পূর্বকথা
চাঁদহীন অন্ধকার রাতে মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে(বিশেষ করে শরৎ কালে,কারন এ সময় রাতের আকাশ পরিস্কার থাকে) অসংখ্য তারার এক মনমুগ্ধকর সমাহার দেখা যায়।শহরের আকাশে ধুলাবালির পুরু স্তর থাকায় গ্রামে অথবা মফঃস্বলে গেলে ব্যপারটা ভাল করে বোঝা যায়।যাহোক,এরকম অন্ধকার রাতের তারাখচিত আকাশে লক্ষ করলে দেখা যাবে আকাশের মধ্য দিয়ে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে আলোর এক সুরু অস্পষ্ট কুয়াশার মত ধারা চলে গেছে। এটিই হল মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।
অন্ধকার বিশাল এই ছায়াপথ। আমাদের সৌরজগত এই ছায়াপথের একপ্রান্তে নিঃসঙ্গ অবস্থায় পরে আছে। আমাদের প্রাণের উৎস সূর্য। এই রকম অগণিত সূর্য ছড়িয়ে আছে আমাদের এই ছায়াপথে। এমনই এক তারার নাম এপসিলন এরিডানি। পৃথিবী থেকে ১০.৫ আলোকবর্ষ দূরে এই তারাটি অবস্থিত। এর চৌম্বকীয় অবস্থা আমাদের সূর্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ গুণ বেশি। এই গল্প এই এপসিলন এরিডানিকে নিয়েই।
(১)
গ্রহটা একটি রুক্ষ প্রাণহীন জগত। পাথুরে মাটির উপর বাতাস খেলা করে। ভাঙ্গা গড়ার খেলা চলে প্রতিনিয়ত। সেই বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান অত্যন্ত বেশি। ফলে এইখানে প্রাণের বিকাশ ঘটেনি। এখানে নদী আছে তবে সেটা মিথেনের নদী। জলের দেখা মিলেনি এখানে। বেগুনি লালচে আকাশে ঝলে রয়েছে মাতৃতারা এপসিলন এরিডানি। পৃথিবীর সময় ১২৭ ঘণ্টায় তার এক দিন। আর পৃথিবীর সময় মাত্র ১৭৫ দিনে তার এক বছর। মানুষ এখানে প্রথম পা রাখে একবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে। এখানে একটি বসতি স্থাপন করে গবেষণা শুরু করে।
(২)
বেস কম্যান্ডার কর্নেল জুবায়ের তার সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মেজর মেসবাহকে বলল, “ আর ভালো লাগে এখানে। কতদিন পৃথিবীকে দেখি না।”
মেজর মেসবাহ বলল, “ ঠিকই বলেছেন স্যার। এখানে শুধু শুধু পরে রয়েছি। এখানে জীবন নেই অনেক আগেই প্রমাণিত। কিন্তু স্পেস কাউন্সিল বলছে এখানকার খনিজের উপর গবেষণা করতে। ”
“ খনিজ না ছাই। আর কতদিন পরে রইব এখানে? বিয়েসাদি করব ভেবেছিলাম পৃথিবীতে ফিরে। এই পেশায় এসে সংসার করা হল না।” বলল জুবায়ের।
“ স্যার পৃথিবীতে ফিরে কি হবে? ” জিজ্ঞাসা করল মেসবাহ। “ ঐ জায়গাটা তো একটা ভাগাড় ছারা কিছুই না।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল জুবায়ের, “ নাড়ির টান কেউ উপেক্ষা করতে পারে?”
এমন সময় রুমে প্রবেশ করল জিওলজিস্ট ফায়জা। সুন্দরী মেয়ে। তাকে দেখে একটা হাসি দিল জুবায়ের। বলল, “ কি খবর ডক্টর? এই অসময়ে? ” ফায়জা অল্প সময়ের মধ্যেই পিএইচডি শেষ করে ফেলছে। এখন এই গ্রহে খনিজের উপর গবেষণা করছে। বলল, “ স্যার আমার মনে হয় আমি এই গ্রহে ইউরেনিয়ামের সন্ধান পেয়েছি।”
“ কি বল?” চিৎকার করে উঠলো জুবায়ের, “ এত অনেক ভালো খবর।”
“ আরও কিছু টেস্ট করে কনফার্ম করতে হবে।“ ফায়জা বলল।
“চিন্তা নেই। আগে কনফার্ম করো, এরপর স্পেস কাউন্সিলকে জানাব।”
(৩)
জুবায়ের, মেসবাহ আর লেফটেন্যান্ট আশিক যাচ্ছে ক্যান্টিনের দিকে। ক্যান্টিনের সামনে একটা বড় কার্পেট। কার্পেটের উপর প্রথম উঠল লেফটেন্যান্ট আশিক। উদ্দেশ্য কর্নেলকে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে দিবে। এমন সময় কার্পেটটা যেন জীবন্ত হয়ে তার পা আঁকড়ে ধরল। মাটিতে পড়ে চিৎকার শুরু করল সে।
“ হোয়াট দ্যা … ” বলেই জুবায়ের আর মেসবাহ কার্পেটটাকে সরাতে গেল আশিকের পা থেকে। কিন্তু কার্পেটটা আরও জোরে জাপটে ধরল তার পা।
রিভলবার বের করে গুলি করল কর্নেল। কার্পেটের এক অংশ উড়ে গেল। কিন্তু ততক্ষণে লেফটেন্যান্টের পায়ের হাড় বেরিয়ে পড়েছে। “ ওকে এখুনি ডাক্তারের কাছে পাঠাও।” যেন ভূত দেখেছে কর্নেল।
(৪)
রুমের ভিতর বিশ্রাম নিচ্ছিল লেফটেন্যান্ট নেওয়াজ। এমন সময় মাথার উপর স্পীকারে বেজে উঠল, “ আটেনশন অল মেম্বার্স। আপনাদের সবাইকে এখনই কনফারেন্স রুমে ডাকা হচ্ছে। কর্নেল জুবায়ের আপনাদের সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ ব্রিফ করবেন।”
“ এই অসময়ে শালার আবার কি হল?” সামনাসামনি কর্নেল জুবায়েরকে যমের মত ভয় করে লেফটেন্যান্ট নেওয়াজ। তাই পিছনে গালি দিয়ে দিচ্ছে।
ইউনিফর্ম পরে রেডি হয়ে হাতে গ্লাভস পরতে গেল সে। গ্লাভসজোড়া টেবিলের উপর রেখেছে। গ্লাভস পড়া শেষ এমন সময় চেয়ারের উপর নজর পড়ল তার। এ কি আরেক জোড়া গ্লাভস। ঠিক তার হাতের গুলোর মত। কাহিনী কি? আমার তো একটাই গ্লাভস?-মনে মনে ভাবল নেওয়াজ।
এমন সময় ইলেকট্রিক শক খেল যেন নেওয়াজ। তার ডান হাতখানা তার কোমরের দিকে যাচ্ছে। হাতের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই তার। এ যেন কোন হরর সিনেমা দেখছে সে। হাতটি তার পকেটের হোলস্টার থেকে রিভলবারটি বের করল। সে আরেক হাত দিয়ে নিজের হাতকে প্রতিহত করতে গেল। কিন্তু সেই হাতও যেন বিশ্বাসঘাতকতা করল তার সাথে। সব নষ্টের গোরা এই গ্লাভস জোড়া। সে হতভম্ব হয়ে দেখল রিভলবারের মুখ ঘুরে যাচ্ছে তার ম্থার দিকে। গ্লাভস ভরা আঙ্গুল বাধ্য হয়ে টিপে দিল ট্রিগার।
(৫)
স্টেশনের চিফ বায়োলজিস্ট ডা ফারুক আহমেদ রিজওয়ান তার ল্যাবে কাজ করছিলেন। তার কাছে স্যাম্পল পাঠানো হয়েছিল। অণুবীক্ষণযন্ত্রের সামনে বসে কাজ করে কম্পিউটারে কিছু এনালাইসিস করলেন। রেজাল্ট যা এল তা দেখে বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলেন। তার সহযোগী বেনাজির আহমেদকে রিপোর্ট দেখিয়ে বললেন, “এটা দেখ।”
এমন সময় ল্যাবে প্রবেশ করল মেজর মেসবাহ এবং ক্যাপ্টেন ইকবাল।
“ কি খবর প্রফেসর? কাজ হয়েছে? ” জিজ্ঞাসা করল মেসবাহ।
“ হ্যাঁ, মেজর। যা পেয়েছি বিশ্বাসই করতে পারবেন না।”
“ কি সেটা? ”
“ আপনারা যে কার্পেটের স্যাম্পল পাঠিয়েছিলেন তা আসলে একটি প্রাণী। ”
“ ও মাই গড” ক্যাপ্টেন চিৎকার করে উঠল।
“ আমি এর কিছু মৌলিক জিনিস পরীক্ষা করে দেখেছি। এটা সিলিকন বেসড প্রাণ। এটির জিনোম সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি এটির জিনোম আমাদের ডিএনএর মত না। ডাবল না ট্রিপল হেলিক্স!!”
প্রফেসর ফারুক আহমেদ রিজওয়ানের দিকে অনেকক্ষণ বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল মেজর মেসবাহ চৌধুরী। এরপর বলল, “ আর কি কি জানলেন?”
“ এর জেনোম এর তথ্য বেতারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছি স্পেস কাউন্সিলের প্রধান জীববিজ্ঞানী সার্থক রাশিক রহমানের কাছে। তিনি বের করবেন কিভাবে এরা ক্লীব বস্তুগুলোকে নকল করতে পারে।”
ওরা যখন এইসব কথা বলছে তখন ল্যাবের এক কোণায় একটা ট্রে হাঁটা শুরু করেছে। ট্রের উপর কাঁচের সিলিন্ডারে ফ্লোরিন গ্যাস রাখা। ল্যাবের লোক খেয়াল করে নাই একই রকম দুইটা ট্রে কিভাবে ছিল। হেঁটে হেঁটে টেবিলের একপ্রান্তে আসল সে। টেবিলের নিচে কাঁচের বিকারে ফ্রান্সিয়াম রাখা। ট্রে টা পড়ল গিয়ে ফ্রান্সিয়াম রাখা বিকারের উপর।
কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে একই সাথে ফারুক, বেনজির, মেসবাহ আর ইকবাল মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। ওদের জানার কথা না ওখানে টেবিলের আড়ালে একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সবথেকে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক মৌল আর সব থেকে বেশি তড়িৎ ঋনাত্মক মৌল বিক্রিয়া করতে যাচ্ছে। এটি তে যে শক্তি নির্গত হবে তা নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার পরই সবথেকে বেশি।
বিস্ফোরণে উড়ে গেল গোটা ল্যাব।
(৬)
“স্যার আর ভালো লাগে না।” সার্জেন্ট দিপ্র বলল, “ প্রথমে ছিলাম ২৫ জন এখন ৭ জনে নেমে এসেছি। ”
“ ঐ ইতর প্রাণী সব নকল করতে পারে। শুধু জীবিত কিছুকে পারে না। ভাগ্যিস!! ” আরেক সার্জেন্ট তুর্য বলল।
রুমের সাতজন সন্দেহের চোখে একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। মানে হল সবাই মনে করছে এই রুমের জীবিত প্রাণীগুলো একেকটা এলিয়েন।
“ অ্যাটেনশন। ” বলল কর্নেল জুবায়ের।
সবাই ওর দিকে তাকাল।
“ তোমরা তো ক্রাইসিস এর কথা জানো। এখানে এলিয়েন লাইফ ফর্ম আক্রমণ করেছে। আমাদের কেউ নিরাপদ নই। এখন আমরা কি করতে পারি? ” বলল কর্নেল। বলতে বলতে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
লেফটেন্যান্ট শুভাশিষ বলল, “ স্যার আমরা চলে যেতে পারি। ”
ফায়জা বলল, “ আমিও এখান থেকে চলে যেতে চাই। ”
বাকিরা তার দেখাদেখি বলা শুরু করল।
“ঠিক আছে, আমি এই গ্রহের সবথেকে কাছাকাছি থাকা স্পেস শিপ এন্টারপ্রাইজকে বলছি আমাদের বাঁচাতে উদ্ধার জাহাজ পাঠানোর জন্য। ওখানকার কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার অভিজিৎকে বলে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের সবাইকে সব কিছু ত্যাগ করে যেতে হবে। কোন জড় বস্তু কেউ সাথে নিতে পারবে না।”
“ কাপড় চোপড়? ” বলে উঠলো সার্জেন্ট অংশুমান।
“ না আমাদের কাপড় চোপড়ও রেখে যেতে হবে। এখান থেকে আমরা ঐ এলিয়েন নিয়ে যেতে চাই না। ” বলল কর্নেল জুবায়ের।
(৭)
কর্নেল জুবায়েরের বার্তা মাদার শিপ এন্টারপ্রাইজে পৌঁছালে কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার অভিজিৎ লৌহের নির্দেশে কর্নেল সৈকত রায়ের নেতৃত্বে একদল চৌকশ কম্যান্ডো দল রওনা দিল ঐ অভিশপ্ত গ্রহ থেকে সবাইকে উদ্ধারে। ওরা এপসিলন এরিডানি থেকে ৪ আলোকঘণ্টা দূরে। তবে ওরা হাইপারস্পেসে ড্রাইভ দিবে তাই পৌঁছাতে ২ ঘণ্টা লাগবে।
(৮)
“ খুব তাড়াতাড়ি এসে গেল না ” ফায়জা জিজ্ঞাসা করল জুবায়েরকে।
“ হুম। এক ঘণ্টার ভিতর এসে গেছে। যাই হোক আমাদের রওনা হওয়া উচিত। এখানে আর এক মুহূর্তও নয়। ” জুবায়ের বলল “ দেখ, আমরা যে স্পেস শিপে করে এসেছিলাম সেই টাইপের স্পেস শিপ এটা। মনে হয় ওটাই। ” স্পেস শিপের দিকে তাকাল দুইজন।
জুবায়েরের কাঁধে হাত রেখে ফায়জা বলল, “ জানো, আমার না খুব ভয় হয়।”
ফায়জার দিকে ফিরল জুবায়ের, “ ভয় নেই, ডার্লিং এবার ফিরেই তোমাকে বিয়ে করব।”
স্পেস শিপের ভিতর প্রবেশ করল ওরা।
( ৯)
ঠিক সময়ে এসে হাজির হল কর্নেল সৈকত রায় এবং তার দল। অপেক্ষা করতে লাগল ৭ জনের জন্য।
কিন্তু ওদের কোন খোঁজই পাওয়া গেল না ।
ওরা কেউ আসেনি।
(একটি বিদেশি গল্পের আংশিক ছায়া আছে)
দারুণ গল্প, বিশেষ করে ফিনিশিংটা সত্যি চমতকার। বিদেশি কোন গল্পের ছায়া আছে জানালে খুশি হতাম।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
ছবিটির সাইজ বদল করে দিন না প্লিজ, বড় বেখাপ্পা লাগছে।
আকাশ গঙ্গা সম্পর্কে আরও কিছু বলেন।মিল্কওয়ে থেকে বাংলা নাম আকাশ গঙ্গা কে রেখেছিল?আর আকাশে কোন দিকে তাকালে একে ভাল ভাবে দেখা যায়?আমি আগেও চেষ্টা করেছি দেখা পাইনি।
@পেনসিল,
মিল্কিওয়ে থেকে আকাশগঙ্গা নাম রাখা হয়নি। আকাশগঙ্গা নাম রেখেছিলেন প্রাচীন ভারতীয় জোতির্বিজ্ঞানীরা। অন্ধকার মেঘমুক্ত আকাশে একটু পূর্ব
দিক ঘেসে উত্তর-দক্ষিন এ লম্বালম্বি ভাবে একে দেখা যায়। তবে শহর থেকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম।