রয়েছি। তবু যে কিসের আশায় লোকে আসে? হয়ত সেই সনাতন গ্রাম থেকে শহর অভিমুখে যাত্রার মত অবস্থা – তাতে খুব কম লোকের-ই অবস্থা পাল্টায় – কিন্তু যায় সবাই। তাছাড়াও, ভোটব্যাঙ্ক নিরাপদে রাখতে হলে অবস্থার পরিবর্তন একেবারেই কাম্য নয় (রাজনৈতিক মনোভাব)। :-Y
তবে বিকট অসাম্য তো ভারত আর পাকিস্তানেও রয়েছে – আর তারা দেখতেও পাঞ্জাবিদের মত। এই দুটির দোহাই পেড়ে কিন্তু তারা আসতে পারে না। তার কারণ সীমান্ত নীরন্ধ্র। আর সেখানেও রোজ লোক মারা যায়। আর সংখ্যাটা নগণ্য নয় বরং অপর সীমান্তের একতরফা হত্যার সঙ্গে তুলনীয়।কিন্তু যেহেতু তারা উর্দিধারী তাদের মানবাধিকারকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যে আনি না। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত একেবারেই খোলামেলা – তার কারণ আমরা বাংলাদেশ (বাংলাভাষী) কে বন্ধু দেশ ও পাকিস্তান (উর্দুভাষী) কে শত্রুদেশ মনে করি। তবে হয়ত ঠিক ভাবে পালন করতে পারি না – সেটি শোধরান দরকার।
@বকধার্মিক,
সমেস্যা কি বি এস এফ রে লাগাইয়া দিতে কন ভারত সরকাররে, অপরাধীগো ধইরা মাইরা ঝুলাইয়া রাখুক। হুদাই পুলিশরে আজাব দিয়া লাভ কি?
@দারুচিনি দ্বীপ,
আমি তো ভারত সরকার নই – কোন কেষ্টু-বিষ্টু-ও নই। আমার কথা কেউ শুনবে না। আর শুনলেও – যে আমি এই নিদান-ই দিতুম – সেটিই বা আপনি জানলেন কি করে? :-s
প্রশ্ন করা যায় যে, অন্তত বাংলাদেশের পক্ষে ফেলানিকে কোনভাবে কি বাঁচানো সম্ভব ছিল ? একটু আলোকপাত করা যাক সে বিষয়টায় ।
ফেলানিকে যেখানে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে অর্থ্যাৎ কাঁটা তারের বেড়াটা বাংলাদেশ – ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্তের জিরো লাইন থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার ভারতীয় সীমানার অভ্যন্তরে অবস্হিত , কোন কোন জায়গায় এই দূরত্বটা প্রায় এক কিলোমিটার। বেড়ার ওপারে যাওয়ার আগেই ফেলানি ভারতীয় ভূখন্ডে অবস্হান করছিল এবং সেখানে বিজিবির প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। এতদূর ফেলানি কি করে গেল ? এখন দেখা যাক ফেলানি যাতে অতদূরে না যেতে পারে সে ক্ষমতা কি বিজিবির আছে বা ছিল ?
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমানা প্রায় ৪০৯৬ কিঃমিঃ দীর্ঘ। এই দীর্ঘ সীমানা পাহাড়া দেয় প্রায় ৪৫ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ এবং ৩০ ব্যাটালিয়ন বিজিবি। ৭৩০ ভারতীয় বিওপি বা বর্ডার আউটপোস্টের বিপরীতে আছে ৬৫০ বিজিবি আউটপোস্ট । একেকটি আউটপোস্টে গড়ে ২৫ জন দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। ভারতীয়দের একেকটি বিওপির মধ্যকার দূরত্ব গড়ে ছয় কিঃমি এবং বাংলাদেশের পক্ষে সেটা আরো অনেক বেশী। বলাই বাহুল্য যে , বাংলাদেশের পক্ষে কার্যকরভাবে সীমানা পাহাড়া দেয়া কাগজে কলমেই ‘মিশন ইমপসিবল’। বাংলাদেশ থেকে কেউ ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে সেটা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিএসএফের নজরে পরার সম্ভাবনাই অনেক বেশী। যেসব জায়গায় বিএসএফ মোতায়েন আছে এরকম প্রতিটি জায়গা নজরে রাখার জনশক্তি বিজিবির নেই , অনুপ্রবেশকারীর কথা বাদই দিলাম।
ধরা যাক , বিএসএফ যদি তাদের ক্যাম্পে কাউকে অন্য কোনভাবে মারায় পরে কাঁটাতারের উপর বাঁদুর ঝোলার মত ঝুলিয়ে দিয়ে ছবি উঠায় , সেটা এপার থেকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম । আগেই বলেছি যে , কাঁটাতারের বেড়া ভারতীয় সীমানার বেশ ভেতরে এবং সব জায়গায় বিজিবি নেই। ২০০১ সালের ঘটনার দিন থেকেই থেকে বিএসএফের জন্য বিশেষ পরিস্হিতিতে হেলিকপ্টার গানশীপ দিয়ে ক্লোজ এয়ার সাপোর্টের অপশন রাখা হয়েছে ওপারে । বিএসএফের উপর গুলি চালালে সেটা শুধু মাটিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নিরাপদ লিভিং রুমে বসে অনেক কিছুই ভাবা এবং বলা সহজ কিন্তু বাস্তবতা তাতে বদলে যায় না।
@সংশপ্তক,
বিজিবি ইচ্ছে করলেই ফেলানিকে বাঁচাতে পারতো এমনন দাবী কিন্তু আমি করিনি। বিজিবি তাদের ক্ষমতার তূলনায় কাজ ভালই করে।
বর্ডার পেরিয়ে ওপারে বেমক্কা গোলাগুলি শুরু করলে ভারতীয়রা ভয় খেয়ে খুনাখুনী বন্ধ করে দেবে এই জাতীয় সমাধান কিন্তু আমি কোনদিন দেইনি :)) ।
তবে যে যুক্তিতে এই জাতীয় নির্বিচারে খুনাখুনী ভারতীয় দাদারা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই যুক্তি আমাদের রক্ষকরাও ভালই মানেন।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মন্তব্যটিকে আপনার লেখার সাথে সম্পূরক আমার নিজস্ব মতামত বলতে পারেন। আপনি এমন দাবী যে করেননি সেটা নিশ্চিয়ই আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি। তবে , অনেক পাঠকের মনে এধরনের প্রশ্নের উদয় হয় বিধায় তাদের জন্য কিছু তথ্য সরবরাহ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।
ভারতীয়দের নিয়ে আমি তেমন একটা চিন্তিত নই। কৌশলগত, ঐতিহাসিক এবং ভৌগলিক কারণে দেশটির কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আমার কিছু আগ্রহ থাকলেও ‘প্রকাশ্যে’ তাদের নিয়ে আমি সাধারনত কোন বিশদ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি। আমার মূল আগ্রহ বাংলাদেশ ঘিরেই আবর্তিত হয়।
এটা তো মানবেন যে , বাংলাদেশের প্রতিটি সামরিক এবং বেসামরিক প্রতিষ্টানে বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দেয়া হয় এবং স্বভাবতই তারা বাংলাদেশের সভ্যতা এবং সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ন করেন। তাদের আচরণ আর দশটা বাংলাদেশীর মতই।
আপনি হয়তো উত্তর আমেরিকায় বসতি গড়েছেন বিধায় একটি তুলনামূলক সামাজিক সাংস্কৃতিক দর্শনের সাথে পরিচিত কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ স্হানীয় সংস্কৃতির চশমা দিয়েই নিজেকে এবং বিশ্বকে বিচার করে। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। গত একম বছরে পোষাক শিল্পে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রায় হাজার খানেক নারী কিশেোরী আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছে অথবা কংক্রিট চাপা পরে মৃত্যবরণ করেছে। এটা বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই গ্রহন করেছে। চায়ের দোকানে কিংবা খবরের কাগজে এসব নিয়ে লেখালেখি তাদের মৃতদেহ কঙ্কাল হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অনলাইনে মানুষ অভিনেত্রী শখের বিবাহপূ্র্ব সঙ্গী নির্বাচনের মত বিষয় নিয়েই বেশী আগ্রহী। :))
জনগনের পয়সায় পরিচালিত ছাত্রাবাসে একশ ছাত্রী ধর্ষণ করা কিংবা সংলগ্ন এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম যারা করে তাদের নিয়ে কেউ কিছু বলতে চান না কারণ এরা বিপ্লবী এবং এদের কোন ইউনিফর্ম নেই। এরাই আবার জনগনের পয়সায় পড়ালেখা করে জনগনের টাকায় বানানো সেতু উদ্বোধনের আগের দিনই ধ্বসিয়ে দেয় , এরাই সচিব হয়ে দূর্নীতি করে এবং দেশের চরম দূঃসময়ে বিদেশে চিড়িয়াখানা দেখে বেড়ায় ! এদের নিয়ে কিছু বলা যাবে না কারণ এরা বিপ্লবী যারা ইউনিফর্ম পরিধান করে না। গত ছয় মাসে জামাতীদের বিরুদ্ধে মিনারেল ওয়াটার নিয়ে ফেইসবুকে পোজ দিয়ে যারা আন্দোলন করেছে তাদের কয়জন মরেছে আর কতজন ‘ঘুষখোর-ক্রসফায়ারকারী’ পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরন করেছে সেই হিসাব আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।
সংস্কৃতিকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তিত হতে হয় এবং প্রকৃতি এক্ষেত্রে সবসময় মোটামুটি নির্দয়। যে সংস্কৃতি শক্ত ভিত গড়বে সেটাই টিকে যাবে , সেটা ভাল মন্দ কিনা তা গুরত্বপূ্র্ন নয়। সোজা হিসাব ।পলিটিক্যাল কারেক্টনেস নিয়ে ডিজিটাল গ্রাফিটি সহজে আঁকা গেলেও মানব ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে , প্রকৃতি পলিটিক্যালি কারেক্ট নয় , কখনও ছিল না। রোমে থাকতে হলে রোমানদের মতই চলা বুদ্ধিমানের কাজ। এর অন্য বিকল্প রোম দখল করে সেখানে নিজের মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়া যা সহজ কাজ নয়।
@সংশপ্তক,
ভ্রাতা, আমি বাংলাদেশ এমনকি ভারতীয় বাহিনীর কর্মকর্তা্রও মার্শাল পরিচয় টেনে সমালোচনা করিনি। আমি অনেকটা আপনার কথাই বলেছি; যে কোন দেশ বা সমাজের লোকেই সাধারন ভাবে সেই সংস্কৃতির দ্বারাই চালিত হয়, অন্য সংস্কৃতির কাছে হয়ত তার অনেক কিছুই অস্বাভাবিক মনে হয়। সরকার, নানান বাহিনী, এমনকি আম জনতা কেউই এর বাইরে নয়।
আমার কথাতেই কিন্তু আছে;
আদিল সাহেব, আরে না । আমি জানি যে আপনি মার্শাল পরিচয় টেনে কথা বলেন নি এবং বলবেনও না। এছাড়া আপনার নিজের আপনজনেরাই যেখানে আছেন , সেখানে এসবের প্রশ্নই উঠে না। 🙂
আমার মন্তব্য আসলে কিছু সেন্টিমেন্টালিস্ট পাঠকদের উদ্দেশ্যে করা যারা খুবই অপ্রতুল তথ্যের উপরে নির্ভর করে অনেক বড় উপসংহার টানতে পছন্দ করেন। এটা আমি বিগত কয়েক বছর বছর ধরে ঘনিষ্টভাবে লক্ষ্য করে আসছি। এতদিন নীরব থাকলেও ‘ভাইরাস সংক্রমণের’ হার আশংকাজনক হারে বাড়তে থাকায় , কিছু না বলে আর পারলাম না। আপনার বক্তব্যের সাথে আমিও সহমত প্রকাশ করছি যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বুঝতে হলে এ অঞ্চলের সংস্কৃতিকেও জানতে হবে ।
@সংশপ্তক,
আপনার কথাগুলি ভাল লাগলো। তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে, আশা করি জবাব দেবেন। বাস্তবতা কিভাবে বদলানো যাবে সে ব্যাপারটা যদি একটু খুলে বলতেন ভাল হত। এখানে অনেককেই অনেক মতামত দিতে দেখছি,তবে কোনটিতেই আমার সমাধান নজরে আসছে না। যুদ্ধে ভারতের সাথে আমরা পারবনা কোনদিন। আমার তো মনে হয় চীন ছাড়া এই মহাদেশের কেউ যুদ্ধ করে একমাসের বেশি টিকে থাকতে পারবে না ( ইসরায়েলের কথা হয়ত আলাদা), সেক্ষেত্রে যুদ্ধ করার চিন্তা বা বি এস এফ এর উপর গুলি করার চিন্তাটা বাতুলতা বলেই মনে হয়। ভারতীয় পন্য বর্জনের চিন্তাটা আমার মাথায় এসেছে, কিন্তু কতদিন সেটা? মনে তো হয়না ঘরের মানুষরাই সে কথা শুনবে, আর তাছাড়া, খাদ্য দ্রব্যের জন্য ভারতকে লাগবে বলেই মনে করি। সেখানে সমাধান আসলে কি? আমি কোন প্রকার সমাধান দেখতে পাচ্ছি না 🙁 ! আমি কিন্তু আপনার মতামত জানার জন্যেই বললাম, অবশ্যই বিতর্কের জন্য না, ধন্যবাদ 🙂
@দারুচিনি দ্বীপ,
আশাহত হবেন না , সমাধান অবশ্যই আছে তবে তার জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। শুধু এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এবং ভারতের জনগন ও সরকার সেই সমাধানের জন্য তৈরী নয় – এটাই দুঃসংবাদ । এসব নিয়ে বিশদ পোষ্ট দেয়া যায় , তবে সেক্ষেত্রেও এ বিষয়ে প্রকৃত মুক্ত মন নিয়ে আলোচনা করার মত পরিস্থিতি এখনও তৈরী হয় নি , দুঃখজনক হলেও সত্য ।
দেশ, জাতি. রাষ্ট্র, রাজনীতির উর্ধ্বে যে মানবতা, দুই পাড়ে যে অভাবী মানুষের স্রোত, যাদের আসলে কোন ভাষা নেই, দেশ নেই, রাষ্ট্র নেই, জাতিত্ব নেই আছে শুধু ক্ষুধা, যে ক্ষুধা কাঁটাতার মানে না, রাষ্ট্র বুঝে না, আইন বুঝে না, বিএসএফ বুঝে না, বিজিবি বুঝে না… বুঝে শুধু বেঁচে থাকার জন্য খেতে হবে! মানুষের এই অধিকার পৃথিবীর সমস্ত সীমান্ত আইনের উর্ধ্বে…।
সমবিষয়ে নোংরা খিস্তি, উগ্র জাতীয়তাবাদ, চরম বিদ্বেষপূর্ণ পোষ্টের বিপরীতে আপনার এই লেখা সময়োপযোগি। আদিল ভাই, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
০১. নিতান্তই পেটের দায়ে অভাবী মানুষগুলো আইন ভেংগে সীমান্ত পারাপার করে। গুলি বা ডান্ডাবাজীতে আইন রক্ষা হতে পারে, দেশপ্রেমের ঝান্ডাটি সমুজ্জ্বল হতে পারে, কিন্তু এটি অভাব, ক্ষুধা, চোরাচালান, সীমান্ত দুর্নীতি বা সংঘাত — কোনটিরই অবসান এনে দেবে না।
০২. সীমান্ত চোরাচালান, দুর্নীতি ও সংঘাতের সঙ্গে বিএসএফ-বিজিবি সমানভাবে জড়িত। দু-পক্ষের সমঝোতায় অবৈধ অস্ত্র থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত চোরাচালান হয়। একই সমঝোতায় উগ্রপন্থীরাও এপার-ওপার চলাচল করে, অবস্থান নেয়। আর এ কথা কে না জানেন, দুপারের চোরাই অর্থনীতি চিনি বা গরু বা ইলিশ বা পেট্রোলের ওপর অনেকটাই স্থিতিশীল থাকে? আর এর সংগে লাখো-কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা [?] নির্ভরশীল।
০৩. সীমান্ত আইন মানতে দু-দেশের নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চাই অভাব-দুর্নীতির অবসান, বিকল্প কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, বৈধ পন্থায় পন্য আনা-নেওয়ার সুবিধা বৃদ্ধি — ইত্যাদি। নইলে শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ বা জবাববিহীন গুলি বা কারাবাস কোন সমাধান নয়। কাজটি কঠিন, কিন্তু দুদেশের সরকারের আন্তরিকতায় অসম্ভব হবে না।
০৪. ফেলানী এখন জঙ্গল আইনের অপর নাম অথবা অবিচারের সর্বনাম। স্থিরচিত্রতে যেমন দেখা যায়, আসলে গুলিবিদ্ধ অপুষ্ট কিশোরীর দেহটি কাঁটাতারে ঝুলছে না, কাঁটাতারে ঝুলছে যেন আমারই গুলিবিদ্ধ দুঃখিনী বাংলা!
—
ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ায় আদিল মাহমুদকে ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
– এটাই সার কথা। আসলে এই একটি ছবি আংগুল তুলে দেখায় আমাদের বহু ব্যার্থতা। অর্থনীতি…মানবাধিকার…পররাষ্ট্রনীতি…স্বচ্ছতা……
@আদিল মাহমুদ,
[img]https://fbcdn-sphotos-a-a.akamaihd.net/hphotos-ak-prn1/24294_647211338622523_2089030257_n.jpg[/img]
এই থ্রেডে পোস্ট মর্টেম ফেলানীও থাক। (U)
@বিপ্লব রহমান,
ছবিটা দেখিনি আগে। ধন্যবাদ ভ্রাতঃ।
ভারতীয় আদালত নিশ্চয়ই সন্দেহাতীতভাবে প্রমান পেয়েছে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রমকারি এই মেয়ে অভিযুক্ত অমিয় ঘোষের জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
@বিপ্লব রহমান,
সঠিক কথা বলেছেন বিপ্লব ভাই। পুরাপুরি একমত আমি। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
সহমত।ভাল বলেছেন।
এই সমস্যা সার্বজনীন। পৃথিবীর প্রতিটা দেশ তাদের মিলিটারীর অত্যাচার ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখে।
চীটাগাঙে বাংলাদেশের সেনারা উপজাতিদের ওপর যে অত্যাচার করেছে বা মেয়েদের ধর্ষন করেছে, তাদের কারুর কোর্ট মার্শাল হয়েছে?
আমেরিকাতেও কোর্ট মার্শাল হয় লোক দেখানো।
ভারত, বাংলাদেশ বা আমেরিকা মিলিটারির পাপ ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখে-কারন নইলে মিলিটারির মনোবল হ্রাস পাবে।
সুতরাং এক্ষেত্রে সমস্যাটা মিলিটারিজমের। জাতিয়তাবাদের।
ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশগুলির অস্তিত্ব যদ্দিন থাকবে, মিলিটারীর প্রতি ক্ষমাসুলভ আচরন ও অব্যাহত থাকবে।
@বিপ্লব পাল,
যারা আজ ফেলানি ঘটনা নিয়ে মানবাধিকারের বানী দিচ্ছেন আমি ভাল করেই জানি পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে আমাদের সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা উঠলে অনেকের পিছিয়ে যাবেন (বিশেষ করে ডানপন্থী ভাবাপন্ন ব্যাক্তিরা)।
মিলিটারিজম ঘটিত জাতীয়তাবাদের সমস্যা সার্বজনীণ সত্য। তবে আমাদের অঞ্চলে আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরো বহুগুনে বাড়ায় সামগ্রিকভাবে আইনী ব্যাবস্থাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার সর্বজনগ্রাহ্য প্রবনতা।
ফেলানি বিচার পায়নি, যদিও এটা ১০০% পরিষ্কার যে তাকে গুলি করে হত্যা করা ভারতীয় আইনেও সিদ্ধ হয়নি। বেড়া পার হতে থাকা মানুষ কোনদিন কারো জীবনের প্রতি হুমকি হতে পারে না। এখানেই আইন ও প্রচলিত ব্যাবস্থার সঙ্ঘাত। কাগুজে আইন বানানো হয়েছে স্রেফ নিয়ম রক্ষার্থে। যারা আইন বানিয়েছে তারাই অন্যদিকে বলছে যত খুশী গুলি চালাও কিছু হবে না। কাজেই এখানে সেই সিষ্টেমই তার নিজ তাগিদেই অভিযুক্তকে রক্ষা করবে। এই বিচারের প্রহসন কেন করা হয়েছিল সেটাই আসল প্রশ্ন। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী হলে বলতে হয় নির্বাচনের আগে আগে আওয়ামী লীগকে আরেকটি চপোটাঘাত লাগাতে।
যা বলছিলাম, আমাদের সমাজে আমরা জানি আইন কানুন সবই আছে, অন্যদিকে এই শিক্ষাও ভালভাবেই পাই যে সে আইনকে পাশ কাটানোর হাজারটা ব্যাবস্থা আছে। এতে তেমন অন্যায় কিছু নেই, কারন সকলেই যা করে সেটা করায় আর নৈতিকতার তেমন বাধ্যবাধকতা থাকে না।
আমেরিকার কথা যে বললেন সেসব দেশে জাতীয়তাবাদ ঘটিত সমস্যা থাকলেও এই সমস্যাটা তেমন নেই। অবৈধভাবে মেক্সিকানরা আমেরিকায় কম ঢোকে না, ড্রাগ/ক্রাইমের এক বড় উতসমুখ মেক্সিকান বর্ডার। আমেরিকানরা কি সেখানে ছূতা বেছূতায় গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে? উর্দিওয়ালাদের কাছে কাগুজে মানবতা ফতার তেমন মূল্য নেই, তারা যেভাবে নির্দেশ পায় সেভাবেই চলে। আমেরিকানদের ক্ষেত্রে এখানে তাই কাজ করে। তারা কাগজে যা লেখা আছে তাইই মানে, সে জন্যই গুলি করে না। আমাদের অঞ্চলের কাজ কারবার এভাবে চলে না। এখানেই তফাত। আপনি তো আমেরিকাতেই থাকেন। ফেলানি জাতীয় ঘটনা আমেরিকায় ঘটলে সেখানে গনপ্রতিক্রিয়া কেমন ঘটত নিশ্চয়ই ভালই জানেন। সেখানে কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় মিলিটারী বাঁচাও এমন হুজুগ উঠত না।
@আদিল মাহমুদ,
তা আর বলতে! তবে কিছু ব্লগে ভিন্ন দৃষ্টিতেও বিষয়টাকে বিশ্লেষন করা হচ্ছে। প্রশ্ন তো স্বাভাবিক ভাবে উঠবেই যে, এই ফেলানীরা কারা, কেন তারা অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করে, ‘বি ডি আর’ ও ‘বি এস এফ’ এর ভুমিকা কী, তারা এই বিষয়টাকে কেমন ভাবে দেখে ইত্যাদি। বিপ্লব রহমান যেমন বলেছেন- ‘সীমান্ত আইন মানতে দু-দেশের নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চাই অভাব-দুর্নীতির অবসান, বিকল্প কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, বৈধ পন্থায় পন্য আনা-নেওয়ার সুবিধা বৃদ্ধি — ইত্যাদি। নইলে শুধু আইনের কঠোর প্রয়োগ বা জবাববিহীন গুলি বা কারাবাস কোন সমাধান নয়’।
এক ফেলানী হত্যাকারীর ফাঁসি সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান দেবেনা। হাজার ফেলানী এর আগেও মরেছে, আগামীতেও মরবে। আমরা ফেলানী হত্যার বিচার চাই আর একই সাথে নিজ দেশে পেটের ভাত যোগান, তথা কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচনও চাই। পেটের দায় ছাড়া মৃত্যু ঝুকি নিয়ে কেউ ওপারে নিশ্চয়ই যাবেনা। পাহাড়ের কথা কী আর বলবো? কবি এখানে বড়ই নিষ্ঠুরভাবে নীরব।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগল। তবে এজায়গায় এসে একটা কমেন্ট না করে পারলাম না।
আফগানিস্থান আর ইরাকে আমেরিকান সৈন্যদল যে সকল বর্বরচিত আচরণ করে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নি? অনেক মহিলা এবং পুরুষ অফিসাররাও যুদ্ধবন্দীদের শারীরিক দিক থেকে নিগৃহীত করে। এ নিয়ে অনেক সংবাদই তো প্রকাশ হয় সে সময়। আর ৯/১১ এর পরে আমেরিকা মানবাধিকার কে কতটা পাত্তা দিয়েছিল তাতো সবাই জানে। আমি এন্টিয়ামেরিকান না, তবে এই সব ঘটনার পরেও আমেরিকার মানবাধিকার নিয়ে বড়াই করা বিশেষ সাজে বলে মনে করি না। আর স্ট্রেটেজিক ফায়দা লোটার জন্যে কিভাবে মানবাধিকারের চুলোয় জল ঢেলে দিতে হয় তা আমেরিকা ভালই জানে এটা আফগানিস্থানের আর পাকিস্থানের গত ২-৩ দশকের ইতিহাস পড়লেই জানা যায়। তবুও আমেরিকান সেনাকে মানবিকতার মূর্ত প্রতীক ভাবাটা বোধ হয় ঠিক না।
বর্ডারে মৃত্যুর ঘটনা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা না। প্রতিদিনই হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান রাষ্ট্রীয়স্থরে আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।
@সৈকত,
আপনার মন্তব্য ভাল লাগল। খুবই যৌক্তিক পয়েন্ট তুলেছেন, এই প্রসংগ এখনো কেউ তোলেনি কেন কে জানে।
প্রথমেই বলি যে কোন সুনির্দিষ্ট পয়েন্টে দুই পক্ষের তূলনা করা মানে কোন পক্ষ সর্বোতভাবে শ্রেষ্ঠ দাবী করা নয়। আমি এখানে সামগ্রিকভাবে আমেরিকা ও বাংলাদেশ/ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতির তূলনা করিনি। অতি নির্দিষ্ট একটি পয়েন্ট, সীমান্তে নির্বিচারে হত্যা করার নীতির তূলনা করেছি; যা অবশ্যই সামগ্রিকভাবে দুই অঞ্চলের মানবাধিকারের তূলনা নয়, যদিও সম্পর্কিত। কাজেই আমেরিকাকে মানবাধিকারের মূর্ত প্রতীক এমন দাবী করার প্রশ্ন আসে না।
তবে একজন ভারতীয় যদি বলে যে রাতের আঁধারে অবৈধ ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করাকে তারা যায়গায় দাঁড়িয়ে গুলি করে হত্যা করার উপযুক্ত কারন মনে করে তবে একজন বাংলাদেশী বা সাধারন মানুষ হিসেবেই আমি এ ক্ষেত্রে আমেরিকার উদাহরন দেখাবো। উদাহরনটা কি যথেষ্ট যুক্তি সংগত নয়, আপনি কি বলেন? প্রেক্ষাপটও প্রায় একই; অর্থনৈতিক তাড়নায় গরীব মেক্সিকানরা অবৈধভাবে সীমানা পাড়ি দেয়, সাথে সাথে প্রচুর ক্রিমিনালও নানান ক্রাইম করে। বরং আমেরিকানদের মেক্সিকানদের গুলি করার আরো ভাল যুক্তি দাঁড়া করানো যায় কারন আমেরিকার ভেতরের ক্রাইম/ক্রিমিনালদের এক বড় উতস এই সীমান্ত। আমেরিকা অন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেও অন্তত এই ক্ষেত্রে কি উদাহরন হতে পারে না?
আরেকটা ভুল মনে হয় করেছেন। আমি আমেরিকান সৈন্যদলের কোন প্রসংগ এখানে আনিনি। আমেরিকান বর্ডার পাহারা দেয় ইউএস আর্মি বা মেরিন নয়। বর্ডার গার্ড, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এরা সম্পূর্ন ভিন্ন বিভাগ।
ইরাক আফগানিস্তানে যুদ্ধবন্দীদের ওপর অবশ্যই আমেরিকান কিছু সৈন্য অমানবিক অত্যাচার করেছে। এ কারনে আমেরিকাই বিচার করে কয়েকজনকে জেল খাটিয়েছে, আরো বহু লোকের বিরুদ্ধে নানান মাত্রায় ডিমোশন (আবু গারিব জেলের কমান্ডার), ডিজ অনারেবল ডিসচার্জ এ জাতীয় বিভাগীয় ব্যাবস্থা নিয়েছে। অবশ্যই তার মানে এই না যে এখন আর এসব হচ্ছে না কিংবা ভবিষ্যতে হবে না এমনকি আলোচিত ঘটনার সংগে জড়িতরাও সকলেই সাজা পেয়েছে। ভারত বা বাংলাদেশে কি এতটুকুও সম্ভব হত?
যুদ্ধ বিগ্রহ সোজা কথায় গায়ের জোরের কাজ কারবার যেখানেই জড়িত সেখানেই নিয়ম মেনে মানবাধিকার পুরো সম্মান করে কোন পক্ষ কোনদিন চলে না। আমেরিকান সৈন্যরা ৯/১১ এর পরে নয়, আগেও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে করেছে, কোরিয়ায় করেছে…… অপ্রিয় প্রসংগ হলেও ৭১ সালে পাক বাহিনী আমাদের বহু ভয়াবহ অত্যাচার করেছে এমন বহু তথ্য প্রমান থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারাও সব সময় জেনেভা কনভেনশন মেনে যুদ্ধবন্দী ট্রিট করেছে এমন মনে করার কারন নেই। যুদ্ধের মত আসুরিক রক্তারক্তি ঘটবে আর এমন কিছু হবে না এটা অবিশ্বাস্য। বিপ্লব যেমন বলেছে সব সরকারই চেষ্টা করে নিজ সৈন্যদের মনোবল ধরে রাখতে এসব ঘটনা যতটা সম্ভব চেপে যেতে। ডিপার্টমেন্টাল শাস্তি বা কোর্ট মার্শাল হলেও হয় কঠোর গোপনীয়তার মাঝে।
আমার দৃষ্টিতে এসব ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়, অস্বাভাবিক হল ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা করে অমানবিকতা সমর্থন করা। যেমন ফেলানি নির্মম ভাবে নিহত হয়েছে; আমরা ধরে নিতে পারতাম চরম দূঃখজনক হলেও এর জন্য দায়ী কেবল নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি। কিন্তু ভারত সরকার বিচারের নামে এক প্রহসন করে সে উপায় বন্ধ করে দিয়েছে। একই কথা আমাদের লিমনের জন্যও। লিমনের ঘটনা ঘটিয়েছিল র্যাবের মাত্র কয়েকজন সদস্য। সরকার তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যাবস্থা নিলেই পারত, সেটা না করে সরকারী যন্ত্র ব্যাবহার করে সরাসরি অন্যায়ের পক্ষ নিয়েছে, অবাধে মিথ্যাচার করতেও বাধেনি। দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিলে বলার কিছু থাকত না।
মানবাধিকার দৃষ্টিতে যদি আমেরিকাকে বিচার করতে বলেন তো আমি বলব যে সে দেশের ভেতরে থাকলে অবশ্যই আমি তাদের বহু যোজন এগিয়ে রাখব, অন্তত নিজের জন্ম গ্রহনকারী দেশের তূলনায় তো বটেই। আমেরিকান বাহিনী বিশ্বময় যাইই করুক, নিজ দেশের মাটিতে নিজ নাগরিকদের আমাদের আইন শৃংখলা বাহিনী যেভাবে ট্রিট করে সেভাবে কোনদিনও ট্রিট করবে না। এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি।
মানবাধিকার স্কেলে আমেরিকার চেয়েও ভাল অবস্থানে থাকা কানাডা কিংবা সুইডেন ডেনমার্ক এদের কথা বলতে পারতাম তাহলে হয়ত ইরাক আফগান আসত না। কিন্তু বর্ডার কিলিং প্রাসংগিতার কারনে তাদের উদাহরন আনিনি। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা-মেক্সিকো জুতসই উদাহরন।
– আলোচনা কি কোন সরকারের আমলেই কম হয়েছে? কতটা ফল পাওয়া যাচ্ছে?
@বিপ্লব পাল,
নাহ বিপ্লব দা, মনে হয় ৩ নং দেশটি এইরকম বর্বর না। প্রথম ২টার তুলনা ঠিক আছে।
@বিপ্লব পাল,
এত সহজভাবে বুঝিয়ে দিলেন, তারপরও কারো মাথায় না ঢুকলে সেটা আলাদা ব্যাপার।
লিমন নিয়ে তোলপাড় হয়নি??? ক্রসফায়ার নিয়ে ফায়ার হওয়ার বাকী আছে আরও?? নাকি ফেলানি ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে ক্রসফায়ার নিয়েও ওয়ার্মআপ করে নিতে হয়? আপনার এই পোস্টের দুইটি ভাগ করলেন না কেন, আদিল ভাই? এক অর্ধেক থাকত বিদেশী গুলিবাজদের নিয়ে, বাকীটা স্বদেশী গুলিবাজকেন্দ্রিক………..
আজ যখন বাংলাদেশের মানুষ একটি অমানবিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করছে, তখন তাদের ভেতর জাতীয়তাবাদী জোশ ঢুকিয়ে দিতেই হবে যেনতেনভাবে???
মানুষ যখন প্রতিবাদ করে, তখন স্বতঃস্ফুর্তভাবেই করে…..তারা তো আর ডিপ্লোমেটিক নয় যে, সবসময় ভারসাম্য বজায় রেখে কথা কইবে……..তাই যখন সামনে ফেলানি আসে, তখন এটি নিয়ে শোরগোল তুলে, আবার লিমন এলে তা নিয়েও মেতে উঠে….
এই মানুষেরা কিন্তু সাধারণ মানুষ……সুশীলদের মত ছকবদ্ধ প্রেজেন্টেশন উপহার দিতে তারা আসলেই পারে না……..
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এমন কোন পাপ করেনি, একটি অমানবিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করার আগে তাদের…………..
@কাজি মামুন,
প্রশ্নটা করেছেন আদিল মাহমুদকে, তিনি তার মত করে এর উত্তর হয়তো দিবেন। তবে আমার মনে হয়না আদিল মাহমুদ তার এই স্বল্প পরিসরের লেখায় এটাই মিন করেছেন। সমাজে বা রাষ্ট্রে কোন একটা অঘটন বা আনাচার অত্যাচার ঘটলে তার তাতক্ষণিক প্রতিবাদ বা বিচার দাবী করা যেমন প্রয়োজন তেমনি এই অঘটন বা অনাচারের উৎস কোথায় সেটা বের করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন, যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ঘটনার উভয়দিক বিবেচনায় না এনে একতরফা ব্লেইম গেইম খেলায় মূল চিত্র ধরা যাবেনা। ‘বি ডি আর’ এর গুলিতে ‘বি এস এফ’ এর সদস্যরা মারা যাওয়ার পর ভারতীয়দের ফিলিংসও আমাদের মতই হয়। তাদের প্রতিক্রীয়া বা মন্তব্যগুলো পড়লে বুঝা যায় বাংলাদেশ সব সময়ই অত্যাচারী আর তারা অসহায় ভিকটিম।
অপ্রাসঙ্গীক একটা ঘটনার কথা বলি- ড্রাগাসক্ত, মাদকাসক্ত ঐশী তার মা-বাবাকে খুন করলো। সাথে সাথে আওয়াজ উঠলো- ১৪শো বছর আগেই নবীজী বলে গেছেন মদ আর ড্রাগ হারাম। পশ্চিমা কালচার এর জন্য দায়ী। এখন এই ঘটনায় মদ-ব্যবসায়ী গাঁজা ব্যবসায়ী কতটুকু দায়ী, আর কতটুকু তার মা-বাবা আর রাষ্ট্রীয় সমাজ ব্যবস্থাপনা? কোন ব্যবস্থায়, কোন পথ ধরলে আর কোন যুবক যুবতি ঐশীর মত হবেনা সেটা নিরুপণ করতে হবে, সেটাই দিতে পারে সমস্যার পূর্ণ স্থায়ী সমাধা্ন।
শুধু এখানে নয়, অন্যান্য ব্লগেও বিভিন্ন এঙ্গোল থেকে ফ্যেলানী হত্যা ও তার বিচার বিষয়টার প্রচুর আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে। প্রতিবাদের সাথে সাথে আত্মসমালোচনারও প্রয়োজন আমাদের নিজের স্বার্থেই।
@কাজি মামুন,
আকাশ মালিকের কথায় কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। এবার আমার কথা বলি।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে কাগুজে আইন কানুন, কঠোর শাস্তির ব্যাবস্থা এসব খুব বেশী কার্যকর হয় না যতক্ষন না লোকে সে আইন মন থেকে মেনে চলার মত মানসিকতা তৈরী করে নিতে পারে। অর্থাৎ, স্থানীয় প্রচলিত সংস্কার খুব গুরুত্বপূর্ন। যেমন ধরেন নারী নির্যাতন। এর বিরুদ্ধে আমাদের দেশে কঠিন আইন কানুন আছে। তাতে লাভ নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, কিন্তু কতটা? সেদিন একটি ভিডিও দেখলাম যেখানে হুমায়ুন আহমেদের গল্পের দৃশ্যের মত উতসব উতসব আমেজে এক মহিলাকে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তি/মাওলানা সাহেবের সদয় উপস্থিতিতে দুই বীর বেদম মার মেরে সামাজিক বিশুদ্ধতা রক্ষা করছে। আশে পাশে শয়ে শয়ে লোক আসন পিঁড়ি গেড়ে উতসব উপভোগ করছে। নারী নির্যাতন আইনের হাত এখানে পৌছাচ্ছে না কেন? এর জবাব সেখানেই; কারন এই ধরনের গ্রাম্য সালিশ, সামাজিক বিশুদ্ধতা রক্ষার নামে প্রকাশ্য নারী নির্যাতন আমাদের সমাজের প্রচলিত নর্ম অনুযায়ী পূর্ন গ্রহনযোগ্য, এর মাঝে যে গুরুতর অন্যায় হচ্ছে সেই বোধ অধিকাংশ লোকের নেই। আমার কাছে পেটানোর দৃশ্য যতটা না খারাপ লেগেছে তার চেয়ে অসহ্য লেগেছে শয়ে শয়ে লোকের নীরব দর্শকের মত সে দৃশ্য উপভোগ। থানা পুলিশও নেহায়েত মিডিয়ায় তোলপাড় না হলে এসব ঘাটাতে চায় না। ঘটনার শেষ পর্যায়ে স্থানীয় সাংসদের বক্তব্য খুবই কম্পেলিং। উনি মিডিয়ার লোকের ওপর ব্যাপক ক্ষিপ্ত (যারা ইতোমধ্যেই স্থানীয় গন্যমান্যদের হামলার শিকার); কারন ওনার মতে মিডিয়া ছোট একটা ব্যাপার কেন্দ্র করে এলাকার বদনাম করছে।
ধরা যাক, এই চক্রের কোন ব্যাক্তি যদি তাদের গাঁয়ের কোন মহিলা আরব দেশে গৃহকর্মচারী হিসেবে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে প্রতিবাদের নৈতিক জোর কতটা পাবে? তার প্রতিবাদ কি অনেকটা ভন্ডামির (হয়তবা মূর্খতা) মত শোনাবে না?
– কারণ খুবই সরল। আমার কাছে অন্তত দুই গুলিবাজিরই মৌলিক উতস এক; যা লেখায় বর্ননার চেষ্টা করেছি। অমানবিক ক্রশফায়ার হালাল করে আমরা অপরাধ কমিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছি আর ভারতীয়তা অবাধে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে অবৈধ অভিবাসীদের হাত থেকে সহজে রেহাই পাচ্ছে। এতে কি দ্বি-মতের খুব বেশী কিছু আছে?
সীমান্তে হত্যাকান্ড যা নিয়ে আমরা তোলপাড় করছি সে নিয়ে আমাদের সীমান্ত কর্তার বক্তব্য তো শুনেছেন। তাতে কি বুঝলেন? আমাদের সীমান্তকর্তার সাথে ভারতের সীমান্তকর্তার মানসিকতার পার্থক্য কতটা বলতে পারেন? ফেলানির যায়গায় কোন গরু চোর গুলি খেয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় লটকে থাকলে সেটা আমাদের সীমান্তকর্তাও পূর্ন জাষ্টিফাইড বলে রায় দিতেন। ফেলানি হয়ত তার সমবেদনা পাবে সে গরু চোর নয় এই কারনে, মানুষ হিসেবে নয়। এটা তো পরিষ্কার?
আজ কোন কারনে অর্থনীতির পাশা উলটে বাংলাদেশ উচ্চ অবস্থানে থাকলে ভারত থেকেই হু হু করে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করত। তখন আমাদের সীমান্তকর্তারা ঠিক কি নীতি নিতেন বলে আপনি বিশ্বাস করেন?
দুই সীমান্তকর্তাদেরই এই মানসিকতার উতস ব্যাক্তিগত কোন নীতি নয়; স্থানীয় কালচার।
ভারতীয়রাও আমাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালই জানে। যে দেশের নিজ বাহিনী দেশের নাগরিকদের বিনা বিচারে হত্যা থেকে শুরু করে বহু কিছুই করতে পারে সে দেশের নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে তারা কতটা সচেষ্ট হবে?
বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করে অন্যায় করছে, কিংবা আগে নিজেদের বাহিনী ঠিক করার আগে ভারতীয় নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদ করার কারো রাইট নেই এমন কথা আমি মোটেই বলিনি। তবে কোন রকম কথামালা না খেলে বলব যে নিজেদের ঠিক করার আগে অপরে ভাল হয়ে যাবে এমন আশা খুবই ক্ষীন।
শুধু বলেছি যে এই সমস্যায় ভূমিকা কূটনীতি/পররাষ্ট্র নীতি, অর্থনীতি এসবের বাইরেও আমাদের অঞ্চলের সামগ্রিক করুন মানবাধিকার পরিস্থিতির ব্যাপক ভূমিকা আছে যা অস্বীকার করা যায় না। যে কারনে দুই দেশেরই সীমান্তকর্তারা সভ্য সমাজের প্রচলিত মানবাধিকার ফাদিকার পায়ে মাড়িয়ে অবাধ হত্যাযজ্ঞ প্রকাশ্যেই সমর্থন করতে পারেন (আর ডিপার্টমেন্টে ইন্টার্নালি কি বলেন আল্লাই মালূম)। এই মানসিকতা না পাল্টালে কেবল পতাকা বৈঠক, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দৌড় ঝাঁপ, ব্লগে কাগজে আগুন ঝরানো লেখায় তেমন কিছু আসবে যাবে না।
– লিমন নিয়ে কে/কাহারা কবে কতটা তোলপাড় করেছে সে প্রশ্ন করছি না। আমার ব্লগীয় অবজার্ভেশন বলে অবশ্যই তার মাত্রা ফেলানি ঘটনার থেকে কম ছিল (সেটা নিশ্চয়ই লিমন জানে বেঁচে গেছে সে কারনে নয়)। আপনার মতে যদি লিমন বিষয়ক প্রতিবাদের মাত্রা গ্রহনযোগ্য পরিমানেই হয়ে থাকে তবে সামান্য কটি প্রশ্নের জবাব দিন-
– লিমনের ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা কি কারনে আগ বাড়িয়ে কি কারনে র্যাব সদস্যদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন? ওনার বক্তব্য কি সত্য ছিল
– লিমনের ঘটনায় জড়িত র্যাব সদস্য কয়জনার বিচার হয়ে সাজা পেয়েছে? সে নিয়ে ব্লগে ফেসবুকে কয়জনায় ঝড় তুলেছে সে প্রশ্ন নাইই বা করলাম।
এবার খুব সহজ প্রশ্ন, আপনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে লিমন কেস আর ঘটবে না? ক্রশফায়ার বিরোধী কোন লেখা দিলে আমাকে কি কি কথা আম জনতা শোনাবে তা কি আমি অগ্রীম বলে দিতে পারি না?
@আদিল মাহমুদ,
সহমত, এটাই আসল কথা। (Y)
@আদিল ভাই,
বেশি কিছু বলতে চাই না, শুধু একটা কোট করছি ফরিদ ভাইয়ের মন্তব্য থেকে, যা ফরিদ ভাই করেছিলেন সাইফুল ভাইয়ের একটি ব্লগে :
আমার কথাটা ছিল এইটাই। লিমনকে নিয়ে ভাবার আরও সময় আমরা পাব, কিন্তু এখন দরকার গগনবিদারী প্রতিবাদ………..অন্য প্রসঙ্গগুলো এলে বিষয়টা হালকা হয়ে যায় না কি, আদিল ভাই?
@কাজি মামুন,
গগন বিদারী কিংবা গগনভেদী যে সুরেই হোক প্রতিবাদ জানান। তাতে বাধা কি? আমি তো আর দিব্ব্যী দিচ্ছি না যে যারা লিমনের ঘটনা্র প্রতিবাদ জানান নাই তাদের ফেলানির ঘটনা নিয়ে কথা বলার রাইট নেই।
আমি কি কারনে ক্রশফায়ার বা লিমন টেনেছি সেটা তো বুঝতে হবে। আমি পাকিস্তানী সেনাদের বিচারের আগে রাজাকারদের বিচার করা যাবে না জাতীয় যুক্তি টানিনি।
হালকা হবে কিভাবে একটু বুঝিয়ে বলতে পারেন?
আপনি একদিকে গগনভেদী আর্তনাদে দুনিয়া কাঁপিয়ে যাবেন আর ঐদিকে আপনার নিজ দেশের সীমান্ত কর্তারা সীমান্তেই এই ধরনের এক্সট্রা-জুডিশিয়াল কিলিং প্রকাশ্যে জাষ্টিফাইড করবে ব্যাপারটা কেমন হয়? আপনার নিজে দেশের কর্তা ব্যাক্তিরাই কি এই ধরনের হত্যা সমর্থন করেনি? ঘটণার এই দিক কি আপনার কাছে খুব হালকা মনে হচ্ছে? ফেলানি হত্যার নৈতিক দায় কি আমাদের সীমান্ত কর্তাদের ওপরও কিছুটা পড়ে না? – এর জবাব দয়া করে দেবেন।
আমার এ কারনেই মোটেই হালকা মনে হচ্ছে না। ক্রশফায়ারের প্রসংগ এসেছে সীমান্তে নির্বিচারে হত্যা আর ক্রশফায়ার দুটোই যে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং যা সভ্য সমাজের মানবতাবোধের বাইরে সেটা বোঝাতে। দুই এর মাঝে অবশ্যই মিল আছে।
আমরা দুই দেশের লোকেই এসবে অভ্যস্ত। সীমান্ত হত্যার একমাত্র কারন নিশ্চয়ই এটা নয়, তবে আপনি নিজে দেশের সীমান্ত কর্তার মানসিকতা এমন থাকা পর্যন্ত যদি আশা করেন যে অর্থনীতি ফিতি সব উন্নত করলেই আর এমন ঘটবে তবে মস্ত ভুল। এই দিক অবশ্যই চিন্তা করতে হবে।
@আদিল ভাই,
আবারও ফরিদ ভাই থেকে কোট করেছি। মন্তব্য একই ব্লগের।
সাইফুল ভাইয়ের ঐ ব্লগে বিপ্লবদা লিখেছিলেনঃ
উত্তরে ফরিদ ভাই বলেছিলেনঃ
আমার মনে হয়, আপনার ক্রসফায়ার নিয়ে লক্ষ-কোটিবার নিনাদ তুলবার শুধু অধিকার নয়, দায়িত্বও আছে এবং এই কাজটা করে যেতে হবে যতক্ষণ আমাদের সরকারবাহাদুরদের ঘুম না ভাঙ্গে……..কিন্তু যখন দরকার ফেলানি ইস্যুতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী ও বিচারব্যবস্থার উলঙ্গ দিকটি দেখিয়ে দেয়া, তখন লিমন, ক্রসফায়ার আনলে ফেলানি বিষয়টিকে হাল্কাকরণ করা হয় বৈকি!!
আদিল ভাই, দুর্বিনীত মনে হলে ক্ষমা করে দিয়েন। অন্য ব্লগগুলোতে তো ঢোকার জায়গা পাচ্ছি না! তাই আপনার ব্লগেই মনের সুখে গেজাচ্ছি!!! জানি আপনি অন্তত তাড়িয়ে দেবেন না! 🙂
@কাজি মামুন,
:))
তাড়িয়ে দেবে কে? আলোচনার জন্যই তো ব্লগ।
আমার লেখায় আগেই বলেছি যে এই লেখা সীমান্ত হত্যার পূর্ন বিশ্লেষন নয়, সীমান্ত হত্যার বেশ কিছু ভ্যারিয়েবলের কেবল একটি দিক মাত্র। কাজেই এই লেখা পড়ে মনেই হতেই পারে যে আমি মূল পয়েন্ট বাদ দিয়ে অহেতূক কি সব নিয়ে নেই আঁকড়ার মত পড়ে আছি।
আমি সাধারনত খুব বেশী লেখা ইতোমধ্যে যা হয়ে গেছে তা নিয়ে লিখি না, যখন মনে হয় যে গুরুত্বপূর্ন কিছু বাদ যাচ্ছে তখন একটু গা নাড়াই। এই লেখা কমেন্ট থেকে ব্লগে পদোন্নতির সেটাই কারন। ভারতীয় গালিগালাজ কিংবা গগনভেদী রণহুংকার (আমি কাউকে হেয় করছি না) দেওয়া লেখা তো কম নেই।
ফরিদ ভাই আমার খুব পছন্দের লোক, উনি নবী রসূল বা মহাপুরুষ কিসিমের কেউ না বলেই এত পছন্দের লোক। তবে ভ্রাতা, আপনি ফরিদ ভাই এর কথা কোট করা বাদ দিয়ে নিজের কথা বলা ভাল নয় কি? বিশেষ করে আপনাকে সরাসরি যা জিজ্ঞাসা করি সেটার জবাব কি ফরিদ ভাই এর কোট দিয়ে হবে? ফরিদ ভাই বা যে কারোই ভাবনার সাহায্য নিতে পারেন, তবে চুড়ান্তভাবে বক্তব্য দাঁড় করাতে হবে তো আপনার।
মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য – সীমান্ত হত্যা নিয়ে আমরা মোটেই চিন্তিত নই – কথাটা কিন্তু মিথ্যা নয়। হুবহু একই কথা বিডিআর প্রধানের। কেন? কারন অফ দ্যা রেকর্ড সেটাই আমাদের সরকার এবং আইন শৃংখলা বাহিনীরও দৃষ্টিভংগী। খুব সম্ভব ফেলানি হত্যাকান্ড নিয়েও তলে তলে দুই সরকারের সমঝোতা ঠিকই হয়েছে, মুখে প্রতিবাদ বা কিছু গরম গরম কথা বলেই হয়, নইলে আপনাদের থামাবে কে? ওয়াইজ মেন থিঙ্ক এলাইক বলে কথা আছে না? আমি শুধু আওয়ামী বলে বলছি না, আমার ধারনা এভাবেই ব্যাপারটা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে।
আরও কথা আছে,ঈদের আগে যে গরুগুলো বর্ডার পাড়ি দেয় তাদের প্রত্যেকটার জন্য বিএসএফ নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পায়।টাকা দেওয়ার পরও কপালে জোটে ‘পিতলের ক্যাপসুল’ ,এটা আরও বেশী অমানবিক।
এর অবশ্য অন্য কারণও আছে,ভূলক্রমে বিশেষ এলাকায় ঢুকে পড়া,আর বিএসএফ সদস্যরা অধিকাংশই পাঞ্জাবী বা মাড়োয়ারি শিক,গরু হত্যা এদের ধর্মে মহাপাপ।
গরু মিডিলাররা সবাই বাংলাদেশি,এরা প্রথমে বর্ডার পাড়ি দিয়ে ভারতে যাই,তারপর সেখান থেকে গরু নিয়ে দেশে ফেরে।ফলে পিতলের ক্যাপসুল খাওয়ানোর জন্য এই মিডিলাররা সবচেয়ে উপযুক্ত।
@প্রাক্তান আঁধারে,
ধন্যবাদ এখানে মন্তব্য করায়, আপনার দৃষ্টিভংগী এ বিষয়ে অনেকটা বাস্তবমূখী বলে মনে হয়েছিল।
সীমান্ত এলাকায় সকলেই জানে, বিএসএফ টাকার পাগল, আমাদের বিজিবির বিরুদ্ধেও সে অভিযোগ ভালই আছে।
– এ কথাটি অন্যত্রও দেখেছি। মাড়োয়ারিদের জন্য হতে পারে, তারা সম্ভবত গোড়া হিন্দু। কিন্তু শিখদের ব্যাপারে আমি বিভ্রান্ত। শিখ ধর্মে খাদ্যের ব্যাপারে তেমন কোন নিষেধাজ্ঞা সম্ভবত নেই, অনেকে গরুর মাংস পরিহার করলেও তাদের ধর্মে গোমাংস ভক্ষন খুব সম্ভবত নিষিদ্ধ নয়। তাদের প্রথম গুরু নানকের দর্শনানুযায়ী খাদ্য নিয়ে বাছ বিচার নেই, সে প্রশ্ন গৌন, মাথা ঘামাবার কিছু নেই। কলকাতায় ভাল মাংস শুনেছি পাঞ্জাবী রেষ্টুরেন্টে পাওয়া যায়। বিদেশেও দেখেছি কেবল মাত্র পাঞ্জাবী মালিকানার ভারতীয় রেষ্টুরেন্টে গরুর মাংস পাওয়া যায়, গুজরাটি কিংবা দক্ষিন ভারতীয় হলে কেবল মাত্র ছাগ মাংস। শিখ খাদ্যাভাস এখানে জানা যাবে। নিঃসন্দেহে তাদের ধর্মে গো-মাংস ভক্ষন মুসলমানদের মত শূকর হারাম জাতীয় কিছু নয়, গরু তাদের দেবদেবতা জাতীয় কিছুও নয়।
@আদিল মাহমুদ,
অথচ আদিল ভাই, এই কলকাতার রেষ্টুরেন্ট গুলির মাংস রান্না বেশ নিম্ন মানের, আমাদের দেশের তুলনায়। তবে মাছটা বেশ ভালই রাঁধে।
@আদিল মাহমুদ,
এইটা ঠিক।
তবে অধিকাংশ হিন্দুদের কাছে গো মাংস খাওয়া পাপ।আর এত গরু বাংলাদেশ কি করে তা বিএসএফ রা জানে এবং এটাকে যে ভাল চোখে দেখা হয় না সেটা আমাকে ইন্ডিয়ারা বলেছিল।
সত্যি আদিল ভাই, আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতার প্রসংশা মনে হয় আপনার শত্রুও করবে।
আপনি যে আমেরিকা আর কানাডার সাথে, ভারত আর বাংলাদেশের পার্থক্য করেছেন, এইটাই সম্ভবত সভ্য আর অসভ্য সংস্কৃতির পার্থক্য। আর সেই সাথে চির আবেগী বাঙালী যোগ হলে তো ন্না প্রকার খিস্তি খেউড়ের সু(!)কেচ্ছা থাকবেই, এ আবার নতুন কি।সত্যি এটা ভাবতে অবাক লাগে যে দেশেই যে ক্রস ফায়ার হয়, এটা নিয়ে কেউ কথাই বলতে চায় না। কারণটা কি বলে আপনার মনে হয়? অতি দেশপ্রেম নাকি শুধুই সস্তা আবেগ?
দুটোই মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই মনে করি।বাঙ্গালীর এই ফেসবুক কালচারটা কেমন জানি একঘেয়ে হয়ে দাড়িয়েছে।আর ব্লগে তো হাতাহাতি আর চুলোচুলি আছেই।যদিও একটা দিয়েও আসল কাজ কিছুই হবার চান্স দেখি না।
সেজন্যেই আমি ভারতীয় পন্য বর্জনের কথা বললাম? এতে কি কোন কাজ হবে বলে আপনি মনে করেন?বাইরের কেউ কেন? নিজেদের ঘরের লোকই যখন এইটাকে অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেয়, তখন নিজেকেই বোকা মনে হয়।
তবে আপনার কি মনে হয় যে আসলেই যদি সারা দেশের মানুষ ভারত বর্জন করে * যদিও কেউ সেটা করবে বলে আমার কোনদিন মনে হয় নি), তাতে কি ভারতকে আসলেই কিছুটা নাড়া দেয়া সম্ভব না? হাজার হোক ১৭ কোটি মানুষের বাজার একেবারে ফেলনা নয় কি বলেন?
আমি এই ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।আপনার সাথে আলোচনা করে নিজের কিছু ভুলত্রুটি সংশোধন করা সম্ভব বলেই মনে হয় আমার।
@অর্ফিউস,
অতি আবেগী দেশপ্রেম, দেশপ্রেমের ঠেলায় জিংগোইজম জাগ্রত হলে সমস্যা হয় উন্নত ধরনের ব্যাবস্থার উদাহরন দিলে সেটা বড় বেশী গায়ে লাগে। বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী আম্রিকার (যারা প্রকারন্তে কারো কারো মতে ভারতের সাথে সীমান্তসহ যাবতীয় সমস্যারও গোড়া)উদাহরন দিলে আরো গা জ্বালা করবে অনেকেরই। এটা হল অনেকটা স্মল ডগ ফোবিয়া। স্বাভাবিক বোধ বলে যার যা উন্নত সেটা থেকেই শিক্ষা গ্রহন কর।
ক্রশফায়ারের ঘটনা লোকে স্বাদরে গ্রহন করেছে এর পেছনে কায়েমি স্বার্থ আছে। লোকে নিজের নিরাপত্তা বড় করে দেখছে। এভাবে কিছুটা কিংবা সাময়িক হলেও তারা সন্ত্রাসের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে। দু’চারজন নিরীহ লোক কিংবা লঘু পাপে গুরুদন্ড পেয়ে মারা গেলে সেটা এই স্বস্থির কাছে নিতান্তই নগন্য মনে হচ্ছে। এটা কোন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাবস্থা নয়, সন্ত্রাসীরদের যায়গা খালি থাকে না, একজন মারা গেলে আরেকজন আসে। কেবল দুয়ের মাঝে কিছুটা সময় হয়ত রিলিফ পাওয়া যায়। এটাই লোকের কাছে বড় মনে হচ্ছে। অন্যদিকে আইন শৃংখলা ব্যাবস্থা ভাল করার আসল যেসব দিক যেমন বিচার ব্যাবস্থা উন্নত/নিরপেক্ষ করা, স্বাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা (শুধুমাত্র এ কারনেই আমাদের দেশে দিনের আলোয় চোখের সামনে ঘটা বহু অপরাধ আদালতে প্রমান হয় না কারণ ভয়ে কেউ স্বাক্ষী দিতে যায় না, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার এক উদাহরন)এসব নিয়ে কেঊ কথা বলে না। মানবাধিকার প্রশ্ন ছাড়াও এভাবে লাভের মধ্যে হচ্ছে গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় আরো বেশী করে উর্দির ছায়া জেঁকে বসছে যারা নিজেদের মনে করতেই পারে সকল আইনের ঊর্ধ্বে। এর ফল হবে খুবই অশুভ। রাষ্ট্রীয়ভাবে মিথ্যাচার করার অভ্যাসও আমাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় পণ্য বর্জনের ব্যাপারটা মন্দ নয়, তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এটা দীর্ঘস্থায়ী কোন ফল দেবে না। এটা হবে অনেকটা প্রতীকি। এভাবে বর্জন করা যাবে কতদিন? এতে আসলে তেমন কিছু কাজ হবে না, কারন বাস্তব হল গাঁটের টাকায় ভারত থেকে পন্য কিনলেও আমাদের ভারত ছাড়া তেমন বিকল্প নেই। আমেরিকা থেকে আমদানী করে ২০০ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ খাবার মত অবস্থা আমাদের নেই। সেই ভারত থেকেই আমদানী করতে হবে। প্রতীকি পণ্য বর্জন করেই শুধু থেমে থাকলে হবে না, মূল উদ্দেশ্য হতে হবে সেটা যেমন ভারতে আলোচিত হয়। নইলে আমরা দু’চারদিন পন্য বর্জন করে এরপর আবার যে কে সেই হলে কারোই কিছু আসবে যাবে না। ভারতীয়রা যেন জানে সেটা নিশ্চিত করতে এই পণ্য বর্জনের ঘটনা আমাদের মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে আসতে হবে, এরপর উদ্যোগ নিতে হবে ভারতের সব ধরনের মিডিয়ায় যেন ব্যাপারটা গুরুত্বের সাথে যায়। সাধারনভাবে ভারতীয়্ মিডিয়ায় বাংলাদেশের খবর কোনই গুরুত্ব পায় না। পন্য বর্জনের মূল উদ্দেশ্য হবে তাদের এক হাত নেওয়া (সেটা আসলে এভাবে অসম্ভব, বাস্তবতার নিরিখে সেই ভারত থেকেই পন্য আমদানী করতে হবে)নয়, আমাদের ক্ষোভ শান্তিপূর্নভাবে তাদের গোচরে আনা।
@আদিল মাহমুদ,
সঠিক কথাটিই বলেছেন ভাই।যারা দুনিয়ার সব কিছুতেই আমেরিকা ইসরায়েল আর আওয়ামী লীগ আর ভারতের যোগসুত্র খুঁজতে ভালবাসেন,এটা তাদের জন্য খুবই প্রযোজ্য।যদিও এদের প্রায় সবাই দিনের বেলায় ভারতের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্দার করার পরে,রাতে ঘরে ফিরে আসে ভারতী মোটরসাইকেলে করে।
আর তারপর ভারতীয় গরুর মাংস ভুনা দিয়ে ভাত খেয়ে, মনের সুখে ভারতীয় স্পোর্টস চ্যানেল খুলে বলে ইংলিশ বা স্প্যানিশ লীগের ফুটবল খেলা দেখতে বসে অহেতুক উত্তেজিত হয়ে পড়ে নিজেদের উচ্চ রক্তচাপ কে আরও বাড়িয়ে দেয়।খুবই করুন অবস্থা আসলেই।
একদিকে ভারতকে ছাড়া নড়তে চড়তে পারে না, অন্যদিকে ভারত বিদ্বেষের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। মনে হয় ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের কারনেই এটা হয়।
ঠিক বলেছেন।এইটাই হল একটা কদর্য বাস্তবতা। ১/১১ এর পর সেমি মার্শাল ল টার কথাই ভাবুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে সেনা সদস্যদের কাহিনীটার কথাটা ভাবুন।
এখানেও অসংখ্য লোক বি এন পির নিরপেক্ষতা আর আওয়ামী ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পান।
এই অবস্থার সুযোগেই নাকি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে আওয়ামী টাকা পৌঁছে গেছিল, আর বলা হয়েছিল যে লাশ ফেলার এটাই সুযোগ।কারা এইসব রটায়, এটা আর বুঝতে বাকি থাকে না!
ঠিকই বলেছেন। আসলেই আমার এই ঢোলের বাড়িতে কেউ নাচবে না, এটা আমার আগে থেকেই জানা ছিল। আজকের দিনটা বড্ড আজব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে পার করেছি, ( পরে সেটা না হয় বলার চেষ্টা করব ) দেখি পরের দিন গুলিতে কি হয়। লাভ যে তেমন কিছুই হবে না সেটা বুঝতে পারছি। তবু দেখি নিজেই নিজের আইডিয়াটাকে কিছুদিন ধরে রাখব, হয়ত অনেকটা শখের বশেই। 🙁 ।
এইটাই সবথেকে গুরত্বপুর্ন কথা বলেছেন। কে এই কাজটা করবে? আমাদের মিডিয়া তো কিছুই করবে না জানা কথা; শুধু কিছু বুদ্ধিজীবী টক শো তে কথাবার্তা বলে কিছু মানুষের মাথা আরো খারাপ করে দেবেন, যেন শ্রোতারা আরো কয়েক দফা ভারতকে নানা সুবচনে অর্চনা করে, মনে ঝাল মিটায়।অক্ষমের যা কাজ আর কি!!
আচ্ছা আদিল ভাই, আমেরিকার পিঁয়াজের কথা বাদ দিন, চীন থেকে পিঁয়াজ আমদানী করলেও কি দামের খুব বেশি হেরফের হবে? ভারতের বিকল্প কি চীন হতে পারে না?
@অর্ফিউস,
মিডিয়ায় কিভাবে সাড়া তোলা যায় সে নিয়ে আসলে আমার তেমন ধারনা নেই, এ বিষয়ে প্রফেশনাল সাহায্য লাগবেই। চিন্তা করতে হবে অনেকের। এক হল কিভাবে আবেগময় ভাবে ছড়ানো যায় যাতে মানুষের মনে নাড়া লাগে, দুই হল ছড়ানোর উপায়।
চীন থেকে হয়ত পেয়াজ আমদানী করা যায়। কানাডায় প্রচুর আসে, দামও বেস শস্তা চীনে দোকানে, ১০ পাউণ্ডের বস্তা ৩/৪ ডলার হয়, মাঝে মাঝে দুই ডলারেও নামে। বাংলাদেশে আরো শস্তা পড়ার কথা। তবে চীনে ব্যাটাদের তেমন বিশ্ব্বেষ অন্তত খাদ্যের ব্যাপারে মনে হয় করায় সতর্কতা দরকার। মহা দুই নম্বরী করতে পারে এরা। আর আমদানী তো কেবল এক পেয়াজ কিংবা গরু নয়, তালিকা বানাতে বসলে আজকের পুরো দিন কাবার হবে। সব কি চীন থেকে আনা যাবে? শুধু আনা শুরু করলেই হবে না, নিশ্চিত করতে হবে যেন সরবরাহ নিশ্চিত থাকে, এটাও গুরুত্বপূর্ন দিক।
@আদিল ভাই, হ্যাঁ চীনের জালিয়াতি আসলেই মারাত্মক তবে খাদ্যদ্রব্যের খেত্রেও এটা করলে সেটা খুবই বাজে ব্যপার হতে পারে। তাছাড়া
এটাও খুবই গুরত্বপুর্ন একটা দিক।যদিও কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক জিনিস যা বাংলাদেশে আসে, তার বেশির ভাগই চীন থেকে আসে। আর দুই নম্ব জিনিস বলেই দুদিন পরেইগোলযোগ দেখা দেয়, তার পর যায় নষ্ট হয়ে, অতপর আরেকটি কিনতে হয়।ব্যবসা বুদ্ধিটা ( নাকি শয়তানী বুদ্ধি 😀 ) চীনের বেশ ভালই।
@অর্ফিউস,
প্রথমেই বলে নেই আমি চীনা প্রোডাক্ট এর সাফাই গাইছি না। এখানে একটা টেকনিক্যাল প্রশ্ন জড়িত আছে। চীনা প্রোডাক্ট কিন্তু কোরিয়ার মার্কেটেও আছে কিন্তু সেরকম গুরুতর অভিযোগ নেই (ফুটপাথ এর তৈজস পত্র ছাড়া)। এ ক্ষেত্রে চীনের সাথে আমাদের বানিজ্য বৃদ্ধি একটা ইতিবাচক দিক বলেই মনে হয়। ভারতের উপরে নির্ভরশীলতা কিছুটা কমে তদুপরি চেতনা গত ভারসাম্য মনে হয় বাড়বে বই কমবে না। যদিও পাশাপাশি মনে রাখতে হবে ইতিহাস, যে এই দেশটি ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে সংঘটিত মানবাধিকার বিপর্যয়ের সময় খুবই নির্লিপ্ত ছিলো। ‘৭৫ পরবর্তী কালে দিয়েছিলো বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি! সবচেয়ে বড় কথা যদি সেখানকার অধুনা বিকাশমান শিল্প তথা শিল্পকৌশলকে দেশে আমদানী করা যায় তো বেশী ভালো হবে।
@কেশব অধিকারী, চেতনা দিয়ে পেটভরে নারে ভাই। চীন হয়ত ৭১ সালে নির্লিপ্ত ছিল, কিন্তু সেটা কিন্তু আমেরিকার ক্ষেত্রেও খাটে।এমন কি আমেরিকা সপ্তম নৌ বহর লেলিয়ে দিয়েছিল।সোভিয়েত না থাকলে কি হত কে জানে।আদিল ভাইয়ের দেয়া একটা লিঙ্ক থেকে সেই সময় ইঙ্গ মার্কিন পিরিতের কাহিনীটা না পড়লে চিরকাল আমেরিকা সম্পর্কে এক ধরনের বিদ্বেষ আর আমেরিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের স্পাউস ব্রিটেন সম্পর্কে খুবই উচ্চা একটা ধারনা থেকেই যেত ৭১ কে ঘিরে। আরো বলতে চাই যে ৭১ সালে মাও সে তং জীবিত ছিল, তার মৃত্যুর পর চীনের অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড়বাস্তবতা হল যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা সম্ভবত এই যে, এইসব পিরিত আর দোস্তি খুব বেশি দিন থাকে না।
ভারত তো সেই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিল। আমাদের যুদ্ধে সাহায্য করে, আর সেইসাথে ১ কোটি শরননার্থীর ভরনপোষণ করে ভারত বাংলাদেশের জন্য সত্যিই অনেক বড় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।তবে সেটা নিশ্চয়ই আমাদেরকে ফেলানীদের মেরে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখা দেখবার দিন আনার জন্য করে নি কি বলেন?
@অর্ফিউস,
চীন ৭১ সালে নির্লিপ্ত ছিল এমন তথ্য খুবই বিভ্রান্তিকর। তারা মোটেই নির্লিপ্ত ছিল না। নির্লিপ্ত থাকা মানে নিরপেক্ষ থাকা, যেমনটা ছিল পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ, এমনকি ইউরোপিয়ান দেশগুলিও। নিরপেক্ষ থাকলে বলার কিছু ছিল না। ইতিহাস বলে পাকিস্তানের পর সে সময় সরাসরি বাংলাদেশ বিরোধী হিসেবে যেসব দেশ ছিল তার মাঝে চীন ছিল ১ নম্বরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও অতটা জোরালো ছিল না। মার্কিনীরা সরাসরি পাক পক্ষালম্বন করে যুদ্ধে জড়াবে এমন কিছু কোনদিন বলেনি, তারা তাদের নিজ শক্তি বলয় রক্ষার্থে যুক্ত পাকিস্তান ভাংগুক চায়নি। চীন সরাসরিই হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধে নামার, ভারতকে সরাসরি হুমকি দিয়েছিল। পালটা রুশ হুমকি না থাকলে ভারতীয়দের পক্ষে সে হুমকি অমান্য করা কতটা সম্ভব ছিল তা বিতর্কের বিষয়।
যদিও আমি মনে করি না ততকালীন চীনা সরকারের সেই নীতির সাথে বাংলাদেশ বিদ্বেষ জাতীয় কিছু আছে। সবই হিসেবের চাল। চীনা জনগনের সাথেও আমাদের সে নিয়ে কোন বিরোধ থাকা উচিত নয়। চীন গনতান্ত্রিক দেশ নয়, এখনকার কথা ভিন্ন, তবে সে আমলে দেশের মানুষ সরকারের সরবারহকৃত ছাড়া আর কোন খবর পেত না।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যাঁ আদিল ভাই,ঠিকই বলেছেন। আমি কেশব অধিকারীর সাথে সুর মিলিয়ে কথাটা বলেছি।
হ্যাঁ সেটাও হয়ত সঠিক। তবে এখন চীন থেকে যদি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পন্য আনা যায়, তবে সাময়িক ভাবে হলেও মনে হয় ভারতকে একটা ঝাঁকি দেয়া যায় কি বলেন আপনি? অবশ্য খাবারে যে দুই নম্বুরীর ব্যাপারটা বললেন, এটা একটা চিন্তার বিষয় বটে, তবে আমাদের এই ফরমালিনের দেশে মনে হয় এক নম্বর খাবারেই আমাদের পেট খারাপ হবে 😀
@আদিল মাহমুদ,
একমত। তবে একটা দেশের পন্য বর্জন করতে হলে দরকার দেশ প্রেম কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের তো দেশ প্রেম অতিব মাত্রায় কম । তবে আমাদের দেশপ্রেমের চাইতে ধর্মীয় প্রেম অত্যধিক প্রবল। আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করব কি, আমরা তো নিজেদের দেশের পণ্যই বর্জন করি।
ধন্যবাদ।
@(নির্জলা নির্লজ্জ),
ভারতীয় পন্য বর্জন বাস্তবিক অর্থে সম্ভব নয়, সেটা আক্ষরিক অর্থে করতে গেলে মোটামুটি না খেয়ে থাকা লাগবে। তার চাইতে সহজ একটা কাজ করা যেতে পারে, সেটা হল ভারতীয় মিডিয়া বর্জন করা। এটা করার মত লোকই বা কয়জন পাওয়া যাবে? মাঠে ঘাটে বা ফেসবুক কাঁপাতে মেলা পাবলিকই আছে।
আমরা স্বভাবগত ভাবেই বেগের চাইতে আবেগ পছন্দ করি, কাজের চাইতে কথা……ধন্যবাদ আপনাকে।
@আদিল মাহমুদ,
আদিল ভাই, ভারতীয় মিডিয়াই কেন বর্জন করতে হবে? আচ্ছা মানলাম, মিডিয়া বাদ, তাহলে সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল হালের গৌতম ঘোষের সিনেমা দেখবো কিভাবে? এগুলোও বর্জন করবো? বাংলা সাহিত্যের অর্ধেকটা যা কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়? ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম? মিডিয়া মানে কি স্টার প্লাস, সনি জি টিভির বিনোদন? তাই যদি বুঝায় তাহলে লক্ষ লক্ষ গৃহবধু যাদেরকে আমরা ঘরে বন্দি করে রেখেছি আমাদের সংসার পাহারা ও সুশৃঙ্খল রাখতে তাদের সন্ধ্যার পর সারাদিনের ক্লান্তি শেষে টিভিতে দুদ্বন্ড সব ভুলে কল্পনার জগতে ভ্রমেণর ব্যবস্থা কে করবে? “বাংলাদেশীরা” তো এই কাজটুকুও ঠিক মত করতে পারে না। আমার মনে হয় ভারত আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করে তা জবাব দেয়ার মধ্যে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। যা আছে তা হলো এটা উগ্র জাতীয়তাবাদী বর্হিপ্রকাশ। আজকের দুনিয়ায় কোন কিছুকে কেউ পুরোপুরি বর্জন করার মত ক্ষমতা রাখে কি? আমি বরাবর দেখেছি ভারত বিরোধী আমাদের অবস্থানকে মৌলবাদী ডানপন্থিরা পুরোপুরি ব্যবহার করে। ভারতের কাছ থেকে আমাদের সম্মান আর দাবী আদায় লক্ষ্যে যা যা আছে সব আদায় করতে হবে রাজনীতির মধ্য দিয়ে। আর আমরা জাতি হিসেবে যত উঁচুতে উঠতে পারবো কারিগরি দিক থেকে, অথনৈতিক দিক থেকে, ভারত কেন সবাই তখন পাপ্য সম্মানটুকু আমাদের দিবে। ভারতের খাদ্য-দ্রব্য গ্রহণ করবো কিন্তু মিডিয়া বর্জন করবো তাতে আমাদের দৈনতাই প্রকাশ পাবে। আর সীমান্তের মানুষ বিটিভির চাইতে দুরদর্শন অনেক বেশি স্পষ্ট দেখতে পায়!
@সুষুপ্ত পাঠক,
আমার মধ্যে দেশপ্রেম ফেম এসব তেমন নেই, পাকিস্তানীদেরও জাত ধরে গাল দিতে আমার বাধে। এ কারনেই আমি পন্য বর্জন জাতীয় কর্মসূচীতে তেমন উতসাহ পাই না। আবেগকে শ্রদ্ধা করতে হয় বলে সায় দিতে হয়। আগেই বলেছি যে পন্য বর্জন জাতীয় কর্মসূচী হতে পারে কেবলই প্রতীকি। আসল কথা হল ভারতের অভ্যন্তরে আমাদের বার্তা পৌছানো, সেটা যদি পন্য বর্জন দিয়ে কিছুটা করা যায় মন্দ হয় না; মন্দ বর্জন মানে ভারতীয়রা অতি নচ্ছাড় তাই ব্যাটাদের জিনিসে আমরা ইয়ে করি এই জাতীয় মনোভাব থেকে হওয়া উচিত নয়।
পন্য বর্জন থেকে মিডিয়া বর্জন অবশ্যই আরো সহজে করা যায়। মিডিয়া বর্জন আর পুরোপুরি ভারতীয় শিল্প সংস্কৃতি সবই বর্জন এক কথা নয়। ভারতীয় চ্যানেলগুলি এমনিতেই দেখায় যত্ত রদ্দির মাল, ওসব জিনিস দেখা বন্ধ হলে মন্দই বা কি হত। সেটাও হবার নয়, কারন দেশের লোকে মাঠে ঘাটে ফেসবুকে গাল দিয়ে দেশপ্রেম দেখাবে, বাড়ি এসে ঠিকই শাষুড়াল কি তামাশা উপভোগ করবে। এগুলো জাতীয়তাবাদ ফাদও নয়, বড়সংখ্যক লোকের কাছে এসব হল স্রোতে ভাসমান থাকার উপায়।
@সুষুপ্ত পাঠক,
কেন বাংলাদেশের চ্যানেলগুলা কি ভারতের চেয়ে খারাপ নাকি? অন্তত ভারতের চুইঙ্গাম সিরিয়াল গুলার চেয়ে বাংলাদেশের নাটক অনেক ভাল।
আর সব গৃহবধুরাই কি ঘর বন্দী থাকছে? অসংখ্য মেয়েরা বিয়ের পরেও চাকরি করছে এবং সংসারে ভুমিকা রাখছে, এটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয় 🙂
বিশ্লেষণটি ভাল লাগল।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ,
আমি আসলে পূর্ন বিশ্লেষনের সময় পাইনি, সে বহু সময়ের ব্যাপার। শুধু আলোচিত সমস্যার অত্যন্ত মৌলিক এক দিক যার প্রতি তেমন কেউই গুরুত্ব দেয় না সেদিকটা দেখাতে চেয়েছি।
এ কারনেই হয়ত ফেলানি ঘটনায় আমাদের সরকারের তরফ থেকেও ঘটনার গুরুত্ব যতটা সে পরিমান প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। ভারতীয় দিকেও এমন কিছু প্রতিক্রিয়া হয়নি, কারন দৃশ্যটা যতই কদর্য হোক দুই দেশের মানূষের কাছেই এমন কিছু ব্যাপার নয়। কোন মেক্সিকান নাগরিক আমেরিকান সীমান্তে এভাবে ঝুলে থাকলে আমেরিকাময় হুলস্থূল পড়ত, আইনের মৌলিক সংস্কার আনা হত সেই নাগরিকের নামে। সে গরুচোর কি ড্রাগ লর্ড সে বিচারে কেউ যেত না।
@আদিল ভাই,
এই জন্যেই মাঝে মাঝে মনে হয় যে মৃত্যুদন্ড নামক কু প্রথা উঠে গেলেই হয়ত ভাল হয়। আবার এইযে সংস্কৃতির পার্থক্যের কথা ভেবে ভীতও হয়ে পড়ি।মৃত্যু দন্ড উঠে গেলে যদি অনুন্নত দেশে সিরিয়াল কিলারের সংখ্যা বাড়তে থাকে!
@অর্ফিউস,
মৃত্যুদন্ডের সাথে সিরিয়াল কিলারের সংখ্যার সম্পর্ক আছে কি? মনে হয় না। সিরিয়াল কিলার এক ধরনের মানসিক রোগ বলা যায়। এরা সর্বোচ্চ শাস্তি জেল নাকি ফাঁসী তা কেয়ার করে না।
মৃত্যুদন্ড ওয়ালা আমেরিকায় সিরিয়াল কিলার মৃত্যুদন্ড বিহীন কানাডা থেকে বেশী। এমনকি মৃত্যুদন্ড ওয়ালা আমেরিকায় খুন জখম জাতীয় ভায়োলেন্ট ক্রাইমও কানাডা থেকে বেশী। আমেরিকার সব ষ্টেটে মৃত্যুদন্ড নাই, যেসব ষ্টেটে নাই সেসব ষ্টেটেই ভায়োলেন্ট ক্রাইমের হার কম। কানাডা মৃত্যুদন্ড তুলে দেয় ৭৬ সালে, অবাক ব্যাপার হল ৭৬ এর পর থেকে সে দেশে ভায়োলেন্ট ক্রাইম কমে গেছে।
এর কারন হল অপরাধ বিজ্ঞানের রিসার্চ বলে যে অপরাধের হার কমার সাথে শাস্তির ধরন (জেল/ফাঁসী) অতটা সম্পর্কিত নয়; বেশী সম্পর্কিত হল শাস্তি যে হবে সেটা নিশ্চিত করা।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যাঁ এটাই হয়ত আসল কথা।
তবু কি বাংলাদেশে ধর্ষণ করে খুনের হার কমবে, অথবা প্রায়শ ঘটে চলা, স্বামীর হাতে স্ত্রী হত্যার ( যার একটা বড় কারন সম্ভবত যৌতুক) বিষয়টি? অথবা পরকিয়ার খাতিরে বউয়ের হাতে স্বামী,স্বামীর হাতে বউ আর মায়ের হাতে সন্তানের খুন হয়ে যাওয়া, যদি মৃত্যুদন্ড তুলে দেয়া যায়? কেন জানি আর কিছুতেই ভরসা করতে পারি না।
‘বি,এস,এফ” এখন পৃথিবীতে সীমান্ত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এটি ঠিক এবং এই অভিযোগে কানাডাতে এক বি,এস,এফ এর সদস্য কে ভিসা দেয় নাই কানাডা এরপর ভারতের অনেক তদবিরের পর দিয়েছিল অবশ্য।