অতঃপর আসলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ
গাইতি শাবল হাতে
খনন করতে কবির মগজ ও হৃৎপিন্ড।
কার কাছে যেন খবর পেয়েছেন
এ কবির ভেতরটায় লুক্কায়িত এক
অনবদ্য পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ।
কবি স্মিত হেসে বাড়িয়ে দিলেন সব।
জ্ঞানলিপ্সু তাত্ত্বিক সজোরে চালালেন
মায়াহীন, মমতাহীন গাইতি শাবল।
হৃদযন্ত্রের অন্দরে যাবার আগেই
ধমনীর গা খুঁড়তে শুরু করলেন তিনি।
নিজের চোখকে যেন অবিশ্বাস হলো তার,
ধমনী ধরে বয়ে চলেছে কবির
এক প্রমত্তা, জলপুষ্ট নদী!
নদীর ঘাটে এক স্নিগ্ধ নৌকো বাধা।
প্রত্নতত্ত্ববিদ সম্মোহিতের মত পাড়ি জমালেন
কবির হৃৎপিন্ড পানে।
যতই এগোয় তন্বী নদী বেয়ে নৌকোটা
ততই অবাক কবি।
দুই তীরে তার জমজমাট কাঁশবন।
আরেকটু গভীরে যেতেই
হৃদযন্ত্রের দেয়ালজুড়ে চোখে পড়লো
অজস্র দাগের রেখা।
লাল, কালো, খয়েরী দাগ।
একটা নারীর কষ্ট আকা কবির ডান অলিন্দে,
বা অলিন্দের দেয়ালে একটা সাদাগোলাপের
ঝরে পড়ার আগমূহুর্তের শেষ দ্বীর্ঘশ্বাস।
বা নিলয় অভিমানে নীল
আর ডানটায় উছলানো শৈশবের নিদারুন স্মৃতি।
শিরা উপশিরা জুড়ে কেমন আনাগোনা
একঝাক পাখিদের।
পরিচয় পর্বে জানতে পারা যায়
ওরা কবির সাথে প্রত্যহ মধ্যরাতে
একবার করে বেরোয় নিশিভ্রমনে
দেখবার জন্য ঘুমন্ত পৃথিবী।
উদ্ভ্রান্ত প্রত্নতত্ত্ববিদ ছুটে গেলেন এবার
কবির মগজের অন্দরস্থলে।
একরাশ ঘুনপোকা তাকে অভ্যর্থনা জানালো
মগজের অন্দরমহলে।
একটা ঘুনপোকা তখন কবির স্নেহ খাচ্ছিল
বেশ মজা করে,
আরেকটা খাচ্ছিল পরিশুদ্ধ প্রেম।
একটা পোকা কবির হাহাকার খেয়ে
এতই ভরপুর যে
সে খা খা জোস্না বমি করছিল।
ক্ষণেই বোঝা গেল
জোস্নায় ভরপুর কবির
মধ্য মগজের সুবিশাল জমিন।
হঠাত তত্ত্ববিদ হোঁচট খেলেন একটা দিঘি দেখে।
দিঘিতে টলমলে বর্ণহীন জল।
সে জলে একটা টসটসে যুবতি রাত
ফুটে আছে পদ্ম হয়ে।
একগোছা রজনীগন্ধার মত
কতগুলো শেষবিকেল
কেমন ঝুলে আছে দিঘির তীরে।
কিছু মৃত চোখ দিঘির উপরে আকাশ বানিয়ে
কেমন ছায়া ফেলছে টলমলে জলে।
হঠাৎ কিছু যন্ত্রণা দানব হয়ে তেড়ে এলো
প্রত্নতত্ত্ববিদের দিকে।
তাদের প্রত্যেকের কাঁধে
একেকটি মৃত কবিতার লাশ।
তাদের প্রত্যেকের চোখে
একেকটি তীব্র দ্রোহ
আর তাদের প্রতিটি বুক থেকে ঝরছিল
টলটলে নীল রক্তবিন্দু।
প্রত্নতত্ত্ববিদ ছুটে বেরিয়ে এলেন।
কবি তাকিয়ে রইলেন মৃদু হাস্যমুখে।
কিছুদিন পরের কথা।
ঝলমলে এক বৈজ্ঞানিক সভায়
প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রকাশ করলেন
এক বিস্তৃত সন্দর্ভ,
বিষয়: কবির হৃৎযন্ত্র ও মগজের লুক্কায়িত নিদর্শন।
আরো কিছুদিন পরের কথা।
কবি আর প্রত্নতত্ত্ববিদ মুখোমুখি।
পাগলা গারদের ভেতরে বিমর্ষ বৈজ্ঞানিক
আর বাইরে অনুতপ্ত কবি।
সুদীর্ঘ নিরবতা ভেঙে কবি শেষে উচ্চারন করলেন,
দু:খিত, আমায় ক্ষমা করবেন প্রত্নতাত্ত্বিক।
লেখকঃ প্লাবন ইমদাদ
প্রকাশিত গ্রন্থঃ শাঁখের করাত
জলপুষ্ট নদী আর দীঘির টলমলে বর্ণহীন জলে পাঠকদের তো ভাসিয়ে দিলেন।
কবিতাটি ভাল লাগল, তবে বানানে একটু যত্নশীল হবার অনুরোধ রইল, বিশেষ করে কবিতা বলেই বলছি।
@গীতা দাস, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বানানের এই দশা। ধন্যবাদ ব্যাপারটা বলবার জন্য। না হলে এভাবে তাড়াহুড়ো করেই পরের লেখাগুলোও হয়তো দিয়ে দিতাম। কবিতা ভাল লাগার জন্য আরেকবার ধন্যবাদ।
আধুনিক কবিতাগুলো আমার কাছে একেকটা ধাঁধার মত, যতক্ষন না এর মানে উদ্ধার করতে পারছি, ততক্ষন একটা অস্থিরতা কাজ করে, শব্দগুলো ঘুরপাক খেতে থাকে মস্তিষ্কের চার দেয়ালে!
কবিতাকে যে কেন শব্দের তাজমহল বলা হয়, তা এ কবিতাটা পড়লেও উপলব্ধি করা যায়। শব্দের এমন কারুকাজ মন ভরিয়ে দেয়, অন্তর্লোকে ছড়িয়ে দেয় টুকরো টুকরো মুগ্ধতার আবেশ!
মৃত কবিতার লাশ শেষ পর্যন্ত জ্ঞানলিপ্সু প্রত্নতত্ত্ববিদকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে, কবির ভেতরটায় লুক্কায়িত এক অনবদ্য পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ পুরো আবিষ্কার করা হয় না আর! বরং আরো আরো কিছুদিন পর পাগলা গারদের ভিতর আশ্রয় নিতে হয় সেই প্রত্নতাত্ত্বিককে। কিন্তু কবি যার অলিন্দের দেয়ালে অনুভুত হয় একটা সাদাগোলাপের ঝরে পড়ার আগমূহুর্তের শেষ দ্বীর্ঘশ্বাস, ভোগেন অনুতাপে, বলেন, দু:খিত, আমায় ক্ষমা করবেন প্রত্নতাত্ত্বিক।
জানি না, কবিতাটা বুঝেছি কিনা! প্লাবন ভাই ও একজন কবি, ক্ষমা করবেন নিশ্চয়ই! 🙂
@কাজি মামুন, আধুনিক কবিতা আধুনিক মানুষের মতই জটিল ও ধাঁ ধাঁ পূর্ণ। আর আমি সবসময় প্রকাশ করি সরল আবেগটুকো। আমি আপাদমস্তক আবেগের দাস। তাই জানিনা আধুনিক কবিতা আমার লেখনিকে বলে কিনা। আপনার ব্যাখ্যাটা পড়ে আশ্চর্য হলাম এই ভেবে যে এতটা গভীরভাবে আমি নিজেও চিন্তা করিনি লেখার সময়। এবার মিলালাম আপনার ব্যাখ্যার সাথে আমার পাঠক দৃষ্টি। অদ্ভুত সুন্দরভাবে কবির অবচেতনে প্রবেশ করে আপনি সফল প্রত্নতাত্ত্বিকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন। আপনার পাগলা গারদে যেতে হচ্ছে না ভাই। আপনার সন্দর্ভ কবতে সমাজে সুগৃহীত… ধন্যবাদ এই নাদানের কবিতা নিয়ে ভাবার জন্য।
যে উপমা, রূপক, বিমূর্ততা আঁকা হয়েছে তা এক শিল্পীর নিপুন হাতে করা। অভিনন্দন কবিকে। অনেকদিন পর কবিতা পড়ে (বিশেষত শূন্য দশকের) মনটায় দোলা লাগলো। (F)
@সুষুপ্ত পাঠক, মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। শুভকামনার জন্য আরেকটা…
শুছেচ্ছা হলো শুভ ইচ্ছা। আপনার শুভ কামনার জন্য ধন্যবাদ। তবে আপনার লেখনিও আমার খুব ভাললাগে। তাই শুভ ইচ্ছেটা আমার দিক থেকেও রইল।
অপূর্ব।
শুভেচ্ছা কবি (D)
চমৎকার! অসাধারন!!
এই দুটো শব্দই খরচ করলাম। এর বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। মুক্তমনায় বহুদিন বাদে একটা কবিতা পড়ে ভালো লাগা অনুভব করছি। অবশ্য এখানে সাহিত্য একটু কমই আসে। কবিকে ধন্যবাদ। আরো প্রচুর কবিতা আশা করব কবির কাছ থেকে।
@সাইফুল ইসলাম, ধন্যবাদ.. আশা করি সামনে আরো অভিব্যাক্তি কবিতা আকারে প্রকাশ করতে পারব। মুক্তমনাকে ধন্যবাদ কবিতার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য।
@সাইফুল ভাই,
সেজন্য আপনার দায় খুব একটা কম নয়!
আপনি এত ভাল কবিতা লিখেন, অথচ আমরা আপনার কবিতা পড়ছি না, সে কতদিন হল, বলতে পারেন?
এমন নয় যে আপনি কিছুই লিখছেন না। পাঠকের দাবি নিয়ে বলছি, আপনার ভিতর যে তীব্র দহন, তাকে আবারো কবিতায় রূপান্তরিত করুন। মুক্তমনার পাঠকদের জন্য এর চেয়ে সুখকর আর কিছু হবে না বলেই আমার মনে হয়!
অনধিকার চর্চা মনে হলে আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি!