শিরোনামটি পড়ে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।আমরা সমাজতন্ত্র বনাম পুজিবাদ বিতর্ক, শচীন বনাম ওয়ার্ন দ্বৈরথ,theism বনাম deism তত্ত্বালোচনা-এই ধরণের ক্ষেত্রে সাধারণত ‘বনাম’ শব্দটি ব্যবহার করে অভ্যস্ত। বিশেষত যখন বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানমনস্কতার মধ্যে আপাত কোন বিরোধ থাকার কথা নয়,বা বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান মনস্কতা আপাত দৃষ্টিতে মুখোমুখী দাঁড়ানোর কথা নয়,সেখানে এদের মাঝে ‘বনাম’ শব্দের অবির্ভাব ভুরু কুচকানোর মত ব্যাপার বৈকি। সত্যি কথা বলতে বিজ্ঞান শিক্ষার বিপরীতে বিজ্ঞান মনস্কতা এই বিতর্কের আবির্ভাবই স্বাভাবিক বিচারে বিষ্ময়কর হওয়ার কথা।কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একদিকে বিজ্ঞানের ছাত্রটি কুসংস্কারাচ্ছান্ন,অপরদিকে সাহিত্যের ছাত্রটি মুক্তমনা-এমন দৃশ্যপট মোটেও ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হলেই যে সে বিজ্ঞানমনস্ক হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। বরং নিউটন-আইনস্টাইন পড়েও একজন বিলক্ষণ যুক্তিহীন হয়ে গড়ে ওঠে, প্রাণীবিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও একজন ‘বিশ্বাস’ করেন বিবর্তনবাদ একটি ভুয়া মতবাদ-এমনটাই আমাদের দেশের স্বাভাবিক দৃশ্য। কাজেই আমাদের প্রথাগত বিজ্ঞানশিক্ষা যে সুবিশাল একটি গলদ নিয়ে গঠিত এবং শুধুমাত্র বিজ্ঞানশিক্ষাই যে যুক্তিবাদিতা নিশ্চিত করে না সেটাই আমার এই লেখার মূল উপজীব্য।
বছরখানেক আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। লেখাটা অনেকটা এরকম ছিলঃ
‘আহমেদ শরীফ বা হুমায়ুন আজাদ,কেউই বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না,দর্শন-সাহিত্যের ছাত্র হয়ে তারা বিজ্ঞানমনস্কতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষার ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে ততখানি বিজ্ঞানমনস্কতা,কিংবা বিজ্ঞানমনস্কতাকে প্রতিষ্ঠিত করার সাহস কোনটাই খুব একটা দেখা যায় না/নি (ব্যতিক্রম ব্যতীত)…কিংবা আরুজ আলী মাতব্বরের কথাই ধরা যাক,বরিশালের কোন এক গন্ডগ্রাম থেকে উঠে আসা একজন ‘স্ব’শিক্ষিত ব্যক্তি,যিনি নিজের চেষ্টায় বিজ্ঞানের আধুনিকতম তত্ত্বগুলো বোঝার চেষ্টা করলেন এবং শেষ পর্যন্ত এমন কিছু প্রশ্ন রাখলেন যা ঘুণে ধরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের মূলে কুঠারাঘাত হানল!আর আমরা ঢাকা শহরের থেকে,বিজ্ঞানের হাজারও সুযোগ সুবিধা চোখ বুজে গ্রহণ করে,ফিজিক্স কেমিস্ট্রি ম্যাথ একগাদা টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়ে নামের আগে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বসিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই গোড়া,অন্ধ আর কুসংস্কারাচ্ছন্নই থেকে যাচ্ছি।’
— লেখাটার একটু গভীরে যেতে হলে আমাদেরকে আমাদের মানসিক বৈকল্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। আমাদের প্রথম ও প্রধান মানসিক বৈকল্য হচ্ছে আমরা কোন কিছু জানার আগেই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে ফেলি(বা ফেলানো হয়);এরপর যে যে বিষয় বস্তু ঐ ঐ বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক সেগুলোকে আমরা অস্বীকার করি কিংবা অবাস্তব/অসম্ভব দাবি করি। অথচ এই দাবিটি করছিই আমরা একটি অযৌক্তিক Assumption কে ভিত্তি করে। সমস্যাটা হচ্ছে,আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এই অযৌক্তিক assumption কে নির্মূল করা তো দূরে থাক,প্রকারান্তে এই অবাস্তব assumptionকেই প্রতিষ্ঠিত করে মুক্তচিন্তার পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। এক কথায় বিজ্ঞানের মূল উৎস যেখানে, ‘কি কেন এবং কিভাবে’ এই প্রশ্ন করা কিংবা কার্যকারণ অনুসন্ধান করা-এই বেসিক বিষয়ে বিস্মৃত রেখে আমাদেরকে বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।ফলে নিউটনের সূত্র টপাটপ গলধঃকরণ করে কিংবা পাঠ্যবইয়ের বাইরেও জ্ঞান আহরণ করার পরও আমাদের মধ্যে যুক্তিবোধ জাগ্রত হচ্ছে না।কারণ আমাদেরকে চিন্তা করানো শিখানোই হয়েছে ভুল একটা পদ্ধতিতে। ভুলভাবে চিন্তা করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে আমাদেরকে এই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে।
বিজ্ঞান কি? আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি গুলে খাওয়া কিংবা ফ্লুইড মেকানিক্সের নেভিয়ার স্ট্রোক ইকুয়েশনে প্যাশনেট হওয়া কিংবা অয়লারের কঠিন গাণিতিক তত্ত্বে পারদর্শী হওয়াই কি বিজ্ঞান? আমি অনেক ফিজিক্স জানি,গণিতের পোকা-তাতেই কি আমার বিজ্ঞান শিক্ষা সার্থক হয়ে গেল? আমার উত্তর হচ্ছে না। বিজ্ঞান হচ্ছে একটা দর্শন,যে দর্শনের মূল ভিত্তিটাই হচ্ছে প্রশ্ন করা,কার্যকারণ অনুসন্ধান করা। সেই প্রশ্ন করা আর সত্যান্বেষণ করার চেতনা বা মানসিকতা যদি আমার মধ্যে তৈরি না হয় তবে হাজার হাজার বই পড়ে আমি হয়তো জ্ঞানী হতে পারবো কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারবো না। আর বিজ্ঞান পড়ে যদি বিজ্ঞানমনস্কতাই তৈরি না হয় তবে এর চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না,কিন্তু এই চিত্রটাই আমাদের দেশে বর্তমানে সবচেয়ে common।সমস্যাটা এখানেই।
সমস্যাটার প্রকার দুই রকম।প্রথমত,আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখন Two M সিনড্রোমে ভুগছে- marks and money. লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্য ভাল নম্বর পাওয়া এবং শিক্ষাজীবন শেষে ভালো বেতনের চাকরি পেয়ে সুন্দরী বউ ঘরে তুলে সংসারী হওয়া-এটাই হচ্ছে ভেতো বাঙ্গালির কমন জীবন দর্শন,কিংবা আরেকটু বাড়িয়ে বলা যায়,এটিকেই বাঙ্গালি জীবনের সর্বোচ্চ সার্থকতা(মতান্তরে সাফল্য) হিসাবে বিশ্বাস করে। যেখানে ভালো মার্কস পেয়ে পাস করে ভালো চাকরি করে সংসারী হয়ে ‘দিন আনে দিন খায়’-এর আধুনিক শিক্ষিত ভার্সনে পরিণত হওয়াটাই জীবনের মূল উপজীব্য সেখানে মুক্তচিন্তার চর্চা করা কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক হওয়াটা শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয়ই নয়,আজগুবি ধারণাও বটে। আর এই কারণেই প্রকৃতিতে সুজলা সুফলা কিংবা সংস্কৃতিতে রত্নভান্ডারি হওয়ার সত্ত্বেও বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রটিতে বাঙ্গালির পদচারণা হতাশাজনক এবং পশ্চাদপদ।
দ্বিতীয় সমস্যাটা আরও করুণ। শিক্ষাব্যবস্থার যন্ত্রণাদায়ক যন্ত্রণা আর শিকলের বলয় ভেঙ্গে কেউ কেউ একটু মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার পথে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত সেই Pre-assumption এর কারণে খাঁচা ভেঙ্গে মুক্ত বিহঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে ট্র্যাজিক পরিণতি ঘটে। একারণে সে হয়তো বিজ্ঞানী হয়,কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক হয় না;প্রকৌশল বিদ্যার আধুনিক তত্ত্বে উচ্চশিক্ষা নেয় কিন্তু বিজ্ঞান দর্শনের সন্ধান পায় না; আধুনিক পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হয়েও যুক্তিবাদী হয় না,স্টিফেন হকিং এর ভক্ত হয়েও মুক্তমনা হয় না। এই বৈপরিত্যগুলোই শুধু বিষ্ময়করই নয়, সবচেয়ে বেশি পীড়াদায়ক।
এই সমস্যাগুলোর উদ্ভব আমাদের সমাজের প্রচলিত কিছু সংস্কার থেকে।ছোট থেকে আমাদের শেখানো হয় গুড বয় হতে।গুড বয়ের সংজ্ঞা কি? যে বিনা বাক্যব্যয়ে সব মেনে নেয়,কথার বিপরীতে পালটা যুক্তি দেয় না, এমনকি প্রতিবাদও করে না। প্রতিবাদ করাটা এক অর্থে আমাদের গুরুজনদের কাছে অভদ্রতার প্রতীক,রীতিমত যেন এক ঝামেলা। গায়ে কাদা না লাগিয়ে সাক্ষী গোপাল হিসেবে একটা কুপমন্ডূক জীবন কাটিয়ে দিতে পারলেই বাঙালি মহাখুশি। রবীন্দ্রনাথ বোধহয় এজন্যই বলেছিলেন-‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন’!!! কিংবা নজরুলের শেষ ভাষণের এই বাক্যটির কথাই ধরা যাক-‘আমাকে বিদ্রোহী বলে খামোখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এই নিরীহ জাত টাকে আচড়ে কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা আমার কোনদিনই নেই। আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচার এর বিরুদ্ধে। যা মিথ্যা, কলুষিত, পুরাতন, পঁচা, সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে, ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে।’ এই নজরুল যখন তুরস্কের খিলাফত বিলুপ্তির পর লিখলেন ‘তুর্কি মহিলার ঘোমটা খোলা’ তখন তিনি আমাদের সমাজে ‘শয়তান’ আখ্যায়িত হলেন।কারণ তিনি শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন নি,প্রতিবাদ করেছিলেন এই সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে,প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন আমাদের ঘুনে ধরা প্রাচীন অর্বাচীন চিন্তা-ধারার বিরুদ্ধে।তাই তিনি হয়ে পড়লেন বেয়াদব,শয়তান, ‘শান্তি’ বিনষ্টকারী। এখন অবশ্য বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যারা অতি সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মান্ধ তাদের কাছে নজরুলই হচ্ছেন একমাত্র যক্ষের ধন রবীন্দ্রনাথ নামক মালাউনের বিপরীতে!!!! এক মালাউনের লেখা গান কেন আমাদের জাতীয় সংগীত তা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাকা চৌধুরী জাতীয় সংসদে বসেই ব্যাপক আহাজারি করেছিলেন।তখন কিন্তু নেহায়েৎই শিক্ষিত শ্রেণীর কিছু সাহসী মানুষ ব্যতীত আপামত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আহামরি কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি,কারণ প্রতিক্রিয়া দেখানোটা আমাদের সমাজে অভদ্রতা,যদি সেটা হয়ে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তাহলে তো কথাই নেই।একারণে তথাকথিত নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীগণ আর টকশোএর বুদ্ধিজীবীগণ তাদের দেশ উদ্ধারের বক্তৃতায় এ বিষয়গুলোতে নীরব থাকেন।
প্রসঙ্গক্রমে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা বলতে ইচ্ছা করছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে এটুকু জানতে পেরেছি উনি বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল ছিলেন,বাংলার গদ্যরূপের জনক এবং উনি একজন সমাজ সংস্কারক। কিন্তু যে বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সচেতনভাবে কিন্তু অবশ্যই থাকা উচিত ছিল সেটি হচ্ছে,দিনান্তে বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন সমাজ বিদ্রোহী। তার বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল কিন্তু নির্দোষ প্রশ্নের মধ্য দিয়ে,যে প্রশ্নে রিচুয়াল অপেক্ষা নৈতিকতা-মানবিকতা বেশি প্রাধান্য পেয়েছিল।যেকোন বিদ্রোহ-বিপ্লবের সূচনা হয়েএক বা একাধিক প্রশ্নের ভিত্তিতে।প্রশ্ন ব্যতীত বিপ্লবের প্রয়োজন অনুভূত হয় না।প্রশ্ন ব্যতীয় বিদ্রোহ সূচিত হয় না। আমাদের সমাজ সেই প্রশ্ন করাকেই নিরুৎসাহিত করে,প্রশ্নকর্তাকে আঘাতে জর্জরিত করে,তাকে সমাজচ্যুত করতে উঠে পড়ে লাগে। ঈশ্বরচন্দ্র একজন প্রশ্নকর্তা,সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তিনি সমাজে বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিলেন বলে তৎকালীন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গরা তাকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে মানুষের সাথে তাকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। সেকালে কলকাতার বাবুরা সন্ধ্যায় বৈঠকখানায় মদ গাজার আসরে বাইজির সাথে ফস্টি নষ্টি করতেন উপরতলায় স্ত্রী সন্তানের উপস্থিতি সত্ত্বেও।তাতে জাত-পাতের কোন ক্ষতি হত না,ধর্ম অক্ষুণ্ণ থাকতো।কিন্তু বিধবার বিয়ে দিলে বা স্ত্রীলোক থিয়েটার করলে কিংবা লেখাপড়া শিখলে জাত নষ্ট হয়ে যেত,ধর্ম গেল ধর্ম গেল রব উঠতো। বাঙ্গালির এই দ্বিচারিতা এখনও বিদ্যমান।তবে ঈশ্বরচন্দ্র,রামমোহন,ডিরোজিওর মত কিন্তু বেয়াদব,নষ্ট মানুষ জন্মেছিল বলেই গত ২০০ বছরে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের জীবনাচরণে প্রভুত ‘সভ্যতা’-র উন্মেষ ঘটেছে। মূলত পশ্চাদপদ,অসভ্য ও বর্বর হিন্দুসমাজকে মোটামুটিভাবে একটি সহনশীল রূপে দাঁড় করানোই এই ক্ষণজন্মাদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। কিন্তু আমাদের পাঠ্যপুস্তকে উনাদের এই ভূমিকার কথা লেখা আছে কোথায়? নেই!! থাকবে না তো,কারণ থাকলে আমরা প্রশ্ন করতে শিখবো,বিদ্রোহ করতে শিখবো,পরিবর্তনের ডাক দিতে শিখবো। আর প্রশ্ন,বিদ্রোহ আর পরিবর্তন-আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় জুজুর ভয় বুঝি এগুলোই!!!!
কিছুটা বিষয়চ্যুত হয়ে গেলাম লিখতে লিখতে। জোর করে তাহলে একটু প্রসঙ্গে আসি। বিদ্যাসাগর কিন্তু সমাজ সংস্কারক,সাহিত্যের মানুষ,বিজ্ঞানী নন। অথচ তিনি গ্রামে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন শিশুদের।শিখিয়েছে আহ্নিক গতি বার্ষিক গতির ব্যাপার স্যাপার। অকপটে বলেছেন কোন রথের চাকায় ভর করে সূর্য যাতায়াত করে না,বলেছেন সূর্য পৃথিবীর নিচে কোথাও গিয়ে চোখ বুজে ঘুমায় না। এই হচ্ছে বিজ্ঞান শিক্ষা,এই হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতার সূচনা। এই কাজটি তিনি করেছিলেন কারণ তিনি বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন,যে বিজ্ঞানমনস্কতার ধার ধারেন না আমাদের ফিজিক্স কেমিস্ট্রি জুলজি বা প্রকৌশলীর শিক্ষকগণ।(এখানে একটা বিষয় বলা অবশ্য কর্তব্য যে,বিদ্যাসাগর সরাসরি ধর্মাচরণের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন এমন নজির পাওয়া যায়নি,কিন্তু প্রথাগত চিন্তার বাইরে গিয়ে নতুন করে সমাজটিকে দেখার শিক্ষাটা তিনি দিয়ে গেছেন ভাল করেই।)
লেখাটা আরো দীর্ঘায়িত হয়ে যাওয়ার আগে যবনিকাপাতের দিকে চলে যাই! লেখার মূল বার্তাটি হচ্ছে,শুধু বিজ্ঞান পড়লেই হবে না,বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। আর সেটা হওয়ার জন্য বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হচ্ছে প্রশ্ন করার মানসিকতা,বিদ্রোহ করার বাসনা আর পরিবর্তনের ডাক দেয়ার সাহস! সত্যিকারের যুক্তিবাদিতা আসলে এগুলোর মধ্যেই নিহিত।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
একটা বড়সড় বিস্তৃত লেখা পড়ার প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিলাম। লেখাটা বেশ ভালো লেগেছে।
লেখাটা ধারাবাহিক করে ফেললে কেমন হয়?
এই শিরোনামে একটা বিস্তৃত জম্পেস লেখা খুব দরকার।
ভালো থাকবেন।
মুক্তমনায় দারুন সময় কাটুক।
@ভুইফোঁড়, অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আপনার প্রস্তাবটা ভেবে দেখবার মত। চেষ্টা করবো এটার একটা ধারাবাহিক রূপ দাঁড়া করানোর জন্য।
শুভেচ্ছা। (F)
অনেকেই বলে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, তাই বিজ্ঞানের কথা বলে লাভ নাই। প্রথাই শুধু নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে না।
আমি সেখানে বলি “এর জন্যই আমি বিজ্ঞানের পথে চলি যা আমাকে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখায়, পরিচিত করে নতুন কিছুর সাথে। প্রথাটা বড্ড বেশি রকম একঘেয়েমীর সৃষ্টি করে”।
লেখাটি ভাল হয়েছে 🙂
মুক্তমনায় স্বাগতম (F)
@এম এস নিলয়, অনেক ধন্যবাদ (F) 🙂
মুক্তমনায় স্বাগতম। লেখা ভাল হয়েছে, তবে বিষয়টা অনেক ব্যাপক তাই গুরুত্বের তুলনায় মনে হল খুবই সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে।
বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করা, গবেষনা করা, এমনকি বিজ্ঞানী তকমা পেলেও বিজ্ঞান মনষ্ক হয়ে যাবে এমন কথা নেই। বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষনা অনেকই হয়, সবই ক্রিয়েটিভ এমন নয়। আমেরিকার মত জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উতকর্ষের দেশেও আমার মত বহু রাম শ্যাম যদু মধুরও গবেষনা পত্র বার হয় যাতে ক্রিয়েটিভিটির তেমন কিছু নেই। ক্রিয়েটিভ গবেষনার জন্য শুধু বিজ্ঞান চর্চা যথেষ্ট নয়, বিজ্ঞান মনষ্কতাও দরকার। তার জন্য দরকার যুক্তি মনষ্ক হওয়া; বাক স্বাধীনতা, চিন্তা চেতনা প্রকাশের স্বাধীনতা। যে সব সমাজে এর নিশ্চয়তা নেই সেসব সমাজে বিজ্ঞান চর্চা হলেও ক্রিয়েটিভ তেমন ফল পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক।
@আদিল মাহমুদ, হুম।আসলেই,আমরা বিজ্ঞান পড়ছি বটে,কিন্তু ক্রিয়েটিভ চিন্তা করতে শিখছি না।এজন্য শেষ পর্যন্ত শিক্ষিত অন্ধই থেকে যাচ্ছি।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
এত বেশি দ্বীমত আছে লেখাটার সাথে যে কোন জায়গা থেকে শুরু করব বুঝতেই পারছি না। কয়েকটা পয়েন্টে একটু আলোচনা করছি। মানে আমার দ্বীমতের জায়গা, বা বলতে পারেন কীভাবে লিখলে আমার দৃষ্টিকোন থেকে সঠিক মনে হত সেই কথাগুলো লিখছি তাতে আলোচনা করা যাবে ভালো ভাবে, সাথে আপনার কথার ব্যাখ্যাও পেতে পারি।
লেখার শিরোনামঃ বিজ্ঞান শিক্ষা বনাম বিজ্ঞান মনস্কতা।
আমি সম্পূর্ন লেখাতেও বিজ্ঞান কী, বিজ্ঞান শিক্ষা কী, বিজ্ঞানমনষ্কতা কী, এই কথাগুলোর কোন ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞ্যা পাই নি। হয়ত তাড়াহুড়োয় লিখতে পারেন নি। আমার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে হয়ত আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিটা জানাবেন। কারন আমার মনে হয়েছে যে বিষয় নিয়ে আপনি লিখছেন সেই ব্যাপারে কিছু না বলে আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে বলেছেন/অভিযোগ করেছেন। আমি আমার কথা বলছি, মন্তব্য সেকশনে সবাইকেই দেখছি বেশ প্রশংসা করেছে। আমি যা খুজেছি বা লেখার শিরোনাম যা বোঝাচ্ছে সে ব্যাপারে আলোচনা খুব একটা এগোয়নি বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। আপাতত আমার কথা এই প্রশ্নগুলো মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। আরো যে দ্বীমতের জায়গা আছে সেগুলো হয়ত আলোচনা এগুলে সামনে আসবে।
বিজ্ঞান কী?
বিজ্ঞান কোন ঘটনা বা বিষয়বস্তুকে জানার একটি উপায়। একটা পদ্ধতি। কিন্তু বিজ্ঞান নিজে কোন বিষয়(যেমন পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ইত্যাদি) নয়। কোন ঘটনা বা বিষয়বস্তুকে একটা বিশেষ উপায়ে জানার মাধ্যমে আমরা সেই ঘটনা কিংবা বিষয়বস্তুকে “জ্ঞ্যান” বলে স্বীকার করি। যেমন অভিকর্ষজ বল নিউটনের সূত্র দেয়ার আগ পর্যন্ত জ্ঞ্যান হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। নিউটন বিশেষ পদ্ধতি ব্যাবহার করে এই নির্দিষ্ট ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পেরেছেন বলেই এটা এখন জ্ঞ্যানের অংশ।
বিজ্ঞানের সংজ্ঞা সম্পর্কে ভাসাভাসা ভাবে যে কথাটা আপনি বলেছেন সেটা হলঃ
বিজ্ঞান যদি একটি দর্শন হয় তাহলে অন্যান্য আরো একাধিক দর্শন আছে কি যাদের মূল ভিত্তি অন্য কিছু? প্রশ্ন করাই যদি বিজ্ঞান হয় তাহলে ধর্মীয়ভাবে প্রশ্ন করার মাধ্যমে যে উত্তর কেউ কেউ পেয়েছে সেটাও বিজ্ঞান নয় কী? যদি হয় তাহলে ধর্মীয় সংস্কার সম্পর্কে আপনার যে খেদ লেখাতে এসেছে সেটা কেন? আর যদি না হয় তাহলে এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য শুনতে চাচ্ছি।
উপরে আমি যে বার বার “জ্ঞ্যান” বলে চেচালাম সেই জ্ঞ্যানের বিষয় কী? সে নিজে কী করে? এই জ্ঞ্যান বা দর্শন বস্তুত প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করে। জ্ঞ্যানের ভাবনার বিষয় প্রকৃতি। তাহলে প্রকৃতি কী? আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সমস্ত কিছুই প্রকৃতির অংশ। এটা মনে রাখা খুবই ভাইটাল যে মানুষও সেই প্রকৃতির অংশ। যদি তাই হয় তাহলে এখানে বিজ্ঞানের জায়গা কোথায়? বিজ্ঞান হল সেই পদ্ধতি যার মাধ্যমে দর্শন/জ্ঞ্যান প্রকৃতি সম্পর্কে ধ্যান করে, স্টাডি করে। এইকথা গুলো কেন উত্থাপন করলাম সেখানে আসছি। আগে বিজ্ঞান শিক্ষা সম্পর্কে বলে নেই।
পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতিতে মুনাফাই আসল লক্ষবস্তু। এটা এই অর্থনীতির মূল বক্তব্য। এই অর্থনৈতিক ব্যাবস্থায় সমস্ত কিছুই পণ্য। এবং প্রকারান্তরে এই পণ্যই পুঁজির উৎস। পুঁজিতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থার পূর্বে জ্ঞ্যান বা দর্শনের পৃষ্টপোষকতা ছিল হয় ব্যাক্তিগত, অথবা ধর্মীয়। কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থার উচ্ছের সাথে সাথে এই দর্শনের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠল কারখান, পুঁজিপতিরা। পুঁজি তখনই কোন জিনিসের পৃষ্টপোষক হবে যখন সে তার বিনিয়োগের চাইতে বেশি পুঁজির জোগান দিতে পারবে। নইলে নিজেই সে অস্তিত্ব সংকটে ভুগবে যেটার উদ্দেশ্যকে নালিফাই করে। তাহলে দর্শনের পেছনে এই পুঁজি বিনিয়োগের কারন কী? কারন জ্ঞ্যানকে যদি একটা কাঠামোর মধ্যে আনা যায় তাহলে এমন দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ বের করা সম্ভব হবে যারা উৎপাদন ব্যাবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে পারবে। এরই ধারাবাহিকতায় জ্ঞ্যান বা দর্শনকে যখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হল তখন তার নাম হল “শিক্ষা“। তাহলে আপনার কথিত “বিজ্ঞান শিক্ষা” বস্তুটা কী?
উৎপাদন ব্যাবস্থা বা পুঁজির সুবিধার সাথে সরাসরি সংযুক্ত বলে জ্ঞ্যানকে দুটো ফ্যাকাল্টিতে বিভক্ত করে ফেলা হল। প্রকৃতি সংক্রান্ত বিজ্ঞান যেগুলোকে আমরা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি নামে চিনি। আর বাকিগুলো হল মানুষ বা সমাজ সংক্রান্ত বিজ্ঞান। যে কোন কারনেই হোক, প্রকৃতিবিজ্ঞানই একমাত্র “বিজ্ঞান” এর দাবীদার হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেল আর সমাজ সংক্রান্ত বিজ্ঞান “বিজ্ঞান” এর রাজ্য থেকে বিদায় নিল। এর কারন মূলত, এই দুই শাখার গবেষনা, চিন্তা পদ্ধতি ভিন্ন। প্রাকৃতি বিজ্ঞান চোখে দেখা বিজ্ঞান, ল্যাবরেটরিতে বসে গবেষনা করা যাচ্ছে যেটা পরেরটার ক্ষেত্রে হচ্ছে না। এবং ল্যাবেরটরিতে বসে গবেষনা করলেই বিজ্ঞান নইলে না এমন ধারনা সমাজে চেপে বসায়।
তাহলে বিজ্ঞান বলতে কি আমরা শুধু পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান এগুলোই বুঝব? অন্যান্য যে সমস্ত বিষয় রয়েছে সেগুলোকে বিজ্ঞান বলব না? ভাষাবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি যে বিষয়গুলো যারা বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টির আন্ডারে না তাদের নামের শেষে তাহলে বিজ্ঞান কেন? সবচাইতে অদ্ভুত ব্যাপার হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি দেয়ার সময় বিজ্ঞান/আর্টস ফ্যাকাল্টি ব্যাতিরেকে ডিগ্রির নাম হয় পিএইচডি। ডক্টর অফ ফিলসফি! এই গিট্টু আমরা কীভাবে ছুটাবো?
একথা বলার কারন হল, আপনি যখন আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাসের উদ্ধৃতি দিচ্ছেন এই বলে যেঃ
তখন একটা ধারনা আপনার মাথায় আগে কাজ করছে যে বিজ্ঞান মানেই হল “প্রকৃতি বিজ্ঞান”। এর বাইরে যা আছে তা বিজ্ঞান নয়। এবং এই ধারনার কারন হল বিজ্ঞানের সংজ্ঞায়নে সমস্যা থাকা। আমরা “পদ্ধতি” এবং “ফলাফল” গুলিয়ে ফেলছি যার কারনে হুমায়ুন আজাদ বা আহমেদ শরিফ বা আরজ আলী মাতুব্বরের ঘটনাগুলোকে ব্যাখা করতে পারছি না।
আপনি সঠিকভাবেই বলেছেন যে,
যদিও মার্কস কথাটা এখানে বাহুল্য কারন মার্কসের উদ্দেশ্যই মানি। যাই হোক, একটু ভেবে দেখুন কেন এটা হচ্ছে। একটা পদার্থবিজ্ঞান কিংবা সাহিত্যের জন্য পাগল ছেলে কেন বিবিএ করছে? আপনার কাছে এটাকে খেয়ালি মনের খেলা মনে হয়? আমার কাছে কিন্তু তা মনে হয় না। আপনার কথায় মনে হচ্ছে আমাদের জিনগত সমস্যার কারনে ছেলে পেলেরা এই Two M এর পেছনে ঘুড়ছে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে? ভেবে দেখবেন আশা করছি।
এতক্ষন ধরে এত কথা বলার কারন, সামগ্রিকভাবে আমার যে ভাবনা সেটা বোঝানোর জন্য। আমাদের বিজ্ঞানমনষ্ক(প্রকৃতিবিজ্ঞান নয়) না হওয়ার পেছনে যে কারন, আমাদের সমাজ চলছে যে অর্থনৈতিক ব্যাবস্থায় সে অর্থনৈতিক ব্যাবস্থায় বিজ্ঞান(প্রকৃতিবিজ্ঞান) হল মুনাফা(যার উপরে টিকে আছে এই নির্দিষ্ট অর্থনীতি) লোটার একটা টুল। আজকে যদি কুসংস্কার মুনাফা সৃষ্টিতে বিজ্ঞানের থেকে বেশি অবদান রাখতে পারে তাহলে কুসংস্কারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় করে নেয়া হবে। এটাই বাস্তবতা। যার জন্য আমি মনে করি সমস্যার ফলাফল নিয়ে কথা না বলে সমস্যা কারন নিয়ে কথা বলা বেশি ফলপ্রসু হবে।
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম, আসলে ভিন্নভাবে এবং কিছুটা বিস্তৃতভাবে ব্যখ্যা করলেও আপনার মন্তব্য এবং আমার লেখাটির অন্তর্নিহিত বক্তব্যের মধ্যে কিন্তু খুব একটা বিরোধ দেখতে পাচ্ছি না। ২য়ত,আমার মনে হয়েছে আপনি শিরোনামটি পড়েই একটা প্রিডিফাইনড এক্সপেক্টেশন করে করে ফেলেছিলেন লেখার কনটেন্ট সম্পর্কে।একারণে আমার লেখা আপনার কাছে অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে(আপনার মন্তব্য পড়ে আমার তাই মনে হল।)
সর্বশেষ,দাবি করছি না আমার লেখায় কোন অসম্পূর্ণতা নেই এবং স্বীকার করেও নিচ্ছি এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত লেখার সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে সময় ও সুযোগ হলে অবশ্যই সেই চেষ্টা করবো।
আপনাকে ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মূল্যায়নের জন্য।ভালো থাকবেন।
প্রথমেই স্বাগতম জানাচ্ছি আপনাকে মুক্তমনায়। আশা করছি বেশ প্রাণবন্ত কাটবে এখানে আপনার সময়। যাই হোক, আপনি বেশ চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। বিজ্ঞান শিক্ষা আর বিজ্ঞানমনস্কতা আমিও এক করে দেখিনা। কেন এক করে দেখা উচিত না সেটা আপনি আপনার লেখায় বেশ ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞানমনস্কতা আমার কাছে মনে হয় এক ধরনের লাইফ স্টাইল। আর ধর্মের সাথে এই বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-চেতনার একটা সরাসরি সংঘর্ষ কিন্তু আমি দেখি। অবশ্য এ থেকে যদি কেউ এই সিদ্ধান্তে আসে যে অবিশ্বাসী মানুষ মাত্রই বিজ্ঞানমনস্ক সেইটাও নিশ্চিতভাবেই ভুল। কিন্তু ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা এবং বিজ্ঞানমনস্কতা সমান্তরালে চালানো আমার কাছে খুবই দুরূহ কাজ বলেই মনে হয়।
@রিজওয়ান,
খুবই মারাত্মক এবং সূক্ষ্ম মন্তব্য এবং আমি একমত।
কোন সন্দেহ নেই। এই বোধদয় আত্মবিস্মৃত ধর্মান্ধদের জীবনেও হবে না।
বিজ্ঞানের ছাত্র মোল্লাতন্ত্র আসমানি কিতাবেও বিজ্ঞানের লেজ খুঁজে পেয়ে ভাব বুদ্বুদে যতই গদ গদ হোক না কেন, বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ তৈরির বিকল্প নেই।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
(Y)
@বিপ্লব রহমান, ধন্যবাদ। 🙂 (F)
স্কুলে এক পিরিয়ডে ধর্মের বুজরুকি পড়ে পরের পিরিয়ডে জীববিজ্ঞান পড়লে এমনই হওয়ার কথা। এমনকি আমাদের পাঠ্য পুস্তকেতো বিবর্তন পড়ানোই হয় না! প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার (ধর্ম শিক্ষা বা বিজ্ঞান শিক্ষা) কোন অংশে ‘বিশ্বাস করা’ ছাড়া কিছু শেখানো হয় কি? নাহলে আমাদের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরাও তো অনেকে হেফাজতের নারী নীতি মানে (!) , পুরুষের একাধিক বিয়ে মানে(!) অপরদিকে আন্তঃ ধর্ম বিয়ে , নারীদের সম্পত্তির পূর্ণ অধিকার মেনে নেয় না । এটা মানবিক না। মানুষের চিন্তা যত যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক হবে তত আমাদের আচরণ মানবিক হবে। bookish হওয়ায় আমাদের এই সমস্যা । Reasoning এর ব্যাপারটা একেবারেই অনুপস্থিত আমাদের শিক্ষায় ।
@প্রদীপ্ত, একটা অবিশ্বাস্য তথ্য জানাই তাহলে, এবারের মাধ্যমিক বায়োলজি বইয়ে কিন্তু ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে চ্যাপ্টার আছে। সরকারের অনেক ফালতু কাজের মধ্যেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য প্রশংসা করতেই হয়! 🙂
ধন্যবাদ এ ধরনের একটা লেখার জন্য 🙂
লেখককে ধন্যবাদ এ রকম একটা লেখার জন্য। খুব খারাপ লাগে যখন দেখি দেশের উচ্চমানের বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ” বিজ্ঞানী ” এবং “গবেষক ” দের প্রায় সকলেই (আমি যাঁদের ব্যক্তিগত ভাবে চিনি, তাঁদের সকলেই ) স্রষ্টার অস্তিত্বে প্রবল ভাবে বিশ্বাস করেন। আমার গবেষক বন্ধুদের কথা তো বাদ ই দিলাম। এক বন্ধুর সাথে সম্পর্ক জটিল হয়ে গিয়েছিল শুধু এটা বোঝাতে গিয়ে যে গনেশ এর হাতির শুঁড় একটি কল্পকাহিনী মাত্র। তার এখনো দৃঢ় বিশ্বাস যে এটা কোনো কল্পনা তো নয় ই বরং ঠিক ভাবে ডাকলে এখনো তার দেখা পাওয়া যাবে!!!
বাকি বন্ধুরা সকালে স্নান করে পূজা করার পর তবে ল্যাব এ যায়।
এরা বর্তমানের বিজ্ঞান গবেষক এবং ভবিষ্যতের প্রফেসর / শিক্ষক !!! আমার মনে হয়না এঁদের ন্যুনতম বিজ্ঞান মনস্কতা আছে বলে। আমার গাইড এর সাথে সামান্য মনোমালিন্য হয়েছিল ল্যাব এ দেবতার ছবি রাখার বিরোধিতা করায়।
নিজের চেপে রাখা হতাশা ভাগ করতে পেরে ভালো লাগছে।
ভালো থাকবেন।
ভাল লিখেছেন। তবে লেখাটা আরেকটু বড় হলে ভাল হত।
@সুদীপ্ত শেল্ডন, আমার নামও সুদীপ্ত!!! এনিওয়ে,অনেক ধন্যবাদ 🙂
খুবই ভাল লেগেছে । আরো লিখবেন, লিখে লিখে এই বস্তাপচা,ঘুঁণেধরা বিশ্বাস ভিত্তিক সমাজটাকে যদি কিছুটা সচেতন আর বিজ্ঞান মনস্ক করা যায় -তাতে দেশের লাভ,দশের লাভ । ভাল থাকবেন ।
@অসীম, ধন্যবাদ। তবে এই বস্তাপচা সমাজকে বদলানো মুশকিল।আমি সহসাই কোন আশা দেখি না। 🙁
আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করার পরও বেশির ভাগ মানুষই বোঝে না; বিজ্ঞান, বিজ্ঞানমনষ্কাতা ও বিজ্ঞানী কী জিনিস………… যে দেশে মানুষ চাঁদে সাইদি দেখে অথচ বিবর্তন মানতে চায় না সেখানে একটা জাতির জন্য আমুল পরিবর্তন আসলেই একটা বড় পরীক্ষা।
লেখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (F)
@সুব্রত শুভ, 🙂 (F)
লেখাটার দরকার ছিল। ভাল লাগছিল লেখা বড় হলে ক্ষতি ছিল না। আমাদের দেশের সিংহ ভাগ মানুষ বৈজ্ঞানিক হিপোক্রেট। তাদের ধারণা “মান্য করা মানেই শ্রদ্ধা করা”! আমাদের স্কুল কলেজ এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাই শেখায়!!
@প্রদীপ্ত, আমি আবার বেশি Lengthy হয়ে যাচ্ছে দেখে ইচ্ছা করেই দ্রুতই শেষ করে ফেলেছি!!! এনিওয়ে, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য 🙂
শুধু বিজ্ঞান-শিক্ষিত নয় অনেক নামকরা বিজ্ঞানীও তাঁর চিন্তা, চেতনা ও অনুভবে সম্পূর্ণ বিজ্ঞানমনস্কতা দেখাতে কোন কোন সময় ব্যর্থ হয়েছেন।
will we ever learn? দিনের পর দিন যা দেখছি, হতাশাই বাড়ছে খালি
@কিষান, 🙁
মুক্তমনায় স্বাগতম! (F)
কিছুদিন আগে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করে বিদেশের মাটিতে সফ্ট্ওয়্যার প্রকৌশলীর চাকুরি করা আমার এক বন্ধু নিজেকে Student and Lover of Science দাবি করে জানালো সে বিশ্বাস করে এই প্রাণিজগত এক বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তার অসাধারণ প্রোগ্রাম। সফ্ট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এক সুপারন্যাচারাল পাওয়ারের তৈরি জটিল পদ্ধতির পিছনেই জ্ঞান নিহিত আছে। সামান্য আলাপের শুরুর দিকে বললো – বিজ্ঞানীরা ইলেক্ট্রন-প্রোটন-নিউট্রন চোখে দেখেনি, এতে প্রমাণিত হয় যে, বিজ্ঞানও একটা পর্যায়ে এসে বিশ্বাস করে।
@প্রতিফলন, ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। আপনাকেও (F)
মুক্তমনায় আমার প্রথম লেখা এটি। 🙂
@আমি কোন অভ্যাগত নই, অভিনন্দন! মুক্তমনায় দারুন কাটুক আপনার সময়। একটা সাধারণ কৌতুহলী প্রশ্ন আপনার কাছে, ছদ্মনামে লিখছেন তাহলে প্রফাইল ছবিতে নিজেকে রাখছেন কেন? ছদ্মনামে লেখার প্রধান উদ্দশ্যই হলো নিজেকে লুকিয়ে রাখা। এক্ষেত্রে ছদ্মনামে নিজেকে লুকিয়ে আর রাখলেন কই?
@সুষুপ্ত পাঠক, ভালো প্রশ্ন করেছেন। আসলে এই নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য নয়,জাস্ট ভালো লাগা থেকেই এই নিকটা দেয়া। আমার ফেবু প্রোফাইলের নামও আমি কোন আগন্তুক নই,কিন্তু অলটারনেটিভ নেমে আসল নাম এবং অন্যান্য ইনফো দেয়া আছে। আসলে আহসান হাবীবের এই কবিতাটা আমার খুব প্রিয়। এক ধরণের প্যাশন থেকে এই নিক ব্যবহার করা, পরিচয় গোপনের জন্য নয়। 🙂
@আমি কোন অভ্যাগত নই, মুক্তমনায় স্বাগতম। এবং মুক্তমনায় এটা আমার প্রথম কমেন্ট!! 😀
বাই দ্য ওয়ে, আগন্তুক থেকে অভ্যাগত হবার রহস্য কী?
@অন্যরকম ধ্রুব, কবিতার দুই লাইনঃ আমি কোন আগন্তুক নই,আমি কোন অভ্যাগত নই!!!!! দুই জায়গায় তাই দুই নিক হয়ে গেল!!!! 🙂 🙂 মিনিং সেম 🙂